#Mr_Husband
#লেখিকা: আবনী ইবনাত মুন
#পর্ব_৬
আলিয়া আঁধারের রুমের দরজা ধাক্কাচ্ছে আর জোরে জোরে ডাকছে,
—“মিষ্টি। ও মিষ্টি। মিষ্টি দরজা খোলো।
আঁধার ওয়াশরুম থেকে বের হতেই দরজা ধাক্কানোর আওয়াজ শুনতে পেল। আঁধার দরজা খুলে দেখলো আলিয়া আঁধার কাটা ভ্রুটা উপরে তুলে জিজ্ঞেস করলো,
—“তুই এতো সকালে আমার রুমের সামনে এসে এভাবে চিৎকার চেঁচামেচি করছিস কেন?”
—“মিষ্টি কোথায়?”
আঁধার কিছুটা ধমকের সুরে বলল,
—“মিষ্টি কি আমার রুমে থাকে নাকি? যা ফ্রিজে গিয়ে দেখ।”
আলিয়া মেকি হেসে বলল,
—“হ্যাঁ ভাই মিষ্টি তোমার ঘরেই থাকে।”
বলেই আলিয়া রুমে ঢুকে গেল। তারপর ঘুমে বিভোর মুনের দিকে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে বলল,
—“ওই যে মিষ্টি।”
আঁধার ভ্রু কুঁচকে বলল,
—“ও মিষ্টি?”
—“হ্যাঁ তো ও খুব মিষ্টি।”
—“ওর কি নাম নেই? তুই মিষ্টি বলে থাকিস কেন?”
—“আছে। কিন্তু ওকে দেখতে পুরোই মিষ্টির মতো। তাই আমি ওকে মিষ্টি বলেই ডাকি।”
আলিয়া মুনের কাছে গিয়ে ওকে ধাক্কা দিয়ে ডাকতে লাগলো কিন্তু মুন উঠছেই না। তাই আলিয়া ক্লান্ত হয়ে আঁধার কে বলল,
—“ভাই তুমি মিষ্টি কে উঠিয়ে নিচে পাঠিয়ে দিও। পাপা ও কে ডাকছে। আর তুমি ও তাড়াতাড়ি চলে এসো।”
আলিয়া চলে গেল। আঁধার মুনের কাছে এগিয়ে গিয়ে ও কে ডাকতে লাগলো। কিন্তু মুন কিছুতেই উঠতে চাইছে না। ব্লাংকেট টেনে মুড়িয়ে আছে। আঁধার ব্লাংকেট টা এক টানে মুনের উপর থেকে সরিয়ে নিলো। তারপর আবার ডাকতে লাগলো। মুন বিরক্তিতে মুখ কুঁচকে ঘুম ঘুম কন্ঠে বলল,
—“আম্মু প্লিজ বিরক্ত করো না তো। আরেকটু ঘুমাতে দেও।”
বলেই মুন আবার ঘুম। আঁধার ধমকের সুরে বলল,
—“ইডিয়েট আমি তোমার আম্মু?”
আধার এক গ্লাস পানি নিয়ে পুরোটাই মুনের মুখের উপরে ছুঁড়ে মারলো। সঙ্গে সঙ্গে মুন ধরফরিয়ে উঠে বসলো। মুন চোখ খুলে পিট পিট করে আঁধারের দিকে তাকালো। আর দেখলো আঁধার গ্লাস থাকতে রেগে ওর দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। মুন আলসেমি ভেঙ্গে আঁধারের দিকে তাকিয়ে বিরক্তির কন্ঠে বলল,
—“আপনি কি পানি ছুরে মারা ছাড়া এমনি ভালো ভাবে ডাকতে পারেন না।”
—“তুমি ভালো কথার মানুষ না।”
—“আচ্ছা আপনি সবসময় এভাবে কথা বলেন কেন? কেন একটু মিষ্টি করে কথা বলা যায় না? সব সময় শুধু খ্যাকখ্যাক করতেই থাকেন। মুখ দিয়ে যেন করলার জুস ঝরছে। শাশুমা মনে হয় জন্মের পর আপনার মুখে মদু দেয়নি। থাক সমস্যা নেই এখন থেকে আমি আপনাকে রোজ দু’চামচ করে মধু খাইয়ে দিবো। তারপর থেকে দেখবেন আপনার মুখ থেকে করলার জুসের বদলে মধু ঝরতে শুরু করবে।”
আঁধার বিরক্তির ভঙ্গিতে বলল,
—“তুমি এক সাথে এতো কথা বলো কি করে? মুখ ব্যথা হয় না তোমার?সব সময় শুধু ফালতু কথা।”
—“সত্যি কথা বললেই দোষ হুহ।”
—“তুমি সত্যি কথা বলো না। শুধু ফালতু কথাই বলো।”
মুন বেড থেকে নামতে নামতে বলল,
—“আপনি না মেয়েদের মতো সব সময় ঝগড়া করার জন্য রেডি হয়ে থাকেন।”
আঁধার চেঁচিয়ে বলল,
—“হোয়াট?”
