কলঙ্কের ফুল পর্ব ২২

#কলঙ্কের_ফুল
#পর্ব_২২
#Saji_Afroz
.
.
.
সানিয়া কোনো ছেলের হাত ধরে অন্তরঙ্গভাবে বসে আছে দেখে মেহেরীকার চোখ কপালে উঠে যায়।
.
মেহেরীকাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে আদি বললো-
দাঁড়িয়ে আছো কেনো? চলো বসি?
.
আদির দিকে তাকিয়ে মেহেরীকা বললো-
আমি যা দেখতে পাচ্ছি তুমি কি তা দেখতে পাচ্ছো?
-ওহো মেহের! তোমার খেলার ইচ্ছে হয়েছে আমাকে আগে বলবেতো।
-মানে?
-আরে একটা খেলা আছেনা? আমি যা দেখতে পাই তুমি কি তা দেখতে পাও? ওটাইতো খেলতে চাইছো তাইনা তুমি?
-ধ্যাত।
-খেলবেনা! তাহলে কি?
-সামনে তাকিয়ে কোণার টেবিলাটায় দেখো। তাহলে বুঝবে কি।
.
মেহেরীকার কথাতে আদি সেদিকে তাকাতেই চমকে যায়।
এইতো দেখছি মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি! সানিয়াকে এভাবে কারো সাথে দেখবে ভাবতেই পারেনি আদি। যাক, এবার মেহের বুঝবে এই মেয়েটা কেমন।
.
আপনমনে এসব ভেবে দাঁত খেলিয়ে হেসে আদি বললো-
দেখেছো মেহের? বলেছিলাম ওই মেয়ে আমায় ভালোবাসে না।
.
আদির কথার পিঠে কোনো কথা না বলে মেহের এগিয়ে যায় সানিয়ার দিকে।
আদিও তার পিছুপিছু এগুতে থাকে।
.
সানিয়ার পাশে গিয়েই আচমকা চেয়ার টেনে বসতে বসতে মেহেরীকা বললো-
এটা তোমার বফ না সানিয়া? এতো হ্যান্ডসাম!
.
মেহেরীকা আর আদিকে দেখে তাড়াতাড়ি সানিয়া ছেলেটির কাছ থেকে নিজের হাত সরিয়ে বললো-
তোমরা এখানে!
-ভয় পাওয়ার কিছু নেই। আমরাতো তোমার বন্ধু।
.
সানিয়া কিছু বলার আগেই পাশে থাকা ছেলেটি বলে উঠলো –
তাই নাকি! বন্ধু বফ এর কথা জানতেই পারে তাহলে।
-কিন্তু এতোদিন আপনার কথা বলেনি সানিয়া আমাকে। সম্পর্ক কতোদিনের?
-বেশি না। প্রায় তিনমাস। তবে শেষ একমাস আমি দেশের বাইরে ছিলাম বিজনেস এর কাজে। তাই সানিয়াকে তেমন একটা সময় দিতে পারিনি। দেশে ফিরলাম পরশু রাতেই।
.
মেহেরীকা কিছু বলার আগেই ছেলেটির ফোনের রিং বেজে উঠলে সে বললো-
একটা জরুরী ফোন এসেছে। আপনারা বসুন, আমি আসছি।
.
ফোন নিয়ে ছেলেটি বাইরের দিকে এগিয়ে যেতেই আদির উদ্দেশ্যে সানিয়া বললো-
বসোনা আদি?
.
দাঁতে দাঁত চেপে মেহেরীকা বললো-
না, আদিয়াত বসবেনা। পাশে বসিয়ে ওকে ভুল বাল কিছু বুঝাতে চাও? সেটা আর হচ্ছেনা। ভেবেছিলাম সত্যিই তুমি আদিয়াতকে ভালোবাসো। ওর জন্য নিজেকে বদলাচ্ছো। কিন্তু তুমি…..!
.
ক্ষানিকক্ষণ চুপ থেকে মেহেরীকা আবার বললো-
এবার বুঝলাম কাল কেনো বাড়ি ছেড়ে চলে গিয়েছো। এই বফ টাকে সময় দিতে তাইতো?
