#এক_মুঠো_রঙ
#ফারজানা_আফরোজ
#পর্ব_৮
বিছানায় শুয়ে পেটে বালিশ চেপে কান্না করছে সিমরান।। অসম্ভব যন্ত্রণাতে বার বার কেঁদে উঠছে সে। পেটের নাড়িভুড়ি বেরিয়ে আসার উপক্রম প্রায়। নাহ কিছুতেই সহ্য করা যায় না এই ব্যাথা। মৃত্যু যেন খুব কাছেই তার। সিমরানের মা গ্লাস ভর্তি গরম পানিতে আদার রস আর বোতলে করে গরম পানি নিয়ে আসলেন। মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে বোতলটি এগিয়ে দিয়ে বললেন…..
—” একজন মা কতখানি কষ্ট করতে হয় দেখেছিস? প্রতি মাসে তীব্র যন্ত্রণা, প্রসব বেদনা সহ্য করার পরেই শুনতে পায় সন্তানের মুখের সেই মিষ্টি ডাক। ‘মা’ ডাকটি শুনতে হলে প্রচুর কষ্ট সহ্য করতে হয় রে মা। একজন মা বলতে পারবে সন্তান পৃথিবীতে আনার কষ্ট কেমন। গরম পানি এনেছি দেখবি খুব তাড়াতাড়ি ব্যাথা কমে যাবে।”
সিমরানকে উঠিয়ে জোর করে গরম আদার পানি খাইয়ে দিলেন। বেচারি কান্না করে চোখ লাল করে ফেলেছে। প্রতি মাসের দুইটা দিন তাকে এই কষ্ট সহ্য করতে হয়। সিমরানকে বসিয়ে রেখে ওর মা আবারও রান্না ঘরের দিকে পা বাড়ালেন।
ফোন আসলো সিমরানের ইচ্ছা না থাকা সত্ত্বেও ফোন রিসিভ করে বলল….
—” হ্যালো।”
সিমরানের কণ্ঠস্বর অস্বাভাবিক মনে হলো নীরের কাছে। গলায় কাটা আটকে যাবার মত কন্ঠ।
—” কি হয়েছে তোমার?”
—” তেমন কিছু না। চকলেটের জন্য ফোন দিয়েছেন?”
—” উহু। ফোন দিয়েছিলাম তোমার সাথে কথা বলার জন্য কিন্তু মনে হচ্ছে তুমি অসুস্থ। কি হয়েছে?”
—” হুম, অসুস্থ আমি পরে কথা বলছি।”
ফোন কেটে দিলো সিমরান। মা ও চাচীর গলা শোনে তাকালো দরজার দিকে। মায়ের হাতে একটা ডিম, মাছ ভাজি দেখে প্রশ্ন করছেন আইরিনের মা।
উনার মতে, এই সময় নিরামিষ খেতে হবে, আমিষ জাতীয় খাবার শরীরের জন্য ঠিক না পরে সমস্যা হতে পারে, মেয়েকে আদরে আদরে ব্রয়লার মুরগি বানিয়ে ফেলেছেন একটু অসুখ হলেই বিছানা নিয়ে ফেলে। এই সমস্যা মনে হয় আর কারো হয় না।
সিমরানের মা খাবার গুলো টেবিলের উপরে রাখলেন। আইরিনের মায়ের দিকে তাকিয়ে বললেন…..
