বর্ষনের শেষে, পর্ব:৭

#বর্ষনের_শেষে
পর্বঃ৭
#সাদিয়া_চৌধুরী_তাহমিনা

মন খারাপ আর ফোলা ফোলা কাজল লেপ্টানো চোখ নিয়ে তারেকের পাশে বসে আছে অরিন।পরিবারের সবাইকে ছেড়ে এসেছে বলেই এতো মন খারাপ।তবে অরিনের কাছে মন খারাপ থেকেও বেশি ভয় হচ্ছে।তারেক কী জিজ্ঞেস করবে কে জানে।অরিনের অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে তারেক বললো
“তুমি কী আমার থেকে কিছু লোকাচ্ছ অরিন”

“না”

“তোমার কী কারো সাথে আগে রিলশন ছিলো ?”

অরিনের সাথে এই কদিন যা ঘটেছে এতে তারেকের এমন প্রশ্ন করাটা স্বাভাবিক।তাই শান্ত স্বরে বললো

“না”

“তাহলে কেন এমন হচ্ছে তোমার সাথে।বলো কেন এমন হচ্ছে।কে দেয় এসব উপহার?”

শেষের কথাগুলো তারেক বেশ রেগেই বললোতারেকের এমন রাগ অরিন আগে দেখেনি।তার পুরো শরীর কাঁপছে।কী বলবে বুঝতে পারছে না।তবুও আস্তে করে বললো

“আমি এসব জানিনা তারেক।বিশ্বাস করো সত্যিই আমি জানিনা।আমি নিজেও বুঝতে পারছি না কে বা কেন এমন করছে”

অরিন আরও কিছু বলতে গিয়েও বললো না।কীভাবে যে তারেককে সে বোঝাবে এসব সে নিজেই জানে না।কিছুক্ষণ চুপ থেকে তারেক বললো
“গুড এখন ঘুমায় ”

বিছানার একপাশে শুয়ে শুয়ে এই বিষয় মিয়ে ভাবছে অরিন।রবিবার আসার আগে ভাবা ছাড়া কিছুই করার নেই।গভীর রাতে কিছু একটার শব্দে ঘুম ভেঙে যায় অরিনের।ঘুমু ঘুমু চোখে তাকিয়ে দেখে তারেক নিচের দিকে তাকিয়ে বসে আছে।তারেকের চাওয়াকে অনুসরণ করে নিচে তাকাতেই দেখলো তারেকের ফোন ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে আছে।অবাক হয়ে ঘুমের লেশ কাটিয়ে তারেক কে সে বললো
“কী হয়েছে তোমার”

“অরিন আমি তাকে খুন করে ফেলবো।সে জানেনা ভালো যখন খারাপ হয় তখন তাকে থামানো যায় না।আমি সত্যিই তাকে জাস্ট খুন করে ফেলবো”

“মানে, এসব কী বলছ।কাকে খুন করবে তুমি?”

“কিছুনা ঘুমাও।এখন কিছু ভালো লাগছে না।”

“আরে আজিব তুমি বললেই হবে নাকি।কী হয়েছে বলো প্লিজ”

“উফ প্লিজ আমাকে একা থাকতে দাও।তুমি ঘুমাও”

মুখ ফুলিয়ে ওপাশ ফিরে শুয়ে পরলো অরিন।তার মাথায় কিছুই ঢুকে নি।কাকে খুন করবে আর কেনই বা করবে।এই রাতের বেলা কি এমন হলো যে তারেক এভাবে রেগে আছে।আল্লাহ জানেন কি হচ্ছে।সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে তারেককে কিছু জিজ্ঞেস করার সুযোগও পাচ্ছে না অরিন।পারা প্রতিবেশীরা নতুন বউ দেখতে আসছে।একটু পর আবার তারিনরা সবাই নিয়ম অনুসারে নাস্তা নিয়ে আসবে।সবাই যখন নতুন বউ দেখতে ব্যস্ত তখনই তারিনরা আসলো।বোনকে ধরে তারিনের সেকি কান্না।শেষ মেশ কতো কিছু বলে তারেক আর অরিন তারিনকে শান্ত করেছে।বিছানায় বসে বোনকে জড়িয়ে ধরে আছে সে।তারেক বললো
“তারিন আমার খুব আফসোস লাগছে,কেন যে একটা ভাই থাকলো না”

তারেকের দিকে তাকিয়ে অরিন বললো
“কেন ভাই দিয়ে কি করবে”

“তারিন যেভাবে কান্না কাটি করছে তাই ভাবলাম ভাই থাকলে তো তোমার যা বানিয়ে আনতাম”

