বেটারহাফ পর্ব ২৯+৩০

#বেটারহাফ
#Nishat_Tasnim_Nishi

|পর্ব ২৯|

শোবার ঘরে বিরাট মিটিং বসেছে। সেখানে আজ এ ঘরের সবার একটা সিদ্ধান্ত হবে। কার কি হবে?কে কি করবে সব নিয়েই আলোচনা হবে। বৃষ্টি খুব নার্ভাস হয়ে গুটিশুটি মেরে বসে আছে একপাশে।

এত রাতেও সোহাগীর বাবার বাড়ীর লোকজন চলে এসেছেন মেয়ের আর্তনাদ শুনে। ফোনেই সে তার বাপ ভাইকে বলে যে এখনই যেনো তাকে এ বাড়ী থেকে নিয়ে যায়। তারা কি হয়েছে বা কেউ কিছু বলেছে এমন কোনো বাক্য না বলেই সরাসরি রওনা দিয়েছে।

রাত্রি ঘরের বাহিরে দরজার পাশে দাড়িয়ে আছে। বৃষ্টি বিছানার কোনায় বসে আছে। তাকে রেস্ট করতে বলা হয়েছিলো সেজন্য সে বিছানার কোনায় গুটিসুটি মেরে বসে আছে।

সোহাগীর এক মাত্র বড় ভাই সোহাগ। তার আর ভাই-বোন নেই। তার বাবা-মা ছেলে আর ছেলের বউ এর সাথে থাকে।

‘নেহাত সোহাগী সোহেলকে পছন্দ করেছিলো নাহলে তো ওরা কখনোই সোহেলের কাছে বিয়ে দিতো না।’ এটা হলো উনাদের বক্তব্য। সোহেল অবশ্য কিছু বলছে না। সে চুপ করে দরজায় হেলান দিয়ে দাড়িয়ে আছে।

সোহাগীর বাবার বাড়ীর লোক প্রচন্ড ক্ষেপে আছে। সোহাগ উঁচু গলায় শাহিনুরকে বলে,–” আমি আমার বোনকে নিয়ে যেতে চাই। আপনাদের এই যাযাবর এর সংসারে ওকে রাখতে চাই না।”

শাহিনুর শান্ত গলায় বলে,–” আগে ওদের কাছ থেকে শুনে নেই কি হয়েছে? সামান্য বিষয় নিয়ে ছাড়াছাড়ি? বিয়ে তো কোনো খেলা নয় তাই না?”

সোহেল হেসে বলে,–” আপনাদের কাছে তো বিয়ে টা ছেলেখেলাই। আপনার সংসারে আপনার ছেলেদের কাছে বিয়ে মানেই একটা খেলা। এক বউ ভালো না লাগলে আরেক বউ নিয়ে আসে।”

কথাটা বলে সে আড়চোখে সাগরের দিকে তাকালো। সাগর ফিরেও ওর দিকে তাকায় নি। ও চুপ করে বসে আছে। শাহিনুর রেগে গেলেও মুখে প্রকাশ করলেন না। তিনি সহজ গলায় বলে,–” বড় বউমা তুমি বলো কি হয়েছে?”

সোহাগী বলে,–” কি বলবো আমি? আমি বলবো যে আমার স্বামী আমাকে মারে। আমাকে মেরে ঘর থেকে তাড়িয়ে দিতে চায়?”

শাহিনুর বলে,–” সহজ আর স্বাভাবিক ভাবে কি হয়েছে সেই বিষয়টা বলো। সোহেল তোমায় গায়ে কি সত্যই হাত তুলেছে আর তুললেই বা কেনো?”

–” সন্ধ্যায় উনি বাড়ীতে এসেছিলেন। আমি উনার সব কিছু এগিয়েই দিয়েছিলাম। ভুলবশত উনাকে পানির গ্লাস দেই নি খাবার সময়। আর সেজন্য উনি আমাকে বকা শুরু করে দেয় যে খাওয়ার সময় পানি না দিয়ে অন্যসব কেনো দিয়েছি? এটা নাকি অপরাধ আর ও নানান কথা শুনাতে লাগলেন।

সেসব শুনে আমি রেগে গিয়েছিলাম। আর রেগে বলি, ‘আমি তো সবার কাজের মেয়ে তাই না? আমি মানুষ না। আপনার ভাইকে চা একটু দেরী করে দেওয়ার কথা বলতেই না খেয়ে চলে গিয়েছে। আপনাকে পানি না দেওয়ায় আমার পরিবার সহ বলেছেন আমাকে কি কিছু শেখায় নি? ”

এরপর উনার নাকি রাগ উঠে যায়। আর রাগ সামলাতে না পেরে আমার গালে তার হাতের ছাপ বসিয়ে দেন।

ঘরে তিন বউ, সবার নিজের মতো চলে। এক ছেলের বউ শহরে থাকে আর আরেকজনের দুই বউ,একজন রেস্ট নিবে আরেকজন স্কুল কলেজে যাবেন। তার মানে কি আমি হলাম ঘরের চাকরানী?
তারউপরে এক গ্লাস পানি দিতে দেরী হলে আমার পরিবার নিয়ে প্রশ্ন তুলে। আর আমি সেটার জবাব দিলে আমার গায়ে হাত তুলা হয়।

তাহলে আপনি বলুন, কোন মুখে আমি এই নরকে থাকবো?”

