প্রতিশোধ পর্ব ৪

#প্রতিশোধ
#পার্ট_4

__ আবির মেয়েটি কে গাড়িতে বসিয়ে দিয়ে নিজেও তার পাসেই বসে ড্রাইভার কে গাড়ি চালাতে বলে। ইশারায় ড্রাইভার কে এক যায়গায় যেতে বলে, হয়তো আবির আগেই লোকেশন বলে রেখেছে।

__ তা কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন আমাকে মিঃ স্যার।

__ গেলেই দেখতে পাবে মিস নিরা।

__ নাম কিভাবে জানলেন? কিছুক্ষণ আগেও তো নাম জিজ্ঞেস করছিলেন?

__ কিছুক্ষণ পরেই বুঝতে পারবে সেটা।

__ হুহ, আপনি সব পারেন, তুলে নিয়ে আসতে যখন পেরেছেন, অন্য কাজ ও কোন ব্যাপার না।

__ একদম চুপ, বেশি কথা বলা পছন্দ করিনা আমি। ( জোরে করে বলে) নিজের অসম্মানের কথা ড্রাইভার এর সামনে বলা লাগবে নাকি। ( নিরার কানের কাছে ফিসফিসিয়ে বলে)

______ নিরাও আর কিছু বলেনা, অন্যায় করে এখন ভালো মানুষ সাজা হচ্ছে। আর কতো ন্যাকামি দেখতে হবে আল্লাহ ই জানে। গাড়ির জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছে। প্রকৃতি দেখতে তার ছোট বেলা থেকেই খুব ভালো লাগে। আজ সব অসহ্য লাগছে তাও নিজেকে মনে মনে দোষারোপ করছে, কিসের পাপের শাস্তি সে পাচ্ছে।

____ গাড়ি এসে থামে একটা পার্লারের সামনে। আবির নিজে নেমে নিরা কে বের হতে বলে। নিরা নামতেই মিশি বলে, এইতো চলে এসেছো, তাড়াতাড়ি আসো, একটু না সাজলে হয় বলো। এক ঘন্টায় খুব সিম্পল সাজে সাজিয়ে বাইরে আনে মিশি। শপিং সেইই করেছে, একমাত্র ফ্রেন্ড এর বিয়ে বলে কথা।

__ নিরাকে এতো ই সুন্দর লাগছে যে আবির হা করে তাকিয়ে আছে নিরার দিকে। লাল শাড়ির সাথে খোলা চুলে লাল গোলাপ, চোখের কাজল, ঠোঁট এ লাল লিপিস্টক। অল্প সাজেই যেন নিরাকে লাল পরীর মতো লাগছে।

মিশিঃ এই যে মিঃ আবির, দেখার সময় আরোও আছে এখন তো চোখ সরান।

__ আবির লজ্জা পেয়ে চোখ সরিয়ে নেয়। কিন্তু আড় চোখে বার বার নিরার চোখের দিকে তাকাচ্ছে, যেন বার বার প্রেমে পড়তে ইচ্ছে করে।

__ আবির কে নিজের গাড়িতে যেতে বলেআর বলে নিরা আমার গাড়িতে যাবে। দিয়ে নিরাকে নিয়ে গাড়িতে উঠে মিশি। গাড়ি চলতে শুরু করে কোর্টের উদ্দেশ্য। সেখানেই বিয়েটা হবে( আবির + নিরা)

মিশি ___ আবির আমার বেষ্ট ফ্রেন্ড, সেই ক্লাস নাইন থেকে একসাথে পড়েছি। কখনো কোন মেয়ের দিকে খারাপ চোখে দেখেনি। মেয়ে বন্ধু বলতে আমিই ছিলাম তার জীবনে । কখনো ভুলেও আমার সাথে পড়াশোনা এর বাইরে কথা বলতো না। একটু বড় হবার পরও সে পারসোনাল টুকিটাকি কথা বল্লেও কোন মেয়ের সাথে তার রিলেশন ছিলো না। কাল রাত্রে চেম্বার থেকে ফেরার পথে তোমায় দেখে যায়। আবিরের মুখ থেকে ঘটনা শুনি, খুব বকি তাকে। এতো টা রাগ করা তার উচিৎ হয়নি, তাই ভুল করে ফেলেছে। ক্ষমা করে দিও নিরা, জীবনে সুখী হবার চেষ্টা করিও। আবির খুবইই ভালো ছেলে, তোমার সব চেয়ে কাছের মানুষ হবে , মিলিয়ে নিও।

