গোধূলী_বেলার_স্মৃতি পর্ব ১৬+১৭

#গোধূলী_বেলার_স্মৃতি (Unexpected Story)
#পর্ব- ১৬
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
উনি আমাকে কোলে নিয়ে,সাবধানতা সহাকারে নীচে নামিয়ে দেন।উনাকে দেখে-ই’ বুঝা যাচ্ছে আমার উপর রেগে আছেন। আমি পরিস্হিতি বুঝে মিনমিন সুরে বললাম,
“ছোট সাহেব! “।
সঙ্গে সঙ্গে উনি ধমকের সুরে বললেন,
” আগেও একবার পড়ে গিয়েছিলি। শিক্ষা হয়নি তোর? আমি এখন সঠিক সময় এসে না ধরলে কী হতো বুঝতে পারছিস? ”
আমি গলাটা উঁচু করে বললাম,
“কি আর হতো? বড়জোড় আমার কোমড় ভেঙে যেতো।”

ছোট সাহেব আমার দিকে ক্ষুদ্ধ দৃষ্টিতে তাঁকিয়ে একটা টুল এনে, উপরে উঠে দাঁড়িয়ে আমার নোটস খু্ঁজতে শুরু করলেন। উনি জানেন আমাকে বলে কিচ্ছু হবেনা তাই হয়তো নিজের এনার্জি নষ্ট না করে বই খুঁজাতে মন দিলেন। ছোট সাহেব যথেষ্ট পরিমাণ লম্বা হওয়ায় খুব সহজে-ই’ আমার নোটস গুলো খুঁজে ফেললেন।

আমার কাছে এসে নোটস গুলো হাতে ধরিয়ে কিছুটা কড়া কন্ঠে বললেন,

“এগুলো নেয়ে এখুনি বেড়িয়ে যা। সাদি চলে আসার আগে। ”

আমি কিছুটা সিরিয়াস ভঙ্গিতে বললাম,

“আমি কেনো যাবো হুহ তাও আবার আপনার কথায়। ”

(লেখিকাঃ রিমি)

উনি কোমড়ে হাত দিয়ে বললেন,

“কাজল তুই আমার একটা কথাও শুনবি নাহ?”

আমিও উনার মতো স্টাইল করে আমার কোমরে হাত দিয়ে উনার নকল করে বলি,

“আমি আবার আপনার কথা কবে শুনলাম? তাছাড়া সাদি ভাইয়া এখানে আসলে কী হবে কী? ”

—-“তোকে বলবো কেন? ”

—“থাক আপনার মতো মাথামোটা আমি নই। আমি সব বুঝি। ”

—–“কি বললি তুই? ”

—–“না মানে আমি বুঝে গিয়েছি। ”

—-“কী বুঝেছিস? ”

ছোট সাহেবের প্রশ্নে আমি দাঁত কেলিয়ে বললাম,

“মানে আপনি সাদি ভাইয়াকে নিয়ে মারাত্মক জেলাস ফিল করছেন। ”

ছোট সাহেবের সোজা উত্তর,

“একদম -ই’ নাহ। ”

আমি উনার দিকে আরেকটু এগিয়ে বললাম,

—-“বলুন নাহ সাদি ভাইয়া আসলে কী হবে?
ছোট সাহেব দাঁত কটমট করে বললেন,

“অনেক কিছু হবে। তুই বুঝবি নাহ? ”

আমি উনার চোখের দিকে তাঁকিয়ে উনার আরেকটু কাছে এসে বললাম,

“আমি তো বুঝতে-ই’ চাই ছোটসাহেব। আপনি শুধু আমাকে বুঝিয়ে বললে-ই’ হবে।

হুট করে আমি উনার এতোটা কাছে আসায়। হয়তো উনি কিছুটা ভরকে গেলেন।

আমাদের দুজন দুজনের অনেকটা কাছে। আমি উনার শার্টের কলার নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে উনার মুখোমুখি হয়ে বললাম,

“স্বীকার করুন ছোটসাহেব! আপনি আমার জন্যে জেলাস ফিল করেন। ”
মানুষ কখন জেলাস ফিল করে জানেন ছোট সাহেব? ‘মানুষ যখন নিজের সব থেকে প্রিয় মানুষটিকে প্রতিনিয়ত হারানোর ভয় পায় তখনি তার মধ্যে জেলাসি কাজ করে। ‘ আমি কী আপনার সেই প্রিয় কোনো মানুষ?”

