আমার সংসার পর্ব ১১

আমার_সংসার
.
Part:11
.
Writer :Mollika Moly
.
.
.
রাতে বিছানায় সিনহা চুপটি করে বসে আছে।সিফাত বাহিরে থেকে ফিরে সোজা ওয়াশরুমে গেছে ফ্রেশ হতে।ফ্রেশ হয়ে এসে দেখে সিনহা চুপটি করে বিষন্ন মুখে বসে আছে।ওর এই নিরবতা সিফাতের একটুও ভালো লাগছে না,সে ভাবতে লাগলো সিনহা কেমন জানি চুপচাপ।ওকে এতো কষ্ট দেই আমি তারপরো কিছুই বলে না।কতো অপমান করেছি আমি সেই বিয়ের দিন থেকে শুরু করে সব মুখ বুজে সহ্য করে। কিভাবে পারে সে,আমি অবাক হয়ে যাই ওর ধৈর্যশীলতা দেখে।আজ কি হলো ওর মুখ টা অমন ভার করে রেখেছে কেনো?
.
– “পিচ্চি,,,,?
.
সিনহা নিশ্চুপ কোনো কথা বলছে না,একমনে কি যে ভেবে চলেছে সেই জানে,এদিকে সিফাত যে ওকে ডাকছে সেদিকে খেয়ালই নেই ওর।সিফাত আবারো ডাকলো ওর সামনে তুড়ি বাজিয়ে।
– “এই যে গম্ভীর পিচ্চি,,?
-” হুম,কিছু বলছিলেনসিনহা হকচকিয়ে উঠে সিনহা বললো সিফাতকে?
– “বলি ভাবনার সাগড়ে ডুব দিতে কি খুব ভালো লাগে আপনার পিচ্চি?
– ” নাহ কি যেনো বলছিলেন?
– “তার আগে বলো কি ভাবছিলে?
– ” নাহ কিছু না,কি ভাববো,কিছুই ভাবছিলাম না।
– “উহু সেটা বললে তো হচ্ছে না,আমি নিশ্চিত তুমি কিছু ভাবছিলে, কিছু একটা হয়েছে তোমার যেটা নিয়ে তুমি অসুখী।
– ” সত্যিই আমি অসুখী কথাটা মনে মনে বললো সিনহা।
– “কি হলো বলবে পিচ্চি?
– ” আমি কি বলবো বলুনতো সেই কখন থেকে বলতে বলছেন কি বলবো আমি?কথাগুলো সিনহা একটু কড়া ভাবেই বললো সিফাত কে।
– “রাগ করছো কেন এমন,আমরা বন্ধু না,সব শেয়ার করতে পারো এতে কষ্ট একটু কমবে দেখো নিয়ো?
– ” কষ্টের কারন টা যে আপনিই করছেন এটা যদি বুঝতে পারতেন তাহলে হয়তো এতো কষ্ট দিতে পারতেন না।আবারো সে মনেই রাখলো কথাটা মুখ ফুটে বলার সাহস পেলো না।
– “এই যে আবার কি হলো ধ্যাত,তুমি এমন কেন?
– ” কেমন আমি?
– “কেমন জানি।
-” ওহ।
– “ব্যাগ গুছিয়েছো?
– ” কিসের?
– “আমাদের।
– ” কেনো বলুন তো?
– “যাহ তুমি কি ভুলে গেলে?
– ” কিহ ভুলে গেলাম?
– “আমরা কাল সকালের ফ্লাইটে কক্সবাজার যাচ্ছি।
-” সত্যিই যাচ্ছে আপনি?
– “কেনো এখনো মনে হচ্ছে না তোমার, আরে পিচ্চি সত্যিই যাচ্ছি আমরা দুজনেই।
– ” ওহ।
– “হ্যাঁ,এইবার এসো দুজন একসাথে ব্যাগ গোছায় তাহলে তাড়াতাড়ি হবে রাত অনেক হলো ঘুমাতে হবে আবার সকালে উঠতে হবে তো।
– ” বলছিলাম না গেলে হয় না?
– “বাবা কিন্তু খুব রাগ করবে।
– ” আমি বাবাকে বুঝিয়ে বলে দিবো।
– “কি বলবে শুনি?
– ” কিছু একটা বলে দিবো,বাবা ঠিক বুঝবে রাগ করবে না।
– “উহু চলবে না,কাউকে কিছু বলতে হবে না আমি যাচ্ছি এটাই ফাইনাল।
.