—” মেন্সট্রুয়াল চলাকালে মেয়েদের শারীরিক পুষ্টির চাহিদায় পরিবর্তন আসে। এর কারণ শুধুই হরমোন নয়, এই সময় মেয়েদের দেহে অনেক প্রয়োজনীয় ভিটামিন ও খনিজ হারায়। তাই দেহের পুষ্টি উপাদান ঠিক রাখতে এই সময়ে আমাদের অর্থাৎ মেয়েদের ডায়েট চার্ট মেনে চলা উচিত। তাহলে শরীরের যে ক্লান্তিকর সময় বা খাবারের প্রতি অনীহার, দুর্বলতা ঠিক হয়ে যায়।
এই সময়ে দেহ যে খনিজ সবচেয়ে বেশি পরিমাণে হারায় তা হলো আয়রণ। ব্রোকোলিতে প্রচুর পরিমানে আয়রন থাকে, এছাড়াও আছে ফাইবার, ম্যাগনেসিয়ার এবং পটাসিয়াম। এই সময় এসব উপাদান শরীরের শক্তি যোগাতে সাহায্য করবে। কলা একটি সুষম খাদ্য। কলা নারী দেহে প্রয়োজনীয় পুষ্টি যোগাতে সাহায্য করে।ডার্ক চকলেট প্রচুর পরিমানে আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম, এন্টি অক্সিডেন্ট এ ভরপুর থাকে। এছাড়াও ডার্ক চকলেট রক্ত সঞ্চালন স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে। আদা পানি বা রস সাহায্য করে তলপেটের ব্যথা কমাতে। তলপেটের এই অসম্ভব ব্যাথা কমাতে আদা অনেক গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা পালন করে। এই সময়ে যত বেশি ফল খাওয়া যাবে তা স্বাস্থ্যের জন্য ততবেশি উপকারে আসবে। কমলা ও লেবু বিশেষ করে। প্রচুর পরিমাণে পানি খেতে হবে, ভিটামিন জাতীয় খাবার খেতে হবে, দৈনিক সাত থেকে আট ঘণ্টা ঘুমাতে হবে। তাহলে শরীর ও মন ভালো থাকবে।
আর তুমি এখনও পুরনো যুগে পরে আছো। একজন মেয়ে হওয়া সত্ত্বেও মেয়ের কষ্ট বুঝার চেষ্টা করছো না তুমি। জানো মেন্সট্রুয়াল কোনো লজ্জার বিষয় নয় বরং একজন মেয়ের অহংকার। তার মাতৃত্ব অর্জনের সফল।”
কথাগুলো বলতে বলতে উনি সিমরানকে খাবার খাইয়ে দিলেন। আইরিনের মা চুপচাপ কথাগুলো শোনে উঠে পড়লেন। এতদিন কত ভুল কাজেই না করেছেন মেয়ের প্রতি তা ভাবতেই তার চোখ গুলো ভিজে উঠলো। এখন ভীষণ অনুতাপ করছেন মনে মনে।
______________
সোনালী বিকালের মিষ্টি বাতাস বইতে শুরু করেছে সিমরানের বাসার ছাদে। গায়ে হলুদ জামা, বড় বড় চুল গুলো ছেড়ে দাঁড়িয়ে আছে ছাদের মাঝ বরাবর। বাতাস মনে হয় মনে মনে ঠিক করেছে আজ বিরক্ত করবে সিমরানকে, শুধু কি বিরক্ত উহু ভীষণ বিরক্ত। এই জন্যই তো খোলা চুল গুলো বার বার এদিক ওদিক উড়িয়ে দিতে লাগলো। হাতে এক মগ গ্রীন টি নিয়ে সে দাঁড়িয়েছে কিছুটা সোনালী রোদের ছায়া পাওয়ার আশায়। সোনালী আলো তার মুখটাকে আরো সোনালী করে তুলেছে। রাস্তায় দাঁড়িয়ে এই অগোছালো খোলা চুলের হলুদিয়া পাখিকে দেখতে ব্যাস্ত নীর। মনের ভিতর আজ তার ধম ধম ঢোল পিটানোর শব্দ শুনতে পাচ্ছে। ছাদে দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েটি আদো কি কোনো মেয়ে নাকি জান্নাতী হুর? যার দিকে তাকিয়ে চোখ এড়ানো দায়। নীরের বড্ড ইচ্ছা করছে নিজের হাতে সিমরানের এলো মেলো চুল গুলো সরিয়ে দেওয়ার জন্য। বার বার বলছে, ইসসসসসস সময়টা যদি এইখানেই থেমে থাকতো তাহলে আরো অনেক সময় ধরে সে এই অপরূপা সুন্দরী তরুণীকে দেখতে পারতো। নিবিড়ের বিয়ে করা রোগটা এইবার নীরের মনে গেঁথে বসলো।
ভালোবাসা হলো সাদা নরম তোলার মত আবেগ অনুভূতি দিয়ে মুড়ানো, ,ভাষায় প্রকাশ না করতে পারা স্পর্শকাতর এক তীব্র ও কঠিনতম অনুভূতির জন্ম। ভালোবাসার রঙে রাঙা হোক পৃথিবী। নীর সিমরানকে উদ্দেশ্য করে বিড়বিড় করে বলল…..
