#ঝরা_পাতা🍂🍂
#Nishi_khatun
#পর্ব_৪৩
অর্ণাকে সারপ্রাইজ দিতে মামুজানের পেছন থেকে রাইসা আর রাইমা বেড়িয়ে এসে বলে,”সারাবেলা মামুজান আর স্বামী নিয়ে ব্যস্ত থাকলে হবে?
আমাদের দিকে একটু নজর দাও বুবুজান!”
অর্ণা ওদের দু বোন কে দেখে ছুটে যেতে লাগে।
তার আগে আয়াশ অর্ণার হাত ধরে রাগের চোখে তাকিয়ে থাকে।
অর্ণা বুঝতে পারে ওর এভাবে দৌড়ানি দেওয়া মোটেই উচিৎ হয়নি এমন অবস্থায়।অর্ণা নিজের ভুল বুঝতে পেরে আয়াশের দিকে ইনোসেন্ট চেহারা করে তাকিয়ে থাকে।
দুই বর বউয়ের ইনোসেন্ট মার্কা রোমান্স দেখে রাইসা দৌড়ে গিয়ে অর্ণা কে জড়িয়ে ধরে।রাইমা অর্ণাকে জড়িয়ে ধরে।
অর্ণা এতোদিন পর দুইবোন কে এভাবে দেখতে পারবে কোনোদিন ও ভাবে নাই।তারপর দুইবোনের সাথে অর্ণা কথা বলাতে এতোটা ব্যস্ত হয়ে যায় যে আশেপাশে সবার কথা সে ভুলে যায়।
অর্ণা আয়াশের দিকে তাকিয়ে বলে,”আপনি আগে থেকে জানতেন তাই ন!ওরা এখানে আসবে?”
আয়াশ বলে,”শুধু জানতাম না!ওদের এখানে আমি আসতে বলেছি।”
অর্ণা রাইসাদের বলে,”তোমাদের এখানে কিছুদিন থাকতে হবে।”
রাইসা বলে,”ওমা সে কি কথা?আমরা এখানে থাকতে আসি নাই।আমরা তোমাকে সাথে করে নিয়ে যেতে এসেছি।”
অর্ণা এ কাথা শুনে তো খুব খুশি হয়।তার চোখদুটো ছলছল করতে শুরু করে।এতো খুশি সে কোথায় রাখবে?
অর্ণার মামাজান ওর শ্বশুরবাড়ির সবার সাথে কথা বলতে থাকে অর্ণা কে তাদের বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার জন্য।
এমন সময় আয়াজ এসে মামুজানের মুখের মধ্যে মিষ্টি ঢুকিয়ে দিয়ে বলে,”সেসব বড় দের আলোচনা পরে হবে।আগে নতুন অতিথি আসবে তার জন্য মিষ্টি মুখ করে নিন।”
মামুজান মিষ্টিটা খেয়ে আয়াজের হাত থেকে মিষ্টির প্লেট নিয়ে সবাইকে মিষ্টি মুখ করাচ্ছিল। এমন দৃশ্য দেখে অর্ণার কলিজায় অনেক শান্তি লাগছিল।
তবে কথায় আছে “অভাগীর সুখ বেশি সময় রইনা।”
মামুজান সদর দরজার দিকে তাকাতেই তার হাত থেকে মিষ্টির প্লেটটা পড়ে যায়।কাঁচের প্লেট টুকরো-টুকরো হয়ে চারিদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে।
অর্ণার মুখের হাসিটা মলিন হয়ে যায়।মামার চোখে চোখ পড়তেই অর্ণা চোখ সরিয়ে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকে।
মামুজান অর্ণার কাছে এসে ওর হাত ধরে বলে,”এতো কাহিনী হবার পরেও তুই ঐ লোকটাকে মাফ করে দিয়েছিস? ”
অর্ণা বলে,”মামুজান তুমি আড়ালে চলো তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে।প্লিজ মামুজান তোমার দোহাই লাগে তুমি সবার সামনে কিছু বলো না।”
অর্ণা মামুজানের হাত ধরে সেখানে থেকে চলে যেতে লাগে তার আগেই আয়াশ অর্ণার হাত ধরে বলে,”কী এমন গোপন কথা আছে মামার সাথে তোমার?যে কথা সবার সামনে বলা যাবে না?”