—“নাথিং।”
—“তাড়াতাড়ি ফ্রেস হয়ে নিচে যাও। ড্যাড তোমাকে ডাকছে।”
—“আপনি যাবেন না? এখানে একা বসে কি করবেন?”
—“আমার কাজ আছে।”
_________________
মুন নিচে নামতেই দেখে আরমান রেজওয়ান সোফায় বসে বসে নিউজ দেখছেন। মুনকে দেখেই সে একটা সুন্দর হাসি উপহার দিয়ে মুনকে কাছে ডাকলেন। মুন গিয়ে আরমান রেজওয়ানের পাশে বসলো। মুন কথা বলতে একটু ইতস্তত বোধ করছে। আরমান রেজওয়ান হেসে বললেন,
—“কেমন আছো মামনী?”
—“ভালো। আপনি?”
—“মামনী আমাদের কি এখনো আপন ভাবতে পারো নি?”
মুন অবুঝ ভঙ্গিতে বলল,
—“কেন আঙ্কেল?”
—“বোকা মেয়ে আমি কি এখনো তোমার আঙ্কেল হই?”
—“সরি। আসলে……..”
আরমান রেজওয়ান আবারো হেসে বললেন,
—“সমস্যা নেই। প্রথম প্রথম একটু প্রবলেম হবে। শোনো মামনী তুমি যেমন তোমার বাবাকে নিজের মনের সব কথা শেয়ার করতে তেমনি আমাকেও করতে পারো। এখন তো তুমি শুধু কবিরের মেয়ে না। এখন তুমি আমারো মেয়ে। তাই তুমি নির্দ্বিধায় আমার সাথে ফ্রিলি কথা বলতে পারো। আমাকে সব সময় নিজের বন্ধ ভাববে।”
আরমান রেজওয়ান এমন ভাবে ফ্রিলি কথা বলায় মুন কিছুটা অবাক হলো। এ বাড়ির সবাইকে দেখেই মুন খুব অবাক হয়েছে। কারণ ও জানা মতে শশুর শাশুড়িরা বউদের সাথে এতো ফ্রেন্ডি হয় না। তারা সবসময় রাজারানীদের মতো ভাব নিয়ে থাকে। আর সবসময় হুকুম করতে থাকে। এটা করো, ওটা করো, এটা করো না, ওটা করো না। কিন্তু এরা, এরা একদমই আলাদা। মুন খুব ভাগ্যবতী তাই তো এরকম শশুর শাশুড়ি পেয়েছে। জামাইকা একটু বাকা কিন্তু কোনো ব্যাপার না মুন ঠিক সোজা করে নিবে। মুন মন খুলে হেসে বলল,
—“ওকে শশুর বাবা।”
আরমান রেজওয়ান হেসে দিলেন। মুন শুধু চেয়ে চেয়ে আরমান রেজওয়ানের হাসি দেখছে। উনি কথায় কথায় হাসে। সব সময় ঠোঁটে হাঁসি ঝুলে থাকে। মুন ভাবছে তাহলে Mr.Husband এরকম গোমড়া মুখো হলো কি করে? যেখানে মা বাবা দুজনেই সবসময় হাসি খুশি থাকে সেখানে ওই রাক্ষস টা সব সময় নিজেকে রাক্ষসদের রাজা প্রমাণ করার জন্য মুখটাকে ভুতুম পেঁচার মতো ফুলিয়েই রাখে। মুন এসব ভাবতে ভাবতে টিভির দিকে তাকালো আর সাথে সাথে চিৎকার করে উঠলো। ওর চিৎকার শুনে আরিফা রেজওয়ান কিচেন থেকে ছুটে আসলেন। মুনকে ভয় পেতে দেখে আরামন রেজওয়ান ওকে জরিয়ে ধরে মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলল,
—“কিছু হয়নি মামনী ভয় পেও না। আমি আছিতো।”
আলিফা রেজওয়ান ছুটে এসে জিজ্ঞেস করলেন,
—“কি হয়েছে ওর ও এভাবে কাঁপছে কেনো?”
