কৃষ্ণচূড়ার রং লাল-২৭.(ক অংশ)🎈
@হাফসা আলম
_____________________
পাত্রের নাম তর্জন।সে খুব খুশি।হাসিই যেনো মুখ থেকে সরছে না।পেশায় ডাক্তার।ভালো ভদ্র নম্র ছেলে সে।উমে আর সে এক সাথেই বড় হয়েছে।মনে মনে উমেকে প্রচন্ড ভালোবাসে সে।কিন্তু বলে উঠতে পারিনি।কথায় আছে উপড়য়ালার কাছে কিছু মন থেকে চাইলে সত্যিই তিনি দিয়ে দেন।তর্জনও মন থেকে চেয়েছে।আজকের এই রাত শেষ হয়ে ভোর হলেই তার জীবন পাল্টে যাবে।উমে হবে তার।তর্জন মিক্রে।উমে তর্জন মিক্রে।ভাবতেই খুঁশিতে তার খাওয়াদাওয়া সব বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।ভালোবাসার মানুষকে পাওয়া বুঝি এতোই আনন্দের??তর্জন আর ভাবার সময় পায় না।ডাক পরে।চোখ বেঁধে দেওয়া হয়।সব মেয়ের মাঝ থেকে তাকে তার প্রিয়সীকে খুঁজে নিতে হবে।তর্জনের কাছে কাজটা খুবই সহজ মনে হচ্ছে।সে এগিয়ে যায়।বাঁধা চোখে সে হাত বাড়িয়ে একজন একজন করে ছুঁয়ে দেখে।মেয়ে গুলো মুখ চেপে হাসে।উমে দাঁড়িয়ে আছে লাইনের শেষের আগের দিকে।তর্জন খুঁজে খুঁজে দেখছে।হাতটা ছুঁয়ে দেখতেই মেয়েরা ঝাঁকে ঝাঁকে হেঁসে উঠে।তর্জন কান খাড়া করে শুনে।বুঝে যায়।তাই আবার অন্য হাত ছুঁয়ে দিতে এগিয়ে যায়।একে একে এগিয়ে আসে।তুতুল ছিলো উমের পাশে।রিঝ সবে মাত্র এই আসরে এসেছে।এতোসময় সে পিছনের দিকে ছিলো।লঙ্গী নামক বস্তু পড়ে তার অবস্থা করুন।হাঁটতে পারছে না।পড়ে যাওয়ার সম্ভবনা অনুভব করছে।তুতুলকে সবার মাঝে দাড়িয়ে থাকতে দেখে রিঝ চমকালো।সবার সামনে এসেই হুট করে তুতুলর হাত টেনে সরিয়ে নেয় সে।উপস্থিত সবাই অবাক।তুতুল অবাক হলো না।সে যানতো এই লোকটা এমনই করবে।তাই বললো,
“ জানতাম এমন করবেন।সমস্যা কি??”
রিঝ রাগে কটমট করে বললো,
“ তুমি এখানে কেনো দাঁড়িয়েছ??”
“ তো কি হয়েছে??ঝগড়া করার আর কিছু খুঁজে পাচ্ছেন না??তাই শুধু শুধু লাগতে এসেছেন??”
“ থাপড়ে গাল লাল করে দিবো।এসব আজেবাজে কাজে তোমাকে সবার আগে কেনো পাওয়া যায় বলবে??”
“ দেখুন আপনি কিন্তু আগে আগে ঝগড়া করছেন??”
“ আরো অনেক কিছু করবো।চলো আমার সঙ্গে সঙ্গে থাকবে তুমি।অনেক ঘুরাঘুরি হয়েছে।”
কথাটা বলেই তুতুলের হাতের কব্জি জড়িয়ে নেয় রিঝ।তুতুল বিরক্ত হয়ে তাকিয়ে থাকে।
গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান শুরু হয় সন্ধ্যার দিকে।উমের মুখ ভার কোনো এক কারণে।তুতুলের হাত বন্ধ।স্টেজ সাজানো হয়েছে সাদা ফুল দিয়ে।এখানের সবাই বন্য ফুল পছন্দ করে।এই ফুলকে খুবই সম্মানিতও মনে করে।তাই এই ফুল দিয়ে সব সাজানো হয়।উমেকেও সাদা ফুল দিয়ে সাঁজানো হয়েছে।উমে বসে আছে স্টেজের উপরে রাখা রাজকীয় চেয়ারে।তার পাশে বসেছে তর্জন।ছেলে মেয়ের গায়ে হলুদ এক সাথে হবে।আকাশ নাচানাচিতে ব্যস্ত।উপজাতিদের নিজস্ব গানই চলছে।সে গানের কিছুই বুঝতে পারছে না আকাশ।তবুও নেচেই চলেছে।উড়াধূনা এই নাচের দৃশ্য সবাইকে হাসিয়ে তুলছে।আকাশ পাত্তাই দিচ্ছে না সে তার নাচ নিয়ে ব্যস্ত।রামিম দাঁড়িয়ে রিঝের সাথে কথা বলছে।.রিঝের হাতে তুতুল।সে এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখছে।কিছুই ভালো লাগছে না।বন্ধী মনে হচ্ছে নিজেকে।সময়ের সাথে সাথে গায়ে হলুদ শুরু হয়।বর বউয়ের হলুদের পাত্র ভিন্ন।স্বর্নের পাত্রের মতো দেখতে।সুন্দর পরিপাটি পাত্রটি দেখতে খুবই আকর্ষনীয়।আকাশ নাচের মধ্যে যখন খুব ব্যস্ত ঠিক তখনই খেয়াল করলো রুমাশ্রী নীল রঙ্গের থামি পড়েছে।আকাশের খটকা লাগে।সবারটা সবুজ হলুদ আর এই মেয়েরটা নীল কেনো??কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে পাত্তা না দিয়ে সে আবার নাচা শুরু করে।উড়াধূনা নাচতে গিয়ে আকাশের লুঙ্গী খুলে যায়।ধপ করে খুলে পড়তেই সবাই হেসে উঠে।ভাগিস্য নিচে ট্রাউজার পড়েছিলো।তা না হলে আজকে আকাশ আকাশেই মিলিয়ে যেতো।সবাই হো হো করে হেসে উঠে।হলুদের অনুষ্ঠান জমে উঠে।আসমা লক্ষ্য করলো।শুধু বিবাহিত মহিলাপুরুষই ছেলে মেয়েকে গায়ে হলুদ লাগাচ্ছে।ব্যাপারটা তার কাছে খুবই অদ্ভুত ঠেকলো।কোনো যুবতি মেয়ে বা ছেলে সে হলুদ ছুঁয়েও দেখলো না।আসমা যেতে চেয়েছিলো।কিন্তু তাকেও নিষেধ করে দেওয়া হয়েছে।বলেছে,এটা না কি বংশগত নিয়ম।বিবাহিত হওয়া ছাড়া এই হলুদ ছোঁয়া যাবে না।” বংশের যে এমন আজগোবি নিয়ম থাকতে পারে এটা সে জানে।তার নিজের বংশের নিয়মই সে ভেঙ্গে ঘুরে বেড়াচ্ছে।বংশের নিয়েম অনুযায়ী মেয়ের বয়স আঠারো হলেই তার বিয়ে দিয়ে দিতে হবে।বেশি হলেই সমস্যা।সেখানে নিজের বয়স ২৭ করেও সে ঘুরে বেড়াচ্ছে।বিয়ের পিড়িতে বসার ইচ্ছে নেই বললেই চলে।তাই এই নীতিও সে ভাঙ্গবে বলে ঠিক করেছে।
গায়ে হলুদের শেষের দিকে সবার খাওয়াদাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছিলো।তাই রিঝ তুতুলের হাত ছাড়লো।তুতুল যেনো জানে বেঁচে গেলো।দীর্ঘশ্বাস নিয়ে সে খুব আরাম করে ঘুরছিলো।হঠাৎ দেখলো কোণার একটা টেবিলের উপরে কতগুলো গ্লাস ভর্তি হয়ে আছে কোকাকোলার মত কিছুতে।আগ্রহ জাগে তার।তাই সে দিকে এগিয়ে যায়।গ্লাস কাত চিৎ করে দেখে।কোকাকোলার ঘ্রাণ নাকে আসে।তার খেতে ইচ্ছেও করছে।তাই সে একটু খেয়ে টেস্ট বুঝে নেয়।দেখে কেমন লাগছে।মুখে নিতেই ঝাঁঝালো অনুভব হয়।কোকাকোলার ঝাঁঝ বুঝে তুতুল একটু একটু করে খায়।এক গ্লাস শেষ করে আর এক গ্লাস নেয়।তার তো খুব মজার মনে হচ্ছে।দূরের দিকে চোখ যায়।দেখে কেউ একজন পাহাড়ের দিকে মুখ করে নিচে বসে আছে।তুতুল কৌতুহল নিয়ে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকে।কৌতুহলের মাত্রা যখন বাড়ে তখন সে গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে যায়।পিছনের অংশ ভালো করে দেখেই তুতুল বুঝতে পারে মেয়েরা কে।সে পাশে এসে ধপ করে বসে।হেসে উঠে জিজ্ঞেস করে,
“ উমে দি এখানে বসে আছেন কেনো??আপনার না অনুষ্ঠান হচ্ছে??সবাই নাচাগানা করছে তো।আপনি করবেন না??”
