ঝরাপাতা পর্ব ৩৯+৪০

#ঝরা_পাতা🍂🍂
#Nishi_khatun
#পর্ব_৩৯

আয়ান বেগম চোখেরজল শাড়ির আঁচলা দিয়ে মুছে বলে সে সমব কথা বাদ দে মা।কথায় আছে না অন্যের জন্য খাল কাটলে সে খালে নিজেকে পড়তে হয়।আমাদের সাথে তাই হয়েছে। ”

অর্ণা প্রশ্ন করে সুমু খারাপ কিছু বলেছে?

মামী মা বলে,”রাইসা আগেই বলেছিল কারো খারাপ করে কেউ কখনো সুখি হতে পারে না।আর সৎ ভাবে সুখ জীবনে না আসলে তা বিপথগামী হয়ে অর্জন করা যায় না।যদি সুমুর ভাই আমার ভাগ্যে না থাকে তখন কি হবে?”

সুমুর জোর দিয়ে বলেছিল ওর ভাই রাইসাকে পছন্দ করে।তাই ওদের বিয়েতে সমস্যা হবে না।
কিন্তু ভাগ্য বলে একটা কথা আছে না।
লোভে পাপ, পাপে মৃত্যু।
আমাদের সাথেও তাই হয়েছে রে মা!

অর্ণার বুকের মধ্যে হঠাৎ করে অজানা ভয় কাজ করতে শুরু করেছে।রাইসা দুষ্টু ছিলো তবে কখনো অর্ণার খারাপ চাইনি সে।সেদিনের কাজের জন্য কী খারাপ কিছু হয়েছে রাইসার সাথে?এসব ভাবতেই বুকের মধ্যে ব্যাথায় কুঁকড়ে উঠিছিল অর্ণার।

মামী মা বলে,”তোর বিয়ের দিন রাইসা যে সব কাজ করেছিল তা তো সবার জানা।আর বিয়ের দিনের নাটক কম ছিলো না আমার মেয়ের জীবনটা শেষ করার জন্য।তবে এসবে রাইসার কোনো মাথা ব্যাথা ছিলো নাআমি জানি আমার মেয়েটা তোর ভালো বাড়িতে বিয়ের কথা শুনে নিজের কাজের জন্য আফসোস করতো না।
বলতো যাক আমার একটু নাটকের জন্য যদি আপুর ভালো হয় তাহলে আমার এসব কথা শুনতে সমস্যা নেই।এভাবে দিন কেটে যাচ্ছিল।হঠাৎ করে তোর মৃত্যুর নাটকের পর আমাদের সবার মন খুব খারাপ ছিলো।
এর কিছুদিন পর জানতে পারি সুমুর ভাই অন্য কোনো মেয়েকে বিয়ে করে বাড়িতে নিয়ে চলে এসেছে।
রাইসা সেদিন সুমুর কাছে ছুটে যায়।”

তখন সুমু বলে,”আমার ভাই যাকে ভালোবাসে তাকে বউ করে বাড়িতে এনেছে।তোর সাথে ভাইয়ের বিয়ে দিবো বলেছি এখন বিয়েটা হবে না।তাতে তোর করার কিছুই নেই।যদি বেশি বাড়াবাড়ি করিশ তাহলে তোর খবর আছে।সেদিন তোকে আর তোর মা কে শুধু মাএ ব্যবহার করেছিলাম অর্ণাকে নিজের ফাঁদে ফেলার জন্য।”

রাইসা বলে,”অর্ণাপু না তোমার বেস্ট ফ্রেন্ড ছিলো?”