—“নিউজ দেখে।”
আরিফা রেজওয়ান টিভির দিকে তাকিয়ে নিজেও শিউরে উঠলেন। মুন ভয়ে থরথর করে কাঁপছে। ওর হৃদপিন্ডটা জোরে জোরে লাথাচ্ছে। মনে হচ্ছে এক্ষুনি বেরিয়ে আসতে চাইছে। আরমান রেজওয়ান বললেন,
—“তাড়াতাড়ি পানি নিয়ে আসো যাও।”
আরিফা রেজওয়ান নিজেও ভয়ে কাঁপছে। উনি কাঁপতে কাঁপতেই পানি নিয়ে আসলেন। আরামান রেজওয়ান মুন কে পানি খাওয়ালো। পানি খেয়ে মুন কিছুটা শান্ত হলো। আরিফা রেজওয়ান আরমান রেজওয়ানের পাশে বসে ভয়ার্ত কন্ঠে বলল,
—“কত ভয়ানক ভাবেই না মেরেছে। যে বা যারা মেরেছে তাদের কি একটুও দয়া মায়া নেই? এরকম নির্দয় ও মানুষ হয়?”
—“এদের মতো মানুষের রুপি জানোয়ারদের এরকম মৃত্যুই প্রাপ্য। আর যারা এদের মেরছে তারা একদম ঠিক কাজ করেছে।”
আসলে তখন নিউজে এরকম কিছু বলছিল ‘নারী পাচার কারি একটা গ্যাং কে পুলিশ রেসকিউ করেছে। যারা আজ মেয়েগুলো কে বিদেশে পাচার করতে চেয়েছিল। কিন্তু আননোন নাম্বার থেকে একটা ম্যাসেজ আসে যেখানে ওই জায়গার ঠিকানা দেওয়া ছিল। পুলিশ সেখানে যায় আর মেয়ে গুলো সহ পুরো গ্যাং কে রেসকিউ করে। কিন্তু ওই গ্যাং এর একটা সদস্য ও বেঁচে নেই। সবাই কে নিসংসো ভাবে হত্যা করা হয়েছে। পুলিশ এখনো এই ব্যাপারে তল্লাশি চালাচ্ছে। তাদের ধারণা যে ব্যাক্তি মেসেজ পাঠিয়েছে সেই ওই লোক গুলো কে হত্যা করেছে।’ লোকগুলো কে এতো নিসংসো ভাবে মারা হয়েছে যে, যে কারো আত্মা দেখলেই কেঁপে উঠবে।
________________
আঁধার মুন কে কোথাও নিয়ে যাবে বলেছে কিন্তু কোথায় নিয়ে যাবে তা বলে নি। মুন সেই কখন থেকে জিজ্ঞেস করেই যাচ্ছে। কিন্তু আঁধার মুনের প্রশ্নের কোনো উত্তর’ই দিচ্ছে না। মনে হচ্ছে আঁধার মুনের কথা শুনতেই পাচ্ছে না। এক মনে ড্রাইভ করছে। মুন বিরক্ত হয়ে মুখ ভার করে বসে রইল। দেখতে দেখতে আঁধার নিজের গন্তব্যে পৌঁছে গেল। তারপর মুনকে বলল,
—“নামো।”
—“কেনো আমরা কি পৌঁছে গেছি?”