কাজলের এমন প্রশ্নে রুদ্রিক ঠিক কী উত্তর দিবে বুঝতে পারছেনা।

উনি হয়তো আমার কথার বিপরীতে কিছু বলতে চাইছিলেন,কিন্তু আমি তাড়াতাড়ি সেখান থেকে চলে এলাম। আমার যা বুঝার বুঝে গিয়েছি। এখন৷ শুধুমাত্র ছোটসাহেবকে উনার অনুভুতিগুলোর সাথে পরিচয় করার সময় চলে এসেছে।

অন্যদিকে রুদ্রিক লাইব্রেরির চেয়ারে বসে পড়ে,
রুদ্রিক তো সাদিকে নিয়ে কিছুটা চিন্তায় আছে বটে। কেননা সাদি নিজ মুখে স্বীকার করেছে সে কাজলকে ভালোবাসে, তাতে রুদ্রিকের কী? নিজের কাছে নিজে প্রশ্ন করে বসলো রুদ্রিক।
রুদ্রিক উঠে দাঁড়িয়ে আপনমনে বলল,

” নাহ নাহ। সাদি কাজলকে কিছুতে-ই’ ভালোবাসতে পারেনা। শুধু সাদি কেন? অন্য কেউ-ই’ কাজলকে ভালোবাসতে পারেনা। হুম হ্যা তার মানে কী?রাফসিন শেখ রুদ্রিক কাজলের জন্যে জেলাস ফিল করছে? ওহ শিট!”

কথাটি বলে জোড়ে জোড়ে নিঃশ্বাস ফেললো রুদ্রিক।

_______
ভার্সিটির হল রুমে তন্ময়, পলক, শোভন ও ইথান
রুদ্রিকের সাথে সাহায্য করছে, সব আয়োজনে। আজকে সাথে সাদিও রয়েছে। রুদ্রিক আজ প্রচন্ড ব্যস্ত কালকে ভার্সিটির অনুষ্ঠানে এত্তো বড় একটা ফাংশন বলে কথা।

রুদ্রিক সবাইকে সবার কাজ বুঝিয়ে দিচ্ছে।

আমিও হলরুমে দাঁড়িয়ে সব আয়োজন দেখে যাচ্ছি। ছোটসাহেবের কী ব্যস্ততা বাবা। আমার ভাববার মাঝে-ই’ প্রিন্সিপাল হল রুমে প্রবেশ করেন। স্যারকে দেখে আমরা সবাই দাঁড়িয়ে পড়ি। স্যার মুচকি হেঁসে রুদ্রিকের দিকে এগিয়ে গিয়ে বললেন,

“তা রুদ্রিক বাবা তোমার ফাংশনের আয়োজন কতদূর? ”

রুদ্রিক নিজের বাঁকা দাঁতের হাঁসি ঝুলিয়ে বলে,

“স্যার অলমস্ট সবকিছু-ই’ কম্পলিট। আপতত শুধু প্রতিযোগিদের ম্যাকাপ রুমের আয়োজনটা বাকি। সেইটাও আমি করিয়ে নিবো। ”

প্রিন্সিপালের কথার মাঝে-ই’ একজন মহিলা প্রফেসর এসে বললেন,

“সে কী রুদ্রিক?আমি তো সেই দায়িত্ব জেনিকে দিয়েছিলাম। জেনি কোথায়? তিন -চারদিন ধরে তাঁকে দেখা-ই’ যাচ্ছেনা। ”

রুদ্রিকের বন্ধুরা সবাই চুপ হয়ে যায়। রুদ্রিক কী বলবে বুঝতে পারছেনা। তার ফোন জেনি ধরছে-ই’ নাহ।

——“এইতো ম্যাম আমি এসে পড়েছি। ”

কথাটি বলে জেনি ও হাঁসিমুখে হলরুমে প্রবেশ করে। জেনিকে দেখে বুঝা যাচ্ছে সে যথেষ্ট স্বাভাবিক।

পলক এগিয়ে এসে বলে,

“জেনি তুই…”

পলককে থামিয়ে জেনি এগিয়ে এসে বলে,

“আর কাউকে কিচ্ছু বলতে হবেনা। এখন আমি এসে গিয়েছি। ফ্রেন্ডস কালকে এত্তো বড় ফাংশন আমাদের এখন ফাংশন নিয়ে কথা বলা প্রয়োজন। ”

ম্যাম খুশি হয়ে বললেন,
“তাহলে তোমরা নিজেদের মতো কাজ করো।
আমি বরং যাই”।

জ্যানি হাঁসিমুখে মাথা নাড়ায়। রুদ্রিক অবাক দৃষ্টিতে তাঁকিয়ে আছে জেনির দিকে।

আমারাও কেনো জানি জেনি আপুর প্রতি বেশ সংদেহ হচ্ছে।

জেনি আপু ছোট সাহেবের দিকে এগিয়ে বললেন,

” রুদ্রিক ডার্লিং চলো আমাদের কথা কাজ বলোতো।”

ছোট সাহেব সাহেব বলে উঠেন,

“জেনি তোমার সাথে আমার কিছু বলার আছে। ”