উমে প্রথমে চমকায় তুতুলের কন্ঠ শুনে।পরক্ষনে নিজেকে সামলে নিয়ে একটু হাসার চেষ্টা করে বললো,
“ ভালো লাগছে না এসব।তাই এখানে এসে বসেছি।”
তুতুল ভারী অবাক হয়ে বললো,
“ আপনার বিয়ে আর আপনারই ভালো লাগছে না?”
“ না লাগছে না।পৃথিবীর সব ঘটিত ব্যাপার গুলো ভালো লাগবে এমন তো কোনো নিয়ম বেঁধে দেওয়া নেই।তাই ভালো লাগছে না।” উমের কন্ঠে একটা চাপা রাগ লক্ষ্য করলো তুতুল।তাই হিসহিসিয়ে বললো,
“ আপনি কি বিয়েতে রাজি না??”
“ না।” উমে সোজা ভাবেই বলে দিলো।তুতুল এক হাতে মুখটা চেপে ধরে।অবাকের শেষ প্রান্তে থেকে বলে,
“ বলেন কি??আপনার কি অন্য কাউকে পছন্দ??আর পছন্দ হলে বলে দেন আপনার বাবা মা ভাইকে।তারা আপনাকে খুব ভালোবাসে।বিয়ে না করতে চাইলে তারা জোর করবে না।বিয়ে হওয়ার আগেই বলে দেন।”
“ সেটা আর সম্ভব না।আর তাছাড়া কার জন্য বলবো??”
“ যাকে আপনি ভালোবাসেন তার জন্য।” তুতুল একটু কাছে এগিয়ে বসে।উমে তাচ্ছিল্য করে হাসে।দুঃখে ভরে আসা চোখে তাকিয়ে বলে,
“ সে তো আমাকে ভালোবাসে না।”
“ একতরফা ভালোবাসা!!” তুতুলের কন্ঠে উৎকন্ঠা।উমে মুখটাকে কালো পাহাড়ের দিকে ঘুরিয়ে নেয়।বিরক্ত হওয়া কন্ঠে বলে,
“ তুমি যাও তো।তোমাকে আমার সয্য হয় না।”
“ কেনো??” তুতুল আশ্চর্য চোখে তাকিয়ে আছে।সে ফিল করছে উমে কাঁদছে।তুতুল আর একটু কাছ ঘেঁষে হাতটা নিজের হাতে নিয়ে বললো,
“ আপনার কষ্ট আমি বুঝতে পারছি।তবুও আপনি তাকে বুঝিয়ে বলুন।দরকার হলে আমি বলবো।তার নামটা তো বলুন।তার ঠিকানা দেন।সে কোথায় থাকে??আপনার অনুভুতি বুঝিয়ে বললে সেও বুঝবে।ভালোবাসা একে অপরকে টানে।”
উমের যেনো সর্বাঙ্গ রাগে খোবে জ্বলে উঠে।এমন একটা ভাব নিয়ে সে তুতুলের হাত থেকে নিজের হাত সরিয়ে নেয়।তুতুল কিছু বলতে নেয় সেটার সুযোগ না দিয়ে নিজেই মৃদূ চেঁচিয়ে উঠে বললো,
“ বুঝবে না উনি।বুঝেও না উনি।চেষ্টা তো করেই না।কারণ সে অন্য একজনের দিওয়ানা হয়ে আছে।পাগলের মতো ভালোবাসে তাকে।আমার জন্য তো কোনো অনুভুতিই নেই।এমন কেনো হয় বলবে??সে যাকে চায় সে তাকে চায় না।আমি তাকে চাই সে আমাকে চায় না।এমনটা না হলেও পাড়তো।এমন কেনো হয় না।আমি যাকে যাই সেও আমাকে চায় না কেনো??”
তুতুল বিস্মিত।মুহূর্তে চারপাশ ভারী হয়ে উঠে।থমথমে পরিবেশ আরো থমথমে আঁকার ধারণ করে।ঝিঝি পোকার হালকা ডাকও তুতুলের কাছে ভয়ঙ্কর মনে হতে শুরু করে।তুতুল নিচু স্বরে বলে,
“ দি বাদ দিন।যত ভাববেন আপনার খারাপ লাগবে।তর্জন দাকে অনেক ভালো মনে হয়েছে।আমি শুনেছি সে আপনাকে অনেক আগে থেকে পছন্দ করে।দেখুন আপনি সুখি হবেন।”
তুতুলের মিষ্টি কথায় উমে আরো তেলেবেগুনে জ্বলে উঠে।উগ্র হয়ে চেঁচিয়ে বলতে শুরু করে,
“ তুমি তো চুপই থাকো।সব নাটের গুরু তো তুমি।তোমার জন্যেই আজ এই পরিস্থিতির জন্ম।তোমার জন্য আজ আমার এতো কষ্ট হচ্ছে।সেই তুমিই আমার বিয়েতে এসেছো?বিশ্বাস করো তোমাকে আমার বিন্দু মাত্র পছন্দ না।”
“ কিন্তু কেনো??আমি তো আগে কখনোই আপনার সাথে কথা বা দেখা করিনি।তাহলে আপনার কেনো মনে হচ্ছে আমি আপনার কষ্টের কারণ??”
“ কারণ রিঝ তোমার জন্য আমাকে ফিরিয়ে দিয়েছে!!”
তুতুল বসা থেকে দ্রুত দাঁড়িয়ে পরে।তার মাথা সহ সর্বাঙ্গ ঝনঝন করে উঠে।শরীর কাঁপতে থাকে থরথর করে।উমে হাটুঁতে মুখ গুঁজে কেঁদে উঠে।একটু থেমে বলে,
“ রিঝ ছোট থেকে তোমাকে ভালোবাসে।বিনিময়ে তুমি কি দিলে??অন্য একজনকে বিয়ে করতে যাচ্ছিলে।আরে ভাই যাচ্ছিলে তো যাচ্ছিলেই ফিরে কেনো এলে।তুমি না আসলে আমি সারা জীবন উনার পথ চেয়ে কাটিয়ে দিতাম।পাই বা না পাই।অপেক্ষায় থাকতাম।কিন্তু তুমি কেনো মাঝে এসে পড়লে?কেনো??”
