#অবশেষে_তুমি (পর্ব ২১)
#Mohua_Afrin_Mim
·
·
·
অর্ণব বললো
অর্ণবঃ সব কথা সবসময় মুখ ফুটে বলতে হয়না।। কিছু কথা না বললেও বুঝা যায়।।
মিমঃ Thank you.
আমি আর অর্ণব আইসক্রিম খাওয়া শেষ করে হটতে লাগলাম।। দুজনেই চুপ করে হাটছি ল্যাম্পপোস্টের নিচে।। ভালোই লাগছে পরিবেশটা।। ল্যাম্পপোস্টের আলোতে রাস্তাটা আরো বেশি সুন্দর লাগছে।। একদম জনমানবশূন্য রাস্তা মাঝে মাঝে দুই একটা গাড়ি যাচ্ছে।। এই পরিবেশটা এই মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি ভালো লাগছে।। মনে হচ্ছে যদি অর্ণবের হাতটা ধরে হাটতে পারতাম।। এই একটা পরিবেশে প্রিয় মানুষটার হাত ধরে হাটলে মন্দ হবেনা বরং অনেক বেশি ভালো লাগবে।। প্রিয় মানুষের হাত ধরে হাটার ইচ্ছা কারই বা না থাকেনা!! কিন্তু………..
কিছু ইচ্ছা প্রকাশ করতে নেই তবে কিছু ইচ্ছা পূরণ না হলেই বা কি!! উনি তো আমার সাথে আছেন আমার পাশে আছেন এটাই আমার কাছে বেশি।। কিছুক্ষণ পরে অর্ণব বললো
অর্ণবঃ মীম।।
মিমঃ হুম।।
অর্ণবঃ যাকে ভালোবেসেছিলে তাকে কি পেয়েছিলে??
মিমঃ না, তাকে তো এখনো বলতেই পারি নি।
অর্ণবঃ তুমি যদি বলো তাহলে আমি সাহায্য করতে পারি।
মিমঃ কিসের সাহায্য??
অর্ণবঃ যাতে তুমি তোমার মনের কথা তাকে বলতে পারো।
আমি একটা মলিন হাসি দিয়ে বললাম,
হয়নি বলা অনেক কথা,
মনেই থাকুক তবে।
কে বলেছে ভালোবাসলে,
তাকেই পেতে হবে?
জানি না অর্ণব কি বুঝলো বা কি ভাবলো তবে এ ব্যাপারে আর কোনো কথা বললেন না।।
আমরা হাটছি এখন ঢাকার একটা ব্যাস্ত রাস্তায়।। যদিও এখন রাস্তাটা বেশ শুনশান।। দূরের ল্যাম্পপোস্টের আলোগুলো এখন কিছুটা ঝাপসা দেখাচ্ছে।। রাতের অন্ধকারে সেগুলো জোনাকি মনে হচ্ছে।।
আর আমি আমার ভালোবাসার কথা ভাবছি।।অর্ণব যে আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ বন্ধু সেটা অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই।। আমি আমার যে কোনো সমস্যায় যে তাকে পাশে পাবো তাতেও কোনো সন্দেহ নেই।।
কিন্তু ঐ যে মানুষ তো ভালোবাসার কাঙাল।।মানুষ ভালোবাসতে ভালোবাসে, ভালোবাসা পেতে ভালোবাসে।।
এমন সময় অর্ণব আমার হাত ধরলো। হঠাৎ হাত ধরায় চমকে উঠলাম।। আমি চোখ বড় বড় করে উনার দিকে তাকিয়ে আছি।। কিন্তু উনি খুব স্বাভাবিক ভাবেই হাত ধরে রয়েছেন।। জানি না ইচ্ছা করে নাকি মনের ভুলে।। কিন্তু এখনকার অনুভুতি ভাষায় প্রকাশ করার মতো না।
অর্ণবঃ মীম।।
মিমঃ জ্বী (এখনও আমার হার্ট বিট বেশী। হাতটাও কাপছে।। অর্নব আমার হাতটা আরো জোরে চেপে ধরলো)
অর্ণবঃ চুলগুলো খুলে দাও।। ভালো লাগবে দেখতে।।
মিমঃ উনার এমন কথায় আমি আরো বেশি অবাক হলাম।। (নিজেকে সামলে নিয়ে বললাম) চুল জড়িয়ে যাবে।। তখন কি আপনি ছাড়িয়ে দিবেন?
