.আমার_সংসার
part:06
.
Writer :Mollika Moly
.
.
কফি নিয়ে গেলাম সিফাতের জন্য।
কফির মগ টা টেবিলে রাখতেই
দেখি উনি আড়মোরা হয়ে চোখ
খুলেছে,জেগে গেছে, আমার দিকে
হা হয়ে তাকিয়ে আছে।
.
–উহুম উহুম হালকা কাশি দিয়ে উনাকে বললাম,
.
–গুড মর্নিং, আপনার কফি।
.
–মর্নিং বলে হাত বাড়িয়ে নিলো কফি টা।
.
–একটা কথা বলি?,মাথা টা নিচু
করে ভয়ে ভয়ে বললাম।
.
–কি বলো?
.
–বলো কথাটি শুনে ওনার দিকে অবাক
চোখে তাকালাম,উনি তুমি করে বলছে,
যেখানে কথায় বলে না তেমন বললেও তুই
সবসময় বলে।আমি এক ধ্যানে বসলাম এটা নিয়ে।
.
–কি হলো,কি নাকি বলতে চাও বলো,ধ্যানে বসলে কেন না বলে?
.
রাগী মুখ করে বললো কথাগুলো।
.
–আসলে বলছিলাম কি,কিভাবে যে বলি,
আপনি কি ভাবেন,রেগে যাবেন নাকি আবার,
বুঝতে পারছি না।
.
–এতো ভনিতা না করে তারাতারি বলো কি বলবে
আমার এতো সময় নাই। বাহিরে বেরুবো।
.
–বলছিলাম যে আজ বাহিরে না গেলে হয় না?
.
কথাটি বলে নিচু মাথা হালকা উনার দিকে উঁচু
করে দেখলাম, উনি এক দৃষ্টিতে আমার দিকে
তাকিয়ে আছে।
.
–বউয়ের অধিকার দেখাচ্ছো?
.
–মাথা নাড়িয়ে না বুঝালাম।
.
–কাল রাতের ঘটনার জন্য আজ অধিকার চলে
আসছে বুঝি,আমার ওপর,স্বামীর অধিকার ফলাচ্ছো?ভুলে যেয়ো না আমি পুরুষ মানুষ,তারপর
নেশা করেছিলাম,নেশাগ্রস্ত মানুষ,নেশাযুক্ত অবস্থায়
সবাইকে তার বউ ভাবে,যদি তার মস্তিষ্ক তখন
বিকৃত হয়,সেখানে তুমি আমার বউ,মানি বা না মানি বিয়ে করা বউ একটা মেয়ে সামনে আমিও নেশাগ্রস্থ ছিলাম,নিজেকে কন্ট্রোল করা কঠিন ছিলো আমার।.
.
–ছিঃ এগুলো কি বলছেন আপনি?আমিতো এতো
কিছু ভেবে বলিনি,আর অধিকার দেখাচ্ছি না।
মানুষ এভাবে অধিকার দেখায় না।
.
–কিভাবে অধিকার দেখায়?
.
–বাদ দিন।
.
— রোজ রোজ বাহিরে যান,অনেক রাতে ফিরেন,কোথায় যান কেন যান,এগুলো
কিছুই আমি জিঞ্জেস করবো না,যদিও
এগুলো আমার অধিকারের মধ্যে পড়ে
তারপরো?
.
–তাহলে কি বলতে চাচ্ছিস তুই?
.
–আবারো অবাক হয়ে গেলাম,নিমেষের
মধ্যে রুপ পরিবর্তন, এনিতো গিরগিটির চেয়েও
দ্রুত কাজ করে।
.
–বলবি?
.
–বাবা,মা কষ্ট পায় আপনার এইরকম কার্যকলাপে?
.
–আমার দেখার বিষয় না এটা।
.
–কেনো নয়,আপনি তাদের ছেলে,তারা কিসে খুশি
থাকবে,কিসে কষ্ট পাচ্ছে এটা দেখা আপনার দায়িত্ব।
.
