গল্পটা_আমারই পর্ব : ২২

#গল্পটা_আমারই

পর্ব : ২২
(সুরমা)

তন্বী আপু কল করে অর্ণবকে চায়। অর্ণব ফোন ধরে কিন্তু তন্বী আপুর কথা শোনে বুঝা যাচ্ছে অর্ণব রেগে গেছে। অর্ণব এসব পছন্দ করে না। তার জন্য রুমমেট বা বন্ধুরা কেউ বিরক্ত হবে এটা সে দেখতে পারে না।

আমি অর্ণবের কথা শোনছিলাম না বাট তন্বী আপুর কথা শোনছিলাম। তন্বী আপু বলে,,,,,,

-তুই রাগ হচ্ছিস কেন? দরকার ছাড়া তো অন্য কারো ফোনে কল দিয়ে তোকে চাইনি। দরকার বলেই কল দিসি। তাছাড়া ও ডিস্টার্ব ফিল করবে না। ও আমাদের ফ্রেন্ডসাইকেলের একজন।
-,,,, ,,,,,, ,,,,

-তুই মীরার সাথে কথা বলছিস না কেন এটা আগে বল? ওও অল টাইম কান্না করছে। ওকে তো একটু টাইম দিবি?

তাছাড়া মীরা বললো তুই নাকি ওর কোনো খোঁজ খবরও নেস না। ব্যাপার কি অর্ণব। তন্বী আপু কিছুক্ষণ কথা বলে ফোনটা আমার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে,,,,,,

-কথা বল। তন্বী আপু ফোনটা আমার হাতে দিয়ে বাইরে চলে যায়। আমি ফোনটা ধরে আবেগে আপ্লুত হয়ে বলি,,,,,

-তুমি আমার সাথে কথা বলো না কেন? আমি কি করেছি? অর্ণব শান্ত কণ্ঠেই বলে,,,,,,

-এভাবে কাঁদার মতো কি হয়েছে? পড়াশোনা নিয়ে বিজি আছি তাই ফোন করছি না।

-পড়াশোনা কি? পড়াশোনা করলে কি কথা বলা যাবে না??
-দেখো মীর, এই মুহূর্তে তোমার সাথে কথা বলে সময় নষ্ট করার চেয়ে বেশি ইম্পরট্যান্ট একটা জব। ইমার্জেন্টি দরকার।

– পড়াশোনা। পড়াশোনা তো তোমার বাহানা। তুমি বদলে গেছো। আমাকে যদি বিয়ে করতেই পারবে না তাহলে আমার জীবনে এসেছিলে কেন? এতো আয়োজন করে আমাকে কাঁদানোর কি দরকার ছিল???

আমার কণ্ঠ শোনে অর্ণব রেগে বলে,,,,,
-এই কারণে তোমার সাথে কথা বলি না। কথা বললেই তুমি একটা সিম্পল বিষয় নিয়ে জেদ করবে।

দেখো মীরা, এখন তোমার সাথে এসব ফালতু কথা বলে আমার সময় নষ্ট করতে চাইনা। সামনের মাসে আমার তিনটা পরীক্ষা আছে। এর মাঝে একদিনও কল করবা না। আমি পরীক্ষার আগে তোমার সাথে কথা বলতে চাইনা।

– আমি তোমার কি ক্ষতি করেছিলাম? তুমি কেন আমাকে এতোটা কষ্ট দিলে?? আমি কাঁদছি। আমার চোখ দিয়ে গরম জল বের হচ্ছে। আমার এতো খারাপ লাগছে। ইচ্ছে হচ্ছে সব কিছু ভেঙ্গে ঘুরিয়ে দেই। আমার কথা শোনে অর্ণব বলে,,,

– আমি তোমার কি করেছি বলো?
– আমার সাথে প্রতারণা করেছো।
– আমি কারো সাথে প্রতারণা করিনি। তোমার মাথা এখন কাজ করছে না। তুমি রেস্ট নাও। ঘুমাও। ভালো লাগবে।

– আমার সাথে প্রেম প্রেম খেলা খেলে এখন পালিয়ে যেতে চাইছো। এখন আবার আমার মাথায় সমস্যা এরাও বলছো? ফোন অফ করে রাখো। কথা বলোনা। নানা রকম অজুহাত দেখাও। এসব কি?