অর্ণবঃ হ্যাঁ দিব।।এখন খোলো।
আমি চুল খুলছি।। তখন অর্নব বললো……..
অর্ণবঃ জানো মীম, ভালোবাসার মানুষের খুব কাছে কখনো যেতে হয় না।। নিজেকে কখনো পুরোটা প্রকাশও করতে হয় না।। তোমার চারপাশে যত বেশি রহস্য থাকবে মানুষ ততই তোমাকে কাছে পেতে চাইবে।।
মিমঃ হিমুর কথা বলছেন? হিমুর রচয়িতা কি বলেছে জানেন? তিনি বলেছেন, ”ভালোবাসা ব্যাপারটা হাতে তালি দেওয়ার মতো। দুইটা দিক লাগে। ।নাহলে সেটা পূর্ণতা পায় না।।”
অর্ণবঃ তিনি তো এটাও বলেছেন,”প্রেম আমার কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।। আর সেটা যদি one sided হয় তাহলে তার গুরুত্ব আরও বেশি।।
মিমঃ কি জানি, আমি এতো ফিলোসফি বুঝি না।।ভালোবাসাটা আমার কাছে আমার মতো করে প্রকাশ পায়।। যুগে যুগে প্রেমিক -প্রেমিকা একই থাকে, ভালোবাসাটা একই থাকে তবে পরিবেশটা ভিন্ন হয়।। ভিন্ন ভিন্ন পরিবেশে তারা ভিন্ন ভিন্ন ভাবে প্রকাশ পায়।।
অর্ণব আর কিছু বললো না।। চুপ করে রইলো।। উনি এখনো আমার হাতটা ধরে রয়েছন।। আমার কাছে মুহূর্তটা যে কেমন লাগছে তা হয়তো বলে বুঝাতে পারবো না।। আমি তো এটাই চেয়েছিলাম যে উনি আমার হাত ধরে হাটবেন।। একটু আগেও এই ইচ্ছাটা ছিলো আমার আর এখন পূরনও হয়ে গেছে।। আসলে মানুষের লাইফে যে কখন কি হয় তা কেউ বলতে পারে না বুঝতেও পারেনা।।
আমরা গল্প করতে করতে বাড়ির দিকে ফিরলাম।।
“একজন ভালোবাসাকে ভোলার জন্য বন্ধুত্বের আশ্রয় নিয়েছে, আরেকজন ভালোবাসা লুকোনোর জন্য বন্ধুত্বের মুখোশ পরেছে।। বড়োই অদ্ভুত ব্যাপার।।”
.
.
গতকাল রাত জাগার জন্য সকালে উঠতে একটু দেরি হয়ে যায়।। আমি ঘুমের মধ্যেই টের পেলাম আমার মুখের উপর কারো গরম নিঃশ্বাস পড়ছে।।একটুপর টের পেলাম আমার কপালে কেউ তার নরম ঠোঁট ছুইয়ে দিলো।। আমার বুঝতে বাকি রইলো না এটা কার কাজ।।
অর্ণব এরপর বারান্দায় চলে গেলো আমি কিছুক্ষণ পর উঠে ওয়াশরুমে চলে গেলাম।। উনাকে বুঝতে দিলাম না যে আমি কিছু টের পেয়েছি।। শুধু শুধু বেচারা লজ্জা পাবে।। আজকে অর্নবের ছুটির দিন।।
সকালের রান্না শেষে রুমে গিয়ে দেখি অর্ণব খাটে বসে আছে।। ওনার হাতে চিরুনি দিয়ে বললাম,
মিমঃ নিন এবার চুলগুলো ছাড়িয়ে দিন।। একটুও যেন ব্যাথা না লাগে।
উনি কিছু না বলে চুল আচড়ে দিতে লাগলো। এ ব্যাপারে যে উনি একদমই কাচা সেটা বুঝতে খুব একটা অসুবিধা হলো না।
মিমঃ থাক লাগবে না।। আমিই করে নিচ্ছি।।
অর্ণবঃ কেনো কি হলো??
