#আমার_সংসার
.
.
Part:24
.
.
Writer:Mollika Moly
.
.
সকালে সিনহা স্বপ্ন কে স্কুলে দিয়ে অফিস চলে গেলো।নিজের ডেস্কে বসে আছে।সিফাত এলো,তখন সব ইম্পোলয়রা দাড়িয়ে গুড মর্নিং বললো।বাট সিনহা নিজের কাজে এতো টা মনোযোগী ছিলো যে সে খেয়ালই করেনি সিফাত অফিসে এসেছে।সবাই বসে পড়লো।সিফাত এসে সিনহার ডেস্কের সামনে দাড়িয়ে আছে।সিনহা সেদিকে খেয়াল না করে নিজের মনের মতো করে কাজ করে যাচ্ছে। সিফাত অনেক সময় ধরে দাড়িয়ে থাকার পরও সিনহার কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে “সিনহা” বলে দিলো একটা ধমক।সিনহা চমকে উঠে হকচকিয়ে উত্তর।
– “কি কি কি হয়েছে?
– ” কি মানে কি,কেবিনে এসো বলে সিফাত কেবিনে চলে গেলো।
সিনহাও পিছন পিছন গেলো।
– “বলো কি হয়েছে,এভাবে চিল্লানি দাও কেন,ওরে বাপড়ে কান পুরো ঝালা পালা।
– ” হোয়াট দ্যা এই তোমাকে এতো কথা বলতে কে বলেছে,আর তুমি করে বলছো কেনো আমাকে কি তোমার বর পেয়েছো?বস আমি তোমার আপনি বলবে।
– “যাহ বাবা বর পাবো কি আপনি আমার বর ই তো,বিড় বিড় করে বললো সিনহা।
– ” কি বিড় বিড় করছো?
– “কই কিছু নাতো।
– ” আমি শুনেছি তুমি কিছু বলছিলে বাট বুঝতে পারিনি,বলো কি বলছিলে?
– “ঘোড়ার ডিম আর আপনার মুন্ডু।মাথার সাথে সাথে কান টাও গেছে নাকি?
– ” কি বললে তুমি বলেই।হাতদুটো মুঠো করে সিনহার দিকে এগোতে লাগলো।
– “ওয়েট ওয়েট আপনি এমন এগোচ্ছেন কেনো।সড়ুন সামনে থেকে সরুন বলছি?
– ” কেনো সড়বো কেনো সড়বো না আমি।বলেই সিফাত সিনহার দিকে আরো এগোতে লাগলো।
সিনহা পিছুতে পিছুতে দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেলো।
– “দেখুন আর এগোবেন না থামুন বলছি,ভালো হবে না বলে দিলাম?
– ” কেনো কি করবে তুমি,কি ভালো হবে না।বলে সিফাত সিনহার অনেক কাছে চলে গেলো।সিনহার কোমড়ে হাত দিয়ে নিজের সাথে মিশিয়ে নিলো সিনহা কে।কানের কাছে মুখ নিয়ে গেলো।
– “দেখো কতো কাছে এসেছি তোমার কি করবে তুমি।কিছুই না।কিছুই করতে পারবে না।আমার অধিকার আছে তোমার ওপর।কানের কাছে ফিসফিসিয়ে বললো সিফাত কথাগুলো।
.
