মন_কেমনের_বৃষ্টি পর্ব ৭+৮

#মন_কেমনের_বৃষ্টি
#পর্ব_৭
#পুষ্পিতা_প্রিমা

আজিজ চৌধুরীর কথা শুনে অবাক হয়ে তাকাল ইশা। তার চোখ গলে পানি বেরিয়ে আসার আগে বেরিয়ে একদলা ঘৃণা। এরা কি মানুষ? নিজেদের স্বার্থের জন্য তারা একটি ছোট্ট মেয়েকে ব্যবহার করছে। প্রয়োজন ফুরিয়ে গেলে যে ছুড়ে ফেলে দেবে তা বলার অপেক্ষা রাখেনা। ইশার চোখজোড়া ছলছল করে উঠল। আজিজ চৌধুরী বলল,
‘ তোমার মামা মামিকে বিয়ের আগে এই শর্ত দিয়েছিলাম যে,তুমি নামেমাত্র আদির স্ত্রী হয়ে থাকবে। শুধু তার দেখাশোনার জন্য। কিন্তু এখন সেই নামেমাত্র স্ত্রী শব্দটা ও থাকবেনা। আইমিকে বলবে তুমি আদির দেখাশোনা করার জন্য শুধু এ বাড়িতে থাকো। স্বামী স্ত্রীর কথা যাতে একদম না উঠে।
ইশা কাঠ কাঠ জবাব দিল,
‘ ওনার সাথে আমার বিয়ে হয়েছে। উনি আমার স্বামী। আমি উনার স্ত্রী। আমি কেন অন্যমেয়েকে আমাদের মাঝে ডুকতে দেব? যেখানে উনি আমাকে চায়।
আজিজ চৌধুরী ইশার কথা শুনে অবাক হলে ও দেখালো না। মেয়েটাকে যতটা ভীতু ভেবেছে তার চাইতে বেশি সাহসী মেয়েটা। আজিজ শান্তভাবে বলল,
আদি সুস্থ হয়ে গেলে তোমাকে চিনবে না। ওর জীবনে ইশা নামক কোনো মেয়ের স্থান নেই। থাকার কথা ও নয়।
ইশা ত্যাড়া জবাব দিল,
‘ উনি না বলা পর্যন্ত আমি এ বাড়ি ছেড়ে কোথাও যাব না।
আজিজ হাসল। বলল,
‘ অসুস্থ আদি মিষ্টিকে চেনে। কিন্তু সুস্থ আদি শুধু আইমিকেই চেনে। সুস্থ হয়ে গেলে ও তো তোমাকে চিনবেই না। তাছাড়া, আদি সুস্থ হওয়া পর্যন্ত তোমার এই বাড়িতে থাকতেই হবে। যাওয়ার কথা উঠছে কেন?
ইশার চোখ থেকে দু ফোটা জল গড়াল। সে আড়ালে মুছে ফেলল তা। বলল,
উনি আগে সুস্থ হয়ে উঠুক। তারপর দেখা যাবে,
আজিজ চৌধুরী এবার গর্জে উঠেন। বলেন,তোমার কি কথা কানে যায় না। তুমি তোমারটাই বলে যাচ্ছ। আমি কি বলেছি তুমি বুঝতে পেরেছ?
ইশা জিজ্ঞেস করল, কি বলতে চাইছেন?
আজিজ সহজ সরল ভঙ্গিতে জবাব দিল,
আইমিকে বলতে হবে আদি সুস্থ হয়ে গেলে তুমি এ বাড়ি ছেড়ে চলে যাবে। আদির জীবন থেকে ও। টাকার জন্য তুমি এ কাজটা করছ।
ইশা অবাক হয়ে তাকায়। সে প্রবল ঘৃণা নিয়ে উচ্চারণ করল,টাকা??? আমাকে তো এসব বলে এ বাড়িতে আনা হয়নি। আমি এ বাড়িতে এসেছিলাম একজন অসুস্থ স্বামীর স্ত্রী হয়ে। যাকে সুস্থ করে তোলাই আমার ধর্ম। সুস্থ হয়ে গেলে ও সে আমার। সংসারটা আমার। কিন্তু এখন দেখছি আমাকে সবাই হাতের পুতুলের মতো নাচাচ্ছে। কেমন বিবেক আপনাদের?
আজিজ চৌধুরী ইশার কথায় জবাব দিলেন না, ‘ শুধু বললেন, তোমাকে আমার শর্ত মানতেই হবে। না হলে তোমার মামা মামিকে আমি পুলিশে দেব। কারণ বিয়েটাতে যে শর্ত ছিল তা মানার জন্য তোমার মামা মামিকে আমি নগদ চার লক্ষ টাকা দিয়েছি। সবকিছুর প্রমাণ আছে আমার কাছে। কি চাও তুমি? তোমার মামা মামি জেলে পচেঁ মরুক? নাকি?
ইশা মুখ ফিরিয়ে নেয় ঘৃণায়। বলে, আর আমার সাথে যে অন্যায় হচ্ছে? অন্যায় করছেন, তার শাস্তি কি হতে পারে?
আজিজ চৌধুরীর মেজাজ চড়ে গেল। বেয়াদব মেয়েটা তার মুখে মুখে কথা বলছে। এমন দুঃসাহস কারো কখনো হয়নি। গর্জন করে বলল,
‘ আমাকে কেন বলছ? তোমার মামা মামিকে গিয়ে বলো। তারা তো টাকা গিলে বসে আছে। আদি আগের চাইতে সুস্থ হয়েছে শুধু তোমার কারণে,তাই তোমার সাথে খারাপ ব্যবহার করতে চাইছি না। যা বলেছি তাই আইমিকে বলবে। যদি ও আইমিকে আমরা বলেছি। তোমাকে জিজ্ঞেস করলে আমি যা বলতে বলেছি তাই বলবে। নয়ত,তোমার মামা মামিকে নিয়ে ভেবে দেখব।
ইশা ঠাঁই দাঁড়িয়ে থাকে। বলে, কতদিনের জন্য কিনেছেন আমাকে?
‘ যতদিন আদি সুস্থ হয়? আজিজ চৌধুরীর নির্বিকার জবাব।
‘ যদি আমি এখনি চলে যায়।
আজিজ ইশার কথায় ভড়কে যান। বলে,’ এখন যেতে পারবে না তুমি। কাগজে উল্লেখ আছে আদি সুস্থ না হওয়া অব্ধি তোমাকে থাকতে হবে। তারপর চলে যাও, সমস্যা নেই। আজিজ চৌধুরী কথা শেষ করার আগেই আলিয়া চলে আসল। বলল,তার আর দরকার নেই। আদি যদি এরকম শান্তশিষ্ট থাকে তাহলে আইমির কথা অনুযায়ী ভারতের অন্যতম শীর্ষ নিউরোসার্জন ড. V.S. মেহতার কাছে আদিকে নিয়ে যাব। আদিকে শুধু নিয়ে যেতে পারলেই হবে। আর আদিকে যাওয়ার জন্য রাজী করাবে তুমি ইশা।
ইশা চোখে বিস্ময় নিয়ে উচ্চারণ করল, ভারতে? এখানে চিকিৎসা নেই?
আলিয়া জবাব দিল, আমি চাই আমার ছেলে প্রপার ট্রিটমেন্ট পাক। পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠুক। এসব টোটকা চিকিৎসায় কাজ হবেনা। তোমার কারণে আদি আগের চাইতে শান্ত হয়েছে ঠিক কিন্তু আদির স্মৃতি এখনো ফেরেনি। হেমোক্যাম্পাস এখনও রিকোভার হয়নি। তার না স্মৃতি ফিরছে না সে স্মৃতি সংরক্ষণ করতে পারছে। এভাবে তো চলবে না। এবার আইমির কথা শোনা যাক। তোমার কাজ হবে শুধু আদিকে ভুলিয়েভালিয়ে রাজী করানো। সেটা হোক জোর করে কিংবা তোমার প্রতি ওর মন বিষিয়ে দিয়ে।
ইশার পায়ের তলার মাটিটা যেন এবার নড়বড় হয়ে গেল। ডক্টর তার সামনে থাকবে না এটা কি করে হয়? ডক্টরকে সে কি করে রাজী করাবে? ডক্টর যে মিষ্টিকে ছাড়া কিছুই ভাবতে পারেনা। আজকাল তো ডক্টর অভিমান করা ও শিখে গিয়েছে। অভিমান করে যদি কোনোকিছু একটা করে বসে? ইশা দিশেহারা হয়ে পড়ল। তার ছোট্ট মাথায় কি করবে কিছুই ভেবেই পেলনা। তার খুব করে আজ কাঁদতে ইচ্ছে হলো। মৃত মা বাবার প্রতি খুব করে অভিযোগ তুলল সে। ছাদের এককোণায় রেলিং ঘেষে সে বসে পড়ল। চিৎকার করে বলল, তোমাদের সাথে আমাকে ও কেন নিয়ে গেলেনা মা? আমাকে কেন এই নিষ্ঠুর পৃথিবীতে রেখে গেলে বাবা? এখানে কেউ আমার আপন নেই। কেউ না। আজ তোমরা থাকলে আমার সাথে এত বড় অন্যায় কখনো হতে দিতেনা। তারা তাদের ছেলের জন্য আমাকে ব্যবহার করছে,যখন তাদের ছেলে সুস্থ হয়ে যাবে, তারা আমাকে ছুড়ে ফেলে দেবে। তারা ও। তাদের ছেলেও।আমাকে কেন নিয়ে গেলেনা তোমরা? আমি আর সইতে পারছিনা। এতকষ্ট আমি আর নিতে পারছিনা। আমি তো ডক্টরের সাথে ভালো থাকতে চেয়েছিলাম। এত দুঃখ-কষ্ট অনিশ্চয়তার মাঝে একটুখানি সুখ খুঁজেছিলাম। এটাই আমার দোষ হয়ে দাঁড়াল। সবচাইতে বড় ভুল হয়ে দাঁড়াল। আমি এখন কি করব? ডক্টরকে দেখা ছাড়া আমি কিভাবে থাকব।
কাঁদতে কাঁদতে ইশা মাথা রেলিংয়ে এলিয়ে দেয়। হিঁচকি তুলে ডাকে, ডক্টর!