অর্ণার মামুজান দরজার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা লোকটার দিকে আঙ্গুল দিয়ে ইশারা করে বলে,”আয়াশ বাবা ঐ লোকটা কে হয় তোমার?”
আয়াশ তার মামাকে জড়িয়ে ধরে বলে,”আমার একমাএ one & only মামাবাবু।”
অর্ণার মামা এবার বলে,”ঐ লোকটা শুধু তোমার মামা?আর কোনো সম্পর্ক নেই তার সাথে?”
আয়াশ একটু অবাক হয়ে জিজ্ঞাস করে,”আপনি কি বলতে চাইছেন? ”
এবার শাহেদ মিয়াঁ নিজের কন্ঠ উচুঁ করে বলে,”ঐ লোকটার সাথে তোমার আরো একটা সম্পর্ক আছে জামাই বাবাজি। ”
আয়াশ এবার অর্ণার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে থাকে।অর্ণার মনের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে ঝড় তুফান শুরু হয়ে গেছে।
অর্ণা মামুজান কে বলে,”মামুজান পুরাতন কথা বাদ দাও না।এসব বলে কি হবে।আমাকে আমার মতো থাকতে দাও।”
শাহেদ মিয়াঁ বলে,”অর্ণা তুই থাম!আমাকে কথা বলতে দে বলছি।তা আয়াশ বাবাজি তোমার বউয়ের বাবার নামটা কি জানো?”
আয়াশ মাথা চুলকিয়ে বলে,”আসলে অর্ণার বাবা মায়ের নাম কখনো শোনা হয় নি।”
শাহেদ মিয়াঁ বলে,”অর্ণার মায়ের নাম তারিণ ইসলাম। আর বাবার নাম অয়ন খান।”
অর্ণার নাম গুলো শুনে হাত পা ঠাণ্ডা হয়ে আসছিল।
মমতা খান এই নাম গুলো শুনে অবাক হয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে।মমতা খানের মা বাড়ির ভেতরে এসে বলে, “এই নাম গুলো খুব চেনা চেনা লাগছে।”
আয়াশ বলে,”আমার মামার নাম অয়ন খান।”
শাহেদ মিয়াঁ গজ্রে উঠে বলে,”তোমার পাশ দাঁড়িয়ে থাকা এই ভালো মানুষের মুখোশ পড়া শয়তান লোকটা আর কেউ না! তারিফা ইসলাম অর্ণার জন্মদাতা পিতা।”
এমন কথা শুনবার জন্য কেউ মোটেও প্রস্তুত ছিলো না।রাইসা অর্ণাকে ধরে পাশে একটা চেয়ারে বসিয়ে দেয়।
অয়ন খান গর্জে উঠে বলে,”কী ধরণের ফাইজলামি এসব?আমি মেয়েটাকে চিনি না।না আপনাকে চিনি।আমার বউ ছেলে মেয়ে আপনার সামনে আছে।আমার সম্মান নিয়ে অযথা মিথ্যা কথা বলবেন না।বড়লোক মানুষ দেখেছেন আর মিথ্যা আরোপ দিতে চলে আসছেন?”
শাহেদ মিয়াঁ অর্ণার কাছে দাঁড়িয়ে বলে,”হ্যা আমার বোন আর তার মেয়েকে এখন তো চিনবেন না আপনি।তাহলে অর্ণাকে খুন করার জন্য কেনো আমাদের ছোট অঞ্চলে গিয়েছিলেন?আর সুমাইয়া আপনাকে সাহায্যদান করেনি?এসব কথা এখন অস্বীকার করবেন?”