শাহিনুর গম্ভীর গলায় সোহেলের দিকে তাকায়। সে মাথা নিচু করে আছে। তিনি কঠোর গলায় বলে,–” সোহেল, ও যা বলছে তা কি ঠিক? তুমি কি এ সামান্য কারণে ওর গায়ে হাত তুলেছো?”

সোহেল মাথা তুলে তাকালো মায়ের দিকে। সে মাথা নাড়িয়ে বলে, –“আমি ওর গায়ে হাত তুলেছিলাম। কিন্তু ও যা বলেছে বিষয়টা সম্পূর্ণ তেমন নয়। আমি বকা দিয়েছিলাম ঠিকই কারন ততক্ষণ পর্যন্ত ও শুধু কানের কাছে ঘ্যানঘ্যান করছিলো। সারাদিন অফিস থেকে কাজ করে ফিরে এসেও যখন ঘরে এসেও দেখি অশান্তি তখন আর মাথা ঠিক থাকে না। ওর তর্ক করাটা বাড়ী ছেড়ে দেওয়া পর্যন্ত চলে গিয়েছিলো। ও চাইছিলো ওকে নিয়ে যেনো আমি বাড়ী ছেড়ে চলে যাই, ও এখানে থাকতে পারবে না। আমি অনেক্ষণ ধৈর্য্য ধরে চুপ ছিলাম, কিন্তু যখন ও থামছিলো না তখন ওর গায়ে হাত তু্লতে বাধ্য হই আর ওকে চলে যেতে বলি।”

সোহাগীর মা রাগান্বিত কন্ঠে বলে,–” তো, আমার মেয়ে ভুল কি চাইছে? তোমার মেঝো ভাই ও তো তার বউকে নিয়ে বাসা ভাড়া করে শহরে থাকে। এখানে আমার মেয়েকে নিয়ে থাকতে কি সমস্যা? এই সামান্য কারনে তুমি আমার মেয়ের গায়ে হাত তুলেছো?”

এ কথা বলে তিনি দৃষ্টি ঘুরিয়ে শাহিনুরের দিকে তাকালেন। তারপর বলে,–“বেয়াইন, শুনলেন তো আপনার ছেলের নির্লিপ্তি গলায় স্বীকারোক্তি? আমি আর আমার মেয়েকে এক মুহূর্ত ও এখানে রাখবো না।”

শাহিনুর বলে,–” আরে, বেয়াইন। শুনেন তো।”

সোহাগীর মা, মেয়ে আর নাতিনের হাত ধরে টেনে নিয়ে বলে,–”আপনাদের কোনো কথা ই শুনতে চাই না। এখনই আমি আমার মেয়েকে নিয়ে চলে যাচ্ছি। আমার মেয়ে কারো বান্দী না যে সারাদিন কাজ করবে।”

কথাগুলো শেষ করে তিনি এক মুহূর্ত ও দাড়ালেন না। চলে গেলেন তাদের নিয়ে। শাহিনুর পেছন থেকে বারবার ডাকতে লাগলেন কিন্তু উনারা দাড়ায় নি। সোহেল চুপ করে নিচু দৃষ্টিতে দাড়িয়ে ছিলো। যাওয়ার আগে তার দিকে তাকিয়ে তার শাশুড়ি বলে গিয়েছে,
‘সে নাকি কাপুরুষ! ‘

অসহ্যনীয় মানসিক যন্ত্রণার মধ্য দিয়ে দুটো দিন কেটে গেলো। সবাই কেমন ছন্ন ছাড়া ভাবে ছিলো গত দুদিন।। কারো মুখেই হাসি নেই,সবার মুখে কালো অন্ধকার ছেঁয়ে আছে। চৌধুরী বাড়ীতে শোকাচ্ছন্ন পরিবেশ! সোহেলের অবস্থা বেশ ভালো না,ও নিহের রুমেই ছিলো দুটো দিন।
সকাল সাত টা বাজে। সাগরের ফোনটা বেজে ওঠলো আওয়াজ করে। শুয়ে থেকেই ফোন টা কানে লাগালো সে।

ফোনের অপাশের কথা শুনে দপ করে উঠে বসেলো সে। এতদিন পর তার বন্ধু শাকিল ফোন দিয়েছে। সে ফোনটা কানে রেখেই বলে,–“কি সত্যি বলছিস তুই? তোদের মেনে নিয়েছে?”

–“হ্যা,শুধু মেনে নেয় নি। আজকে আমার রিসেপশন। সূচি তো খুব এক্সসাইটেট। ও বলেছে তোরে না আনতে পারলে আমার খবর আছে।”

সাগরের মনটা খারাপ হয়ে গেলো। তার ঘরে কত ঝামেলা চলছে এসব তো আর সে এখন জানাতে পারবে না। এক বছর আগেই সূচিকে নিয়ে পালিয়ে যায় শাকিল। আর আজ এত দিন পর ওদের মেনে নিচ্ছে তাদের পরিবার। এত খুশির সময় সে তো আর তার পারিবারিক ঝামেলা বলে ওদের খুশি নষ্ট করে দিতে পারে না।

সাগর মুখে শুকনো হাসি ফুটিয়ে বলে,–” কংগ্রেস দোস্ত! সূচিকে বলিস আমি ট্রিট নিবো।”

—“ট্রিট নিবি মানে?তুই কি আসবি না?”