আদিয়াত কেনো! তুমি কাউকে ভালোবাসতে পারোনা।
-আমি বাসি ভালো আদিকে।
-যদি সত্যিই তুমি আদিয়াতকে ভালোবাসতে তাহলে ওই ছেলেটিকে জানাতে সবটা। জানাওনি কেনো?
-আদি আমায় ক্লিয়ার করে কিছু বলেনি তাই। আদি যদি আমায় ভালোবাসতো তাহলে তাকে বলতাম।
-ছিঃ সানিয়া! এসব কেমন ভালোবাসা! তুমি ওই ছেলেটিকে ঠকিয়ে আরেকজনের ভালোবাসা কামনা করছো!
-হুম করছি। তোমার তাতে কি?
-আমার কি! ওই মুখে আর আমার আদিয়াত এর নাম ও নিয়ে দেখো, তোমার কি হাল যে আমি করবো….
.
সানিয়াকে চুপ থাকতে দেখে মেহেরীকা বললো-
ছেলেটি দেখতে ভালো, মনে হচ্ছে তোমাকে ভালোবাসে। যে তোমাকে ভালোবাসে তাকে কদর করতে শিখো। আদিয়াত এর কথা ভুলে যাও।
-কিন্তু….
-তুমি কি চাইছো তোমার এই প্রেমিকও তোমার আসল রূপ সম্পর্কে জানুক?

-বুঝলাম চাওনা। জানোইতো ভালো হতে টাকা লাগেনা। লাগলেও তোমার বাবার অনেক টাকা আছে। তাই ভালো হয়ে যাও।
.
.
.
-আমি যদি আজকে যেতাম কয়েকটা কথা শুনিয়ে আসতাম ওই মেহেরীকাকে। খুবতো রাজীব রাজীব করতো সে, এখন বড় লোকের ছেলে পেয়ে বিয়ে করে ফেলেছে। আবার ঢ্যাংঢ্যাং করে বান্ধবীর বিয়েতেও আসছে! সুপ্তি, তুই আমাকে বলিসনি কেনো মেহেরীকা এসেছে বিয়েতে?
-কি হতো বলে ফুফু!
-আমি গিয়ে কয়েকটা কথা শুনিয়ে দিতাম আর কি!
.
বিয়ের ক্লাব থেকে এসে ড্রয়িংরুমে বসে ছিলো রাজীব। কিন্তু তার মা সুপ্তির সাথে এতোটা উচ্চশব্দে কথা বলছে যে সব শুনতে পাচ্ছে সে এখানে বসেই।
তবে তার মেহেরকে নিয়ে এসব কথা শুনতে একদমই ভালো লাগছেনা।
আর বসে না থাকে রাজীব মায়ের রুমের দিকে এগুতে থাকে।
-তোমার কি মেহেরকে নিয়ে হাবিজাবি কথা না বললে হয়না আম্মা?
-দেখেছিস সুপ্তি? এখনো এই ছেলে মেহের মেহের করছে!
.
সুপ্তির দিকে তাকিয়ে রাজীব বললো-
সুপ্তি তুই যা, আমার মায়ের সাথে কিছু কথা আছে।
-হু।
.
সুপ্তি বের হতেই রাজীব দরজা বন্ধ করে মায়ের পাশে বসে বললো-
মেহের বিয়ে করেনি আম্মা।
-মানে!
-হুম, সেদিন পালিয়ে সে অসহায় হয়ে গিয়েছিলো। তখন তাকে আশ্রয় দেয় আদিয়াত চৌধুরী।
-কিন্তু সবাই জানে আদিয়াত চৌধুরীর স্ত্রী মেহেরীকা।
-সবাই ভুল জানে। আমি ওকে বিয়ে করার পর আমার স্ত্রী বলেই জানবে সবাই।
-বিয়ে করার পর মানে! ওকে তুই কেনো বিয়ে করবি? থাক না সে ওখানে।
-ওখানে আশ্রয় নিয়েছে, সারাজীবন এর জন্য থাকতে যায়নি।
-কি বলছিস তুই এসব! সুপ্তির কি হবে?