আয়াশ শাহেদ মিয়ার কাছে এসে বলে,”দেখুন মামা! আপনার হয়তো কোথাও কোনো ভুল হচ্ছে।আমার মামা এমন ব্যক্তি নয়।”
অর্ণা আয়াশের কথা শুনে তার দিকে তাকিয়ে থাকে।অর্ণার এই চাহনিতে কিছু একটা ছিলো যা আয়াশের বুকের মাঝে গিয়ে আঘাত করছিল।
এমন সময় আয়াশের নানি মা সামনে এসে বলে,”আয়াশ নানুভাই ঐ লোকটা ঠিক কথা বলছে।আজ থেকে বহু বছর আগে আমার অয়ন তারিণ নামের একটা মেয়েকে বিয়ে করে আমাদের বাড়িতে এনে তোলে।তবে আমরা ওদের বিয়েটা মেনে নেই নি।
ওদের দু জন কে বাড়ি থেকে বাহির করে দেই।
তার কয়েক বছর পর তোর মামুজান ফিরে আসে নতুন বউ সাথে করে।এতো বছর তাকে ফিরে পেয়ে আমরা কেউ আর আগের বউ সম্পর্কে তাকে কোনো রকম প্রশ্ন করি নাই।সেদিন এরা দুজনে এসে আমাদের পা জড়িয়ে ধরে কান্না করে।তাই এদের আর অপমান করি নাই।”
পরে একদিন নিজে থেকে অয়ন আমাদের সবার কাছে বলে,”ওর আগের বউটা না কি বাচ্চা হতে গিয়ে মারা গেছে।তারপর সে এই মেয়েকে বিয়ে করে।”
অর্ণা তার মামুজানের হাত ধরে বলে,”মামুজান সত্যি যদি আমি জন্মনিতে গিয়ে মারা যেতাম তাহলে খুব বেশি ভালো হতো।আমাকে বাবা মা ছাড়া এতো বছর এতিমের মতো বড় হতে হতো না।”
আয়াশ সহ তার পুরো বাড়ির মানুষেরা জাস্ট বড় ধরনের একটা শক পেয়েছে তার নানির কথায়।
আয়াশ বিশ্বাস করতে পারছে না, যে অর্ণার সাথে অন্যায় কারী আর কেউ নয় তার মামা।
অয়ন খানের ছেলে ওঠে বলে,”দাদী মা তো বলছে বাবার প্রথম বউ মারা গেছে।তারপর ও কেনো সন্দেহের তীরটা আমার বাবার দিকে ছুড়ে দিচ্ছিন সবাই?”
অয়ন খানের মেয়ে বাবাকে জড়িয়ে ধরে।
এই দৃশ্য দেখে অর্ণার কলিজায় মোচড় দিয়ে ওঠে।
সে ছোট বেলায় ঠিক এভাবে তো তার বাবাকে জড়িয়ে ধরতো।
তবে আজ পরিস্থিতি তার বিপরীতে।আজ অর্ণার স্থানে ওর নিজের সৎ বোন ভাবতেই দম আটকে আসছিল।
আয়াশ অর্ণার হাত দুটো মুটোর মধ্যে বন্দী করে চোখে চোখ রেখে অয়ন খান কে দেখিয়ে বলে,”ঐ লোকটা তোমার বাবা?”
অর্ণা অশ্রুসিক্ত নয়নে উপরে নিচে করে হ্যাঁ বলে।
আয়াশ অর্ণার হাট দুটো ছেড়ে দিয়ে ওর কাছে থেকে দূরে সরে আসে।
অর্ণা বুঝতে পারছে আয়াশ অর্ণার জন্ম পরিচয়ের সত্যিটা হজম করতে পারছে না।আসলে আমাদের সামনে যদি কেউ মুখোশ পড়ে দাঁড়িয়ে থাকে তাহলে তাকে চেনাটা খুব কষ্টের।এখানে অয়ন খান নিজের জন্য আলাদা একটা দুনিয়া সাজিয়ে রেখেছে।
তার নিজের দুনিয়া। যেখানে সে যেমনটা চাইছে নিজেকে সবার সামনে ঠিক তেমন ভাবে পরিবেশন করেছে।
তাই তার আরেকটা চেহারা সম্পর্কে তার আপন মানুষেরা অবগত নয়।অর্ণার এখন এটা ভয় করছে এই সত্যিটা অর্ণার সংসারের ভাঙ্গনের কারণ না হয়ে যায়।
‘
‘#ঝরা_পাতা🍂🍂
#Nishi_khatun
#পর্ব_৪৪
আয়াশ অর্ণার সামনে হাটুগেড়ে বসে বলে,”আরে আমার বউ দেখছি আমার আপন মামাতো বোন!”মামাতো বোন যখন বউ হয় তখন সম্পর্কের ডোর বেশি পরিপক্ব হয়।তবে আমার বউয়ের চেহারা দেখে বোঝা যাচ্ছে না।আচ্ছা অর্ণা তুমি তো তাহলে আগে থেকে জানতে আমার আর তোমার সম্পর্কটা আত্মীয়ের।আর সব থেকে বড় কথা ঐ লোকটা তোমার পিতা!এটা কি আমার থেকে আড়ালে রাখা তোমার উচিৎ হয়েছ?”
