ঝরাপাতা পর্ব ৩৭+৩৮

#ঝরা_পাতা🍂🍂
#Nishi_khatun
#পর্ব_৩৭

সুমু চলে যাবার পর আয়াজ সোজা নিজের রুমে এসে দরজা বন্ধ করে দিয়ে গভীর চিন্তার সাগরে ঢুবে যায়।

আয়াজ ভাবতে থাকে সত্যি কি সুমু এতোটা শান্তি পাওয়ার অধিকারী?আমি কি একটু এসবের ভাগীদার না?সুমুর এসব পাগলামির জন্য তো আমি দায়ী। সে আমাকে পাগলের মতো ভালোবাসে।আমার সেদিনের অপমানের শোধ নিতে সে এতোটা বিগড়ে গিয়েছিল। আমি যদি ইচ্ছা করতাম তাহলে সুমুকে থামিয়ে দিতে পারতাম। তবে আমার নিরবতা আজ সুমুকে এতো বড় অপরাধী করে দিয়েছে।

অতীতে….
আয়াশের সাথে সুমুর বিয়ে ঠিক করে তাদের বাবারা।তবে সে কথা সুমু বা আয়াশ কেউ জানতো না।তখন হঠাৎ করে সুমু এবাড়িতে কিছুদিনের জন্য বেড়াতে আসে।সুমুর পরিবারের সাথে ভালো খাতির থাকার জন্য যাওয়া আশা ছিলো।তো এসবের মধ্যে ওর সাথে আমার প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে।যা আমাদের আশেপাশের সবার আড়ালে।আমরা ভেবেছিলাম সময় হলে সবাইকে সবটা জানিয়ে দিবো।কিন্তু হঠাৎ করে একদিন সুমুর বাবা বলে,”এবাড়ির ছেলের সাথে সুমুর বিয়ে দিবে।”

সুমু সেদিন ভাবে,”বাবা আয়াজের কথা হয়তো কোনো ভাবে জেনে গেছে।তাই আয়াজের সাথে বিয়ের ব্যবস্থা করছে।এসবে তাহলে আমার আপত্তি নেই।”

কিন্তু সুমুর খুশি দুদিনের জন্য স্থায়ী হয় না।সুমু বিয়ের কথা শুনে খুব খুশি ছিলো তা দেখে অরিন সুমু কে অনেক অপমান করে।বলে,”তোমাকে তো আয়াজ ভাইয়ের সাথে নানারকম কীর্তি করতে দেখা যায়।একজনের সাথে ইটিশ-পিটিশ আরেক ভাইয়ের ঘাড়ে ঝুলে পড়তে লজ্জা করে না?আর লজ্জা বা করবে কি করে?তোমার মতো ফালতু মেয়েদের চরিএের ঠিক নেই। তুমি আয়াজ ভাইয়ের সাথে এতো মাখামাখি করো আর আসছো আয়াশ ভাই কে বিয়ে করতে?তোমার সাথে তো আমার কোনো ভাইয়ের বিয়ে হতে দিবো না জীবনে।তোমার থেকে কতো বড়লোকের সুন্দরি মেয়ে লাইনে আছে আমার ভাইদের জন্য।”

আয়াশ এসে বলে,”সুমু তোমাকে আমি পছন্দ করি না তুমি এই বিয়ের জন্য না করে দাও।আর হ্যাঁ আমি এমন চেনাজানা মানুষ কে বিয়ে করতে চাই না।অচেনা অপরিচিত কোনো মেয়েকে বিয়ে করতে চাই।”

আয়াশের প্রতি সুমুর দুর্বলতা দেখে আয়াশের বাবা আয়াজ কে বলে,”তোকে এতো আদর-যত্নের বড় করেছিলাম কি আমার ছেলের পিছনে ছুড়ির আঘাত করার জন্য?আমার ছেলের হবু বউয়ের সাথে এতো ক্লোজ হওয়ার কি আছে।আসলে মানুষেরা ঠিকি বলে,”এতিমেরা কখনো অন্যের ভালো দেখতে পারে না।ঠিক যেমন আজ তুই আমার ছেলের সুখের পথের কাটা হয়ে গেছিস। ”

