রঙহীন জীবনের রঙ,পর্ব:১৬

0
380

গল্প: #রঙহীন_জীবনের_রঙ
পর্ব ১৬
লেখনীতে: #স্বর্ণা_সাহা (রাত)

গাড়িতে দু’জন বসে আছে। নীলাদ্রি গাড়ি চালাচ্ছে আর দিশানী বাইরের পরিবেশ উপভোগ করছে।দুজনের নীরবতার মাঝে শুধুই গাড়ি চলার আওয়াজ শোনা যাচ্ছে। নীরবতা ভেঙে নীলাদ্রিই বললো,
—কিছুদিনের মধ্যেই ফর্মটা জমা দিতে হবে, একদিন সকালে আমার সাথে গিয়ে ফর্মটা পূরণ করে জমা দিও।

দিশানী নীলাদ্রির দিকে তাকিয়ে বললো,
—আচ্ছা,জমা দেওয়ার লাস্ট ডেট কবে?

—আর সাতদিন সময় আছে!

—ওহ! আপনি তো খুব বিজি মানুষ।একটা কাজ করুন, আপনার এই সাতদিনের মধ্যে যেদিন আপনি ফ্রি থাকবেন সেদিন গিয়ে ফর্ম জমা দিয়ে আসবো নাহয়।

—ঠিকাছে!আমি ফোন করে জানিয়ে দেবো কোনদিন আমি ফ্রি থাকবো!

—হুম!ক্লাস কবে থেকে শুরু হবে?

—তোমার ডিভোর্স এর পর পরই ক্লাস শুরু হয়ে যাবে!

—আচ্ছা

কিছুক্ষন চুপ থেকে নীলাদ্রি দিশানীকে জিজ্ঞেস করলো,
—ডিভোর্স এর পর কোথায় থাকবে, বাপের বাড়ি চলে যাবে নাকি?

—এসব প্রশ্নের উত্তর নেই আমার কাছে, ভার্সিটির হোস্টেলেই উঠবো হয়তো!

—এখনো হয়তোর মধ্যেই আছো তুমি?

—ওই হোস্টেলেই উঠবো!

—মেঘা আর সৌম্য তোমার ভার্সিটির ফর্মের ব্যাপারে আগে থেকেই জানতো, মেঘা আর সৌম্য তখন বলেছিলো তোমাকে ওদের বাড়িতে থাকতে বলবে, মেঘা ফোন করবে বলে দিয়েছে আমি তবুও আগে থেকেই বলে রাখলাম আগে থেকেই ভেবে সিদ্ধান্ত নিয়ে রেখো।

—আর কতজনের বোঝা হবো আমি? একেই আপনার ওপর আমি একটা বোঝা হয়ে গেছি আবার মেঘা আর সৌম্যর বোঝা হওয়ার কি দরকার?

—তুমি নিজেকে আমার বোঝা মনে করছো দিশানী? এইটা তোমার থেকে আশা করিনি আমি!

—বোঝাই তো!প্রথমে ছিলাম ভাইয়ের বোঝা তারপর হলাম শশুরবাড়ির বোঝা আর এখন আপনার!আমি বোঝা ছাড়া আর কি?

—এর পর থেকে এসব চিন্তা আর মাথাতেও আনবে না বুঝতে পেরেছো?তোমার মুখে এসব কথা মানায়না।

—আমার জীবন নিয়ে তো এতো চিন্তা আপনার, নিজের জীবন নিয়ে কি ভাবলেন শুনি?

—আমার জীবন নিয়ে আর কি ভাববো? ওই চলছে ভালোভাবেই!

—সেকি বিয়ে-টিয়ে করবেন না?

দিশানীর কথা শুনে নীলাদ্রি ভ্রু কুঁচকে দিশানীর দিকে তাকালো। দিশানী হেসে ফেললো আর বললো,
—সামনে তাকান!সামনে তাকান!এক্সিডেন্ট করাবেন নাকি?