সুমু তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলে,”আমি মন থেকে কোনোদিন ও অর্ণাকে বন্ধু ভাবি নাই।অর্ণার সাথে সব সময় মিশতাম কারণ ওর থেকে লেখাপড়া সহ সব কাজে ভালো সাপোর্ট পেতাম। আর জানতাম তো ও এতিম তোদের সাপোটে থাকে।কোনো একদিন হয়তো আমার কাজে লাগতে পারে সেই ভেবে ওর সাথে এতো গাঁয়ে পড়ে থাকা।”

রাইসা সেদিন খুব কান্না করে সুমু কে বলে,”তোমার কোনেদিন ও ভালো হবে না দেখে নিও সুমুপু।নিজের স্বার্থে অর্ণার মতো এতিম কে ব্যবহার করে ঠিক কাজ করো নাই।”

সুমু বলে,”তোর এতো বেশি বকবক শোনার ইচ্ছা নেই।”

এরপর রাইসা বাড়িতে আসতে না আসতেই সারা গ্রামের ছড়িয়ে পড়ে অর্ণার স্বামীর সাথে রাইসার খারাপ সম্পর্ক ছিলো।এই কারণে অর্ণা আত্মহত্যা করেছে।
রাইসা যেদিন সুমুকে দাওয়া দিতে যায়।
সেদিন সুমু রাইসা আর আয়াশের কিছু ছবি তুলে রেখেছিল। সেই সব ছবি গুলো দিয়ে সুমু রাইসার জীবনটা শেষ করে দেয়।

এসব বলতেই মামী মা ডুকরে কেঁদে ওঠে।
অর্ণার মামা এসে আয়না বেগম কে জড়িয়ে ধরে কেঁদে বলে,”এসব কথা বাদ দাও।মেয়ে জামাই প্রথম বার বাড়িতে এসেছে তাদের থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা করো।”

আয়না বেগম চোখের পানি মুছে ওদের খাবারের ব্যবস্থা করতে চলে যায়।

অর্ণা মামু জান কে বলে,”মামা রাইসার সাথেও সুমু অন্যায় করেছে।রাইসার সাথে এতো কিছু হয়ে গেছে আর তুমি আমাকে কিছুই বলো নাই কেনো?”

মামাজান বলে,”কোন মুখে এসব কথা বলতাম?
মেয়ের চরিএের উপর যখন কালি পড়ে তখন সেই কালির দাগ মুছতেই তার পরিবারের জীবন শেষ হয়ে যায়।আমার মেয়েটা গৃহবন্দি হয়ে আছে সেই ঘটনার পর থেকে।বাহিরের মানুষের অযথা গালাগালি শোনার শক্তি শেষ।”

অর্ণা মামুজান কে জড়িয়ে ধরে ডুকরে কাঁদতে থাকে।ঘরের বাহিরে দাঁড়িয়ে আয়াজ আর আয়াশ সব কথা শুনতে পারে।দুজনে দুজনার মুখ চাওয়াচাওয়ি করছে শুধু।তাদের যে এখানে কিছু বলার নেই।
সুমু নিজে একটা মেয়ে হয়ে অন্য মেয়ের সাথে এতোটা জঘন্য কাজ করতে বিবেকের কাছে বাঁধে নাই?

অর্ণা অনেক সময় মামুজানের বুকের মাঝে মুখ লুকিয়ে কান্নারত থাকে।তারপর নিজেকে সংযোত করে চোখের পানি মুছে রাইসার রুমে দিকে অগ্রসর হয়।

রাইমা অর্ণার সামনে এসে বলে,”আপু আমার বোনটা খারাপ না গো।তবে ওর সাথে এতোটা খারাপ না হলেও পারতো।”

অর্ণা রাইমার মাথায় একটু হাত দিয়ে চলে যায়।

রাইসার রুমে ঢুকতে রাইসা ছুটে এসে অর্ণা কে জড়িয়েছি ধরে ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠে।অর্ণা রাইসা কে খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বনের সাথে কান্না করতে থাকে।
এভাবে কিছু সময় যাবার পর রাইসা অর্ণা কে ছেড়েদিয়ে বলে,”অর্ণাপু তুমি বিশ্বাস করো আমি খারাপ মেয়ে না।তুমি তো জানো আমি দুষ্টামি করতে ভালোবাসি।তার মানে এটা নয় যে কোনো পুরুষের সাথে আমি খারাপ সম্পর্ক করবো।আমি কখনো ভুলি নাই।
আমি মধ্যবিত্ত বাড়ির মেয়ে।তার থেকে বড় কথা মা আমাদের তিনজন কে ছোট থেকে ইসলামিক আর্দশে মানুষ করতে চেষ্টা করেছে।”