– মীরা! তন্বীও কিন্তু প্রেম করে। ওরাও কিন্তু অনেকদিন পরপর কথা বলে। আমি তেমনটা কখনও করি নি। তোমাকে যথেষ্ট সময় দিয়েছি। কিন্তু তন্বী কিন্তু কখনও অভিযোগ করেনা। তোমার মতো।

আগেতো খুব বলতে তন্বী আপু খুব ভালো। তন্বী আপু এই সেই। এখন তন্বী আপুর ভালো কাজ গুলো চোখে পড়ে না??? ওকে ফলো করতে পারছো না এখন??

– তন্বী আপুদের সাথে নিজের তুলনা করবে না। ওরা দুজন দুজনকে ভালোবাসে। তোমার মতো বিয়ে কথা শোনে তন্বী আপুর বফ পালাতে চায় না। তুমি একটা চিটিংবাজ। প্রতারক। আমার মাথা তখন গরম হয়ে গেছিল। কি সব বলছিলাম নিজেও জানি না। অর্ণব আমার শিরায় অবস্থান করেছিল।

ওকে ছাড়া কিছু কল্পনা করতে পারছিলাম না। তাই ওর সাথে কথা না বলতে পেরে সত্যি আমার মাথা গরম হয়ে গেছিল। এমনকি আমি অর্ণবকে তুই তোকারি করি। আমার কথা গুলো শোনার পর হয়তো অনেকেই বলবে সব দোষ আমার। কিন্তু আমারও তো একটা মন আছে।

আমিও তো মানুষ। আমি কতোটা কষ্ট পেয়েছিলাম কাউকে বুঝাতে পারবো না। একমাত্র একটা মেয়েই জানে ভালোবাসার মানুষের কাছ থেকে অল্প আঘাত পেলেও কতোটা ক্ষতবিক্ষত হয় হৃদয়। আমি অর্ণবকে উল্টাপাল্টা বলতে লাগলাম। অর্ণবেরও আমার এরকম আজগুবি কথা শোনে মাথা গরম হয়ে যায়।

ওও সব সময় বলতো, তুই তোকারি তার পছন্দ না। তুই তোকারি শোনলে রাগ লাগে। কিন্তু আমি রাগের মাথায় বলে ফেলি। অর্ণব বলে,,,

– ঠিক আছে। আমি যেহেতু ভালো না তাহলে আমার কাছে পড়ে আছো কেন? চলে যাও যেখানে মন চায়। আমার চেয়ে ব্যাটার কাউকে বিয়ে করে ফেলো। তাহলেই তো সমস্যা সমাধান।

তাছাড়া এমনতো নয় যে আমি তোমার ক্ষতি করেছি। কখনও তোমাকে একটা কিসও করিনি। তোমাকে টাসও করিনি। আর তোমারতো কোনো পিছুটানও নেই। যাও যাও। যে ভালো তার কাছে যাও।

কথাগুলো বলে অর্ণব কল কেটে দেয়। আর আমি ফ্লোরে বসে চিৎকার করে কাঁদতে থাকি। রুমের দরজাটা যদি এখন অপেন থাকতো তাহলে হয়তো আমার এই কান্নার আওয়াজ সারা মেসে ছড়িয়ে পড়তো। বাতাসের সাথে ভেসে যেতো দূর থেকে বহুদূর।

রাতে বিছানায় শুয়ে আছি। দুপুরে এতো কান্না করার পর চোখ গুলো ফোলে গেছে। মাথায়ও প্রচণ্ড পরিমাণে ব্যথা। বিকালে একবার মনে হয়েছিল নিজের জীবনটা নিজেই শেষ করে ফেলি।

কিন্তু তখনেই আমার চোখের সামনে আব্বুর মুখটা ভেসে উঠে। হয়তো আমি আত্মহত্যা করে পৃথিবী ছেড়ে চলে যাবো। কিন্তু আমার বাবা মা ভাইয়ারা সবাই বেঁচে থাকবে।

লোকজন তাদের কথা শোনাবে। পদে পদে তাদের অসম্মান করা হবে। লোকজন যতদিন আমার নাম মনে থাকবে ততদিন আমাকে ঘৃণা করবে। এমনকি আল্লাহ নিজেও আমাকে ঘৃণা করবে। কারণ, আত্মহত্যা যে মহা পাপ।