কথা গুলো শান্ত সুরে বলে নির্বাক দৃষ্টিপাত করে অর্ণার দিকে।
অর্ণার আয়াশে চোখে একরাশ অভিযোগ দেখতে পাচ্ছে। সে কাঁপাকাঁপা কন্ঠে বলে,”আ-মি আসলে..!”
আর কিছু বলার আগেই আয়াশ অর্ণাকে জড়িয়ে ধরে বলে,”থাক তোমাকে কিছু বলতে হবে না।আমি বুঝতে পারছি তুমি জানতে না ঐ লোকটা আমার মামা।আর কোন মুখে বা নিজের পিতার পরিচয় দিতে।যে ছোট বেলায় মারা গেছে তোমার কাছে।তাকে অযথা জীবিত করার কোনো মানে হয় না।”
আয়াশ অর্ণাকে ছেড়ে রাইসার কাছে রেখে সোজা ওর মামার শার্টের কলার চেপে ধরে জোড়ে গর্জে উঠে বলে,”আপনার সাহস হয় কি করে?আমার বউকে হত্যার প্লানিং করার?যে মেয়ের সারাজীবনে খোঁজ খবর নিলেন না সেই মেয়ের জীবনে হঠাৎ করে অভিসাপ হয়ে আসলেন কেনো?”
অয়ন খান আয়াশ কে নিজের কাছ। থেকে দূরে সরিয়ে দিয়ে বলে,”আমার কাছে আমার আত্মসম্মান বেশি মূল্যবান। আমি কোনোদিন ও চাইনি আমার অতীতে করা ভুলটা কখনো আমার বর্তমান কে নষ্ট না করে দেয়।আমি নিজের সন্তানদের কাছে আদর্শ পিতার ছবিটা কখনো নষ্ট করতে চাই না।আমার পরিবার, সমাজ সবার কাছে আমি আমার এই মেয়ের পরিচয় আনতে চাই না।আর যে মেয়ের সাথে আমার সারাজীবনে কোনো সম্পর্ক ছিলো না।সে হঠাৎ করে তোর করা একটা ভুলের জন্য আমাদের পরিবারের মাঝে উঠে আসবে এটা আমি কখনো মেনে নিতে পারি নাই।তাই ওর মতো মেয়েকে এপৃথীবতে তে রাখার ইচ্ছা ছিলে না।”
অর্ণা অয়ন খানের সামনে দাঁড়িয়ে বলে,”আমি কখনো আপনাকে বাবা ডাকতে যায়নি।এতো বছর যখন নিজেকে এতিম ভেবে এসেছি তখন হঠাৎ করে কি ভাবে আপনার সুখের সংসারের আগুন দিতে যাবো ভাবলেন আপনি?”
অয়ন খান বলে,”আমার ভাগ্নের বউ হয়ে এবাড়িতে আসার পর যখন নিজের বাবাকে সামনে দেখতে পাবে তখন এমনি একদিক ভুল করে হলেও বাবা বলে আমাকে ডাকবে।আর সেদিন এমন পরিস্থিতিতে পরার থেকে তো না পড়ার ব্যবস্থা করা উচিৎ।”
অর্ণা এবার শক্ত কন্ঠে বলে ওঠে,”যে মেয়ের কোনো খোঁজ খবর নিলেন না সারাজীবনে।হঠাৎ করে তার বিয়ের খবরটা কি ভাবে জানতে পারলেন? আর আপনার বিবেকে একটু বাধলো না নিজের মেয়ের সাথে এমন কাজ করতে?আপনার রক্ত তো আমার শরীরে বইছে।”
অয়ন খান বলে,”যেদিন আয়াশে সাথে তোমার বিয়ে হয়। সেদিন ভুল করে আমি সেই বাড়িতে পৌঁছে যায়।আমার চিনতে একটু কষ্ট হয়নি তুমি তারিণের মেয়ে।একদম মায়ের চেহারা কপি।কেউ তোমাকে আর তারিণ কে আলাদা করতে পারবে না।এতো লোকজনের জন্য আয়াশ আমাকে দেখতে পাই নি।আর আয়াশ সেখানে থাকার জন্য আমি সবার সামনে যেতে পারি নাই।আয়াশ নিজের রাগ কন্ট্রোল করতে না পেরে ভুল সিদ্ধান্তের বসে তোমাকে বিয়ে করে।তবে আমার ভাগ্য অনেক ভালো যে আয়াশ তোমার কথা কাউকে না বলে ওখানে রেখে চলে আসে।আর আমিও সুযোগ বুঝে তোমার কলেজে থেকে তোমার সম্পর্কে খোঁজ খবর নিতে শুরু করি।পরে ভাগ্যের চক্রে সুমুর সাথে দেখা।”
