কৃষ্ণচূড়ার রং লাল-২৮.🎈
@হাফসা আলম
_____________________
হিমেল বাতাস চারপাশে।সবুজ গাছ,পাহাড় ছুঁয়ে দৌড়ে ছুটে আসছে বাতাস।প্রচন্ড বাতাসে শীত হু হু করে শরীরে বাসা বাঁধছে।ঘন কুয়াশার পল্লবে ডাকা পড়ে আছে চারপাশ।কোথাও থেকে ঝিঁ ঝিঁ পোকার ডাক ভেসে আসছে।সাথে ভাসছে বন্য প্রানীদের আর্তনাদ ভরা কন্ঠ।বসতি শীতল ঠান্ড হয়ে আছে।একদম মৃত্যু পুরীর মতো নিশ্চুপ হয়ে আছে সব।শীত নামক ঋতুকে সব চাইতে ভয় পাওয়া মেয়েটাও আজ শীতের কোনো পোশাক বাদেই বসে আছে এলোমেলো হয়ে।চারপাশের শীতের এতো আমেজ তাকে ছুঁয়ে যেতে পারছে না।চঞ্চল আকাশের মাথায় যেনো আজ মেঘের বাসা।কালো মেঘ ঘূর্ণায়মান গতিতে তার দিকে ছুঁটে আসছে।সে নিশ্চুপ ভঙ্গীতে এলোমেলো শরীর নিয়ে বসে আছে গাছের গুটিতে।মাথার কোঁকড়া চুলগুলো এলোমেলো হয়ে আছে।কপালে জমে আছে রক্তের কণা।শান্ত চিন্তার ছেলেটাও আজ মাথা থেকে কোনো চিন্তাই দূর করতে পারছে না।রক্তে মাখামাখি শরীর গুলোতে মলম লাগাতে ব্যস্ত আর্মি মানুষ।আজ যেনো সবার সাথে তারও দুঃক্ষে ঘনঘটা হয়ে আছে।সবচাইতে চৌখস,বুদ্ধিমান,ঠান্ডা মাথার গরম প্রানীটি নিজের ক্লান্ত শরীরটিও এলিয়ে দিতে পারছে না।গাম্ভীর্য্য তাকে আরো বেশি করে ভর করে রেখেছে।আজ যেনো সব জ্ঞান শূন্য মনে হচ্ছে।এতো প্রখর মেধা যদি বিপদে কাজে না আসে তাহলে এই মেধার কাজ কি?সু উঁচ্চ পাখা মেলা মেয়েটা শুয়ে আছে।তার চোখ বুঝা।সে গভীর ঘুমে তলিয়ে গেছে।মুখে চিন্তার ছাপ নেই।ক্লান্তি নেই।আছে শান্তি।হয়তো শান্তির একটা কোল পেয়েছে তাই।সবচাইতে অসহায়,দূরত্বের মেয়েটা রূমাশ্রী।সবাই যে যার প্রিয় মানুষের পাশেই আছে।কিন্তু তার সব প্রিয় মানুষ তার সাথে রাগ অভিমান করে চলে গেছে।প্রেম একটা সুপ্ত আবেগ।যা রন্ধ্রে রন্ধ্রে বসত করে।তারও প্রেম হয়েছিলো।কিছুক্ষণ আগেও প্রেম নিয়ে ব্যস্ত ছিলো সে।ভালোবাসার মানুষকে কিভাবে বিয়ে করবে সে সব ভাবছিলো সে।কিন্তু সামান্য ভুলের শাস্তি স্বরূপ তাকে সব হারাতে হয়েছে।পরিবার,ভালোবাসা,সুঠাম হাত,মাথার ঠাই সব।রূমাশ্রীর প্রেমিক তার সাথে সম্পর্ক ভঙ্গ করে চলে গেছে।বাবা মাও তাকে ছুঁড়ে দেওয়ার মত ফেলে চলে গেছে।সব হারিয়ে সে এখন কাঁদছে।হাঁটুতে মুখ গুঁজে কাঁদছে।মাথার উপর থেকে ভিজা গাছের কুয়াশা পাতা বেয়ে এসে পড়ে তুতুলের মুখে।শান্তি,চিন্তা মুক্ত ভাব হুর করেই দূর হয়ে যায়।চোখটা টিপটিপ করে খুলতেই নিজেকে রিঝের বাহুতে আবিষ্কার করে সে।বিদ্যুৎ বেগে দ্রুত সরে যায় সে।মাথাটা প্রচন্ড ব্যাথা হয়ে আছে তার।যেনো কেউ অনেক ভারী পাথর চাপিয়ে দিয়েছে।দু’হাতে মাথা চেপে ধরে সে।সব মনে করার চেষ্টা করে।কিন্তু মনে করতে পারছে না।তার শুধু মনে আছে সে কোকাকোলা খেতে খেতে সামনে এগিয়ে গিয়েছিলো।তারপর উমের সাথে দেখা।তারপর উমে তাকে কিছু বলছিল, তারপর, তারপর!তুতুল চোখ বড় বড় করে রিঝের দিকে তাকায়।রিঝ আড়চোখে তাকায়।চোখাচোখি হতেই চোখ সরিয়ে নেয় তুতুল।বিয়ে নামক ভয়ংকর কথা এখনো তার মনে পড়েনি।রিঝ রূমাশ্রির দিকে তাকিয়ে দেখলো।মেয়েটা দূরে বসে আছে।ফুফাঁনোর শব্দ কানে আসছে সবার।রিঝ ডাক দিয়ে বললো,
“ শুনো ,হ্যাঁ তোমাকেই বলছি।এদিকে এসে বসো।অন্ধকারে তোমাকে পরে হারিয়ে ফেলতে হবে।সেটা করলে তো হবে না।শতো হোক তুমি আকাশের হবু বউ বলে কথা।ভাবি!!”
রিঝের কন্ঠে রসিকতা।আকাশ ত্যাড়া চোখে তাকালো।রিঝ হাসলো।সবাই একটু আকটু করে হাসছে।রুমাশ্রী মিইয়ে যাওয়া মুখটা তুলে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকলো রিঝের দিকে।রিঝ আবার ডেকে বললো,
“ চলে এসো।আমরা মানুষ।তোমার বসতির মানুষ রুপি প্রানীদের থেকে একটু হলেও ভালো এবং ভিন্ন আছি।”
আকাশ খুবই রাগলো।বললো,
“ ওই মাইয়া তুই এখানে ভুলেও আসবি না।তোকে দেখতে চাই না আমি চোখের সামনে।”
রূমাশ্রী পাল্টা রাগ ঝাঁরলো।বললো,
“ তোর আশেপাশে থাকাও আমার কাছে পাপ মনে হয় পাপ।”
এদের কথা বার্তা দেখে কিছুসময়ের জন্য দুঃখের মহলে বিনোদন খেলে গেলো।সবাই হাসতেও শুরু করলো।তুতুল খুবই উঁচ্চাশিত হয়ে বললো,
“ রূমাশ্রী দি আপনি আকাশ ভাইয়ার থেকেও ভালো পরেন।”
কথাটা বলেই সে রিঝের দিকে তাকালো।রিঝ চোখ গরম করে তাকিয়ে আছে।ধমক দিয়ে তুতুলকে বললো,
“ রসিকতা চলছে না কি?এতো বাহবা দেওয়ার কিছু নেই।”
তুতুল ধপ করেই নিভে গেলো।আসমা রূদ্ধ কন্ঠে বললো,
“ রিঝ আমরা কি এখান থেকে পালাতে পারবো না?বিয়ে কি হয়ে যাবে?তাও রামিমের সাথে??আমার তো হিমেলের সাথে বিয়ে হওয়ার কথা ছিলো তাই না?”
“ বিয়ে “ নামক কথাটা তীরের বেগে ছুঁটে এসে তুতুলের মস্তিস্ক দখল করে নিয়েছে।তুতুল উঠে দাঁড়িয়ে পড়ে।রিঝ চোখ উপর করে তাকায়।জিজ্ঞেস করে,
“ সমস্যা কি?”
তুতুল চারদিকে চোখ বুলিয়ে বললো,
“ আমি বিয়ে করবো না।পালানোর রাস্তা খুঁজচ্ছি।”
রিঝ উচ্চ শব্দে হাসলো।যেনো তুতুল খুবই মজার একটা কৌতুক বলেছে।হাসিটা তুতুলের গায়ে লাগলো।সে ভ্রু,কপাল কুঁচকে নিলো মুহূর্তেই।রিঝ যেনো হাসি থামাতেই পারছে না।দু’হাতে সে পেট চেপে ধরে হাসতে লাগলো।তুতুল সহ সবাই ঝুঁকে তাকিয়ে রইলো।রিঝ হাসি থামাতে না পেরে বললো,
“ পালাতে চাও!!”
বলেই সে আবার হাসিতে ফেঁটে পরে।তুতুল বিস্মিত চোখে তাকিয়ে থাকে।এলোমেলো চুল।ঠোঁট জোড়ার কোণ ঘেঁষে রক্ত ঝড়ছে।কপালের একপাশে জমে আছে রক্তের কণা।তুতুলের মায়া হলো ভারী।রিঝ নিজেকে অনেক কষ্টে থামিয়ে বললো,
“ কই চল সবাই মিলে পালাই।মহারানীর পালানোর ইচ্ছে জেগেছে আর পালাবো না এটা কি হতে পারে!আমরা সবাই তো ওর হুকুমের গোলাম।”
তুতুল মাথা নিচু করে নেয়।রিঝ দাঁতে দাঁত চেপে বললো,
“ তুমি অতিরিক্ত বারাবারি করো।যেটা কখনোই উঁচিত না।আজ সবাই তোমার জন্য বিপদে পড়েছে।তারপরেও তুমি পালাতে চাচ্ছো?পালাতে গেলে এবার সুট করে দেবে।এটাই বাকি আছে।সব কিছুতেই নিজের কথা ভাবা উঁচিত না তুতুল।অনেক হয়েছে।এবার চুপ যাও।”
রিঝের কথাগুলো খুবই ঝাঁঝালো ছিলো।কথার মাঝে ধমকও ছিলো অনেক।তুতুলের গোলাকার বড় চোখ ছোট হয়ে আসে।গড়গড় করে গড়িয়ে পরে নোনা পানি।গালগুলো লাল হয়ে উঠে।রিঝ একপলক দেখে।তারপর আবার ধমক দিয়ে বলে,
“ কান্নার কি আছে??থামো।আর ড্রিংক করেছো কেনো??”