—“সরি রে। আসতে পারবো না,খুব বিজি।”

—” তোর বিজির গুষ্ঠি মারি। গাড়ী চলে যাবে যথাসময়ে। কোনো কথা না বলে চুপচাপ তোর বউকে নিয়ে চলে আসবি।”

–“শোন তো,,,”

—” আমার কসম লাগে, তুই আসবি তোর বউকে নিয়ে। সূচী কিন্তু বিয়ে করবে না তুই না আসলে। আর বেশি কিছু বললাম না, বাকিটা তুই জানোস।”

কথা টা বলেই ও ফোন কেটে দিলো। সাগর কয়েক মুহূর্ত এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো ফোনের দিকে। বিছানা থেকে নামতেই ও খেয়াল করলো বিছানা ফাঁকা। ওর পাশে কেউই নেই। তার মাথায় আসলো বৃষ্টি কই?

ফ্রেশ হয়ে আসতেই দেখলো বৃষ্টি চা নিয়ে রুমে আসছে। বৃষ্টি এখন অনেক স্বাভাবিক আর সুস্থ। কাল ঘুরে আসার পর থেকেই তার কাছে খুব শান্তি লাগছিলো। দম বন্ধকর পরিবেশ থেকে কয়েকদিনের জন্য মুক্ত হতে পেরেছে সে।

সকাল ঘুম থেকে উঠার পরেই তার কাছে অনেক আরাম লাগছিলো, নিজেকে সুস্থ লাগছিলো। উঠেই সবার জন্য নাস্তা বানাতে চলে যায়। ইতোমধ্যে সকলকে দেওয়াও শেষ।
সাগর কোনো কথা বললো না,সে চা টা খেয়ে নিলো। বৃষ্টিকে তার কাপড় বের করতে বলে শাহিনুরের রুমে চলে গেলো।

শাহিনুরের মন-মেজাজ ভালো না। তার সাজানো-গোছানো সংসার টা ধীরে ধীরে ভেঙ্গে যাচ্ছে। কয়েকটা দিন থেকেই তো মানসিক চাপে ছিলেন। সোহাগীর চলে যাওয়া টা তার উপর আরো চাপ প্রয়োগ করে ফেলে। একমাত্র নাতিন ফিহা। সে বুঝি নানুর বাড়ী মানুষ হবে? তার এত ধন-সম্পদের তো কোনো মানেই নেই।
ফোনে কথা বলেছেন তিনি সোহাগীর মায়ের সাথে তার একটাই কথা। আর সেটা হলো তার মেয়েকে নিয়ে যদি সোহেল আলাদা থাকে তাহলে তিনি তাকে আর নাতিনকে পাঠাবেন। নাহলে মেয়েকে অন্য কোথাও বিয়ে দিয়ে দিবেন তিনি।
শাহিনুর প্রথম দিন এ কথা শুনে ফোন টা রেখে দেয়। গত দিন এ কথা নিয়ে ভাবতে ভাবতে তিনি অস্থির ছিলেন। সোহেলের অবস্থা দেখে তার মন টা আর মানলো না। তিনি রাতেই তাদের ফোন দিয়ে নরম কন্ঠে জানিয়ে দিয়েছেন যে, ‘তারা যেভাবে থাকতে চায় সেভাবেই হবে।।’
কথাটা বলেই ফোন টা কেটে দেয়।
কয়েকদিন আগেই তার মেয়েটা কে শশুড়বাড়ী পাঠিয়েছে। এখন পর্যন্ত কোনো খবর পান নি। কি জানে কি হাল অবস্থা তার?
ছেলে মেয়েদের সংসারের এমন অবস্থা তার আর সহ্য হচ্ছে না।

সাগরের আগমনে তার ভাবনার সুতোয় টান পড়ে। তিনি প্রশ্ন বিদ্ধ চোখে সাগরের দিকে তাকায়। সাগর ধীর পায়ে হেটে এসে বলে,–” মা, আমাকে এক জায়গায় যেতে হবে।”

শাহিনুর চোখ বন্ধ করে বলে,–” তো যা। আমাকে কেনো জিজ্ঞেস করছো?”

সাগর তার মায়ের পায়ের পাশে বসে বলে,–” মা, সমস্যা হলো আমাকে রাত্রিকে নিয়ে যেতে হবে।”

—“রাত্রিকে কেনো নিয়ে যেতে হবে?”

—” আজ শাকিলের বিয়ে। মানে বিয়ের অনুষ্ঠান আর কি।ওদের আগে বিয়ে হয়েছে, আজ সবাইকে দাওয়াত করে খাওয়াবে। সে বলেছে, আমি যেনো বউকে নিয়ে সেখানে যাই।”

শাহিনুর ফট করে চোখ খুলে সাগরের দিকে তাকালেন। মন টা বড্ড কু ডাকছে। গত কয়েক দিন থেকেই খারাপ সংবাদ শুনে আসছেন। তার মন বলছে ছেলে যেনো না যায়। তবুও মুখ ফুটে বললেন যে , ‘যাও, আমাকে বলছো কেনো? তোমার বউ তোমার ইচ্ছা।’

সাগর কয়েক মুহূর্ত ওখানে বসলো।
রাত্রি স্কুলে যাওয়ার জন্য রেডী হয়ে নিচে নামলো। শাহিনুরকে বলার জন্য তার রুমে আসতেই দেখলো সাগর বসে আছে। সে সেদিকে না তাকিয়ে দিয়ে বলে,’ মা,আমি যাচ্ছি।’

শাহিনুর বলে,–“দাড়াও!”