অর্ণা রাইসার গালে হাত দিয়ে বলে, “জানি তো আমার বোনটা খুব ভালো। কখনো মানুষের ক্ষতি করতে পারে না।”

রাইসা ফুঁপিয়ে বলতে থাকে,”জানো আপু সুমুপু সবাইকে বলছে আমি না কি খুব খারাপ মেয়ে।
দুলাভাইয়ের সাথে খারাপ সম্পর্ক ছিলো।
বিশ্বাস করো আপু আমি এমন মেয়ে মোটেই না।”
আর কোনো কথা বলতে পারে না।
প্রচুর পরিমাণে কান্নার কারণে রাইসা কথা গুলো বাচ্চাদের মতো ফুঁপিয়ে বলে।
কান্নার কারণে কথা গুলো আটকে যাচ্ছিল।

অর্ণা রাইসাকে জড়িয়ে ধরে মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলতে থাকে।তোর আপু চলে আসছে তো।
আর চিন্তা কিসের? তোর সব কষ্টের সমাপ্তি না করে আমি এখানে থেকে যাবো না।এবার চুপ কর।
আর কান্না করতে হবে না।আমার রাইসাকে এমন কান্নারত অবস্থায় একদম বাজে দেখতে লাগে।
তাছাড়া দুলাভাইয়ের সামনে এমন পেত্নীর মতো চেহারা নিয়ে যাবি না কি?

রাইসা নিজের চোখের পানি মুছে বলে,”আপু আমাকে মাফ করে দিও সেদিন যদি একটু সুখের লোভে পড়ে নাটক না করতাম তাহলে হয়তো তোমার সাথে এতো কিছু হতো না।'”

অর্ণা বলে,”আমার তোর প্রতি কোনো অভিযোগ বা অভিমান নেই।কারণ তোর জন্য আলহামদুলিল্লাহ্‌ আমি এতো ভালো একজন কে স্বামী হিসাবে জীবনে পেয়েছি।”

রাইসা বলে,”আপু তুমি সুখে থাকলে আমাদের সবার সুখ।হয়তো মা তোমাকে কটু কথা বলতো তবে তোমার খারাপ কখনো চাইতো না সত্যি বলছি আপু।”

অর্ণা বলে,”মা মারা যাবার পর থেকে আমি মামীর কাছে বড় হয়েছি।হয়তো মা’র কাছে থাকলে আদরে বাদর হাতাম। তবে মামীর কাছে আমি দুনিয়ার সব রকম পরিস্থিতিতে মানিয়ে নেওয়ার শিক্ষা পেয়েছি।
তাই তার প্রতি ভালোবাসা ছাড়া অভিযোগ নেই ”

রাইসা বলে,”তুমি সত্যি অনেক ভালো।মা’র কাছে শুনেছি ফুপিও তোমার মতো ছিলো অনেক ভালো।”

রাইমা এসে বলে,”বাহ এখানে আমে দুধে মিশে আছে বাহিরে আঁটি পড়ে গড়াগড়ি খাচ্ছে সেদিকে কারো খেয়াল নেই!”

রাইসা বলে,”হিংসুক মেয়ে।”

রাইমা বলে,”ঝগড়া পড়ে করবে এখন অর্ণা আপু চলো তো মা তোমাকে খাবার খেতে ডাকছে বাকি গল্প খাবার পড়ে করিও।”

অর্ণা রাইমার সাথে চলে যায়।রাইসা আর ঘরের বাহিরে যায় না দুলাভাইয়ের সাথে দেখা করতে।

এদিকে খাবার পর্ব শেষ করে অর্ণা আয়াশ অর্ণার রুমে চলে যায় ঘুমাতে।আয়াজের জন্য রাইমার রুমটা দিয়ে দেয়।রাইমা রাইসার কাছে ঘুমাতে চলে যায়।মামা মামী নিজেদের রুমে থাকে।

রাইসা বলে,”কি রে হঠাৎ আমার রুমে তুই কেনো?”