তুতুল চোখ তুলে তাকায়।তার ভাবটা এমন যেনো সে কিছুই জানে না।রিঝ মুখটা কঠিন করে আবার ধমকে উঠে বললো,
“ কেনো করেছো??”
“ আমি করি নি।”
“ সত্যি বলছো বলে তোমার মনে হচ্ছে??”
“ আলবাদ আমি সত্যি বলছি।”
“ থাপড়ে দাঁত ফেলে দিবো।মিথ্যা বলা হচ্ছে আমার সাথে??আমি কিন্তু সেই রিঝই।কয়েকদিন ফ্রি হয়েছি বলে তুমি ভেবো না আমি আগের রূপে ফিরে যেতে পারবো না।”
তুতুল এবার শব্দ করে কেঁদে ফেলে।ভয়ে তার অন্তরআত্না কেঁপে উঠেছে।রিঝের রাগ ভয়ঙ্কর!সে জানে।এবং ভয়ও পায়।কয়েক বছর আগেও একবার রাগ করে তাকে পুকুরে ফেলে দিয়েছিলো।শীতের সেই সকালে ভয়ঙ্কর ঠান্ডা ছিলো সেই পুকুরের পানি।রিঝ আবার কিছু বলবে তার আগেই তুতুল বললো,
“ আমি সত্যি বলছি আমি শুধু কোকাকোলা খাইছি।আর কিছু না।”
রিঝ সচেতন হয়ে এবার তাকায়।তুতুলের কথা তার বিশ্বাস হচ্ছে।তুতুল মনে মনে বিড়বিড় করে,এই ছেলেকে বিয়ে তো দূর অন্য কিছুও সে বানাবে না।শয়তান একটা।
রিঝ বললো,
“ ধন্যবাদ।”
তুতুল মাথা তুলে বললো,
“ কেনো??”
“ শয়তান বলার জন্যে।”
তুতুল সাথে সাথে চোখ বুঝে নেয়।রিঝ উঠে দাঁড়াতে দাঁড়াতে বললো,
“ সবাই ঘরে চল।কাল কি হবে কাল দেখা যাবে।পাহাড়ের উপরে ঠান্ডা বেশি।পরে জমে যাবি বরফে।”
আকাশ উঠতে চাইলো না।ফুঁস ফুঁস করে রাগে ফুলছে সে।রুমাশ্রীর সেদিকে ভ্রুক্ষেপ নেই।সে নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত।তুতুলকে দাড়িয়ে থাকতে দেখে রিঝ হাত টেনে হাঁটা শুরু করে।তুতুল বললো,
“ চলেন পালাই।না মনে আসলে আপনিই বলেন কাল যদি বিয়ে হয়ে যায় তখন কি হবে!!”
রিঝ তুতুলের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বললো,
“ কি হবে??”
“ আল্লাহ আমি তখন আপনার বউ হয়ে যাবো!!”
“ তো,হলে হবা।আমি কি দেখতে খারাপ??”
তুতুল হতবাক চোখে তাকিয়ে বললো,
“ পাগল হলেন না কি?জীবনেও না।আমি পালামুই।”
“ ওকে পালাও।”
“ কিন্তু কিভাবে??”
“ সেটা তুমি জানো।”
“ হেল্প করেন প্লিজ।”
“ মারতে চাও না কি?” রিঝ থেমে বললো।
“ কেনো??”
“ ওরা কিন্তু এবার মেরেই ফেলবে।আগের বার শুধু আহত করেছে।”
তুতুল রিঝের কপালের রক্ত হাত দিয়ে ছুঁয়ে দিলো।রিঝ মুহূর্তেই চোখ বুজে নিয়েছে।তুতুল আবেগে আপ্লুত হয়ে বললো,
“ ইশশ্ কত মেরেছে।”
“ তোমার সামনেই তো মরেছে।”
“ হুম।তখন আমার কি ইচ্ছে করেছে জানেন??”
রিঝ কৌতুহলি হয়ে প্রশ্ন করে,
“ কি ইচ্ছে করেছে??”
“ ওই বেটার মাথা ইট দিয়ে ফাটাই দিতে।”
“ এখন আর ইচ্ছে করছে না??”
“ করছে তো।”
“ তাহলে ফাটাও দেখি।”
রিঝের কপালে যে মেরেছে সে সামনেই দাঁড়িয়ে ছিলো।বিশাল দেহ।কালো মোটা।বড় বড় গোঁফ।ভয়ঙ্কর দেখতে।এরা আবার বাংলা বুঝে না।পেশায় গুড্ডা বলা চলে।সব সময় হাতে রাইফেল নিয়ে ঘুরে বেড়ায় এরা।উথৌয়ের বাবার বাসার সামনে পাহারা দেয়।তুতুল আশেপাশে খুঁজে।দেখে একটা ভাঙ্গা ইটের টুকরো পড়ে আছে।সে সত্যি সত্যি ইটের টুকরো নিয়ে ছুঁড়ে মারে সেই লোকটির দিকে।ইটের টুকরো একদম তার মাথার একপাশে লাগে।রক্ত পড়া শুরু হয়।রেগে গিয়ে লোকটা বন্দুক তাক করতেই রিঝ দু’হাতের বাহু ডোরে তুতুলকে আঁকড়ে ধরে।সে হতভম্ভ হয়ে তাকিয়ে আছে তুতুলের দিকে।রিভোলবার দেখে তুতুল ভয়ে কাঁপছে।চোখ গুলো বন্ধ করে সে রিঝের বুকে মুখ গুঁজে আছে।রিঝ একটা হাত তুলে বললো,
“ ও ইচ্ছে করে করেনি।প্লিজ থামুন!”
তুতুলের এই কান্ডে রিঝ পুরো দমে বিস্মিত।এই দারুন ভয়ঙ্কর কাজ এতো সহজে তুতুল করলো কিভাবে??মেয়েটা কি তার চেয়েও বেশি পাগল!!রিঝ কিঞ্চিত হাসলো।উথৌয় দৌড়ে এসে লোকটিকে বুঝিয়ে বলতে শুরু করলো।তুতুলের শরীর থরথর করে কাঁপছে।রিঝ সেটা অনুভব করতে পারছে একদম কাছ থেকে।তার ভাবতেই অবাক লাগছে।এই বহু চাওয়া মেয়েটিকে এতো সহজেই সে পেয়ে যাবে??আসলেই কি নিয়তি তার সঙ্গী??
__________________________
লাল গালিচা বিছিয়ে দেওয়া হয়েছে।চারপাশে সাদা ফুলের বাহার।সবুজ আর সাদায় মুড়িয়ে আছে ছোট মাঠটি।চেয়ারে বসে আছে গ্রামের সব মানুষজন।খাবারের বিশাল আয়োজন।হরিণের মাংসের গন্ধ ছড়িয়ে পড়ছে আশেপাশে।বিয়ে মানেই খরচ!এটা স্বাভাবিক একটা ব্যাপার।কিন্তু এই চারজোড়া বিয়ের সব খরচ যেনো শৈয়াং ইসলাম নিজের কাঁধে নিয়ে নিয়েছে।অন্য কারো কাঁধে কিছুই নেই।গায়ের জামাগুলোও তিনি সবার মাপ মত তৈরি করে ফেলেছে এক রাতের মধ্যে।উথৌয় তার বাবার প্রতি প্রচন্ড রেগে আছে।সে তার সাথে কথা বলছে না।শৈয়াং সাহেব ছলেবলে ছেলের সাথে কথা বলতে চাচ্ছে।কিন্তু পাত্তা পাচ্ছে না।উয়েংচু সেজেগুজে উথৌয়ের সামনে এসে দাড়ায়।হাসি হাসি মুখ করে বলে,
“ আমাদেরও উঁচিত ছিলো কালকে ওদের মতো কিছু করার।”
উথৌয় নিজের হাতের জামাটা রেখে তাকালো।খুবই অসহ্য একটা শ্বাস ফেলে বললো,
“ ওদের সাথে এটা ভালো হচ্ছে না।”
“ আমাদের সাথে তো হতো তাই না!”
“ আমাদের সাথেও হতো না।অস্বাভাবিক কিছুই ভালো হয় না।”
“ হইছে তুমি এখন মুখটারে বাংলার পাঁচের মত করে রেখো না।সবঠিক হবে দেখো।এবার একটু হাসো।”
“ ভালো লাগছে না হাসতে।”
“ প্লিজ.”