রাত্রি দাড়িয়ে যায়। সে পেছনে ঘুরতেই তিনি বলে,–” সাগর কই যাবে তোমাকে নিয়ে। আজ স্কুলে যাওয়ার দরকার নেই।”

রাত্রি অবাক হয়ে তাকায়। সাগর বলে যে তার বন্ধুর বিয়ে আর সেখানে যাবে সে। মুহূর্তেই রাত্রির চেহারার রং বদলে মলিন হয়ে যায়। এই তো সেই ছেলে যার ভাইয়ের সাথে তার বিয়ে হওয়ার কথা ছিলো, সেদিন যদি সে পালিয়ে না যেতো তাহলে আজ তার কপালে এত দুঃখ হতো না।

সে সরাসরি বলে,–” না, আমি স্কুল মিস দিতে পারবো না। এমনিতেই গত দুইদিন মিস দিয়েছি। স্টুডেন্টের মা-বাবা ফোন দিয়ে বারবার বলছেন পড়াতে কেনো যাচ্ছি না। আমার পক্ষে সম্ভব নয় স্কুল মিস দেওয়া। আমি সত্যিই দুঃখিত আপনি বরং বৃষ্টিকে নিয়ে যান।”

সাগর আর শাহিনুর দুজনেই একসাথে তাকালো। বৃষ্টিও মাত্র রুমের সামনে এসে দাড়ায় শাহিনুরের চা নিয়ে। তার কানে বাজছে তার নামে কথা চলছে। দুর্ভাগ্যবশত সে পুরো কথা টা শুনে নি। চায়ের কাপ টা নিয়ে ডুকার জন্য রাত্রি সরে দাড়ায়।

সাগর বলে,–” তুমি যা বলছো ভেবে বলছো?ওরা কেউই তো বৃষ্টিকে চিনে না। সবাই তোমাকে চিনে। ওকে ওখানে নিলে তো সমস্যা হবে।”

বৃষ্টি কাপ টা রাখতেই তার হাত কেঁপে উঠে। সে চুপ করে আছে। রাত্রি আর চোখে সবার দিকে একবার তাকিয়ে বলে,–” ওকে নিয়ে গেলে সমস্যা কি? ইজ্জতে লাগবে বুঝি? বিয়ে করার সময় মনে হয় নি? এখন কেনো বউ বলে পরিচয় দিতে লজ্জা করছে?”

সাগর চাদর শক্ত করে ধরে বসে রইলো। বৃষ্টি চুপ করে আছে। শাহিনুর রাত্রির মুখের দিকে হতবাক হয়ে তাকিয়ে আছেন। রাত্রি এত কথা বলছে কীভাবে? ওর মুখে কবে থেকে কথা ফুটেছে? এই তো সেই মেয়ে যে তার ভয়ে কোনো কথা বলতো না। যেমন ইচ্ছা তেমন অত্যাচার করতেন তিনি, তবুও কোনো প্রতিত্তুর করতো না। ওর এত বদলে যাওয়ার পেছনে কারণ কি?

সাগর ওঠে দাড়িয়ে বলে,–“ফাইন। আমি বৃষ্টিকে নিয়েই যাবো। আর ওকে আমার বউ বলেই সবার সাথে পরিচয় করাবো,কথা দিলাম।”

বলেই সে বৃষ্টির হাত ধরে টেনে নিয়ে চলে গেলো। সাগরের যাওয়ার দিকে কয়েক সেকেন্ড নিরবে চেয়ে রইলো রাত্রি। চোখ দুটো ঝাপসা হয়ে যাচ্ছে। সে আর এক মুহূর্ত দাড়ালো না, ওদের থেকে দ্বিগুন বেগে উল্টো দিকে চলে গেলো। শাহিনুর সব কিছু বসে বসে দেখলেন। চুপচাপ চোখ দুটো বন্ধ করে বিছানায় হেলান দিলেন। তার সোনার সংসার ছিন্নভিন্ন হয়ে গিয়েছে শুধু এক বাচ্চার জন্য। কেউই শান্তিতে নেই। সবকিছু থাকা স্বত্তেও কেউ চিন্তাবিহীন থাকতে পারছে না। সবার মধ্যেই হতাশা আর হতাশা। তার জন্যই সবার এ অবস্থা। নিজেকে তার এখন সবচেয়ে অকার্যকরী জিনিস মনে হচ্ছে।

ঠিক মধ্য দুপুরে তারা এসে পৌঁছালো শাকিলের বাড়ীর সামনে। বাড়ী ভর্তি মানুষ গিজগিজ করছে। গাড়ী রাখার চুল পরিমান জায়গা নেই। সাগর রাত্রিকে ভেতরে গিয়ে অপেক্ষা করতে বলে সে গাড়ী পার্ক করতে চলে যায়।
গাড়ী রেখে বিয়ে বাড়ীতে ডুকে সে বৃষ্টিকে খুঁজতেছে। এত মহিলার ভীড়ে সে তাকে খুঁজেই পাচ্ছে না। এর মধ্যেই আচমকা কেউ এসে তাকে জড়িয়ে ধরে বলে,” বাবাজি, কেমন আছো?”