আয়াজ চুপচাপ সব কিছু সহ্য করে বাড়ি থেকে বেড়িয়ে গ্রামের বাড়িতে চলে যেতে লাগে।

তখন সুমু আয়াজের সামনে এসে বলে,”আয়াজ আজ তোমার কাছে একটা ওয়াদা করে যাচ্ছি!তোমার অপমানের শোধ তো আমি নিবো। তোমার চোখের যে পরিমাণ জল ঝরেছে তার থেকে বেশি জল এদের চোখ দিয়ে ঝরবে।আয়াশের বিয়েটা এমন বাড়িতে হবে যে পরিবার কে এরা মেনে নিতে পারবে না।এমন কি আয়াশ যদি নিজের বউ কে ভালোবাসার চাদরে মুড়িয়ে রাখতে চাই তাহলে আমি সে চাদরে আগুন দিয়ে ওর বউটাকে পুড়িয়ে মারবো।”

আয়াজ সুমুর কথায় কোনো গুরুত্ব না দিয়ে বলে,”তোমার যা ইচ্ছা হয় তুমি তাই করো।তবে আমার সাথে আজকের পর আর যোগাযোগ করো না।কোনো এতিমের হাতে কোনো মেয়ের বাবা তার মেয়ের হাত দিবে না।আমার বাবা মা নেই।তাই চাইনা আমার জন্য তোমার বাবা মা’র সাথে সম্পর্ক নষ্ট হোক।আমি প্রতিটা সম্পর্কের মূল্যে জানি সুমু।”

এরপরে আর কয়েকবছর আমাদের দেখা হয়নি। আমিও সুমুর সাথে আর যোগাযোগ করি নাই।
তবে হঠাৎ করে আয়াশ কি ভাবে জানতে পারে আমি সুমু কে ভালোবাসি।সে আমাকে খুব ভালোবাসে।
আমার সুখের জন্য আয়াশ নিজের সুখ বির্সজন দিতে পারে এটা আমি জানতাম। হয়তো শুরুতে যদি আয়াশ আমার আর সুমুর সম্পর্কের কথা জানতো তাহলে এতো কাহিনী হতো না আমাদের জীবনে।আয়াশের চেষ্টাতে আজ আমি সুমুকে নিজের করে পেয়েছি।
তবে সুমুর সেদিনের করা ওয়াদা যে এমর রুপে সামনে আসবে তা জানতাম না।

নিজের অতীতের স্মৃতিপট থেকে ঘুরে এসে বুঝতে পারে আসলে সেদিন যদি একটিবার নিষেধ করেদিতাম তাহলে আজ হয়তো সুমু এতোটা খারাপ কাজ করতে পারতো না।সত্যি ও আমার জন্য এসব করেছে।তবে আমি তো কখনো চাইনি সুমু এসব কিছু কুরুক।
আজ মনে হচ্ছে সুমুর দোষের ভাগিদার আমিও।

এদিকে আয়াশ হঠাৎ করে নিজেদের ব্যবসায়ী কাজে কিছুদিনের জন্য বাহিরে চলে যায়।যার কারণে কেউ আর সুমু আর আয়াজের ডির্ভোসের বেপারে কিছু বলে নাই।

আয়াজ নিজেকে রুমের মাঝে বন্দী করে রেখেছে।অরিন আয়াজের রুমের সামনে গিয়ে দরজাতে নক করে বলে,”ভাইয়া রে আজ আমার বিদায় এবাড়ি থেকে।আজকের জন্য অন্ততপক্ষে বোনের বিদায় দিতে বাহিরে আয়।আজ আয়াশ ভাই নেই কিন্তু তুমি তো আছো।জানি তোমাদের ছোট বোনটা অনেক খারাপ। আমাকে বুঝি মাফ করে দেওয়া যায় না।নিজের আপন বোন হলে কি কখনো আমার থেকে এভাবে মুখ ফিরিয়ে রাখতে পারতে?”

আয়াজ দরজা খুলে বাহিরে বেড়িয়ে এসে অরিন কে জড়িয়ে ধরে বলে,”একটা থাপ্পড় দিয়ে কান লাল করে দিবো।বেশি পাকনা পাকনা কথা শিখেছো তাই না?”