উয়েংচু মাথাটা ঝুঁকে তাকায়।উথৌয় সে কান্ড দেখে হাসলো।উয়েংচু উচ্চ শব্দে হেঁসে উঠে বললো,
“ হাসলে তোমাকে দারুন লাগে।ইচ্ছে করে একটা চুমু খাই।”
“ সিরিয়েসলি!!তাহলে এখনই খাও।”
উথৌয় কাছে আসতেই উয়েংচু দেয় একটা দৌড়।
সাদা ফুল হাতা গাউন।ফুলা ঘের।মাথায় বিশাল উড়না।পায়ের পাতা ছুঁয়ে লাল গালিচার উপরে পড়ছে।চোখের উপরের অংশে কালো সেড।গালে হালকা মেকাপ।ঠোঁটেও হালকা লিপস্টিক।গলায় চিকন সাদা পাথরের হার।বিশাল গাউন দু’হাতে উপরে তুলে তুতুল রিঝের রুমে এসে হাজির হয়।রিঝ তখন সাদা শার্টের উপরে কালো ব্লেজার পড়তে ব্যস্ত।তুতুলকে দেখে একটা হাতে আর ব্লেজারের হাতা ঢুকাতে পারেনা সে।মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে থাকে হুট করেই উড়ে আসা সাদা পরীর ভেস পরিহিত তুতুল পাখির দিকে।রিঝ মন্ত্রমুগ্ধের মতো দেখছে।মুহূর্তেই চোখের সামনে ভেসে উঠে সাদা ফ্রক পড়া সেই ছোট্ট মেয়েটার প্রতিচ্ছবি।ছোট ছোট পা ফেলে তার রুমে উঁকি দেওয়া সেই স্বপ্নের কন্যা আজ তার জন্য সাদা গাউনে নিজেকে মুড়িয়ে নিয়েছে।খোঁপা করা কোঁকড়া চুলগুলোর ভাঁজ থেকে কয়েক গুচ্ছো চুল গালের দুপাশ দখল করে রেখেছে।গাল গুলো লাল হয়ে আছে।কালো সেডের মাঝের বড় সেই চোখ পানিতে জ্বলজ্বল করছে।এই মেয়েটার প্রতি গভীর আবেগ,প্রেম,ভালোবাসা জন্মের গল্পটা এই চোখেই আবদ্ধ।কালো মনি যুক্ত একজোড়া বড় চোখই রিঝ নামক এই প্রানীর জীবনের প্রেম।কোঁকড়া গুচ্ছো গুচ্ছো চুলই এই প্রানীর ভালোবাসা।
“ রিঝ ভাইয়া আই প্রমিস আমি আর আপনার কথার অবাধ্য হবো না।প্লিজ বিয়েটা থামান।”
রিঝের যেনো মুহূর্তে প্রান ফিরে এসেছে।নিজেকে একটু ঝাঁকিয়ে সে বললো,
“ কিছু বলবে??”
তুতুল কাঁদো কাঁদো হয়ে বললো,
“ আমি আপনাকে বিয়ে করবো না।প্লিজ এটা থামান।বাবা ভাইয়া মা কারো সাথে যোগাযোগ করতে পারছি না।নেটওয়ার্ক নেই এখানে।এখন কি হবে??”
রিঝ নিজের কাজে মনোযোগী হয়ে উঠলো।ব্লেজার পড়তে পড়তে বললো,
“ এসব ফালতু কথা ছাড়া অন্য কথা থাকলে বলো।”
“ আপনার এগুলো ফালতু কথা মনে হচ্ছে??”
“ হ্যা হচ্ছে।কারণ জীবন বাঁচানো এবং বিয়ে করা দুটোই ফরজ কাজ।যা আমি করতে চলেছি।”
“ প্লিজ ভাইয়া কিছু করেন।আই প্রমিস আমি সব সময় আপনার কথা শুনে চলবো।”
“ তাহলে এখনই চলো।বিয়েতে রাজি হয়ে যাও।”
“ এইটা ছাড়া।”
তুতুলের কন্ঠ কান্নার দাপটে কাঁপছে।গলায় কথা আটকে আসছে।রিঝ শান্ত করতে বললো,
“ দেখো এছাড়া আর কোনো পথ নেই।বিয়েটা করতেই হবে।আর বিয়ে কঠিন কিছু না বুঝলে।অনেক সহজ।মাত্র তিনবার কবুল কবুল কবুল বললেই বিয়ে শেষ।”
“ আমিও জানি তিনবার কবুল কবুল কবুল বললেই বিয়ে হয়ে যায়।কিন্তু আমি আপনাকে বিয়ে করতে পারবো না।”
“ বিয়ে তো হয়েই গেছে।”
তুতুল ভারী আশ্চর্য হয়ে বললো,
“ কিভাবে??”
রিঝ আয়নার সামনে দাড়িয়ে ব্লেজারের বুকের পাশে একটা ফুলের তৈরি পিন লাগাচ্ছে।আয়নায় তুতুলের দিকে তাকিয়ে রিঝ বললো,
“ তিনবার তো কবুল বলেই দিয়েছো।আমিও বলেছি।বিয়ে শেষ।”
তুতুল রেগে বললো,
“ আপনি ফাইজলামি করছেন??”
“ যেটা তোমার মনে হয় সেটাই।”
তুতুল রিঝের সামনে এসে তার কলার চেপে ধরে।ঝাঁঝালো কন্ঠে বলে,
“ আমি আপনাকে বিয়ে করবো না।”
“ পারলে আটকাও।” রিঝ নিজের ঠোঁট কামড়ে বললো।তুতুল রিঝের বুকে কিল ঘুষি মেরে বললো,
“ আপনি বিয়ে করতে বাধ্য করছেন??”
“ আমি নিজেও বাধ্য।”
“ চাইলে আটকাতে পারেন।”
“ চাচ্ছি না।”
“ আপনি জোর করছেন আমাকে??”
“ ধরে নিলাম তাই।”
“ আপনি তো এমন ছিলেন না রিঝ ভাইয়া।”
“ আমার অনেক রূপের সাথে তুমি অপরিচিত।”
“ সুযোগ নিচ্ছেন??”
“ তুমি নিজেই সুযোগ করে দিয়েছো।”
“ রিঝ ভাইয়া আপনি কিন্তু ভালো করছেন না।”
তুতুল চিৎকার চেঁচামেঁচি করছে।রিঝ শান্ত।স্বাভাবিক ভঙ্গিতে কথা বলছে।তুতুলের রাগ আরো বাড়ছে।কেঁদে,চিৎকার করে তার অবস্থা খারাপ।রিঝের ব্লেজারের ফুল ছিড়ে ফেলেছে সে।নিজের মাথার উড়না এলোমেলো করে ফেলেছে।রিঝ নিজের কলার ঠিক করে।মাথার চুল ঠিক করে।ঘাড়ে হাত বুলায়।তার সব কাজ খুবই শান্ত।কোনো তাড়া নেই।বিরক্তি নেই।আছে শান্ত ভাব।তুতুল এবার আরো জোড়ে চিৎকার করে বললো,
“ আমি বিয়ে করবো না।করবো না ।করবো না।”
বলেই তুতুল পায়ের হিল ছুঁড়ে মারে।রিঝ দ্রুত হাত বাড়িয়ে ধরে।তা না হলে তার মুখের উপরে পড়তো।তুতুল চুল,জামা,মেকাপ সব এলোমেলো করে ফেলেছে।সে কাঁদছে।আগে একবার সে নিজের পছন্দ করা ছেলের সাথে বিয়ে করবে বলে ঠিক করেছে।বাবা ভাইয়ের কথাও কম শুনেছে।এখন যদি না জানিয়ে বিয়ে করে ফেলে তাহলে কি হবে??ভেবেই তুতুলের মাথা ধোরে যাচ্ছে।চোখেমুখে সব অন্ধকার দেখছে সে।চিৎকার শুনে অনেকেই রুমে এসে হাজির হয়।আসমা তুতুলের পাশে বসে উত্তজিত হয়ে বললো,
“ কি হয়েছে তুতুল??এমন করছো কেনো??আমাকে বলো।”
তুতুল কান্নায় আটকে আসা গলায় বললো,
“ আমি বিয়ে করবো না আসমা আপু।প্লিজ আমার আব্বু আর ভাইয়াকে কল করার ব্যবস্থা করে দেও।”
আসমার মনটাও প্রচন্ড বেগে খারাপ হয়ে যায়।সেও কেঁদে ফেলে।কান্নায় জড়িয়ে পড়ে আসমা বললো,
“ আমিও বিয়ে করতে চাই না।বুঝো যে ছেলেকে বছরের পর বছর ধরে বন্ধু ভেবে এসেছি ওকে কিভাবে বিয়ে করবো??আর হিমেলকে আমি কথা দিয়েছিলাম ওকে আমি বিয়ে করবো।কথাও রাখা হবে না।আমার বাবা তো থেকেও নেই।আমার অবস্থা আরো খারাপ।”
রুমাশ্রী এখন এদের সাথে সাথে থাকে।তাকেও তৈরি করা হয়েছে।উমের মনটা বিষাক্ত হয়ে আছে।এই ঘটনাটা যদি তার আর রিঝের সাথে হতো তাহলে কি খুব খারাপ হতো??এই কথাই তার বারবার মনে পড়ছে।রূমাশ্রীও নিজের কথা বলা শুরু করে।সেও কান্নায় জড়িয়ে যায়।আকাশ রেগে আসমাকে বললো,
“ আজকে তোরা কাঁদতে পারছ দেখে কেঁদে ভাসিয়ে দিচ্ছোস।ছেলে বলে কাঁদতে পারছিনা।তা না হলে আমরাও কেঁদে ভাসাতে পারতাম বুঝলি।”
রূমাশ্রীও পাল্টা রেগে বললো,
“ তো কাঁদেন।কে ধরে বেঁধে রেখেছে আপনাকে?যত সব।”
“ এই মেয়ে এই মেয়ে একদম আমার সাথে লাগতে আসবে না।তোমাকে বিয়ে করতে আমার বোয়েই গেছে।নেহাত তোমার জল্লাদ চাচা জোর করছে।তা না হলে পালিয়ে যেতাম।”
“ তো জান না।বসে আছেন কেনো?আপনার মতো এতো বাজে একটা লোককে বিয়ে করতে হবে ভেবেই আমার নদীতে ঝাপ দিতে ইচ্ছে করছে।”
“ তাহলে বসে বসে কাঁদছো কেনো??যাও ঝাপ দেও।তোমাদের পাহাড় থেকে তো নদী দেখা যায়।ঝাপ দিলে একদম মাঝে গিয়ে পড়বে।” আকাশ মুখটা বাঁকা করে নেয়।আসমা আকাশকে ধমকে বললো,
“ তুই চুপ করবি আকাশ।”
আকাশ বললো,
“ না করবো না।”
“ থাপ্পড়ও খাবি।”
রামিম হেসে উঠে বললো,
“ হবু বউয়ের সামনে দিলে মন্দ হবে না।”
আসমা এতোক্ষনে রামিমের দিকে তাকায়।কালো ব্লেজারে সেও এসে হাজির হয়েছে।চোখে চোখ পড়তেই আসমা চোখ সরিয়ে নেয়।রামিম কিছু বলতে চেয়েও বলে না।আকাশ হঠাৎ জ্বলে উঠে।এক গাল হেসে বলে,
“ বুদ্ধি পাইছি।পাইছি।”
রিঝ এতোসময় নিয়ে সবার কার্যকলাপ দেখছিলো।আকাশের উত্তেজনা দেখে সে বললো,
“ কি বুদ্ধি।”
“ দেখ এই বিয়েতে কেউ রাজি না।জোর করেই বিয়ে হচ্ছে।তাই এই পাহাড় থেকে মুক্তিপাওয়ার সাথে সাথে এই বিয়ে বাতিল করা হবে।আর আইনি ভাবে না হয় ডিভোর্সও নিয়ে নেওয়া হবে।এটা কোনো বড় ব্যাপার না।কি বলছ সবাই??”