সে বলে,”শএুকে বেশি বাড় বাড়তে দিতে নেই।বাড়ার আগেই ভেঙ্গে দিতে হয়।তাই তোমাকে আয়াশের জীবন থেকে চিরতরে সরিয়ে দিতে একটু প্লানিং করি।”
অর্ণা বলে,”আমি কি ডাস্টবিনের কোনো নোংরা? যে আমাকে চিরদিনের জন্য সরিয়ে দিতে হবে।আরে আপনি কি সারাবেন আমাকে?আমি তো কোনোদিন ও আপনাকে আমার বাবার পরিচয় দিতে দিবো না।আমি আপনাকে ঘৃণা করি।আপনি এমন একজন পিতা যে নিজেন সন্তানের জীবনের সব থেকে বড় অভিসাপ। আপনার ছায়াও আমি মাড়াতে চাই না কোনোদিন ও বুঝলেন মিস্টার অয়ন খান।”
এতো সময় ধরে অয়ন খানের ছেলে মেয়ে বাবার এমন কুচ্ছিত রুপের বর্নান শুনে একদম স্তব্ধ হয়ে আছে আছে।তাদের পিতা কি ভাবে পারলো নিজের মেয়ের সাথে এমন কাজ করতে?কই আমাদের তো তার চোখের মনি করে রাখে তাহলে এই মেয়ের সাথে এতোটা নিকৃষ্ট ব্যবহার কেনো?একটা পিতা কি করে নিজের সন্তানদের মধ্যে পার্থক্য করতে পারে?একদিকে আমাদের জন্য অসীম ভালোবাসার সাগর।অন্যদিকে কুচ্ছিত নোংরা মানুষিকতার পরিচয় দিয়েছে।শুধু মাএ নিজের আত্মসম্মান বজায় রাখতে কেউ এতোটা নিচু মানুষিকতার পরিচয় দিতে পারে ভাবতেই গা গুলিয়ে উঠছে।এমন পাপি ব্যক্তির সাথে আর যাই হোক থাকতে নেই।সে আমাদের সাথে এমন কিছু করবে না তার কোনো গ্যারান্টি নেই।
বাড়ির পরিবেশ এতোটা উত্তেজিত জনক অবস্থার সৃষ্টি করেছে তার প্রভাব অর্ণার উপর পরতে শুরু করে।
অয়ন খানের ছেলে তার মা কে প্রশ্ন করে,”মা তুমি কি জানতে বাবার আগের পক্ষে একটা মেয়ে আছে?মানে আমাদের একটা বড় বোন আছে?”
অয়নের স্ত্রী বলে,”হ্যাঁ জানতাম! তবে তোমার বাবা তাকে আমাদের জীবনে কখনো জড়াতে চাই নি।আর আমিও নিজের সংসারে সতীনের বোঝা টানতে চাইনি।কখনো তার আগের পক্ষের মেয়ের কথা জানার আগ্রহ সৃষ্টি হয় নি আমার।কী দরকার আগ বাড়িয়ে মাথা পেতে ঝামেলা নেওয়ার।”
অর্ণার ভাই নিজের মায়ের মন্তব্য শুনে বুঝতে পারে তারা অযথা মূর্খদের সাথে তর্ক করছে।তার বাবা যেমন তার মাও ঠিক তেমন।এনারা নিজেদের চেহারাটা কে মুখোস দিয়ে ঢেকে রেখেছে।এদের দুইটা রুপ।এরা নিজের স্বার্থের জন্য সব কিছু করতে পারে।যে বাবা নিজের মেয়ের সাথে এমন জঘন্যতম আচরণ করতে পিছপা হয়নি সে আমাদের সাথেও এমন করবে না কখনো তার গ্যারান্টি নেই কোথাও।
অয়নের ছেলে অর্ণার কাছে গিয়ে বলে,”বড় বোন কখনো ভাবী হতে পারে না।হোক না কেনো সে সৎ বোন।তবুও সে বোন।তাকে ভাবী ঢেকে পাপ করতে পারবো না।আর না কোনোদিন নিজের বাবা মায়ের করা ভুলের জন্য মাফ চাইতে পারবো।তবে তোমার সাথে যে অন্যায় করেছে তাকে আল্লাহ শাস্তি দিবে।আজকের পর থেকে অয়ন খানের কোনো পুএ সন্তান থাকবে না।আজ এই মূর্হত্ব থেকে অয়ন খানের সাথে আমাদের সব সম্পর্ক শেষ।আমি কখনো আর তাকে বাবা ডাকতে পারবো না।তাহলে বার বার আপুর কথা মনে হবে।”
অয়ন খান বলে,'”বাবু এগুলো কোন ধরণের দুষ্টুমি হচ্ছে?তুমি তোমার বাবার থেকে দূরে থাকতে পারবে না!”