—“হ্যাঁ।”
মুন কাড় থেকে নেমে দাঁড়ালো। আঁধার কাড় পার্ক করতে চলে গেল। মুন বুঝলো এটা হসপিটাল। কিন্তু আঁধার ওকে এখানে কেনো নিয়ে এসেছে? ও তো অসুস্থ ও না। মুন ভালো করে জায়গাটা ঘুরে দেখলো। খুব সুন্দর পরিবেশ। চারদিক পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন। বিভিন্ন ধরনের গাছ। নানা রকমের রং বেরঙের ফুল গাছ। সবকিছু মুনের অনেক ভালো লেগেছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই আঁধার এসলো। মুন আর আঁধার দু’জনেই ভিতরে ঢুকলো। আঁধার মুনকে একটা কেবিনে নিয়ে গেল। কেবিনের দরজা খুলতেই একটা ফুটফুটে বাচ্চা মেয়ের হাসি মাখা মুখ দেখতে পেলো মুন। মুন অবুঝ চোখে আঁধারের দিকে তাকালো। আঁধার বলল,
—“ওর নাম ওলি। কাল যেই বাচ্চা মেয়েটার কথা বলছিলাম ও’ই সেই মেয়েটা।”
#Mr_Husband
#লেখিকা: আবনী ইবনাত মুন
#পর্ব_৭
মুন ওলি’র সাথে খেলছে আর দুষ্টুমি করছে। আবার খিলখিল করে দুজনেই হেসে উঠছে। মুনের বাচ্চা ছেলে মেয়ে খুব পছন্দ। কিন্তু মেয়েদের খুব বেশি পছন্দ করে। মুন আঁধারের কেবিনে একা বসে থাকলে ভোর হবে। তাই আঁধার মুন কে এখানে রেখে সার্জারির জন্য চলে গেছে। মুন আঁধারের নতুন নাম ও রেখেছে ‘মিস্টার হার্ট সার্জেন্ট’। আঁধার নামটা শুনে অনেক অবাক হয়েছিল। আঁধার যাওয়ার আগে মুন কে বলে গেছে এখান থেকে কোথাও যেন এক পা ও না নড়ে। মুন তখন লক্ষি মেয়েদের মতো মাথা নাড়লেও তার পক্ষে আর এখানে বসে থাকা সম্ভব না। কারণ ওলি খেলতে খেলতেই ঘুমিয়ে গেছে। এখন সে একা এখানে বসে কি করবে? তাই মুন আস্তে পা টিপে টিপে বেরিয়ে যায়। কিন্তু মুন এখানের কিছুই চিনে না। তার উপর এতো বড় হসপিটাল। আঁধার কোন ফ্লোরে আছে মুন তাও জানে না। যদি একা একা হারিয়ে যায়? এসব চিন্তা করতে করতে মুন আনমনে হাঁটছিলো। আচমকা কেউ মুনের সামনে এসে ভাউ করে উঠতেই মুন জোরে চিৎকার করে উঠলো। তার রুহু যেন ভয়ে বেরিয়ে যাচ্ছিল। বুকের ভিতর মনে হচ্ছে কেউ হাতুড়ি পেটাচ্ছে। মুনের দু’চোখ বন্ধ। কারেন্টে ধরলে মানুষ যেভাবে কাপে মুন ও ঠিক সেই ভাবেই কাঁপছে। হঠাৎ জোরে জোরে হাসির শব্দ মুনের কানে ভেসে এলো। মুন পিটপিট করে এক চোখ খুলে সামনে তাকাতেই দেখে একটা সুদর্শন যুবক তার সামনে দাঁড়িয়ে শরীর দুলিয়ে হাসছে যেন সে কোনো ফানি ভিডিও দেখছে। মুন শিওর ওকে ভয় দেখানো এই লোকটার’ই কাজ। ছেলেটার হাসি মুনের কাটা ঘায়ে যেন নুনের ছিটে রং মতো লাগছে। মুন রেগে বলল,
—“অসভ্য, অভদ্র, ইডিয়েট, ইস্টুপিড, গাধা কোথাকার। কোনো কমন সেন্স নেই? এভাবে কেউ ভয় দেখায়?”