অরিন এ কথা শুনে শব্দ করে হেসে উঠলো।তারিন নাক ফুলিয়ে বললো
“শুধু শুধু আমার পেছনে লেগেছো কেন,ভাই তো আর নাই”

“হ্যাঁ এটাই তো সমস্যা।এখন এক কাজ করি একটা ভাই কিনে নিয়ে আসি,কী বলো তারিন”

“উফ দুলাভাই থামো তো”

তারিনের কথায় অরিন আর তারেক দুজনেই হেসে উঠলো।তবে অরিন বার বার তারেকের দিকে তাকাচ্ছে।কাল রাতের তারেক আর আজকের তারেকের মধ্যে ব্যবধান অনেক।এমন সময় তারেকেরে ডাক পড়ায় সে চলে গেছে।তারেক যেতেই মুখ তুলে অরিনের দিকে তাকিয়ে তারিন বললো
“আপু তুই কী কোন বিষয় নিয়ে চিন্তিত?”

” না তো”

“ওহ আচ্ছা”

তাদের কথায় মাঝেই অরিনের চাচাতো ভাসুরের ৪ বছরের মেয়ে হাতে করে কিছু একটা নিয়ে এসে বললো
“চাচি চাচি এই নাও”

অরিন হাতে নিয়ে জিজ্ঞেস করলো
“কে দিয়েছে মা”

“একটা আংকেল”

তারিন অরিন দুজনেই অবাক হলো।বিশেষ করে অরিনের বিস্ময় যেনো কাটছেই না।বাচ্চাটিকে সুন্দর করে কথা বলে খেলতে পাঠিয়ে দিলো অরিন।তারপর তারিনের মুখোমুখি বসে বললো

“তারিন তোরা কে কে এসেছিস আজ?”

“আমি,মামার ছেলে মেয়ে,আর রাইয়ান ভাইয়া।কেন কি হয়েছে”

“দেখলি না এই যে ছোট্ট উপহার”

“আপু আমি মনে হয় ব্যাপারটা বুঝতে পেরেছি।যদিওবা আরও আগে বুঝেছি তবে পুরো পুরি শিউর না তাই তোকে বলছি না কিছু”

উত্তেজনা মাখা কন্ঠে অরিন বললো
“কি ব্যাপার বলতো”

তারিন বলার আগেই রুমে প্রবেশ করলো তারেক।তবে তারেকের মুখমন্ডল আগের দিনের মতোই রাগী রাগী।অরিনের কাছে এসে হাত থেকে উপহারটা নিয়েই জানালা দিয়ে ছুড়ে ফেলে দিলো।হঠাৎ এমন ঘটনা হওয়ায় তারিন অরিন দুজনেই চোখ দুটো বড় বড় করে তারেকের দিকে তাকালো।তারেক রাগী গলায় বললো

“মানুষ কেন এমন করে বুঝি না।যাই হোক কালকে আমাদের বাসা থেকে শুধু তুমি আর আমি যাবো তোমাদের বাসায়।আমি চাই না এসব ঝামেলা আমার পরিবারের কেউ জানুক”

বিস্ময় নিয়ে তারিন বললো
“কীসের ঝামেলা দুলাভাই”

“কাল সব রহস্য সবার সামনে উন্মোচন হবে।আর তারিন তুমি বাসায় আজ মায়ের আশে পাশেই সবসময় থেক”

কথা গুলো বলেই হন হন করে আবারও বের হয়ে চলে গেলো তারেক।ভয় বিস্ময় আর কৌতুহল নিয়ে তারিনের দিকে তাকাতেই তারিন বললো

“বলেছিলাম না আমি ব্যাপারটা বুঝতে পেরেছি।আমাকে কাল কে আটকায় দেখবো।প্লিজ কিছু জিজ্ঞেস করিস না খুব রাগ লাগছে”

নাক ফুলিয়ে তারিনকে ঝাঝালো কন্ঠে অরিন বললো

“কি শুরু করলি তোরা।আমাকে চিন্তায় ফেলে বলিস কিছু বলবি না।তাহলে আর বলিস কেন,আর শুনবই না আমি”

রাগ করে অরিনও রুম থেকে বের হয়ে গেছে।এদিকে তারিন রাগে ফেটে যাচ্ছে।কালকে সে ছাড় দিবে না।এসব করার সাহস কোথা থেকে পেলো তা সে দেখে নিবে।
(চলবে)
[রবিবার এসে গেছে।কাল কী হয় দেখা যাক]

ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here