হৃদয়_জুড়ে_শুধু_তুমি পর্ব ১১+১২

#হৃদয়_জুড়ে_শুধু_তুমি
#পর্ব_১১
#জান্নাতুল_বিথী

বেশ কিছুদিন পর..

আমি আর আমার ফ্রেন্ড ইমা ভার্সিটি থেকে আসি।আমার সাথেই ইমার আমাদের বাড়ি আসে।আমি ওকে জোর করে নিয়ে আসি।এর মধ্যে আমার পরীক্ষা শেষ।আমাকে আর ওই অচেনা নাম্বার থেকে মেসেজ ও করে নাই কেউ।শেষ মেসেজ করেছিলো আমার পরীক্ষার আগের দিন।শাসনের সুরে যেখানে বলা ছিলো..

“যেভাবে দুষ্টুমি শুরু করছো পরীক্ষায় যদি খারাপ রেজাল্ট করো তাহলে কিন্তু খরচ আছে তোমার।এখন থেকে পড়ো দিয়ুপাখি।.. ”

আমার ভালো লেগেছিলো মেসেজটা।আমাকে শাসন করার মতো তো অন্ত্যত আছে।মাঝে মাঝে ভেবে হাসি।কিন্তু সেদিন মেসেজটা আমার মনে সন্দেহ সৃষ্টি করেছিলো একজনের প্রতি।কিন্তু এই নিয়ে আর ভাবা হয় নাই।যাই হোক আমি আর ইমা বাড়ি এসে দেখি একটা মেয়ে মার সাথে বসে গল্প করছে।পেছন দিকে ফেরা কারনে আমি ঠিক চিনতে পারি নাই।তাই কৌতুহলবশত আমি এগিয়ে যাই ওর দিকে।..

“আরে দিয়া আয় মা তোর জন্যই অপেক্ষা করতেছি।..”(মা)

মাঢ়যের কথারর শুনে মেয়েটা আমার দিকে ফিরে তাকায়।আমি সিমিকে দেখে অবাক হয়ে যাই।সিমি এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে..

“কেমন আছো আপু।আমাদের বাড়ি থেকে আসার পর থেকে তো আমাকে একেবারে ভুলেই গেলে।.”(সিমি)

“আরেহ তোমাকে ভুলিবো কি করে সেটা বলোতো।তা বড় লোক্স মানুুষ আমাদের মতো গরীবালয়ে কি করছেন.???”(মুচকি হেসে বলি আমি)

আমার কথা শুনে সিমি আমার দিকে রাগী লুক নিয়ে তাকায়।আমি ফিক করে হেসে দেই।..

“আমাকে যেহেতু বড় লোক বলছো তো আর কি এখন আমি তোমাথে নিয়ে যাবো।..”

“কিন্তু কোথায়.???”(ভ্রু কুচকে)

“সারা জীবনের জন্য তোমাকে আমাদের বাড়ি নিয়ে যাবো।..”(চোখ মেরে)

“দুর কি যে বলো না তুমি।..”(আমি)

“আচ্ছা যাও গিয়ে এখন রেডি হয়ে আসো.???(সিমি)

আমি অবাক হয়ে ওর দিকে তাকাই।আমার মনের কথা ও বুঝতে পেরে হেসে দেয়।আর আমার কানের কাছে এসে বলে..

“৩ দিন পর আমার বিয়ে।যাবে না আমাদের বাড়িতে..?”(সিমি)

সিমির কথা শুনে আমি অবাক হয়ে যাই।এতো তাড়াতাড়ি বিয়ে হবে ভাবতেও পারি নাই আমি।..