জেনি আপু আমার দিকে তাঁকিয়ে ছোট সাহেবের হাত ধরে বললেন,

“রুদ্রিক ডার্লিং! আমারাও কিছু কথা রয়েছে কিন্তু এখানে নয় পারসোনালি। যত-ই’ গার্লফ্রেন্ড বয়ফ্রেন্ড
এর আলাদা কথা সবার সামনে বলা যায়না। ”

কথাটা বলে-ই’ জেনি আপু আবারো আমার দিকে শয়তানী হাঁসিতে তাঁকালো। হয়তো আমাকে মিন করে কথাটা বলেছেন।আমি এগিয়ে এসে হাঁসিমুখে বললাম,

“তা আমি যতটুকু জানি ছোট সাহেবের গার্লফ্রেন্ড এর অভাব নেই। ছোট সাহেব সবার সাথে-ই’ যদি পারসোনাল কথা বলে তাহলে তো মাসের পর মাস এইভাবে পারসোনাল কথা বলাতে-ই’ চলে যাবে। ”

আমার কথা শুনে সিথি ও সাদি ভাইয়াসহ সকলে-ই’ হেঁসে উঠে। ছোট সাহেব ও হেঁসে উঠেন।

জেনি সকলের হাঁসির দিকে তাঁকিয়ে,মনে মনে নিজের ক্ষোভটুকু দমিয়ে বলে,

“যত হাঁসিহাঁসি করার করে নাও কাজল। কালকে বুঝবে আসল মজা৷ ”

____________

রুদ্রিক অফিসে নিজের কেবিনে বসে ল্যাপটপে কিছু কাজ করছে। তখনি মিঃ আশিয়াক রাইজাদা এসে বললেন,

“হেই ইয়াং ম্যান কি করছো? ”

আশিয়াক রাইজাদাকে দেখে রুদ্রিক দাঁড়িয়ে বলে,

“স্যার বসুন নাহ। ”

আশিয়াক মির্জা বলেন,

“এতো ব্যতিব্যস্ত হওয়ার কিছু-ই’ নেই। রুদ্রিক বসো।
তোমাকে যেসব ফাইল রেডি করতে বলেছিলাম করেছো? ”

রুদ্রিক বলে উঠেন,

“জ্বী স্যার সব ফাইল কম্পলিট। ”

মিঃ আশিয়াক রুদ্রিকের কাঁধে চাপড় মেরে বললেন,
“সত্যি রুদ্রিক আমি তোমাকে যত দেখি তত অবাক হই। শহরের এত্তো বড় বিসনেজম্যান মিঃ আফজাল শেখের ছেলে হয়েও তুমি আমাদের কম্পানিতে জয়েন হয়েছো৷ ”

—-“স্যার এর কারনটা তো আপনি জানেন। ”

—-” হুম। তুমি নিজের বাবার পয়সায় চলতে চাও না বলে। তুমি এখানে জুনিয়ার অফিসার হিসেবে জয়েন হয়েছো,নিজ যোগ্যতায়।। নিজের ভার্সিটি যেমনভাবে সামলাচ্ছো সেইভাবে অফিস ও করছো। অনেক উন্নতি করবে তুমি। ”

রুদ্রিক সৌজন্যতার হাঁসি দিয়ে বলেন,

“দোয়া করবেন স্যার। ”

—“অবশ্যই মায় বয়। ”

কথাটি বলে’ই আশিয়াক রাইজাদা চলে গেলেন। রুদ্রিক আবারো নিজের কাছে মন দিলো।
রুদ্রিক রাইজাদা কম্পানিতে জুনিয়ার অফিসার হিসেবে জয়েন করেছে। কেউ এই ব্যাপারে জানেনা।

রুদ্রিকের কাজের মাঝে-ই’ একটি মেসেজ আসে।
‘মায়া কুঞ্জ ‘থেকে। মুসকান নাকি বারবি ড্রেসের জন্যে বায়না করছে। রুদ্রিক মুচকি হেঁসে বলে,

“এইবার চল রুদ্রিক। নিজের পিচ্ছি গার্লফ্রেন্ড এর জন্যে এখন শপিং মলে যেতে হবে। ”
__________

শপিং মলে মূলত আমি ও সিথি এসেছি কালকের ফাংশনের জন্যে কিছু ড্রেস কিনতে। সিথি হয়তো কিছু বলতে চাইছে কিন্তু বলতে পারছে নাহ। আমি ওর কাঁধে হাত রেখে বলি,

“কিছু বলবি? ”

সিথি চমকে বলে,

“নাহ মানে। আসলে পরে বলবো।”

আমি বলে উঠলাম,

“তাহলে চল। শাড়ির স্টোরে যাই। ”

