A_Destination_Wedding part 6+7

#A_Destination_Wedding
#Part_6
#Writer_Airin_Boshunia(Rose Queen)

সাতদিন পর…….

আমি শাড়ি পরে মাথায় ঘোমটা দিয়ে বসে আছি আদিয়াত আর ওর ফ্যামিলি মেম্বারদের সামনে।

(সাত দিন আগে আমি বাসায় ফিরেই আদিয়াতকে সব কথা বলি।ওও তো আমার কথা শুনে মহা খুশি।তখনই আদিয়াত ওর ফ্যামিলিকে আমার কথা বলে।প্রথমে ওনারা রাজি হয়নি।কিন্তু এরপর আদিয়াত অনেক কিছু বুঝিয়ে তাদেরকে রাজি করিয়েছে।ফলস্বরূপ আজ আদিয়াতের ফ্যামিলির সবাই আমাকে দেখতে এসেছে।)

মিসেস রাইমা:মা,,তোমার মুখটা একটু উপরে তুলো(আদিয়াতের মম)

আমি তার কথা শুনে মাথা তুলেই দিলাম এক চিৎকার,,,,,,,,
আমি:আপনিইইইইইইইইইইই(অবাক হয়ে)
আরুশ:আমারো তো সেম কোশ্চেন।তুমি এখানে কি করছো?
আমি:আরে আজব মানুষ তো আপনি।আমার বাসায় আমি থাকবো নাতো কি আপনার বউ থাকবে(আরুশের দিকে তাকিয়ে)
আরুশ:হতেও তো পারে(বাঁকা হেসে)
আরুশের কথায় আমি অবাক হয়ে বললাম,,,
আমি:মানে?
আরুশ:আব,,কিছু না।বাই দ্যা ওয়ে,,,আহিলের জন্য আমরা যাকে দেখতে এসেছি,,,তুমিই সেই?
আমি:হুম
আদিয়াত:এই এক মিনিট,,,,নিহান তুই আয়রাকে আগে থেকেই চিনিস?(আরুশের দিকে তাকিয়ে)
আরুশ:হ্যা।(সোজা সাপ্টা উত্তর)
মি.আবরার:কিন্তু কিভাবে?(আদিয়াতের পাপা)
আরুশ:সে অনেক বড় হিস্টোরি।বাদ দাও
আদিয়াত:আচ্ছা আয়রা শোনো এইটা আমার ছোট আব,,ছোট বলতে এক বছরের ছোট ভাই নিহান আহমেদ আরুশ।যেহেতু আগে থেকেই চেনো তাই আর এক্সট্রা করে পরিচয় করানো লাগবে না আশা করি।
আমি:হুম
মিসেস আরশি:আচ্ছা তাহলে এখন মেয়েকে আপনাদের কোনো প্রশ্ন থাকলে তা করে নিতে পারেন(আমার আম্মু)
মি.আরহাম:হ্যা,,সেইটায়।তবে আয়রা আমারদের একমাত্র মেয়ে।তাই আমি ওকে এতো তাড়াতাড়ি বিয়ে দিয়ে আমাদের কাছে থেকে দূরে রাখতে চাই না।কিন্তু যেহেতু এই বিয়েতে আমার মেয়ের কোনো আপত্তি নেই।তাই আমি মেনে নিয়েছি।
মি.আবরার:আপনি কোনো চিন্তু করবেন না ভাই।মেয়ে তো আর দূরে কোথাও যাচ্ছে না।আপনাদের যখন ইচ্ছা তখনই যেয়ে আপনাদের মেয়েকে দেখে আসবেন।
মিসেস রাইমা:আর আপনাদের মেয়ে আমাদের বাড়িতে বউমা হয়ে নয় বরং নিজেদের মেয়ে হয়েই থাকবে।(আমার মাথায় হাত বুলিয়ে)
ঐশি:তো ওদের বিয়ে নিয়ে যা যা বলার এখন বলে নেই আমরা?(সবার দিকে তাকিয়ে)
মিসেস রাইমা:তোমরা কে হও আয়রার?
আমি:ওরা আমার বেস্ট ফ্রেন্ড।(সাদাফদের দিকে তাকিয়ে)
মিসেস রাইমা:ওও আচ্ছা।
মি.আবরার:তো আমরা চাচ্ছি যাতে সামনের মাসেই আয়রা আর আদিয়াতের এনগেজমেন্ট হয়ে যাক।এতে আপনাদের কোনো সমস্যা আছে?