অরিন বলে,”না ভাইয়া সত্যি! আমি ছোট মানুষ হয়েও বড়দের মতো ভাব দেখিয়ে চলেছি অনেক সময়।তবে তোমরা কেউ কখনো আমাকে শাসন করো নাই।যদি শাসন করে আমার ভুল গুলো দেখিয়ে দিতে তাহলে হয়তো আমি সেদিন সুমুকে এতো অপমান করার সাহস করতাম না।সেদিন যদি তোমরা আমাকে একটা থাপ্পড় দিয়ে চুপ করিয়ে দিতে তাহলে হয়তো আজ আমাদের সবার জীবনে গল্পটা অন্যরকম হতো।”

আয়াজ বলে,”আসলে কিছু সময় আমাদের চিন্তা ভাবনা করে মানুষের সাথে কথা বলা উচিৎ। আবার কিছু পরিস্থিতিতে আমাদের অন্যায়ের প্রতিবাদ করা দরকার। সেদিন আমিও নিরব দর্শকের ভূমিকা পালন করেছিলাম।এটা আমার জীবনের সব থেকে বড় ভুল।তুই সুমু অনেক ছোট!তারপর ও কিভাবে সুমুর সাথে ঐ ভাষায় কথা বলাটা মেনেছি আল্লাহ জানে।”

অর্ণা এসে বলে,”দেখো কিছু পরিস্থিতি হঠাৎ করে সৃষ্টি হয়।যে পরিস্থিতিতে আমাদের বিবেক বুদ্ধির পরিক্ষা দিতে হয়।হয়তো তোমাদের থেকে ভুল হয়েছে।এই জন্য তো বলে,”মানুষের প্রথম বিদ্যালয় তার পরিবার।স্কুল তো শিক্ষিত করে তবে পরিবারের কাছে আমরা সুশিক্ষিত হবার শিক্ষা পাই।সেখানে তোমাদের সবার টুকটাক ভুল ছিলো।”

আয়াজ আর কথার উওর না দিয়ে নিচে এসে সব আয়োজনের দেখাশোনা করতে শুরু করে দেয়।
কিছু সময় পর রোহানের পরিবারের সবাই চলে আসে।

সবকিছু শেষে বিদায়ের সময় আয়াজ এসে রোহানের হাতে অরিনের হাত রেখে বলে,”আমরা আমাদের মতো করে শিক্ষা দিতে চেষ্টা করেছি। আজকের পর থেকে অরিনের সব দায়িত্ব তোমার।”

রোহান বলে,”ভাইয়া বোন আপনার। তবে সেই কিন্তু আমার বউ।তাই এখন স্বামী হিসাবে আমার উচিৎ ওকে নিজের মতো সঠিক সুন্দর শিক্ষায় দিয়ে আমার সাথে পথচলার মতো মানুষ তৈরি করা।আমার বউকে আমি আমার মনের ইচ্ছা মতো চলতে শেখাবো!যেখানে কোনো অহংকার, লোভ,অতিরিক্ত আকাঙ্ক্ষা থাকবে না।জীবনটা মোটামুটি ভাবে উপভোগ করার মতো পথের সন্ধান দিবো।”

এরপর অরিন একে একে সবার কাছে থেকে বিদায় নিতে থাকে।একটা মেয়ে জানে বাবার বাড়ি ছেড়ে যাবার কষ্ট কতোটা।যে বাড়িতে তার ২০টা বছর হাসি কান্নার নানারকম আয়োজনে মুখরিত থাকতো। আজকের পর সেই বাড়িতে যখন সে আসবে দুদিনের মেহমান হয়ে আসবে।শ্বশুরবাড়িতে স্বামীর সাথে সুখে শান্তিতে থাকলে কখনো আর পরিবারের সবার জন্য এতোটা কষ্ট লাগে না।কিন্তু যদি জীবনসাথী খারাপ হয় তাহলে সারাজীবন নষ্ট।
কান্নার সাগরের নিজেও ভাসে সাথে আপনজন দের কেও ভাসিয়ে রেখে অরিন রোহানের সাথে নিজের সংসারের দিকে চলে যায়।

এটা যেনো কেমন নিয়ম।বিয়ের আগে সব আত্মীয়-স্বজনেরা এসে বাড়িটা কে মুখরিত করে তোলে।কিন্তু মেয়ের বিদায়ের কিছু সময়পর সবাই একেঁ একেঁ বাড়িটা ফাঁকা করে দিয়ে চলে যায়।

কিছু সময়ের আয়োজনে কতো কাহিনী করতে হয়।তবে যতো যাই করো না কেনো সব শেষে নিজেদের কষ্ট সহ্য করে নিরবতা কে আলিঙ্গন করতেই হয়।