মুনের কথা শুনে লোকটা আরো জোরে জোরে হাসতে শুরু করলো। মুনের গা পিত্তি জ্বলে যাচ্ছে। ইচ্ছে করছে ঠাঁটিয়ে দুটো চড় দিতে। মুন চলে যেতে নেয় এমন সময় লোকটার গা জ্বালানো কথা শুনে থেমে যায়। লোকটা অনেক কষ্টে হাসি থামিয়ে বললো,
—“তো কিভাবে ভয় দেখায় মিস ভীতুর ডিম।”
কথা টা বলেই লোকটা চোখ টিপ মারল। মুন পুরো রেগে আগুন। মুন থাপ্পড় মারতে যাবে তার আগেই ছেলেটা ক্যাবলাকান্ত হাসি দিয়ে বলে ওঠে,
—“নো নো মিস ভীতুর ডিম। এমন কাজ ভুলেও করবেন না।”
মুন ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে যা দেখে লোকটা হেসে বলল,
—“আপনি যদি আমার গালে চড় মারেন তাহলে আমার ফর্সা গাল টা লাল হয়ে যাবে যা দেখে মানুষ হাসাহাসি করবে। মানে আমার মানসম্মানের পুরো বারো টা বেজে যাবে।”
মুন বিরক্তির সুরে বলল,
—“আপনি ফালতু কথা বড্ড বেশি বলেন। আর ক্যাবলাকান্তের মতো কথায় কথায় হাসেন। জানেন এগুলো কিসের লক্ষণ?”
লোকটা না বুঝার ভান করে বলল,
—“কিসের লক্ষণ?”
—“পাগলের।”
লোকটা চমৎকার একটা হাসি দিয়ে বলল,
—“আপনি কি করে জানলেন? আপনি কি পাগলের ডাক্তার? তাহলে বলুন না এর চিকিৎসা কি?”
মুন দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
—“পাবলিকের হাতে গণ প্যাদানি। দিনে দু বেলা খাবেন। দেখবেন পাগলামী একদম ঠিক হয়ে যাবে।”
বলেই মুন সামনে হাঁটতে লাগলো। লোকটা চেঁচিয়ে বলল,
—“এই যে মিস রাগীনি ফোন নম্বর টা দিয়ে যান। নাহলে অন্তত আপনার নামটা তো বলে যান।”
মুন যেতে যেতে পিছনে ফিরে চোখ রাঙিয়ে আঙ্কেল নাড়িয়ে শ্বাসায়। তা দেখে ছেলেটা বুকের বাম পাশে হাত দেয়। মুন সামনে ফিরে চলে যায়।
.
আঁধার সার্জারি শেষ করে বেরিয়ে ওলি’র কেবিনে যায়। গিয়ে দেখে ওলি ঘুমাচ্ছে আর মুন কেবিনে নেই। আঁধার মুন কে খুঁজতে শুরু করে। এদিকে মুন পুরো হসপিটাল ঘুরে ঘুরে দেখছে। অনেক বড় হসপিটাল। আর খুব পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন। মুন ঘুরতে ঘুরতে বাচ্চাদের যেখানে রাখা হয়েছে সেখানে চলে যায়। মুন দেখে ছোট ছোট বাচ্চারা কানামাছি খেলছে। মুন দরজার কাছে দাঁড়িয়ে ওদের খেলা দেখছিল। হঠাৎ একটা বাচ্চা ছেলে এসে মুনে আঙ্গুল ধরে টানে। মুন হাঁটু ভেঙ্গে বসে ছেলেটার সামনে ছেলেটা মুনের গাল টেনে ফোকলা দাঁতে হেসে দেয়। কি অমইক সেই হাসি। তারপর বলে,
—“এই যে ডল তুমি আমাদের সাথে কানামাছি খেলবে?”