আদি মিনিকে শক্ত করে ধরে রাখে। পেছনে দাঁড়ানো লম্বা,সুন্দর মেয়েটার দিকে তার ফিরতে ইচ্ছে করছেনা। মিনিকে ও মেয়েটার কাছে যেতে দিচ্ছে না। মিনি আদির হাতের চাপে ব্যাথা পায়। আর্তনাদ করে ডাকে,মিষ্টি, মিষ্টি।
আইমি আদির চেহারাটা ও দেখতে পাচ্ছে না। পেছনে দাঁড়ানো অবস্থায় সে আবার বলে, আদি আমি মিনির সাথে কথা বলতে এসেছি। ওকে একটিবার আমার কাছে দাও।
আদি যেন আর ও চেঁপে গেল। আইমির দিকে না তাকিয়ে দরজার দিকে একবার তাকাল। মিষ্টির উপর তার রাগ উঠছে আজকাল। মিষ্টি তাকে ফেলে রেখে কোথায় চলে যায়?
আইমি আদির দৃষ্টি অনুসরণ করে বলে, আদি তুমি কি কাউকে খুঁজছ?
আদি মুখ ফিরিয়ে নিয়ে মিনিকে কিছুক্ষণ এই হাত কিছুক্ষণ এই হাতে নিতে থাকে। মিনি ছাড়া না পেয়ে রাগ ঝাড়ে আদির হাতের উপর ঠোকর দিয়ে দিয়ে । আদির যন্ত্রণা হচ্ছে বারবার একজায়গায় আঘাত পেয়ে। সে চোখমুখ খিঁচে সহ্য করে নেয়। মিনি যেন প্রতিযোগীতায় নামল। সে আদির হাতে সমান তালে ঠোকর দিয়ে যাচ্ছে। আদি মিনিকে আর ও সুযোগ দিল। আইমি গলা উচিঁয়ে দেখতেই চোখে পড়ে সেই দৃশ্য। আদির হাতে ঠোকর দিয়ে দিয়ে রক্ত এনে ফেলেছে মিনি। আইমি দৌড়ে যায়। উৎকন্ঠিত গলায় বলে, আদি তোমার আঘাত লাগছে না? কি করছ তুমি আদি। মিনিকে দিয়ে দাও। আমাকে দিয়ে দাও।
আদি সরে গেল। নিজের হাতটি নিজের বুকের কাছে নিয়ে এসে বলল, না তোমাকে দেব না। চলে যাও।
আইমি অনুরোধ করে বলল,আদি তুমি ব্যাথা পাচ্ছ। আচ্ছা মিনিকে দিও না শুধু ওকে ছেড়ে দাও। তোমার হাতে রক্ত। আদি…..
আদি চোয়াল শক্ত করে চিৎকার করে। ডাকে, মিষ্টি!
আইমি ভড়কে যায়। বলে, আদি,আদি তুমি শান্ত হও। ঠিক আছে আমি, , আমি চলে যাচ্ছি। তোমাকে আর ডিস্টার্ব করব না। কখনো ডিস্টার্ব করব না।
আদি যদি খেয়াল করে দেখত তাহলে বুঝতে পারত আইমির চোখজোড়া ভিজে উঠেছে। আদি তার জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকে মাথা নিচু করে। গায়ে সমস্ত শক্তি দিয়ে ডেকে উঠে, মিষ্টি।
আইমি রুম থেকে বেরোতেই দেখতে পায় ইশাকে। বলে, তুমি এতক্ষণ দাঁড়িয়ে বাইরে দাঁড়িয়েছিল ইশা?
ইশা চোখ সরিয়ে অন্যদিকে তাকায়। বলে, কাজের লোক তাই অনুমতি না নিয়ে কি করে ডুকি?
আইমির হঠাৎ মায়া হলো মেয়েটির প্রতি। মেয়েটি নিশ্চই তার দু তিনবছরের ছোট হবে। আইমি সামান্য হাসার চেষ্টা করে বলে, তুমি আমাকে আপু বলতে পারো। আর তুমি আদির জন্য যা করছ তার জন্য আমরা সবাই তোমার কাছে ঋণী।
ইশা ব্যঙ্গ করে হাসে। বলে, ঋণী কেন হবেন? আমি তো টাকার জন্য এসব করছি তাই না? আপনাকে তো আজিজ চৌধুরী তেমনটাই বলেছে।
আইমির হঠাৎ মনে হলো, তাকে যা বলা হয়েছে সব মিথ্যা। এ মেয়েটির ছলছল চোখ তো অন্যকথা বলছে। এটুকুনি একটা মেয়ে,এত মিষ্টি একটা মেয়ে শুধুমাত্র টাকার জন্য?
পরক্ষণে তার মাথায় এল, না টাকার জন্য মানুষ অনেক নিচে পর্যন্ত নামতে পারে। সেখানে ইশা তো কাজ করে টাকা নিচ্ছে। তাছাড়া এমন থার্ড ক্লাস ফ্যামিলির মেয়েরা যেকোনো কিছুই করতে পারে। নিজেকে বিক্রি করা এদের কাছে নিত্যকার ব্যাপার । যে মেয়েটার উপর এতক্ষণে আইমির মায়া হচ্ছিল সেই মেয়েটার উপর মুহূর্তেই ঘৃণা ভেসে উঠল। আইমি নিজের ভাবনা থেকে বেরিয়ে আসার আগেই আবার ও আদির গর্জন শোনা গেল। ডাক এল ‘ মিষ্টি ‘!
ইশা, আইমি দুজনই কেঁপে। আইমি একবার দরজার দিকে তাকিয়ে আরেকবার ইশার দিকে তাকায় । তারপর চোখদুটো মুছে চলে যায়। বলে যায়, আদিকে আমি নিয়ে যাব।
ধীর পায়ে ইশা রুমে ডুকে পড়ে চুপচাপ। দাঁড়িয়ে থাকে। পিঠ করে দাঁড়িয়ে থাকা ছেলেটির দিকে তাকায়। পরক্ষণে চোখ সরিয়ে নেয়। আদি কোনো আওয়াজ শুনতে না পেয়ে যখন পিছু ফিরে তখন মিষ্টিকে দেখে। তৃষ্ণার্ত চোখে চেয়ে থাকে মিষ্টির দিকে। চোখ সরেনা। পলক নড়েনা। মিনি ছাড়া পেয়ে ডানা ঝাপটায়। আদিকে বকা দেয়। ইশা এদিকওদিক তাকিয়ে আদির দিকে তাকাতেই তার দিকে অপলক তাকিয়ে থাকা চোখদুটোতে চোখ পড়ে যায়। কিছুক্ষণ যেতে না যেতেই ইশা চোখ সরিয়ে অন্যদিকে তাকায়। আদি নিজের হাতের দিকে চেয়ে আবার হাত লুকিয়ে ফেলে।
দরজায় খিল দিয়ে বিড়বিড় করে বলে, আর কেউ আসবে না। যদি আসে ধাক্কা দিয়ে বের করে দেব।
ইশা শোনে ও না শোনার মত করে দাঁড়িয়ে থাকে। আদি ইশাকে ওভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে এগোতে ভয় পায়। আজকাল মিষ্টি ভালোভাবে কথা বলেনা,মিষ্টি করে হাসেনা, হুটহাট জড়িয়ে ধরেনা,লজ্জা পেয়ে বুকে মুখ গুজেনা, চোখে চোখে কথা বলেনা। এ মিষ্টিকে তো আদি চেনেনা।
আদি গুটিগুটি পায়ে হেঁটে ইশার সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। কি বলবে খুঁজে না পেয়ে আমতাআমতা করতে থাকে। মাথা চুলকায়।
ইশা এবার চোখ তুলে তাকায়। আদি ইশাকে তাকাতে দেখে ঢোক গিলে। কিছুই বলতে পারেনা। যেন মিষ্টির দৃষ্টি তাকে পুরোপুরি নির্বাক বানিয়ে দিয়েছে। ইশা থমথমে গলায় জানতে চাই, কি হয়েছে?
আদি এবার ভড়কে যায় । মুখের ভঙ্গি তার পাল্টে যায়। মাথা নিচু করে মেঝেতে দৃষ্টি নিবদ্ধ করে থাকে। ইশা এভাবে তাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে চোখ সরিয়ে অন্যদিকে হাঁটা ধরে। আদি তেজাল সুরে ডাক দেয়,মিষ্টি!
ইশা সাথে সাথে জবাব দেয়,এভাবে ডাকবেন না। মিষ্টিকে ছাড়া থাকতে শিখুন। আপনি ছোট বাচ্চা নন।
আদির চোখজোড়া ঝাপসা হয়ে উঠে প্রগাঢ় অভিমানের কারণে। অদ্ভুতভাবে সে আবার ও ডাক দেয়, মিষ্টি!
ইশা বিরক্তিকর শব্দ বের করল মুখ দিয়ে । বলল, আপনার মা,বাবা স্বার্থ হাসিল করার জন্য আমাকে ব্যবহার করে। আপনি কিসের জন্য ব্যবহার করেন? কি স্বার্থ আপনার!
আদির নির্বোধ মাথায় যেন এত কঠিন কথা ডুকল না। অদ্ভুত চাহনি নিয়ে বলল,
তোমার কি রাগ উঠেছে মিষ্টি? ঠিক আছে আমি তোমার সাথে আর কোনো কথা বলার চেষ্টা করব না। আমার সাথে এভাবে কথা বলো না।
ইশা আদির মুখ দেখার চেষ্টা করল। তার মনটাই খারাপ হয়ে গেল। ডক্টরকে এভাবে বলাটা ঠিক হয়নি। ইশা শাড়ি হাতে নিয়ে ওশাশরুমে ডুকে গেল। প্রায় আধঘন্টা পর বেরিয়ে আসল। ডক্টরকে ঠিক সেভাবেই দাঁড়িয়ে থাকতে দেখল। বলল,কি সমস্যা। আদি ফিরে তাকাল। ভেজা চুল আর ভেজা মুখে স্নিগ্ধতা দেখাল মিষ্টিকে। আদি কি বলবে ভুলে গেল। শুধু বলল, মিষ্টি আমার সাথে ওভাবে কথা বলোনা। আমার খুব কষ্ট হয়।
ইশা একদৃষ্টিতে চেয়ে রইল আদির দিকে। বলল,কখন কি বলেছি সেসব মনে রাখতে হয়না। আপনি এত প্যাচাল মানুষ আমি জানতাম না ডক্টর।
আদির যেন এবার একটু সাহস হলো। বলল,মিষ্টি আমি তোমাকে কখনো বকেছি?
ইশা চোখ ছোট ছোট করে তাকায়। আদির প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে বিছানার চাদর ঠিক করতে ব্যস্ত হয়। আদির রাগ উঠে। ইশাকে টেনে তার কাছে নিয়ে আসে। ইশা তাকায়না আদির দিকে। বলে, ছাড়ুন,ভালো লাগছেনা।
আদি চেয়ে থাকে মিষ্টির দিকে। খানিকক্ষণ পর বলে,মিষ্টি তুমি আমার কত ছোট, আমাকে বকো কেন?
ইশা নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করে বলে,কোথায় ছোট?
আদি তার আর মিষ্টির হাইট মেপে হাত একবার মিষ্টির মাথায় রেখে বলে,দেখো তুমি এতটা। তারপর নিজের মাথায় হাত রেখে বলে,আর আমি এতটা। হাত দিয়ে দেখিয়ে বলে,আমি তোমার চাইতে এতটা বড়।
ইশা যেন এবার হাসি লুকিয়ে রাখতে পারল না। আদির মুখের দিকে তাকিয়ে খিক করে হেসে দিল। বলল, আপনি বড় কিন্তু বুদ্ধিতে আমার চাইতে ও ছোট ডক্টর।
আদি ইশার কথা শোনেই না। সে তো মিষ্টির হাসিতে ডুব দিল সেই কখন। বলল, আমি দেখি,তুমি কথা বলো।