সিনহা চুপচাপ বসে রইলো সিফাতের কথা শুনে আর বাধা দিলো না সে,কারন সে জানে সিফাত যা বলবে সেটাই করবে, সিনহা হানিমুনে যেতে চায়নি কারন স্বামী, স্ত্রী হওয়া সত্ত্বেও যে মেয়ে কে তার স্বামী বউ বলে মানে না এমন অপমান মনে হয় আর কিছুই নেই একজন মেয়ের জন্য।আর সেই পুরুষের সাথে সে হানিমুনে কোন বিবেকে যেতে পারে যে ছেলেটি তাকে বউ বলে মানে না।মোটেও এটা সম্মানে র নয় সিনহার জন্য,আর কদিন হলো সিনহা তার শরীর খারাপ অনুভুত হচ্ছে, তাই সে যেতে চায়নি, কিন্তু সিফাত তো যাবেই তাই সেও মনস্থির করলো যাবে,সিফাত কে বলবে না কিছু সে।আর সিফাত ব্যাগে তার কাপড় ভরছে।
.
– “আবার সেই ভাবনা,উফ এই মেয়েটাকে নিয়ে আর পারা গেলো না দেখছি,এই যে পিচ্চি ম্যাম একটু হেল্প করলেও তো পারো।
– ” হুম করছি বলে সিনহা সিফাতের সাথে ব্যাগ গোছাতে লাগলো।
.
পরেরদিন সকালে সিনহা আর সিফাত রওয়ানা দিলো কক্সবাজারের উদ্দেশ্য। প্লেনের ভিতর দুজন পাশাপাশি সিটে বসেছে।সিনহা জানালার কাচের ভিতর দিয়ে বাহিরে দেখছে,মেঘ ছাড়া কিছুই দেখতে পারছে না সে,আর কি বা দেখবে মেঘ ছাড়া ওখানে আছেই বা কি,চারদিকে শুধু মেঘ আর মেঘ।
.
সিফাত চুপচাপ বসে আছে, কারন সিনহা কথা বলছে না যদিও সিনহা কম কথা বলে তারপরো সিফাতের বিরক্ত লাগছে সিনহা কথা না বলাতে,এরকম জার্নি কারো ভালো লাগে নাকি কথা না বললে।তারপরো সিফাত সিনহা কে কিছুই বললো না নিজেও চুপটি করে বসে থাকলো।
.
ওরা পৌছাতে বিকেল হয়ে গেলো,একটু পর সন্ধ্যা নামবে।প্লেন থেকে নেমে ওরা সর্বপ্রথম গন্তব্যে পৌঁছালো। রুমের চাবি নিয়ে রুম খুলে, সিফাত সোজা ওয়াশরুমে গেলো ফ্রেশ হতে। যেহেতু ওয়াশরুম একটা তাই সিনহা অপেক্ষা করছে সিফাতের ফ্রেশ হয়ে বেরোবো পর্যন্ত, প্রচন্ড মাথা ব্যাথা করছে সিনহার।মাথা ঘুড়াচ্ছেও।শরীর টা কেমন ভার ভার লাগছে, বিশ্রামের প্রয়োজন তার।সিফাত ফ্রেশ হয়ে এসে দেখে সিনহা বসে আছে,চেহারাতে তার ক্লান্তির ছাপ,সারাদিনের জার্নিতে সিনহার মুখটা মলিন হয়ে আছে।
– “সিনহা যাও গিয়ে ফ্রেশ হয়ে এসো,আমি নিচে গিয়ে দেখছি হালকা কিছু খাবার,চা,অথবা কফির ব্যবস্থা কতোদুর,এখনো এলো না কিছু নিয়ে।
– ” হুম আসছি।
বলে সিনহা ফ্রেশ হতে চলে গেলো আর সিফাত নিচে গেলো।
.
ফ্রেশ হয়ে বসে আছে সিনহা।সিফাত নিচে থেকে দু মগ কফি আর সাথে কিছু বিস্কিট নিয়ে এসে দেখে সিনহা বসে আছে,গোসল করেছে সে,ভেজা চুলে টপ টপ করে পানি ঝড়ছে,সিনহা চুলগুলো ভালো করে মুছেনি,আসলে এতোটা শরীর খারাপ লাগছে তার কিছুই করতে ইচ্ছে করছে না,গোসল করে হালকা চুল মুছেছে।যার ফলে চুলে এখনো পানি রয়েই গেছে।সিফাত সেটা দেখে টেবিলের ওপর কফির মগ রেখে টাওয়াল নিয়ে সিনহার চুল মুছে দিতে লাগলো,ঘন কালো আর অনেক লম্বা চুল সিনহার।সিনহার চুলের সৌন্দর্যে মুগ্ধ সিফাত।
– “আরে আরে করছেন টা কি চুল ছাড়ুন?
– ” কেন ছাড়বো আর কি করছি দেখতে পারছো না,চুল মুছে দিচ্ছি, চুল থেকে তো টপ টপ করে জল পড়ছে সেদিকে খেয়াল আছে তোমার?
– “ছাড়ুন আপনি আমায় দেন আমি পারবো মুছে নিতে।
– “সেতো দেখতেই পেলাম কেমন পারো তুমি,চুলের পানিতে পুরো রুম ভেসে যাবে না মুছলে।
– ” আরে দিন না বলছিতো পাবো আমি।
– “হুশশশশ চুপ,আর একটা কথাও না,চুপচাপ বসে থাকো।
.
