প্রিয়তম_প্রাক্তন পর্ব শেষ

গল্পের নাম: প্রিয়তম প্রাক্তন
▪️শেষ পর্ব
লেখনীতে: ইশু মনি

পরেরদিন অফিস শেষে নিউমার্কেটে গিয়েছিলো অদিতি, বৃহস্পতিবার বাড়ি যাবে তাই বাবার জন্য কিছু কিনতে। কিন্তু যা দেখলো তাতে অস্থিরতা যেন আরও দ্বিগুণ হয়ে গেলো।

হঠাৎ আনাফকে দেখলো সাথে একটা মেয়ে যাকে অদিতি চিনে না। এটা দেখে অদিতির অস্থিরতা যেনো আরও বেড়ে গেলো, আর কিছুতেই মন বসাতে না পেরে চলে আসলো। বাসায় এসে একবার ভাবলো ফোন দিয়ে জিজ্ঞেস করবে মেয়েটা কে, পরক্ষনেই নিজেকে সামলে নিলো কেনো সে এমন করছে? কোন সম্পর্কের অধিকারে? আনাফ যদি বলে বসে, “তুমি কে এসব জানার? তখন। আর হুট করে কেন মানুষের ব্যক্তিগত জীবন ঘাটতে যাবে। এখন তো ওর আর আনাফের জীবন এক নয়, সব আলাদা। নিজের মনকে সান্ত্বনা দিতে নিজেকেই আনমনে বকতে লাগলো, কি করছি আমি এগুলো, ও যার সাথে খুশি ঘুরে বেড়াক আমার কি তাতে? আমি কে হই ওর? প্রাক্তন? কান্না পাচ্ছে বড্ড এ যন্ত্রণা সহ্য করা খুব কঠিন। ভালোবাসার মানুষের সাথে অন্য কাউকে কখনো সহ্য করা সম্ভব না। আজ আমি এতো কষ্ট পাচ্ছি, সেদিন তাহলে আনাফ? কিন্তু ও তো নিজেই অপমান করে আমাকে তাড়িয়ে দিয়েছিলো।

হঠাৎ আয়নার দিকে চোখ গেলো, এই কি সেই আমি? কি বিরাট পরিবর্তন এই কয় রাতে না ঘুমিয়ে, না খেয়ে। নিস্তেজ হয়ে গেছি আমি পুরো পৃথিবীতে যেন আমি একা। এই একা থাকার যে কি কষ্ট। বারবার ফোনের দিকে চোখ যাচ্ছে আনাফ কি ফোন দিবে না মেসেজ? কিন্তু কেনো দিবে? ডায়েরি টা খুলে লিখতে বসলাম কিন্তু কি লিখবো তা হারিয়ে ফেলেছি।

জানালার দিয়ে বাহিরে তাকিয়ে দেখলো ল্যাম্পপোস্টের আলোয় একটা কুকুর ঘুমাচ্ছে কি সুন্দর চিন্তাহীন ভঙ্গিতে আরাম করে৷ এ জীবনে সব কষ্ট যেন আমার একার, কলম টা নিয়ে আনমনে লিখে গেলো,

আমি খুব তুমিহীনতায় ভুগছি
তুমি ভাবছো আমি ভালো আছি
কিন্তু না!
আমি আসলে ভালো নেই
একটু পর, পর ইনবক্স চেক করছি
পাঠিয়েছো কি কোন মেসেজ?
কত অস্থির হয়ে অপেক্ষা করছি
তুমি তা জানো না।
বারবার মনে হচ্ছে এই বুঝি
তুমি ডাকছো
ফোনের স্ক্রিনে আলো জ্বলে উঠলেই
বুকের ভেতরটা মিথ্যা আশায় ছটফট করে উঠছে
মনে হচ্ছে এই বুঝি তোমার নাম্বার থেকে কল এলো।
কিন্তু না, তুমি কোন ফোন বা মেসেজ দেও নি।
আচ্ছা, ভালোবাসার মানুষের তো
মানুষের অধিকার থাকে তাই না!
কিন্তু যদি প্রাক্তন হয় তাহলে?
তাহলে কি অধিকার থাকে না?
উত্তরগুলো নেই আমার কাছে,
কিন্তু অনেক প্রশ্ন আছে অনেক।
কোন একদিন সময় করে আসিও তো প্রিয়
দুঃখিত প্রিয়তম প্রাক্তন!

প্রাক্তন হলেই কি সে প্রতারক, মিথ্যুক তেমন না। আমিতো ভালোবাসি আমার ভালোবাসা এতো ঠুনকো না তোমার এই সামান্য অবহেলায় তা শেষ হয়ে যাবে। আর এই জন্য ই বোধহয় তুমি আমার প্রিয়তম প্রাক্তন।