সিথি মাথা নাড়ায়।

এদিকে রুদ্রিককেও শপিং মলে এসেছে। সিথি ও কাজলকে দেখে রুদ্রিক থেমে যায়।

সিথি একের পর এক শাড়ি আমাকে দিয়ে চুজ করাচ্ছে কিন্তু আমার কোনোটাই পছন্দ হচ্ছে নাহ।

সিথি এইবার বিরক্ত হয়ে বলে,

“বাবা তুই বল তোর কোনটা পছন্দ? আমি বিরক্ত হয়ে গিয়েছি। ”

আমি ঠোট উল্টিয়ে বলি,

“পছন্দ না হলে কী করবো? ”

তখনি কেউ আমার গাঁয়ে পিছন থেকে শুভ্র রংয়ের একটা সাদা শাড়ি জড়িয়ে বলে,

“এই শাড়িতে তোকে অনেক ভালো লাগবে রে কাজল? ”

আমি আয়নায় তাঁকিয়ে দেখে ছোট সাহেব।

উনি আমার কানে ফিস্ফিস সুরে বললেন,

“একেবারে শুভ্ররাঙাপরী লাগবে তোকে। “#গোধূলী_বেলার_স্মৃতি (Unexpected Story)
#পর্ব- ১৭ (ইটস কলড সাস্পেন্স)
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
ছোট সাহেবের দেওয়া ‘শুভ্ররাঙাপরী ‘নামটি শুনে শরীরে আলাদা রকমের ভালোলাগার শীতল হাওয়া বয়ে গেলো। আমি শাড়িটি নিজের গাঁয়ের সাথে ভালো করে জড়িয়ে নেই। শুভ্র রংয়ের সাথে গোল্ডেন মিক্সড করা সিল্ক শাড়ি। কি সুন্দর শাড়িটা। আমি আস্তে করে বললাম,
“ছোটসাহেব আপনি এখানে?”
কাজলের কথায় রুদ্রিক সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে কিছুটা তাড়াহুড়া করে বলে,
“আসলে আমি এখানে একটা কাজে এসেছিলাম বাট এখানে এসে দেখি তুই কোনো শাড়ি চয়েজ করতে পারছিলি নাহ।তাই আমি একটা শাড়ি চয়েজ করে দিয়ে দিলাম। ”

আমি ঠোট টিপে হেঁসে বললাম,

“হুম আর কিছু? ”

—-“আর কিছু নাহ। ”

কথাটি বলে উনি এগিয়ে এসে, আবারোও বলে উঠেন,

“শুভ্র রংয়ের শাড়িটি পড়িস। তোকে ভালো লাগবে। ”

কথাটি বলে উনি এক মুহুর্ত ও দাঁড়ালেন নাহ। দ্রুত পায়ে শপ থেকে বেড়িয়ে গেলেন। আমি বিড়বিড়ের সুরে বললাম,

“শুভ্ররাঙাপরী” নামটি সত্যি সুন্দর।

সিথি পলকহীনভাবে আমার দিকে ড্যাবড্যাব করে তাঁকিয়ে আছে। আমি কিছুটা ধমকরে সুরে-ই’ বললাম,

“কি হলো কি দেখছিস? ”

সিথি মেকি হাঁসি দিয়ে বললো,

“আসলে ভাইয়ু এসে তোকে শাড়ি চয়েজও করে দিলো বাহ ভাই বাহ। তারমানে ভাইয়ুর মনেও তোর জন্যে লাড্ডু ফুটছে। ”

আমি উঠে দাঁড়িয়ে বললাম,

“তুই ও নাহ। কিসব বলিস। ”

সিথি নিজের হাঁসিটুকু কন্ট্রোল করে বলে,
“তোর আর বলার লাগবে নাহ। যা বুঝার বুঝে গিয়েছি। বাট দোস্ত একটা কথা তোকে বলতে চাইছিলাম। ”

আমি বলে উঠলাম,

“কি বলবি বল? ”

—-“কালকে ভাইয়ুর রুমে গিয়ে দেখি, ভাইয়ু কাকে যেনো স্যার বলছিলো আবার কি যেনো ফাইল চেক করছিলো। আমার কেনো যেনো খটকা লাগছে সব। ”

সিথির কথায় আমি খানিক্টা আদুরে কন্ঠে বললাম,

“ওলে গোয়েন্দাটা তোকে আর কিছু বুঝতে হবেনা। বুঝেছিস?