আদির হাতের দিকে চোখ পড়তেই ইশা ভ্রুকুঞ্চন করে তাকাল। আদি হাত সরিয়ে নিল। বলল, এসব কিছুনা। মিনি আদর করেছে।
ইশা মিনিকে ডাক দিল। মিনি চুপসে গেল ভয়ে। মিনমিন করে বলল,মিষ্টি গুড গার্ল। গুড গার্ল।
ইশা ধমক দিয়ে বলল,পাম্প দেওয়া হচ্ছে আমাকে?
আদি মাথা নেড়ে বলল,মিষ্টি তুমি মিনিকে বকোনা। মিনি এখনো ছোট।
ইশা হা করে তাকায়। আদির দিকে তাকিয়ে বলে বাহঃ আপনি বড় ছোট ও চেনেন।
আদি বলল, হ্যা। আমি বড় তুমি ছোট। আমি বর তুমি বউ। ঠিক না মিষ্টি?
ইশার হা করা গাল হা করাই থাকে। ডক্টর কি আর কিছু বলার বাকি রেখেছে?

____________________

রাইনার সামনাসামনি হওয়ায় ইশার কেন জানি খারাপ লাগল। রাইনা তাকে দেখেই মাথা নামিয়ে ফেলল। বলল,ইশা তুমি কি কোনো কারণে আমার উপর রেগে আছ?
ইশা অবাক হয়ে বলে, না,না কেন রাগ করব? আমি তো ভেবেছিলাম আপনি আমার উপর রেগে আছেন।
রাইনা এদিকওদিক তাকিয়ে বলল, রাগব কেন? দোষ তো তোমার নয়। জানো ইশা আমি ও তোমার মত এক হতভাগী। এ বাড়িতে আমি নামেমাত্র বউয়ের পরিচয়ে থাকি। কাজের লোক ও এর চাইতে বেশি সম্মান পায়। আর যার স্ত্রী হয়ে আছি তার কাছে আমি ভোগের পণ্য, দাসী। তার দাসত্ব যতক্ষণ মেনে নিতে পারব ততক্ষণ ভালো। আর যখন তার উল্টো হয় তখন চলে শারীরিক, মানসিক অত্যাচার। কখন ও দেখে মনে হয়েছে আমি খুব দুঃখী একজন? আমাকে চকচকে করে সাজিয়ে রাখা হয় লোকদেখানোর জন্য। এই চৌধুরীর প্রত্যেকটা মানুষ জঘন্যরকম স্বার্থপর। তোমার ডক্টেরের কথা বলতে পারব না। তাকে কারো সাথে ভালো ব্যবহার করতে ও দেখিনি। খারাপ ব্যবহার করতে ও দেখিনি। আমার সাথে ও বরাবর স্বাভাবিক ব্যবহার করত। তাই তেমন কিছু বলতে পারব না। আফির ব্যবহারের জন্য আমি ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি তোমার কাছে।
ইশা অবাক হয়ে বলে, আপনি এতকিছু সহ্য করে আছেন কেন? আমার মত তো আপনি মাঝনদীতে নেই। তাহলে মুখবুজে এত অন্যায় সহ্য করে থাকছেন কেন? এটা ও অন্যায়। আপনি প্রশয় দিচ্ছেন তাকে।
রাইনার চোখমুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠে । ইশার মুখে হাত দিয়ে বলে, তুমি এতটা ছোট হয়ে ও তোমার কত সাহস। আমার তার ছিটেফোঁটা ও নেই। মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে আমি। চলে গেলে ঠিকই বাবার উপর বোঝা হয়ে পড়ব। বাড়িতে আমার সৎ মা। সেখানে শুধু গালি,জুতোপেটা খাওয়া ছাড়া কিছুই জুটবে না। দুমুঠো ভাত তো দূরের কথা। বাবার বয়স হয়েছে। উনি এখন পুরোপুরি তার ছেলেমেয়েদের উপর ডিপেন্ডেড। সেখানে আমি তো,,, তার চাইতে এখানেই ভালো আছি। ভালো খেতে আর পড়তে তো পারছি।
ইশার বিস্ময় দ্বিগুণ বিস্তার লাভ করল। জানতে চাইল,
‘ কিসের আশায় আপনি এখানে পড়ে আছেন?
‘ আফি কোনো একদিন আমার মূল্য বুঝবে সেই আশায়। রাইনার সহজ সরল জবাব। ইশার বিস্ময় আকাশ ছুঁল যেন। হাঁটতে হাঁটতে সে ভাবল, রাইনার চাইতে ও সে তো অনেক অনেক সুখী। তার স্বামী তাকে তো ভালোবাসে। সুস্থ বা অসুস্থ, ভালো তো বাসে।
পায়েসের বাটি হাতে নিয়ে সে ব্যস্ত পায়ে দৌড়ে গেল আদির কাছে। আদি মাথা নিচু করে পান্জাবীর বোতাম লাগাতে ব্যস্ত। ইশার দিকে ফিরে কিছুই বলতে পারল না। ইশা পায়েসের বাটি রেখে যেন উল্কার গতিতে ছুটে গেল আদির কাছে। জাপটে জড়িয়ে ধরল। আদির বুকে মাথা রাখার পর আজ তার অন্যরকম অনুভূতি হলো। তার চোখ বুজে আসল। আর ছাড়তে ইচ্ছে হলোনা। আদি যেন অবাকের চরম পর্যায়ে। সে ভাবল, যে মিষ্টি ছুঁতে গেলে ও খ্যাঁকখ্যাঁক করে উঠে। সে আজ এভাবে জড়িয়ে ধরল কিভাবে? পরমুহূর্তে তার ভাবনা উঁবে গেল। মিষ্টি জড়িয়ে ধরেছে এই বেশি। আদি শক্ত করে জড়িয়ে ধরার কিছুক্ষণ পর ইশা মাথা তুলে তাকাল। বলল,এভাবে চেপে ধরেছেন কেন? অসভ্য।
আদি রাগ করল। বলল,তুমিই তো আমাকে প্রথমে ধরেছ। তারপর আমি। এখন আমার দোষ?
ইশা ধমক দিল। বলল,বোতাম না লাগিয়ে ঝগড়া করছেন আমার সাথে।
আদি বোকাবোকা মুখ করে বলল, আমি তো লাগাচ্ছিলাম, তুমিই দিলেনা।
ইশা হাসল। হেসে বোতাম লাগিয়ে দিতে দিতে বলল, আমার বোকা,পাগলা,সুদর্শন বর।
আদি চট করে ইশার কপাল ছুঁয়ে দিল। ইশা চোখ গরম করে তাকাল। কপাল ছুঁয়ে বলল, বাজে ডক্টর।
আদি হাসল। ইশা বোতাম লাগানোর পর তাকাল ডক্টরের দিকে। চোখে ইশারা করে বলল,কি?
আদি মুগ্ধ চোখে চেয়ে বলল, বউটা পুতুল। কিন্তু পুতুল তো ঝগড়া করেনা। আমারটা করে কেন?
ইশা খিলখিল করে হেসে উঠল। বলল,বাজে ডক্টরের বাজে বউ তাই।
আদি দুপাশ মাথা নাড়াল। বলল, না আমার বউ ভালো। আদির চাইতে ও ভালো।
ইশার খিলখিল হাসির আওয়াজে মুখোরিত হলো পুরো রুম। দরজার বাইরে দাঁড়ানো আইমি স্পষ্ট শুনতে পেল সেই হাসি আর হাসির কারণ।
আজিজ চৌধুরী আর আলিয়া চৌধুরীর উপর তার রাগ যেন বেড়ে গেল তরতর করে। সাথে রাগ বাড়ল ওই ইশা নামের মেয়েটির উপর। মেয়েটি তার কাজের নাম করে আদির এই অবস্থার সুযোগ নিচ্ছে। সুবিধাবাদী এসব মেয়েরা। আদিকে সে এ মেয়েটার কাছে আর থাকতে দেবে না। কখনোই দেবে না।