মুন ছেলেটার গাল টেনে বলে,
—“আমি তো তোমাদের থেকে অনেক বড় আমাকে কি খেলতে নিবে?”
—“এই ইনা, মিনা, রাজু, টিনা, সবাই এদিকে আয় শোন।”
ছেলেটা ডাকার সাথে সাথে বাচ্চা গুলো দৌড়ে যায়। তারপর জিজ্ঞেস করে,
—“কি হয়েছে রে শান?”
—“ডল ও আমাদের সাথে খেলবে।”
—“ডল কে রে?”
শান আবার মুনের গাল টেনে বললো,
—“এই যে দেখ একদম জীবন্ত একটা ডল।”
টিনা মেয়েটা বলল,
—“আপু তুমি খেলবে আমাদের সাথে?”
—“হ্যাঁ।”
সবাই খুশি হয়ে ইয়ে বলে চিৎকার করে উঠলো। শান বলল সে সবাই কে ধরবে। তাই টিনা শানে’র চোখ বেঁধে দিলো।
কানামাছি ভোঁ ভোঁ, যাকে পাবি তাকে ছো!!
পূর্বে চাও পশ্চিমে চাও, যদি পারো আমায় ছো!!
বলেই খেলা শুরু করলো। সবাই শান কে ঘিরে রেখেছে। কেউ চিমটি কাটছে। কেউ চুল টানছে। কেউ আবার হালকা করে থাপ্পর ও মারছে। মুন বাচ্চাদের সাথে খেলায় মেতে উঠেছে। এদিকে যে একজনের তার চিন্তায় জান বেরিয়ে যাচ্ছে সেই হুঁশ নেই। আঁধার পুরো হসপিটাল জুড়ে মুন কে খুঁজছে কিন্তু পাচ্ছে না। মুনের জন্য চিন্তা হচ্ছে সাথে রাগ ও হচ্ছে। কত বার বলেছিল ও যেন ওখান থেকে কোথাও না যায় কিন্তু মুন তা শুনে নি। আঁধার একবার শুধু মুন কে পাক তারপর ঠাঁটিয়ে দিবে এক চড়। মুন কোথায় আছে আদোও হসপিটালে আছে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ লাগছে। এই হসপিটাল টা সেভেন ফ্লোলোরের। ওরা সেভেনে ফ্লোরেই ছিল। আঁধার সব গুলো ফ্লোর দেখেছে কিন্তু কোথাও মুন নেই। এখন শুধু সেকেন্ড ফ্লোর’ই বাকি আছে। শান মুনের লং স্কার্টের এক সাইড ধরে ফেলেছে। খিলখিল করে হেসে শান বলল,
—“ডল তোমাকে আমি ধরে ফেলেছি।”
শান চোখ থেকে কাপড়টা খুলে ফেলল। মুন বাচ্চাদের মতো ঠোঁট উল্টে বলল,
—“ইশশ্। ধরা পরে গেছি।”
মুন হাঁটু গেড়ে বসে শান কাপড়টা দিয়ে মুনের চোখ বেঁধে দিলো। মুন বাচ্চাদের ধরার জন্য ওদের পিছনে ছুটছে। কিন্তু চোখ বাঁধা থাকায় কিছুই দেখতে পারছেনা। তাই এটা ওটার সাথে বারি খেয়ে নাজেহাল অবস্থা হয়েছে ওর। মুনের স্কার্টের এক এক কোনা ধরে বাচ্চারা টানছে। মুন কাউকে হাতের নাগালে পাচ্ছে না। চিমটি খেয়ে খেয়ে ওর করুন অবস্থা। হঠাৎ মুন কিছুর সাথে বারি খেলো। মুন হাত দিয়ে নাড়িয়ে চাড়িয়ে ভালো ভাবে দেখে বুঝলো মানুষ। মুন মনে করলো কোনো বাচ্চা তাই মুন জরিয়ে ধরে উৎফুল্ল কন্ঠে জোরে জোরে চিৎকার করে বলল,
—“ইয়ে ইয়ে পেয়েছি, পয়েছি ধরে ফেলেছি। কিন্তু এই সাইজের কোনো বাচ্চা হয়? এই পিচ্চু তুই খাস কি রে যে এই বয়সেই এইরকম তরতাজা সুঠাম দেহের অধিকারী হয়ে গেছিস?”