মি.আরহাম:নাহ,এতে আমাদের কোনো সমস্যা নেই।কি বলো আয়রার আম্মু?
মিসেস আরশি:হ্যা এতে আমাদের কোনো সমস্যা নেই।
মিসেস রাইমা:এনগেজমেন্ট পার্টি তা কোথায় করা হবে?
আমি তখন বলে উঠলাম,,,,
আমি:আমি চাই যাতে আমাদের এনগেজমেন্ট পার্টি যেন বাসাতেই হয়।
আদিয়াত:তাহলে তে হয়েই গেল।আমাদের বাসাতেই তাহলে পার্টি হবে।
আমি:আচ্ছা
সাদাফ:এবার ওদের একটু আলাদা কথা বলার সুযোহ করে দাও তোমরা।
মিসেস আরশি:হ্যা হ্যা,ঐশি তোমরা আদিয়াত আর আয়রাকে নিয়ে আয়রার রুমে যাও।
এরপর আমাকে আর আদিয়াতকে নিয়ে সবাই আমাদের রুমে গেলো।সেখানে আমাদেরকে রেখে সবাই বেরিয়ে গেল।এখন রুমে শুধু আমি আর আদিয়াত।আমাদের মধ্যে পিনপতন নিরবতা ভেংয়ে আমিই বলে উঠলাম,,,
আমি:আচ্ছা আদিয়াত,তুমি আমাকে সত্যিই ভালোবাসো তো?
কথাটা আমি এমনিতে বললেও আদিয়াত আমার কথায় চমকে গেলো।ব্যাপারটা আমি বুঝতে পারলাম নাহ।এভাবে চমকে যাওয়ার কি ছিলো?
আদিয়াত:আ,আমি তো,তোম,তোমাকে ভা,ভালোবাসি বলেই তো বিয়ে করতে চাচ্ছি তাইনা?(আমতা আমতা করে)
আমি:তো তুমি এই ঠান্ডা ওয়েদারেও এমন ঘামছো কেন?আর তোতলাচ্ছোই বা কেন?
আদিয়াত:আ,আমি একটু ওয়াশরুমে যাবো।তোমাদের ওয়াশরুমটা কোন দিকে?
আমি ওকে ওয়াশরুম দেখিয়ে দিলাম ঠিকই।কিন্তু আমার কেন জানি মনে হচ্ছে আদিয়াত আমার কথায় ঘাবরে গেছে।কিন্তু কেন?
এর মধ্যেই সবাই রুমে এসে আমাকে নিয়ে গেল বাইরে।একটু পর আদিয়াতও আসলো।
আমাদের এনগেজমেন্ট নিয়ে অনেক কথা হলো।কিন্তু এর মধ্যে আরুশ একটাও কতা বলেনি শুধু শুনেছে।আর মুখে তার বিখ্যাত সেই ডেভিল স্মাইল।আমি কিছুই বুঝতে পারছিনা যে এসব কি হচ্ছে।কিন্তু এতোটুকু বুঝতে পারচি যে আমার জন্য সত্যিই বড় কোনো ধামাকা ওয়েট করছে।আর আমি হয়তো এইটার জন্য প্রস্তুত নাহ।তাই আমার ভয় হচ্ছে।আমি কোনো বাজে পরিস্থিতির সম্মুখিন হবো না তো?
আমি:এই আজ আরিয়ান আসেনি কেন?ওর কি হয়েছে?
ইভা:জানিনা।ওর ফোন অফ।এজন্য সাদাপ আর আয়মান ওর বাসায় গিয়েছিলো।সেখানেও ওও নাই।
আমি:এর আবার কি হলো রে ভাই?(চিন্তিত স্বরে)
আয়মান:দেখ আয়ু আমার কথায় নাহ শেষে ঠিক হয়!(মাথায় হাত দিয়ে)
আমি:উফফফ তুই তাম তো।আমার এইবার ওকে নিয়ে চিন্তা হচ্ছে।
ঝিনুক:সত্যিই তো আরিয়ানটা গেলো কই?(ভাবার ভংগিতে)
ঐশি:শালা শয়তানটা ফেনটাও অফ করে রাখছে।(রাগি স্বরে)
আমি:এই সাদাফ তোরা খোঁজ নে তো যে এই হারামিটা কই গিয়ে মরছে।
সাদাফ:হুম দেখছি।তুই চিন্তা করিস না।
আমি:হুম।
#A_Destination_Wedding
#Part_7
#Writer_Airin_Boshunia(Rose Queen)

