#প্রথম_প্রতিশ্রুতি
পর্ব—-০৭
মূল ভাবনা।কাহিনী।নির্মাণ : প্রদীপ চন্দ্র তিয়াশ।
কন্ঠস্বরটা শুনে যেন মাথায় বাজ পড়লো প্রতিশ্রুতির… নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছে না সে।কারন আওয়াজটা আর কারোর নয় নির্জনের ছিলো!!
তার মানে নির্জন আর প্রথম এরা একে অপরকে চেনে…😱কিন্তু সেটা কিকরে সম্ভব হতে পারে…!?আর ওরা একে অপরকে চিনবেই যখন দুজনের কেউ স্বীকার করলো না কেন সেটা?কি এমন সম্পর্ক আছে ওদের দুজনের ভেতর…?
কিন্তু এই সময়ে আর এতো রাতে প্রথম কোথায় গেলো!প্রতিশ্রুতি খুঁজতে থাকে তাকে….হঠাৎ অন্ধকারে কারোর সাথে একটা ধাক্কা খেলো সে…অমনি আঁতকে উঠলো সে….!!
—কে… কে এখানে….
—আমি প্রথম,,তোমার হাসবেন্ড।।
—আপনি…??আপনি এতো রাতে কোথায় গিয়েছিলেন…আমি এদিকে খুঁজে মরছি আপনাকে!
—কোথায় আর যাবো,একটু ছাদে গিয়েছিলাম।
—আপনি ছাদে গিয়েছিলেন রাতে… আর তাও একা একা…??
—আচ্ছা,এখন কি অন্ধকারে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কথা বলবে। আগে ঘরে চলো!
প্রথম আর প্রতিশ্রুতি ওদের বেডরুমে আসলো।প্রতিশ্রুতির হাতে নিজের ফোনটা দেখে বেশ অবাক হলো প্রথম!
—একি…এটা তো আমার ফোন….!!তুমি আমার ফোন নিয়ে কি করছো??
—কেন,ফোনটা ধরে খুব অন্যায় করে ফেলেছি বোধহয়।
—ন্যায়, অন্যায়ের কথা জানি না। তুমি আমার ফোন ধরলে কেন!??আগে তার উত্তর দাও।
—প্রথম,আমি আপনার স্ত্রী হই।আপনার কোনো জিনিসের ওপর পূর্ণ অধিকার আছে তোমার।
—-তুমি এরপর আমাকে না বলে কোনো জিনিসে হাত দেবে না।
—আমি বুঝতে পারছি না কি এমন আছে এই ফোনে….আর আপনি মনে হয় ভয় পেয়ে আছেন আমি ফোনটা ধরাতে।
—আচ্ছা, কেউ কি কল দিয়েছিলো নাকি…??!
—কেন,কেউ কল দেবার কথা ছিলো নাকি…???
প্রতিশ্রুতি কল লিস্ট থেকে নির্জনের নম্বরটা মুছে ফেলেছে,যাতে প্রথম কিছু বুঝতে না পারে। কারন সে চায় না প্রথম কোনো কারণে সন্দেহ করুক তাকে।তবে ও আরো বেশী সতর্ক হয়ে যেতে পারে….তখন আর চাইলেও কিছু জানতে পারবে না প্রতিশ্রুতি।একবার ভেবেছিলো নিজের স্বামীর কাছে নির্জনের কথা জিজ্ঞেস করবে।কিন্তু পরে ভেবে দেখলো প্রথম কিছুতেই নির্জনের সাথে ওর সম্পর্কের কথা স্বীকার করবে না।সেটা করার হলে বিকেলে এভাবে চিনেও না চেনার ভান করতো না।
—কি হলো,,বললে না যে…. বিশেষ কারো ফোন করার কথা ছিলো নাকি….???
—নাহ!কে আর ফোন করবে আমার কাছে।তাও এতো রাতে।দেখো আমার পার্সোনাল জিনিসে কেউ হাত দিক এটা ঠিক পছন্দ করি না আমি।আমি ছোটবেলা থেকেই এরকম।তুমি প্লিজ আমার ব্যবহারে কষ্ট পেয়ো না।
প্রতিশ্রুতি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে প্রথম মিথ্যে কথা বলছে।কিন্তু এই মূহুর্তে কিছু বলতে পারছে না তাকে।ওর চোখমুখ দেখে স্পষ্ট বুঝতে পারছে প্রথম বেশ ভয় পেয়ে আছে।হয়তো নির্জনের সাথে ওর যোগাযোগের কথা প্রতিশ্রুতি জেনে গেলো কিনা সেই ভয়ে।
—ঠিক আছে,তুমি যখন চাইছো না।তোমার পার্সোনাল কোনো জিনিসে হাত দেবো না আমি।কিন্তু এতো রাতে ছাদে কেন গিয়েছিলে,তাও একা একা…সেটা তো বললে না আমায়।আমি শুনেছি তুমি অন্ধকারে ভীষণ ভয় পাও।
—এমনি ভালো লাগছিলো না… তাই ছাদে গিয়েছিলাম।একবার ভেবেছিলাম তোমায় ডেকে তুলবো….পরে কিছু একটা ভেবে একাই চলে গেলাম।আর কিছু না।
প্রথমের এই কথার ভেতরেও যেন কোথাও মিথ্যার গন্ধ পাচ্ছে প্রতিশ্রুতি।ও কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছে না নিজের স্বামীর কথা।প্রথমকে অবিশ্বাস বা সন্দেহ করার কোনো ইচ্ছে নেই প্রতিশ্রুতির…ও বরাবর চায় ওর নিজের স্বামীর প্রতি সকল অবিশ্বাস,সন্দেহ যেন ভুল প্রমাণিত নয়।তবে হেরে গিয়েও জিতে যায় প্রতিশ্রুতি। কিন্তু প্রথমের কার্যক্রম বার বার ওকে সন্দেহ করতে বাধ্য করে।আজকে নির্জনের ফোনকল ওর সন্দেহকে আরো কয়েকগুন বাড়িয়ে দিয়েছে।আচ্ছা ওটা নির্জনের ফোনকল ছিলো তো….নাকি বুঝতে কোনো ভুল হলো প্রতিশ্রুতির!!যদিও নির্জনের ফোন নম্বর জানা নেই তার। সন্দেহটা করা হয়েছে শুধু কন্ঠস্বর থেকে….