—” আমার ভালোবাসা দিয়ে তোমাকে করিব পূর্ণ, আমার ভালোবাসা দিয়ে তোমার সৌন্দর্যকে রাঙিয়ে তুলবো। তোমাকে ভালোবেসে করিনি তো ভুল তাই তো সারাজীবন বেসে যাবো ভালো। যতদিন থাকবে আমার নিঃশ্বাস ততদিন তোমাকে মন থেকে অনেক অনেক ভালোবেসে যাবো, সমু।”
সিমরান অনেকক্ষণ ধরে খেয়াল করছে কেউ একজন রাস্তায় দাঁড়িয়ে তাকে দেখছে। গাছের আড়ালে লুকিয়ে থাকায় লোকটির মুখ সে দেখতে পাচ্ছে না। হঠাৎ করেই সিমরানের আম্মু ভয়ার্ত কন্ঠে এসে বললেন…..
—” সিমু, আট নয় বছরের একটি বাচ্চা এসে জিজ্ঞাসা করছে এই বাড়িতে নাকি ওর ভাবী থাকে। আমি অনেক বার বলেছি এই বাড়িতে কোনো ভাবী নেই তবুও বাচ্চাটি শুনছে না। আমাকে ব্ল্যাক মেইল করে বলছে, যদি ওর ভাবীকে না ডাকি তাহলে নাকি এলাকা থেকে গুন্ডা ভাড়া করে আনবে। দেখ মা এইটুকু বয়সে কিসব বলছে। এখন এই ছেলেটিকে আমার ভীষন ভয় করছে প্লিজ নিচে আয়।”
মায়ের বিবরণ শোনে সিমরান বুঝলো এই বাচ্চা যে নিবিড় তাই চোখ দুটি বড় বড় করে বলল…..
—” ছিঃ আম্মু ছিঃ, শেষমেশ আট বছরের এক ছেলেকে তুমি ভয় পাচ্ছো এখন যদি বাচ্চা ছেলেটির বড় ভাই এসে বলে, উনার বউ এই বাড়িতে তখন তো তুমি হার্ট অ্যাটাক করে ফেলবে।”
—” বাজে না বকে তাড়াতাড়ি আয়। আমি এক বাটি নুডলস দিয়ে এসেছি গপাগপ খেয়ে যাচ্ছে মনে হচ্ছে নিজের শশুর বাড়িতে এসে খাচ্ছে।”
হাসলো সিমরান। তার এখন ভীষণ জোরে হাসি পাচ্ছে কিন্তু মায়ের সামনে হাসলে সন্দেহ করবে সেই জন্য মুচকি হেসে গাছের আড়ালে একবার তাকিয়ে ঠোঁট বাঁকা করে কামড় দিয়ে বলল….
—” চলো তাড়াতাড়ি, গিয়ে দেখবো এই ছেলে সব খেয়ে সাবাড় করে ফেলেছে।”
সিমরান চলে যেতেই নীরের হুস ফিরে আসলো। মন খারাপ নিয়ে নিবিড়কে উদ্দেশ্য করে বলল…..
—” দেখেছিস কি বজ্জাত মেয়ে আমাকে একা রেখে চলে গিয়েছে।”
পিছনে ফিরতেই দেখলো নিবিড় উধাও। আশ পাশটা ভালো করে লক্ষ্য করলো , নাহ নিবিড় কোথাও নেই। মনে মনে ভাবছে কেউ কিডন্যাপ করে ফেলল নাকি।
—” এই ছেলে যে জাতের বিচ্ছু ওকে কেউ কিডন্যাপ করতে পারবে না। মনে হচ্ছে নিজেই একা একা কিডন্যাপ হতে চলে গিয়েছে। ভাই রে ভাই একা একা কিডন্যাপ হবি ভালো কথা যাবার আগে তো আমাকে বলতে পারতি তাহলে কিডন্যাপারকে তোর ব্যাপারে সচেতন করতে পারতাম। আল্লাহ জানে বেচারা কিংবা বেচারি কিডন্যাপের কি অবস্থা।”
সিমরান ও তার মা ড্রয়িং রুমের কাছে আসতেই তাদের চোখ ছানাবড়া হয়ে গেলো কেননা নিবিড়……..