“ আ আপনি এসব কি বলছেন??আমাদের মাঝে কখনো এমন কিছুই ছিলো না।” তুতুলের কন্ঠনালী কাপঁছে।উমে হেসে উঠে।জায়গা করে দিয়ে বললো,
“ বসো আমার পাশে।তারপর বলবো সব।”
“ না আমি এভাবেই ঠিক আছি।”
শীতে মানুষ যেভাবে কাঁপে তুতুল ঠিক একুই ভাবে কাঁপছে।দাঁতে শব্দ হচ্ছে!মস্তিস্ক যেনো শূন্য হয়ে যাচ্ছে।এমন কিছু সরাসরি শুনার জন্য এই মুহূর্তে সে প্রস্তুত ছিলো না।তুতুল বসলো না।উমে হাত টেনে তার পাশে বসিয়ে দেয়।তারপর রয়েসয়ে বলে,
“ আমি উনার থেকে বয়সে ছোট মাত্র একবছরের।তখন সবে মাত্র ভর্তি হয়েছি।মারমাদের মত দেখলে হলেও আমরা বরাবরিই ভালো বাংলা পাড়ি।তাই লেখাপড়ার জগৎে আমাদের তেমন সমস্যা হয়নি।কিন্তু ভার্সিটির প্রথম দিনই রেগিং এর শিকার হয়েছি।আমাকে বলা হয়েছে সিগারেট টানতে হবে।আমি জীবনে এসব খাইনি এমন কিন্তু নয়।তবে এসবের তেমন অভিজ্ঞতা নেই।আর বুয়েটে এসব হয় আমি জানতাম না।নারভাস হয়ে গিয়েছিলাম।মেয়েগুলো যখনই আমার দিকে সিগারেট তাক করে তখনই রিঝ ভাইয়ার আগমন।উনি ছো মনে সিগারেটের সাথে আমার মনটাও কাঁড়ে নিয়েছে।তারপর থেকেই স্বপ্ন পুরুষের মতো আমি তাকেই চেয়েছি।প্রেমে পড়ে আমি পাগল প্রায় হয়ে গেছি।দুই বছর নিজের মত করেই ভালোবেসেছি।ভয়ে কথা বলতাম না।কারন উনি মেয়ের সাথে কথা বলাই পছন্দ করতো না।কেউ কথা বলতে আসলেই বিরক্ত হতো।প্রয়োজনীয় কথা ছাড়া কথাই নেই।আমি মনে করেছি এই লোক মুভির মতো মেয়েদের ঘৃন্না করে।তাই সব সময় দূর থেকেই দেখতাম।কালো টি-শার্ট কালো জিন্স,কালো ঘড়ি যখন ঠিক করতে করতে গেট দিয়ে প্রবেশ করতো তখন উনাকে কেমন দেখাতো তা তোমাকে বলে বুঝাতে পারবো না।মেয়েরা তখন হা করে তাকিয়ে থাকতো।সময় যেনো সেখানেই থমকে যেতো।কিন্তু উনার সময় তো আমাদের সবার চোখের কাঁটার থেকেও বেশি দ্রুত দৌড়ায়।চোখের নিমিষেই গায়েব হয়ে যেতো।ধীরে ধীরে আমার ভালোবাসার মাত্রা বাড়ে।আমি অনুভব করতে পারছিলাম সেই কালো বাইকের প্রিন্সকে আমি অসম্ভব ভালোবেসে ফেলেছি।তাই একদিন সাহস করেই ফেলেছি।বলেই দিয়েছি আমি তাকে ভালোবাসি।অসম্ভব ভালোবাসি।তখন তিনি তার ঠোঁট জোড়ায় জাদুর হাসি ঝুলিয়ে বলে ছিলেন,
“ সে আমাকে অনেকেই ভালোবাসে।এটা বড় কোনো ব্যাপার না।”
“ সবার সাথে আমার তুলো না??”
“ অবশ্যই।আমি দু’জন নারী ছাড়া সবাইকে এক পাল্লায় মাপি।”
“ কেনো??”
“ আই ডোন্ট নো।এখন তুমি আসতে পারো।”
“ আমি সত্যিই আপনাকে ভালোবাসি।”
“ কিন্তু আমি বাসি না।আমি এই জীবনে একজন স্পেশাল মানুষকেই ভালোবাসি।আমার সুন্দর পাখিকে।মাই বিউটিফুল বার্ডকে।তুমি শুধু শুধু সময় নষ্ট করছো।যেটা আমি পছন্দ করি না।আসতে পারো।”
ভালোবাসা কত কঠিন!!সত্যিই কঠিন।সেদিন সব ইতি টানা হয়।কিন্তু মনের ইতি তো টানতে পারছিলাম না।কিন্তু উনি টেনে দিয়েছিলো দূরত্বের দেয়াল।আর দেখাই হতো না।উনি যখন লাস্ট ইয়ারে ছিলো তখন বান্দরবানের এক পাহাড়ি পথে আমার ভাইয়ের অসুস্থ আহত দেহে দেখতে পায়।উনিই উথৌয় দা কে বাঁচিয়ে নিয়ে আসে।আমাদের সবাইকে খবর দেওয়া হয়।নিজের শরীরের অংশ ছিড়ে গেছে সেদিকে যার খবর নেই,যে আমার দায়ের জন্য এতো কিছু করেছে তার প্রেমে আমি আবার পরে যাই।এবার অনুরোধ করে যে তাকে আমি সত্যিই ভুলতে পারবো না।এই লোকটি ভুলার না।অনুভব করি আমি তাকে কত ভালোবাসি।কিন্তু তখন সে আবার সেই অপ্রিয় সত্য বলে দেয়।বলে,
“ দেখ উমে সবার জীবন এক নয়।ঠিক একুই ভাবে আমার জীবন এবং আমি নিজেও ভিন্ন।সাথে আমার ভালোবাসাও।আমি একজনকে পাগলের মতো ভালাবাসি।তার বিনিময়ে আমি দুনিয়া বাজি রাখতে পারবো।অবশ্য আমি এখন নিজেকেই বাজি রাখছি তার জন্য।আমি তাকে ঠিক কত ভালোবাসি তা বলা আমার নিজের পক্ষেই সম্ভব না।আমার জীবনের বিনিময়ে যদি কিছু চাইতে বলে আমি তাকে নিয়ে জান্নাতে বাস করতে চাই বলবো।সে আমার দুরত্বের জীবনের গোপন অনুভুতি।আমি কাউকে সেটা বলিনা।তাকেও না।সে আমার সত্যি কারের ভালোবাসা।আমার একমাত্র ভায়োলিনের সুর।আমার প্রিয় সুন্দরী পাখি।আমার তুতুল পাখি।”
তখন থেকে দুরত্ব বাড়ে আরো বেশি।পরে যখন জানতে পারি তুমি অন্য একজনকে বিয়ে করছো তখন আমি আবার নতুন আশার আলো দেখতে পাই।কিন্তু পরের কাহিনী আমি তোমাকে বলতে পারবো না।আসলে পারছিনা সেই ভয়ংকর কথাগুলো বলতে।সেটা তুমি নিজেই খুঁজে নিও।”
তুতুলের মাথা ভনভন করে উঠে।এই ভয়ংকর আবেগি কথা রিঝ ভাই বলেছে??জীবনেও না।এটা সে বিশ্বাসই করতে পারছে না।তুতুল দু’হাতে নিজের মাথা চেপে ধরে।তার মনে হচ্ছে সে শূন্যে ভাসছে।সমুদ্রের মাঝে তাকে কেউ ছেড়ে দিয়েছে।ভালোবাসা নামক এই সমুদ্রেই তার মৃত্যু হবে।
________________
কৃষ্ণচূড়ার রং লাল-২৭.(খ. অংশ)🎈
@হাফসা আলম
