#মায়াবিনী_মানবী
#হুমাশা_এহতেশাম
#পর্ব_০২
সকালে টেবিলে বসে জুইঁ, মিসেস পারভীন আর সিরাজ সাহেব নাস্তা করছিল। আলআবি তখন বলে উঠলো…
–আমরা কালকে যশোর ফিরে যাবো।
ছেলের কথা শুনে সিরাজ সাহেব বলে উঠলেন…
–মানে?
আলআবি একমনে মুখে খাবার পুড়তে পুড়তে বলল…
–মানে আবার কি আমি তো বাংলাতেই বললাম।
সিরাজ সাহেব ছেলের দিকে দৃষ্টি রেখে কিছু টা ক্ষিপ্ত গলায় বললেন…
–ভদ্রভাবে কোনোদিন আর কথা বলতে পারবে না?
সিরাজ সাহেবের কথায় আলআবির মধ্যে কোনোপ্রকার ভাবাবেগ দেখা গেল না।পূর্বের ন্যায় আলআবি বলল…
–জানো যেহেতু বলার কি আছে।আমি এখন যেমন তেমনই থাকবো।
তাদের দুজনের কথার মধ্যে মিসেস পারভীন উচ্ছ্বসিত কন্ঠে বলে উঠলেন…
— এবার যাবি তুই?সত্যি?
আলআবি বলল…
–হুম।যাস্ট একদিনের জন্য।
–এটা কি বললি তুই?এসব আমি মানি না।(মিসেস পারভীন)
সিরাজ সাহেব মিসেস পারভীন কে উদ্দেশ্য করে তীক্ষ্ণ কন্ঠে বললেন…
–যেই ঠ্যাটা ছেলে বানিয়েছো। কখনো কারো কথা শোনে?যা বলবে তা তো ওর করতেই হবে।গুলি ছুরলে যেমন আর ওইটা ফিরে আসে না তোমার ছেলেও একবার একটা কিছু বললে তা থেকে পিছুপা হবে না।এসব নিশ্চয়ই জানো।জিজ্ঞেস করো তাকে, সে একদিন এর জন্য যেয়ে কোন দেশ উদ্ধার করবে।
আলআবি খাওয়া বন্ধ করে দিয়ে তার মায়ের দিকে তাকিয়ে বলল…
–তাকে বলো মা আমার কাজ আছে বলেই আমি যাচ্ছি।
মিসেস পারভীন জোর গলায় বলে উঠলেন…
— আলআবি বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে কিন্তু।
–ওকে করলাম না বাড়াবাড়ি।বাট আমি যা বললাম তাই হবে।(আলআবি)
সিরাজ সাহেব তার স্ত্রী কে উদ্দেশ্য করে বললেন…
–তোমার ছেলেকে বলো জুইঁকে ডাক্তার না দেখিয়ে যশোর যাওয়া হবে না।
মিসেস পারভীন ছেলেকে বলল…
–তোকে তো বলা হয়নি জুইঁ কে একটু ডাক্তার দেখানো লাগবে। ওকে ডাক্তার দেখানোর পর না হয় আমরা যশোর যাবো।
আলআবি জুইঁর দিকে একপলক তাকিয়ে বলল…
–ঠিক আছে।
এখানে বোবা হয়ে থাকা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই জুইঁর।তাই নিশ্চুপ হয়েই খাচ্ছে।জুইঁ এটা ভেবে অবাক হচ্ছে যে আলআবি তার মা বাবার সাথে ও ভালো বিহেভ করে না।এমন একটা ছেলে কারো ক্রাশ হয় কি করে।এটা ঠিক সে দেখতে সুন্দর।কিন্তু শুধু চেহারা দেখেই কি একজন কে ক্রাশ বানিয়ে ফেলা যায়?আচার-আচরণ বলেও তো একট কথা আছে।আলআবির মধ্যে আদব-কায়দার ‘আ’ টাও তো নেই।
জুইঁ তার রুমে এসে বারান্দার দিকে এগিয়ে যায়।তখনই মিসেস পারভীন রুমে এসে জুইঁকে ফোন ধরিয়ে দেয় আর বলে…
–নে কথা বল।
জুইঁ প্রশ্নবিদ্ধ বদন নিয়ে মিসেস পারভীন এর দিকে তাকায়।মিসেস পারভীন ইশারা করে কথা বলতে বলে চলে যায়।জুইঁ ফোনটা কানে চেপে ধরে বলে…
–আসসালামু আলাইকুম! কে বলছেন।
ওপাশ থেকে কেউ একজন বলে ওঠে…
–তোমার সতীন বলছি গো।
কন্ঠস্বর শুনতেই জুইঁ বুঝে যায় এটা একমাত্র সাদু ছাড়া আর কেউ না।জুইঁ বলে…
–কিরে নাম্বার কই পাইলি?