সিনহা আর কিছুই বললো না,চুপটি করে রইলো।আর সিফাত অতি স্বযত্নে সিনহার মাথার চুলগুলো মুছে দিতে লাগলো,সিনহার চুল থেকে একটা মাতাল করা ঘ্রান আসছে যেটা সিফাত কে কাছে টানছে।এমন ঘ্রাণ সে কখনো পায়নি,জারার চুলেও নয়।সিফাত নেশার ঘোরে সিনহার চুলে নাক ডুবিয়ে দিলো।সিনহার চোখদুটো নিমেষেই বন্ধ হয়ে গেলো।
খানিকটা সময় এভাবে কাটার পর সিফাতের নেশা কাটিয়ে হঠাৎ চমকে উঠলো,কি করছে সে সিনহা কি ভাবলো।
– “সরি সিনহা।
সিনহা চোখ খুলে সিফাতের দিকে তাকালো।সিফাতের চোখে অপরাধীর স্পষ্ট ছাপ দেখতে পারছে সিনহা।
– “কি হয়েছে সরি কেনো?
– ” আসলে একটু আগে আমি বুঝতে পারিনি।সেজন্য সরি।প্লিজ কিছু মনে করো না।
– “ওহ আমি কিছু মনে করিনি, মনে করার কি আছে এখানে।আমি আপনার স্ত্রী আমার ওপর সব রকম অধিকার আপনার আছে।
– ” হ্যাঁ আছে এটা তুমি ভুল বলোনি তুমি আমার বিবাহিত স্ত্রী, তোমার ওপর সবরকম অধিকার আমার আছে,কিন্তু আরেকটা কথা কি জানো তুমি প্রেমহীন দাম্পত্য জিবন ব্যভিচারের নামান্তর। আমাদের মাঝে ভালবাসা নেই,শুধু মাত্র শারীরিক চাহিদা মেটানোর জন্য আমরা স্বামী স্ত্রী র অধিকার দেখিয়ে কাছাকাছি এসে দাম্পত্য জিবন কাটাই তবে সেটা হবে ব্যভিচারিতা।পাপ হবে যেখানে মনের মিল নেই সেখানে শরীরের মিল অত্যন্ত অরুচিকর একটা বস্তু।
.
সিফাতের কথা শুনে সিনহা আর কোনো উত্তর দিলো না।
.
– “এই রে কফি টা তো ঠান্ডা হয়ে গেলে,নাও কফি আর বিস্কিট টা খেয়ে বিশ্রাম নাও,চেহেরার কি হাল হয়েছে একদিন জার্নি করার ফলেই।তোমার বিশ্রামের প্রয়োজন।
– ” শুধু আমার একারই নয় আপনারো প্রয়োজন,আপনিও এতোটা পথ জার্নি করে ক্লান্ত।
– “আরে নাহ আমি ক্লান্ত না আমার অভ্যাস আছে জার্নি করার।
– ” তারপরো জার্নি শেষে বিশ্রাম প্রয়োজন,আপনি বিশ্রাম নিন।
– “ওকে ওকে নিচ্ছি।তুমিও নাও,চলো দুজনে শুয়ে শুয়ে গল্প করি।
– ” হুম।
.
অতঃপর সিনহা সিফাত দুজনেই শুয়ে পড়লো।রাত ১০ টার মতো বাজে,সিনহা পাশ ফিরে শুয়ে আছে,তাদের মাঝে বালিশ রেখেছে।
– “সিনহা,,,?
– ” হুহ।
– “ঘুমিয়েছো?
– ” নাহ কিছু বলবেন?
– “এপাশ ফিরো?
.
সিনহা পাশ ফিরে তাকালো,সিফাত তাকিয়ে আছে সিনহার দিকে।ডিম লাইটের আলোয় স্পট বোঝা না গেলেও বেশ ভালোই লাগছে, দুজনে মুখোমুখি তাকিয়ে আছে।কিছু বলছে না কেউই, নিরবতা ছেড়ে প্রথমে সিফাতই বলে উঠলো,,,
– ” তুমি আমায় বন্ধু ভাবতে পারোনি এখনো তাই না সিনহা?
– “হঠাৎ একথা কেনো?
– ” নাহ এমনি কিছু না ঘুমাও।
– “হুম।
– ” শুভরাত্রী।
.
বলেই সিফাত পাশ ফিরে ঘুমিয়ে পড়লো।
আর সিনহা ওপাশ ফিরে বালিশ ভেজাতে লাগলো,এতো কাছাকাছি থেকেও তাদের মাঝে কতো দুরত্ব। ভালআাসার মানুষটিকে সে কাছে পেয়েও পাচ্ছে না,তার ভাগ্য সবসময় তার বিপরীতে যায়,এতো মায়ায় জরিয়ে কি লাভ ওর,শেষ পর্যন্ত তো ছাড়াছাড়িই হয়ে যাবে।সিনহা আরো কষ্ট পাবে,তাই সে যে আর সিফাতের মায়ায় জড়াতে চায় না।
.

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here