সাগর চমকে ওঠে। সে তাকিয়ে দেখে রাত্রির বাবা। কয়েক সেকেন্ডেই তার মুখে নানান রং এসে ভীড় করে। সে কাঁপা কাঁপা গলায় বলে,” ভ্ ভালো। আ্ আপনি এখানে?”

রাত্রির বাবা এক গাল হেসে বলে,” হু। আরে আমি আসতাম না তো। সেদিন ই তো ওদের সাথে আমার সব বন্ধন শেষ হয়ে গিয়েছিলো, কিন্তু পরে যখন মনে পড়লো তুমি আর রাত্রিও তো আসবে তাই আর না করি নি। তারপরেও একটু আধটু জেদ ধরেছিলাম। কিন্তু বেশ সময় নেই নি পরে যদি ওরাও পাল্টি খেয়ে যায়। আমি কিন্তু সবার আগে চলে এসেছি মেয়েকে দেখতে। তোমার ওই বন্ধু আমাকে প্রমিস করে বলেছে যে তুমি নাকি আজ আসবে। যাই হোক বাদ দাও,আমার মেয়ে কই?ওকে দেখছি না যে?”

সাগরের মুখ টা মলিন হয়ে যায়। বুক টা ছেৎ করে ওঠে। রাত্রি কি এর মধ্যে ওর বাবার সাথে যোগাযোগ করে নি? ওর তো ফোন আছে। স্কুল থেকেও তো এসে দেখা করতে পারতো। তাহলে সে যোগাযোগ করে নি কেনো? হোয়াই? সাগর তো ভেবেছে রাত্রি তার বাবার সাথে যোগাযোগ করে। হঠাৎ করেই সাগর কথা শুন্যতায় ভুগতে লাগলো। এমন সময় বৃষ্টি হাঁপাতে হাঁপাতে এসে সাগরের পাশে দাড়ালো।
#বেটারহাফ
nishat Tasnim Nishi

|পর্ব_৩০|

সাগরের মুখ টা মলিন হয়ে যায়। বুক টা ছেৎ করে ওঠে। রাত্রি কি এর মধ্যে ওর বাবার সাথে যোগাযোগ করে নি? ওর তো ফোন আছে। স্কুল থেকেও তো এসে দেখা করতে পারতো। তাহলে সে যোগাযোগ করে নি কেনো? হোয়াই? সাগর তো ভেবেছে রাত্রি তার বাবার সাথে যোগাযোগ করে। হঠাৎ করেই সাগর কথা শুন্যতায় ভুগতে লাগলো। এমন সময় বৃষ্টি হাঁপাতে হাঁপাতে এসে সাগরের পাশে দাড়ালো।

সে এসেই বলে,–“আমি কখন থেকে আপনাকে ডাকছি জ্বি বলছেন না কেনো?”

সাগর সোজা স্তম্ভের মতো দাড়িয়ে রইলো। তার মুখে কোনো কথা নেই। রায়হান বৃষ্টির দিকে কৌতুহলী দৃষ্টিতে তাকায়। তার মাথায় চলছে ও কে?

তিনি সাগরের দিকে তাকিয়ে বৃষ্টির দিকে ইশারা করে বললেন,–“ও কে? তোমাকে কেনো খুঁজছে?”

সাগর নিশ্চুপ। তার মুখে কোনো কথা নেই। রাত্রির বাবা এবার আরো একবার প্রশ্ন করলেন। সাগরের এবার রাত্রিকে সকালে বলা কথা মনে পড়ে। সে চোখ তুলে তার দিকে তাকালো। মিনমিন করে বলে,–“ও বৃষ্টি। আমার ওয়াইফ!”

সাগরের কথা শুনতেই রায়হানের চোখ বড় বড় হয়ে গেলো। হতভম্ভ দৃষ্টিতে এদিক-ওদিক তাকালেন। বৃষ্টিকে বারবার পর্যবেক্ষণ করতে লাগলেন। বৃষ্টিও কৌতুহলী দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। সে এর আগে কখনো দেখে নি রায়হানকে। চোখমুখে কৌতুহল নিয়ে সাগরের দিকে তাকালো সে। সাগর তার চোখের ভাষা বুঝতে পারলো,তাই সে খুব ছোট আওয়াজ করে বলে,’উনি রাত্রির বাবা।’

বৃষ্টি সেটা শুনতে পেলো না। সে কপালে ভাজ ফেলে চেয়ে রইলো সাগরের দিকে আবার শুনার জন্য। সাগর এবার আরেকটু জোরে বলতেই সে শুনতে পেলো।

বৃষ্টি হন্তদন্ত হয়ে রায়হানের পা ধরে সালাম করতে নিলো– রায়হান সাথে সাথে সরে গেলো। বৃষ্টি একটু অবাক হলো, সে হালকা হেসে মুখে সালাম দিলো। রায়হান বৃষ্টির দিকে না তাকিয়ে সাগরের দিকে কঠোর দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে,–“আমার মেয়ে কই?”