আকাশের কথায় আসমা,তুতুল দারুন খুশিতে লাফিয়ে উঠে।তালমিলিয়ে বলে,
“ একদম সেরা বুদ্ধি।”
রিঝ আর রামিমের চোখ কড়া।রিঝ পারলে আকাশের গালে এখনই থাপ্পড় বসিয়ে দিতো।রূমাশ্রী মন খারাপ করে বললো,
“ এতে আমার কি লাভ?আমি তো দুই কুলই হারাবো।”
আকাশ ভ্রু কুঁচকে বললো,
“ কেনো??”
“ আরে মংলা মানে আমার ভালোবাসার মানুষ তো আমাকে এখনই ত্যাগ করেছে।পরে যদি স্বামীও ত্যাগ করে তখন আমি কই যাবো।”
আকাশ বিরক্ত হয়ে বললো,
“ সেটা আমরা কি জানি।যেখানে খুশি যাবে।আমাদের বলছো কেনো??আর কিসের স্বামী??এই বিয়ে তো করার আগেই আমরা মানি না।আর তুমি স্বামী স্বামী বলে নাচ্ছো কেনো??যতসব ফালতু মেয়ে ছেলে।”
রূমাশ্রী নিভে গেলো।চুপচাপ করে কাঁদতে শুরু করলো।সবার ডাক পড়লো।তুতুল যাবে না মানে যাবে না।পরে না পাড়তে রিঝ কোলে তুলে নিলো।তা না হলে পহড়িরাই টেনে নিয়ে আসবে।তাই রিঝ নিজেই তার হবু বউকে কোলে তুলে নিয়েছে।তুতুল প্রচন্ড খুদ্ধ হয়ে রিঝকে বললো,
“ এই বিয়ে কিন্তু আমি মানি না।ভাইয়াকে বলবো আপনি জোর করেছেন।আর কারোটা বলবো না।”
রিঝ ঠোঁট কামড়ে হাসি থামিয়ে বললো,
“ বলিও।”
তুতুল কাঁদতে কাঁদতে বললো,
“ আপনার মনে হয় না আপনি খুব খারাপ??”
“ হয়।এবং আমি বিশ্বাসও করি।”
“ আপনি একটা ফালতু লোক।”
“ হয় তো।”
তুতুল একের পর এক বাজে মন্তব্য করছে।রিঝ মাথা পেতে সব মানছে।খামছি দিচ্ছে।শরীর পেতে সে খামছি গায়ে মাখছে।চিৎকার করছে।সেই শব্দ মধুর রূপে কানে ধারণ করছে।হাত পা নাচানাচি করছে।তবুও তুতুলকে জড়িয়ে রেখেছে কোমল হাত দিয়ে।নিচের লাল গালিচা দিয়ে হাঁটছে রিঝ।তার কোলে তুতুল।লম্বা উড়নাটা ঝুলছে নিচে।গাউনের কিছু অংশও ঝুলছে।এলোমেলো হয়ে উড়ছে প্রকৃতি।মেঘ গর্জন করে উঠছে হঠাৎ হঠাৎ।যেনো আজ এই কনকনে শীতের দিনেই বৃষ্টি হবে।এই জুটি আলাদা।সবার নজড় কাড়ছে এরা।আসমা রামিমের সাথে যেতে যেতেও ঝগড়া করছে।আকাশ তো রূমাশ্রীর দিকে মাঝে মাঝে রাগী চোখে তাকাচ্ছে।ভয়ে রূমাশ্রী মিইয়ে যাচ্ছে।উমের হাত তর্জনের হাতের বাঁধনে।উমের হাতে ফুল।লাল ফুল।তুতুল বাদে সবার হাতেই ফুল।আসমা মনে মনে খুঁশি।বিয়ে তো নিচে গেলেই শেষ।তাই তার এই বিয়েতে কোনো সমস্যা হচ্ছে না।তবুও মনের কোথাও একটা অদ্ভুত অনুভুতি হচ্ছে।বিয়ের অনুভুতিইকি ভিন্ন??না কি এটা ভয়??কিন্তু কিসের ভয়??বন্ধুত্ব ভেঙ্গে যাওয়ার??আসমা ভয়ংকর দোটানায় ভুগছে।হঠাৎ মনে পড়ে মায়শা তো আছেই।পরে আবার ভাবে যদি রামিম অধীকার ছাড়তে না চায়??আবার ভাবে ছাড়তেই হবে।তাদের মাঝে তো না ছাড়ার মত কিছুই হয়নি।তাহলে সমস্যা কোথায়।বিয়ের সময় সবাই নতুন জীবন নিয়ে চিন্তা করে।কিন্তু এখানের সাবাই বিয়ে কিভাবে ভাঙ্গবে সেই চিন্তা করছে।বিয়ে হওয়ার আগেই ভাঙ্গন!!হঠাৎ ঝুম বৃষ্টি শুরু হয়।সবাই দৌড়ে বিয়ের আসরের দিকে যায়।রিঝ তবুও মিটিমিটি করে হাঁটছে।যেনো সে চায় এই পথ যেনো শেষ না হয়।তুতুল ভিজে চুপচুপ।সে চোখ খুলতে পারছে না।রিঝের চুল বেয়ে পড়া পানিও তার চোখেমুখে এসে পড়ছে।প্রকৃতি যেনো স্বাগতম জানাচ্ছে তাদের।ভিজিয়ে দিচ্ছে নিজের রূপে।নিজের অসিম ভালোবাসায় ভরিয়ে দিচ্ছে।শরীরের কানায় কানায় প্রেম জমিয়ে রাখছে।রিঝ মনে মনে বললো,
“ তুমি সেই ফুল,যাকে পাওয়ার অজস্র বাহানা তৈরি করেছি আমি।আবেদন বার্তায় ভরিয়ে দিয়েছি রাজ পথ।
হয় তো তাই আজ তুমি আমার সঙ্গী।কত সময়,কত দিন,কত বছরের তা জানা নেই।শুধু জানি এই মুহূর্তটা আমার।শুধুই আমার।এই বৃষ্টি আমার।এই তুমি আমার।এই ভালোবাসা আমার।এই প্রেম আমার।”
বিয়ের আসরে হৈচৈ পড়ে গেছে।একটা মেয়েও শেষ মুহূর্তে এসে বিয়ে করতে চাইছে না।সবার অবস্থা বুঝতে পারলেও উমের অবস্থা বুঝতে পারছে না কেউই।উমের বাবা তার দিকে কঠিন চোখে তাকিয়ে বললেন,
“ তুই কি আমার মরা মুখ দেখতে চাস??”
ভয়ে আতঙ্কে উমে বিয়েটা করেই নিয়েছে।বাকিদের জন্যেও রয়েছে কঠিন ব্যবস্থা।রিভোলবার!!বিয়ে যেনো আজ গলার ফাঁস হয়ে ঝুলছে।আসমাও সাইন করে দেয়।সাথে আবার ধর্মিও মতে বিয়ে।আংটি বদল।তুতুলের কন্ঠ নালি থরথর করে কাঁপছে।বাবা ভাই মা সবার কথা মনে পড়ছে।তারা এটা জানলে কি হবে??কিভাববে??কি করবে??এসব চিন্তা করতে করতেই সে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে।রিঝ শান্ত করতে চায় না।সে সটাং হয়ে পূর্ব দিকে তাকিয়ে আছে।আকাশ কানে কানে বলে,
“ আরে বাচ্চা মেয়ে কাঁদে না।এই বিয়ে তো নকল।একবার ছুঁটকারা পাই তারপর দেখামু আমরা কি।সমস্যা নেই বিয়ে করে নেও।মানে নকল বিয়ে।”
তুতলকে সবাই বুঝায়।রিঝ ছাড়া।শেষে না পারতে তুতুল সাইন করে।আর মুখে বলে,
“ আমি এই বিয়ে মানি না।আমরা কেউই মানি না।অমতে বিয়ে হলে সেটা হয় না।না মানে না।”
ধর্মিও নীতি অনুযায়ীও চারজোড়া বিয়ে হয়ে যায়।সাইন করার সময় তুতুলের হাতের কম্পনের কারনে কালিতে ভরে যায় সেই কাগজ।তবুও তাকে সাইন করতে হয়েছে এটা ভাবতেই পা থেকে মাথা পর্যন্ত কাঁপছে তুতুলের।সব অনুষ্ঠান শেষ হতে হতে সন্ধ্যা হয়ে যায়।আজকের রাত থাকতে বলা হয় আকাশ রামিম রিঝ কেউই রাজি হয় না।শৈয়াং ইসলাম এবং তার স্ত্রী হাত জোড় করে সবার থেকে ক্ষমা চায়।আকাশের তো তখন ইচ্ছে করছিলো খুন করে দিতে।রামিম আটকে রেখেছে।গ্রামবাসিও ক্ষমা চায়।যা হয়েছে অন্যায় হয়েছে।সবাই জানে।তবুও সেই অন্যায় করেছে এতে তাদের কষ্ট হচ্ছে না।কষ্ট হচ্ছে মানুষের মনে কষ্ট হয়েছে তাই।রূমাশ্রীর মা বাবা আকাশকে মেনে নিয়েছে।ঘরে নিয়ে জামাই আদর করা শুরু করেছে।আকাশ হতবাক!সব তার মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে।খেতে খেতে তার অবস্থা খারাপ।তার উপরে বাবা ডাক শুনতে শুনতে অবস্থা এমন হয়েছে যে নিজের বাবাকেও সে আর বাবা ডাকবে না।আব্বু ডাকবে এবার থেকে।আসমা রামিমকে সব বুঝিয়ে দিচ্ছে কিভাবে ভাঙ্গবে বিয়ে।আর কাউকে যাতে না বলে তাদের বিয়ের কথা।এসব বুঝাচ্ছে।রামিমও হ হ করছে।মাঝ থেকে তুতুলের দেখা মিলছেনা দীর্ঘ অনেক সময় থেকে।আংটি বদলের পরে যে দৌড়ে জায়গা ত্যাগ করে।তারপর থেকেই সে গায়েব হয়েছে আর খবর নেই।কই গেছে খুঁজে পাচ্ছে না রিঝ।এদের বিয়ের পোশাক অনেকটা ওয়েস্টার্নদের মতো।সাদা গাউন।সাদা শার্ট,কালো ব্লেজার,প্যান্ট।তাই রিঝ ভাবছে হয় তো ওই দিকে আছে।কিন্তু যখন খুঁজা শুরু করে তখন সে বুঝতে পারে তুতুল আশেপাশে নেই।রিঝ ঘরে বাহিরে সব জায়গায় খুঁজে।সবাইকে খুঁজতে বলে।