_____________________
আকাশ দূর থেকে শুনতে পাচ্ছে রূমাশ্রী তার এক ফ্রেন্ডকে বলছে,
“ ভুলেও হলুদ লাগাবি না।তুই তো যানছ আমি হলুদ ঘৃনা করি।আর এই হলুদে আমার এলার্জি আছে।”
“ ও স্যরি।আসলে ভুলে গেছি।”
“ সেটা তো যাবিই।চল ওই দিকে।”
আকাশ কান খাড়া করে সব শুনে নেয়।মনে মনে শয়তানি হাসি হাসে।আসমা খুটিয়ে খুটিয়ে সব দেখছিলো।রামিম পিছন থেকে চুলে গাঁথা ফুল টেনে ধরে।মাথায় টান পড়তেই আসমা সচেতন হয়ে পিছনে তাকায়।রামিমকে দেখে প্রচন্ড বিরক্ত হয় সে।অন্ধকারে দুটি অবয়ব দেখা যাচ্ছিলো।সে দিকেই যেতে চাচ্ছিলো সে।রামিমের দিকে তাকিয়ে অসয্য ভাব নিয়ে আসমা বললো,
“ তুই এমন পিছে পড়ে আছস কা??যা তো নিজের কাজে।আমি ব্যস্ত।”
রামিম তাচ্ছিল্য করে হাসলো।বললো,
“ ওরে আইছে আমার কামের মানুষ।”
“ রামিম আমি সত্যিই ব্যস্ত।”
“ সেটা দিয়ে আমার কাজ কি?চল হলুদ খেলি।সবাই খেলতাছে।”
পরের কথাটা রামিম নরম স্বরে বলেছে।আসমা কপালে ভাঁজ ফেলে বললো,
“ পাগল হইলি??হলুদ খেলার কি আছে।যা তো ভাগ।আমার এসব ভালো লাগে না।”
“ লাগতে হইবো না।তুই শুধু চল।”
বলেই হাত ধরে টানা শুরু করে রামিম।আসমা নিজের হাত ছাড়াতে ছাড়াতে বললো,
“ আমার একটা খুবই গুরুত্বপূন্য কাজ আছে।তুই যা আমি পরে আসছি।”
“ না।চল মানে চল।”
রামিম আসমার কথা না শুনেই তাকে টেনে নিয়ে গেলো।
ওই দিকে আকাশ হলুদের পাত্র খুঁজতে খুঁজতে খেয়াল করলো পাত্র শেষ।সবার খেলার জন্য আলাদা পাত্র দেওয়া হয়েছে।সে সকল পাত্রের হলুদ সবাই খেলেই শেষ করে ফেলেছে।আকাশ হতাশ হয়ে যখন চলে আসতে যাবে তখন খেয়াল করলো সেই রাজকীয় পাত্রের দিকে।খুশিতে গদোগদো হয়ে আকাশ পাত্র হাতে তুলে নেয়।তারপর পিছনে লুকিয়ে নেয়।এদিক ওদিক সে রূমাশ্রীকে খুঁজা শুরু করে।আজকে সে প্রতিশোধ নিবেই।বাঁশি কিছুই আকাশের পছন্দ না।সেটা প্রতিশোধও না।যা করবে সব নগদে।খুঁজতে খুঁজতে আকাশ পেয়েও যায়।পা টিপে ধিরে ধিরে রূমাশ্রীর পিছনে এসে দাড়ায়।সব হলুদের মাঝে সেই একজন নীল কন্যা।খুঁজে পেতে তেমন কষ্ট হয়নি।এক হাতে হলুদ নিয়ে পিছন থেকে আকাশ রূমাশ্রীর গাল ভর্তি করে দেয় হলুদের ছোঁয়ায়।রুমাশ্রী চমকে পিছনে তাকাতে তাকাতেই দেখে আকাশ কিটমিট করে হাসছে।গালে হাত দিয়ে দেখে হলুদ!মুহূর্তেই তার গাল চুলকাতে শুরু করে।রাগে ক্ষবে রূমাশ্রী আকাশের দিকে তেড়ে যায়।আকাশও দেয় এক দৌড়।সামনে পড়ে রামিম।রামিমের হাতে হলুদের পাত্র ধরিয়ে দিয়ে সে আমার ছুট লাগায়।রামিম কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে পাত্র আসমার হাতে দেয়।আসমাও হাতে নেয়।সাথে সাথে রামিম পাত্রে দু’হাত পুরে দিয়ে দু’মুঠো হলুদ আসমার দু’গালে লেপ্টে দেয়।আসমার জামায় মুখে, চুলেও হলুদ লেগে যায়।আসমাও ক্ষেপা চোখে তাকাতেই রামিম পাত্র হাতে নিয়ে দেয় এক দৌড়।পিছনে পিছনে আসমাও।
______________________
এরা খুবই নাচগান প্রিয় হয়।তাই হলুদের অনুষ্ঠানের মুল আকর্ষন হচ্ছে বাংলা গান নিজের ভাষায় গাওয়া।সবাই মিলে একটা গান ঠিক করে।তারপর সেই গান নিজেদের ভাষায় গায়।সাথে জুটি মিলিয়ে নাচে যুবকযুবতি।গানটা এখনি শুরু হবে।অনেকে প্রিয় মানুষকে নিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে মাঠের মতো খোলা জায়গায়।বিশাল লাইটিং করা হয়েছে।আকাশ রূমাশ্রী,রামিম আসমা সেই জায়গায় এসে উপস্থিত হয়েছে।রিঝ এদিক ওদিক তাকিয়ে তুতুলকে খুঁজছে।মেয়েটা যে কই গেছে সে বুঝতেই পারছে না।খুঁজতে খুঁজতে সেও নাচের জায়গায় এসে পড়ে।ধাক্কা খায় রামিমের হাতের হলুদের পাত্রের সাথে।সেই হলুদে মাখামাখি হয় রিঝের জামা।রামিমের দিকে চোখ উল্টে তাকাতেই রামিম আসমার হাত ধরে নাচতে চলে যায়।রিঝের অবস্থা খারাপ।ফতুয়া সম্পূর্ন হলুদে মেখে আছে।হাত দিয়ে হলুদ মুছতে চেষ্টা করে প্রথমে।কিন্তু হলুদ মুছার বদলে তার হাতেও মাখামাখি হয়ে যায়।রিঝ ঘরের দিকে যেতে নিবে তার আগেই ভির ঠেলে ঠুলে তুতুল এসে হাজির।তার চোখমুখ লাল হয়ে আছে।লাইটের আলোয় তাকে আরো রঙ্গিন লাগছে।রিঝ বিস্মিত হয়ে তুতুলের পাশে এসে প্রশ্ন করে,
“ কোথায় ছিলে??আর কি হয়েছে??চোখ মুখের অবস্থা এতো খারাপ করলে কিভাবে??”
তুতুল চারপাশে তাকালো।দেখলো সবাই জুটি বেঁধে নাচার প্রস্তুতি নিচ্ছে।আকাশ রূমাশ্রীর দু’হাত নিজের হাতের বাঁধনে নিয়ে নেয়।রূমাশ্রী ছাড়াতে চাচ্ছে।আকাশ হাসিমাখা কন্ঠে বললো,
“ আপনাকে হলুদে লাল লাল লাগছে কেনো??”
রূমাশ্রী রাগী চোখে তাকিয়ে বললো,
“ আপনাকে আমি দেখে নিবো।অসভ্য লোক এটা।”
“ ছেলে বললেও পারতেন।” বলেই আকাশ রূমাশ্রীর কোমড়ে হাত রাখে।একটা হাত নেয় হাতের ভাঁজে।রূমাশ্রী হতবাক চোখে তাকিয়ে আছে।করছে টাকি এই লোক!!