সাগর মাথা নিচু করে রইলো।বুক ঢিপঢিপ করছে তার ভয়ে। রায়হানের চোখে মুখে রাগ এবার স্পষ্ট দেখা দিলো। সে বুঝলো সাগর মোটেই মজা করছে না।

সাগর কিছু বলছে না দেখে, বৃষ্টি বলে,–“আঙ্কেল আসুন আগে আমরা বউ দেখে আসি। পরে এসব নিয়ে নাহয় কথা বলিবেন।”

রায়হান বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে ধমকে বলে উঠে,–” চুপপপ।”

বৃষ্টি সহ আশেপাশের মানুষজন কেঁপে ওঠে তার ধমকে। বৃষ্টি তাকাতেই তিনি বলে,–“আমার মেয়ের খবর নেই আর আমি বিয়ে খেতে যাবো?”

বৃষ্টি কাঁপা কাঁপা গলায় বলে,—” ন্ না। আমি স্ সেটা ব্ বলি ন্ নি তো। ”

রায়হান তার কথা শুনে যেনো তেলেবেগুনে জ্বলে ওঠে। সে তার দিকে তেড়ে গিয়ে বলে,–“একদম কথা বলবা না। আমার মেয়ের সংসার শেষ করে এসে আবার আমাকেই বুঝাচ্ছো? তোমাদের মতো মেয়েদের না খুব চেনা। দেখে তো বুঝা ই যাচ্ছে থার্ড ক্লাস শ্রেনির মেয়ে। নিশ্চয়ই শরীর দেখিয়ে আমার মেয়ের জামাইকে বশ করেছো? ছিঃ, তোমাদের মতো মেয়েদের কি বিন্দু পরিমান লজ্জা নেই? নিজের কাছে কি সামান্য পরিমাণ খারাপ ও লাগে না অন্যের সংসার ভাঙ্গতে? ”

বৃষ্টি চুপ করে মাথা নিচু করে আছে। সবাই তার দিকে চেয়ে আছে। অপমানে চোখে জল চিকচিক করছে। সাগর কিছু বলছে না, সে শুধু চেয়ে আছে বৃষ্টির দিকে।

রায়হানের মেজাজ খুব বাজে ভাবে বিগড়ে গিয়েছে। সে বৃষ্টির পাশে থু থু ফেলে বলে,–” তোমাদের দেখলে আমার ঘেন্না লাগে।কি আর পারো তোমরা? চোখের জল আর ইজ্জত বিসর্জন দিয়েই তো পর পুরুষদের হাত করো। তোমরা কি আসলেই নারী?কীভাবে পারো আরেকজনের সংসার নষ্ট করতে? এসব শুধু ফ্যামিলির শিক্ষার অভাবে হয়ে থাকে। নষ্টা মেয়ে কোথাকার।”

বৃষ্টি চোখ তুলে তাকায় রায়হানের দিকে। চোখের জল গাল বেয়ে গলায় নেমে গিয়েছে। শেষের কথা টা যেনো তার শরীরে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। তার বলতে ইচ্ছা করলো, ” কি বলছেন এসব?কিসের সাথে কিসের কথা? আপনি পাগলের মতো এসব কি বকছেন?”

সে কথা টা মুখ দিয়ে না বের করে সাগরের দিকে তাকালো। সাগর তখনও বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে আছে। তাই বৃষ্টি চুপ করে গেলো। মাথা নিচু করে সব হজম করার চেষ্টা করলো।

রায়হান বলে,’ তোমাদের মতো মেয়েদের পৃথিবীতে বাঁচার অধিকার নেই। মরে যাওয়,,,,, ”

তার পুরো কথা শেষ হওয়ার আগে সাগর কষিয়ে চড় মারলো বৃষ্টির গালে।

রায়হান সহ উপস্থিত সবার আওয়াজ বন্ধ হয়ে গেলো। বৃষ্টি আকস্মিক কান্ডে হতবাক হয়ে যায়। সে গালে হাত দিয়ে তাকাতেই সে বলে,”আশা করি এ থাপ্পরের পর তোমার শিক্ষা হবে।”

এটুকু বলেই সে অনুষ্ঠান ছেড়ে দিয়ে গাড়ীর দিকে হাটা দিলো। বৃষ্টি বাদে বাকি সবাই হতভম্ভ হয়ে দাড়িয়ে রইলো।

রায়হান সাগরের চলে যাওয়া দেখে সে ওকে পিছন থেকে ডাকতে লাগলো।

বৃষ্টির দিকে কঠিন দৃষ্টিতে তাকাতেই বৃষ্টি বলে,–“এতক্ষণ আপনার যা ইচ্ছা হয়েছে তাই বলেছেন। বিনা কিছু জিজ্ঞাস করেই আমাকে উল্টাপাল্টা কথা শুনিয়েছেন।

আপনি বলেছেন আমি আপনার মেয়ের জামাইকে হাতিয়ে নিয়েছি।
আমার প্রশ্ন আপনার মেয়ের জামাই কি বাজারের কোনো পন্য নাকি যে, যে ব্যক্তি চওড়া দাম দিতে পারবে সে নিয়ে যেতে পারবে?
আপনার জামাই কি এতই বোকা যে সে এসব বুঝবে না?
ছেলে দ্বিতীয় বিয়ে করেছে শুনে আপনি ফট করেই তার দ্বিতীয় বউ এর দোষ দিলেন। অথচ যে বিয়ে করেছে তার কোনো দোষ নেই। সে নিষ্পাপ দুধের বাচ্চা তাকে চকলেট দিয়ে ভুলিয়ে এসব করানো হয়েছে? তাই না? আপনাদের ধারনা দ্বিতীয় বিয়ে মানেই দ্বিতীয় বউ এর চক্রান্ত। কেনো বলেন তো? ছেলের কি কোনো দোষ নেই? সব দোষ কেনো মেয়েদের দেন?
ডিবোর্স/ একাধিক বিবাহ, এসব শুনলেই সবার আগে বলেন যে মেয়ের দোষ, মেয়ে ভালো না। ছেলে যদি এতই ভালো হয় তাহলে তো সে ওই খারাপ মেয়ের সাথে সংসার করতেই পারে। তাহলে তারা কেনো করে না?