#এক_মুঠো_রঙ
#ফারজানা_আফরোজ
#পর্ব_৯
ডান পায়ের উপর বাম পা তুলে টিভির রিমোট ডান হাতে রেখে পা নাচিয়ে ‘ওগো জামা’ কার্টুন দেখছে নিবিড়। এক বাটি নুডলস সবটুকু শেষ করে নতুন জামাইয়ের মতো আচরণ করছে সে। বাম হাত পেটের কাছে রেখে টিভির দিকে তাকিয়ে বলল….
—” নেই নেই কোনো সম্মান নেই। দশটা না পাঁচটা না একটা মাত্র মেয়ের একটা মাত্র দেবর আমি। কই একটু যত্ন করবে, আদর আপ্যায়ন করবে, না উনি তা না করে মাত্র এক বাটি নুডলস দিয়ে চলে গিয়েছেন। যাবার আগে এইটুকুও বললেন না, বাবা আরো কিছু লাগলে ফ্রিজ বা রান্না ঘর থেকে খেয়ে নিও। যদি বলে যেতো তাহলে তো খেতে পারতাম তাই না? আমার কি লজ্জা করে না অনুমতি ছাড়া কিছু খেয়ে নিতে।”
সিঁড়ি নামছিলেন সিমরানের আম্মু ও সিমরান। নিবিড়ের কথা শোনে চোখ গুলো বড় বড় করে বললেন…..
—” মা তুই যা আমি রুমে যাচ্ছি। কি পাকা ছেলেরে বাবা।”
সিমরানের মা দৌঁড়ে পালালেন। সিমরান কিছুক্ষণ একা একা হেসে নিবিড়ের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। ভ্রু জোড়া নাচিয়ে ডান চোখে টিপ দিয়ে নিবিড় বলল…..
—” হিহিহিহি, ভাবী এসেছো?”
—” ‘ভাবী’? এই ছেলে শোনো আমি এখনও অবিবাহিত।”
—” আজ অবিবাহিত কিন্তু কে বলতে পারে আগামীকাল অবিবাহিত নামের অ বাদ পড়ে যেতে পারে।”
—” বাহ খুব সেয়ানা দেখছি কে শিখায় এইসব?”
—” আমার ভাইয়া।”
সিমরান ও নিবিড় আড্ডায় মেতে উঠলো। ছোট্ট ছেলেটি সহজেই সবাইকে আপন করতে পারে। দুষ্টু মিষ্টি কথার জালে সবাইকে আটকিয়ে রাখার অসীম ক্ষমতা নিয়ে জন্মেছে বলে সিমরানের ধারণা।
কলিং বেলের শব্দ পেয়ে সিমরান দরজা খুলে নওশীনকে দেখতে পেয়ে জড়িয়ে ধরে বলল….
—” তোকেই মিস করে ছিলাম। আমি জানতাম তুই আসবি।”
—-” তোর অসুস্থতার কথা শোনে আমি আসবো না তা কি করে হয় হুম? তুই আমার দশটা না পাঁচটা না একটা মাত্র কলিজা। তোর কিছু হলে তো আমার প্রাণ যায় যায় অবস্থা।
বন্ধুহীন জীবন হলে লবণ ছাড়া তরকারির মতো। বন্ধুত্ব নিয়ে মানুষের অনেক ধারণা বিশ্বাস রয়েছে । সবচেয়ে বেশি রয়েছে আবেগ । সহজ কথায় সহজ ভাষায় এর সংজ্ঞা দেওয়া সম্ভব নয় । কেন না বন্ধু হল মানুষের এক হৃদয়ের অনুভূতিমূলক সম্পর্ক । বিভিন্ন মনীষী বন্ধুত্ব বিষয়ে সুন্দর সুন্দর কথা বলে গেছেন । সেগুলি তাদের নিজস্ব অনুভূতির কথা । রক্ত দূরে চলে গেলেও খাঁটি বন্ধু কোনোদিন সরে যায় না ছায়ার মত আশে পাশে থাকে। ‘উইড্রো উইলসন’ বলেছেন ” বন্ধুত্ব একমাত্র সিমেন্ট যা সবসময় পৃথিবীকে একত্র রাখতে পারবে। ” হাজার ঝড়, তুফানে ভেঙ্গে পড়ার আশংকা কম।
নওশীন সিমরানের পিছনে নিবিড়কে দেখে মুখে কিউট মার্কা হাসি দিয়ে বলল…..