-ও আমায় বলেছে, আমি বিয়ের পর সেও বিয়ে করবে আর কাউকে।
-এতোকিছু আমি বুঝিনা। মেহেরীকার মতো মেয়েকে আমি বাড়ির বউ করে আনবনা। এটাই আমার শেষ কথা।
.
.
.
ওই মুখে আমার আদিয়াত এর নামও নিয়ে দেখো, তোমার কি হাল যে করবো….
ঘড়িতে সময় রাত ১১টা।
সেই কবে বাসায় এসেছে আদি।। তখন থেকেই শুধু মেহেরীকার বলা কথাটা কানে বেজে চলেছে আদির।
কি যেনো বলেছে মেহের? আমার আদিয়াত।
তার মানে মেহেরও কি তাকে ভালোবাসে? তাকে ছেড়ে যাবেনা সে? হুম যাবেনা, সারাজীবন তার পাশে থাকবে।
এসব ভাবতেই আদি তার বুকের মাঝে শান্তি অনুভব করে।
.
-শুনছো?
.
মেহেরীকার কথায় আদি শোয়া থেকে বসতে বসতে বলে-
শুনছি।
.
আদির দিকে মেহেরীকা তার ফোন এগিয়ে দিয়ে বললো-
সানিয়া কথা বলতে চাইছে তোমার সাথে।
-আমার সাথে! কেনো?
-বলেই দেখো কেনো!
-আমার ইচ্ছে করছেনা এখন।
-নাও বলছি!
.
বাধ্য ছেলের মতো মেহেরীকার হাত থেকে ফোন নিয়ে সানিয়ার উদ্দেশ্যে বললো আদি-
হ্যালো?
-তোমাকে এতোদিন অনেক বিরক্ত করেছি তার জন্য আমি দুঃখিত আদি।
-হুম।
-আসলে এতো ছেলের বিশ্বাস নিয়ে খেলেছি তাই হয়তো তোমার ভালোবাসা পেলাম না আমি।
-হুম।
-আজই বাবা ফিরেছে বাসায়। আমি বাবাকে বলেছি আমি পাথর কে বিয়ে করতে চাই।
-পাথর কেনো বিয়ে করবা তুমি! পাগল হয়ে গিয়েছো?
-আরে সেই পাথর না। আজ যাকে দেখেছো তার নাম পাথর। আমার বফ।
-ওহ, তাই বলো!
-পাথর আমাকে অনেক বিশ্বাস করে কিন্তু ওর অবর্তমানে আমি তোমার পিছে ঘুরেছি তা জানলে অনেক কষ্ট পাবে।
-চিন্তা করোনা, জানবেনা। তুমি শুধু বলো তোমাদের বিয়ে কখন?
-খুব তাড়াতাড়ি।
.
.
সানিয়ার সাথে কথা বলা শেষে মেহেরীকার দিকে ফোন এগিয়ে দিয়ে আদি বললো-
এই নাও তোমার ফোন।
-আজ থেকে সানিয়া তাহলে তোমার জীবন থেকে সরেই গেলো?
-হু।
-তাহলে আমার কাজ শেষ, আমি চলে যেতে পারি।
.
মেহেরীকার কথা শুনে আদি গম্ভীর গলায় বললো-
কোথায় কি শেষ হলো! সানিয়ার আগে বিয়েটা হোক।
-এসবতো অনেক দেরী হবে।
-যত দেরী হোক। সানিয়ার আগে বিয়ে হতে হবে। তারপরেই আমি পুরোপুরি মুক্তি পাবো। বুঝেছো?
.
শান্ত গলায় মেহেরীকা বললো-
হু।
.
.
.
মেহেরকে দেওয়া কথাকি রাখতে পারবেনা রাজীব! তা মা পরিস্কার জানিয়ে দিয়েছেন, তিনি কিছুতেই মেহেরীকাকে মেনে নিবেন না। এখন কি হবে?
.
এতো কি ভাবছো?
.