–কল সেন্টারে কল দিয়া বলছি আমার বেস্টফ্রেন্ডের নাম্বার টা একটু দেওয়া যাবে?(সাদু)
–কল সেন্টার কি আমার শশুর বাড়ি? কইলি আর দিয়া দিল।(জুইঁ)
–এখন যেই জায়গায় আছোস ওইটা তো শশুর বাড়ি।(সাদু)
–কি!মাথায় পাগল ভর করছে?তুই কি কইলি নিজে জানছ তো?(জুইঁ)
–আরে জানু তুই এখন আমাদের এলাকার এলাকীয় ক্রাশ আলআবি মাশরুখ এর বাসায়।ডোন্ট ইউ ফিল সামথিং সামথিং?(সাদু)
–তোর মাথা ফিল করি।এমন ছেলে তো ফ্রিতে দিলেও আমি নিমু না।ম্যানার্সলেস মানুষ একজন।কি দেইখা যে আমাদের এলাকার মাথা মোটা মেয়ে গুলা ক্রাশ খাইছে আল্লাহ ই জানে।জানছ আজকে সকালে তার বাবা মার সাথে কেমন বিহেভ করছে? শোন…
জুইঁ সকালের ঘটনা সহ রাতের ঘটনাও একে একে সব বলল।সাদু মূলত জুইঁর আম্মুর কাছ থেকে মিসেস পারভীন এর নাম্বার নিয়ে জুইঁকে কল করেছে।কথা বলা হলে জুইঁ কল কেটে পিছনে ঘুরতেই জোরে কিছুর সঙ্গে ধাক্কা লাগে। জুইঁ নিজেকে সামলে নিয়ে সামনে তাকাতেই দেখতে পায় আলআবি কফি কালারের একটা থ্রি-কোয়াটার প্যান্ট আর সাদা একটা হাফ হাতার গেঞ্জি পড়ে দুহাত পকেটে গুঁজে দাঁড়িয়ে আছে।জুইঁ সরাসরি আলআবি কে তার রুমে দেখে কিছু টা অপ্রস্তুত হয়ে পরলো।জুইঁ নিজের মধ্যে অস্বস্তি অনুভব করছে।আলআবি জুইঁর দিকে তাকিয়ে বলল…
–হায় বিউটিফুল!
আলআবি হুট করেই জুইঁর দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলল…
–আমি আলআবি মাশরুখ।
ভদ্রতার খাতিরে জুইঁও জড়তার সহিত হাতটা বাড়িয়ে দিল।আমতা আমতা করে বলল…
–আমি জুইঁ।
জুই হাত ছাড়িয়ে আনতে নিলেই আলআবি খপ করে জুইঁর হাত জোড়ে চেপে ধরলো।জুইঁ হকচকিয়ে আলআবির দিকে তাকাতেই দেখলো আলআবি কিঞ্চিত পরিমাণে হাসছে।এই হাসির অর্থ জুইঁর বোধগম্য হলো না।কিন্তু কেন যেন হাসিটা ভালোও ঠেকলো না।জুইঁ হাত ছাড়ানোর জন্য মোচড়ামুচড়ি করতেই আলআবি হাত ছেড়ে দিয়ে বিছানায় গিয়ে বসতে বসতে বলল…
–মানুষের সমালোচনা করাটা কিন্তু মোটেই ম্যানার্স এর মধ্যে পড়ে না।
বিছানায় বসে পায়ের উপর পা তুলে দিয়ে জুইঁর দিকে তাকিয়ে মাথাটা হালকা উপর-নিচ করে আবার বলল…
–জানতো নিশ্চয়ই?