অয়নের ছেলে বলে,”চার পাঁচ বছরের মেয়ে যদি মা বাবা কে ছাড়া একা থাকতে পারে সেখানে তো আমি একজন সাবালক। আমার সৎ বোন কে তো সঠিক বিচার দান করতে পারবো না।তবে আপনাকে সঠিক শাস্তি দিতে পারবো।আমার আজ থেকে কেউ নেই।ঐ এতিম বোনটার মতো আজ থেকে আমিও একা এই কথা বলে চলে যায়।
এতো কাহিনী শুনে দেখে অর্ণার শরীর খারাপ করতে শুরু করে।শাহেদ মিয়া সেখান আর এক মূর্হত্ব না দাঁড়িয়ে সোজা অর্ণার হাত ধরে বাড়ির বাহিরে নিয়ে চলে আসে।আজকে সে এই অবস্থায় অর্ণাকে তার সাথে গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছে।
অয়ন খানের মেয়েটা বলে,”তোমাকে বাবা ডাকতেও আমার রুচিতে বাধছে।আমি একটা মেয়ে হয়ে কি করে তোমার এমন অন্যায় কাজকে প্রশ্রয় দিবো?নাহ এর শাস্তি ভাইয়া তোমাকে দিয়েছে। আমিও দিবো।দেখি তোমার আত্মসম্মান কোথায় রাখো।আজ তোমার সম্মান ধুলোময়লাতে মিশে যাবে।”
আয়াজ সদর দরজার সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে দূরে থেকে সবটা পর্যবেক্ষণ করছে।আসলে কেউ যদি নিজের আত্মসম্মান বাঁচাতে এমন সিদ্ধান্ত নিতে থাকে তাহলে আর সমাজে ভালো মানুষের খোঁজ পাওয়া দায় হয়ে যাবে।
অয়নের মেয়ে আয়াজের সামনে গিয়ে বলে,”আয়াজ ভাইয়া আমার বাবার জন্য আপনার সংসারটা ভেঙ্গে গেছে তাই না।আমি আপনাকে নতুন সংসার উপহার দিতে চাইছি।আপনি কি রাজী?”
আয়াজ অবাক হয়ে প্রশ্ন করে,”কী বলতে চাইছো তুমি মেঘা?”
মেঘা বলে,”আমি আপনাকে আজ এবং এখুনি বিয়ে করতে চাইছি।নিষেধ করবেন না।”
মেঘার এমন কথায় সেখানে উপস্থিত সবাই আকাশের উপর থেকে পড়ে এমন অবস্থা।
আয়াজের তো মেঘার কথা শুনে মেজাজ পুরো বিগড়ে যাওয়ার অবস্থা। সে তো পারলে এখুনি মেঘাকে তুলে আঁছাড় দেয়।
আয়াজ কঠোর কন্ঠে বলে,”কী ধরণের বেহায়াপনা এসব মেঘা?জানো কেমন ধরণের কথা বলছো তুমি?
একটা বাচ্চা মেয়ে তুমি!নাক টিপলে দুধ বেড়োবে।
সে আসছে বিয়ে করতে।যাও নিজের ফ্যামিলির সমস্যা সমাধান করো এসব আজেবাজে চিন্তা বাদ দিয়ে।”
(যারা অধৈর্য হয়ে গেছেন তাদের উদ্দেশ্যে বলছি।
গল্পের দুই তিন পর্বে ইনশাআল্লাহ ইতি টানা হবে।)
‘
‘
‘
চলবে…..
‘
চলবে….