“ওয়াও কনগ্রাচুলেসার। তো শিহাব ভাইয়ার এতো তাড়া কিসের শুনি।..”(আমি)

আমার কথা শুনে সিমি লজ্জা পেয়ে যা্য়।একবার মার দিকে তাকায়।আমার এতক্ষন খেয়ালই ছিলো না যে আমরা ২ জন ব্যতীত এখানে আরও দুজন মানুুষ আছে।

“কি হলো আপু চলো।..??”(সিমি আমাকে ধাক্কা দিয়ে বলে)

ওর কথা শুনে আমি মার দিকে তাকাই।
“আরে তুমি আন্টির দিকে তাকাচ্ছো কেনো।আন্টি আংকেল রাজি।আর তাইতো আমি তোমাকে নিতে এসেছি।এখন তুমি চুপচাপ রেডি হয়ে যাও।..”(সিমি)
,
সিমিদের বাড়িতে এসে দাড়াতেই আন্টি ছুটে আসে।অনেক মিস করেছিলাম তাকে।তাই আমিও এগিয়ে যাই।অনেক্ষন তাদের সাথে কথা বলে আমি ইমা আর সিমি রুমে চলে আসি।কিন্তু এতোটা সময়েও একজন মানুষকে দেখি নাই।কেনো জানি অনেক খারাপ লাগে। আমি আর ইমা সারা বাগান জুড়ে হাটতেছি।ইমা আমার সাথে থাকার কারনে সিমি ওকেও নিয়ে এসেছে।বলছে আমার বোরিং লাগবে না তাতে।এমনিও এই বাড়িতে আসলে আমার একটুও বোরিং লাগে না।সিমি ঘুমাইতেছে আর তাই আমি আর ইমা ফ্রেস হয়েই বাগানে হাটতে চলে আসি। বিয়ে যেহেতু এখনো ৩ দিন পর তাই এখনো বাড়িতে কেউ এসে পৌছায় নাই।শুধু অয়নের চাচ্ছু কাজিনরা আসছে।আমি আর ইমা কথা বলতে ব্যস্ত এর ফাকে একটা ছেলে আমাদের সামনে এসে দাড়ায়।প্রথমে আমি কিছুটা ঘাবড়ে যাই কিন্তু পরক্ষনেই নিজেকে সামলে নেই।..

“হাই আই এম রিহান।..”(রিহান)

ছেলেটার কথা শুনে আমি ভ্রু কুচকে তাকাই।..

“তো আপনার নাম জেনে আমরা কি করবো।..”(ভ্রু কুচকে)

আমার কথা শুনে ছেলেটা কিছুটা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায়।..

“ইয়ে মানে আসলে তোমাদের কে এই বাড়িতে দেখছি কিন্তু চিনি না তাই একটু পরিচিত হতে আসলাম।..”(রিহান)

“ইয়া ইয়া…..”(আমি)

“আচ্ছা তোমার নাম কি..????”(রিহান)

“এই তোর নাম কিরে.???”(ইমার দিকে তাকিয়ে)

আমার কথা শুনে ইমা আমার দিকে তাকিয়ে বলে..

“ওই তুই আমার নামও ভুলে গেলি।আর উনি তোর নাম জিজ্ঞেস করছে আমার না।বুঝলি.???”(ইমা)

আমরা দুজন ইচ্ছে করেই ঝগড়া শুরু করে দেই।ছেলেটা বিরক্ত হয়ে বলে..

“ওকে ওকে রিল্যাক্স।আচ্ছা এটা বলেন যে আপনার বাড়ি কোথায়।.???”(রিহান)

“কেনো আকাশের নিচে।..”(আমি ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলি।)

আমার কথা শুনে ছেলেটা আরও বেশি ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায়।ইমা হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাচ্ছে।আমারও হাসা আসছে কিন্তু অনেক কষ্টে বন্ধ করে রাখছি।যেকোনো সময় পেট পুটো হয়ে বের হয়ে যেতে পারে।

“আসলে সরি আপু আপনাদের বিরক্ত করার জন্য.”(রিহান)

“উপপপপ কি ডেন্জারাস মেয়েরে বাবা।”(রিহান মনে মনে বলে)

“ইটস ওকে আমার মন আবার অনেক বড় আমি সবাইকে ক্ষমা করে দেই।..”(আমি)

