#আমার_সংসার
.
.
Part:22
.
Writer:Mollika Moly
.
.
“বেশ কিছুদিন পর”
সিফাত সাইরি কে মন থেকে মেনে নিতে না পারলেও ওর মায়ের জুরাজুরিতে,ওর মায়ের ইচ্ছেটাকে সমর্থন করে।কিন্তু সে সময় নিয়েছে।সাইরির সাথে নিজেকে মিলাতে পারবে কি না এটা সে বিয়ের আগেই বুঝতে চায়।অবশ্য সিফাত জানে কখনোই সে সাইরির সাথে মানিয়ে নিতে পারবে না।তার এটা শুধু বাহানা বিয়ে না করার বা বিয়ে পিছিয়ে দেওয়ার।
.
সকালবেলা ফ্রেশ হয়ে স্বপ্নকে স্কুলে দিয়ে, সিনহা ছুটতে লাগলো অফিসের উদ্দেশ্যে।অনেকটা লেট হয়ে গেছে ওর আজকে।জ্যামে পড়েছিলো,আর স্বপ্নকে স্কুলে দিয়ে অফিস আসতে তার একটু দেরীই হয় কিন্তু কি করবে উপায় নেইতো।স্বপ্নকে তো একা একা ছাড়তে পারে না।আর ছাড়বেও না কারন স্বপ্নই ওর সব।স্বপ্নকে ছাড়া সে থাকতে পারবে না।স্বামী সংসার আরেক সন্তান ছেড়ে স্বপ্ন কে বুকে আকড়ে বেঁচে আছে সিনহা।সেদিন সিনহার জমজ বাবু হয়েছিলো এটা সিফাতেরা কেউ জানে না।সিনহা ডাক্তার কে বলতে বারন করেছিলো।কারন সিনহা চেয়েছিলো একটা সন্তান কে তার নিজের কাছে রাখতে আর আরেকটি জারা আর সিফাতের কাছে।এইসব ভাবতে ভাবতে সিনহা অফিসে ঢুকেই দেখে সবাই ভির করে দাড়িয়ে আছে।কিসের এতো ভির সবাই।আবার সবার হাতে মালা,বুকে দেখছে।এগুলো দেখেই সিনহার মনে পড়ে গেলো তাদের কোম্পানিতো বিক্রি হয়ে গেছে। আজ তাদের নতুন এমডি আসবে।পুরোনো এমডি অনেক ভালো ছিলো সিনহাকে অনেক ভালোবাসতো। সুযোগ সুবিধা দিতো ওর দেরী হলে মেনে নিতো।নতুন এনডি কি মানবে।এই রে কোনো বুকে বা গিফট তো আনা হয়নি নতুন এমডির জন্য।আমিতে ভুলেই গিয়েছিলাম নতুন এমতির কথা। এগুলো ভাবতে থাকে সিনহা।
.
ভাবান্ত শেষে সবাই নতুন বস কে অভ্যর্থনা জানিয়ে ভির কমাতে থাকে সিনহার সামনে থেকে।সবাই ওর সামনে থেকে চলে গেলে যেতেই দেখে সিফাত, ওর সামনে একটা মেয়ে মাথা নিচু করে নখ কামড়াচ্ছে।
.
– “who is she,,? সিফাত প্রশ্ন ছুড়ে দেয় কোম্পানির পুরোনো এমডির দিকে।
কথাটি শুনেই সিনহা মাথা উচু করে তাকিয়ে সেই একটা শকড খেলো।কতো ভোল্টের শকড ছিলো এটা পরিমাপ করতে পারছিনা পাঠকগন।তবে বুঝতেই পারছেন কতোটুকু শকড খাইতে পারে।নেগেটিভ পজেটিভ এক জায়গায় হলে শুধুই শকই না জ্বলে পুড়েও যেতে পারে ওদের অবস্থা এখন তেমন হবে।
– ” she is Sinha Ahmed.P.A for you.পুরোনো এমডি উত্তর দিলো।
.
সিনহা আর সিফাত দুজন দুজনকে দেখে চমকে গেছে। দুজনের মুখে কোনো কথা নেই।সিনহা মাথা নিচু করে ভাবতে লাগলো কতো বছর পর সে সিফাত কে দেখছে।শরীরের অবস্থা খুব খারাপ হয়ে গেছে।সে কি ভালো নেই।ভালো থাকার তো কথা জারা কে নিয়ে।জারা কে তো সে প্রচুর ভালবাসে। তাহলে এমন কেন দেখাচ্ছে তাকে।
.