খাবার টেবিলে একসাথে বসে যখন সবাই খাচ্ছে, আলিয়ার নির্দেশ অনুযায়ী আদিকে বসিয়ে দিল ইশা। ইশা যখন তাকে খাবার বেড়ে দিচ্ছে আদি চুপিচাপি ইশার শাড়ির আচঁল পেচিঁয়ে নিল তার হাতে। আইমি চোখ তুলে দেখল আদিকে। আদির বিরক্ত লাগল। মেয়েটাকে তার বিরক্ত লাগে। কেমন করে যেন তাকিয়ে থাকে। ইশা খাবার বেড়ে দিয়ে বলল,ডক্টর খেয়ে নিন। আদি চিল্লিয়ে উঠল,আমি এটা,এটা,এটা খাব না মিষ্টি । ইশা অবাক হয়ে বলল, এসব খেতে হবে ডক্টর। বেশি কথা বলবেন না।
আদির খারাপ লাগল। মাথা নিচু করে বসে রইল। তারপর মিনমিন করে বলল, মিষ্টি তুমি বসো। খাবে।
আদির কথায় সবাই চকিতে তাকাল। ইশা না,না করে উঠল। বলল, ডক্টর আপনি খেয়ে নিন আমি আসছি।
আদি নীরবে রাগ দেখাল। হাতে পেঁচানো শাড়ি টান দিতে লাগল। ইশা কাধেঁ ব্যাথা পেল। যখন দেখল আদির কান্ড চোখ কপালে উঠল তার । চোখ রাঙাল। আদি মুখ ফিরিয়ে নিল। বলল,মিষ্টি খাইয়ে দাও। ইশা না করায় আদি দাঁড়িয়ে পড়ে বলল,খাব না মিষ্টি।
ইশা শান্ত হতে বলে আবার বসিয়ে দিল। চামচে তুলে খাইয়ে দিতেই আইমি হঠাৎ খাওয়া রেখে দাঁড়িয়ে পড়ল। ইশা আড়চোখে তাকাল। আদি খেতে খেতে ইশার সাথে দুষ্টুমি শুরু করল। বলল, মিষ্টি তোমার হাতের খাবার তোমার মতো মিষ্টি।
আজিজ চৌধুরী আর আলিয়া খেতে খেতে বিষম খেল। যে ছেলেটা বেছে বেছে দুএকটা কথা বলত সেই ছেলেটা যেন কথার ঝুলি নিয়ে বসে আছে মিষ্টির জন্য। চেনা যাচ্ছে না।
ইশা ধমক দিল আদিকে। মিনমিন করে বলল, আপনি আমার সাথে আর কথা বলবেন না ডক্টর।
আদি যেন ইশার কথায় মজা পেল। হো হো করে হেসে উঠল। পুরো টেবিল কেঁপে উঠল। আজিজ আর আলিয়া চৌধুরী ছেলের হাসিমাখা মুখটির দিকে তাকিয়ে থাকল অপলক। কি সুন্দর,মনকাড়া ছেলেটার হাসি। এ যেন আগের ডক্টর আদি চৌধুরী। তার কোনোকিছুই হয়নি। ভয়ংকর অ্যাক্সিডেন্ট ও হয়নি তার। ওই দাঁড়ানো মেয়েটির বদলে যেন দাঁড়িয়ে আছে আইমি। যে নতবদনে হাসছে। আর বলছে,আদি ইউ আর ব্যাড বয়। কিন্তু না তেমন কিছুই হচ্ছেনা।