কথাটা বলতেই ছেলেটা সাথে সাথে চলে যায়।আর আমি ইচ্ছে মতো হাসতে থাকি।হাসার মাঝে আমার মোবাইলে মেসেজের টুংটাং শব্দ আসে। তাকাতেই দেখি ‘অচেনা পাগল’ দিয়ে সেভ করা।আমার মুখে হাসি ফুটে উঠে।কারন অনেকদিন পর এই অচেনা মানুষটার মেসেজ পেলাম।তাকিয়ে দেখি ওইখানে লেখা আছে…

“ছেলেদের সাথে এতো কথা কিসের তোমার সেটাই তো বুঝি না।আর কখনো যদি দেখি যে কোনো ছেলের সাথে দাড়িয়ে কথা বলছো তো খবর আছে তোমার..”

থ্রেট দিয়ে মেসেজ দেয় আমাকে।ইস আইছে।আমার মুখে হাসি ফুটে উঠে।কেউ তো একজন আছে যে আমার বিভিন্ন কাজে জেলাস ফিল করে।ভাবতেই হাসি ফুটে উঠে আমার মুখে।
#হৃদয়_জুড়ে_শুধু_তুমি
#পর্ব_১২
#জান্নাতুল_বিথী

“আচ্ছা দিয়ুপাখি তোমার জীবন সঙ্গী হিসেবে কেমন ছেলে পছন্দ।.????”(অয়ন)

কথাটা শুনে আমি অয়নের দিকে আড় চোখে তাকাই।তাকিয়ে দেখি অয়ন আধ ঘন্টা আগে যেমন ছিলো এখন ও ঠিক ওই ভাবে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে।আজ সারাদিন আমি অয়নদের বাড়িতে অথচ অয়নকে দেখছি রাত ১০ টায়।তাও আবার কোথা থেকে যেনো এসে আমার হাত ধরে টেনে ছাদে নিয়ে আসে।এসে নিজের পাশে আমাবে বসতে বলে নিজেই হাত ধরে বসিয়ে দেয়।

তারপর আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকে।আজ আকাশের তারাদের খেলা।চারদিকে তারারা জ্বল জ্বল করছে। চারদিকের পরিবেশ আমি মুগ্ধ নয়নে দেখছি।শহরের কোলাহল তো আছেই।কিন্তু তার মাঝেও এমন একটা পরিবেশ দেখে আমি মুগ্ধ না হয়ে পারি নাই।অয়নের গত আধ ঘন্টা ধরে চুপ করে আকাশের দিকে তাকিয়ে ছিলো।এতক্ষনে তার মুখে একটা কথা শুনলাম মাত্র।আমি অয়নের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলি..

“আমি আমার জীবন সঙ্গী হিসেবে এমন একজনকে চাই যে আমাকে অনেক ভালোবাসবে।কখনো চোখে হারাতে দিবে না।সব সময় আমার খেয়াল রাখবে।তার থেকে কেয়ার পাওয়ার জন্য প্রয়োজনে আমি কেয়ারলেস হতেও রাজি।সে প্রতিদিন না হলেও সময় পেলেই আমাকে নিয়ে ঘুরতে যাবে।আমার ছোট ছোট আবদার গুলো সব সময় হাসি মুখে পূরন করবে।

আমি ভুল করলে আমাকে শাসন করবে ঠিকই কিন্তু কখনোই ছেড়ে যাবে না।যে আমার উপর রাগ করলেও আড়ালে আমার খোজ নিবে যত্ন নিবে।মুখে না বললেও চলবে যে ভালোবাসি প্রিয় কিন্তু কাজে তা প্রকাশ করতে হবে।যে মানুষটা শতকিছু হয়ে গেলেও আমার হাতের বাধন ছাড়বে না।আর বলবো..????”(আমি)

অয়ন মুগ্ধ চোখে দিয়ার দিকে তাকিয়ে আছে।ও ভাবতেও পারে নাই ওর মনে এমন কিছু আছে।অয়ন মুচকি হেসে বলে..