সিফাতও সিনহার মতো একই ভাবনা ভাবছে কারন সিনহাও আর আগের মতো নেই।ওর চেহেরা পুরো চেঞ্জ হয়ে গেছে।দেখলে কেমন দুখী দুখী ভাব।তাই সিফাত ভাবছে হয়তো সিনহা সুখে নেই।কিন্তু থাকবে না কেনো।সেতো আমাকে ঠকিয়ে নিজের ভালবাসার মানুষের সাথে ঘর বেধেছে।ওর তো কষ্টে থাকার কথা নয়।ও সুখেই আছে।শুধু কষ্টে আছি আমি।আমার মেয়েটাকে সুখে রেখেছি আমি।ওর জন্য আমার মেয়ে কষ্ট পায়নি।এইসব ভেবে চলেছে সিফাত।তখুনি পুরোনো এমডি বলে উঠলো।
.
– “মি.সিফাত।সিনহা হলো আমার অনেক পুরোনো পি.এ।মেয়ের মতো।অনেকদিন থেকে আমার সাথে আছে এই কোম্পানিতে।অনেক কাজের মেয়েটি।ও পাশে ছিলো জন্যও আমার কোম্পানি টা এতো দুর এগিয়ে যেতে পেড়েছে।এখন কোম্পানি টা আপনার।আপনি সিনহা ও বাকি সবাই মিলে কোম্পানি টা অনেক দুর এগিয়ে নিয়ে যান এই দোয়াই করি।আর সিনহা মা তুমিও পাশে থেকো মি. সিফাতের যেমন ভাবে আমার পাশে ছিলে।আর ওনাকে সব পেপার গুলো আজ বুঝিয়ে দিয়ো।
– ” সিনহা মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ সুচক উত্তর দিলো।
– “মি.সিফাত আমার কাজ শেষ,আমি তাহলে এখন আসি।ভালো থাকবেন।
– ” হুম আসুন।
পুরোনো এমডি চলে গেলো।
– “মিসেস সিনহা চলুন?
– ” কোথায়,কেনো?
– “কোথায় কেনো মানে কি,?আমার কেবিনে চলুন পেপার গুলো বুঝে দিবেন।
– ” ওহ জ্বী চলুন।
অতঃপর দুজনে কেবিনে চলে গিয়ে সিনহা পেপার বুঝে দিতে লাগলো।আর সিফাত বসা থেকে উঠে কেবিনে চারপাশ ঘুরতে লাগলো।সিনহা খেয়াল করলেও ওর মতো করে ও কথা বলতে লাগলো।সিফাত হাটতে হাটতে দরজার কাছে এসে দরজা লকড করে দিলো।তারপর সিনহার পিছনে এসে ওর চেয়ার ঘুরিয়ে ওকে বসা থেকে টেনে তুললো।আচমকা টেনে তোলায় সিনহা তাল সামলাতে না পেরে সিফাতের ওপর গিয়ে পরলো।ভয়ে সিফাতের শার্ট খামচে ধরে নিজেকে কন্ট্রোল করলো।সে পুরো মিশে আছে সিফাতের বুকের সাথে।
– “কি করছেন এভাবে টেনে তুললেন কেন ছাড়ুন?
ছাড়ুন বলতেই সিফাত সিনহা কে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলো ওর কাছে থেকে। সিনহা তাল সামলাতে না পেরে পড়ে গেলো ফ্লোরে।উঠে দাড়ালো সে।কৌতুহল চোখে সিফাতের দিকে তাকালো।সে এমন কেনো করছে,কি কারনে সে এমন করছে।
.
– “তো মিসেস সিনহা, কেমন আছেন।নতুন বিবাহিত জিবনে নতুন বরের সাথে কেমন আছেন আপনি?
বাচ্চা কাচ্চাও হয়েছে নিশ্চয় এতো বছরে।তো কেমন আছেন স্বামী সন্তান নিয়ে।নিজের সন্তানটাকে ভালোনাসেন তো নাকি।আপনার তো অভ্যেস আছে জন্ম দেওয়া সন্তান রেখে চলে যাওয়ার। এখানেও কি সেটাই করেছেন নাকি বাচ্চায় নেননি।
.
সিনহা অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।এগুলো কি বলছে সিনহা।আমার নতুন বিয়ে,বর সংসার বাচ্চা এগুলো কোথা থেকে আসলো।
.
– “কি হলো কথা বলছেন না কেনো উত্তর দিন।কেমন আছেন আপনি তার সাথে যার জন্য আমাকে ঠকিয়ে নিজের সন্তানের কথা না ভেবে চলে গিয়েছিলেন প্রেমিকের হাত ধরে।
-” কেমন আছেন আপনি,জারা আর জান্নাত কে নিয়ে সুখেই আছেন তাই না।আমার মেয়েটা কি জারা কে৷ মা বলে ডাকে।জারাও কি তাকে মায়ের মতো ভালোবাসে?