অনুপস্থিত!এই শব্দটাকে রিঝ সবচাইতে বেশি অপছন্দ করে।রিঝের মন্তব্য সে যেমনই থাকুক।কিন্তু উপস্থিত থাকুক।তুতুল যখনই তার থেকে দূরে থেকেছে তখনই তার ভয় নাম জালের সাথে পরিচয় হয়েছে।মেয়েটা একটু পাগলাটে,ইমোশনাল,বোকা,হয়তো প্রচন্ড বিরক্তিকর।তবুও তার প্রিয়।যাকে সামনে দেখতেই সে পছন্দ করে।ছুঁয়ে দেখার চেয়েও বেশি পছন্দ করে চোখের সামনে থাকাটা।আড়াল জিনিসটা একদম পছন্দ না রিঝের।তখন ভারী অদ্ভুত জিনিস হয় তার সাথে।সে ভয় পায়।পাগলের মতো আচরন করে।কিছু ভালোবাসা না কি পাগলামি হয়।রিঝের মনে হচ্ছে সে সেই কিছুর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত।তার মাথায় বার বার একটা কথাই বাজচ্ছে।“ আমি আপনাকে বিয়ে করতে চাই না রিঝ ভাইয়া।”
রিঝ আতংকিত,হতাশাগ্রস্ত,হয়ে ঘুরছে।গায়ের ব্লেজার ছুড়ে ফেলে সে।আকাশ রামিম উথৌয় হন্ন্যের মতো সব ঘুরে দেখে।মেয়েটা এমন কেনো??বুঝতে পারে না রিঝ।স্বপ্ন ছিলো,হ্যাঁ তারও স্বপ্ন ছিলো লাল শাড়িতে লাল চুড়িতে তুতুল নাম বসন্তের পাখিকে দেখবে।যার সব জুড়ে লালের বসবাস হবে।প্রেমেও পড়ছিলো।হচ্ছিলো ভালোবাসাও।কিন্তু ঝড়ের মতো এসে হানা দেয় বিয়ে নাম ভয়ংকর ঝড়।যাতে ভাসতে হচ্ছে সবাইকে।রিঝ খুঁজতে খুঁজতে অনেক দূরে চলে আসে।দূরে দেখতে পায় তুতুলের জুতো।এটা সেই হিল যেটা তুতুল রিঝের মুখের উপরে ছুড়ে মেরেছে।তখন রিঝই আবার যত্ন করে পড়িয়ে দিয়েছে সেই হিল তুতুলের পায়ে।হিল নিতে যাবে তার আগেই উথৌয় এসে থামায়।বলে,
“ রিঝ ওদিকে যাওয়া যাবে না।”
রিঝ উদ্বিগ্ন হয়ে জিজ্ঞেস করলো,
“ কেনো??”
“ আগেই বলেছি ওই দিকে যাওয়া ঝুঁকিপূন্য।”
রিঝ কঠিন স্বরে বললো,
“ কিসের ঝুঁকি??”
“ জীবনের।”
রিঝ আর একবার গভীর জঙ্গলের দিকে তাকালো।তারপর ঘাঁড়ে হাত বুলাতে বুলাতে বললো,
“ তুতুল ওদিকেই গেছে।আর আমিও এখন যাবো।তোমার এতো ভাবতে হবে না।আমি দেখে নিবো কিসের ঝুঁকি।”
“ তুমি কি পাগল??ওদিকে ভুলেও সাধারণ মানুষ যায় না।”
“ সেটা আমার দেখার বিষয় না।তুতুলকে দেখে রাখা আমার বিষয়।জুতা দেখে মনে হচ্ছে না ও ইচ্ছে করে গেছে।”
“ স্যরি আমি তোমাকে যেতে দিতে পারবো না।অনুমতির প্রয়োজন আছে।আমি অনুমতি নিয়ে আসছি।সাথে আর্মি টিম।।”
রিঝ রেগে আগুন হয়ে বললো,
“ তোর অনুমতি তোর কাছে রাখ।আমার মাথা খারাপ করবি না।রামিম তুই বুঝা।”
“ প্লিজ শান্ত হও।”
রিঝ স্বাভাবিক হতে চায় কিন্তু পারে না।মাত্রই তো বিয়ে হয়েছে।আজই ঢাকা যাওয়ার কথা ছিলো।সব আগের মতো হয়ে যেতো।কিন্তু একটার পরে একটা বিপদ!কেনো??সবাই যখন কথায় ব্যস্ত হয়ে পরে রিঝ সবাইকে উপেক্ষা করে জঙ্গলের বর্ডার পেরিয়ে যায়।হাতে তুলে নেয় সাদা হিল।তার পিছনে রামিম,আকাশ,আসমা ছুটে আসে।উথৌয় মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়ে।তার চোখে মুখে ভয়ঙ্কর আতঙ্ক।
কৃষ্ণচূড়ার রং লাল-২৯.🎈
@হাফসা আলম
_____________________
প্রচন্ড রকম রেগে রিঝ বললো,
“ তোরা আমার সাথে কেনো এসেছিস??আমার সমস্যা আমি বুঝে নিবো।তোরা যা।এদিকে রিস্ক আছে আমারও মনে হচ্ছে।”
রামিম কথা বললো না।তাকে চুপ থাকতে দেখে আকাশ আসমাও চুপ করে গেলো।রিঝ প্রচন্ড রাগ নিয়ে আবার বললো,
“ সমস্যা কি তোদের??সাথে এমন চিপকাই থাকছ ক্যান?চলে যা।আমাকে বিরক্ত করিস না।এমনেই ভালো লাগছে না।এদিকে কোনো নেটওয়ার্কও নেই।যা প্লিজ।পরে কেউ খুঁজেও পাবে না।”
রামিম ঘন জঙ্গলের দিকে একবার তাকিয়ে আকাশকে বললো,
“ চল যাই।মেয়েটা না জানি কোথায় আছে।”
আকাশ গায়ের কালো ব্লেজার খুলে কোমড়ে বেঁধে নেয়।রামিম খুলে গলায় ঝুলায়।তারপর রিঝকে পুরো দমে উপেক্ষা করে সামনের দিকে হাঁটা শুরু করে।রিঝ অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে।আসমা নিজের হিল হাতে নেয়।জামা উপরে তুলে হাঁটা শুরু করে।জামাটা ভারি।আসমা এসব জামা খুবই কম পড়ে।তাই ভালো করে হাঁটতে পারছে না।আস্তে আস্তে হাঁটতে হচ্ছে।
রিঝের মুখটা রক্ত শূন্য হয়ে আছে।ফ্যাকাশে দেখাচ্ছে তাকে।চারপাশে ঘন জঙ্গল।একপাশে দাড়িয়ে অপর পাশের কিছুই বুঝা যায় না।রিঝ প্রচন্ড চিন্তায় হিমশিম খাচ্ছে।ভাবছে,তুতুল নিজে নিজে এখানে এসেছে??না কি তাকে নিয়ে কেউ নিয়ে গেছে??কেউ মানে??কে নিবে??এসব প্রশ্নের উত্তর সে খুজে পাচ্ছে না।বুকের ভিতরে টিপটিপ করছে চরম উত্তেজনায়।সন্ধ্যা নেমেছে।তাই আরো বেশি দেখা যাচ্ছেনা জঙ্গলের ভেতরের সব।আসমার পা গর্তে পড়ে।সে আউচ’ করে চিৎকার করে উঠে।সবাই পিছনে তাকায়।দেখে আসমা পা ধরে বসে আছে।রিঝ রেগে আগুন হয়ে বললো,
“ এটার জন্যেই বলেছি তোরা আসিস না।কেনো আসলি??আমার সত্যিই খুব রাগ উঠছে।এগুলো ভালো লাগছে না।তুতুলকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।আর তোরা ফাইজলামি করছিস আমার সাথে।”
রিঝ আসমার পা বের করে দেয়।আসমা আহত গলায় বলে,
“ আমরাও জানি তুতুলকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।তার মানে এই না যে আমরা ওকে খুঁজবো না।এমন কথা বলছ কা??তুতুল আমাদেরও আপন।”
“ আমার এখন এই মুহূর্তে জানতে ইচ্ছে করছে না তুতুল কার কত টুকু আপন।প্লিজ বাদ দে।আর তোরা চলে যা।”
আকাশ রিঝের পাশে ধপ করে বসে বললো,
“ যাবো না।কি করবি??”
“ আকাশ ঘাড় ত্যাড়ামি করছ ক্যান??” রিঝ শান্ত কন্ঠে বলার চেষ্টা করছে।আকাশ উপেক্ষা করে বললো,
“ ভালো লাগে তাই করি।”
“ এদিকটা কত অন্ধকার আগে দেখ।তারপর কথা বলিছ।”
“ রিঝ তোকে আমরা একা ছাড়তে পারবো না।”
“ আমি ছোট বাচ্চা না।”
“ তুই নিজে ত্যাড়ামি করস এখন।”
“ ভালো।তোরা আর যাবি না।আমি যাবো একা।এখান থেকেই বিদায় হ।বাসায় কল করার চেষ্টা কর।দু’দিন আমাদের না পেয়ে সবাই টেনশনে আছে।যা।”
আকাশ থেতার মতো বসে থেকে বললো,
“ যাবো না মানে যাবো না।”
আসমা চেঁচিয়ে বললো,
“ তোরা থাম প্লিজ।আমার পায়ে ব্যাথা করছে।”
রিঝ দাঁতে দাঁত চেঁপে শ্বাস বন্ধ করে বললো,
“ বেশ হয়েছে।আমরা না হয় ছেলে তুই লাফিয়ে আসলি কেনো??”