শুনেন, বিয়ে তো মেয়ে আর একা একা করতে পারে না,সেখানে ছেলের পূর্ণ মতামতের দরকার হয়। তাই দয়া করে কিছু না জেনে, না বুঝে, অর্ধেক কথা শুনে কিছু বলবেন না। সব টা শুনে তারপর বলবেন। আর আপনি কেমন বাপ যে মেয়ের খবর ও রাখেন না?”

বৃষ্টি আর তার দিকে তাকালো না, সে সোজা হেটে চলে যায় গাড়ীর দিকে। আজ অনেকদিন পর সে মন খুলে কথা বলতে পেরেছে। সে শেষ গলা উঁচু করে কথা বলেছিলো রাত্রির সাথে। এরপর তো সাগরের নির্মম অত্যাচারের পর আর কোনো জবাব দেয় নি। তার ভেতরের যেটুকু পরিমাণ সাহস ছিলো সেটা গায়েব হয়ে গিয়েছিলো। সাগর তাকে সেদিনের ব্যবহারের জন্য যেদিন ‘সরি’ শব্দটা বলেছিলো সেদিন আরো কয়েকটা কথা বলেছিলো। মূখ্য কথা হলো, “সে জেনো এরপর থেকে কেউ কিছু বললে বিপরীত কথা বলে।”

বৃষ্টি তখন মাথা নিচু করেছিলো। সাগর সেটা দেখে হুট করেই চড় বসিয়ে বলেছিলো, যদি কিছু না বলে এভাবে থাকো তাহলে আমিও তোমাকে ঠিক এভাবেই মনে করিয়ে দিবো।

চড় টা সেদিন অবশ্য ধীরেই দিয়েছিলো। পরে আবার রাত্রির জোরাজুরিতে সে ওই চড়ের জন্য ক্ষমা চেয়েছিলো। আজ কিন্তু সেদিনের মতো ধীরে মারে নি,খুব জোরেই মেরেছিলো। যার জন্য তার গাল টা এখন জ্বলছে। বৃষ্টি গাড়ীতে ডুকে ঠিকমতো না বসতেই কেঁদে দেয়। সাগর তার দিকে ঘুরে তাকায় নি। তার গাড়ীর সামনে এসে বর আর কনে দাড়িয়ে হাঁপাতে লাগলো। সাগর গম্ভীর মুখেই তাদের বলে,–“এখন কিছু আবদার করিস না। নাহলে আমার দ্বারা খুব খারাপ কিছু হয়ে যাবে।”

তারা দুজন আর কিছু বললো না। এদিকে রায়হান তো ওদের গাড়ীর দিকে সাগরকে চেঁচিয়ে এগিয়ে আসতে লাগলো। সাগর সেদিকে তাকালো না। প্রচন্ড বেগে গাড়ী চালালো বাড়ীর উদ্দেশ্য। বৃষ্টি বসে ফিকরে কাঁদছে, লজ্জায় সেখানে কাঁদতে পারে নি,কিন্তু এখন আর সে নিজেকে আটকাতে পারছে না। রাগ আর জেদ দুটোই তার মধ্যে দেখা দিলো।

রায়হান ও সি এন জি নিয়ে ওদের পেছন পেছন যেতে লাগলো। মেয়ের জন্য মনটা বড্ড কাঁদছে। সে কেনো যে মেয়ের অনুরোধে এতদিন খবর নেয় নি তার খুব আফসোস হচ্ছে। সাগরের উপর মনে মনে সে এত টা বছর ঋণি ছিলো। সাগরকে নিয়ে তার খুব গর্ব হতো। কিন্তু আজ তার সাগরের প্রতি খুব পরিমাণ ঘৃণা কাজ করছে।

রাত্রির প্রতি তাহলে তার আর কোনো অনুভূতি নেই। তার মেয়েটার কথা একটি বারও ভাবলো না? দ্বিতীয় বউ নিয়ে তাহলে বেশ খুশি আছে। কিন্তু দ্বিতীয় বিয়ে করেছে কেনো? তার মেয়ের কি খারাপ কিছু হয়েছে নাকি?
রাত্রির বাবা বুকে হাত দিয়ে নিঃশব্দে কাঁদতে লাগলেন। বুকে ব্যাথা করছে তার। তিনি তো হার্ট পেশেন্ট।

বাড়ীতে এসেই সাগর আর বৃষ্টি কিছুক্ষণ চুপ করে সোফায় বসেছিলো, সাগর যখন
উপরের দিকে উঠতে লাগলো। রায়হান তখনই এসে পৌঁছায়।

সে এসেই তার মেয়েকে ডাকতে লাগলো। মেয়েকে দেখার জন্য মনটা বড্ড ব্যাকুল হয়ে আছে। এদিকে ওসব শুনে মেয়ের জন্য চিন্তায় তার মাথা ফেটে যাচ্ছে।

রায়হানের আওয়াজ পেয়ে সাগর থেমে যায়। সে জানতো যে রায়হান ঠিকই আসবে। আর সে এটাই চেয়েছে যে সে যেনো আসে। সে চায় রায়হান যেনো সবকিছুর মুখোমুখি হোক। তিনি যেনো তার মেয়ের মুখেই সব শুনেন। সবার সামনে যেনো সব আলোচনা হয়। তাই সে তখন এভাবে চলে আসে।

এদিকে চিল্লাফাল্লার আওয়াজ পেয়ে শাহিনুর নিচে নেমে আসে। তার কাছে কন্ঠসর টা অন্যরকম লাগছে। কে হতে পারে?