—” ওয়াও কি সুইট পুতুল একটা। ইসস গাল দুটো তো একদম রসগোল্লা ইচ্ছা করছে খেয়ে ফেলি। কে রে এই রসগোল্লা।”
নিবিড়ের গাল দুটো টেনে কিস দিয়ে সিমরানকে উদ্দেশ্য করে বলল নওশীন। সিমরান নিবিড়ের দিকে তাকিয়ে দেখলে নিবিড় রেগে আগুন হয়ে আছে। এক্ষুনি মনে হয় নওশীনের হাতে কামড় দিয়ে ফেলবে। নিবিড়কে শান্ত রাখার জন্য দাঁত বের করে হাসতে লাগলো সিমরান। নওশীন ও নিবিড় সিমরানের হাসির অর্থ না বুঝে তাকিয়ে রইলো। সিমরান হাসতে হাসতে বলল….
—” ও আমার দূর সম্পর্কের এক আত্মীয়। আয় পরিচয় করিয়ে দেই।”
সিমরান পরিচয় করানোর পর রাগী কণ্ঠে কথা বলল নিবিড়। হঠাৎ করেই নওশীনের ডান হাত কামড় দিয়ে বলল….
—” আমার গাল দুটো রসগোল্লা তাই না? এখন এই রসগোল্লার একটু কামড় তো খেতেই পারো মিস দুষ্টু আপু। আমার গাল দুটো শুধু আমার ভাবী আর বউয়ের জন্য বানানো তোমার জন্য না ওকে।”
নওশীন অবাক হওয়ার চরম পর্যায় চলে গেল। সিমরান বেক্কল মার্কা হাসি দিয়ে বলল….
—” তোকে সব পরে বলছি এখন কিছু বলিস না।”
নওশীন আর কথা বাড়ালো না। বেশ কিছুক্ষণ গল্প করে সে চলে গেলো। সিমরানের মা’র সাথেও নিবিড়ের সম্পর্ক বেশ জমে গিয়েছে। দেখে মনে হচ্ছে তারা কত বছর ধরে একে অন্যকে চিনে জানে।
____________________
নীর এইদিকে এলাকার সব জায়গায় নিবিড়কে খুঁজতে ব্যাস্ত। নাহ কোথাও সে নিবিড়কে খুঁজে পাচ্ছে না, চিন্তায় তার পুরো মাথা হ্যাং হয়ে গেছে। বাসায় এ কথা বললে সবাই চিন্তা করবে সেই জন্য বাসায় না জানিয়ে পুলিশকে ইনফর্ম করলো। তার চোখ দুটো রক্ত লাল হয়ে আছে, দেখে মনে হচ্ছে এক্ষুনি তার চোখ বেয়ে লাল পানি বের হবে। বার বার ঘড়ির দিকে তাকাতে লাগলো। পুরো শরীর কাঁপছে তার। ভয়ে শিউরে উঠছে গায়ের লোম গুলো।
আজকের সন্ধ্যাটা নীরের জীবনে অশুভ সন্ধ্যা নামে পরিচিত হলো। আজকের দিনটা তার জীবনে খারাপ একটি দিন। হঠাৎ করেই তার মাথায় সিমরানের নামটি মনে হলো। নিবিড়ের চিন্তায় সে সিমরানের কথা প্রায় ভুলেই গিয়েছিল। তার মন একটা কথা বার বার বলছে, জীবনের সব সন্ধ্যাই অন্ধকারাচ্ছন্ন নয়, তার মধ্যে শুভ সন্ধ্যারও পদার্পণ ঘটে। সিমরানের ফোনে কল দিল কিন্তু দুর্ভাগ্য বশতঃ ফোন বন্ধ। মনে মনে বকতে লাগলো সিমরানকে হয়তো এখন কাছে ফেলে মেরেও ফেলত। রাগটা কন্ট্রোল করে আবারো ফোন দিল কিন্তু আগের মতই ফোন অফ। সিমরানের বাসায় যেতে সময় লাগবে দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা খুব জোড়ে নিঃশ্বাস ছেড়ে বাইক নিয়ে রওনা হলো সিমরানের বাসার উদ্দেশ্য……..