‘#ঝরা_পাতা🍂🍂
#Nishi_khatun
#পর্ব_৩৮

অরিনের বিদায়ের অনুষ্ঠানের পর কয়েকদিন পাড় হয়ে যায়।আয়াশ ব্যবসার কাজে দূরে থাকাতে অর্ণার সাথে তাদের দুষ্টু মিষ্টি প্রেমের কাহিনী মুঠোফোনের মধ্যে হচ্ছে।
এদিকে নতুন সংসারে হাল ধরেছে অপর দিকে রোহানের সাথে রোমান্স করা এই দুই নিয়ে বেশ জমজমাট চলছে।
শ্বশুরবাড়ির সবাই কে সাথে নিয়ে মিলেমিশে দিন কাটছে অরিনের।

দুই কন্যার জীবনে নতুন পাতার মতো ভালোবাসার সজীবতায় ছেঁয়ে গেছে।তবে অন্যদিকে যে কারো সংসারে ভাঙ্গন লেগেছে।

আমাদের দৈনন্দিন জীবনে নেওয়া কিছু সিদ্ধান্ত অনেক সময় আমরা চিন্তা ভাবনা ছাড়াই নিয়ে নেই।কখনো চিন্তা করে দেখি না এর প্রভাব কখনো আমাদের নিজেদের ব্যক্তিগত জীবনে পরবে কি না।

তবে মানুষ যখন রেগে থাকে স্বাভাবিক ভাবে সে ভুল সিদ্ধান্ত নিবে।রাগি ব্যক্তি কখনো সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারে না।তাই যে ব্যক্তি ভুল কথা বলছে তাকে ভুল চিন্তা থেকেও দূরে রাখা উচিৎ। কেউ রেগে থাকলে তাকে বোঝানো উচিৎ। সব কথা সব সময় হেলায় ফেলায় রাখতে নেই।

আয়াজ যদি সেদিন সুমুকে অযথা ওয়াদা নেওয়া থেকে বিড়ত থাকতে বলতো তখন হয় সুমু প্রতিশোধ নেওয়ার কথা ভুলে যেতো।এটাও আয়াজের বোঝার ভুল ছিলো।সে তো জানতো তা সুমুর মতো সাধারণ মেয়ে রাগলে এমন ভয়ংকর হয়ে যাবে।

আয়াজের দুনিয়াটা নিজের রুমেে মাঝে বন্দী করে রেখেছে।আয়াজ রুমের বাহিরে যেতে লজ্জা পায়।
হয়তো সবাই ওর দিকে করুণার নজরে তাকাবে।
একজন স্বামীর আত্মসম্মান তার বউ!
সেই বউয়ের জন্য আজ তার আত্মসম্মান শেষ হয়ে গেছে।

এভাবে বেশকিছু পার হয়ে যায়।
আয়াশ নিজের কাজ সম্পন্ন করে ফিরে আসে।
বাড়িতে এসে তার ভাইয়ের এমন সিদ্ধান্তের কথা শুনে স্তব্ধ হয়ে থাকে।যে ভাইয়ের খুশির জন্য এতো কিছু করেছি।সেই ভাই নিজের খুশি গুলোর গলা টিপে হত্যা করছে।

আয়াশ অর্ণাকে সাথে করে রাতে ছাদে নিয়ো গিয়ে গভীর ভাবনাতে মগ্ন হয়ে যায়।

অর্ণা আয়াশ কে প্রশ্ন করে, কী এতো মনোযোগ দিয়ে ভাবছো?”

আয়াশ একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে,”সুমু আর আয়াজের সম্পর্কের কথা চিন্তা করছি।আয়াজ সত্যি প্রচুর পরিমাণে ভালোবাসে মেয়েটাকে। কিন্তু সুমু কে ছাড়া একা কখনো ভালো থাকতে পারবে না।”

অর্ণা বলে,”আমরা কী কিছু করতে পারি না ওদের জন্য?সুমুর এমন ব্যবস্থা করি যাতে একটু শাস্তি পাবে তবে ভালোবাসার মানুষকে পাবে দিন শেষে।আমরা তো জানি নিজের ভালোবাসার মানুষের কাছে থেকে দূরে থাকা কতোটা কষ্টের। ”

আয়াশ বলে,”হুম,দেখি চিন্তা করে!কিছু করতে পারি কি না!”