রাইমা বলে,”কেনো রে বড় বোনের কাছে ছোট বোনের আসা নিষেধ? আজ তোমার সাথে ঘুমাবো।”

রাইসা বলে,”না মানে,তুই কখনো আমার রুমে আশিস না তো তাই।নিজের রুম ছেড়ে অর্ণাপুর সাথে থাকতিস।আজ হঠাৎ সূর্য যে কোনদিকে উঠছে বুঝতে পারছি না।”

রাইমা ধপাস করে বিছানার উপর শুয়ে পড়ে বলে,”তোমার জামাই কে আমার রুম ছেড়ে দিয়েছি তাই তোমার রুমে।এবার চুপচাপ ঘুম দাও।”

রাইসা ভ্রু কুঁচকে রাইমার দিকে তাকাতে রাইমা কম্বল দিয়ে মুখ লুকিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে।

এদিকে এতো কিছু শোনার পর অর্ণা দু চোখের পাতা এক করতে পারছিল না।ওর মনের মধ্যে অশান্তিজনক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।

আয়াশ অর্ণর মনের অবস্থা বুঝতে পেরে নিজের ভালোবাসার স্পর্শে সুখের সাগরে ভাসিয়ে নিয়ে যায়।আয়াশের মাঝে অর্ণা মগ্না থাকলে এসব কিছু নিয়ে মন খারাপ হবে না।না এসব চিন্তায় রাতের ঘুম হারাম করতে পারবে।

(গঠনমূলক মন্তব্য করবেন সবাই)

‘#ঝরা_পাতা🍂🍂
#Nishi_khatun
#পর্ব_৪০

ভোরে ঘুম থেকে উঠে নিজেদের বাড়ির সদর দরজা খোঁলা দেখে রাইসা চমকে ওঠে।সে মনে মনে ভাবতে থাকে।রাতে মা নিশ্চয় দরজা বন্ধ করতে ভুলে গেছে সে সুযোগে চোর বাড়ির সব কিছু চুরি করে নিয়ে গেছে।
এদিকে আশপাশ ভালো করে তাকিয়ে দেখে বলে,”কই সব কিছু তো ঠিকঠাক আছে তাহলে চুরি হলো কথায়? ”

রাইমার রুমে লাইট জ্বলতে দেখে পা টিপে টিপে চুপচাপ দরজার সামনে দাঁড়িয়ে দেখে একটা ছেলে হাতে ক্যামেরা নিয়ে কিছু একটা করছে।

হঠাৎ করে আয়াজ পেছন দিকে ঘুরে দাঁড়াতেই চমকে ওঠে।কারণ তার সামনে এক সুন্দরি রমণী কোমরে হাত দিয়ে তার দিকে কেমন রহস্যের দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে আছে।

আয়াজ কিছু বলার আগেই রাইসা বলে,”ওরে বাহ,আজকাল চোরেরা দেখছি জেন্টলম্যান হয়।তা বাচ্চু কি মনে করে এতো ভোরে আমাদের বাড়িতে এসেছেন?চুরি!তা করতে পারবেন না।রাইসার বাড়িতে চোর আসলেও যেতে পারবে না।”

রাইসার আজগুবি কথা শুনে আয়াজের বুঝতে বাকি রইলো না।রাইসা তাকে ভুল ভাবছে।

আয়াজ বুঝতে পারে এটা আয়াশের শালি।তাই সে রাইসার কথায় রাগ না করে দুষ্টুমির ভঙ্গিতে বলে,”জ্বি বেয়াইন সাহেবা আপনার বাড়িতে এসেছি আপনার মন চুরি করতে।”

