প্রণয়ের_পরনতি পর্ব ৩

গল্প:প্রণয়ের পরিনতি
লেখিকা:সাদিয়া আফরিন নিশি
পর্ব:৩

নিজের কেবিনে বসে আপন মনে ভেবে যাচ্ছে তনয়া। আতিক স্যার কতো ভালো ছিলো। ওনার ছেলে তো মনে হয় পুরাই আগুন।সেদিন পার্কে না দেখলে হয়তো এমনটা ভাবতো না।

(হ্যা,এই সেই সুদর্শন যুবক যাকে তনয়া পার্কে দেখেছিল। এই হলো আতিক চৌধুরীর বড় ছেলে রিশান চৌধুরী। বিশেষ থেকে পড়াশোনা শেষ করে বাবার বিজনেসে জয়েন করেছে। রিশান দেখতে যেমন সুন্দর স্বভাব ও তেমনই সুন্দর। কিন্তু কাজের ব্যাপারে খুব সিরিয়াস।বিজনেসে একটু নড়চড় হলেই তার শান্ত মাথাটায় আগুন জ্বলে ওঠে। রিশান এতোদিন তাদের কোম্পানির অন্য একটি শাখায় ছিলো। আজ থেকে এই সবগুলো শাখা সে একাই হেন্ডেল করবে।
রিশানের একটি ছোটো ভাই আছে। তার নাম রিশি চৌধুরী। এবার অনার্স সেকেন্ড ইয়ারে পড়ে সে।রিশানের থেকে পুরাই উল্টো মেরুর রিশি।
সবসময় মেয়েদের হিরো হয়ে থাকাটাই তার উদ্দেশ্য।রিশি দেখতেও কোনো হিরোর থেকে কম না)

তনয়ার চিন্তার মাঝেই রিয়া আসে তনয়ার কাছে। রিয়াও এখানে চাকরি করে। তবে তনয়ার সাথে তার খুব ভাব।
রিয়া এসে তনয়াকে ডেকে নতুন এমডি সম্পর্কে এটাওটা বলতে লাগলো।তনয়া তেমন কিছুই ভালো করে শুনলো না। তার মনে তো ওই এক চিন্তা।

************
দ্যা রয়েল কলেজ,
আকাশটা আজকে মেঘলা হওয়ায় পরিবেশটা ঠান্ডা ঠান্ডা। কলেজের মাঠের এক প্রান্ত দিয়ে হেঁটে চলেছে তৃপ্তি। হালকা হালকা বাতাসে এভাবে হাটতে খুব ভালো লাগছে তার। হঠাৎই তৃপ্তির চোখ গেল মাঠের মাঝখানে। যেখানে একটা ছেলেকে গোল করে ঘিরে আছে অনেকগুলো মেয়ে। মেয়েগুলোকে দেখেই তৃপ্তি নাক শিটকালো। কারণ মেয়েগুলোর পরনের পোশাক একদমই উচ্ছৃঙ্খল।আর মেয়েগুলো ওই বাইকে বসা ছেলেটার সাথে একদম চিপকে আছে। কেউ কেউ ছেলেটাকে কিছু খাইয়ে দিচ্ছে, তো কেউ আবার মুখ মুছে দিচ্ছে, কেউ কেউ আবার ছেলেটিকে কিসও করছে।

ছেলেটা দেখতে দারুণ হলেও তৃপ্তির কেন যেন ছেলেটার প্রতি খুব ঘৃণা হলো।সে মনে মনে ভাবলো এমন একটা সুনামধন্য কলেজে কীভাবে এসব অভদ্রতা প্রশয় দেয়।
এসব ভাবতে ভাবতে তৃপ্তি চলে গেল তার ফ্রেন্ড নীতির কাছে।
নীতি আর তৃপ্তি ঘুরে ঘুরে ফাংশনের সব আয়োজন দেখলো।এর মধ্যে তাদের ডাক পড়লো।এখনই অনুষ্ঠান শুরু হবে।
নবীনদের সারিবদ্ধ ভাবে দাড় করানো হলো।এবার এদের বরণের ভাড় পড়েছে অনার্সের স্টুডেন্টদের।এক এক করে সবাইকে বরন করা হলো।এবার পালা তৃপ্তির। তৃপ্তিকে ফুল দিয়ে বরণ করতে এলো অনার্স সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্র রিশি চৌধুরী।

(এই সেই রিশি।রিশান চৌধুরীর ছোটো ভাই। এই কলেজের নাম্বার ওয়ান ক্রাশ বয়। সব মেয়েরা রিশির জন্য পাগল।কিন্তু সবার মধ্যে নিশা নামের একটি মেয়ে একটু বেশিই সিরিয়াস। সে আবার রিশিকে নাকি অনেক ভালোবাসে।বড়লোক বাবার মেয়ে হওয়ায় ছোটো থেকে যা চেয়েছে তাই পেয়েছে। এখন সে রিশিকে চায়।

কিন্তু রিশি সব মেয়েদের হিরো হয়ে থাকাটাই পছন্দ করে। এসব ভালোবাসা- টালোবাসায় সে বিশ্বাস করে না।সে মনে করে মেয়েদের নিয়ে শুধু মজা করা যায় এতো সিরিয়াস হওয়ার কিছু নেই)

রিশি এসে একটি গোলাপ এগিয়ে দিলো তৃপ্তির দিকে।
তৃপ্তির তখনকার কথা মনে পড়ে যাওয়াতে রিশির কাছ থেকে গোলাপটা নিতে ইচ্ছে করলো না।তবুও তাকে নিতে হলো।
যাওয়ার আগে রিশি তৃপ্তিকে ধীরে ধীরে বললো এই যে পিচ্চি তুমি কিন্তু খুব হট।এটা বলে একটা হিরো লুক দিয়ে চলে গেল রিশি।
আর তৃপ্তির তো রাগে গাঁ জ্বলতে লাগলো।কিন্তু সবার সামনে কিছু বলতে পারলো না। তবে মনে মনে ঠিক করে রাখলো এর শাস্তি সে দেবে ওই অসভ্য ছেলেকে।

**********
তনিমা তো কাব্যকে এমডি রুপে দেখে ধরেই নিয়েছে তার চাকরীর আশা শেষ। কিন্তু কাব্য ভাবছে অন্য কিছু।

কাব্য আজ আর তনিমার সাথে কোনো রুপ খারাপ বিহেভ করলো না। বরং তনিমাকে বসতে বলে তার ফাইলগুলো চেক করতে লাগলো।

তারপর এক রহস্যময়ী হাসি দিয়ে তনিমাকে এপয়েন্টমেন্ট লেটার দিয়ে দিলো।

তনিমা তো এপয়েন্টমেন্ট লেটার দেখে পুরোই অবাক।একেবারে পিএ এর পোস্ট পেয়েছে সে।তারমান তাকে সারাক্ষণ এই লোককে সহ্য করতে হবে।
তনিমার চাকরিটা করতে একদমই ইচ্ছে করলো না। কিন্তু কী বা করার চাকরীটা তো তাদের সংসারের জন্য প্রয়োজন।আর তাছাড়াও এখন যদি চাকরীটা না করে তাহলে হয়তো কাব্য ভাববে ওকে ভয় পেয়ে চাকরীটা ও করবে না।
তাই তনিমা সবটা মেনে নেয়। সে তো ভেবেই নিয়েছে যে সে পুরোই গেল।কাল থেকে এই নিমের ফল না জানি কী কী করায় ওকে দিয়ে।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here