“না থাক আর বলতে হবে না।যতোটুকু বলছো তাতেই এনাফ।আচ্ছা এটা বলো তুমি কি করতে পছন্দ করো…”(অয়ন)

“Gardening…”(আমি)

“সত্যিই.?? “(অয়ন অবাক চাহুনিতে বলে)

“হুমম সত্যি।জানেন আমার না অনেক ইচ্ছা আমার অনেক বড় একটা বাগান থাকবে যেখানে সব ধরনের ফুল থাকবে।চারদিকে পাখিদের আনাগোনা। আর সেখানে প্রিয় মানুষটির পাশে বসে তার কাধে মাথা রেখে চাঁদনী রাতে দুজনে বসে অনেককক গল্প করবো।মনের কথা বলবো।কিন্তু আমার এই ইচ্ছে টা হয়তো কখনোই পূরন হবে না।..”(আমি)

অয়ন কিছু বলতে যাবে তার আগেই সিমি এসে খেতে ডেকে নিয়ে যায়।

আমি আর ইমা শুয়ে শুয়ে গল্প করতেছি।সিমি শিহাব ভাইয়ার সাথে চেটিং করতেছে।এটা নিয়ে ওকে কিছুটা জ্বলাতন করেছিলাম।কিন্তু সিমি আর কিছুই বলে নাই।..

“জানচ দিয়ু আমি না অয়ন চৌধুরির উপর ক্রাশ খাইছি।..”(ইমা)

ইমার কথা শুনে আমি খানিকটা রেগে যাই।..

“ওই বজ্জাত মাইয়া একদম এই কথা বলবি না।”

ইমা আমার দিকে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে বলে..

“তোর এতো জ্বলে কেনো.???”(ইমা)

ইমার কথা শুনে আমি ভ্যাবাচেকা খেয়ে যাই তারপর আমতা আমতা করে বলতে থাকি..

“ই-য়ে তুই জানচ না ক্রাশ মানেই বাশ।ক্রাশ খাইলেই বাশ খেতে হয়।আর আমি তো চাইনা আমার বন্ধু এই বয়সে বাশ খেয়ে ব্যাকা হয়ে যাক।”(আমি)

আমার কথা শুনে ইমা হেসে দেয়।..

“দোস্ত অন্য কিছুর গন্ধ পাইতাছি কিন্তু।..”(ইমা)

“তোর তো এমনই মনে হবে।যা সর কথা বলবি না একদম আমার সাথে।..”(আমি)

হঠাৎ আমার ফোনে মেসেজের টুংটাং শব্দ হয়। স্কিনে লেখা ‘অচেনা পাগল’ মেসেজটায় যা লেখা

‘Diyupakhi ato rat obdi jage thakle sorir kharap korbe to.jao gumao pakhi.noyto kopale dhukko ase kintu.’

আরেহ আবারও থ্রেট।এবারতো আমার ইচ্ছে করছে ওই অচেনা পাগলকে ইচ্ছে মতো দোলাই দিতে।কিন্তু কে এই অচেনা পাগল।ইমা কে বলতেই ও বলছে অয়ন।আমারও অয়নকে সন্দেহ হয়।কারন অয়নই শুধু আমাকে দিয়ুপাখি বলে ডাকে।হঠাৎ আমার মাথায় একটা বুদ্ধি আসে।কিভাবে এই অচেনা পাগলকে ধরবো তার উপায় হিসেবে।ভাবতেই মুখে ডেবিল মার্কা হাসি ফুটে উঠে।

(বাবারে বাবা দিয়াও দেখছি ডেকিল মার্কা হাসি দিতে জানে:লেখনিতে লেখিকা আপা)

#চলবে_কি…..?????

[ হাত ব্যাথ্যা হয়ে গেছে আর লিখতে পারবো না।এবার গঠন মূলক মন্তব্য না করলে সবাইকে কিডন্যাপ করে নিয়ে আসবো।😒😒😒]
#চলবে_কি..?????

[ আমি আজ অনেক ব্যস্ত ছিলাম ভাবছি একবার গল্প দেবো না।কিন্তু তারপরও আপনাদের জন্য দিলাম।তাই বলছি বড় বড় করে একটু কমেন্ট করেন.😏😏]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here