সুপ্তির ডাকে চিন্তার জগৎ থেকে বেরিয়ে আসলো রাজীব। শান্ত গলায় বললো-
আম্মা মেহেরকে মেনে নিবেন না সুপ্তি।
-তাই বলে হার মেনে নিয়েছো?
-মানিনি হার। কিন্তু কি করার আছে আমার তা ভাবছি।
-ভাবছো! এতো ভাবাভাবির কি আছে রাজীব ভাই? দুজনে কোথাও চলে যাও তোমরা।
-সুপ্তি!
-হুন। তোমরা চাইলেই এক হতে পারো। তাছাড়া মেহেরীকা বাধ্য হয়ে বিয়েটা করেছে। সে জানতোনা তুমি তাকে এতো ভালোবাসো। তাই এতোকিছু না ভেবে নিজেদের নিয়ে ভাবো। আদিয়াত চৌধুরী কে ডির্ভোস দিয়ে তোমার কাছে চলে আসতে বলো তাকে।
.
আর কোনো কথা না বলে সুপ্তি বেরিয়ে যায় রুম থেকে।
এদিকে রাজীব ভাবতে থাকে কি বলে গেলো সুপ্তি? ডির্ভোস? বিয়েই যেখানে হয়নি ডির্ভোস কেনো দিবে!
তৎক্ষণাৎ আবার মনে পড়ে রাজীবের, মেহেরের বিয়ে হয়নি এটা সুপ্তির অজানা। তবে সে যা বলে গিয়েছে মন্দ বলেনি। আপাতত মেহেরকে নিয়েই তার ভাবা উচিত। আগের মতো ভুল করা ঠিক হবেনা এবার।
.
.
.
রাত ১২.৩০টা….
ক্লাব থেকে আসার পর থেকেই রাজীবের ফোনের অপেক্ষা করে চলেছে মেহেরীকা। ক্লাবে থাকতেই সে রাজীবকে ফোন নাম্বার দিয়েছিলো। তবে এখনো তার কোনো খবর নেই কেনো?
কোনো সমস্যা হলো নাকি……
.
ফোনের রিংটোনের শব্দে চিন্তার জগৎ থেকে বেরিয়ে আসলো মেহেরীকা।
আদির যেনো ঘুম না ভাঙ্গে তাই খুব সাবধানে ফোনটা নিয়ে বারান্দার দিকে পা বাড়ালো সে।
-হ্যালো? এতোক্ষণ কোথায় ছিলে?
-বাসায় আছি।
-তাহলে এতোদেরীতে ফোন দিলে যে? আর মায়ের সাথে কথা বলেছো?
-হুম।
-কি বলেছেন?
-আম্মা আগের কিছুই ভুলতে পারেনি। আবার আজ জানলো তুমি বিবাহিতা। তাতেও ক্ষেপে গেলো।
-কিন্তু কোনোটাতেই আমার দোষ নেই!
-আমি জানি মেহের, আমি জানি। তাইতো আমার সিদ্ধান্ত আমি নিয়ে ফেলেছি।
-কি?
-কালই আমরা বিয়ে করবো।
-কাল!
-হুম কাল। আগেটা বিয়েটা করবো তারপরেই সবাইকে জানাবো। নাহলে এরা কেউ আমাদের এক হতে দিবেনা মেহের।
.
কিছুক্ষণ চুপ থেকে মেহেরীকা বললো-
আদির সাথে আমার ডিল হয়েছিলো। ওই মেয়েটির বিয়ে হলে তবেই আমার কাজ শেষ হবে। এর আগে আমি যেতে পারবোনা।
-সেসব টাকার বিনিময়ে। তুমি একটা টাকাও তার কাছ থেকে নিবেনা। এক কাপড়েই বেরিয়ে যাবে ওই বাড়ি থেকে।
-কিন্তু….
-তোমার কাছে কে বড় মেহের? আমি নাকি আদিয়াত চৌধুরী?
.
ছোট্ট একটা নিঃশ্বাস ফেলে মেহেরীকা বললো-
তুমি।
.
.
.
-কি বলছো পিকু!