এইদিকে সিমরানের ফোনে চার্জ নেই। নিবিড় গেমস খেলে সব চার্জ শেষ করে ফেলেছে। সিমরানের মনে নেই সে যে নিবিড়ের ব্যাপারে নীরকে কিছু বলেনি। আরামসে সে নিবিড়ের সাথে খেলতে ব্যাস্ত। আজ যেন সিমরান আকাশের চাঁদ হাতে পেয়েছে। ছোট্ট নিবিড়ের সাথে সেও ছোট বাচ্চা হয়ে গিয়েছে। মনের ভিতর জেগে উঠেছে রংধনু। রংধনু যেমন সাত রঙা তেমনি সিমরানের মনে আজ রঙের খেলা ধারণ করেছে। নিবিড় সিমরানের কোলে মাথা রেখে শান্ত বাচ্চাদের মত ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে তার দু চোখে যেন অদ্ভুদ এক মায়া সেই মায়ায় বার বার জড়িয়ে যাচ্ছে সিমরান। কি আছে এই ছেলেটির মধ্যে যা তাকে বার বার টানে, খুব আপন মনে হয় তার কাছে।
রাত দশটা, নিবিড় ঘুমে আচ্ছন্ন। সিমরানকে জড়িয়ে ধরে সে ঘুমাচ্ছে। তারও বেশ ঘুম পাচ্ছে। সেও ঘুমিয়ে পড়েছে ছোট্ট নিবিড়কে জড়িয়ে ধরে……
কলিং বেলের শব্দ শোনে সিমরানের মা দরজা খুলে দেখলো তারেই সামনে দাঁড়িয়ে আছে একজন সুদর্শন যুবক। যুবকটির মুখে চিন্তার ভাঁজ, চুলগুলো এলোমেলো হয়ে আছে, চোখ দুটি লাল বর্ণ ধারণ করেছে।
—” কাকে চাই?”
—” সরি আন্টি রাত করে বিরক্ত করার জন্য। আমার ছোট ভাই নিবিড় কি এইখানে আছে?”
নিবিড়ের নাম শোনে বাসার ভিতরে প্রবেশ করতে বলল নীরকে। সোফায় বসতে বলে এক গ্লাস ঠাণ্ডা পানি আনতে গেলেন উনি…..
—” চিন্তা করো না তোমার ভাই আমাদের বাসায় আছে। তোমাকে আমি ঠাণ্ডা পানি দিচ্ছি খেয়ে পরে ভাইয়ের কাছে যাবে।”
মায়েদের কথায় যেনো মধু মিশিয়ে থাকে। নীর কিছু না বলে সেই মিষ্টি কণ্ঠের কথা মনোযোগ সহকারে শুনলো। মাথা এদিক ওদিক হেলিয়ে হ্যাঁ বোধক অর্থ বুঝালো।
দুই ঘণ্টার রাস্তা চার ঘণ্টা লেগেছে নীরের। দুই বার বাইক নষ্ট হয়ে যাওয়া, রাস্তায় প্রচুর জ্যাম সবমিলিয়ে সে আজ ভীষণ বিরক্ত। সিমরানের মায়ের দেওয়া ঠাণ্ডা পানিটুকু এক নিমিষেই শেষ করে বলল….
—” আন্টি নিবিড়?”