সিথি প্রশ্নবোধক দৃষ্টিত আমার দিকে তাঁকাতে-ই’ আমি আবারো বললাম,
আর একটা কথা কী জানিস? আমরা প্রথমে উনার ব্যক্তিগত ব্যাপারে ঢুকে, অনাথ আশ্রমের কথা জেনে একটা ভুল করেছি আর ভুল করা যাবে নাহ।
ছোট সাহেব যেহুতু লুকিয়ে রেখেছেন সেহুতু উনি নিশ্চই চান না কেউ জানুক। আর আমি এইটাও জানি ছোট সাহেব যা-ই’ করবে তা নিশ্চই কোনো ভালো কাজে আসবে। এতোদিনে উনাকে এইটুকু আমি চিনে নিয়েছি।
মানুষটা দেখায় সে অহংকারী আসলে মানুষটি সত্যি খাটি মনের একজন মানুষ।

সিথি কিছুটা অবাক হলেও পরক্ষনে আমার কথা শুনে আমার গালে হাত রেখে বলে,

” কয়দিনে-ই’ আমার ভাইয়ুকে চিনে ফেললি? কীভাবে? ”

আমি লাজুক হেঁসে বললাম,

“ঠিক করে চিনতে পারলাম কোথায়? উনি তো রহস্যমানব। অদ্ভুদ রহস্যমানব। ”

________

ইশানি শেখ নির্জন এক বাড়ির সামনে নিজের গাড়ি রাখে। নিজের হাতের পার্সটা নিয়ে ভিতরে ঢুকে পড়েন। ইশানি শেখ বাড়িতে ঢুকতে-ই’ কেউ থমথমে গলায় বলে,

“আমার টাকাটা? ”

——“কখনো তো দিতে ভুলেনি। আজোও নিয়ে এসেছি। ”

কথাটি বলে-ই’ ইশানি শেখ টেবিলে টাকাগুলো রাখেন। ইশানি শেখের কন্ঠে বিরক্তি প্রকাশ পাচ্ছে।

লোকটি পুনরায় এসে ইশানি শেখের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে বললেন,

“তোমার কথাতে বিরক্তি প্রকাশ পাচ্ছে ইশানি। কোনোভাবে কী তুমি আমার প্রতি বিরক্ত হচ্ছো?
তার মানে কী আমি ধরে নিবো তুমি আমায় ভালোবাসো নাহ। ”

ইশানি শেখ হাঁসলেন। যাকে বলে তাচ্ছিল্যের হাঁসি।

—-“স্বামী-স্ত্রী হয়েও সবাই জানে আমরা একে-অপরকে ডিভোর্স দিয়েছি। তোমার পূর্বে করা সকল কর্মকান্ড আমি এখন পর্যন্ত লুকিয়ে যাচ্ছি। যখন যা চাইছো তা-ই’ দিচ্ছি।
তবুও বলবে আমি তোমায় ভালোবাসি নাহ মাহির? ”

মাহির হাঁসলো। খানিক্টা হেঁসে-ই’ বলল,

“সেসব বাদ দাও। আগে একটু রেস্ট নাও। তারপর সব কথা।”

ইশানি জানে এখন মাহির তার কথা এড়িয়ে-ই’ যাবে। ইশানি শেখ আর কথা বাড়ালেন নাহ। তিনিও মাথা নাড়িয়ে উপরের রুমে চলে গেলেন।

অন্যদিকে,

রুদ্রিক গাড়িতে করে ভেবে চলেছে একটা-ই’ কথা। তার অবাধ্য মন বার বার শুধু কাজলের দিকে ধাবিত হচ্ছে। যা খুব ভালো করে-ই’ বুঝতে পারে রুদ্রিক, কিন্তু হ্যা এক্টা-ই’কিন্তু থেকে যায়। রুদ্রিক যাকে আগলে ধরে থাকতে চায় সে-ই’ রুদ্রিককে রেখে দূরে চলে যায়। নতুন কোনো মায়ায় নিজেকে আটকাতে চাইনা রুদ্রিক। কিন্তু ওইযে মন। বড্ড অবাধ্য যে। কারো সাথে সে কাজলকে সহ্য করতে পারেনা। আচ্ছা মনটা কী একটু বেশি-ই’ অবাধ্য হয়ে যাচ্ছে।

রুদ্রিক গাড়ি ঘুড়িয়ে ‘মায়া কুঞ্জ’ বাড়ির সামনে রাখে। রুদ্রিককে দেখে-ই’ ছোট্ট মুসকান নিজের ছোট ছোট পা ফেলে রুদ্রিকের কোলে চড়ে বসে হাত পেতে বলে,

“বফ্রেন্ড আমার বারবী ড্রেস কোথায়? ”

রুদ্রিক মুসকানের হাতে একটি প্যাকেট ধরিয়ে বলে,

“এইযে আমার ছোট্ট গার্লফ্রেন্ডের জন্যে বারবী ড্রেস। আমার ছোট্ট গার্লফ্রেন্ড বলেছে আর আমি না এনে পারি? বাট আমি যে গিফ্ট নিয়ে এলাম তার জন্যে আমার একটা কিসি পাওনা তাইনা?
(লেখিকাঃ জান্নাতুল ফেরদৌসি রিমি)