রাইসা ভ্রু কুঁচকে আয়াজের দিকে তাকিয়ে বলে,”মন কি সস্তার আলু পটল?যে চাইলে চুরি করতে পারবেন? আর শোনেন এটা রাইসার মন যা তার স্বামী ছাড়া পরপুরুষের জন্য আজেবাজে কাজে বরাদ্দকৃত হবে না।আর আপনি কেমন চোর?চুরি করতে এসে সম্পর্ক পাতিয়ে নিতে চাইছেন? ”

এদিকে অর্ণা অনেক আগে ঘুম থেকে উঠে পড়েছে।ফ্রেশ হয়ে নামাজ পড়ছিল। নামাজের শেষের দিকে তার কানে কারো কথার আওয়াজ ভেসে আসছিল। নামাজ কমপ্লিট করে বাহিরে কি হচ্ছে তা দেখতে রুম থেকে বেড়িয়ে আসে।

আয়াজ রাইসা কে উদ্দেশ্য করে বলে,”আপনি আয়াশের শালিকা তাই না?”

রাইসা বলে,”ওরে আল্লাহ এ কেমন চোর রে বাব্বাহ! আমার দুলাভাইয়ের নাম ঠিকানা জেনেও আসছে।আর কোনো চোর তো গৃহস্থের সাথে এতো সময় ধরে খেজুরে আলাপ করে না?এই আপনি কে বলেন তো? ”

পেছন থেকে অর্ণা বলে ওঠে,”এই রাইসা এসব কি হচ্ছে?বাড়ির মেহমানের সাথে কেউ এমন ব্যবহার করে?”

রাইসা অর্ণার দিকে ফিরে বলে,”তুমি এই লোকটাকে চেনো অর্ণাপু?”

অর্ণা বলে,”জ্বি হ্যাঁ! উনি তোর দুলাভাই এর ছোট ভাই!”

রাইসা এ কথা শুনে দাঁত কেলিয়ে আয়াজের দিকে তাকিয়ে বলে,”আরে বেয়াই সাহব যে।এখন মন চুরি করতে চাইলে সমস্যা নেই।আমি রাজি আছি।আফটার অল বেয়াই সাহেব বলে কথা।”

সুমুর মুখের হাসিটা অনেকটা মুগ্ধ করার মতো।আয়াজ এতোদিন পর তার সামনে এতোটা হাসিমুখে কাউকে দেখে প্রাণটা জুড়িয়ে যাচ্ছিল তবে সে খুশিটা বেশি সময় স্থায়ী হয় না দুজনের।

অর্ণা রাইসার দিকে তাকিয়ে বলে,”রাইসা উনি তোর সুমুপুর স্বামী। ”

এই কথা শোনার সাথে সাথে রাইসার মুখের হাসিটা মিলিয়ে গিয়ে চেহারার উপর কালো মেঘে ছেঁয়ে যায়।রাতে সব কাহিনী শুনেছে রাইমার কাছে।তবে আয়াজ যে এখানে এসেছে সে কথা রাইসা জানতো না।আর সুমু র বিয়ে হয়েছে চাচাত ভাইয়ের সাথে।অর্ণা ছোট ভাই বলেছে বলে রাইসা বুঝতে পারে নাই।এবার সুমুর বর কে সামনে দেখে রাইসা তাচ্ছিল্যের সুরে বলে,”ওহ আচ্ছা তাহলে উনি সেই মহান ব্যক্তি।যার জন্য আমাদের জীবনটা জাহান্নাম বানিয়ে দিয়েছে সুমু ডায়নি।আরে আপনাকে ইনসাফ দিতে গিয়ে অন্য দুইটা মেয়ের যে সর্বোনাশ করেছে তার জন্য আমরা মাফ করলেও আল্লাহ কখনো ওকে মাফ করবে না।আপনি এখানে কেনো আসছেন? আপনার বউয়ের তরফদারি করতে?মাফ চাইতে?আমি কখনো আপনার বউকে মাফ করবো না।সুমুপু কোনোদিন ও সুখি হতে পারবে না দেখে নিয়েন। যে ভালোবাসার জন্য সে এতো জঘন্য অপরাধ করেছে তার শাস্তি প্রকৃতি তাকে দিবে। বলে কান্নারত অবস্থায় নিজের রুমে চলে যায়।”