—” দু তালার বা দিকের দ্বিতীয় রুমে আছে। তুমি যাও আমি আসছি।”
নীর আর দাঁড়ালো না দ্রুত পা চালিয়ে সে নিবিড়ের উদ্দেশ্য হাঁটা দিল। রুমের দরজা খোলা থাকায় ভিতরে প্রবেশ করে দেখলো, সিমরান ও নিবিড় একে অন্যকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে আছে। এই দৃশ্যটা সে ফোনে বন্ধী করতে চায়। দ্রুত গতিতে ফোন বের করে ছবি তুলে আবারো ফোন পকেটে রেখে দিল। এরেই মাঝে আগমন ঘটে সিমরানের মায়ের।
—” দেখো কেমন বাচ্চাদের ঘুমাচ্ছে দুইজন বাচ্চা। আমি তো নিবিড়কে ভেবেছিলাম রেখেই দিবো। কি মিষ্টি ছেলে, যেমন তার কথা তেমন তার বুদ্ধি।”
হাসলো নীর। দশ মিনিট ধরে কথা বলছে নীর ও সিমরানের মা। কথার শব্দে ঘুম ভেংগে যায় সিমরানের। সামনে নীরকে দেখে একবার নিজের দিকে তাকিয়ে কাচুমাচু হয়ে বসে পরে কেননা তার গায়ের ওড়নাটা নিবিড়ের হাত ও পেট পেছানো রয়েছে। সিমরানের মা আবারো কলিং বেলের শব্দ শোনে দৌঁড়ে যেতে লাগলেন। নীরকে উদ্দেশ্য করে বললেন…..
—” সিমুর আব্বু এসেছো, দাঁড়াও ওর সাথে পরিচয় করিয়ে দিব তোমার।”
চলে গেলেন উনি। নীর এইবার সিমরানের দিকে তাকালো। তার চোখ দুটো এখনও রাগে আগুন হয়ে আছে। হঠাৎ তার খেয়াল হলো সিমরান খুবই অস্বস্তিতে আছে কারণটা বুঝতে পেরে নিবিড়কে কোলে নিয়ে নিল। অন্য দিকে তাকিয়ে বলল…..
—” সমস্যা নেই। আমি এতটাও বাজে ছেলে নই ওকে।”
সিমরান ওরনা নিয়ে কাঁপা কাঁপা গলায় বলল…..
—” আপনি এত রাতে এইখানে?”
—” নাটক দেখানোর জন্য আসে নি? ফোন রিসিভ করেছো তুমি?”
রাগী ও ধমকের সুরে বলল কথাটা। সিমরান ভয়ে চুপসে গেল। নীর রাগ দেখিয়ে আবার বলল……
—” আমি তো তোমার বিরক্তির কারণ তাই তো? আজ থেকে আমি বা আমার ভাই তোমার আশে পাশে আর কোনোদিন আসবো না। আমাকে কষ্ট দেওয়ার জন্যই কি আমাকে জানাও নি যে , আমার ভাই এইখানে?”
—” আসলে আমার মনে ছিল না।”
—” বাহ অজুহাত ভালো ছিল কিন্তু ভীষণ পুরানো,নতুন কিছু আবিস্কার করতে পারলে না।”
—” সত্যি বলছি।”
—” আমি নিবিড়কে নিয়ে যাচ্ছি। যাবার পথে আন্টি আংকেলের সাথে দেখা করে যাবো কিন্তু তোমার সাথে আমাদের আর ইচ্ছাকৃত ভাবে কোনোদিন দেখা হবে না। ভালো থেকো গুড বায়।”
চলবে……
বানান ভুল ক্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। আমার ফোনের কি হয়েছিল জানি না। গল্প গতকাল লিখেছিলাম রাতে পোষ্ট করতে গিয়ে দেখছি পারছি না। Fb যে আসলেই সমস্যা হচ্ছে। বিকালে ফোন ফরম্যাট করার পর সব ডিলেট হয়ে যায়। নতুন করে লিখেছি। মনটা ভেঙ্গে গিয়েছে। কয়েকটা দিন গল্প একদিন পর পর দিবো।
চলবে……
বানান ভুল ক্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। আজ কি লিখতে কি লিখেছি জানি না। মেয়েলি সমস্যার কিছু টিপস শেয়ার করার চেষ্টা করেছি। ধন্যবাদ।