আসমা গলা উঁচিয়ে বললো,
“ ছেলে মেয়ে সমান সমান বুঝলি?তোরা যা পারছ আমিও তাই পারি।”
রিঝ নিজের মাথার চুল নিজে টানে।পারলে ছিড়েই ফেলতো।সে কাউকে নিজের অনুভুতি গুলো বুঝাতে পারছে না।নিজেকে পাগল পাগল মনে হচ্ছে তার।রিঝ দু’হাতে নিজের মুখ মুছে নেয়।ঘাড়ে হাত বুলায়।কি করবে ভাবে।আসমা ব্যাথায় মিইয়ে যাওয়া কন্ঠে বলে,
“ আমি ভালো করে হাঁটতে পারছি না।কিছু কর তোরা প্লিজ।”
রামিম বিরক্ত গলায় বললো,
“ মাইয়া জাতি পুরাই ভেজাইল্লা জাতি।”
আসমা চোখ রাঙ্গীয়ে বললো,
“ ওই কি বললি তুই??তোরা সব খুব ভালো মনে হয়??এক একটা হারামি তোরা।”
আকাশ দু’হাতে তালি দিয়ে হেসে উঠে।হাসিতে ফেটে পরে বললো,
“ আরে তুই চিন্তা করছ কা??রামিম আছে না।তোরে কোলে নিয়া পুরা জঙ্গল ঘুরবে সে।নো চিন্তা।”
“ কি যা তা বলছ আকাশ।” রামিম সাবধান করে বললো।
আকাশ হু হা করে হেসে উঠে।তার হাসির শব্দে জঙ্গলে একটা ভূতুরে পরিবেশের সৃষ্টি হয়।আসমা ভয়ে হিম হয়ে বললো,
“ আকাশ আস্তে হাস।ভয় লাগে তো।”
রিঝ এদের কথার মাঝে নাই।সে জঙ্গলের এদিক ওদিক দেখছে।কোনো শব্দই খুঁজে পাচ্ছে না।পরিবেশটা কেমন ঝিম ধরা।মনে হচ্ছে অনেক বছর কেউ এদিকে আসে না।কালো কালো গাছ।অন্ধকার জঙ্গলকে ঘিরে ধরেছে।কিছুই দেখা যাচ্ছে না এখন।হালকা হালকা আবছা মানুষ গুলোকে সুধু দেখা যাচ্ছে।রিঝের পায়ে কিছু একটা লাগে।সে অন্ধকারে হাত দিয়ে খুজে দেখে কি সেটি।হাতে আসতেই বুঝে স্মার্ট ফোন।খুলতে চায়।দেখে বন্ধ।কিন্তু সে বুঝতে পারছে এটা তুতুলের।মুহূর্তেই মুখে এক পিন্ড রক্ত ছুটে আসলে যেমন লাল হয়ে উঠে ঠিক তেমন হয় রিঝের মুখটা।রিঝ নিজের প্যান্টের পকেটে হাত দিয়ে ফোন খুঁজে।কিন্তু পায় না।ভুলে মনে হয় কোথাও রেখে এসেছে।রাগে রিঝের ইচ্ছে করছে এই জঙ্গল ধ্বংস করে দিতে।আকাশ আসমা আর রামিমকে ক্ষেপাচ্ছে।বারবার বলছে,
“ তোর বউ তুই কোলে নে।শত হোক ভাই বিয়া করতেও কষ্ট আছে।যা যা কোলে নে।বউরে কোলে নিবি না তো কারে নিবি??বউ তোর আপন মানুষ।একদম হালাল।”
আসমা আকাশকে ইচ্ছা মতো কিল ঘুষি মারে।আকাশ দূরে সরে যায়।আর হাসে।রামিম বিরক্ত হয়ে আসমাকে কোলে তুলে নেয়।আসমা নাচানাচি করে বলে,
“ ওই ওই তুই আমারে কোলে নিলি কা??ছাড় কইতাছি।ছাড়।”
রামিম কঠিন গলায় বললো,
“ ছেড়ে দিমু??একদম নিচে পড়বি।”
আসমা ভয়ে বললো,
“ না না ফেলাইতে হইবো না।কোলেই নিয়া রাখ।হারামি একটা।”
আকাশ রসিকতা করে বললো,
“ ছিঃ ছিঃ ছিঃ তোরা কেমন বউ জামাই??নিজেদের তুই তুঙ্কারি করছ ক্যান??আমি তো ভাবতেও পারছি না।আমার বন্ধু হয়ে তোরা এসব করছ??আর আসমা তুই নিজের স্বামী পরম ধর্মকে হারামি বললি??ছিঃ।”
“ দেখ এটা হাসার জায়গা না।তুতুলকে খুঁজতে হবে।”
বলেই রামিম সামনে তাকালো।রিঝকে আশেপাশে দেখা যাচ্ছে না।কোথায় গেলো??রামিম মরিয়া হয়ে বললো,
“ রিঝ কই??”
আকাশ ও দেখে।নাই।সবার বক ধক করে উঠে।ভয়ে দ্রুত অন্ধকারে খুঁজা শুরু করে।কিছু দূর যেতেই দেখে রিঝ দ্রুত হেঁটে জঙ্গলের ভিতরে ঢুকছে।চিৎকার করে তুতুলকে ডাকছে।আকাশ রামিমও ডাকে।কিন্তু বিপরিতে কোনো কন্ঠ ভেসে আসে না।কিছু দেখা যাচ্ছে না।শুধু সবার অভয়ব দেখা যাচ্ছে।অনেক দূর এসে সবাই বসে।রিঝ কারো সাথে কথা বলছে না।সে বসতেও চাইছিলো না।সবাই জোর করে টেনে বসায়।সময় যত বারে ভয় তত প্রখর হয়।হঠাৎ দূরে আলো দেখা যায়।অন্ধকারের কারনে দিক বুঝা যাচ্ছে না।তাই সামনে থেকে আসছে না কি পিছন থেকে আসছে বুঝা যাচ্ছে না।সবাই দাড়িয়ে পরে।আসমা রামিমের হাত ধরে দাড়ায়।আলোটা ক্রমেই সামনে এগিয়ে আসছে।রিঝ প্রশ্ন করে,
“ কে ওখানে??কে আপনি??কথা বলছেন না কেনো??”
আলোটা আরো কাছে আসে।একদম আছে আসতেই ভয় পেয়ে যায় সবাই।ছেলেরা তবুও শক্ত হয়ে দাড়িয়ে থাকে।আসমা রামিমের বাহু শক্ত করে ধরে।রিঝ এগিয়ে যেতে চায়।আকাশ বাহু টেনে ধরে।আলো একদম কাছে আসতেই সবাই আবিষ্কার করে রূমাশ্রীকে।একটা দীর্ঘশ্বাস বেড়িয়ে আসে সবার ভেতর থেকে।আসমা জোড়ে জোড়ে শ্বাস নিয়ে বুকে ফুঁ দিয়ে বললো,
“ ও তুমি??এতোক্ষণ ধরে প্রশ্ন করছে কে কে তুমি কিছু বলছিলে না কেনো??”
রূমাশী ভীতু কন্ঠে বললো,
“ আসলে আমি নিজেই ভয় পেয়েছি।দুঃখিত।”
আকাশ দারুন ভাবে ক্ষেপে যায়।মেয়েটা এখানে কি করছে??দেখলেই তার শরীর টগবগিয়ে উঠে রাগে।অসহ্য রাগ হচ্ছে এখন তার।রিঝ স্বাভাবিক কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো,
“ তুমি এখানে কি করছ জানতে পারি??”
রূমাশ্রী কেনো যেনো রিঝকে খুব ভয় পায়।সে প্রথম থেকেই দেখছে লোকটা গম্ভীর,শান্ত,চুপচাপ থাকে।ভয় ভয়ও লাগে।তার এখনো মনে আছে কাল রাতে এতোগুলো শক্ত লোকের সাথে একাই লড়ে গেছে।শেষে হাত না বাঁধলে তার ধারনা এই লোক হিরোর মতো সব গুলোকে পিটিয়ে মেরে দিতে পারতো।রিঝের ব্যক্তিত্ব তার পছন্দের হলেও সে ভয় পায়।সে রিঝকে হঠাৎ হঠাৎ চেতে যেতে দেখেছে।শান্ত মানুষ গুলো রেগে গেলে ভয়ংকর বিপদ।রিঝের চিৎকারে যে তেজ আছে সে তেজকেই সে ভয় পায়।রূমাশ্রী ভাবতে ভাবতেই রিঝের ধমকের স্বর ভেসে আসে,
“ তোমাকে প্রশ্ন করেছি।জবাব দিচ্ছ না কেনো??”