অর্ণা রাইসার এমন ব্যবহারের জন্য আয়াজের কাছে ক্ষমা পার্থনা করে।আয়াজ বলে,”ভাবী আমাকে সুমুর স্বামীর পরিচয় না দিলেই পারতেন। ”

অর্ণা বলে,”আপনি সুমুর স্বামী এটা তো মিথ্যা নয়।তাহলে সে পরিচয় দিতে সমস্যা কোথায়?এখনো আপনাদের ডির্ভোসের প্রসেসিং শেষ হয় নি।”

আয়াশ এসে আয়াজের কাধে হাত রেখে বলে,”যে কাজটা এখনো শেষ হয়নি সেই কাজটা কমপ্লিট করতে আমরা এখানে এসেছি।সুমুর সাথে আয়াজের নামে মাত্র যে সম্পর্কটা আছে তার সমাপ্তি করেই যাবো এখানে থেকে।”

অর্ণা আয়াশের কথার কোনো উওর না দিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে সেখানে থেকে চলে যায়।

আয়াজ আয়াশ কে জড়িয়ে ধরে বলে,”শুধু মাএ আমার জন্য আজ এতো গুলো মানুষেরা কষ্ট পাচ্ছে।”

আয়াশ আয়াজ কে উদ্দেশ্যে করে বলে,”তোর জন্য কেউ কষ্ট পাচ্ছে না।তবে সুমু শুধু মাএ তোকে উদ্দেশ্য করে এসব করেছে নিজের স্বার্থের জন্য।এতো প্রতিশোধের তো দরকার ছিলোনা। তারপর ও সুমু নিজের বিবেক বুদ্ধি কে সঠিকভাবে ব্যবহার না করে খারাপ ভাবে ব্যবহার করেছে।এখানে তোর দোষ নেই।সে ইচ্ছা করলে মানুষের অপমানের জবাব সুন্দর ভাবে কথার মাধ্যমে দিতে পারতো।তার বদলে সে খারাপ পথ অবলম্ব করেছে এটা তার ভুল।সে ভুলের শাস্তিস্বরুপ তোকে সারাজীবনের জন্য হারিয়ে ফেলছে।”

আয়াজ একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে,”ঝরা পাতার মতো যেনো আমাদের সবার জীবন থেকে সব সমস্যা গুলো ঝরে যায়।আমরা আমাদের ভুল গুলো থেকে যেনো সঠিক শিক্ষা নিয়ে থাকি।”

এরপরে সবাই সকালের নাস্তা কমপ্লিট করে ওদের বাড়ির আঙ্গিনাতে বসে আড্ডা দিতে থাকে।
একটুপর আয়াশ বলে,”এই অর্ণা আয়াজ চলো আমাদের কাজ আছে।”

রাইমা উঠে বলে,”দুলামিঞা আমাদের সাথে নিবেন না?”

আয়াশ বলে,”আজকের কাজ শেষ করে আসি তারপর না হয় তোমাদের নিয়ে ঘুরাঘুরি করবো।”

তিনজন একসাথে সুমুদের বাড়িতে চলে যায়।সুমু আয়াজ কে দৌড়ে গিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরে বলে,”আমি জানতাম তুমি আমার থেকে দূরে বেশিদিন থাকতেই পারবে না।আমাকে তুমি অনেক ভালোবাসো।আমাকে তোমার থেকে দূরে কোনোদিন ও করতে পারবে না।”

আয়াশ এসে বলে,”তোমার কনফিডেন্ট অনেক দেখছি। তবে বেশি কনফিডেন্স থাকা ভালো না।যখন বিশ্বাস ভাঙ্গবে তখন সহ্য করতে পারবে না।ঠিক যেমন করে রাইসা আর অর্ণার বিশ্বাস গুলো ভেঙ্গে গুড়িয়ে দিয়েছ তুমি।”