–
–
–
–
পরেরদিন সকালবেলা…..
আবারো সেই একই ব্রেকিং নিউজ।রাতে এক কিশোরীকে ধর্ষন।মেয়েটার বয়স চৌদ্দ বছর।তাকে ধর্ষণ করে খুন করা হয়েছে।তার মৃত্যু ধর্ষণের কারনেই হয়েছে,আলাদা করে খুন করা হয় নি তাকে।পুলিশ হন্নে হয়ে খুঁজছে সেই সিরিয়াল রেপিস্টকে।কিন্তু কোথাও তার কোনো হদিস পাওয়া যাচ্ছে না।
অদ্ভুত ব্যাপার,,এই খুনটা খুব বেশি দূরে নয়।প্রথমদের বাসা থেকে খানিক দূরেই হয়েছে।আরো একটা বিষয় লক্ষ্য করলো প্রতিশ্রুতি।আর সেটা হলো বাসার মেইন গেট খোলা।এতো সকালে সাধারনত গেট খোলা হয় না বাসার।
কেয়ার টেকারকে ডেকে তুললো প্রতিশ্রুতি।
—আঙ্কেল,এতো সকাল সকাল গেট খোলার কারণ কি…আপনাকে তো বলা হয়েছিলো সাতটার পরে গেট খুলতে।
—আমি গেট খুলবো কি আর মামনি… কালকে রাতে চাবি তো আমার কাছে ছিলো না।
—চাবি, আপনার কাছে ছিলো না মানে… কার কাছে ছিলো তবে!!??
—সন্ধ্যাবেলা বড়োমালিক,মানে তোমার হাসবেন্ড চাবিটা নিয়ে নিয়েছিলো আমার থেকে!!
কেয়ারটেকারের কথা শুনে বেশ অবাক হলো প্রতিশ্রুতি।।
—আপনার কাছ থেকে চাবি নিয়েছে মানে.. আমি যতদুর জানি বাসায় তো ডুব্লিকেট চাবি আছে….তবে।
—বড়োসাহেব বললেন চাবিটা নাকি হারিয়ে গেছে।তাই উনি আমার থেকে চাবি চেয়ে নিলেন।
—আচ্ছা… আপনি চাবি নেবার কারন জিজ্ঞেস করেন নি।
—না,জিজ্ঞেস করি না তো।আর আমি কেনই বা জিজ্ঞেস করতে যাবো মামনি….মালিকের নিশ্চই কোনো কাজ ছিলো,তাই নিয়েছে।
—আচ্ছা,বুঝতে পেরেছি। আপনি যান।
প্রতিশ্রুতি নিশ্চিত প্রথম রাতে বাইরে বেরিয়েছিলো।তার মানে ওর ছাদে যাওয়ার কথা মিথ্যা ছিলো।কিন্তু এতো বড়ো একটা মিথ্যে কেন বললো প্রথম….কিছুই মাথায় ঢুকছে না প্রতিশ্রুতির।নাহ!প্রথমকে বড্ড ছাড় দেয়া হয়ে যাচ্ছে। ওকে এবার কিছু জিজ্ঞেস করতেই হবে। ওর থেকে রাতে বাসা থেকে বেরিয়ে যাবার কারন জানতেই হবে।তাতে যাই হয়ে যাক।
এই ভেবে প্রতিশ্রুতি গেট থেকে বাসার সিঁড়ির দিকে পা বাড়াবে ঠিক তখন একটা লোক এলো। তার হাতে একটা পার্সেল।পার্সেলটা প্রতিশ্রুতির নামেই।লোকটা পার্সেল দিয়েই চলে যায়।
গেটের সামনে দাঁড়িয়েই পার্সেল টা খুললো প্রতিশ্রুতি।এর ভেতরে একটা চিঠি আছে মনে হচ্ছে। খোলার পরে তার ধারণা সঠিক প্রমান হলো।
চিঠিটা খুলতেই দেখলো ভেতরে কয়েকটা লাইন লেখা :
“দুইশ উনপঞ্চাশ টা ডান!!আর একটা মাত্র রেপ বাকি।তবেই আড়াইশো হবে।আর এটাই হবে আমার জীবনের শেষ রেপ।আর সেটা তোমার দ্বারা পূর্ণ হতে চলেছে।তৈরী থেকো।”
লেখাগুলো পড়ে ভয় আর আতংকে পা কাঁপতে লাগলো প্রতিশ্রুতির….!!!
চলবে….