খুশি খুশি চোখ থেকে কাপড়টা সরাতেই ওর চোখ দুটো গোল গোল রসগোল্লার সেপের হয়ে যায়। মুন ফাটা ফাটা চোখে সামনে থাকা ব্যাক্তির দিকে তাকিয়ে ঢোক গেলে। পুরো রুম জুড়ে পিনপতন নীরবতা। মুন কম্পিত কন্ঠে অস্পষ্ট সুরে বলল,
—“আ-আপ-নি।”
আঁধার মুনের দিকে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। মনে হচ্ছে এক্ষুনি ওই চোখের আগুন দিয়ে মুনকে জ্বালিয়ে ভস্ম করে দিবে। ফর্সা মুখে লাল রেশ ফুটে আছে। চোখ মুখ কঠিন। মুনের তো আঁধার কে দেখেই জান যায় যায় অবস্থা। আঁধারের ঝাঁঝালো কন্ঠে বলে উঠে,
—“তুমি এখানে কি করছো? তোমাকে না আমি ওলি’র কেবিনে বসে থাকতে বলেছিলাম?”
আঁধারের এমন ঝাঁঝালো কন্ঠ শুনে মুন ভয়ে কেঁপে উঠে। আঁধার আবারো চেঁচিয়ে বলে,
—“অ্যান্সার মি?”
—“আ-আমি…..”
মুন কিছু বলতে পারছে না ভয়ে ওর সব কথা গলায় দলা পাকিয়ে গেছে। মুন ধমক এবার শুনে কেঁদেই দিলো। সব বাচ্চারা তাকিয়ে আছে। আঁধার ধমকের সুরে বলল,
—“ইউ হোয়াট?”
মুন অনেক কষ্ট কিছু শব্দ মুখ থেকে বের করে,
—“স-সরি মিস্-মিস্টার হাসবেন্ড।”
—” ‘সরি’ এই একটা ওয়ার্ড ছাড়া কি তুমি আর কিছু পারো?”
শান মুনের হাত টেনে নিচে বসালো তারপর চোখের জল মুছে দিয়ে মুনের গালে একটা চুমু খেলো। আঁধার আর মুন দুজনেরই চোখ চরক গাছ। শান বলল,
—“কেঁদো না ডল। আমি এই পচা আঙ্কেলটা কে বকে দিচ্ছি। তাও তুমি কেঁদো না। তোর চোখের জল আমার সহ্য হয় না।”
শানের এমন কান্ড দেখে আর কথা শুনের মুনের কন্না অটোমেটিক্যালি বন্ধ হয়ে দেছে। ৭/৮ বছরের বাচ্চার এমন কথা শুনে যে কেউই শক খাবে। শান এবার আঁধারের দিকে তাকিয়ে রাগি কন্ঠে বলল,
—“এই যে মিস্টার আপনি আমার ডল কে বোকছেন কেনো? দেখছেন আপনার জন্য আমার ডল কাঁদছে? সরি বলুন আমার ডল কে।”
আঁধার অবাক হয়ে শানের কথা শুনছে। বাচ্চা ছেলেটা ওকে সরি বলতে বলছে? আঁধার মুনের উপর অধিকার খাটিয়ে বলল,
—“ও আমার বউ তাই আমি ওকে বোকতে পারি। কাঁদাতেও পারি। তাতে তোর সমস্যা কোথায় রে?”
—“ডল আপনার বউ হোক বা বোন তাতে আমার কি? আপনি যদি ডল কে বকেন তাহলে আমি ডল কে বিয়ে করে আমার সাথে নিয়ে যাবো। তারপর দেখবো আপনি ডল কে কিভাবে বকেন।”
মুনের চোখ দুটো ছানাবড়া হয়ে গেছে। এই ছেলে বলে কি। আঁধার তর্ক করে বলল,
—“আমার বউ কে তুই আবার বিয়ে করে নিয়ে যাবি?”