জুইঁর সব কথা যে আলআবি শুনে নিয়েছে। এটা ভেবেই জুইঁ ধরা পরা চোরের মতো থতমত খেয়ে বলল…
–কিক…কিসের সমালোচনা?
আলআবি আরেকটু আয়েশি ভঙ্গিতে বসে বলল…
–মা তো বলল তোমার শ্বাস-কষ্টের রোগ আছে ভুলে যাওয়ার রোগ আছে সেটা তো বলল না।একটু আগেই তো ফ্রেন্ডের কাছে আমার নামে সুন্দর সুন্দর সমালোচনা করছিলে।ভুলে গেলে?
জুইঁ এবার জোড় গলায় বলে উঠলো…
–আমি সমালোচনা করি আর যাই করি আপনি শুনবেন কেন।আড়িপেতে কারো কথা শোনাও ম্যানার্সের মধ্যে পড়ে না।
জুইঁর কথা শেষ হতেই আলআবি হুট করে বিছানা থেকে উঠে ধীরে ধীরে জুইঁর দিকে অগ্রসর হতে লাগলো আর বলল…
–কি বললে?শুনতে পাইনি।
জুইঁ আলআবি কে এগোতে দেখে একটু ভয় পেয়ে গেল।জবুথবু হয়ে নিজের জায়গাতেই দাঁড়িয়ে রইলো।আলআবি জুইঁর একদম কাছে এসে জুইঁর দিকে হালকা ঝুঁকে পরতেই জুইঁ ভয়ে চোখ খিঁচে বন্ধ করে নিল।
অট্টহাসির শব্দে জুইঁ চোখ মেলে তাকালো।আলআবি শরীর দুলিয়ে শব্দ করে হাসছে।আলআবি জুইঁকে এমনি একটু ভয় দেখানোর জন্য এগিয়েছিল।
আলআবি হাসি থামিয়ে জুইঁকে বলল…
–এই যে বিউটিফুল! রেডি হয়ে নাও।মা বলল ডাক্তার এর কাছে যাবে তোমাকে নিয়ে।
আলআবি চলে যেতেই জুইঁ বড় একটা দম নিল।জুইঁর এখন মনে হচ্ছে আলআবি নামক আদব বিহীন লোকটার থেকে যতদূরে থাকবে ওর ততই মঙ্গল হবে।
জুইঁ হালকা আকাশি বর্ণের একটা থ্রি-পিছ এর সাথে কালো বর্ণের হিজাব পড়ে তৈরি হয়ে নিল। মিসেস পারভীন এর ফোনটা হাতে নিয়ে তাদের রুমের দিকে পা বাড়ালো।গিয়ে দেখে মিসেস পারভীন ও যাওয়ার জন্য তৈরি।জুইঁ আর মিসেস পারভীন ড্রইং রুমে এসে দেখল সিরাজ সাহেব সোফায় বসে ওদের দুজনের অপেক্ষা করছে।
তিনজন মিলে বাড়ি থেকে বের হয়ে গাড়িতে বসতেই হুট করে আলআবি এসে ড্রাইভিং সিটে বসে পরল।আলআবি কে দেখে সিরাজ সাহেব বললেন…
–তোমার অফিস নেই? আর ড্রাইভার কোথায়?
আলআবি গাড়ি স্টার্ট দিতে দিতে বলল…
–ড্রাইভার মামাকে ছুটি দিয়েছি ১০ দিনের।
মিসেস পারভীন বলে উঠলেন…
–তাহলে তুইও যাচ্ছিস আমাদের সাথে?