________________________________

আলিয়া চৌধুরী ইশাকে ডেকে পাঠালেন নিজের রুমে। ইশাকে মনে করিয়ে দিলেন,তার কাজের কথা। আইমির কান্না দেখেছে সে। তার এসব সহ্য হচ্ছেনা। ইশা অবাক হলো। আসলেই তো। তার কাজ তো এসব নয় যেসব সে করছে। সে আবার ও ডক্টরের কাছে থাকার জন্য লোভী হয়ে উঠছে। ডক্টরকে সুস্থ করার কোনোরূপ চেষ্টা সে করছেনা। শুধু খাচ্ছে-দাচ্ছে,ঘুমোচ্ছে। ডক্টর দিনদিন তারউপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে। এরকম চলতে থাকলে ডক্টরকে কোথাও নিয়ে যাওয়া মুশকিল হয়ে পড়বে। আলিয়া চৌধুরী সাফ সাফ জানাল, দুই মাস সময় আছে ইশার হাতে। এ দুইমাসের ভেতর যাতে আদিকে রাজী করানো হয়। আদি এবার সুস্থ হয়েই ফিরবে। এই সময়টার অপেক্ষায় ছিল তারা সবাই। কখন আদি একটু স্বাভাবিক হবে,রাগ কমবে,মানুষের সাথে মেশার চেষ্টা করবে। এখন তো আদি অনেকটাই স্বাভাবিক। শুধু তারকিছু মনে নেই। আর বাকি দশটা মানুষের মতো তার আচরণ নয়। সে আগের আদি এখনো হয়নি। আগের আদিকে ফিরে পেতে আলিয়া বেগম পৃথিবীর যেকোনো প্রান্তে নিয়ে যেতে রাজী আছে ছেলেকে। ইশা আলিয়া বেগমের কষ্ট বুঝল। একজন মা তো সবমসময় ছেলের ভালোই চান। সে তো কোথাকার বাসিন্দা। আলিয়া চৌধুরীর চাইতে ও কি বেশি ভালো চাইতে পারে ইশা?
সে নিজের কাছে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হলো ডক্টরকে সুস্থ করে তোলার সর্বোত্তম চেষ্টা সে করবে। এতে যদি ডক্টরকে দূরে পাঠাতে হয়। তাহলে তাই হবে। তবু ও ডক্টরকে সুস্থ হতে হবে।
আদি তখন বিছানায় বসা। চাদরের উপর সবগুলো শুকনো বকুলফুল। আদি মিনিকে নিয়ে মনে হচ্ছে খেলছে। মিনি ফুল গুলো ঠোঁটে করে নিয়ে নিজের ভাগে নিয়ে নিচ্ছে। তার উদ্দেশ্য কতগুলো আদির আর বাকিগুলো তার বকুলফুল। ইশা দুইজনের কান্ড দেখে হাসল। আদি মিনির কাছ থেকে ফুল নিয়ে নেওয়ায় মিনি ঠোঁট দিয়ে ঠোকরে দিল আদির হাত। ইশা তা দেখে ডাক দিল,মিনিকে। মিনির যেন রাগ হলো। সে উড়ে গেল। ডাকল, আইমি,আইমি!
ইশা অবাক হলো। মিনির আইমির সাথে ও ভাব হয়ে গেছে। বাহঃ।
আদি চোখ তুলে তাকাল ইশার দিকে। ইশার কাছাকাছি গিয়ে বসে,সবফুলগুলো ইশার মাথার ছড়িয়ে ছিটিয়ে দিয়ে বলল,মিষ্টি সবগুলো তোমার। আমার গুলো ও তোমার। মিনিরগুলো ও তোমার।
ইশা নীরবে হাসল। সে আসল কথাটি বলার জন্য প্রস্তুত হয়ে নিল। বলল,ঠিকআছে ফুলগুলো আমি নিয়ে নিলাম। আমার লাগবে। আমার আর ও একটা জিনিস চাই ডক্টর।
আদি প্রস্তুত হয়ে বসল। মাথা ইশার মাথায় ঠেকিয়ে বলল, কি মিষ্টি?
ইশা হাত দিয়ে দেখিয়ে বলল, ইয়া বড় একটি টেডবিয়ার লাগবে। মিষ্টির সমান সমান।
আদির মুখ কালো হয়ে গেল। মুখে হাত দিয়ে বলল,
আমি টেডি বিয়ার কোথায় পাব মিষ্টি?
ইশার মন খারাপ হয়ে যায়। বলে, ডক্টর টেডিবিয়ার ইন্ডিয়ায় পাওয়া যায়। আমায় একটা এনে দেবেন?
আদি চিন্তিত মুখে বলল, ইন্ডিয়া? সেটা কোথায় মিষ্টি? নিচে, ছাদে,বাগানে, বাগানের পেছনে?
ইশার হাসি পেল তারপর ও সে হাসল না। বলল,ডক্টর আদি চৌধুরী ইন্ডিয়া চেনে না?
আদি মিষ্টির মুখ ধরে ঝাকিয়ে জিজ্ঞেস করল,ইন্ডিয়া কোথায় মিষ্টি? টেডিবিয়ার কিভাবে পাব?
ইশা আদির নাক টেনে দিল। বলল, ইন্ডিয়া অনেকদূরে। আবার বেশি দূরে ও না। কিন্তু আমার জন্য অনেক দূরে। আপনি যাবেন ডক্টর।
আদি ডানেবায়ে মাথা নাড়ল। বলল,যাব। তোমার জন্য ইয়া বড় টেডিবিয়ার আনব। তুমি তখন হাসবে মিষ্টি?
ইশা মাথা নেড়ে বলল,খুব হাসব, সত্যি যাবেন?
আদি মাথা নাড়াল। ইশার মনটা খারাপ হয়ে গেল। চোখের কোণায় কিঞ্চিৎ জলের আভাস দেখা গেল। তারপর ও সে হাসিমুখে বলার চেষ্টা করল,ডক্টর মিষ্টিকে কিন্তু ভুলে যাবেন না।
আদির হাসিমাখা মুখ যেন এবার নিভু নিভু হয়ে গেল। বলল, তুমি যাবেনা মিষ্টি?
ইশা দুপাশে মাথা নাড়াল। বলল, আমার যাওয়ার কি দরকার? আপনি যাবেন ওই মা,বাবার সাথে। ওনারা আপনাকে কিনে দেবে। আপনি আমার জন্য নিয়ে আসবেন।
আদি ইশার কোলে ধপ করে শুয়ে পড়ল। বলল,না মিষ্টি।
ইশা নড়েচড়ে বলল,কি?
আদি সোজা হয়ে শুয়ে পড়ল। বলল,মিষ্টি আমি আছি টেডিবিয়ার লাগবে না। মিনি আছে, আমি আছি আর কেনোকিছু লাগবে না। বলো? লাগবে না?
ইশা বুঝতে পারল আদির কথা। বলল, না আমার লাগবে। টেডিবিয়ার লাগবে। আপনাকে যেতে হবে। আপনি যাবেন।
আদি চুপচাপ উঠে পড়ল। রুম থেকে বেরিয়ে পড়ল। ইশা তার পিছু পিছু দৌড় দিল।
‘ কোথায় যাচ্ছেন ডক্টর?
আদি শুনল না। গটগট করে হেঁটে চলে গেল। ড্রয়িংরুমে বসা আজিজ, আলিয়া আর আইমির পাশে গিয়ে বসে পড়ল। তারা সবাই অবাক হয়ে আদির কান্ড দেখতে লাগল। আদি সেদিন কোনোরূপ কথা বলেনি, রাতে ও খায়নি,মিষ্টির সাথে দুটো কথা ও বলেনি। শুধু রেগেমেগে তাকিয়েছে। শান্তভাবে রাগ ঝেড়েছে। জগের সব পানি মেঝেতে ফেলে দিয়েছে ইচ্ছে করে। মিনিকে ধমক দিয়েছে। দূরে দাঁড়িয়ে মিষ্টিকে ইচ্ছে মত শাপ দিয়েছে। মিষ্টি একদিন তারমতোই কাঁদবে। সে ও একদিন মিষ্টিকে দূরে ঠেলে দেবে। মিষ্টি খুব করে কাঁদবে। খুব। হয়তো তারমতো ভেতরে ভেতরে কাঁদবে। নীরবে,নির্জনে,খুব আড়ালে কাঁদবে। সবার চক্ষুর অগোচরে কাঁদবে। যন্ত্রণায় কাতর কাতর হতে হতে কাঁদবে। আর সেদিন আদি খুব খুব হাসবে। খুব।
#মন_কেমনের_বৃষ্টি
#পর্ব_৮
#পুষ্পিতা_প্রিমা

বিক্ষিপ্ত মেজাজের ছেলেটি আজ শান্ত চুপচাপ। রাগ উঠলে সে আর রাগ দেখানোর সাহস করে উঠতে পারেনা। চাপা গর্জন করে। চাপা রাগ দেখায় সে। তা ও মিষ্টির উপর। সে বোধহয় মিষ্টির মন পড়তে জানে। কোথায় মিষ্টির দুর্বলতা তা টের পায়। তাই মিষ্টি যখন তাকে দিয়ে রাখল উদ্ভট শর্ত। সে ও মিষ্টির দুর্বল জায়গায় আঘাত করল। ঝুম বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে বকুল ফুল কুড়ালো। মিষ্টির বারণ শুনল না। সেই বকুল আইমির ওড়নার আচঁলে ভরে দিল। তারপর মিষ্টির দিকে তাকাল। সে যা মনে করে দিয়েছে তার কিছুটিই হলোনা। মিষ্টি রাগ দেখাল না। কাঁদল ও না। কি আশ্চর্য!
সে আর ও কষ্ট দেওয়ার ফন্দি আটল। তার বোকা মাথায় বুদ্ধি এল। আইমির সাথে বসে সে বকুল ফুলের মালা গাঁথল। মিষ্টি যখন কাজের ফাঁকে তাদের দিকে তাকাল আদি আইমিকে দিয়ে দিল সেই মালা। আইমি সবকিছু স্বাভাবিক ভেবে নিল। আদি তো তারই। মিষ্টি যখন চোখ ফিরিয়ে নিল আদি প্রচন্ড আহত হলো। মিষ্টির এবার ও রাগ উঠল না। এবার ও কাঁদল না?
মিষ্টির চোখের অগোচরে আইমির হাত থেকে আবার মালাটি কেড়ে নিল আদি। মিষ্টির জন্য গাঁথা মালা অন্য মেয়ে কেন ছুঁবে? আদি সবার সাথে একসাথে বসে খেল। তা ও মিষ্টি বলার আগে। বেছে বেছে ঝাল খাবার খেল। মাথার রগ তার দপদপ করে উঠল। চোয়ালের রগ ফুলে উঠল। চোখদুটো অসম্ভব রকম লাল হলো। তারপর ও সে ঝাল খেয়েই চলল। আইমি তো জানে আদির ঝাল খুব পছন্দ, বাকিরা ও তাই জানে। তাই সবাই কিছু বলল না। কিন্তু যখন সবাই আদির হাঁসফাস দেখল, সবার চোখ যেন কপালে উঠল। আদি তারপর ও খেয়ে চলল। আদি খাবার টেবিল কাঁপিয়ে চিৎকার করে ডাকল,মিষ্টি!
ইশা কোথা থেকে যেন ছুটে এল পায়েসের বাটি হাতে নিয়ে। চামচে করে সামনে তুলে বলল,খেয়ে নিন নয়ত ফেলে দিন।
আদি চুপচাপ খেল। পুরোটা সময় মিষ্টির দিকে তাকিয়ে খেল। মিষ্টি একবার ও তার দিকে তাকাল না। আদির আবার ও কষ্ট লাগল। তার চোখজোড়া ঝাপসা হয়ে উঠল। সে মাথা নামিয়ে ফেলল। আর খেল না। তার চোখজোড়া ও মিষ্টিকে দেখাল না। মিষ্টি যখন চলে গেল,তখন সে চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়াল। গটগট পায়ে হেঁটে চলে গেল। মিষ্টি ছাড়া বাকি সবাই তার ছলছল চোখ স্পষ্ট দেখতে পেল।
না দেখলে ও মিষ্টি বেশ ভালোভাবে অনুভব করতে পারে ডক্টরের কষ্ট। কিন্তু তার কিচ্ছু করার নেই। নীরবে দেখানো রাগ,অভিমানগুলো ও বেশ ভালোভাবে টের পায় সে। ডক্টরের প্রত্যেকটা কাজে সে টের পায় মিষ্টির প্রতি তার প্রবল অভিমান। প্রবল রাগ। বালিশে মাথা রেখে যখন ডক্টর ঘুমোয় তখন মিষ্টি মাথা তুলে তাকায় ডক্টরের মুখপানে। কে বলবে এই ছেলেটা একটি বাইরের মেয়ের জন্য এত ডিস্পারেট থাকে? কে বলবে এই ছেলেটি মেয়েটি মুখ থেকে একটুখানি মিষ্টি কথা শোনার অপেক্ষায় থাকে? কে বলবে এই ছেলেটা প্রগাঢ় ব্যক্তিত্বের একজন ডক্টর ছিল? কার কাছে আছে এসব প্রশ্নের উত্তর?
জীবন্ত একটি পুতুল যখন মৃদুমধুর শ্বাস টেনে ঘুমোয় আদির পাশে, আদির ঘুম ভেঙ্গে যায় সেই নিঃশ্বাসের আওয়াজে। নিশ্চুপ অনুভূতিরা তখন পাল্লা দিয়ে যেন বেড়ে যায়। সেই অনুভূতি নিয়ে অপলক তখন ডক্টর তাকিয়ে থাকে মিষ্টির মুখপানে। তা কি মিষ্টি জানে?
যখনই পড়ে যায় মিষ্টির দেওয়া শর্তের কথা আদির রাগ হয়,অভিমান হয়,তার ও কান্না পায়। কিন্তু সে জানেনা কিভাবে কাঁদতে হয়। কিভাবে কাঁদলে মিষ্টি জেগে উঠবে। কিভাবে কাঁদলে মিষ্টি তার শক্ত খোলস থেকে বেরিয়ে এসে তার বুকে মাথা রাখবে। কিভাবে আর্তনাদ করলে মিষ্টি ও আর্তনাদ করবে। আর কেমন কষ্ট পেলে মিষ্টি তারকাছে ছুটে আসবে? আর কেমন আঘাত পেলে মিষ্টি ধরা দেবে তার কাছে। কিভাবে ক্ষতবিক্ষত হলে মিষ্টি তার জন্য কেঁদেকেটে সাগর বানাবে। মিষ্টির মুখের দিকে আনমনে সেসব ভাবতে ভাবতে আবার ও আদির দুচোখ জ্বলজ্বল করে উঠে। সে আচমকা চোখদুটো চেপে ধরে মিষ্টির ঘাড়ে। যখন বুঝতে পারে মিষ্টি জেগে থেকে ও সাড়া দিচ্ছে না, তার আর্তনাদ শুনতে পাচ্ছেনা। তখন সে দূরে চলে আসে। বালিশে দুচোখ চেপে ধরে। মিষ্টি পাশ ফিরে শুয়ে পড়ে। ঘাড়ের কাছে হাত দিতেই তার হাতে লেগে যায় খুবই মূল্যবান চোখের নোনাজল। সে তার হাতের দিকে তাকিয়ে থাকে নির্নিমেষ। দেখতে দেখতে কখন তার চোখের কোণা বেয়ে কানের কাছে জল গড়াল সে বুঝতে পারলনা।
দুইদিকে দুপাশে দুজনই নীরবে কাঁদল। কিন্তু কারো কান্না কেউ শুনল না। যতই হচ্ছে রাত গভীর, বাড়তে লাগল অনুভূতিদের নিশ্চুপ কান্না। দুইজনের দুই মাথার নিচে বালিশ জানে সে কান্নার বেগ কতটুকু। সে কান্নার গভীরতা কতটুকু।