ধমক খেয়ে রূমাশ্রী কেঁপে উঠে।থেমে থেমে বলে,
“ আপনারা এদিকের কিছুই চিনেন না।তাই সাহায্য করতে এসেছি।”
“ ফাইজলামি পাইছস সবাই??আমি সত্যি খুব ক্লান্ত।প্লিজ তোরা সব যা।এভাবে একে একে পুরা গ্রাম এসে হাজির হোক আমি চাই না।”
রিঝের কন্ঠ কাঁপছে।ক্রুদ্ধে ফেঁটে পড়ছে সে।বুকের ভিতরে কোথাও জ্বলন্ত আগুনের তাপ সে পাচ্ছে।দাউদাউ করে জ্বলছে সেই আগুন।পেয়ে হারিয়ে ফেলার কষ্ট কাউকে বুঝানো যায় না।রিঝ নিজের মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়ে।বিপদের আশঙ্কায় মাথা দপদপ করছে।প্রতি শ্বাস যেনো কষ্টে বেড়িয়ে আসছে।রূমাশ্রীকে আকাশ ধমকাচ্ছে।কেনো এসেছে??কি করতে এসেছে??কে আসতে বলেছে??রূমাশ্রী ভয়ে শেষ।অনেক কষ্টে সে বললো,
“ আমি জানি উনি কোথায় থাকতে পারে।”
কনকনে অন্ধকার ঠেলে একফালি রোদ ঢুকে তখন যেমন অনুভুতি হয় রিঝের ঠিক তেমন অনুভুতি হচ্ছে।দ্রুত উঠে দাড়ায় সে।উঠতে গিয়ে একবার পরেও যেতে নেয়ে সে।তবুও শক্ত হয়ে দাড়ায় সে।রূমাশ্রীকে প্রশ্ন করে,
“ কোথায় আছে??কিভাবে জানো তুমি ??প্লিজ বলো।”
“ ওর কথা বিশ্বাস করিছ না।আমরা নিজেরাই খুঁজে নিবো।যাও তুমি।” আকাশ তেজ দেখিয়ে বললো।রিঝ রেগে বললো,
“ তুই থাম।বলো প্লিজ।”
রূমাশ্রী ভয়ে ভয়ে বললো,
“ উনাকে বলেন সামনে থেকে সরে যেতে।দেখলেই ভয় লাগে।”
আকাশ চোখ রাঙ্গিয়ে বললো,
“ ভয় করে মানে কি??আমি কি ভুত না কি ভাল্লুক??”
“ দুইটাই।”
“ কি বললা?
“ আকাশ প্লিজ তুই সর।তুমি বলো।” রিঝ আকাশকে সরিয়ে দেয়।রূমাশ্রী জঙ্গলের দিকে লাইট ধরে বললো,
“ এটা শান্তিবাহিনীদের জঙ্গল।এদিয়ে আসলে কেউ জীবিত যেতে পারে না।কারণ তারা মানুষকে জীবিত রাখে না।আগেই বলে দিয়েছে এদিকে যাতে কেউ না আসে।প্রকাশ্য খুনি যাদের বলে ওরা ঠিক তাই।আর্মি,পুলিশ,সবাই ওদের চিনে।সবাই মিলিত তা নয়।কিন্তু তারা আগেই শর্ত বেধে দিয়েছে এই রাজ্য তাদের।কেউ যাতে ভুলেও এদিকে না আসে।তারাও কথা দিয়েছে তারা নিজেদের রাজ্যের বাহিরে যাবে না।তারা পাহাড়ের ভিতরে ভিতরে থাকে।মানুষ এদের সামনে ভুলেও যায় না।বিশেষ করে যারা জানে তারা।বিভিন্ন মানুষকে কিডন্যাপ করে ওরা মুক্তিপন চায়।না দিলে মেরে ফেলে।আবার দিলেও মেরে ফেলে।তাই এদের আশেপাশে না আসাই ভালো।এরা একটা বিহিনীর মতো।কিন্তু রক্ষা নয় ভক্ষণ করা এদের কাজ।শুনেছি অনেক অপকর্ম করে।আমাদের কপাল খারাপ।আমাদের পাশেই ওদের একটা পাহাড় পড়েছে।আমরা কখনো এই জঙ্গলে ভুলেও ঢুকি না।আর যতক্ষণ পর্যন্ত এই জঙ্গলে কেউ যায় না তারা কিছুই করে না।আমার মনে হয় তুতুল নিজে থেকেই এই দিকে এসেছে।আর আপনারা যে দিকে যাচ্ছেন সেদিকে লাভ নেই।কারণ ওরা পাওয়া মাত্র মেরে ফেলে না হয় পাচার করে দেওয়া এদের কাজ।আমাদের উঁচিত বসতিতে ফিরে যাওয়া।”
রিঝের বুকটা ভূমিকম্পের মতো কেঁপে উঠে।শরীরের রক্ত চলাচল যেনো বন্ধ হয়ে গেছে।হৃৎপিণ্ডের শব্দ সে নিজেই শুনতে পাচ্ছে।নিজেকে সামলে সে স্পষ্ট গলায় জানিয়ে দেয়,
“ আমি তুতুলকে ছাড়া যাবো না।তোরা সবাই চলে যা।সমনে থেকে যা।”
রিঝ দু’হাতে মাথাটা চেপে ধরে উঠে বসে।মাথাটা ভন ভন করছে।সে পাশে পরে থাকা গাছের গুটিতে লাথি মারে কিসের যেনো রাগ দূর করতে চাচ্ছে।চিৎকার করে নিজের চুল টেনে ধরে।হাত মুষ্টিবদ্ধ করে গাছে ঘুষি মারা শুরু করে।হাত রক্তাক্ত হয়ে পরে।রামিম আকাশ দ্রুত ধরে।সান্ত্বনা দিয়ে বললো,
“ এমন কিছুই হয়নি।হলে অবশ্যই বুঝতে পারতাম।চল খুঁজি।আমার মনে হয় ও ঘুরতে ঘুরতে জঙ্গলে হারিয়ে গিয়েছে।দেখ কত অন্ধকার!নিশ্চুই এখন রাস্তা চিনতে পারছে না।খুঁজলেই পাওয়া যাবে।”
আকাশও সেই তালে বললো,
“ সেটাই।এই পাগলের কথা বিশ্বাস করবি না।ওরে তো আমারই মাথা মোটা মনে হয়।গরু একটা।”
রূমাশ্রী প্রতিবাদ করে উঠে।বলে,
“ এই এই একদম গরু বলবেন না।”
“ তাহলে কি গাভী বলবো?অবশ্য তুমি গাভীই।”
আকাশের এমন কঠিন কন্ঠ শুনে রূমাশ্রীর খুব খারাপ লাগে।লোকটা সবার সাথেই সুন্দর করে কথা বলে শুধু তার সাথেই যত বাজে ব্যবহার!আকাশ আরো অনেক কিছু বলে। সবাই তার দিকে একটু মনোযোগী হয়ে পরে।রিঝ বিড়বিড় করে বলে উঠে,
“ তুতুল অন্ধকারে থাকতে পারবে না।কখনোই না।”
কথাটা বলেই দৌড়ে গভীর জঙ্গলের ঢুকে পরে।দৌড়ের শব্দ কানে আসতেই সবাই পাশে তাকায়।অন্ধকারে কাউকে দেখা যাচ্ছে না।রূমাশ্রী হাতের লাইট উপরে তুলে দেখে।রিঝ নাই!সবাই রিঝকে খুঁজা শুরু করে।এতো ঘন জঙ্গলে খুঁজে পাওয়া মুশকিল হয়ে পড়ছে।এদিকে গেলে ওই দিক ভুলে যাচ্ছে।সবাই মিলে চিৎকার করে ডাকা শুরু করে,
“ রিঝ,তুতুল,তুতুল,রিঝ,রিঝ।”
___________________________
কালো রাত পেরিয়ে সকালের রঙ্গিন সূর্য।ঘন সবুজ রঙ্গের উপরে লাল কিরণটা দেখতে দারুন লাগে।লাল আভা ছড়িয়ে পরে চারপাশে।ভরের শিশির কনা পাতা বেয়ে টপটপ করে নিচে গড়িয়ে পরে।কাঠের তৈরি বাড়ি।তিন তলা হবে।সর্ব প্রথম সূর্যের আলো পড়ে তিন তলার উপরের কক্ষ গুলোতে।কাঠের ফাঁকা জায়গা বেধ করে সকালের মিষ্টি রোদ হুমড়ি খেয়ে ঢুকে।কিছু রশ্নী এসে পরে হাত পা বাঁধা তুতুলের মুখের উপরে।সাথে সাথেই চোখের পাতা নড়ে উঠে।জ্ঞান ফিরেছে না কি সে ঘুমিয়ে ছিলো বুঝতে পারছে না।টিপটিপ করে চোখ খুলে নিজেকে কালকের অন্ধকার ঘরেই আবিষ্কার করে সে।মাথাটা খুবই ভারী হয়ে আছে।সাথে প্রচন্ড যন্ত্রনা করছে।নড়তে চেয়ে বুঝতে পারে তার হাত পা মুখ বাঁধা।ব্যাথা ভুলে দ্রুত সে উঠতে চায়।গলা ফাঁটিয়ে চিৎকার করতে চায়।কিন্তু পারে না।ভয়ে,আতঙ্কে চোখ ফেটে জল বেড়িয়ে আসে।কান্নায় যেনো তার দম আরো বন্ধ হয়ে আসছে।কালকের কথা মনে পরে।বিয়ের পরেই বাড়িতে ফোন করার জন্য মরিয়া হয়ে উঠে তুতুল।ফোন হাতে নিয়ে সারা গ্রাম ঘুরে ফেলে।কিন্তু নেট পাওয়া যায় না।শেষে ঘুরতে ঘুরতে জঙ্গলের মুখে এসে পরে।ফোনের নেটওয়ার্ক ছিলো না।হুট করেই একটু নেট আসে।তুতুল খুশিতে আত্নহারা হয়ে সামনে এগিয়ে যায়।তারপর আরো এগিয়ে যায়।নেট একবার আসে আবার যায়।বিরক্ত হয়ে উঠে।ফিরার সময় পিছন থেকে কেউ মাথায় বাড়ি দেয়।তারপর থেকে কিছুই মনে নেই তার।কে?কিভাবে?কখন তাকে নিয়ে এসেছে এখানে সে জানে না।শেষ রাতে একবার জ্ঞান ফিরে ছিলো।কিন্তু পরক্ষনেই মাথার ব্যাথায় সে আবার জ্ঞান হারায়।এই ভয়ংকর রুমটা দেখে তুতুলের শরীর কেঁপে উঠে।আশেপাশে মানুষের কঙ্কাল পরে আছে।ঝুলে আছে।হাড্ডি আলাদা হয়ে পরে আছে।তুতুল খেয়াল করে সে যেখানে শুয়ে আছে সেটা শক্ত,ভিন্ন ভিন্ন,লাঠির মতো।অনেক কষ্টে সে উঠে বসে একটু।নিচের আর আশেপাশের দিকে তাকিয়ে কেঁপে উঠে সে।চিৎকার করে হাত পা আছড়াতে শুরু করে।কিন্তু আর্তনাদের চাপা শব্দ ছাড়া কিছুই শুনা যাচ্ছে না।কঙ্কলের হাড় বিছানো জায়গায় তাকে শুয়ে রাখা হয়েছে।ঘর জুড়ে রক্তের ভেবসা গন্ধ।কাঠে কাঠে রক্তের কালো দাগ।সূর্যের আলো যত গাঢ় হয়ে উঠছে রক্তের রং তত জ্বলজ্বল করে চোখের সামনে ভেসে উঠছে।তুতুলের দম বন্ধ হয়ে আসে।মাথা ভন ভন করে ঘুরে উঠে।সে আবার নিস্তেজ হয়ে পরে।