-হুম বেবি, কালই আমার পরিবার বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে তোমাদের বাসায় যাবে।
-আমি তাহলে সবাইকে এখুনি বলে আসি।
-এই পাগলি! রাত কটা বাজে দেখেছো?
-ও হ্যাঁ!
-সকালে বলিও।
-আচ্ছা।
-দেখি এবার ঘুমাও, চোখের নিচে কালি পড়ে গেলে কেউ পছন্দ করবেনা আবার আমার বাসার।
.
মুচকি হেসে দিবা বললো-
হুম। গুড নাইট।
.
ফোন রেখে দিলেও দিবা জানে আজ তার ঘুম হবেনা।
কাল তার ভালোবাসার মানুষ বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে বাসায় আসবে, তার স্বপ্ন সত্যি হবে
দিবার দৃঢ় বিশ্বাস, তার পরিবারের সকলে পিকুকে মেনে নিবে।
.
.
.
রাজীবের সাথে কথা শেষ করে পেছনে ফিরেই মেহেরীকা দেখতে পায় আদিকে।
.
কখন এসেছে আদি? কিছু শুনেনিতো?
.
-এই যে?
.
আদির ডাকে চিন্তার জগৎ থেকে বের হয়ে ভয়ে ভরা কণ্ঠ নিয়ে মেহেরীকা বললো-
হু?
-এতো রাতে এখানে?
-ঘুম ভেঙ্গে গিয়েছিলো।
-ওহ।
.
আদি কিছু বলছেনা। তার মানে কিছু শুনেনি সে। আপনমনে কথাগুলো বলে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে রুমের দিকে এগুতেই আদির গলার স্বরে থেমে যায় মেহেরীকা।
————-
আমাকে এক পেয়ালা প্রেম দাও,
আমি এক চুমুকে পান করি।
আমাকে এক সাগর ভালবাসা দাও,
আমি তাতে ডুবে মরি।
আমাকে একটি তারাভরা আকাশ দাও,
তারার মাঝে তারা হয়ে তুমি,
আমার পানে তাকিয়ে থেকো,
তোমায় খোঁজে নেবো আমি।
আমাকে একটা বসন্ত দাও,
আমি শিমুল,
পলাশ রাঙ্গিয়ে দেবো,
ফাগুনের আগুন হয়ে,
তোমাকে পুড়িয়ে দেবো।
আমাকে একটা স্বচ্ছ সরোবর দাও,
আমি একশো একটা নীলপদ্ম দেবো,
ভালবাসার পরশ দিয়ে,
তোমার কষ্টের নীল কেড়ে নেবো।
.
.
আদির মুখে কবিতা আবৃতি শুনে মেহেরীকা বললো-
লেখার সাথে সাথে ভালোইতো আবৃতি করতে পারো দেখছি।
-হুম।
-খুব ভালো হয়েছে কবিতাটি।
.
কথাটি বলে মেহেরীকা এগুতে চাইলে আদির ডাকে পেছনে ফিরে বলে-
হু?
-ভালোবাসি তোমায়।
.
হঠাৎ আদির মুখে এমন কিছু শুনতে প্রস্তুত ছিলোনা মেহেরীকা।
অবাক চোখে তাকিয়ে সে প্রশ্ন ছুড়ে-
কি!
-হুম।
.
মুখে হাসির রেখা ফুটিয়ে মেহেরীকা বললো-
তুমি মজা করছো।
-না।
-হ্যাঁ।
-না।
-হ্যাঁ।
-না।
-আরে হ্যাঁ।
-কিভাবে বললে বা কি করলে বিশ্বাস করবে তুমি?
.
মেহেরীকার কি করা বা বলা উচিত বুঝতে না পেরে নিজের জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকে সে স্তব্ধ হয়ে।
-সত্যি বলছি মেহের, ভালোবাসি তোমায়। আগলে রাখতে চাই আজীবন। কোথাও যেতে দিতে চাইনা তোমায়।
তুমি যখন চলে যাওয়ার কথা বলো আমার মাঝে কি চলে তোমায় বলে বুঝাতে পারবোনা। না গেলে কি নয় মেহের? থাকোনা প্লিজ আমার সাথে আজীবন?