তুতুল রিঝের হাতে নিজের হাত রেখে হেসে বললো,
“ চলেন আমরাও নাচি।”
রিঝ নিষেধ করে বললো,
“ দরকার নেই।চলো ঘরে।তোমার চোখমুখ দেখে মনে হচ্ছে তুমি অসুস্থ।পায়ে ব্যথা করছে??”
“ আরে চলেন না নাচি।”
তুতুল বায়না ধরে।লাইট গুলো তখনই নিভে যায়।জ্বলে উঠে হালকা হালকা লাইট গুলো।তুতুল নিজেই রিঝের হাতে নিজের হাত রাখে।কোমড়ে রিঝের একটা হাত রাখে।তারপর একটু নড়ে উঠে বললো,
“ আপনার ছোঁয়ায় কারেন্ট আছে।ছুলেই শক লাগে।মনে হয় অঙ্গে অঙ্গে বিদ্যুৎ দৌড়ে বেড়াচ্ছে।”
রিঝ হতবিহ্বল!গানটা শুরু করে দু’জন মারমা শিল্পী।
সবকটি জুটিকেই এই মৃদূ আলোতে চমৎকার দেখাচ্ছে।উমে আর তর্জনও এই চমৎকার দৃশ্যের অংশ।রিঝের একটা হাত তুতুলের সরু চিকন বেঁকে যাওয়া কোমড় আঁকড়ে ধরে আছে।অন্য হাতটি আলিঙ্গন করে রেখেছে তুতুলের বাকি হাতের পাঁচটি আঙ্গুলের ভাঁজ।তুতুল রিঝের একদম কাছ ঘেঁষে দাড়ায়।গান যখন শুরু হয়।প্রথম লাইন শুনেই তুতুল বললো,
“ বাংলা বলেন।এসব ভাষা আমি পাড়িনা আপনি তো জানেন।”
রিঝ তীক্ষ্ন চোখে মৃদূ আলোতে তুতুলকে দেখে।তারপর বলে,
“ তাহলে নাচতে এসেছো কেনো??”
“ আপনি আছেন এই ভরসায়।”
রিঝ সন্দেহ নিয়ে বললো,
“ তুতুল তুমি ঠিক আছো??”
“ আলবাদ আছি।আপনি বাংলা বলেন।”
রিঝ নিচু স্বরে বললো,
“ অভিযোগ গানটা শুনেছো??”
“ হুম শুনেছি তো।”
“ ওইটাই এই গান।”
“ না আমি আপনার মুখে শুনতে চাই।গানের প্রতিটা লাইন আপনি রিপিট করে বলুন।প্লিজ।”
রিঝ নিশ্চিত কিছু একটা হয়েছে।তুতুল আরো ঘেঁষে রিঝের ফতুয়াতে মুখ ঘঁষে।যেনো তার ঘুমঘুম পাচ্ছে।রিঝ হাসলো।গালে লাগা হলুদ মুছে দিতে গিয়ে নিজের হাতের হলুদও গালে লাগিয়ে দিলো।তারপর মারমা ভাষার সেই গানের অর্থ রিঝ বলতে শুরু করে।হালকা কন্ঠে,তুতুলের কানের পাশে ঘেঁষে।
আমার সকল অভিযোগে তুমি
তোমার মিষ্টি হাসিটা কি আমি?
আমার না বলা কথার ভাঁজে
তোমার গানের কত সুর ভাসে!
তোমায় নিয়ে আমার লেখা গানে
অযথা কত স্বপ্ন বোনা আছে!
আমার হাতের আঙুলের ভাঁজে
তোমাকে নিয়ে কত কাব্য রটে!
ভুলিনি তো আমি
তোমার মুখে হাসি
আমার গাওয়া গানে তোমাকে ভালোবাসি
আসো আবারও কাছে
হাতটা ধরে পাশে
তোমায় নিয়ে যাব আমার পৃথিবীতে
এই পৃথিবীতে
তোমার পথে পা মিলিয়ে চলা
তোমার হাতটি ধরে বসে থাকা
আমার আকাশে তোমার নামটি লেখা
সাদার আকাশে কালো-আবছা বোনা
তোমায় নিয়ে আমার লেখা গানে
অযথা কত স্বপ্ন বোনা আছে!
আমার হাতের আঙুলের ভাঁজে
তোমাকে নিয়ে কত কাব্য রটে!
ভুলিনি তো আমি…
রিঝের সম্পূন্য মন উজার করে এই গানের প্রতিটি লাইন গেয়ে শুনিয়েছে।তুতুলও যেনো মন উজার করে শুনেছে।নিজেকে ছেড়ে দিয়েছে রিঝের পাঁচটি আঙ্গুলের ভরসায়।রিঝ নিজের মত করে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে নাচিয়েছে তুতুলকে।বাধ্য মেয়ের মত সেও ঘুরেছে রাউন রাউন হয়ে।গান শেষ হওয়ার আগেই তুতুল রিঝের গলা জড়িয়ে কানের কাছে এসে বললো,
“ আমিও আপনার অভিযোগের কথা জেনে গেছি।”
রিঝ হেসে বললো,
“ কিসের অভিযোগ??”
“ ভালোবাসার!”
“ মানে??” রিঝ হকচকিয়ে গেছে।তুতুল পাগলের মত করে হেসে হুট করে রিঝের গালে নিজের গাল ঘঁষে দেয়।হলুদে মাখামাখি হয় রিঝের গাল।তুতুল ফিসফিস স্বরে বললো,
“ আপনার অভিযোগে আমি আছি।এটাই যেনে গেছি।”
রিঝ তুতুলের কোমড় আরো ভালো করে আঁকড়ে ধরে।তুতুল আবার হাসে।নেতিয়ে যাওয়া কন্ঠে বলে,
“ আমি যেনে গেছি আপনি আমাকে ভালোবাসেন।নিজের সব অভিযোগে আমার ভালোবাসা চান।”
রিঝ কিছু বুঝে উঠার আগেই একটা হইহুল্লড় শব্দ পড়ে যায়।লাইটগুলো জ্বালিয়ে দেওয়া হয়।তুতুলের চোখে লাইট পড়তেই সে রিঝকে জড়িয়ে ধরে চোখ বুঝে নেয়।আলো যেনো তার চোখে জ্বালা দৃষ্টি করছে।হঠাৎ শব্দ ভেসে আসে।কিছু লোক মিলে হলুদের রাজকীয় পাত্রটি খুঁজছে।রিঝ বুঝলো না মুহূর্তেই কি হয়ে গেলো।রামিম আসমার সাথে নাচ আর হাসাহাসি নিয়ে ব্যস্ত ছিলো।আকাশ নাচের মাঝে রূমাশ্রীর সাথে মারামারিতে ব্যস্ত ছিলো।রিঝের বুকের এক পাশে তুতুল।দু’হাতে ধরে রেখেছে সে।উথৌয় এগিয়ে আসে সাথে তার বাবা মা।রিঝের দিকে ভয়ংকর চোখে তাকিয়ে উথৌয় বললো,
“ এই হলুদ তোমাদের গায়ে কি করছে??”
রিঝ স্বাভাবিক কন্ঠে বললো,
“ আসলে রামিমের সাথে ধাক্কা লেগেছে তাই আমার গায়ে পড়েছে হলুদ।আর তুতুল আমার সাথে নেচেছে তাই তার গায়েও লেগেছে।”
“ তুতুলের কি হয়েছে??”
