#ওই আকাশটা আমার ছিল
#রোকসানা আক্তার
পর্ব-১৪(বকেয়া পর্ব)
২২.
বিকেলের শেষ সময়।পূব আকাশের সূর্যিটা ডুবি ডুবি।যেকোনে মুহূর্তেই আকাশের সাথে তা মিশে গাঢ় সন্ধে নেমে আসবে।অয়ন ক্লান্ত শরীরে কফির মগ হাতে বেলকনির কর্ণারে দাঁড়িয়ে সূর্যিটার দিকে তাকিয়ে আছে।খুবই স্থির চোখের চাহনি।কিছুক্ষণ আগে হলো পৃথীদের বাসা থেকে ফিরেছে।এসেই রিফাতকে দিয়ে এক মগ কফি বানিয়ে আনায়।কিন্তু তা এখন খেতে ইচ্ছে হচ্ছে না!কফির মগ থেকে সাদা সাদা ধুঁয়া উড়ছে তাতেও ইন্টারেস্ট বাড়ছে না অয়নের।কিছুক্ষণ এভাবেই থাকে।তারপর অয়ন হালকা নড়ে এবার কফির মগের দিকে তাকায়।কফি হিম হয়ে গেছে।ধুঁয়া উড়ছে না।অয়ন বেলকনি থেকে চলে আসে।মগটা টেবিলের উপর রাখে।তারপর টেবিলের ড্রয়ার খুল সেখান থেকে একটা জনসন সিগারেটের প্যাকেট বের করে।পকেট থেকে দিয়াশলাইটা নিয়ে সিগারেটের মাথায় আগুন ধরা।তারপর দোল চেয়ারটায় ধপাস করে বসে সিগারেটে একের পর এক টান দিতে থাকে!
“য়ু!কি ঝাঁজ গন্ধ!এভাবে কেউ সিগারেট খায়?পুরো রুমটা ত জাহান্নাম বানিয়ে ফেললি!”
অয়ন ঘুরে তাকায়।দেখে ফাহাদ এসেছে।অয়ন ঠোঁটের কোণে হাসি টেনে বলে,
“আমি নিজেই ত জাহান্নাম!আমার রুম ত অবশ্যই জাহান্নাম হবে। ”
“মারমু শালা!বাঁজে কথা কম বল!”
“বাঁজে কই বললাম।ঠিকই বললাম!বাঁজে না হলে লোক আমাকে খারাপ বলতো না। পরিবার খারাপ বলতো না।আমি তো আসলেই খুব বাঁজে!”
“এই মগটা দেখছিস না ওটা তোর এখন নাঁক ফাঁটিয়ে দিব!”
অয়ন এবার ফিঁকে হেসে প্রসঙ্গ পাল্টায়,
“তা হঠাৎ কেন আসলি?আসার সময় ত কল করেও জানালি না!”
“পৃথীর মা আমাকে কল করেছে।বলেছে তুই সাপোর্ট যেহেতু দিয়েছিস তাই তিনি পৃথীকে আমার কাছে বিয়ে দিতে মোটেও অসম্মতি নন।পাক্কা রাজি।”
“আলহামদুলিল্লাহ। ”
“হুম।খুব খুশী হলাম দোস।আর তোকেও অনেক ধন্যবাদ।কারণ তোরজন্যে পৃথীকে পেলাম।”
“ওয়েলকাম এন্ড ওয়েলকাম টু স্পেন্ড ফিউচার ডেস গেট টুগেদার ।”
“তা ভাবছি পৃথীকে বিয়ে করার ব্যাপারটা আজ রাতেই বাসায় জানিয়ে দিব।”
“বাসায় এখনো বলিস নি?”
“না।”
“গাধা নাকি?”
“আসলে দ্বিধায় ছিলাম আন্টি যদি রাজি না হোন,আই ৃিন পৃথীর মা। ”
“ওহ আচ্ছা, আচ্ছা!তা বস।আমি তোর জন্যে কফি নিয়ে আসতেছি।”
“আরে কফি পরে খাবো।আগে আমার কথা শোন…।”
“বল?”
“ভাবছি বাসায় সব আজ রাতের মধ্যেই ঠিক করেই কাল পৃথী এবং আমার এনগেজমেন্ট টা সেরে ফেলবো। কেমন হবে?”
অয়ন প্রথম কয়েক সেকেন্ডের জন্যে চুপ করে থাকে।পরে মুখে হাসি সংযত করে বলে,
“এজ ইউর উইশ!”
২৩.