সিড়ির মাথায় আসতেই রাত্রির বাবার দিকে তার চোখ পড়লো। রায়হান তখন উপরের দিকেই তাকিয়ে ছিলো। দুজনের দৃষ্টি বরাবর হয়ে গেলো। শাহিনুরের পা যেনো অসার হয়ে গেলো। রায়হান হা করে তাকিয়ে আছে, তার কথাবার্তা বন্ধ হয়ে গিয়েছে।

এদিকে নিজে নিকে বকবক করতে করতে বাড়ীতে ডুকতে লাগলো রাত্রি। আজ মেজাজ টা বড্ড খারাপ। টিউশনি করানোর সময় এক মহিলা তাকে বলে যে,”তার নাকি ভাগ্য খুব ভালো। তার বাচ্চা হয় না,স্বামী বাচ্চার জন্য দ্বিতীয় বিয়ে করা সত্ত্বেও তাকে বাড়ী রেখেছে। এমন নাকি কপাল ওয়ালা কয়েকজনের সাথে হয়।” সে শুধু অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলো। তার মানে সে ফেলনা বস্তুু, তাকে ফেলে দেওয়া উচিত ছিলো? নিজের প্রতি তার খুব খারাপ লেগেছিলো। খুব অবাক ও হয়েছিলো যখন দেখলো তার মতো একজন মহিলা ই তাকে বলেছে কথা টা। তাই সে আর মনোযোগ দিয়ে পড়াতে পারে নি। ডিপ্রেশন মাথায় চড়ে বসেছিলো। এজন্য হাফ ক্লাস করিয়ে ছুটি নিয়ে চলে আসে।

বাড়ীতে ডুকেই নিজের বাবাকে দেখে হতবাক হয়ে যায় সে। সে তাকে যখন ডাকতে নিচ্ছিলো তখন দেখলো তার শাশুড়ি আর বাবা একে অপরের দিকে চেয়ে আছে। মুহূর্তেই তার সেদিনের সব কথা মনে পড়ে যায়।

রাত্রি খুব কঠোর কন্ঠে বলে,–” বাবাআ।”
এরপর একটু থেমে বলে,তুমি এখানে?”

রাত্রির আওয়াজ কানে পৌঁছাতেই সবার হুশ ফিরে আসলো। রায়হান নিজের মেয়েকে দেখে বিষ্ময় আর খুশিতে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে গিয়েছে। মা নামক মধুর ডাক দিয়েই ওর দিকে এগিয়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরলো। রাত্রি মুখে অবাকতার ছাপ। সে কপালে ভাজ ফেলে নিজেও জড়িয়ে ধরলো।

—“মা,তুই ঠিক আছিস? কই গিয়েছিলি? আর তোর স্বামী নাকি দ্বিতীয়বার বিয়ে করেছে ওই মেয়েকে? এসব সত্যি নাকি?”

রায়হান অনবরত প্রশ্ন করেই যাচ্ছে। রাত্রি চুপ করে ছিলো, ধীর কন্ঠেই বলে যে হ্যা এসব সত্য।

মেয়ের কথা শুনা মাত্রই সে অসাড় হয়ে যায়। শরীরে জড়তা এসে ভীড় জমায়।
রায়হানের হঠাৎ শাহিনুরের কথা মনে পড়ে, সে ঘুরে তাকায় তার দিকে।

শাহিনুর খুব স্বাভাবিকভাবে পা ফেলে নিচে নামছে। সবাই নিশ্চুপ শুধুমাত্র তার হাটার আওয়াজের প্রতিধ্বনি শোনা যাচ্ছে। সে নিচে নেমে এসে রায়হানের মুখোমুখি দাড়ালো।

চলবে!

**একসাথে পুরো পর্ব টা দেওয়া যাচ্ছে না। আমি বলেছিলাম শেষ পর্ব হবে কিন্তু হচ্ছে না,সত্যিই দুঃখিত। ইন-শা-আল্লাহ বাকি অংশ টুকু শেষ পর্ব লিখে আপলোড করবো।

রিচেক করি নি,ভুল ত্রুটি মার্জনা করবেন। শেষ পর্বের নিচে আমি আসল ঘটনা সংক্ষেপে লিখে দিবো,যারা জানতে চেয়েছিলেন তাদের জন্য।
চলবে!

*রিচেক করি নি, ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন।
পর্ব ৩০ গল্পের শেষ পর্ব। আমি দু-তিন দিন গ্যাপ নিয়ে ওই পর্ব টা দিবো। আশা করি অপেক্ষা করবেন। ভালোবাসা অবিরাম।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here