__________________________

আদি বিরক্ত হলো মিনির কাজে। মিনি কেন ওই আইমির সাথে কথা বলে? মিনি শুধু মিষ্টির সাথে কথা বলবে। মিনি ও কি বুঝে গিয়েছে মিষ্টি তাদেরকে দূরে ঠেলে দিতে চাইছে? হয়ত বুঝে গিয়েছে সেজন্য দূরে দূরে থাকছে। কিন্তু সেসব নিয়ে কোনো ভাবাবেগ নেই মিষ্টির। সে এত নির্বিকার কেন?? কি চাইছে সে? আদি তার কোনো প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পায়না। আইমি তার ফোনে থাকা এক একটি ছবি দেখায় আদিকে। বলে,আদি তোমার মনে পড়ছে এই ছবিটি আমরা কোথায় তুলেছি? এই ছবিটি দুজনই যখন নদীর পাড়ে ঘুরতে গিয়েছিলাম তখন তুলেছি। আর এটা যখন আমরা দুজন লং ড্রাইভে ঘুরতে গিয়েছিলাম। দেখো তুমি বাইক চালাচ্ছ। আমি পেছনের মেয়েটি আমি। আমরা দুজন। তোমার মনে পড়ছে আদি!
আদি তো এতক্ষণ কিছুই শুনল না। সে তো ওই টেবিলে মুছতে থাকা মেয়েটির উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে রেখেছে। আইমি আদির দৃষ্টি লক্ষ করে যখন তাকাল,দেখতে পেল ওই মেয়েটিকে। যে মেয়েটি আদিকে তার দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়ার অন্যতম কারণ। আইমি ভেবে পায়না, এই ছোট্ট একটা মেয়ের মাঝে কি দেখল আদি? যার কারণে সে তার আইমির দিকে ও পর্যন্ত ভালোভাবে তাকায়না।
তার হঠাৎ মনে পড়ে গেল খুব সুন্দর একটি দিনের কথা। আইমি সেদিন তার অদক্ষ হাতে শাড়ি পড়েছিল। কুচিগুলো এলোমেলো ছিল। মা ঠিক করে দিলে ও শেষপর্যন্ত তা ঠিক থাকেনি। শাড়িটা আদিই দিয়েছিল তাকে। আদি সেদিকে তার মুগ্ধ হয়ে তাকিয়েছিল। যখন আইমি লজ্জা পেয়ে মাথা নামাল অমনি আদির হাসির আওয়াজ শোনা গেল। আদি তার কানে কানে বলেছিল, আপ বহত খুবসসুরাত লাগরাহে হো।
আইমি হেসে আদির বুকে দুমদাম কিল বসিয়ে বলেছিল,ইয়ে স্রেপ মে। কেবেল তুমহারা।
আইমির ঠোঁটের কোণায় আবার ও এক চিলতে হাসি ফুটে। সে এখনো সেই আশা নিয়ে দিনতিপাত করে। তার আদি একদিন ঠিক তার কাছে ফিরে আসবে। তার আইমিকে সে একদিন ঠিকই চিনবে। চিনবেই।

______________________

এভাবেই পার হলো অনেকগুলো দিন। দুইমাসের কাছাকাছি। আজিজ চৌধুরী ইশার কথা শুনে স্বস্তি পেলেন। ইশা তাদের আশ্বস্ত করল, ডক্টর যাবেই। এবার ডক্টর সুস্থ হবে। হয়ত মিষ্টির চোখের আড়াল হয়ে যাবে। তারপর ও ডক্টর সুস্থ হয়ে যাবে। হয়ত কিছুদিন মানিয়ে নিতে একটু কষ্ট হবে কিন্তু তারপর ও তো ডক্টর সুস্থ হবে। কোনো একসময় যখন ডক্টর দেশে ফিরবে তখন হুট করে না হয় এক মন কেমনের বৃষ্টির সময় আবার দেখা হয়ে যাবে দুজনের। তখন তো সে মিষ্টি থাকবেনা, একটি অপরিচিত মেয়ে ইশা হয়ে দাঁড়াবে ডক্টরের সামনে। আদির পুরো স্যুটকেস গুছিয়ে দিল ইশা। পুরো স্যুটকেস গোছানোর সময় কয়ফোটা জল যে সেই কাপড়ের উপর পড়ল হিসাব নেই ইশার। আদি রুমে এসে যখন দেখল, তারসব কাপড়চোপড় গুছিয়ে দিচ্ছে মিষ্টি। সে অবাক চোখে চেয়ে রইল। বলল, এসব কার? প্যান্ট,শার্ট,কোর্ট?
মিষ্টি তার কাজে ব্যস্ত হয়ে জবাব দিল, আপনার।
আদি ছুড়ে ফেলে দিল। বলল, আমি এসব পরিনা। এসব আমি পরব না। আমি যাব না। কোথাও যাব না।
ইশা হতবাক হলো। এতদিনের চেপে থাকা সব রাগ যেন আদি উগলে দিল। বহুদিন পর আবার জিনিস ভাঙচুর করল। বাড়ির সবাই আদির এই রূপ দেখে ভড়কে গেল। গ্লাস ভাঙার কাচ ছড়িয়ে ছিটিয়ে রইল পুরো রুমে। আদি আশপাশ দেখে আর ও কিছু খুঁজে নেওয়ার জন্য পা বাড়াতেই ইশা ডাক দিল। আদির পায়ে কাচ বিঁধে যাওয়ার ভয়ে সে খাট থেকে দাঁড়িয়ে পড়ল। আদিকে ধরার জন্য এগোতেই তার দুপায়ের তলায় বিঁধে যায়। সে আর্তনাদ করে উঠে। যন্ত্রণায় চোখ ফেটে তার জল বের হয়ে আসে। সে ডাকে,ডক্টর?
আদি যেন স্তব্ধ হয়ে গেল। তার মাথা কাজ করা বন্ধ হয়ে এল। কি করবে ভেবে পেল না। ক্ষমার চোখে চেয়ে ডাকল,মিষ্টি?
ইশা ততক্ষণে মাথা চেপে ধরে মেঝেতে বসে পড়ল। বাইরে দাঁড়ানো সবাই আদির দিকে তাকিয়ে আর এগোতে পারল না। ঠিকই তাই হলো। আদি তাদের মুখের সামনে ধপ করে দরজা বন্ধ করে দিল। কাচগুলো সরিয়ে মিষ্টির কাছে গিয়ে ধপ করে বসে পড়ল। অসহায় হয়ে মিষ্টির মুখ আগলে ধরল। বলল, আর করব না এমন। আর কখনো না।
মিষ্টি দূরে সরে যায়। বলে, চলে যান আপনি। যান।
আদি যেন ক্ষতবিক্ষত হলো। মিষ্টির রক্তাক্ত পা ছুঁতে গেলেই মিষ্টি তার পা গুটিয়ে নেয়। আদি তার কাঁপাকাঁপা হাত দিয়ে মিষ্টির পা শক্ত করে টেনে ধরে। দুইজায়গায় কাচ লেগেছে। মিষ্টি আদির হাত সরিয়ে দেয়। বলে, আমি পারব ব্যান্ডেজ করে নিতে। আপনি যান ডক্টর।
আদি মিষ্টির মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে। কিন্তু মিষ্টি তার দিকে ফিরে ও তাকায়না। সে ও এবার বহুকষ্টে এক সিদ্ধান্তে পৌছাল। এবার থেকে মিষ্টির ভালোথাকটা আগে জরুরী। মিষ্টির হাসিমাখা মুখটা সে কতদিন দেখেনা। এবার থেকে মিষ্টি যা চাইবে তাই হবে। মিষ্টির চাওয়া পাওয়ার মূল্য দেবে। অনেক কষ্ট দিয়েছে সে মিষ্টিকে। আর না। আদি আর চোখ তুলে তাকায়না মিষ্টির দিকে। মিষ্টির পায়ের ব্যান্ডেজটা সে মিষ্টির কাছ থেকে কেড়ে নেয়। ব্যান্ডেজ করিয়ে দেয়। মিষ্টি অনেকসময় পর তাকায় আদির দিকে। ব্যান্ডেজ শেষ করার পর আদি চোখতুলে তাকাতেই চোখাচোখি দুইজন বহুদিন পর। সাথে সাথে দুজনই দুদিকে চোখ ফিরিয়ে নেয়। দুইজনই কান্না আটকানোর বহু চেষ্টা চালায়। আদি কোলে তুলে নেয় মিষ্টিকে। বিছানায় বসিয়ে দেয়। তারপর নিজের স্যুটকেস নিজেই গুছিয়ে নেয়। বামহাতের কব্জি দিয়ে চোখ ঘষে নেয় কিছুক্ষণ পর পর। মিষ্টি আড়চোখে তাকিয়ে দেখে আদির কান্ড। সে ও চোখ ঘষে নেয়। চোখের জলগুলো যে বড্ড নির্লজ্জ। সময় অসময় দেখেনা শুধু গড়ায়।