মুসকান হেঁসে ফেলে। মুসকান রুদ্রিকের গালে চুমু খেয়ে বলে,

” তুমি এত্তোগুলো ভালো বফ্রেন্ড। ”

রুদ্রিক ও মুসকানের গালে চুমু খায়। রুদ্রিক বাড়ির সার্ভেন্ট তিয়াশাকে ডেকে বাচ্ছাদের জন্যে নিয়ে আসা কিছু জামা-কাপড়, তিয়াশার হাতে ধরিয়ে বলে,

“বাচ্ছাদের দিয়ে দিও। ”

তখনি সেখানে বয়স্ক দিদুন এসে বললেন,

“সত্যি দাদুভাই। তোমাকে দেখলে আমি অবাক ছাড়া কিচ্ছু হইনা। কি দায়িত্ববোধ তোমার।
একজনের কিছু নিয়ে আসলে অন্যদের জন্য ও নিয়ে আসো। এমনকি তোমার দয়ায় আমি এই বয়সে বাচ্ছাদের সাথে খেলতে পারছি। সময় কাটাতে পারছি। ছেলে-মেয়েরা তো আমাকে সে কবে-ই’ ত্যাগ করে চলে গেলো। অথচ তুমি আমাকে এই বাড়িতে নিয়ে এলে আমাকে কতটা যত্নে করে রেখেছো। ”
রুদ্রিক দিদুনের হাত ধরে বলে,

” এইভাবে বলো নাহ দিদুন।’মায়া কুঞ্জ’ বাড়ির প্রত্যেকটা মানুষ আমার খুব কাছের। তোমরা শুধু আমার দায়িত্ব নও। তোমরা আমার পরিবারও। তোমাদের আমি শুধু ভালোবেসে আঘলে রেখেছি দ্যাটস ইট। ”

দিদুন রুদ্রিকের মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,

“দোয়া করি তুমি সবসময়-ই’ ভালো থাকো দাদুভাই। তোমার জীবনে এমন কেউ আসুক যে তোমার জীবনকে খুশির প্রদীপ নিয়ে আসবে। যে প্রদীপের আলোয় তোমার জীবন আলোকিত হয়ে উঠবে। ”

দিদুনের কথা শুনে রুদ্রিক বিদ্রুপ হেঁসে বলে,
“দিদুন আমার লাইফ টা এতোটাও সহজ নয়। সবাই বুঝতে উঠতে পারেনা রাফসিন শেখ রুদ্রিককে । ”

_________

—-“কাউকে বুঝতে গেলে তার ভিতরে লুকিয়ে থাক কষ্টগুলোকে অনুভব করতে হয়। যা আমি প্রতিনিয়ত অনুভব করি ছোটসাহেব। অতীতের কষ্টকর কিছু স্মৃতি যেমন আমার ডাইরির পাতায় রয়েছে। ঠিক তেমনি আপনার অতীতেও কিছু কষ্টকর স্মৃতি রয়েছে। যা আমি খুঁজে বের করবো। আপনার কষ্টগুলোকে নিমিষে-ই’ মুছে দিবো আমি কথা দিলাম ছোটসাহেব!”

ছোটসাহেবের ছবির দিকে তাঁকিয়ে আনমনে বললাম আমি। তখনি আমার চোখ যায়, খাটের পাশে থাকা শুভ্র রংয়ের শাড়ির দিকে। আমি এগিয়ে গিয়ে শাড়িটি হাতে তুলে নিলাম।

__________

গোসল সেরে আয়নার সামনে দাঁড়ালাম। যেহুতু অনুষ্টান সন্ধ্যার দিকে ফাংশন।এখন একটা ঘুম দিলে মন্দ হয়না। যেমন ভাবা তেমন কাজ। ঘুমিয়ে পড়লাম।
মায়ের ডাকে ঘুম ভাঙলো আমার।দুপুরে বেশ ভালো-ই’ ঘুম হয়েছে। বিকাল ৫টা বাজতে চললো। ওমাগো! তাড়াতাড়ি রেডি হতে হবে। ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে ছোট সাহেবের দেওয়া শুভ্র রংয়ের শাড়িটা পড়ে নিলাম। কোনোরকম আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুলগুলো এক সাইডে রেখে,ছোট একটা কালো টিপ পড়ে নিলাম।হাতে পড়ে নিলাম কাঁচের চুড়ি। ইসস টাইম একদম নেই এখুনি বেড়োতে হবে।

আমি তড়িঘড়ি করে রুম থেকে বেড়োতে-ই’ মা আমার কাছে এসে আমার থুতনি উঁচু করে বললেন,

“মাশাল্লাহ আমার মেয়েটা কী সুন্দর লাগছে। কারো নজর যেনো না লাগে। শাড়িতে তোকে যা মানিয়েছে নাহ। একদম সাদাপরী লাগছে।