নিরা____ জ্বী ম্যাম, মনে থাকবে ( মনে মনে বলে কখনো ক্ষমা করবোনা আপনাকে স্যার, আজীবন অভিশাপ দিয়ে যাবো, যতই আপনি ভালো মানুষ সাজার চেষ্টা করেন, শাস্তি আপনাকে আমিই দিবো )

মিশি ___ গুড গার্ল, কিন্তু ম্যাম নয় আপু বলবে।

নিরা ___ জ্বী আপু।

___ গাড়িটা কোর্ট এ চলে আসে। নিরা নেমে দেখে আবির একটা ছেলের সাথে কথা বলছে।

মিশি ___ আরে তন্ময় কখন এলে।

তন্ময় ___ এইতো আসলাম, এইমাত্র! তোমার ভাই বলো, বন্ধুই বলো তার বিয়েতে না এসে পারি।

মিশি ___ তলে তলে প্রেম করেছে আবির, জানতাম ই না। তাইই তো লুকিয়ে বিয়েটা আজ সেরেই নিতে চায়।

তন্ময় ___ তা লাজুক ছেলের প্রেম কেমন চললো এতোদিন।

আবির ___ মিশি একটু বেশিই বলে ভাইয়া।

__ ” নিরা এদিকে এসো, পরিচয় করিয়ে দিই উনি তন্ময়, আমার হাজবেন্ড। ” মিশি বলে নিরা কে।

__ পরিচয় পর্ব শেষ এ সবাই একটা রুমে যায়। নিরা পুরাই সারপ্রাইজড হয় নিরার বাবা মা কে দেখে । অস্ফুট স্বরে মা বলে ডেকে উঠে নিরা।

__ নিরার মা বলে ” এখন কেমন আছিস রে, তোর এক্সিডেন্ট এর পর একদিন তোর জ্ঞান ছিলো না, আমরা অনেক খুঁজেছি কিন্তু পাইনি, সকালে জামাই এর আত্মীয় গিয়ে তোর খোঁজ দেয়, আর বলে তুই এখন সুস্থ, এরপর তোকে জামাইয়ের এতো পছন্দ হয়েছে, তাই বিয়ের প্রস্তাব দেয়, আমরা গরীব মানুষ, এতো ভালো প্রস্তাব হাত ছাড়া না করে রাজি হয়ে যায়, তুই তো ডাক্তার হবি, জামাই ও ডাক্তার, দুইজনে খুব সুখী হবি রে মা । ” ( একদম এ কথা গুলো বলে নিরার মা)

নিরা___ হুম, উনি খুব ভালো মানুষ, উনি না থাকলে তো আমি মরেই যেতাম।
(মনে মনে বলে মিঃ স্যার আপনি অনেক মিথ্যা বলাই ওস্তাদ, প্রতিশোধ আমি নিয়েই ছাড়বো। আপনার টাকা থাকতে পারে কিন্তু নিরা কে কেনা এতো সহজ না)

সেখানে কাজীর সামনে বিয়েটা করে নেয়। এরপর সবাই মিলে রেস্টুরেন্টে যায় , লাঞ্চ করে সবাই। নিরা সবার সামনে খেতে না পারায় তেমন খায়নি সেটা আবির খেয়াল করে। খাওয়া শেষ, এর পর মা বাবার কাছে বিদায় নেয়ার সময় কেঁদে ফেলে নিরা। মা বাবা কে বলে ভালো থেকো মা, বাবা। নিরা গাড়িতে উঠে বসে আবির ও সবাইকে সালাম দিয়ে বিদাই জানায়।

__ তৃণা শান্তিতে নাই, খুব হতাশ, তার উপর আজ আবির স্যার আসেনি, ক্লাস ও নেয়নি। মানুষ টা কি উধাও হয়ে গেলো নাকি।

__ ” কিরে কিছুই বুঝলাম না, আবির স্যারের কেশ তো তুলে নিছিস। তাও কেনো সার আজ এলোনা? ” সাইরা বলে।

__ আমি কি জানি, আমি কি সবজান্তা যে বলে দিবো স্যার কোথায় গেছে। ( তৃণা)

__ আবির স্যার তো তোকে পুরাই পাগলি বানিয়ে ফেলবে। ( সাইরা)

__ বেশি বকিস না, এমনিতেই বাবা আমাকে রাজশাহী আসতে দিচ্ছিলো না। যদি জানতে পারে আমি এসব করেছি তাহলে নির্ঘাত নিয়ে যাবে। আমি তো আবির স্যার ছাড়া থাকতেই পারবোনা।
( তৃণা)