রাতে ইশার পায়ে যখন আদি মলম লাগিয়ে দিতে ব্যস্ত। ইশা তখন দুচোখ ভরে দেখে আদিকে। এই মানুষটাকে সে কতদিন দেখবে না। কতমাস দেখবে না। দিনগুলো খুব খারাপ কাটবে ইশার। প্রত্যেকটা দিনই তো শুরু হয় ডক্টরকে দিয়ে। তাহলে সেই ডক্টর যদি না থাকে?
ইশা ডুকরে উঠল। আদি ভড়কে গেল। চমকে ইশার দিকে তাকালে, চোখের জল দেখে আদি খুশিতে আটখানা হয়ে গেল। তার চোখজোড়া খুশিতে চকচক করে উঠল। সে মিষ্টির খুব কাছে গিয়ে বসল। কিছু বলার আগেই মিষ্টি ডুকরে উঠল। ফোঁপাতে ফোঁপাতে বলল, আমার টেডিবিয়ার চাই। যেকোনো ভাবে। যেকোনো,,,,, যেকোনো মূল্যে চাই।
আদি চট করে দূরে সরে আসল। একরাশ ঘৃণা,রাগ,অভিমান ছুড়ে মাথা নাড়িয়ে না,না করে বলল, না এ আমার মিষ্টি নয়। আমার মিষ্টি শুধু শুধু আমায় কেন দূরে ঠেলে দেবে সামান্য একটা টেডিবিয়ারের জন্য। টেডিবিয়ার কি আদির চাইতে ও বেশি মূল্যবান? কখনোই আদির মিষ্টি নয় এই মেয়ে। কখনোই না।

_____________________

মধ্যরাত । বিষণ্ন মুখে বসে রইল মিষ্টি খাটের এক কোণায়। মুখে নেই সামান্যতম হাসির ছিটেফোঁটা। চোখে ঘুম ও নেই। তারপাশে প্রতিদিন ঘুমিয়ে থাকা ছেলেটি আজ নেই। সে বারান্দায় গিয়েছে সেই কখন আর আসেনি। মিষ্টির ছেলেটার উপর রাগ উঠছে। এই ছেলেটা না ঘুমিয়ে এতরাতে বারান্দায় কি করছে?
সে যখন এসব ভাবনায় মগ্ন হঠাৎ তার সামনে ছুড়ে এল লাল টকটকে একটি বেনারসি শাড়ি । তার বিয়ের শাড়ি। সে শাড়িটা হাতে নিয়ে চকিতে তাকাতেই দেখতে পেল ফোলা ফোলা চোখমুখের ছেলেটিকে। তার প্রশ্নবিদ্ধ দৃষ্টিকে সম্পূর্ণ রূপে উপেক্ষা করে ছেলেটি বসে পড়ে তার মুখপানে। চোখেচোখে ইশারায় বলে,শুধু একটিবার মিষ্টি। তোমাকে বউরূপে দেখতে চায়। আর কখনো এমন অন্যায় আবদার করব না। তুমি রাগ করোনা প্লিজ। শুধু একটিবার।
আদির বোকাবোকা চাহনি আর বোকাবোকা আবদার শুনে মিষ্টি বিষম খেল। কিছু বলে উঠার আগেই আদি আবার হাতের কব্জি দিয়ে চোখমুছে নিল। চলে গেল।
মিষ্টি শাড়িটা হাতে নিয়ে বসে রইল কিছুক্ষণ। আকাশপাতাল ভাবল। এ শাড়িটা পড়ে সে ডক্টরের বউ হয়ে এসেছে এ বাড়িতে। শাড়িটা সে নিজের কাছে রেখে দেবে। কাউকে দেবেনা।
শাড়িটা গায়ে দিতেই তার নিজেকে মনে হলো সে এক নতুন বধূ। অথচ পেরিয়ে গেছে বিয়ের সাতমাস।
ঘরের মৃদু মৃদু ডিমলাইটের আলোয় জ্বলজ্বল করছে মেয়েটির মিষ্টি মুখ। ছেলেটি তো তাকে শাড়ি পড়া অবস্থায় দেখতে চেয়েছিল,তাহলে কোথায় সে?
ইশা ঠাঁই দাড়িয়ে রইল কিছুক্ষণ। ডাকল,ডক্টর?
তার পেছনে কারো গাঢ় নিঃশ্বাস পড়ার আওয়াজে তার সম্ভিৎ ফিরল। সে সাথে সাথে পিছু ফিরল। ছেলেটির বুকের কাছে গিয়ে পড়ল। চোখ তুলে তাকাতেই ছেলেটির চোখে চোখ পড়ল। ছেলেটির ভয়ংকর দৃষ্টি সে উপেক্ষা করতে পারল না। যেন ডুবে গেল নিমেষেই। কথা হারিয়ে ফেলল। কি বলবে খুঁজে পেলনা। ছেলেটি তার মাথা শাড়ির আচঁল দিয়ে ঢেকে দিল। ঘোমটা মাথায় ছোট্ট বউটি তার ভেবে স্বস্তি মিললে ও ধীরে ধীরে অস্বস্তি দানা বাধঁতে শুরু করল। পিটপিট করে তাকানো মেয়েটির চোখে চোখ রেখে সে বুঝিয়ে দিল, তুমি আমার সাথে অন্যায় করছ মিষ্টি। এর মাশুল দিতে হবে তোমায়।
মিষ্টি তো কিছুই বুঝল না। আদি কপাল ঠেকাল মিষ্টির কপালে। দুই কানের পেছনে হাত দিয়ে শক্ত করে আঁকড়ে ধরল মিষ্টির মুখ। কপাল থেকে শুরু করে ভেজা স্পর্শে রাঙিয়ে দিল মিষ্টির পুরো মুখ। মিষ্টি গাল বেয়ে পড়া চোখের জল ও যেন মুছে নিল আদি। মন কেমন করা অনুভূতিরা আজ গাঢ় থেকে গাঢ় হলো যেন। মিষ্টি হারিয়ে গেল ডক্টরের চোখের চাহনিতে। কথা বলা ভুলে গেল। দূরে সরিয়ে দিতে গিয়ে ও পারল না। যেন তার শক্তি ফুরিয়ে এসেছে। পুরো ঘরটাতে যেন বকুলফুলের সুগন্ধ মৌ মৌ করল। আজ ভালোবাসারা হাতের মুঠোয় এসে ধরা দিল। মিষ্টির মিষ্টি প্রেমে ডুবে গেল ডক্টর। ভালোবাসায় মাখামাখি হলো দুজন। রচিত হলো ভালোবাসার কাব্যমালঞ্চ। দুজন হারিয়ে গেল দুজনাতে।