—“হ্যাঁ।”
—“তোর সাহস তো কম না।”
—“আমি কি বাচ্চা নাকি যে ভয় পাবো?”
—“নাহ তোকে দেখে তো বাচ্চা মনেই হচ্ছে না। আচ্ছা তোর বয়স কত রে?”
—“আট বছর।”
—“ও হো অনেক বড় হয়ে গেছিস তো দেখছি। তা তুই আর কোনো মেয়ে পেলি না যে আমার বউ কে নিয়ে টানাটানি করছিস?”
শান একটু ভাব নিয়ে বলল,
—“মেয়েরা তো আমার পিছে লাইন লাগিয়ে ঘোরে। কিন্তু আমার মতো হ্যান্ডসাম ছেলের জন্য ডল’ই পারফেক্ট। কিন্তু ডল তোমার মধ্যে কি এমন দেখলো যে তোমাকে বিয়ে করলো। তুমি তো দেখতে আমার চেয়ে বেশী হ্যান্ডসাম ও না।”
—“আমাকে তোর কোন দিক দিয়ে খারাপ মনে হচ্ছে। আর তুই ওর কোমর অবধি ও হবি কি না তা নিয়ে সন্দেহ। আবার আসছে বিয়ে করতে।”
—“আর কিছুদিন পরেই আমি ডলের সমান হয়ে যাবো। তারপর ডল কে বিয়ে করবো।”
এদের ঝগড়া শুনে মুনের মাথা ঘুরাতে। শান নাহয় বাচ্চা বুঝে না অবুঝ কিন্তু আঁধার? মুন না পেরে জোরে চুপ বলে চিৎকার করলো। আর সাথে সাথে সব চুপ হয়ে গেল। মুন আঁধারের দিকে রাগি চোখে তাকিয়ে বলল,
—“আপনি এতো বলল বুইড়া ব্যাটা হয়ে এই টুকু বাচ্চার সাথে ঝগড়া করছেন? ও কি বুঝে যে ওর সাথে আপনি তর্ক করছেন? আচ্ছা আলতু ফালতু কিছু খান নি তো আপনি?”
আঁধারের টনক নড়ে সে এতোক্ষণ কি করছিলো। একটা সাত বছরের বাচ্চার সাথে তর্কে নেমেছে সে। তাও মুনের জন্য নিয়ে। আঁধার নিজের কাজে নিজেই হতভম্ব। আঁধার মুনের কোনো কথাই না শুনে ওকে টেনে নিয়ে যেতে যেতে বলল,
—“কোনো কথা না বলে চুপচাপ আমার সাথে চলো।”
আঁধার মুন কে কারের ফ্রন্ট সিটে বসিয়ে নিজে ড্রাইভিং সিটে বসে ড্রাইভ করতে লাগলো। কিছুক্ষণ পর মুন আবার জিজ্ঞেস করলো,
—“আমরা কোথায় যাচ্ছি?”
আঁধার ড্রাইভ করতে করতে সহজ ভাবে জবাব দিলো,
—“তোমাদের বাড়িতে।”
মুন অবাক হয়ে বলল,
—“হঠাৎ?”
—“হঠাৎ না আগেই ঠিক করা ছিল।”
—“কিন্তু আমরা তো জামা কাপড় ও নেই নি।”
—“সামনের মলের থেকে নিয়ে নিও। এখন একটু বকবক বন্ধ করে চুপ করে বসো।”
.
মুনের মনে হচ্ছে কত বছর পর জানি নিজের বাড়িতে আসছে। মুন কলিংবেল চাপতেই কেউ দৌড়ে এসে দরজা খুলে দিলো। মুন তাকে দেখে অবাকের শেষ পর্যায়ে এসে দাঁড়িয়েছে। মুন অস্পষ্ট স্বরে উচ্চারণ করলো,
—“তাহেরা আপু!”
চলবে,
চলবে,