#বর্ষনের_শেষে
পর্বঃ৬
#সাদিয়া_চৌধুরী_তাহমিনা
সকাল ১১ টা বেজে গেছে।তারিন সহ অরিনের সব কাজিনরা কাপড় থেকে লাগিয়ে বিভিন্ন থাল নিয়ে তারেকদের বাসার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হচ্ছে।সবাই যখন গাড়িতে উঠবে তখন তারিনকে ডেকে উপরে নিয়ে যায় অরিন।রুমে ঢুকতেই তারিন বললো
“কিরে আপু ডেকে আনলি কেন?”
অরিন ড্রয়ার থেকে কিছু একটা বের করে তারিনের হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললো
“এটা তোর দুলাভাই কে দিস”
“হায় ভালোবাসা। আহা কি সুন্দর উপহার দেয়া হচ্ছে”
“একটা দিবো ধরে।বড় বোনে সাথে ফাজলামি হচ্ছে”
অরিনের কথায় রুম থেকে হেসে হেসে বের হতে সময় তারিন বললো
“এমন ভালোবাসা না দেখে কী ফাজলামি না করে পারি বল”
তারিন চলে যায়।অরিন আর তারিনের কথার উত্তর দেয় নি।আজ মেহেদী সন্ধা আর কাল বিয়ের অনুষ্ঠান।শ্বাস ফেলে অরিন ভাবছে কাল বা আজ সেসব অচেনা উপহার যেন অার না আসে।বাসা ভর্তি মেহমান কোনভাবে যদি তারেকদের বাসায় এসব খবর পৌঁছায় তাহলে কেলেংকারী হয়ে যাবে। হঠাৎ অরিনের মনে হলো তারেককে একটা ফোন দেয়া দরকার।বিছানার পাশে রাখা ছোট টেবিল থেকে ফোন নিয়ে তারেকের নাম্বারে কল দিলো।রিং হচ্ছে কিন্তু ফোন ধরছে না।হয়তো এখনো রাগ কমেনি।আরও কয়েকবার ফোন দিয়েও যখন দেখলো তারেক ফোন দিচ্ছে না তখন ৫/৬ লাইনের একটা মেসেজ লিখে সেন্ড করলো।তারেকের কাছ থেকে আজকের মতো বিদায় নিয়েছে সে।বিয়ের ঝামেলা আর বাসায় এতো মেহমানদের ভিড়ে ফোন হাতে নেয়া হবে বলে মনে হচ্ছে না।তাই ভাবছে ফোন অফ করে দিবে।কিন্তু এমন সময় আবার সেই অচেনা নাম্বার থেকে কল আসলো।ফোন ধরতেই কেটে দিলো।সাথে সাথে আগের মতো মেসেজ টিউন ভেজে উঠলো।মেসেজ অপেন করতেই লেখা ভেসে উঠলো
“বলেছিলাম না, আর বেশি অপেক্ষা করাবো না।হুম আমি আসছি,রবিবারেই জানতে পারবে আমি কে।ভালো থেক”
মেসেজটা পড়ে অরিন অবাক।রবিবারে তাদের রিসিপশনের অনুষ্ঠান।যদি দিনের বেলায় আসে তাহলে তাদের কাউকেই বাসায় পাবে না আর রাতে আসলে পাবে।তবে তারেকদের বাসার অনেকেই সাথে আসবে।কি যে হবে আল্লাহ জানেন।তারেককে এ ব্যাপারে যে বলবে সে সুযোগ এ নেই।তাই অচেনার মেসেজ স্ক্রিনশট দিয়ে তারেককে পাঠিয়ে ফোন অফ করে দিলো।
বিকেল ঘনিয়ে সন্ধা নেমে এসেছে।তারিনরাও চলে এসেছে সেই কোন দুপুরে খেয়ে দেয়ে।অরিন প্রায় তৈরি।এখন শুধু নিচের সব কিছু ঠিক ঠাক করে ডাক দিলেই অরিনকে নিয়ে যাওয়া হবে। সন্ধা ৭ টা বেজে যেতেই অরিনকে নিয়ে যাওয়ার জন্য বলা হলো।কেউই বেশি রাত করতে চান না।মেহেদী সন্ধা শেষ করে রুমে এসে অরিন যখন সব গয়না খুলছিল, তখন তারিন দ্রুত রুমে এসে বললো