মা বাবা আমাকে জন্ম দিয়েছে। তাদের এতে বড় একটা কলঙ্ক উপহার দিলে যে মেয়েদের নামের সাথে কলঙ্ক শব্দটা যোগ হবে। আমাদের সমাজ বড় অদ্ভুত।

তারা একটা মেয়ে অপরাধ করলে দশটা মেয়েকে সেই লাইনে দাঁড় করিয়ে দেয়। ভালো খারাপ যাচাই করে না। কিন্তু একজন মহৎ কিছু করলে সেখানে দশজনকে দাঁড় করায় না। তাই আমার আর আত্মহত্যা করা হয়নি।

তন্বী আপু রুমে এসে আমাকে অনেকবার জিজ্ঞেস করলো অর্ণব কি বলেছে। কিন্তু আমি মূর্তির মতো ছিলাম। একটা কথাও বলিনি। বলতে ইচ্ছে হয়নি।

রাত নয়টায় হঠাৎ মোবাইলটা বাজছে। আমার এই মুহূর্তে খুবই বিরক্ত লাগছে। ইচ্ছে হচ্ছে মোবাইলটা ভেঙ্গে ফেলি। মোবাইলটা হাতে নিয়ে দেখি স্কিনে মামার নাম্বার ভাসছে।

কথা বলার ইচ্ছে না থাকার সত্ত্বেও কলটা রিসিভ করতে হলো। কারণ, কল করার পর যদি কেউ কল রিসিভ না করে তাহলে মামা প্রচণ্ড রাগ হোন। জানি না এটা কেমন অভ্যাস। আমি কলটা পিক করে একদম আস্তে বললাম,,,,,

-আসসালামু আলাইকুম মামা।
-ওয়ালাইকুম সালাম। কেমন আছো মীরা?
-জ্বি মামা আলহামদুলিল্লাহ ভালো। আপনার শরীর কেমন আছে? মামী, তোরা, স্নিগ্ধ ওরা কেমন আছে??

-হুম সবাই আলহামদুলিল্লাহ। আমি তোমাকে কেন কল করলাম নিশ্চয় বুঝতে পারছো? আমি একটা দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলে বললাম,,,
-পারছি।

-তোমার কেন পছন্দ হয়না আবির ছেলেটাকে? তুমি ভালো করে দেখেছো তো ওকে?? মামার কথায় আমি কোনো উত্তর দিলাম না। চুপ করে রইলাম। মামা কিছুক্ষণ চুপ থেকে আবার বললেন,,,,

-এক কাজ করো। তুমি আবিরের সাথে আবার মিট করো। এতো ভালো পাত্র সব সময় পাওয়া যায় না। ছেলে ভালো। জবও করে আলহামদুলিল্লাহ ফাস্টক্লাস। রাজরানী হয়ে থাকতে পারবা। ছেলের ঢাকা নিজস্ব বাসা আছে।

এক ভাই এক বোন। যা সম্পত্তি আছে তার আর ভাগ হবে না। সব ভেবে চিন্তে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তোমার বাবা বললো তোমার নাকি ছেলে পছন্দ না। তাই ভাবলাম আমি নিজে কথা বলি।

কোনদিন মিট করতে চাও বলো? এই মুহূর্তে আমি মামার কথা শোনতে চাচ্ছিলাম না। ভালো লাগছে না। তাছাড়া অর্ণবও তো আমাকে ভালোবাসে না। কি লাভ ওর অপেক্ষায় বসে থেকে? ওও তো আর আমাকে চাইবে না। জীবনে তো কিছুই করতে পারলাম না।

তারচেয়ে ভালো হয় মা বাবার পছন্দ করা ছেলেকেই বিয়ে করি। এতে কিছু হোক বা না হোক, অন্ততপক্ষে নিজের ফ্যামিলিকে হেপি দেখতে পারবো। তাই আমি মামাকে বললাম,,,

– মিট করতে হবে না মামা। আপনারা যা ভালো মনে করেন তাই করুন। আমার কথা শোনে মামা বললেন,,,,
– তাহলে আমরা কি বিয়ের আয়োজন করবো? আমি মামার কণ্ঠে স্পষ্ট আনন্দ শোনতে পাচ্ছিলাম। আমি একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে চোখ বন্ধ করলাম।

চলবে——–

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here