– “খবরদার আপনার মেয়ে বলবেন না।আপনার মেয়ে না সে, আপনার মুখে আমি জান্নাতের নাম শুনতে চাইনা।আপনার কোনো অধিকার নেই ওর কথা শোনার বা আমার কথা শোনার।
– ” ওকে শুনলাম না।অভিমানে বললো কথাটা সিনহা।কিন্তু সে একটা জিনিষ বুঝতে পারছে না কেনো সিফাত ওর সাথে এমন করছে।ও তো সিফাতের কথা ভেবেই ওর জিবন থেকে সরে এসেছে তবে কেনো সিফাত ওকে বলছে ও সিফাত কে ঠকিয়েছে,মনের ভিতর প্রশ্ন ঘুরছে শুধু সিনহার।
.
– “কি হলো বললেন না তো?
– “, কি বলবো?
– ” বর কে নিয়ে কেমন আছেন?
– “আমার পার্সোনাল বিষয় নিয়ে কথা না বললে খুশি হতাম।
আপনার খুশি আমি বের করছি।লাইফটা পুরো হেল করে দিবো।প্রতিজ্ঞা করেছিলাম তো আপনাকে খুজে পেলে আমি শান্তিতে থাকতে দিবো না।আজ পেয়েছি এবার দেখুন আপনার লাইফটা কিভাবে হেল করি মিসেস সিনহা আহমেদ। আরে সে আহমেদ কেন।আহমেদ তো আমার পদবী।ওর বরের পদবীও কি তাহলে আহমেদ। যাক গে যা ইচ্ছে হোক আমার কি।আমিতো শুধু ওনার জিবন ছাড়খার করে দিবো।মনে মনে বললো সিফাত।
– “ওহ ওকে না বললে নাই, আসুন আমাকে পেপারগুলো বুঝিয়ে দিবেন আপনি?
– “মানে কি,একটু আগে বুঝলাম তো?
– ” মানে খুঁজেন কেনো,যা বললাম তাই করেন,এবং যা বলবো সেটাই করতে হবে কারন আমি আপনার বস।ওকে।
-“বস মাই ফ্যুট।ওনাকে একবার বুঝালাম আরো হাজার বার বুঝাবো নাকি।
– “এই যে কি বিড় বিড় করছেন। কথা কম কাজ বেশি হবে।যা বললাম করেন।
– “হুম করছি বলে সিনহা ওনাকে বুঝিয়ে দিতো লাগলো।অনেক সুন্দর করে বুঝিয়ে দিলো।
.
সিফাত কে।সিফাত অবাক হয়ে তাকিয়ে ভাবছে বাহ সিনহা তো ভালো কাজের হইছে।আগে শুধু সংসার চালাতো আর এখন জবও করতে পারে।অফিসও চালাতে পারে।মনে মনে খুশি হলেও সিনহা কে খোচা দেওয়ার জন্য সে বললো।
.
– “বাহ আপনার দেখি ভালো উন্নতি হয়েছে।আগে শুধু সংসার চালাতেন আর এখন অফিশিয়াল কাজও দেখি ভালোই পারেন জবও করেন।অভিজ্ঞতা ভালোই হয়েছে দেখছি।তো এতো অভিজ্ঞতা ভালো কিভাবে হলো কতোবছর হলো জব করছেন বিয়ের পর থেকেঔ নাকি। বর বসিয়ে খাওয়াই না তাইতো।জব করতে পাঠায় উপার্জনের জন্য।ইশশ কি ভোগান্তুি।তবুও আপনি সুখি কারন এক সংসার ছেড়ে ভালাবাসার৷ মানুষের হাত ধরে অন্যসংসার পেতেছেন।
-” শুনুন প্রথমেই বলেছি আমার পার্সোনাল বিষয়ে নাক গলাবেন না।বস বসের মতো থাকবেন।ঘর সংসারের খোঁজ নিয়ে আপনি কি করবেন।আর মেয়েরা ঘরে বসে থাকবে কেনো।মেয়েরা নিজের দক্ষতায় উপার্জন করতে জানে।আর জব করা শুধু উপার্জনের পথ না।দক্ষতা প্রমান করারও মাধ্যম।মেয়েরা কোনো অংশে কম না।কথাগুলো বলে সিনহা নিজের কেবিনে চলে গেলো।
.
এতো তেজ হয়েছে সিনহা তোমার।আমায় তেজ দেখানো দাড়াও দেখাচ্ছি তোমায়।আমার সাথে মিসবিহেভ করা।তোমায় আমি,, এগুলো ভাবছে আর রাগে লাল হয়ে যাচ্ছে সিফাত।
.
To be continue……