__ স্বপ্ন দেখিস না, তুই কি জানিস স্যার ম্যারিড কিনা। ( সাইরা)

__ বাজে বকিস না, উনি আমার প্রথম প্রেম। যে কোন মূল্য তে উনাকে আমার চাই ই চাই। ( তৃণা)

__” ( মন খারাপ করে) হুম, দেখ “সাইরা বলে।

তৃণার বাবা রাজশাহী শহর টাকে এক প্রকার ঘৃণা ই করে। কখনো চায়নি তার একমাত্র মেয়ে এই শহরে আসুক। অথচ তৃণার সেই ছোট বেলার শখ সে ডাক্তার হবে। আর চান্স ও পেলো নাকি রাজশাহী তে। তাও চায়নি তৃণা আসুক এই অভিশপ্ত শহরে। তৃণার ইচ্ছে আর জেদের কাছে হেরে গিয়েই আজ তৃণা রাজশাহী তে। আর এসেই ঘটিয়ে ফেলেছে গন্ডগোল।

__ আবির আর নিরা বাসায় আসে, সন্ধ্যা হয়ে গেছে। আবির কফি বানিয়ে আনে দুই মগ, নিরা কে এগিয়ে দেয় একটা।

__ ” থাক থাক, আর নাটক করতে হবেনা, এখন আর কেউ নাই। ” নিরা

__ ” হয়তো ভালোবেসে বিয়েটা করিনি, কিন্তু শুধু তুমিই জানো কি হয়েছে আর গোটা দুনিয়া জানবে অন্য কিছু। রক্ষা করতে পেরেছি আমি তোমার সম্মান। খুশি হওয়া অনেক পরের ব্যাপার, মেনে নাও। ভুল তো মানুষের ই হয়, ক্ষমা কি করা যায় না?

__ ” কক্ষনো না, আই হেট ইউ মিঃ আবির স্যার। আপনি সব ছাত্রীর ক্রাশ হতে পারেন কিন্তু আমার কাছে ঘৃণার পাত্র আপনি কথা টা মনে রাখবেন। ” নিরা ঘৃণার নিয়ে বলে কথা গুলো।

আবির কথা গুলি শুনে খুব কষ্ট পেয়ে বেলকনিতে গিয়ে চেয়ারে বসে। মন টা খুব খারাপ করছে, মনে পড়ে নিরা কিছুই খায়নি তেমন। আবার কিচেন এ গিয়ে নিরার জন্য স্যুপ বানায়। এরপর ট্রে তে করে কিছু ফলমূল আর স্যুপ আনে। ঘরে এসে দেখে নিরা উল্টো দিকে ঘুরে শুয়ে আছে। মাথার ফুল গুলি ঘরে ছুড়ে ফেলেছে। বিছানায় চুল গুলো এলোমেলো হয়ে পড়ে আছে আর ঘাড়ের নিচে একটু খানি জায়গাতে শাড়ি টা সরে গিয়েছে। খুব আকর্ষণীয় লাগছে এই অবস্থায়। আবির নিরার পাশের টেবিলে খাবার রেখে নিরার পাশে বসে নিরার পিঠে হাত দেয়। নিরাও রাগান্বিত হয়ে ঘুরে ই আবির কে চড় মেরে বসে।

__ ” লজ্জ্বা করেনা, আবার এসেছেন ” নিরা

__ ” বাইরে তেমন খাওনি তাই খাবার নিয়ে এসেছিলাম, তার পুরষ্কার পেলাম। ” ( আবিরের চোখে পানি )

( ছেলে মানুষ খুব শক্ত হয়। কখনো ই কাঁদে না তাও আবিরের চোখে জল আসছে, নিজের কৃতকর্মের জন্য।)

__ ” খাবোনা আপনার কুকর্মের টাকার খাবার “। নিরা

চলবে……

#জামিয়া_পারভীন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here