–হুম(আলআবি)
গাড়ির মধ্যে পিনপতন নীরবতা বিরাজ করছে। নীরবতার সঙ্গে ই ডাক্তার এর চেম্বারে এসে গাড়ি থামল।জুইঁ কে নিয়ে সিরাজ সাহেব চেম্বারে ঢুকলেন। ডাক্তারের সাথে কথাবার্তা বলে তার পরামর্শ অনুযায়ী ঔষধ কেনার জন্য সিরাজ সাহেব আলআবিকে পাঠিয়ে দিলেন।
বাসায় রওনা দেয়ার উদ্দেশ্যে গাড়িতে উঠেই আলআবি বলল…
–মা জুইঁ তো ঘুরতে এসেছে তাহলে তোমরা এই গাড়ি দিয়ে বাসায় চলে যাও।ওকে আমি একটু ঘুরিয়ে নিয়ে আসি।
জুইঁ আলআবির কথায় হড়বড়িয়ে বলে উঠলো…
–না না।এখন ঘোরাঘুরির দরকার নেই। আমি…
জুইঁ কে আর বলতে না দিয়ে সিরাজ সাহেব একবার তার স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে তারপর জুইঁর দিকে তাকালেন আর বললেন…
–যাও জুইঁ।আজকে বের হয়েছ যখন তখন আশেপাশে থেকে ঘুরে আসো।
জুইঁ একটু উত্তেজিত হয়ে বলল…
–আরে যাওয়া লাগবে না।আলআবি ভাইয়া না থাকলে গাড়ি ড্রাইভ কে করবে?
সিরাজ সাহেব জুইঁকে বললেন…
–আমাকে দেখলে কি মনে হয় আমি গাড়ি ড্রাইভ করতে পারবো না?যাও তুমি।কোনো টেনশন করো না।
মিসেস পারভীন ও তালে তাল মিলিয়ে হ্যাঁ বলতে লাগলেন।অবশেষে আলআবি আর জুইঁকে গাড়ি থেকে নামিয়ে সিরাজ সাহেব গাড়ি নিয়ে চলে গেলেন।জুইঁ এবার আলআবি কে লক্ষ্য করে বলল…
–আমি কি বলেছি আমি আপনার সাথে ঘুরতে যাব।আমি আপনার সাথে যাব না।
–বাহ্।দেখতে যেমন তোতাপাখির মতো।কথাও তো বলো তোতার মতো।(আলআবি)
–আল্লাহ মুখ কথা বলার জন্য ই দিয়েছে। (জুইঁ)
আলআবি জুইঁকে কাঠ গলায় বলল…
–আমার মুখে মুখে যদি আর একদিন তর্ক করো তো তোমার খবর আছে।
আলআবি খপ করে জুইঁর হাত ধরে সামনের দিকে হাটতে লাগলো।জুইঁ হাত ধরতে দেখে আলআবি কে বলল…
–কারো হাত ধরতে পারমিশন লাগে।
আলআবি জুইঁর হাত আরো শক্ত করে ধরে বলল…
–এতুটুকু মেয়ের হাত ধরতে আবার কিসের পারমিশন লাগবে।ভুলে যেও না আপাতত আমিই তোমার গার্ডিয়ান।
জুইঁ কিছু বলতে যাবে তখনি আলআবি জুইঁকে নিয়ে একটা রিকশায় উঠে পরলো।
প্রায় দশ পনেরো মিনিট অতিক্রমের পর জুইঁ আলআবি কে প্রশ্ন করলো…
–আচ্ছা আমরা কোথায় যাচ্ছি?
আলআবি চারপাশে চোখ বুলাতে বুলাতে বলল..
–বললে চিনবে নাকি?
–তাও একটু বলুন।(জুইঁ)
–এ জার্নি বাই রিকশা।(আলআবি)
–কি?এমন জায়গা কোথায়?আমাকে বোকা ভেবেছেন?সত্যি সত্যি বলুন কোথায় যাচ্ছেন? (জুইঁ)
–বোকা কেন ভাববো।তুমি তো আগের থেকেই বোকা।আমরা আজকে সারাদিন রিকশায় ঘুরবো।মাথায় বুদ্ধি থাকলে আগেই বুঝতে পারতে।(আলআবি)
[বিঃদ্রঃ গল্পটি সম্পূর্ণরূপে কাল্পনিক।গল্পের সকল প্রকার চরিত্র, উক্তি কাল্পনিক।অনুগ্রহ করে বাস্তবিক অর্থ খুজতে গিয়ে বিভ্রান্ত হবেন না আর লেখিকা কে ও বিভ্রান্ত করবেন না]