_______________________

দুইটা গাড়ি এসে দাঁড়াল চৌধুরী বাড়ির গেইটের কাছে। প্রয়োজনীয় সব জিনিসপত্র এক গাড়িতে। অন্য গাড়িতে আলিয়া,আইমি আর আদি বসবে। শেষমেশ আজিজ চৌধুরী যাচ্ছে না। পুরো বাড়ি খুঁজে কোথাও পাওয়া গেল না আদিকে। ইশা দৌড়ে ছাদে গেল। আদির পিছু গিয়ে দাঁড়াল। ডাকল,ডক্টর!
আদি ঘাড় ঘুরিয়ে তাকাল। ভ্রু উপরে তুলে নিজেকে স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করে বলল, আমি চলেই যাব মিষ্টি, তোমার এত তাড়াহুড়ো কেন?
ইশা হকচকিয়ে গেল। বলল, আচ্ছা আমি নিচে যাচ্ছি।
আদি তার হাত ধরে টান দিল। সামনাসামনি দাঁড় করিয়ে তার গলার একপাশে কাধেঁর কাছাকাছি দেখিয়ে বলল, আমার এখানে খুব জ্বলছে মিষ্টি।
ইশা অবাক হলো। বড় বড় চোখ নিয়ে বলল, আমি করেছি?
আদি রেগে গেল। গর্জে বলল, তো কে করবে আর?
ইশা চোখ নামিয়ে নিল। ঘাড় ঘুরিয়ে বলল, আপনি দাড়াঁন আমি মলম আনছি। আর জ্বলবে না। আদি তাকে ছাড়ল না। টেনে ধরল। ইশার হাত বুকে রেখে বলল, এখানে জ্বলছে মিষ্টি। এখানের চাইতে ও এখানে বেশি জ্বলছে। কিন্তু তুমি তা দেখতে পাচ্ছ না। নিষ্ঠুর তুমি মিষ্টি।
মিষ্টি তাড়াতাড়ি হাত ছাড়িয়ে নেয়। নিচে নেমে আসে। আদি ছাদের রেলিংয়ে হাতে ইচ্ছেমত আঘাত করে।
মিষ্টি চুপচাপ সব জিনিসপত্র গোছগাছ করে দেয়। আইমি এসেই তাড়া দেয়। আদি আড়চোখে মিষ্টির দিকে তাকায়। তার প্রচন্ডরকম রাগ হয় এ মেয়েটার প্রতি। এত নিষ্ঠুর মেয়ে কি করে হয়। রুমে গিয়ে সে আবার ও মিষ্টির চোখে পড়ার চেষ্টা করে। কিন্তু মিষ্টি ফিরে ও তাকায়না। আলিয়া চৌধুরী ডাকতে আসে। মিষ্টি সব জিনিসপত্র দিয়ে ফেলে দাড়োঁয়ানকে। গাড়িতে নিয়ে যায়। আদি শক্ত ভঙ্গিতে চেয়ে থাকে মিষ্টির দিকে। যখনই দেখল সে মিষ্টির কাছে আবার ও অবহেলিত, তখন সে নিজ সিদ্ধান্তে অটল থাকল। মিষ্টিকে সে চরম শাস্তি দেবে। চরম শাস্তি। তারপর ও তার দুচোখ টলমল করে উঠল। শেষ মুহূর্তে ও কি মিষ্টি একটিবার ভালোভাবে কথা বলবে না তার সাথে?
মিষ্টির বিয়ের শাড়িটা নিজের কাছে রেখে দিল। বলল, এই শাড়িটা আমার কাছে থাকুক মিষ্টি। দেবে?
মিষ্টি সাথে অন্যদিকে মুখ করল। এলোমেলোভাবে কাঁদল।
আদি ও অন্যদিকে মুখ করল। পান্জাবীর হাতায় চোখ মুখ মুছল। আবার ও তার কন্ঠ ধরে আসল। একটি বকুল ফুলের মালা দিয়ে বলল, এটি আমি তোমার জন্য গেঁথেছি মিষ্টি। তুমি আমায় ভুল বুঝেছ। আদি শুধু মিষ্টির জন্যই মালা গাঁথে মিষ্টি। তুমি সেটা ও বুঝলে না।
ইশা নিঃশব্দে কাঁদল, আদির দিকে তাকাল না। আদি আবার ও বলল,
আমি ফিরে আসার পর তুমি এ শুকনো বকুল ফুলের মালা তোমার খোঁপায় দিয়ে সাজবে। আমি ফিরে আসব। সত্যি।
তার নিজের একটি পান্জাবী ইশার হাতে তুলে দিয়ে বলে, এই পান্জাবীটা আমার খুব প্রিয়। এটি তোমার কাছে রাখবে। আমি এসেই যেন পায়। খুব যত্নে রাখবে মিষ্টি।
ইশা পান্জাবীটা হাতে নিয়ে দৌড়ে বেরিয়ে যায় রুম থেকে। আদি বসে পড়ে খাটে। মাথা চেপে ধরে। বলে,তুমি কেন আমায় আটকাচ্ছ না মিষ্টি।

ইশা আলিয়ার পায়ের কাছে বসে পড়ে। আইমি, আজিজ চৌধুরী ভড়কে যায়। ইশা কাঁদতে কাঁদতে বলে, ওঁনাকে আমার কাছে রেখে যান। আমি কথা দিচ্ছি পুরোপুরি সুস্থ করে তুলব আমি তাকে। আপনাদের ছেলেকে আপনাদের কাছে ফিরিয়ে দেব। কিন্তু আমার চোখের আড়াল করবেন না প্লিজ। আমি কথা রাখব। ওঁনাকে নিয়ে যাবেন না। আমার কাছ থেকে দূরে নিয়ে যাবেন না।
সবাই বিরক্ত হয় ইশার কথায়। বলে, যেখানে আদি রাজী হয়েছে সেখানে এতবড় সুযোগ আমরা কেন মিস করব? তোমাকে তো ভালো মনে করেছিলাম এখন দেখছি তুমি বড়ই সুবিধাবাদী একটা মেয়ে। সত্যি সত্যি তুমি নিজেকে এ বাড়ির বউ মনে করে নিয়েছ নাকি?
ইশা নিজের কাজে নিজেই লজ্জিত হয়। ডক্টর কি তাকে পাগল বানিয়ে ছেড়েছে?
ইশা ছুটে আসল। ততক্ষণে আদি নিচে নেমে এসেছে। মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রয়েছে। আলিয়া আর আইমি নিচে নেমে আদিকে দেখে খুশিতে আটখানা হলো। ইশার দিকে তাকিয়ে বলল, দেখেছ আদি চলে যাওয়ার জন্য অলরেডি নেমে এসেছে।
ইশা ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠল। আদি তাকানোর সাথে সাথে মুখ ফিরিয়ে নিল। আফিকে দেখা গেল। ইশা দেখে ও যেন দেখল না। বাড়ির কাজের লোকের পিছুপিছু সে দৌড়ে গেল। আদি গাড়িতে উঠে বসার আগেই পিছু ফিরল। দেখা গেল না মিষ্টিকে। মিনি গাড়ির ভেতরে খাঁচার ভেতর অনবরত ডানা ঝাপটাল। আইমি ছেড়ে দিতেই মিনি উড়ে এল মিষ্টির কাছে। মিষ্টির গালে গাল ঘেষে আদর দিল। ডাকল, মিষ্টি গুডবাই । তারপর উড়াল দিল আইমির কাছে।
আইমির ডাকে আদির সম্ভিৎ ফিরল। আইমির হাত থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিল। দিক্বিদিক না দেখে দৌড়ে আসে মিষ্টির কাছে। জাপটে গিয়ে জড়িয়ে ধরে। এবার প্রকাশ্য কেঁদে দেয়। পুরোটাই বাচ্চাদের মতো। একবার চোখমুছে আরেকবার কেঁদে কেঁদে বলে, মিষ্টি আই হেইট ইউ। রিয়েলি হেইট ইউ। তুমি খুব কষ্ট পাবে মিষ্টি। খুব। আমার চাইতে বেশি কষ্ট পাবে। তুমি কাউকে বলতে ও পারবে না তোমার কষ্টের কথা মিষ্টি। দেখাতে ও পারবে না তোমার চোখের পানি। দেখাতে ও পারবে না। আমি তোমাকে সত্যিই ভালোবেসেছি। দূরে ঠেলে দেওয়ার শাস্তি তুমি পাবে। ঠিকই পাবে।
ইশা যখন পাথরের মতো দাঁড়িয়ে থাকে আদি কিছুদূর এগিয়ে গিয়ে আবার ও ফিরে আসে। মিষ্টির মুখ আঁকড়ে ধরে বলে, এই মিষ্টি, আমি, এই আদি, এই ডক্টর ভালোবেসেছে তোমায়। কিন্তু তুমি ভালোবাসোনি। একটু ও বাসোনি। তুমি এই ডক্টরের জন্য ঠিকই কাঁদবে মিষ্টি। ঠিকই কাঁদবে।
কি আশ্চর্য। সবার অবাক দৃষ্টি উপেক্ষা করে আদি গাড়িতে গিয়ে বসে পড়ে। একটিবার আর ফিরে তাকাল না। কারো কথায় কান দিল না। আইমি শুধু অবাক চোখে দেখল আদির কান্না। আদি কাঁদছে একটা বাইরের মেয়ের জন্য। এটা ও দেখার ছিল। কাজের লোকের ভীড়ে ইশা দাঁড়িয়ে থাকল। শুধু চলে যাওয়া গাড়িটার দিকে তাকিয়ে থাকল নির্নিমেষ। চিৎকার করে ডেকে উঠল,ডক্টর যাবেন না। যাবেন না। আমাকে ছেড়ে যাবেন না। আমাকে আপনার মতো করে কেউ ভালোবাসে না ডক্টর। আপনি যাবেন না।
কে শোনে কার কথা। পুরো চৌধুরী বাড়িটাই যেন হয়ে গেল নির্জীব।
ইশা ফিরে তাকাল চৌধুরী বাড়ির দিকে। কি অদ্ভুত বাড়িটাতে কেউ নেই। পুরো শব্দহীন। মিষ্টি ডাকটা ভেসে আসেনা। কেউ জোরে চিল্লিয়ে ডাকে না, মিষ্টি।
শুধু অন্ধকারে সিড়ির রেলিং হাতড়ে হাতড়ে মিষ্টির মুখ দিয়ে বের হয় , ডক্টর, আপনি কোথায়?

চলবে,
( আপনাদের অনুভূতি জানাবেন)
চলবে,
( আপনাদের মতামত জানাবেন)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here