এদিকে রোহানের বাড়িতে অরিনের দিন গুলো বেশ ভালোই যাচ্ছে। রোহান প্রতিদিন সকালে অফিসের জন্য বেড়িয়ে যায় আর বিকালবেলা ফিরে আসে।রোহানের অনুপস্থিতিতে সংসারের সব কাজকর্ম শেষ করে শুয়ে বসে দিন কাটছে। মাঝে মাঝে অরিন বিরক্ত হয়ে যায় এমন রুটিন মাফিক জীবনে। তবে একটা কথা ভেবে আমার নিজেকে বুঝ দেয়!রোহান প্রতিদিন আসার পথে অরিনের জন্য কিছু না কিছু নিয়ে আসে।আর কাজের ফাঁকে ফাঁকে অরিনের সাথে ফোনে কথা বলা,টেক্সট করা এসবের মধ্যে বেশ একটা প্রেম প্রেম ভাব আছে।এসব নিয়ে আপাতত আলহামদুলিল্লাহ্‌ ভালোই চলছে অরিন রোহানের সংসার।

আয়াশ একদিন হঠাৎ করে অর্ণা আর আয়াজ কে সাথে নিয়ে বেড়িয়ে পড়ে।সারাপথ অর্ণা আয়াশ কে প্রশ্ন করে আমরা কোথায় যাচ্ছি? তবে আয়াশের দিক থেকে কোনো উওর আসে না।অর্ণা একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে চুপচাপ বসে থাকে।

আয়াজ নিজের নিরবতা ভেঙ্গে বলে ওঠে,”তোরা দুজন যাচ্ছি রোমান্স করতে!কিন্তু এটা বুঝতে পারছি না এসবের মাঝে আমাকে কেনে টেনে আনতে গেছিস। অযথা তোদের দুজনের মধ্যে কাবাবের হাড্ডি হয়ে পড়ে আছি।”

আয়াশ রাগী কন্ঠে বলে ওঠে,”উফফ তোরা দু জন কি শুরু করেছিস?এখানে কেউ রোমান্স করতে যাচ্ছি না।আমরা পিকনিক করতে যাচ্ছি। ”

অর্ণা বলে,”আরে পিকনিকে যাচ্ছি তাহলে তিন জন কেনো বাড়ির সবাইকে সাথে করে নিয়ে আসলেই তো বেশি মজা হতো।”

আয়াজ বলে,”তা এই রাতের বেলা কোন পিকনিক স্পট খোঁলা থাকে স্যার জানতে পারি?”

আয়াশ হেসে উওর দেয় তোর আর আমার শ্বশুরবাড়ির দরজা তো খোঁলা আছে।

অর্ণা বলে,”আবার বাবার বাড়ির খবর জানি না।তবে আমার মায়ের তৈরি বাড়িটা ওভাবে পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে আছে।ইচ্ছা হলে সে বাড়িতে যেতে পারেন।তবে সেই বাড়ি ছাড়া আপনার শ্বাশুড়ির আর কোনো বাড়ি নেই।”

আয়াজ বলে,”আমি বউকে ছেড়ে দিয়েছি।তাই আপাতত আমারো কোনো শ্বশুরবাড়ি নেই।”

আয়াশ অর্ণার কথার কোনো উওর না দিয়ে আয়াজের কথার সুর ধরে বলে,”আমি বউ কে ছেড়ে দিয়েছি। শুধু কাগলে সাইন করে দিলে ডির্ভোস হয় না।কাগজ আদালতে পেশ করতে হয়।দুজনকে সেই কাগজে সাইন ও করতে হয় মিস্টার গাধা। ”

আয়াজ তাচ্ছল্যের সাথে বলে,”বাকিটা কাজ শ্বশুরের ঘাড়ে চাপিয়ে দিয়েছি। ”

আয়াশ বলে,”হ্যাঁ এটা তো মহৎকাজ তাই না।”

এরপর আর কেউ কোনো কথা বলে না।আয়াশ সোজা তার গাড়িটা অর্ণার মামা বাড়ির সামনে এনে দাঁড় করিয়ে দেয়।

ওদের গাড়ি দেখার সাথে সাথে অর্ণার মামা মামী বাড়ির বাহিরে বেড়িয়ে আসে।আয়াশ আগেই তাদের সাথে যোগাযোগ করেছিল। তাই মামী আর রাইসা জানে সুমু বেঁচে আছে।