মিমঃ কিছু না।। দিন।।
মানুষ টা তো অন্য কাউকে ভালোবাসে।। শুধু শুধু এসব করে আর নিজের মায়া বাড়াতে চাই না।।
আর অন্য দিকে অর্ণব ভাবছে, কি হচ্ছে তার সাথে এসব।। সে তো নিসাকে ভালোবাসে।। তবে মিমকে দেখলেই তার এমন অনুভূতি হচ্ছে কেন।।আর সকালের ঐ ব্যাপারটা কিভাবে হয়ে গেলো সেটা কিছুতেই বুঝতে পারছে না।।
.
.
আজকে ডিনার শেষে আমি আর অর্ণব বারান্দায় বসে আছি।। অনেক মেঘ করেছে, ঠান্ডা বাতাস বইছে।। ঠান্ডা বাতাসে শরীর মন ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে।। বাতাসে বার বার চুলগুলো মুখের উপর পড়ছে।
বাহিরের দিকে তাকিয়ে আছি।। অনেক ভালো লাগছে।। বৃষ্টির আগ মুহূর্ত আমার অনেক ভালো লাগে।। কিছুক্ষণ পর অর্ণবের দিকে চোখ পড়লো।। উনি এক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন।। আজ তার দৃষ্টি অর্থহীন।। মেয়েরা নাকি প্রেমের ব্যাপারটা খুব সহজেই ধরতে পারে।। কিন্ত এই মুহূর্তে আমার মনে যে ধারনা উকি দিচ্ছে সেটা তো আমার জন্য নিষিদ্ধ।। এমন সময় জোরে বৃষ্টি নেমে গেলো।। অর্ণব বললো
অর্ণবঃ মিম চলো ছাদে যাই।।
মিমঃ এখন!! আর এই বৃষ্টিতে!!
অর্ণবঃ হুম।। বৃষ্টিতে ভিজবো।। চলো।।
আমিও আর কিছু না ভেবে বললাম
মিমঃ চলেন।।
বৃষ্টিতে ভিজছি।। অনেক ভালো লাগছে।। অর্ণবও আমার সাথে ভিজছে।। চোখ বন্ধ করে বৃষ্টির প্রতিটা ফোটা অনুভব করছি।।
হঠাৎ চোখ খুলে দেখলাম অর্ণব আমার সামনে দাড়িয়ে আছেন।। ঘোর লাগা দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন আমার দিকে।। আমি উনাকে দেখে চোখ নামিয়ে ফেললাম।। হঠাৎ করে উনি আমার কোমর জড়িয়ে ধরলেন।। উনি আমার কোমর জড়িয়ে আমাকে উনার একদম কাছে নিয়ে গেলেন।। আমি চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছি।। উনি আমার দিকে একটু একটু করে এগিয়ে আসছেন দেখে আমি চোখ বন্ধ করে ফেললাম।। উনাকে বাধা দিলাম না।। একটু পরে উনি হঠাৎ করে আমাকে ছেড়ে দিয়ে নিচে চলে গেলেন আর আমি হা করে তাকিয়ে আছি।। কিছুই বুঝতে পারলাম না যে কি হলো এতো তাড়াতাড়ি।। আমি ঠাঁই দাড়িয়ে রইলাম।।
নিচে এসে ওয়াশরুমে ঢুকে শাওয়ার ছেড়ে দিয়ে ভাবতে লাগলাম এটা আমি কি করতে যাচ্ছিলাম একটু আগে।। আমার কি হয়েছিলো!! মিম আমাকে এখন কি ভাববে!!
আমি কি মিমকে ভালোবাসতে শুরু করেছি নাকি!! না না এটা কখনো সম্ভব না।। আমি তো নিসাকে ভালোবাসি অন্য কাউকে না।। তবে কেনো মিমের কাছে গেলে এমন লাগে!! মনে হয় ওর কাছেই থাকি।। ওর থেকে দূরে যেতে ইচ্ছে করেনা।। মিমের কাছে গেলে কেনো অন্যরকম একটা অনুভূতি কাজ করে!! কই আর কারো কাছে গেলে তো এমন হয়না।। এই মেয়েটার মদ্ধে কি আছে যা আমাকে ওর কাছে এতো টানে!! আমি কেনো ওর থেকে দূরে থাকতে পারিনা!! সবসময় শুধু ওর কাছে ওকে ঘিরে কেনো থাকতে ইচ্ছা করে।। আর কিছুই ভাবতে পারছি না।। সবকিছু কেমন যেনো গুলিয়ে যাচ্ছে।।
·
·
·
চলবে…………………….