এনগেজমেন্টে পৃথীতের বাসায় ফাহাদ সবাইকে নিয়ে হাজির হয়।ফাহাদ কাল রাতে তার মা-বাবাকে পৃথীর কথা প্রথমে বললে উনারা রাজি হতে চাননি।পৃথীদের টানাপোড়েনের পরিবার তারউপর আবার বাবা নেই।ওমন গরীব ঘরে ছেলেকে বিয়ে করাবেন না।কিন্তু বিপত্তি সাঁধলো ফাহাদকে নিয়ে।পৃথীকে যদি উনারা না মানেন তাহলে সে কোনোকালেও অন্য মেয়েকে বিয়ে করবে না।পরে আর কি ফাহাদের বাবা ছেলের মুখের দিকে তাকিয়ে আর অমত করতে পারলেন না।রাজি হয়ে গেলেন।পৃথীদের বাসায় মোটামুটি পাঁচ-ছয়জনের মতো মেহমান আছে।ফাহাদ,ফাহাদের বাবা-মা,চাচা এবং মামা।অয়ন আসতো।সে নাকি কোনো এক ব্যস্ততায় আঁটকে যাওয়ার কারণে তাই আসতে পারে নি।তবে ব্যস্ততা হালকা কমে গেলেও আসার চেষ্ট করবে।
পৃথীকে সাজিয়ে দিচ্ছে পাশের বাসার সাঁজু।পড়নে লাল জামদানী,হাতে মোটা দুটো চুড়ি,নাকে নাঁকফুল, আর কানে লতা গহনা।গলায় চিকন হার।সবগুলোই এমিটি।রহিমা সকালেই নিজে গিয়ে মেয়ের জন্যে এনেছেন!পৃথীকে সবমিলিয়ে মোটামুটি ঘরোয়া ভাবে সাজিয়েছে সাঁজু।এই হালকা সাঁজেও মেয়েটকে কতই না দারণ লাগছে।সাঁজু ত পৃথীকে সাঁজানোর পর পরই পৃথীকে দেখে প্রথম কয়েক সেকেন্ড জাস্ট হা হয়ে তাকিয়ে থাকে।তার কিছুক্ষণ পর হুঁশ ফিরে এলে বলে,
“তুমি এত সুন্দর কেন পৃথী,আপু?মানুষ এতটা সুন্দর হয় আমার ত জানা ছিল না!”
এই কথায় পৃথীর কতই না খুশি হবার কথা।আবার লজ্জা পেয়ে মুখ লুকিয়ে রাখার কথা।কিন্তু পৃথীর মাঝে এর কিছুই ঘটলো না।সে আগের মতন অসাড় ই থেকেছিল।না কিছু বললো,আর না খুশি হলো।তারপর পৃথীকে সবার সামনে নিয়ে যাওয়া হয়।সবাই পৃথীকে দেখে বেশ খুশি হয়। ফাহাদের বাবা ত সবার থেকে বেশি খুশি হয়ে যায়।এতটাই খুশি হোন খুশির তোড়ে টপ করে বলে ফেলেন,
“নাহ এই মেয়ের কোনো এনগেজমেন্ট হবে না!”
এ’কথায় সবাই মুহূর্তে স্তব্ধ হয়ে যায়।আর অবাক চোখে ফাহাদের বাবার দিকে তাকায়।এনগেজমেন্ট এরেন্জে হঠাৎ উনি এটা কেমন কথা বললেন!এনগেজমেন্ট না করালে তাহলে ছেলেকে নিয়ে কেন এলেন?সবাইকে দেখাতে নাকি ঢোল বাঁজিয়ে মেয়েটিকে অপমাণ করতে?সবার মুখে এমন হাজারো সমালোচনামূলক কথা উঠতে থাকে।তখনি তিনি সবাইকে অবাক করে দিয়ে তারপর আবার বলে উঠেন,
“এই মেয়েকে আমি আজই আমার ঘরের বউ করতে চাই।আমার বউমা করতে চাই।সো নো এনগেজমেন্ট! ”
ফাহাদের বাবার মুখে এহেন কথায় সবাই মুহূর্তে খিলখিলিয়ে হেসে উঠে।আর বলতে থাকে -“এত খুব খুশির কথা ভাই সাহেব!আলহামদুলিল্লাহ। আলহামদুলিল্লাহ। আলহামদুলিল্লাহ। ”
আর কণে?যাকে বিয়ে করার কথা বলছে সে কি খুশি হয়েছে?না!সে চোখবুঁজে নিজেকে যথেষ্ট সংযত করার চেষ্টা করে যাচ্ছে!এমনকি সামনে কোনো ছুরি পেলে তা দিয়ে নিজেকে জখম করে দিয়ে বলতে ইচ্ছে হচ্ছে “ইন্না-লিল্লাহ! ”
চলবে…
(কত যে বকেয়া পর্ব আপনারা বাকি😪।যাইহোক গল্পটা বেশি আর বড় করবো না।)