.
আদির চোখের দিকে তাকিয়ে মেহেরীকা দেখলো চোখে পানি টলমল করছে তার।
চোখ সরিয়ে নিজেকে শক্ত করে মেহেরীকা বললো-
তা সম্ভব নয় আদিয়াত।
-কেনো নয়?
-আমার সম্পর্কে কতটুকু জানো তুমি!
-জানার প্রয়োজন নেই।।
-জানলে হয়তো এসব বলতেনা।
সম্ভব না আমার পক্ষে তোমার সাথে থাকা।
-তোমাকে আমাদের বাসায় সকলে খুব ভালোবাসে, বাবাও মেনে নিয়েছে, তোমার বাসার সবাই মেনে নিয়েছে। তাহলে সমস্যাটা কোথায়?
.
ছোট্ট একটা নিঃশ্বাস ফেলে মেহেরীকা বলতে শুরু করলো-
আমি অন্য একজনকে ভালোবাসি। আমাদের মাঝে কিছু ভুল বুঝাবুঝি হয়েছিলো, আজ বিয়েতে তার সাথে দেখা হয়। সে খুবই অনুতপ্ত। আমাকে ফিরিয়ে নিতে চায় সে। আমিও তাকে ভালোবাসি। তাই আমি তার কাছেই ফিরে যেতে চাই আদিয়াত। তুমি আমাকে ভুলে যাও, অনেক ভালো মেয়ে জীবন সঙ্গীনী হিসেবে পাবে তুমি।
.
এক দমে কথা গুলো বলে বিছানার দিকে এগিয়ে যায় মেহেরীকা।
.
মেহেরীকার বলা কথাগুলো হজম করতে কষ্ট হয় আদির।
কি বলে গেলো সে? অন্য কাউকে ভালোবাসে? কি করে সে বুঝলোনা মেহেরীকা তার নয়?
নিজের ভালোবাসার কথা প্রকাশ করে সে কি ভুল করেছে?
কিন্তু কিইবা করতো সে! স্বপ্ন দেখেছিলো মেহেরীকা তার দেওয়া নীল শাড়িটি পরে বাড়ি ছেড়ে তার কাছ থেকে অনেকটা দূরে চলে যাচ্ছে। স্বপ্নটা দেখে ঘাবড়ে গিয়েছিলো আদি। তাই হঠাৎ করেই মেহেরীকার কাছে নিজের ভালোবাসার কথা প্রকাশ করে করে সে। কিন্তু মেহেরীকার মুখে অন্য কারো নাম শুনতে পাবে ভাবতেই পারেনি সে।
.
মেহেরীকার চাপা কান্নার শব্দ শুনতে পেয়ে আদি তার দিকে এগিয়ে গিয়ে বললো-
আমি তোমায় বলছিনা মেহের, ভালোবাসার মানুষকে ছেড়ে আমার কাছে থাকো।
তবে যত যাই হোক, তুমি যদি আমার কাছে ফিরে আসো আমি তোমাকে সাদরে গ্রহণ করবো।
.
কথাটি বলেই আদি রুম ছেড়ে বেরিয়ে পড়ে ড্রয়িংরুমের দিকে এগুতে থাকে।
মেহেরীকা তার চলে যাওয়া দেখে ভাবতে থাকে,,
যদি রাজীব না ফিরে না আসতো তবে কি আদিয়াত কে মেনে নিতাম আমি? কখনো না। আদিয়াত এর যোগ্য আমি নয়। এই অভিশপ্ত জীবনের সাথে তার সুন্দর জীবনটা কখনো জড়াতে দিতাম না আমি, কখনো না। এতোটা স্বার্থপর আমি হতে পারতাম না। আজ কষ্ট হলেও কিছুদিন পর নতুন কাউকে নিয়ে স্বাভাবিক হয়ে যাবে আদিয়াত। তখন আর এই মেহের কে তার মনেই পড়বেনা। হুম এটাই আদিয়াত এর জন্য ভালো।
.
(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here