আমরা সবাই নিরবে চোখের পানি ফেলছি হসপিটালের করিডোরে বসে।ভাবতেও পারিনি যে এমন কিছু হবে আমার সাথে।শেষ পর্যন্ত আয়মানের কথাটাই সত্যি প্রমাণিত হলো।আয়মান সেদিন ঠিকই বলেছিল,আরিয়ান আমাকে ভালোবাসে।আর আমার কথাটাও সত্যি হলো।আরিয়ান সত্যিই মরতে বসেছে।

(কি রিডার্স,বুঝতে পারছেন না তো যে আমি এসব কি বলছি?তাহলে চলুন ঘুরে আসি আজ বিকাল এ কি হয়েছিল সেখান থেকে)

আজ বিকালে……

আমরা সবাই বসে বসে ছাদে আড্ডা দিচ্ছিলাম।আদিয়াত আর আরুশ ও ছিলো সেখানে।তো আমরা ট্রুথ অর ডেয়ার খেলছিলাম।এক পর্যায়ে আমার দিকে বোতল ঘুরে যায়।তখন আমি ডেয়ার নেই।সেই পর্যায়ে আরুশ আমাকে ডেয়ার দেয় যে আমাকে একটা গান গায়তে হবে।তো আমিও গান গায়তে রাজি হয়ে যায়।যদিও ওতো ভালো গান আমি পারিনা।আমি গান গাওয়ার এক পর্যায়ে হঠাৎই একটা আননোন নাম্বার থেকে সাদাফের ফোনে কল আসে।ওও কলটা রিসিভ করতেই ঐপাশ থেকে কি যেন বলে আর সাদাফ চিৎকার করে উঠে।আমরা সবাই সাদাফের এমন আকস্মিক চিৎকারে হতবাক হয়ে যায়।তখন সাদাফ আমাদের সবাইকে জানায় যে ওকে হসপিটাল থেকে কল করেছে।আর আরিয়ান আই.সি.ইউ এ অ্যাডমিট।এই কথা শুনে আমাদের সবার মাথায় যেন আচমকা একটা গাছ ভেঙ্গে পরলো।
আমরা আর কেউ এক মুহূর্ত দেরি না করে হসপিটালের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিলাম।আমাদের সাথে আদিয়াত আর আরুশ ও ছিলো।
তো ওখানে গিয়ে দেখি ইতোমধ্যে সেখানে পুলিশ এসে গেছে।আমরা তাদের কাছ থেকে জানতে পারি আরিয়ান একটা বারে গিয়েছিল।আর সেখানে মাত্রাতিরিক্ত ড্রিংক করে।তারপর ওখানেই একটা ছোট কাঁচের বোতল থেকে অনেকগুলো স্লিপিং পিলস্ খায়।এক পর্যায়ে ওখানেই আরিয়ান অজ্ঞান হয়ে যায়।তখন ওখানকার লোকজন এই হসপিটালে আরিয়ানকে অ্যাডমিট করে তাদের খবর দেয়।
এইসব শুনে আমি কান্নারত অবস্থায় পুলিশকে জিজ্ঞেস করি যে আরিয়ান কেন এমনটা করেছে তার কি কোনো ক্লু পাওয়া গেছে?
তখন তারা বলে যে এখানে আয়রা নামের কেও কি আছে?আমি বললাম আমিই আয়রা।সেই সময় তারা আমার হাতে একটা চিটি ধরিয়ে দিয়ে চলে যায়।আমি চিঠিটা খুলে পড়তে শুরু করলাম।