তখনি ছুটকি এসে বলল,

” আচ্ছা আপাই শাড়িটা কী তুই চুজ করেছিস? নাহ মানে এত্তো সুন্দর একটা শাড়ি। তোকে একদম পারফেক্ট ভাবে মানিয়েছে। ”

আমি মুঁচকি হাঁসলাম।

—-“এই শাড়িটি আমি চুজ করেনি। যে চুজ করেছে সে খুব ভালো করে জানে আমাকে ঠিক কোন শাড়িতে ভালো লাগবে। ”

ছুটকি হয়তো ঠিক বুঝলো নাহ আমার কথা। তাতে আমার কী? আমি মাকে তাড়া দিয়ে বললাম,

“ফাংশন শুরু হয়ে যাবে। আমার এখুনি যেতে হবে।”

আমার কথার মাঝে-ই’ বাবা আমাকে দেখে বললেন,

“কাজল মা ভার্সিটির ফাংশনে যাচ্ছো?৮টার দিকে ফিরে এসো।”

—-“কিন্তু বাবা আজ একটু তাড়াতাড়ি ফিরতে বলছো যে? ”

বাবা আমার প্রশ্নে শুনে কিছুটা গম্ভীর কন্ঠে বললেন,

“যখন আসবে দেখতে-ই’ পাবে। এখন তুমি তাড়াতাড়ি গিয়ে তাড়াতাড়ি ফিরো এসো। ”

বাবার গম্ভীর কথা শুনে আমি আর কথা বাড়ালাম নাহ।

কাজল চলে যেতে-ই,’ কাজলের মা কাজলের বাবার কাছে গিয়ে বললেন,

“আজকে তুমি আমাকে ভালো রান্না করতে বললে আবার কাজলকে তাড়াতাড়ি ফিরতে বললে এইসব এর মানে কি? ”

কাজলের বাবা বললে,

“তোমার মেয়ের সেই যোগ্য পাত্র আসছে,কিন্তু কাজলকে বলা যাবে নাহ। কাজলের জন্যে সারপ্রাইজ। তাকে দেখলে তোমার মেয়ের মুখে ভাষা হারিয়ে ফেলবে আনন্দে। ”

কাজলের মাও হেঁসে দিলেন।

_________

রুদ্রিক ভার্সিটির এক কোণে দাঁড়িয়ে নিজের বন্ধুদের সাথে সন্ধ্যার আয়োজন নিয়ে আলোচনা করছে। অডিটোরিয়াম ও খুব সুন্দরভাবে সেঁজে উঠেছে। জেনি খুব শর্ট ড্রেস পড়ে-ই’ রুদ্রিককে ইম্প্রেস করার চেস্টা করছে কিন্তু বরাবরের মতো সে ব্যর্থ। রুদ্রিকের এতো সময় কোথায়?

পড়ন্ত বিকেল এখন। ধূসর রংয়ের আকাশে এক টুকরো গোধূলীর রং ধরা দিয়েছে।

রুদ্রিক এক পলক গোধূলীর আকাশের দিকে তাঁকায়। গোধূলীর মেঘ যেন সিঁদুর মেখে আছে। কপালে ছোট্ট টিপ পরেছে। যতদূর চোখ যায়, দেখা যায় ভুবন মোহিনী রূপ। একটু একটু করে ডুবে যায় সূর্য। এই গোধূলীর সৌন্দর্যকে আরো বৃদ্ধি করে
‘শুভ্ররাঙাপরীর’ আগমন। হ্যা কাজল এসেছে। রুদ্রিকের ‘শুভ্ররাঙাপরী’। মুখে তার লাজুক হাঁসি। ফর্সা মুখে গালগুলো লাল টুকটুকে হয়ে রয়েছে।
গাঁয়ে তার শুভ্র রংয়ের শাড়ি। কোমড় অবধি কালো রেশমি চুল। নাকে ছোট্ট একটি নাকফুল। রুদ্রিকের নজর সরছে-ই’ নাহ কাজলের উপর থেকে।

রুদ্রিক কেনো সবার নজর-ই’ কাজলের উপর।

আমি ভার্সিটির মাঠে আসতে-ই’ ছোট সাহেবের দিকে আমার নজর যায়। তিনি আমার দিকে তাঁকিয়ে আছেন। এই দৃষ্টিতে নেই কোনো আস্তরন নেই, আছে শুধু এক রাশ মুগ্ধতা নিয়ে। উনি আজ একটি শুভ্র রংয়ের পাঞ্জাবি পড়েছেন। উনার চুলগুলো বরাবরের মতো কপালে লেপ্টে রয়েছে।

উনি আমার দিকে এগিয়ে আসেন। আমি ঠায় দাঁড়িয়ে আছি। উনি আমার খুব কাছে আসতে-ই’
আমি বলে উঠলাম,