মুখের উপরে পানির ছিটা পড়তেই তুতুলের আবার হুশ আসে।কতক্ষণ সে এভাবে ছিলো বা আছে সে জানে না।চোখ টিপটিপ করে খুলে আবার বন্ধ করে নেয় সে।তারপর আবার আস্তে আস্তে চোখ খুলে তাকায়।দেখে একটা গাঢ় সবুজ রঙ্গের পোশাক পড়া লোক এক হাঁটু ভেঙ্গে বসে আছে তার সামনে।হাতে মাটির পানির গ্লাস।দেখতে মোটামুটি ভালোই মনে হচ্ছে।গায়ের রং চাপা।শ্যাম বর্ণ বললেই চলে।গালে চাপা দাড়ি।বড় বড় চোখ।গালে কাঁটা দাগ।তুতুল ভয় পায় খুব।আরো জড়োসড়ো হয়ে যায়।পাশে থেকে হু হু করে শব্দ আসছে।তুতুল চোখ সরিয়ে পাশে তাকায়।দেখে আসমা,রামিম,আকাশ,রূমাশ্রী।তাদেরও হাত পা বাঁধা।মুখ বাঁধা।সবাই হাত পা ছড়াছড়ি করছে।তুতুল বিস্ময়ে হতবিহ্বল!সবাই তুতুলকে দেখে অবাক হয়ে যায়।চোখেমুখে উজ্বল ভাব।তুতুলের চোখও খুশিতে জ্বলজ্বল করে উঠে।পাশে বসে থাকা লোকটা সেভাবেই বসে আছে।তুতুল কিছু বলতে গিয়ে বুঝে তার মুখ বাঁধা।লোকটা হঠাৎ চিৎকার করে উঠে।সাথে সাথে দৌড়ে আসে কিছু লোক।সবার পোশাক একুই করম।শুধু কাঁটা দাগের লোকটির পোশাকে কালো বেল্ট,কালো বুতাম।পায়ের বুট অনেক লম্বা।মাথায় কালো কাপড় বাঁধা।হাতেও কালো কাপড় বাঁধা।প্যান্টের রং কালো।বাকিদের পোশাকের রং একুই।কিন্তু দেখতে আর্মিদের মতো।রং অবশ্য একটু ভিন্ন।লোকটি নিজের ভাষায় অনেক কিছু বলে।একটা লোককে হুট করে শুট করে দেয়।তুতুল সহ সবাই চোখ বুজে নেয়।তুতুলের মনে হচ্ছে সে হার্টঅ্যাট করেই মারা যাবে।বুকের শব্দ ভান্ডার এতো তিব্র বলে বুঝাতে পারবে না সে।শব্দ যেনো বুক চিরে বেড়িয়ে আসছে।নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে।রক্তের গন্ধ,মৃত মানুষের গন্ধ।হাড্ডির বিশ্রী গন্ধে নিঃশ্বাস নেওয়া যাচ্ছে না।লোকটি তুতুলের সামনে এসে আবার বসে।একটা হাঁটু ভেঙ্গে আর এক হাঁটুর উপরে ভর দিয়ে বসে পরে।হাত রাখে একটা হাঁটুর উপরে।তুতুলের চুল এলোমেলো হয়ে চোখের উপরে পড়ে আছে।চুলের মাঝ থেকে তুতুল লোকটা দেখে ভালো করে।তুতুলের দিকে তাকিয়ে সে হাসছে।তুতুল আরো একদফা অবাক হয়।সাথে সবাই।তারপর হুট করেই তুতুলের মুখের বাঁধন খুলে দেওয়া হয়।তুতুল যেনো জান ফিরে পেয়েছে।জোড়ে জোড়ে শ্বাস নেয় সে।চোখ বন্ধ করে শ্বাস নিচ্ছে।হঠাৎ লোকটির শক্ত কন্ঠ ভেসে আসে,
“ সাতাইশ বার শ্বাস নিয়েছেন আপনি।”
তুতুল চট করে চোখ খুলে ফেলে।সবাই বিস্মিত।অবাকতার চরমে আছে।আকাশ তো মনে মনে বলে,শালা পাগল মনে হয়।রামিম আসমার দিকে একবার তাকায় আবার লোকটার দিকে।তুতুল কাঁপা গলায় বললো,
“ আমাদের আটকে রেখেছেন কেনো??”
লোকটি প্রশ্নের উত্তর উপেক্ষা করে বললো,
“ আপনি কি সেকেন্ডে তিনবার শ্বাস নেন??ও মাই গড??কিভাবে সম্ভব??”
তুতুল চোখ কঠিন করে বললো,
“ আপনি আমাদের এখানে নিয়ে এসেছেন কেনো??কি চাই আমাদের কাছ থেকে??যেতে দিন।”
“ সব আপনার লোক??”
“ হ্যাঁ।আপনি আমাদের কিডন্যাপ করেছেন??”
কথা বলার মাঝেই একটি লোক পানি নিয়ে এসেছে।লোকটি পানির গ্লাস তুতুলের দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো,
“ আপনার শ্বাস এখনো দ্রুত চলছে।পানি পান করুন।ভালো লাগবে।”
তুতুলের মুখের কাছে গ্লাস আনতেই সে বাহু দিয়ে ধাক্কা মেরে ফেলে দেয়।তারপর চিৎকার করে বলে উঠে,
“ আপনি কি পাগল??কানে কম শুনেন??হাত খুলোন।পা খুলোন।যেতে দিন।কথা কানে যায় না??একবার বের হতে দিন দেখে নিবো আপনাকে।সাহস কিভাবে হয় কিডন্যাপ করার??”
“ আমার সহস তুলোনা মূলক বেশি।তবে আপনার কাছে আজ থেকে কম কম দেখাবো।মনে হয় আপনার সাহস জিনিসটা পছন্দ না?”
“ আপনি পাগল??”
তুতুলের চিৎকারে তার নিজের গলাই ফেঁটে যাচ্ছে।লোকটি মৃদূ হেসে উঠে।বসা থেকে উঠে দাড়িয়ে বললো,
“ না।”
তুতুলের সামনে লোকটির লাশ সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে।এবার তার শরীর ছমছম করছে।ভয় পাচ্ছে সেও।তাই কন্ঠ একটু নিচু করে বললো,
“ ওদের সবার মুখটা খুলে দিন প্লিজ।”
লোকটি খুশি হলো খুব।তাই নিজের হাত দিয়ে সবার মুখ খুলে দিলো।রামিম শাসিয়ে বললো,
“ ছেড়ে দে বলছি।ভালো হবে নি কিন্তু।পারলে হাত খুলে তো দেখ।”
আকাশ বললো,
“ শালা আমাদের হাত বেঁধে নিজেরে সিংহ মনে করছ??হাত টা আগে খুল।তারপর দেখামু আমরা কি করতে পারি।সবাইরে ছাড় বলতাছি।”
লোকটা উচ্চ শব্দ হেসে উঠে।আকাশ যেনো মজার কোনো কথা বলেছে।আকাশ রাগে ফুসে উঠে।চিৎকার চেঁচামেচি করে।লোকটি চেয়ার টেনে বসে বললো,
“ এটা আমাদের রাজ্য।আর আমি রাজার ছেলে।মানে বুঝেন??পরের রাজা।আর এই যে কঙ্কল দেখছেন সবাইকে আমি নিজের হাতে খুন করেছি।মানুষটা আমি কিন্তু মোটেও ভালো না।আর এটা শান্তিবাহিনী এড়িয়া।নামে শান্তি।কিন্তু নিজেদের কাজ আমরা শান্তিতেই করতে পছন্দ করি।যদিও সব কাজ অশান্তির।ময়ূরী বলেছে তাই সবার মুখ খুলে দিয়েছি।তা না হলে এতক্ষনে আপনাদের উপরের টিকেট কাটা হয়ে গিয়েছিলে।আপনাদের উপরে পাঠাতেই আমি তিনতলায় এসেছি।”
তুতুল মাঝ পথে চিৎকার করে বললো,
“ ময়ূরী কে??”
“ আপনি।” লোকটির সহজ কন্ঠ।তুতুল বিস্মিত হয়ে বললো,
“ আমার নাম তুতুল।ময়ূরী না।”
“ ও আমি মনে করেছি ময়ূরী হবে।তবে তুতুলও খারাপ না।স্যরি স্যরি।”
আকাশ হেসে উঠে বললো,
“ আরে কুত্তা তোর কথায় আমরা ভয় পাই মনে করছস??মোটেও না।তোর মতো কত কুত্তাযে আমি সোজা করছি বলার বাহিরে।”
“ ওইইইইইই!!” লোকটি রিভলবার তুলে আকাশের মাথায়।ভয়ে চিৎকার করে উঠে সবাই।লাল চোখ দিয়ে যেনো রক্ত পড়বে।তুতুল ভয়ে চোখ বুজে নেয়।রূমাশ্রী কেঁদে বলে,
“ উনাকে কিছু করিয়েন না।দয়া করে।”
আকাশ অবাক চোখে রূমাশ্রীর দিকে তাকায়।মেয়েটা কাঁদছে।তার জন্য!!!
#চলবে…………
ভুলগুলো আল্লাহর দেওয়া মহান গুন ক্ষমার চোখে দেখবেন।
#চলবে…………
ভুলগুলো আল্লাহর দেওয়া মহান গুন ক্ষমার চোখে দেখবেন।