“ বুঝতে পারছি না।”
তুতুল মুখটা তুলে উথৌয়ের দিকে তাকিয়ে বেকুবের মতো হাসে।উথৌয় চট করেই ধরে ফেলে বললো,
“ তুতুল ড্রাংক।”
রিঝ চেঁচিয়ে উঠে,
“ হোয়াট??এটা হতেই পারে না।ও এসব খায়না।”
“ সেটা আমিও জানি বাট কিভাবে এই অবস্থা আই ডোন্ট নো।কিন্তু এর থেকেও বড় সমস্যা তো তুমি বাধীয়ে বসে আছো।”
রিঝ কিছু বলতে যাবে তার আগেই আকাশ রামিম আসমা রূমাশ্রীকে ডেকে নিয়ে আসা হয় ভির থেকে।ভির সরে যায়।মাঝে থাকে শুধু ওরা কয়েক জুটি।উথৌয় একধরনের পানি নিয়ে আসে দ্রুত।তুতুলকে রিঝ বহু কষ্টে খাইয়ে দেয়।তুতুল সাথে সাথে বোমি করে দেয়।উথৌয় বললো,
“ দেখলে এবার।”
কেউ কিছু বুঝে উঠার আগেই চিৎকার করে উঠে উথৌয়ের বাবা।তিনি চিৎকার করে বলে,
“ তোমাদের সাহস কিভাবে হলো এই হলুদ নিজেদের গায়ে মাখার??”
আকাশ চোখ কুঁচকে বললো,
“ কেনো??কি হয়েছে মেখেছি তো??আর অনেকেই মেখেছে।আপনারা শুধু আমাদের উপরে চিৎকার করছেন কেনো??”
“ করবো না তো কি করবো??তোমরা এতো বড় অন্যায় কিভাবে করতে পেরেছো??”
“ এতে অন্যায়ের কি দেখলেন??”
“ উথৌয় তুই এদের বুঝা।আমি পারবো না।আমি কোনো ভাবেই আমার মেয়ের অমঙ্গল চাই না।”
বলেই উথৌয়ের বাবা চেয়ার টেনে বসে পরে।উথৌয়ের মা কান্না শুরু করে।তুতুল নিজের মাথা চেপে বসে পড়ে।তার মাথা ভার ভার লাগছে।আবছা আবছা মনে পড়ছে উমের সব কথা।রিঝের ব্যাপারটা মনে পড়তেই সে দ্রুত রিঝের পাশ থেকে দূরে সরে বসে।মাথাটা ঝিমঝিম করছে তার।আকাশ বললো,
“ উথৌয় তোমার বাবা মায়ের মাথা ঠিক আছে??”
“ সেটা আপ আকাশ।তোমাদের আমি আগেই সাবধান করতে চেয়েছিলাম।কিন্তু সব এলোমেলো হয়ে গেছে।এখন সব উলোটপালট হয়ে যাবে।উমের বিয়েও হবে না আর।”
রিঝ সচেতন কন্ঠে জানতে চাইলো,
“ কেনো??”
“ কারণ সহজ।তোমরা ওদের ব্যবহার করা হলুদ ব্যবহার করেছো।যেটা আমাদের বংশে অনেক অন্যায়।বলা হয়ে থাকে এতে বংশের এবং পাত্র পাত্রীর অমঙ্গল হয়।”
“ কি সব বলছো।মুসলিম হয়ে তোমরা অন্ধবিশ্বাসী হচ্ছো??”
উথৌয় একটু ঝুঁকে নিচু কন্ঠে বললো,
“ আগেই বলেছি এরা নামেই মুসলিম।”
“ এসব বাদ দাও।আমরা সবাই গোসল করে আসবো হলুদ ধূয়ে যাবে।কাহিনী শেষ।”
উথৌয় ঝাঝাঁলো কন্ঠে বললো,
“ এতো সহজ না কিছুই।”
তর্জনের বাবা মাও এসবের মাঝে এসে হাজির।হলুদের রং দেখেই বুঝে নেয় এটা ছেলে মেয়ের গায়ের হলুদ।সাথে সাথে তিনিও রেগে যায়।রেগে হুমকি দেয় বিয়ে ভেঙ্গে দেওয়ার।বিয়ে বাড়ি মুহূর্তেই বিষাদে রূপ নিয়েছে।তুতুল বুঝতে পারছে না কি হয়েছে।সেও ভালো করে বুঝার চেষ্টা করে।রূমাশ্রী কেঁদে কেঁদে বলে উঠে,
“ আপনি এভাবে প্রতিশোধ নিলেন??কেনো??আমাকে বলেননি কেনো যে এগুলো সেই পাত্রের হলুদ।এখন কি হবে আমার।”
বলেই সে কাঁদতে শুরু করে।আকাশ ধমক দিয়ে বলে,
“ চুপ করো।এমনেই কিছু বুঝতে পারছিনা তার উপরে এসব করার মানে কি?পাড়লে বুঝিয়ে বলো??”
রূমাশ্রী নাক টেনে টেনে বললো,
“ আমাদের এই অঞ্চলের নিয়ম হচ্ছে কন্যার গায়ের হলুদ অন্য কোনো অবিবাহিত ছেলে মেয়ে লাগালে বিয়ের পরে মেয়ের অমঙ্গল হয়।বিয়ে ভেঙ্গে যায়।সবচাইতে বড় কথা এটা বংশের নীতি।”
রিঝের ঘাড় ব্যথা করে উঠে।সে ঘাড়ে হাত বুলাতে শুরু করে।কিছুক্ষণ পরে বলে,
“ দেখুন সবাই এভাবে চিৎকার চেঁচামেচি করে তো কিছুই হবে না।শান্ত ভাবে বসে কথা বললে ভালো হয়।যা হয়েছে মনের অজান্তে।এতে কারো কিছুই করার ছিলো না।তার জন্য দুঃখিত আমি।আপনাদের এই নীতির কথা আগে বলা হয়নি।”
রিঝ আকাশের পাশে এসে আকাশের দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে বললো,
“ তুই হলুদের পাত্র কেনো নিয়েছিলি??”
আকাশ নেতিয়ে যাওয়া কন্ঠে বললো,
“ স্যরি দোস্ত।আমি অতো কিছু ভাবিনি।আসলে এই মেয়েটার জন্যই সব হয়েছে।কে বলেছিলো আমাকে চেঁতাতে?তাই তো আমি এসব করেছি।”
“ রূমাশ্রী কি করেছে তোকে??”
“ কেনো তুই দেখছনি??কিভাবে ফেলে দিয়েছিলো??”
“ ওটা উনি ইচ্ছে করে করেনি।”
“ করেছে।আমি জানি।তাই তো হলুদে এলার্জি শুনে আমি প্রতিশোধ নিয়েছি।”
“ এটা কেমন প্রতিশোধ আকাশ??তুই তো এমন ছিলি না।সামান্য ব্যাপারে এটা করার মানে কি?আর তোর চোখে কি অন্য হলুদের পাত্র পড়েনি??বেকুবের মতো এটাই কেনো নিলি??”
“ আমি কি করবো?সেখানে আর কোনো পাত্র ছিলো না।”
“ আকাশ তুই আমার মাথা ব্যথা করে তুলেছিস।ইচ্ছে করছে তোকে থাপড়ে দিতাম।”
“ তো দে।”
“ আকাশ!”
ছোট খাটো ঝগড়া হয়েই গেছে।উথৌয় আকাশ আর রিঝকে থামায়।রিঝ হাত জোড় করে ক্ষমা চায় সবার থেকে।কিন্তু এতে কোনো কাজ হয়না।রিঝ বলে,
“ তাহলে বলুন কি করলে আর আপনাদের ভাষায় অমঙ্গল হবে না??আমি কিন্তু মনে প্রানে এসব অবিশ্বাস করি।”
এবার উথৌয়ের বাবা অনেক ভেবে জিজ্ঞেস করলেন,
“ এখানে কে কাকে হলুদ লাগিয়েছে??”