সিনহা জমে যাচ্ছে। সিফাতের ছোয়ায় তার শরীরের কাটা দিয়ে উঠছে।নিঃশ্বাস দ্রুত প্রশ্বাস হচ্ছে।সিফাতের নিঃশ্বাস সিনহার ঘাড়ে পড়ছে সে পাগল প্রায় অবস্থা। অনেক বছর পর সিফাতের এতো কাছে।নিজেকে সে সামলাতে পাড়ছে না।কিন্তু এগুলো ঠিক না কি করতে চাইছে সিফাত এগুলো ভেবেই সিনহা সিফাত কে ধাক্কা দিলো।সিফাত তাল সামলাতে না পেরে পড়ে গিয়ে টেবিলের কোনা লেগে কপাল অনেক টা কেটে গেলো।রক্ত বের হতে লাগলো।সিনহা দেখে চমকে উঠলো ভয়ে।কাটা জায়গায় হাত দিতে নিলেই সিফাত ওর হাত সড়িয়ে দেয় রেগে।সিনহা সিফাতকে পাত্তা না দিয়ে ড্রয়ার থেকে ফার্স্ট এইড বক্স নিয়ে এসে ব্যান্ডেজ করে দিতে লাগলো।সিফাত প্রথমে বাধা দিলেও সিনহার সাথে পেড়ে না উঠে চুপ হয়ে যায়।সিনহা ব্যান্ডেজ করে দিচ্ছে আর সিফাত অপলক তাকিয়ে দেখছে।সিনহার চোখ জলে টলমল যেনো পলক পড়লেই জল গড়িয়ে পড়বে।
– “সরি আমার খুব ভুল হয়ে গেছে আসলে আমি এভাবে ইচ্ছা করে করেনি,সরি প্লিজ,আমি বুঝতে পারিনি।ব্যান্ডেজ করিয়ে দিয়ে সিফাত কে বললো সিনহা।
– “সরে যাও সামনে থেকে।
– ” সরি রাগ করবেন না প্লিজ?
– বলছিনা সামনে থেকে সরে যেতে।গেট আউট।প্রচুর রেগে বললো কথাগুলো সিফাত।আর সিনহা ওনার রাগ দেখে চলে গেলো ভয়ে।
.
সিনহা সোজা গিয়ে নিজের ডেস্কে চুপচাপ বসে রইলো।আর সিফাত রাগে চোখ লাল করে ফেলছে।সিনহা ওকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিলো ওর কাছে আসায়।আমার ভালবাসার মানুষের কাছে আমি যেতে পারবো না।কেনো পারবো না ওহ ওতো আরেক জনের বউ বাট সে আমারো বউ কারন আমাদের ডিভোর্স হয়নি এখনো।আমার অধিকার আছে ওর ওপর।সিনহা লিগ্যালি আমার স্ত্রী সো ও শুধুই আমার হবে আর কারো না।সিনহা তোমাকে আবারো ফিরতে হবে আমার কাছে,ফিরতেই হবে।তবে ভালোবেসে তোমায় আমি ফিরাবো না।তোমায় ফিরিয়ে জিবন নরক করে তুলবো।আমি যতটা কষ্ট পেয়েছি তার দ্বিগুণ কষ্ট আমি তোমায় দিবো সিনহা।তোমার ভালবাসার মাঝে আমি আসছি ভাঙন ধরাতে।প্রস্তুত হও সিনহা কষ্ট কে স্বাগত জানানোর।
.
অফিস শেষে সিফাত বাড়ি ফিরে সোজা ওর মায়ের কাছে যায়। মায়ের কোলে মাথা রাখে।
– “আজ কি হলো বাবা তোর।তুই তো সহজে আমার কোলে মাথা রাখতে আসিস না।আজ কি হয়েছে?
– ” মা একটা কথা বলবো?
– “বল বাবা কি বলবি?
– ” আমি যদি সিনহা কে ফিরিয়ে নিয়ে আসি তাহলে কি ওকে মানবে?
– “মানে কি বলছিস তুই এবার।আবারো জারা মতো করছিস,ওর সময় যেটা করেছিলি?তোর বিয়ের আর ১৫ দিন আছে ভুলে যাস না তোদের আংটি বদল হয়ে গেছে।
– ” না মা।আমি সে ভুল আর করবো না।
– “তুই হঠাৎ এ কথা কেনো বলছিস সিনহার কোনো খোঁজ পেয়েছিস?