নীলাদ্রি দিশানীর কথা শুনে সামনে তাকালো তারপর বললো,
—এক্সিডেন্ট করানোর মতো কথা বললে তো এক্সিডেন্ট হবেই তাইনা?

—আমি আবার এক্সিডেন্ট করানোর মতো কথা কোথায় বললাম? আমি তো আপনার বিয়ের কথা বলেছি।

—এটা এক্সিডেন্ট করানোর মতোই কথা!

—কেনো বিয়ে করার ইচ্ছা নেই নাকি?

—না!বিয়ে আমি করবোনা!

দিশানী মজা করে বললো,,
—এ বাবা তাহলে আমার ননদটির কি হবে, বেচারি তো আপনাকে পছন্দ করে!

—বিশ্বাস করো দিশানী তখন এক্সিডেন্ট না হলেও এখন কিন্তু এক্সিডেন্ট হওয়ার সম্ভাবনা খুব বেশি!

—সেকি কেনো?

—তোমার ননদকে বিয়ে?মানে তোমার ননদকে বিয়ে করার থেকে সারাজীবন সন্ন্যাসী থাকা ভালো। তোমার ননদিনীটিকে যে বিয়ে করবে তার কপালে দুঃখ আছে, ওই পরিবারের সংসারটাই শেষ হয়ে যাবে।

—ইশ!আপনি যদি এসব বলেন তাহলে তো বেচারী সিঙ্গেল মরবে।

—সিঙ্গেল মরাও কিন্তু একটা আর্ট!তোমার ননদিনী যদি সিঙ্গেল মরে তাহলে ওটা ওর জীবনের সবচেয়ে ভালো কাজ হবে।

দিশানী নীলাদ্রির কথা শুনে নীলাদ্রির দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকালো।তারপর বললো,
—মানে টা কি? আপনারও সিঙ্গেল মরার প্ল্যান আছে নাকি?বিয়ে-টিয়ে করবেন না?

—অন্য কাউকে বিয়ে করে তার লাইফটা আমি নষ্ট করতে পারবোনা,কারণ অন্য কাউকে বিয়ে করলে তাকে আমি কোনোদিনই মন থেকে ভালোবাসতে পারবো না।

—মানে?

নীলাদ্রি গাড়ি থামিয়ে বললো,
—তুমি যেখানে নামবে বলেছিলে সে জায়গাটা এসে গেছে।

দিশানী বাইরে তাকিয়ে দেখলো, ওর বাড়ির কাছে পৌঁছে গেছে। দিশানী গাড়ি থেকে নামলো। তারপর নীলাদ্রিকে “আসছি” বলে বাড়ির দিকে হাঁটা দিলো।দিশানীকে নীলাদ্রির গাড়ি থেকে নামতে একজন দেখলো। সেই একজনটি হলো নির্ঝর। নির্ঝরের ঘরের বেলকনি থেকে ওই রাস্তাটা পরিষ্কার দেখা যায়, ল্যাম্পপোস্টের আলোয় নির্ঝর স্পষ্ট বুঝলো মেয়েটা দিশানী। নির্ঝর দেরি না করে দ্রুত নিচতলায় নামলো।
দিশানী বাড়িতে ঢুকে ড্রয়িংরুমে আসতেই নির্ঝর দিশানীকে জিজ্ঞেস করলো,
—কোথায় গেছিলে তুমি?

দিশানী ভারী কণ্ঠে উত্তর দিলো,
—মেঘাদের বাড়িতে গিয়েছিলাম, বলে গেছিলাম তো তুমি শুনতে পাওনি?

নির্ঝর রেগে গিয়ে বললো,
—মেঘাদের বাড়িতে যখন গেছিলে তাহলে তোমাকে একটা অন্য ছেলে এসে বাড়িতে দিয়ে গেলো কেন? একটা পরপুরুষের গাড়ি থেকে নামলে কেন তুমি?কে হয় ওই ছেলেটা?বান্ধবীর বাড়িতে যাওয়ার নাম করে নষ্টা মেয়ের মতো নষ্টামী করে বেড়াও তুমি?