আকাশ বাঁচার আশায় আগে আগে বললো,
“ আমি রূমাশ্রী মানে উনাকে লাগিয়েছি।উনিও আমাকে লাগিয়েছে।বাকিদেরটা জানি না।”
রামিম বললো,
“ আমি আসমাকে লাগিয়েছি।ও আমার ফ্রেন্ড।ও নিজেও আমাকে লাগিয়েছে।এতে কোনো সমস্যা হবে না আশা করি।”
উথৌয়ের বাবা শৈয়াং ইসলাম এবার উঠে দাঁড়ালেন।থমথমে পরিবেশ ঠেলে তিনি হেসে বললেন,
“ আর রিঝ তুমি এই মেয়েকে রাইট??”
“ আমাদেরটা মিষ্ট্রেক ছিলো।”
“ সেটা বড় কথা না তুমিই লাগিয়েছো সেটা বড় কথা।”
রিঝ তুতুলের দিকে একবার তাকিয়ে বললো,
“ হুম।”
“ ও সম্পর্কে তোমার কি হয়??না মানে ভাই ডাকে তো তাই??যদি আপন ভাই বোন হও তাহলে আরো বড় সমস্যা।
“ না আপন না।বাবার বন্ধুর মেয়ে।ছোট থেকে এক সাথে বড় হওয়া তাই ভাই ডাকে।”
তিনি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন,
“ সমস্যা তোমরা চাইলেই সমাধান করতে পারবে।উমের বিয়ে ভেঙ্গে যাক আশা করি কেউ চাইবে না।”
রিঝ গম্ভীর কন্ঠে বললো,
“ অবশ্যই চাইবো না।”
“ তাহলে তোমাদেরও একটা বড় ত্যাগ করতে হবে।”
রিঝ বুঝতে না পেরে বললো,
“ মানে??
তিনি রিঝকে মানে না বুঝিয়ে ঘোষণা করার মতো করে নিজেদের ভাষায় কি যেনো বললো।রিঝ বাদে কেউই বুঝলো না।কিন্তু মুহূর্তেই উথৌয় এবং রিঝের মুখটা আশ্চর্য রূপ ধারণ করলো।আকাশ রামিম রিঝকে প্রশ্ন করে,
“ কি বললো উনি??”
রূমাশ্রি চিৎকার করে তার বাবা মাকে ডাকা শুরু করলো।সম্পর্কে সে উথৌয়ের চাচ্চুর মেয়ে।উথৌয় স্তব্ধ হয়ে গেছে।তুতুল মাথাটা দু হাতে চেপে ঢুলো ঢুলো হয়ে উঠে দাঁড়ায়।তার মাঝে এখনো নেশা কাজ করছে।তাই উঠতে গিয়েও পড়ে যেতে নেয়।উপজাতিদের মদের প্রতি অদ্ভুত টান আছে।কিন্তু মুসলিম হওয়ায় এখানে মদ এলাউ করা হয়নি।তবে কেউ কোলড্রিংসের সাথে মিশিয়ে দিয়েছে।যা তুতুল কোলড্রিংস মনে করে খেয়ে নিয়েছে।তুতুল পড়ে যেতে নেয়।আসমা ধরে।এবার আসমাও প্রশ্ন করে,
“ কি বললো উনি??রিঝ বলবি কিছু??”
তুতুলের মাথায় প্রথম থেকে কিছুই ঢুকছে না।তাই সে এদিকে এতো আগ্রহীত নয়।সে তার মাথা নিয়েই ব্যস্ত।তার সাথে সে উমের কথাগুলো ভেবে নিজের মাথার ব্যথা আরো বাড়িয়ে তুলছে।রিঝ কিছু বলার মত ভাষাই খুঁজে পাচ্ছে না।বজ্রপাতের মতো তার কানে যেনো শৈয়াং ইসলামের কথা গুলোই বাজচ্ছে।উথৌয় উৎকন্ঠা হয়ে বললো,
“ উনি বলেছে আসমার সাথে রামিমের,আকাশের সাথে রূমাশ্রীর,আর রিঝের সাথে তুতুলের বিয়ে কালকে উমের সাথেই হবে।এটাই একমাত্র উপায় আছে উনার কাছে।এর থেকে ভালো কোনো উপায় তিনি খুঁজে পাচ্ছে না।তাই ব্যবস্থা করতে বলেছে।”
“ বিয়ে” কথাটা প্রচন্ড বেগে ছুঁটে আসা বজ্রপাতের চাইতেও ধারালো হয়ে কানে এসে পড়েছে সবার।সবাই হতভম্ভ হয়ে দাড়িয়ে পড়ে।চারপাশে যেনো বিয়ে বিয়ে আর বিয়েরই গুঞ্জন চলছে।তুতুলের মাথা ফাঁকা ফাঁকা হয়ে পড়ে।সে আশেপাশে কিছুই শুনছে না।চোখেও কিছুই দেখছে না।তার মাথা আরো ছিমছিম করছে।সব শূন্যতা জুড়ে শুধু বিয়ে নামক ভয়ংকর কথা কানে বাজচ্ছে।তুতুলের শরীর কাঁপছে।রিঝের হুশ হয়।সে বিশ্বাস করে না।তাই হাসার চেষ্টা করে বললো,
“ মজা করারও লিমিট থাকে।এসব কেমন মজা উথৌয়?বিয়ে মানে কি??এসব কেমন অবাস্তব কথা বলছো তুমি এবং তোমার বাবা??পাগল হয়ে গেলে না কি??এভাবে বিয়ে হয় না কি??ভীত্তিহীন কথা বার্তা আমাদের বলবে না।যতসব পাগলামি।আকাশ রামিম আসমা ব্যাগ নিয়ে আয়।এখনই এখান থেকে চলে যাবো।এসব পাগলদের কাছে থাকলে আমরাও পাগল হয়ে যাবো।এসব কেমন কথা হলুদ যার যার গায়ে লাগবে বিয়ে করতে হবে।এসব পাগলামি অন্য জায়গায় গিয়ে করো।তুমি তো শিক্ষিত।তবুও এসবে বিশ্বাস করো কিভাবে?মঙ্গল অমঙ্গল বলতে কিছুই নেই।এসবে বিশ্বাস করাও পাপ।”
রিঝ হুলুস্থুল রেগে আছে।রাগে তার শরীর কাঁপছে থরথর করে।উথৌয় বুঝাতে এসে বললো,
“ দেখো আমি আগেই বলেছি এরা খুবই অন্ধবিশ্বাসী।তার উপরে নিজেদের নিয়ম নিজেরাই তৈরি করে।তুমি চাইলেও পারবে না এদের সাথে।যা বলছে মানতেই হবে।”
তুতুল এতোক্ষণে মুখ খুলে।খিপ্ত হয়ে সে বললো,
“ আপনারা সবাই পাগল না কি?বিয়ে মানে বুঝেন??বিয়ে এতো সহজ না কি?”
উথৌয় কি করবে বুঝতে পারছে না।রিঝ হনহনিয়ে ঘরের দিকে যায়।উথৌয়ের বাড়িতে ঢুকে পড়ে।সবাই তার সাথে সাথেই চলে যায়।ব্যাগ নিয়ে বেড়িয়ে পরে সবাই।ব্যাগ বলতে সবার কাধের ব্যাগ।তুতুল সেখানেই বসেছিলো।সে বুঝতেই পরছে না এই সামান্য একটুতেই এসব কি হয়ে গেছে।না সে রিঝের কথা ভাবতে পারছে না এই মুহূর্তে হওয়া ঘটনার কথা ভাবতে পারছে।তুতুলের ব্যাগ রিঝ নিয়ে আসে।তুতুল তখনও বসে ছিলো।রিঝ নিজের সব রাগ তুতুলের উপরে উঠায়।ধমকের সুরে বলে,
“ সব তোমার জন্য হয়েছে।নিষেধ করার পরেও এসেছো।এরা সাধারন মানুষের মতো হয় না।এদের সব নিয়ম আমাদের থেকে ভিন্ন হয়।এবার বুঝলে কেনো নিষেধ করেছি??”