ফোনে মৃদু ভলিউমে গান বাজছে,

তুমি যাকে ভালোবাসো
স্নানের ঘরে বাষ্পে ভাসো
তার জীবনে ঝড়
তুমি যাকে ভালোবাসো
স্নানের ঘরে বাষ্পে ভাসো
তার জীবনে ঝড়
তোমার কথার শব্দ দূষণ
তোমার গলার স্বর
আমার দরজায় খিল দিয়েছি
আমার দারুণ জ্বর
তুমি অন্য কারোর সঙ্গে বেঁধো ঘর
তুমি অন্য কারোর সঙ্গে বেঁধো ঘর
তোমার নৌকোর মুখোমুখি আমার সৈন্যদল
বাঁচার লড়াই
আমার মন্ত্রী খোয়া গেছে একটা চালের ভুল
কোথায় দাঁড়াই
কথার ওপর কেবল কথা সিলিং ছুঁতে চায়
নিজের মুখের আয়না আদল লাগছে অসহায়
তুমি অন্য কারোর ছন্দে বেঁধো গান
তুমি অন্য কারোর ছন্দে বেঁধো গান

চোখে ঘুম নেই, নির্ঘুম রাত একাকী নিস্তব্ধ চারদিক। চোখ বন্ধ করলে সব যেনো ধুয়াশা। একটা মানুষ যাকে নিয়ে এত স্বপ্ন ছিলো, এত আশা সব যেনো এক নিমিষেই ওই রাতে শেষ হয়ে গিয়েছিলো। ভালোবাসা মানুষকে নিজের করে পাওয়ার যে তৃপ্তি, যে আনন্দ সেটা সেই বুঝে যে পায়। আর কি পেলাম!

কখন ঘুমায় গেছি জানি না, একটা খারাপ স্বপ্নে ঘুম ভেঙে গেছে। জানালা খুলে দিলাম মধ্যেরাতের হিমশীতল হাওয়া ঘরে ঢুকছে ঠান্ডা লাগছে হালকা তবে খারাপ লাগছে না। আনাফ কে আর কোন মেসেজ দেই নি, এখনও একটিভ। কি মনে করে আমিই নক দিলাম আনাফ বললো আমি আজ না নক দিলেও ও নিজে থেকেই দিতো শুনে কেমন জানি ভালো লাগলো তবে স্বপ্নটা দেখার পর থেকেই কেমন মনের ভেতর খুচখুচ করছে। আনাফ জানালো ওর বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে, মেয়ে মাশাআল্লাহ পছন্দ হয়েছে আগামী শুক্রবার বিয়ে আমি যেন স্বামী, সন্তানসহ বিয়েতে যাই। আমার মনে হলো কেউ হাজার মণ ওজনের পাথর আমার উপর চাপিয়ে দিলো আমি দমবন্ধ হয়ে মারা যাবো এখুনি। শুভকামনা জানিয়ে লগ আউট করে রিমুভ দিলাম আইডি। আমি চাইলে হয়তো জানাতে পারতাম আনাফকে কিন্তু না। আমি কেন তা করব ও নতুনভাবে ওর জীবন শুরু করুক। কিন্তু আমার মনে যে ঝড় চলছে তা কি বন্ধ হবে? মনের ভেতর যে ক্ষীণ আশাটুকু ছিলো তা যে মুছে গেলো। বুকের ভেতর একবার ক্ষত হলে তা বুঝি রক্তক্ষরণ না করে থামে না। একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেললাম।

কি অদ্ভুত! একটা মানুষ যাকে আমি ভালোবাসি। আমার অস্তিত্ব জুড়ে যার বসবাস, সেই মানুষটা যার কথা মনে হলে আমি ভরসা পাই কারণ তার মাধ্যমে আমি পূর্ণতা পাই আমার অস্তিত্বে। সেই মানুষটাকে আর কখনো আমি আমার করে পাবো না। আর কখনো চাইলেই কোন অধিকার নিয়ে তার সামনে দাঁড়াতে পারব না। আমার হাত-পা কাঁপছে, তাকে হারানোর যন্ত্রণায় আমি ছটফট করছি। ডায়েরির পাতায় কাঁপা কাঁপা হাতে লিখলাম,

জানো,
এই শহরে শরীরের চিকিৎসা হয় কিন্তু আত্মার চিকিৎসা হয় না। হলে বোধহয় এই আমার মতো হাজারও আত্মা বেঁচে যেতো। ওগো তুমি যে আমার প্রাক্তন ই হয়ে গেলে কিন্তু কি জানো তবুও আমার কাছে প্রিয় ই রয়ে গেলো। তোমার নামটা আমার মনে সারাজীবন প্রিয়তম প্রাক্তন হয়ে ই থেকে যাবে। আমাদের গল্পটা অসমাপ্ত ই রয়ে গেলো। তবে এই শহরের প্রতিটা দেয়াল সাক্ষী রয়ে গেলো আমাদের ভালোবাসার। ভালো থেকো প্রিয়তম প্রাক্তন!

পৃষ্ঠাটা ছিঁড়ে জানালা দিয়ে ফেলে দিলাম। হয়তো উড়ে চলে যাবে, নষ্ট হয়ে যাবে। কেউ হয়তো হাতে পেয়ে পড়বে চিঠিটা, কেউবা গল্প লিখবে। কেউবা তা ডাস্টবিনে ফেলে দিবে অথবা চলতি পথে পায়ের নিচে পড়ে রোদ, বৃষ্টিতে ভিজে নষ্ট হয়ে যাবে। তাতে কি! না জানি এমন কত শত ভালোবাসা ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে এই ইট পাথরের শহরে!

(সমাপ্ত)

★আশা করি শেষ পর্বে সবাই গঠনমূলক মন্তব্য করবেন। ধন্যবাদ ❤️

2 COMMENTS

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here