–হিহিহিহিহি,হাসাইলো,সিনহা,বাবা,মা,কিসে ভালো
থাকবে এটা দেখা সন্তানের দায়িত্ব, কিন্তু সন্তান কি সে ভালো থাকবে খুশি হবে এটা দেখা বাবা,মায়ের দায়িত্ব নয়?
.
–অবশ্যই দায়িত্ব।
.
–আমার বাবা,মা তো সেটা দেখলো না।আমি কি সে সুখি সেটা না দেখে তোর সাথে জোড় করে বিয়ে দিলো।
.
–বাবা,মা যা করে সন্তানের ভালোর জন্যই করে,
আপনি যেটাতে সুখি হবেন সেটাই করেছে তারা।
.
–হিহিহিহি,সুখী,আমি সুখী,কি সুখ দিয়েছে আমায়, আমি কি সুখি হতে পেরেছি বল,তুই বল আমি কি তোর সাথে সুখি না তুই আমার সাথে সুখি।আমরা দুজন কেউ কাউকে পেয়ে খুশি না।আমাদের মাঝে কোনো ভালবাসা নেই।আমি তোকে ভালবাসি না আর তুইও আমায় ভালবাসিস না।
.
চোখের কোনে পানি চলে আসলো,পানিতে টলমল চোখে ওনার দিকে তাকালাম,
.
–কে বলেছে আমি আপনাকে ভালবাসি না,আমি আপনাকে সত্যি ভালবেসে ফেলেছি,আর কে বলেছে আমি সুখি না,আমি অনেক সুখী,এতো ভালো শ্বশুর, শাশুড়ি পেয়েছি,নিজের বাবা মায়ের অভাব কখনো বুঝতে দেয় না।আমি অনেক সুখী আপনাকে বর হিসেবে পেয়ে,আপনার বাবা,মা কে শ্বশুর, শাশুড়ি হিসেবে পেয়ে,এই সুখই আমার কাছে অনেক বেশি।আর কি চাই।
.
কথাগুলো বলে উনার দিকে তাকালাম, দেখি তাকিয়ে আছে আমার দিকে,জিঞ্জাসু চোখে।হয়তো নানা প্রশ্ন ওনার মনে ঘুরছে,।
.
–আমাকে পেয়ে তুই কোন দিক থেকে সুখী বলতে
পারিস,আমিতো তোকে ভালবাসি না অত্যাচার করি,মদ খেয়ে মাতলামি করি,কোনো মেয়েই এমন বর চায় না,এমন বরের সাথে কোন মেয়েই সুখী হতে পারে না।
.
–আমি শুধু আপনার বাহির দেখিনি,ভিতর থেকে
আপনাকে পর্যবেক্ষণ করার চেষ্টা করছি,আপনার বাহিরের এই রুঢ় ব্যবহার না আমি আপনার ভিতরের কোমলতা কে খুজছি,আপনার আজকের এই রাগ, জেদ নেশা একসময় থাকবে না,আপনার ভিতরে যে আরেকটা কোমল হৃদয় আছে সেটা আমি একদিন সবার সামনে তুলে ধরবো দেখেন।সেই দিনটির প্রতিক্ষায় আমি থাকবো।আমি জানি সেদিন আসবে।আপনার আসল আপনি কে আমি বাহিরে বের করে আনবেই।
.
–শোন আমি মোটেও ভালো না,আমার মনে কোন দয়া মায়া নেই, আমার হৃদয় কোমল না।তুই মিথ্যে স্বপ্ন দেখিস না এমন দিন কোনোদিন আসবে না,আমি তোকে না আমার স্ত্রী কে ভালবাসি,তোকে আমি স্ত্রী মানি না।
.
খুব কড়া করে কথাগুলো বলে উনি চলে গেলো।
.
বসে পড়লাম মাটিতে।চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়লো
আমায় নিরাশ করে দিল সে,তবে আমি যে আশা ছাড়বো না,আসবে সিফাত,সেইদিন আসবে,আমি তোমার কোমলতা কে টেনে বের করবোই।আমি হারবো না।আমার সংসার আমি রক্ষা করবো।
.
to be continue……….