– ” হ্যাঁ মা।
– “বলিস কি, কোথায় আছে আমার সিনহা কেমন আছে?
– ” অনেক ভালো আছে সে মা।স্বামী সংসার নিয়ে অনেক ভালো আছে।কিন্তু আমি ওকে ভালো থাকতে দিবো না।ওর সব ধ্বংস করে দিবো।ওকে সুখে সংসার করতে দিবো না আমি মা।
– “না বাবা এটা তুই করিস না।দেখ তুই তো ওকে ভালোবাসিস।এটা তুই করতে পারিস না মা।
– ” আমি যে কষ্ট পেয়েছি সেই কষ্ট গুলো কি ওকে আমি ফিরিয়ে দিবো না মা?
– “নাহ দিবি না।কারন ভালবাসা মানে প্রতিশোধ না।ভালবাসার মানুষের কোনো ক্ষতি চাওয়া যায় না।সে যেভাবে সুখে থাকে তাকে সেভাবেই থাকতে দেওয়া উচিত। ও ওর মতো সুখে থাকুক আর তুই সাইরি কে নিয়ে নতুন জিবন শুরু কর সুখে থাক।তুই ওকে দেখিয়ে দে তুইও সুখে থাকতে জানিস।
অনেক টা সময় সিফাত চুপ করে থাকার পর আস্তে করে ” হুম”বলে উঠে চলে গেলো।
.
আর সিনহা অফিস থেকে ফিরে ডায়েরি হাতে নিয়ে বেলকনিতে বসে পড়লো।রোজ সিনহা ডায়েরি লেখে।ডায়েরির সাথে কথোপকথন তার।নিজের মাঝে লুকিয়ে রাখা হাজারো বিষাদ জড়তা তার ডায়েরির সাথে শেয়ার করে।খানিক সময় ডায়েরির সাথে কাটিয়ে ডায়েরিটা রেখে একটু খানি ছাদে গেলো।গিয়ে দেখে ফাহিম গিটারের তারে সুর তুলে গান গাইছে।সিনহা পিছনে গিয়ে চুপচাপ গান শুনতে লাগলো।বললো না কিছু।গান শেষে,,,,
– “বাহ খুব সুন্দর গানের গলাতো আপনার।বেশ ভালো গান গাইলেন।মন টা প্রফুল্ল হয়ে গেলো।
– ” কি যে বলেন না আপনি?
– “হ্যাঁ ঠিকই বলেছি।আপনার গানের গলা অনেক সুন্দর। সেজন্যই অনেকক্ষন থেকে এসে শুনছিলাম।
– ” ওহ তার মানে আপনি অনেকক্ষন থেকে এসে লুকিয়ে লুকিয়ে আমার গান শুনছিলেন?
– “জ্বী,,।
– ” এটা কিন্তু ঠিক না, লুকিয়ে লুকিয়ে গান শোনা।
– “এতো সুন্দর গান শোনার লোভ সামলাতে পারিনি।ডাকলে বা সামনে গিয়ে দাড়ালে গান গাওয়ার ব্যাঘাত ঘটতে পারে তাই সামনে যাইনি বা ডাকিনি।
– ” হুম বুঝলাম।
– “আপনার গান শুনলে মন খারাপ মন নিমেষেই ভালো হয়ে যাবে।আলাদা একটা টান আছে আপনার গানের সুরে।মনে হয় হারিয়ে যাচ্ছি গানের মাঝে অতলে ডুবে যাচ্ছি সুরের সাগড়ে।
– ” একটু বেশি বেশি বলা হয়ে গেলো মনে হয়?
– “উহু মোটেও না।আমারতো মনে হয় কম হয়ে গেলো।আমি যেটাই বলি না কেন কম হয়ে যায়।মানুষের যখন কোনো কিছু খুব বেশি ভালো লেগে যায়,তখন সে ভাষাহীন হয়ে যায়।প্রশংসা করার সঠিক ভাষা খুঁজে পাওয়া যায় না।আমারো ঠিক এমনটাই হয়েছে।আমি আপনাকে যেভাবেই প্রশংসা করি না কেনো কম পড়ে যাবে।
– ” একটা আবদার রাখবেন?