“দুলাভাই তোকে খুঁজছে আপু”
পেছন ফিরে অরিন বললো
“কোথায়”
“ফোনে নাকি তোকে পাচ্ছে না।তাই আমারটায় কল দিলো নে কথা বল”
“আজ আর কথা বলবো না।চলে যা”
“আরে কথা বললে কি হয়েছে।মা জানবে না”
“উহু মা বলেছে এই দু দিন কথা বলার দরকার নেই।কালকে তো বিয়েই।আর যেহেতু মাকে কথা দিয়েছি তাই আর কথা বলবো না”
কোমরে হাত দিয়ে বোনের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে তারিন তারেককে ফোনে বললো
“দুলাভাই,আপুর কথা তো শুনলেই।এখন কি রেখে দিবে”
তারেক কি বললো কে জানে।তারিন কল কেটে অরিনকে বললো
“তুই ও কিযে করিস।আচ্ছা ফ্রেশ হয়ে ঘুমিয়ে পর।”
বলেই তারিন চলে গেলো।দেখতে দেখতে রাত পেরিয়ে সকালের হৈচৈ মিটিয়ে দুপুর হয়ে গেলো।কনে কে সেই কখন স্টেজে বসানো হয়েছে।যেহেতু আগেই আকদ হয়ে গেছে তাই বর কনেকে একসাথেই বসানো হয়েছে।অরিনের কানের কাছে মুখ এনে আস্তে করে তারেক বললো
“অবশেষে বিয়ের দিন চলে আসলো।এতো জলদি বিয়ে হচ্ছে কেন”
তারেকের কথায় হাসবে নাকি কাদবে খুঁজে পাচ্ছে না অরিন।তারেক আবারও বললো
“কাল তোমার দেয়া স্ক্রিনশট দেখেছি।যেহেতু বলেছে রবিবারে আসবে তাহলে অপেক্ষা করে দেখি সে কে বা কি চায়”
এই কথাটা উঠতেই ভয় কাজ করছে অরিনের।এই সুন্দর মুহূর্তে সেই আজগুবি অচেনার কথা না তুললেই তো পারতো।ভয় লজ্জা কে পাশে রেখে মৃদু গলায় অরিন বললো
“আজকে অন্তত এই টপিকটা কি বাদ দেয়া যায় না”
অরিনের কথা বুঝতে পেরে তারেক চুপ হয়ে গেলো।অনেকে এসে ছবি তুলছে তাদের সাথে।তারা এখন হয়রান প্রায়।বিরক্তি নিয়ে স্টেজে নাম মাত্র বসে আছে।তখন একটা বাচ্চা এসে অরিনের হাতে ছোট্ট একটা বক্স দিয়ে বললো
“আন্টি অান্টি একজন পাঞ্জাবি পরা আংকেল তোমাকে এটা দিতে বলছে”
বাচ্চাটি চলে যেতেই তারেকের দিকে তাকালো অরিন।তারেক ইশারায় বললো বক্সটা খুলতে।ভয়ে ভয়ে বক্স খুলতেই দেখলো একটা আংটি।মুহূর্তেই তারেকের চোখ মুখ শক্ত হয়ে গেলো।এমন রাগ দেখে অরিন বেশ ভয় পাচ্ছে।তারেক তা বুঝতে পেরে বললো
“ভয় পেও না এখানে কিছু করবো না।বাসায় গিয়ে তোমাকে কিছু জিজ্ঞেস করবো।আশা করি তখন উত্তর দিবে।এখন স্বাভাবিক থাকো আর আংটিটা নিচে রেখে দাও”
তারেকের কথায় আংটি একটু দূরে ফেলে দিলো অরিন।এখন তো তার ভয় হচ্ছে।বাসায় গিয়ে কি জিজ্ঞেস করবে।সে তো দোষী নয়।যেহেতু আজ তাকে আবারও আংটি দিয়েছে তারমানে সেই ব্যক্তি এখন এখানেই আছে।আজিব তাহলে সামনে আসছে না কেন।আর ভালো লাগছে না এসব।রবিবার যে কখন আসবে আর কখন এসব উদ্ভট কাজগুলোর আসল ব্যক্তিকে খুঁজে মিলবে।
(চলবে)