প্রিয় আয়রা,
আমি তোকে আজ আমার মনের কিছু অব্যক্ত কথা জানাতে চাই।প্রথমেই বলি আজ আমি তোকে উদ্দেশ্য করে কেন এই চিঠিটা লিখছি।কারন একটাই,”আমি তোকে ভালোবাসি”।হ্যা,সত্যি তো এইটায় যে আমি তোকে নিজের থেকেও বেশি ভালোবাসি।আমি তোকে আজ থেকে আরো তিন বছর আগে থেকেই ভালোবাসি,যা আমি ছাড়া আর কেও যানে না।উমমমমম,কেও জানেনা বললে ভুল হবে।একজন জানে।সেইটা হলো ইভা।ওকেই আমি প্রথম আমার মনের কথা জানায়।তখন কেন জানিনা ওও কোনো রকম প্রতিক্রিয়া দেখায়নি।আমি সেদিন ওর দিকে পাত্তা দিইনি।এখন আসি আসল কথায়।
আমি যে তোকে এতোদিন ধরে ভালোবাসি তা কি তুই একটুও আচ্ করতে পারিসনি?কেন পারিসনি বলতো।তুই তো সবার মুখ দেখেই মনের কথা বোঝার এক অলৌকিক ক্ষমতার অধিকারী।তাহলে আমার মনের কথাটা তুই কেন বুঝতে পারিসনি?বলতে পারিস আমায়?
আচ্ছা সেইসব বাদ দিলাম।কিন্তু আমাকে এইটা বলতো যে আদিয়াতের মধ্যে এমন কি আছে যা আমার মধ্যে নেই?
আমার বার্থডে তে তোদের সবাইকে যে সারপ্রাইজটা দিতে চেয়েছিলাম সেইটা হলো তোকে প্রপোজ করা।কিন্তু সেইটা তো আর সম্ভব নাহ।তাই তোকে এই চিঠির মাধ্যমেই বলে গেলাম,তোকে বড্ড ভালোবাসি।
আজ আমি আমার জীবনটা শেষ করবো।কারণ তোকে ছাড়া আমি আমার এই জীবনটা কল্পনাও করতে পারিনা।
বিদায়ের শেষ মুহূর্তে একটায় প্রার্থনা করি,যেখানেই থাকিস আর যার সাথেই থাকিস সুখে থাকিস,ভালো থাকিস।

ইতি,
তোর হয়েও না হওয়া আরশোলা।

এই চিঠিটা পড়ে আমি মাটিতে বসে পরলাম।আমি যে আর পারছিনা।এই কোন কঠিন বাস্তবতার সম্মুখীন হলাম আমি?আরিয়ান আমাকে এতো দিন যাবত ভালোবাসে আর আমি তা ঘুণাক্ষরেও টের পায়নি।এখন আমি কি করবো?আচ্ছা আরিয়ান তো চিঠিতে লিখেছে যে ওও আমাকে ভালোবাসে তা ইভা জানতো।তাহলে ইভা কেন আমাদের কাউকে এই কথাটা জানায়নি?এইটা ভেবেই আমি উঠে দাড়ালাম।আর ইভার সামনে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম,,,
আমি:ইভা,আরিয়ান বলেছে যে তুই জানতিস আরিয়ান আমাকে ভালোবাসে।তাহলে সেই কথাটা তুই কেন আমাদের কাউকে জানাসনি?বললল কেন জানাসনিইইইইইই(চিল্লিয়ে)
আমার চিৎকারে ইভা কেঁপে উঠল।ওর চোখ দিয়ে অনবরত পানি পড়ছে।
অন্যদিকে বাকি সবাই চুপ করে আছে কারো মুখে কোনো কথা নেই আরুশ আর আদিয়াত ও কেন যেন চুপচাপ হয়ে গেছে।আমার চিৎকারে হসপিটালের অনেকেই অবাক হয়ে আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে।এতো কিছুর মাঝেই ইভা কাঁপা কাঁপা গলায় যা বললো তা শোনার জন্য আমরা কেউ-ই মোটেও প্রস্তুত ছিলাম নাহ।আজ যেন আমরা শুধু অবাক আর অবাকই হচ্ছি।এতো এতো কঠিন সত্যের মুখোমুখি হতে হবে জানলে হয়তো আমরা সবাই আগে থেকেই প্রস্তুতি নিয়ে রাখতাম।কারণ এই কথাগুলো আমাদের প্রানের চেয়ে বেশি দামি বন্ধুরাই আমাদের থেকে গোপন করে এসেছে এতোগুলো দিন,এতোগুলো মাস,এতোগুলো বছর ধরে।যা আমরা কেউ আশা করিনি ওদের থেকে!

চলবে?????
চলবে?????

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here