তিনজন গাড়ি থেকে নেমে ওদের বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করে।অর্ণা বেশ ইমোশনাল হয়ে যায় এবাড়িতে এসে।সেদিন যদি ঐ ভাবে বিয়েটা না হতো তাহলে হয়তো আয়াশের মতো পুরুষ কে স্বামী রুপে পেতো না।আজ অর্ণা মনে মনে সুমু কে ধন্যবাদ দিচ্ছে। কারণ ওর জন্য আয়াশ কে পেয়েছে।আর আয়াশ হঠাৎ করে না বলে এভাবে মামার বাড়িতে এনে সারপ্রাইজ দিবে ভাবতেও পারে নাই।

সবার কথাপ্রসঙ্গে আয়াজ বুঝতে পারে এটা আয়াশের মামা শ্বশুরের বাড়ি।আয়াজ মুখ বাংলার পাঁচের মতো করে আয়াশের কানের কাছে গিয়ে বলে,”তুই এসেছিস শ্বশুরের বাড়িতে তাতে আমাকে কেনো দারোয়ান বানিয়ে সাথে আনতে গেছিস? ”

আয়াশ ফিসফিস করে বলে,”এবাড়িতে দুইটা শালি আছে আমার।দরকার হলে একটা কে তোর ঘাড়ে ঝুলিয়ে দিবো।”

অর্ণা মামীর সামনে গিয়ে বলে,'”মামী তুমি ভয় পেওনা।তোমার সংসারে পড়ে থাকতে আসি নাই।আমরা এখানে থাকলে যতো খরচ হবে সব খরচ আমরা করবো।তুমি আমাকে নিয়ে ভয় পেওনা বুঝলে!”

আয়না বেগম অর্ণার হাত জড়িয়ে ধরে বলে,”মা’রে আমাকে মাফ করে দে।আমি যার খুশির জন্য তোর সাথে সেদিন এমন খারাপ ব্যবহার করেছি সেই মেয়ের জন্য খুশি কিনতে পারি নাই।”

অর্ণা মামীর হাত ধরে বলে,”প্লিজ মামী আমার হাত ধরে মাফ চেয়ে আমাকে ছোটো করে দিও না।আর তুমি কার সুখের জন্য আমার সাথে এমন কাজ করলে জানতে পারি?”

মামী চোখেরজল মুছে বলে,”তোর ঐ ভাবে বিয়ের কিছুদিন আগে হঠাৎ করে সুমু আমাদের বাড়িতে আসে।সে এসে আমাকে একটা প্রস্তাব দেয়।ওর বড় ভাইয়ের সাথে রাইসার বিয়ে দিবে।রাইসা বড় বাড়ির বউ হবে।অনেক সুখে থাকবে।অনেক রকমের লোভ দেখায়।নিজের মেয়ের সুখের কথা চিন্তা করে খুশিতে গদগদ হয়ে যায়।তবে সুমু আমাকে আর রাইসাকে একটা শর্ত দেয়।”

অর্ণা প্রশ্ন করে কী শর্ত?

মামী বলে,”আপনার মেয়ের সুখের জন্য অর্ণার একটু ক্ষতি করতে হবে।তোর খারাপ করার কথা শুনে রাইসা সুমুর প্রস্তাব কে না করে দেয়।কিন্তু আমি মেয়ের সুখের জন্য রাইসাকে নিজের ওয়াদা দিয়ে বলে সুমুর কথায় রাজী হতে।”

সুমু বলে,”অর্ণা বেশি খারাপ কিছু করবো না।শুধু একটু নাটক করে বিয়ে দিতে হবে।”

তোর বিয়ের কথা শুনে আমি আর রাইসা রাজী হয়ে যায়।এই বিয়েতে আবার খারাপের কি আছে।
তোকে বিয়ে দিয়ে তো আমি বিদায় করতে চাইছিলাম।তাই জন্য তো সুমুর কথা মতো রাইসা নাটক শুরু করে।রাইসার নাটকে আমিও নিরবে সাহস দিতে থাকি।
অবশেষে তোর বিয়েটা তো হয়ে যায় ভালোই ভালোই।

অর্ণা বলে,”তাহলে এখন সমস্যা কোথায়?”



চলবে…….

চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here