তুতুল একটাও কথা বললো না।নিজের ব্যাগ নিয়ে উঠে পরে।রিঝ ভাবলো তুতুল নাচের সময়ের সব কথা ভুলে গেছে।কিন্তু এসব কথা সে জানলো কিভাবে?এতো কিছু ভাবার সময় নেই।আসমা রামিম আকাশ রিঝ তুতুল এই অন্ধকার পাহাড় পাড়ি দিতে সমানে চলে আসে।কিন্তু প্রহরীদের জন্য দাড়িয়ে পড়তে হয়।রিভালবার হাতে ঘিড়ে ধরে সবাইকে।সব এতো দ্রুত হচ্ছে যে কেউ কিছু ভেবেই উঠতে পারছে না।শৈয়াং সাহেব বললেন,
“ তোমরা যেটা করছো মোটেও ভালো না।তোমাদের তো বিয়ে করতেই হবে।পৃথিবীর কোনো বাবাই নিজের মেয়ের জীবন ঝুঁকিতে ফেলতে চায় না।তাই আমিও আমার মেয়ের জন্য তোমাদের সাথে কঠিন হতে পারবো।”
রিঝ শান্ত কন্ঠে বুঝানোর চেষ্টা করে বললো,
“ দেখুন আঙ্কেল আপনি যা করছেন তা অন্যায়।আমারা কেউই এই বিয়েতে রাজি নই।আপনি কেনো এসব করে আমাদের বিপদে ফেলছেন।”
“ আমি বিপদে ফেলছিনা।তোমরা ফেলছো আমাকে।”
“ আপনি ভুল বুঝচ্ছেন।”
উমের বাবা একদম নতো হয়ে বললেন,
“ দয়া করে এমনটা করো না।আমার একজন বোন এই ভুলের জন্য মারা গেছে।প্লিজ তোমরা এটা করো না।উমের বিয়ে একবার ভেঙ্গে গেলে তার আর বিয়ে হবে না।”
“ এসব মারমাদের নিয়নে আছে??”
“ না।এসব বংশের নিয়ম।আমরা নিজেদের নিয়মে চলি।আমাদের আগের আগের মানুষেরা এগুলো মেনে চলে এসেছে।”
“ আপনি এসব কি ধরনের কথা বলছেন?পাগল হয়ে গেলেন না কি?আমি রূমাশ্রী নাম এই মেয়েকে চিনিও না।তাকে হুট করেই বিয়ে করে নিবো?” আকাশ চিৎকার করে বললো।
“ হলুদ লাগানোর সময় এটা ভাবা উচিঁত ছিলো।” শৈয়াং সাহেবের কন্ঠে ভয়ংকর রাগ।আসমা বললো,
“ আঙ্কেল আমি অন্য একজনকে ভালোবাসি।আর রামিমের সাথে আমার এমন কিছুই নেই।”
“ আমি এসব কিছুই জানি না।এবং জানতে চাই না।”
রিঝ শেষ চেষ্টা করে বললো,
“ দেখেন আমাদের সবার মাঝে আলাদা সম্পর্ক।বিয়ে নামক কোনো সম্পর্ক আমাদের মাঝে নেই।সবাই ফ্রেন্ড আমরা।বুঝার চেষ্টা করুন।”
তুতুলের টনক নড়ে এতক্ষনে।রিঝ ভাই যদি সত্যিই তাকে ভালোবাসতো তাহলে অবশ্যই তাকে বিয়ে করতে চাইতো।এতো বড় সুযোগ মিস করত না।তুতুলের মনে এক অদ্ভুত তোলপাড় শুরু হয়।সে খুশি হচ্ছে না দুঃখি সে নিজেও বুঝতে পারছে না।বুকটা ভারী হয়ে আসে তার।রিঝ বুঝিয়েই চলেছে।সবাই কিছু না কিছু বলছে।বুঝাচ্ছে কিন্তু গ্রামের কেউই বুঝতে চাইছে না।উল্টা ছেলেদের মারধোরও করা হয়েছে।রিঝের কপাল ফেটে গেছে।রামিমের গাল বেয়ে রক্ত পড়ছে।আকাশও আহত হয়েছে মারাত্নক ভাবে।উথৌয় নিজেও থামাতে পারছে না।তার বাবা তাকে আটকে রেখেছে।মেয়েদের দিকে আঘাত আসতেই রিঝ নিজের মাথা চেপে ধরে ধর্য্য হারা হয়ে রেগে বললো,
“ আমরা সবাই বিয়ে করবো।এবং কালকেই বিয়ে করবো।”
তুতুল বিস্ময়ে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে রিঝের দিকে তাকায়।হঠাৎ ঝড়ের মতো সম্পর্কগুলো এলোমেলো হয়ে যায়।আসমা রামিমের দিকে তাকায়ে আছে।এটা কি হলো!রামিমের গাল গলা থেকে রক্ত ঝড়ছে।তুতুল এখনো তাকিয়ে আছে রিঝের দিকে।চোখ গুলো তার জ্বলজ্বল করে জ্বালা করছে।আকাশ হতবম্ভ হয়ে দাড়িতে চাইছে।মাঝে মাঝে রূমাশ্রীর দিকে তাকাচ্ছে।রূমাশ্রী তার বাবা চাচাদের বুঝাচ্ছে কেঁদে কেঁদে।তুতুলের মাথা ঘুরে উঠে।বিয়ে নামক ভারী শব্দ সে বহন করতে পারছে না।একদম না।মাথা ঝিমঝিম করে।সবার রক্ত দেখে তার শরীর শিরশির করে উঠে।মাথা ভারী হয়ে উঠে মুহূর্তেই।রিঝ হাঁটু ভেঙ্গে বসে আছে।তার ঘাড় রক্তাক্ত হয়ে আছে।গায়ের জামা ভিজে লাল হয়ে আছে।তুতুল এই ভয়ংকর চাপ নিতে না পেরে সেন্সলেস হয়ে পড়ে।রিঝ ধরতে চেয়েও ব্যর্থ হয়।চোখ বুঝে নেয়।আসমা কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে।রামিম সান্ত্বনা দিতে চেয়েও পারে না।আকাশ তুতুলকে ধরে।বিয়ে আনন্দ বয়ে নিয়ে আসে।কিন্তু আজকে যেনো বিষাক্ত ঝড় বয়ে নিয়ে এসেছে।বিয়ে যেনো সবার জীবনে তাণ্ডব সৃষ্টি করছে।যে তাণ্ডব বয়ে বেড়াতে পারবে না রিঝ!রিঝ আবার হাটু ভেঙ্গে বসে পরে।তিন জোড়া জুটির অবস্থাই করুন।বাকিরা খুশিতে ফেঁটে পড়ছে।জীবনে প্রথম এক সাথে চার জোড়া বিয়ে দেখবে।এর থেকে আনন্দের আর যেনো তাদের কাছে কিছুই না।কিন্তু বিয়ের এই বিষাক্ত পিড়া নিতে পারছেনা তিনটি জুটিই।উথৌয় নিজেও মাথায় হাত দিয়ে বসে পরে।সে আনন্দ করতে নিয়ে এসেছে সবাইকে।কিন্তু এখানে তো বিষাদের ছাঁয়া চারদিকে।রিঝের বুকটা ধুকপুক ধুকপুক করছে।সত্যিই কি কাল বিয়ে হয়ে যাবে!!প্রতীক্ষিত বিয়ে এতো অদ্ভুত ভাবে হবে!এতো অদ্ভুত বিয়ে!যা তাদের কল্পনার বাহিরে ছিলো!
#চলবে…………
ভুলগুলো আল্লাহর দেওয়া মহান গুন ক্ষমার চোখে দেখবেন।
#চলবে…………
ভুলগুলো আল্লাহর দেওয়া মহান গুন ক্ষমার চোখে দেখবেন।পরের অংশও একসাথেই দেওয়া হয়েছে।