“আমাকে কেমন লাগছে ছোটসাহেব? ”

উনি আমার প্রশ্নে কিছুটা ঘাবড়ে গিয়ে বললেন,

“তুই সুন্দর। তাই তোকে সুন্দর লাগছে। ”

আমি ভ্রু কুচকে বললাম,

“শুধু-ই’ সুন্দর? আর কিছু নাহ? ”

উনি জড়িয়ে যাওয়া কন্ঠে বললেন,

“তোর রুপের বর্ণনা দিতে দিলে তো আমাকে কবি সাহিত্যিক হতে হবে। আপাতত তোর রুপের বর্ণনা দেওয়ার মতো কোনো শব্দ আমার কাছে নেই। ”

উনার কথায় আমি লাজুক হাঁসলাম। উনি কিছুটা আবেগি কন্ঠে

“ট্রাস্ট মি! আজকের গোধূলীর আকাশের সৌন্দর্যের
সাথে যেনো তোর এই রুপ গুলো শুভ্রভাবে কিছুটা সুপ্তভাবে ধরা দিচ্ছে। শুভ্ররাঙাপরী। ”

আমি উনার আরেকটু কাছে গিয়ে উনার কানে মৃদ্যু কন্ঠে বললাম,

” উহু শুধু শুভ্ররাঙাপরী নাহ। আপনার শুভ্ররাঙাপরী”

কথাটি বলে-ই’ আমি আর দাঁড়ালাম নাহ। দৌড়ে ছুটে গেলাম। রুদ্রিক সেখানে ঠায় দাঁড়িয়ে রইলো। মুখে ফুটে উঠলো তার বাঁকা দাঁতের হাঁসি।

সবকিছু-ই’ দূর থেকে দেখলো জেনি। সে বাঁকা হাঁসলো। এইবার শুরু হবে আসল খেলা।

অডিটোরিয়ামের পাশে-ই’ বইয়ে মুখ গুজে আছে সাদি। সিথি এসে সাদির মুখ থেকে বইটা সরিয়ে নিলো। সিথিও আজকে সবুজ রংয়ের একটি শাড়ি পড়েছে। সাদি কিছুটা বিরক্ত নিয়ে বলল,

“আমার বই দাও। ”

সিথি ঠোট উল্টিয়ে বলে,

“একদম দিবো নাহ। একটু পরে ফাংশন শুরু হবে। আর তুমি এখানে বইয়ে মুখ গুজে আছে সাদি ভাইয়া? আচ্ছা পড়ুয়া তো তুমি। ”

সাদি কিছু বলবে তার আগে-ই’ সিথি সাদির হাত ধরে
বলে,

—“এখুনি আমার সাথে যাবে। যাবে মানে যাবে।”

সাদি হেঁসে ফেলে সিথির কথায়।

_____
আমি দৌড়ে এসে ভার্সিটির মাঠের শেষ দিকে চলে আসি। কেনে যেনো আমি লজ্জা পাচ্ছিলাম। তখনি একটা পুঁচকি এসে বলে,

“আপুনি রুদ্রিক ভাই আপনাকে ভার্সিটির টপ ফ্লোরে যেতে বলেছে। ”

আমি কিছুটা অবাক হয়ে বলি,

“আমাকে? ”

—-“হু!”

ছোট সাহেব আমাকে টপ ফ্লোরে হঠাৎ ডাকলো কেন? থাক যাই বরং। কথাটা ভেবে-ই’ আমি টপ ফ্লোরের দিকে আসতে-ই’ খেয়াল করি। এখানে কেউ নেই। পাশে বড় একটা সুইমিংপুল। আমার কেনো যেনো খটকা লাগছে। নাহ এখানে থাকা যাবে নাহ। মনে হয় কেউ মজা করেছে। আমার ভাবনার মাঝে-ই’ টপ ফ্লোরের দরজা বন্ধ হয়ে যায়। হঠাৎ করে দরজা বন্ধ হয়ে গেলো কেনো? আমি এগোতে যাবে তার আগেই আমার পা পিছলিয়ে, আমি সুইমিংপুলে পড়ে যায়।

দরজার ওইপাশ থেকে জেনি শয়তানী হাঁসি হাঁসে।
এইবার আর কাজলের গান গাওয়া হবে নাহ। সারারাত এই টপ ফ্লোরে থাকতে হবে। সো ব্যাড।
এইবার কাজল বুঝবে জেনিকে অপমান করার মজা।

কথাটি আপনমনে ভেবে জেনি চলে যায়।

এইদিকে রুদ্রিকের চোখ শুধু কাজলকে খুঁজছে আর কিছুক্ষন পরে-ই’ কাজলের পারফরম্যান্স, কিন্তু কাজল কোথায়?

বাকীটা আগামী পর্বে…..

চলবে কী?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here