নির্ঝরের এসব কথা শুনে দিশানী রেগে গিয়ে ঠাস ঠাস করে একটার পর একটা করে চারটা থাপ্পড় বসালো নির্ঝরের দুই গালে। তারপর নির্ঝরকে উদ্দেশ্য করে বলতে শুরু করলো,
—এই শয়তান ছেলে! কাকে তুমি নষ্টা মেয়ে বলছো, আমাকে? তাহলে তুমি কি?ডিভোর্স না হতেই যে ছেলে দ্বিতীয় বিয়ের জন্য মেয়ে দেখতে যায় তাকে কি বলা চলে, নষ্টা ছেলে? আরে গাধা আমি নষ্টা মেয়ে না তুমি নষ্টা ছেলে।তুমি শুধু নষ্টা ছেলে না, তুমি একটা কাপুরুষ!

নির্ঝর এসব কথা শুনে রেগে গিয়ে বললো,
—তোমার সাহস তো কম না তুমি আমাকে কাপুরুষ বলছো!
নির্ঝর এই কথা বলে দিশানীর গায়ে হাত ওঠাতে নিতেই দিশানী চিৎকার করে উঠে বললো,
—খবরদার!গায়ে হাত তোলার চেষ্টা করবে না বলে দিলাম। কোন সাহসে তুমি আমার গায়ে হাত তুলছো? কে তুমি?তোমার মতো কাপুরুষ কে কাপুরুষ বলবো নাতো কি সুপুরুষ বলবো?আরে তোমার মতো ছেলেকে সুপুরুষ বললে সুপুরুষ শব্দটাকে অপমান করা হবে!আরে কেমন পুরুষ তুমি?মানলাম আমাদের ডিভোর্স হচ্ছে কিন্তু আমি তো এখনো তোমার বিয়ে করা বউ তাইনা?তুমি জানো তোমার বউ বান্ধবীর বাড়ি থেকে রাত করে ফিরবে,যেখানে এখনকার দিনকাল এতোটা খারাপ সেখানে তুমি পারতেনা আমাকে মেঘাদের বাড়ি থেকে নিয়ে আসতে? কিন্তু না তুমি তো সেটা পারবে না। উল্টো কেউ তোমার বউকে বাড়ি পৌঁছে দিয়ে গেছে, সেখানে তুমি তোমার বউকে নষ্টা মেয়ে বলছো।বাহ্!কত্ত সুন্দর স্বামী তুমি!আরে তোমার তো মেরুদন্ডটাই নেই। তুমি তো তোমার মা-বোনের খেলার পুতুল, তারা যা বলে তুমি তাই শোনো। তোমার তো ঠিক-ভুল বিচার করার মতো বিবেকই নেই। আসলে তুমি তো একটা মেরুদন্ডহীন লোক।যে শুধু বড় বড় লেকচারই দিতে পারে। আমাকে শাসন করতে এসেছে। কি সুপুরুষ!হাহ

দিশানী দম নিয়ে আবার বললো,,
—এবাড়ির সবাইকে বলে দিচ্ছি, কেউ আমাকে উল্টো-পাল্টা কথা বলতে আসবে না বা গায়েও হাত তুলতে আসবে না। যদি আমার কথার কেউ কোনো নড়চড় করে তাহলে আজকের নির্ঝর এর এই থাপ্পড়টা সবাই মনে রাখবে। কোনো কথা শুনবো না সরাসরি থাপ্পড় মেরে দেবো, দরকার পড়লে আরো বড় কান্ড ঘটাবো। সে যদি স্বয়ং আমার গুরুজন শাশুড়িমাও হয় তাকেও মানবো না।

দিশানী এসব বলে নিজের রুমে চলে গেলো।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here