আয়াজ সুমুকে নিজের থেকে ছাড়িয়ে দূরে ঠেলে দেয়।

আয়াজ সুমুকে উদ্দেশ্য করে বলে,”হয়তো তোমাকে মাফ করে দিতাম।কিন্তু রাইসার সাথে যা করেছো তা জানার পর আর মাফ করার মানেই হয় না।তুমি অর্ণাকে এতিম পেয়ে মাছের টপ হিসাবে ব্যবহার করেছো ঠিক আছে তবে রাইসার কি দোষ ছিলো?প্রতিশোধের নেশায় তোমাকে অন্ধ করে দিয়েছিল।তুমি নিজে একটা মেয়ে হয়ে অন্য মেয়ের সাথে এসব ব্যবহার করার আগে একবার ও এর পরিণাম চিন্তা করো নাই।তোমাকে আমি শাস্তি দিবো না।যে শাস্তি দেওয়ার মালিক সে দিবে।আমি ডির্ভোস দিবো।এরপর জোর করে সুমুকে দিয়ে ডির্ভোসের পেপারে সাইন করিয়ে নেয়।”

সুমুর কান্না জড়িত কন্ঠে বলে,”এই যে মিস্টার আয়াশ আজ আমার সংসার ভেঙ্গে ঠিক কাজ করো নাই।যেদিক অর্ণার আসল পরিচয় জানতে পারবে সেদিন দেখবো নিজের সংসার ঠিক রাখতে পারো কি না।”

আয়াশ বলে,”কী বলতে চাইছো তুমি?”

সুমু বলে,”যে মেয়ের বাবা আমাকে ওর হত্যার নাটকে সাহায্য করেছিল তাকে শাস্তি দিবে না?সে কেনো বাদ যাবে?আমি যায়নি ঐ অপয়া মেয়ের বাবার কাছে।
ওর বাবা নিজে এসেছিল আমার কাছে অর্ণার খোঁজ জানতে।আমি তাকে নিজের কথা জালে জড়িয়ে নিয়ে আসল সত্যিটা জানতে পারি সে এতো বছর পর তার মেয়ের খোঁজ করছে সাথে করে নিয়ে যাবার জন্য নয়।তাকে হত্যার জন্য।আমিও তাকে সাহায্যদান করি।
এটাই আমার অপরাধ? কেউ যদি নিজের আত্মসম্মান বাঁচাতে নিজের ঔরসজাত সন্তানের ক্ষতি করার কথা চিন্তা করতে পারে তার চিন্তায় আমি একটু ঘি ঢেলেছিলাম মাএ।”

আয়াজ বলে,”অর্ণার বাবার কথা বাদ দাও।এটা বলো রাইসার কি দোষ ছিলো?”

সুমু বলে,”ওর কোনো দোষ ছিলা না।
তবে ওর সাথে জড়িয়ে আয়াশ কে অপমান করতে চেয়েছিলাম।আফসোস সে সময় আয়াশ এখানে আসে নাই।”

আয়াজ সুমুকে একটা থাপ্পড় দিয়ে ডির্ভোসের পেপার দেখিয়ে বলে,”তোমার সব পাপের শাস্তি এটাই। আজকের পর তোমার আমার কোনো সম্পর্ক নেই।আজকের পর থেকে তুমি আমার জন্য একজন পরোনারী মাএ। কথাটা বলে তিনজন সেখানে থেকে বিদায় নিয়ে চলে যায়।”

এরপর আয়াশ আয়াজের ডির্ভোসের সব প্রসেসিং শেষ করার ব্যবস্থা করে।রাইসাদের বাড়িতে কিছুদিন থেকে আয়াজ কে এই মিথ্যা সম্পর্ক থেকে মুক্ত করিয়ে নিজের বাড়িতে সাথে করে নিয়ে চলে আসে।




চলবে…..

চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here