– “হুম বলুন?
– ” অনেক বড় আবদার কিন্তু।রাখতে পারবেন তো বলুন,ভেবে?
– “আরে বলুন তো?.
– ” এক কাপ চা বানিয়ে খাওয়াবেন?
– “হিহিহিহি এই কথা বলতে এতোকিছু?
– ” হিহিহিহি।
– “ওকে এখানে থাকুন আমি নিয়ে আসছি।
বলে সিনহা নিচে চলে গেলো চা নিয়ে আসতে।
আর ফাহিম খানিক মৃদু হাসলো।
.
দু কাপ চা নিয়ে ছাদে আসলো সিনহা।এক কাপ বাড়ি দিলো ফাহিমের দিকে হাসিমাখা মুখে।সিনহা ফাহিমের সাথে সব টা শেয়ার করেছে।অনেক ভালো বন্ধু ভাবো।সিনহা যখন সিফাতের বাড়ি থেকে চলে এসেছিলো তখন স্বপ্ন কে নিয়ে যখন রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়াতো তখন ফাহিম ওকে ওর সাথে নিয়ে আসে।তারপর সবটা শুনে।সিনহার সবকিছু ফাহিমের জানা।অজানা কিছুই নেই।
.
ফাহিম হাত বাড়িয়ে চায়ের কাপ নিয়ে চায়ের কাপে চুমুক দিলো।
– “আপনার হাতের চা জ্যাস্ট অসাধারন।
– ” থাংকু।
– “স্বপ্ন কোথায়?
– ” কোথায় আবার ওর যা কাজ সেটাই করছে বসে বসে কার্টুন দেখছে।
– “হুম,,আজ কি মন ভালো?
– ” হুম ভালো তো, ভালো না থাকার কি আছে?
– “না প্রায়সই মন খারাপ থাকে আপনার তাই বললাম।
– ” হুম।
– “তাকে কি এখনো মনে পড়ে?
– ” চুপ করে আছে সিনহা।
– “কি হলো চুপ করে রইলেন যে?
– ” একটা কথা বলবো?
– “জ্বী বলুন?
– ” তার সাথে আমার আবারো দেখা হয়েছে?
– “বলেন কি কোথায়,?
– ” আমি তার কোম্পানিতে জব করি।
– “ওহ তাহলে তো ভালো সবসময় সামনে দেখতে পান।
– ” হুম বাট এটা আমার ভালো লাগছে না।
– “কেনো?
– ” ওর সামনে থাকলে সব মনে পড়ে যায় কষ্ট হয় খুউব।
– “সে কি সংসারে নিজেকে জড়িয়েছে?
– ” জড়াবে না কেনো বলুন তো,সে জড়াবে জন্যই তো আমি চলে এসেছিলাম।আমি আসার পরই হয়তো জড়াইছে।
– “ওহ আচ্ছা।
– ” হুম।
– “আপনি কি করবেন ভাবছেন?
– ” মানে,,?
– “বললাম সারাটা জিবন কি এভাবে কাটাবেন?
– ” হয়তো।
– “এভাবে জিবন কাটানো যায়?
– ” কাটছে তো।
– “হ্যাঁ কাটছে তবে কাটার মতো কাটছে না।
– ” এ ভাবেই আমি অভ্যস্ত হয়ে গেছি।
– “সেটাই।
– ” হুম।
ওদের কথা চলতেই আচমকা বৃষ্টি নেমে এলো।তরিঘরি করে ওরা ছাদ থেকে চলে এলো। দুজনেই হালকা ভিজেছে।দুজনে যে যার ফ্ল্যাটে চলে গেলো।
.
To be continue……….