#আড়ালে_ভালোবাসি
#নুসরাত_জাহান_অংকুর
||পার্ট_১৭||
নিশাত আজ ভার্সিটিতে যাবে বলে রেডী হচ্ছে । আরহান বাইরে বাইকে বসে আছে । দেখতে দেখতে ১সপ্তাহ চলে গেলো কিন্ত নিশাত আর আরহান এর সম্পর্কের কোনো পরিবর্তন হয়নি। নিশাত আরহান এর সাথে প্রয়োজন ছাড়া কথা বলে না ।আরহান কথা বলার চেষ্টা করলেও নিশাত সবসময় ঈশা কে নিয়ে ব্যাস্ত আর এক সপ্তাহ পর আরহান এর এক্সাম সেই জন্য নিশাত কে বেশি কিছু বলছে না।এই এক সপ্তাহ নিশাত বাসায় থেকে ঈশার অ্যাসাইনমেন্ট করে দিয়েছে আজ নেহা ফোন করতেই নিশাত ভার্সিটিতে যেতে রাজি হইছে ।
আরহান আধা ঘন্টা ধরে অপেক্ষা করছে কিন্ত নিশাত এর খোঁজ নেই। আরহান বিরক্তি নিয়ে বাইক থেকে নেমে বাড়ির দিকে যেতে গেলে হটাৎ থেমে যায় বুকের বা পাশে ধুকধুক করছে
নিশাত আজ নীল রঙের একটা গাউন পড়েছে আর সবচেয়ে অবাক করা বিষয় নিশাত আজ হিজাব পড়েছে ।এই প্রথম নিশাত কে হিজাব পড়তে দেখছে । আরহান হা করে তাকিয়ে দেখছে নিশাত কখন ওর পাশে এসে দাঁড়িয়েছে সেই দিকে খেয়াল নেই ।
নিশাত কিছুটা বিরক্ত নিয়ে বলে
_” আপনি কি এখানেই দাড়িয়ে থাকবেন ? থাকলে বলুন আমি অন্য ভাবে চলে যাচ্ছি
আরহান এর হুস ফিরে সে কিছু না বলে ঘরের ভিতর যায় ।নিশাত তো রেগে বোম
_” আজব তো আমার কথার কোনো দাম নেই ঘোড়ার মত ছুটলো ফাজিল একটা
নিশাত গাল ফুলিয়ে দাড়িয়ে রইলো । আরহান এসে নিশাতের সামনে দাঁড়ায় । নিশাত অন্য দিকে ফিরতে গেলে আরহান হাতে থাকা কাজল নিশাতের গলায় লাগিয়ে দেয় ।
_” কি করছেন কি?
আরহান নিশাতের কথায় পাত্তা না দিয়ে ।নিশাতের কপালে ভালোবাসা দিয়ে বলে
_” মাশাল্লাহ আমার বউয়ের উপর কারোর যেনো নজর না লাগে
নিশাত থতমত খেয়ে যায় । আরহান মুচকি হেসে বাইকে উঠে স্টার্ট দেয় । নিশাত ঐভাবে দাড়িয়ে বুঝার চেষ্টা করছে কি হলো । আরহান বাকা হেসে বলে
_” তুমি কি উঠবে নাকি আমি নামবো ? আমি নামলে কিন্ত অনেক কিছু হবে
আরহান এর কথায় নিশাত এর হুস ফিরে । বকতে বলতে বাইকে উঠে
_” ধরে বসো নাহলে পড়ে যাবে
_” না ঠিক আছে
আরহান জোড়ে স্টার্ট দিতেই নিশাত হুমড়ি খেয়ে পড়ে । আরহান বাকা হেসে চালানো শুরু করে ।
নিশাত বাইরের দৃশ্য দেখতে ব্যাস্ত । প্রিয় মানুষটার সাথে বাইকে ঘুরার মজাই আলাদা সেই জন্য তো আরহান বাইক এনেছে ।
আরহান বাইক চালাচ্ছে আর গ্লাসে নিশাত কে দেখছে । নিশাত কে যত দেখে তত প্রেমে পড়ে যায়
ভার্সিটিতে সামনে আসতেই নিশাত নেমে চলে যেতে গেলে আরহান ডাক দেয়
_” নিশা পাখি
নিশাত কোনো কথা না বলে পিছনে ঘুরে তাকায়। আরহান বাইক রেখে নিশাতের সামনে এসে বলে
_” কোনো কিছুর দরকার হলে আমাকে বলবে ।যাওয়ার সময় একা যাবে না আমার জন্য অপেক্ষা করবে কেমন ?
নিশাত মাথা দুলিয়ে চলে যেতে নিলে আরহান হাত ধরে আটকায় । নিশাত প্রশ্নবোধক চোখে তাকিয়ে বুঝার চেষ্টা করে ।
আরহান কিছু না বলে নিশার কপালে নিজের কপাল ঠেকিয়ে দাড়িয়ে থাকে । নিশাত ছাড়ানোর চেষ্টা করতে করতে বলে
_” কি করছেন কি ? সবাই দেখছে ছাড়ুন
নিশাত এক প্রকার জোর করে ছাড়িয়ে দৌড়ে চলে আসে আর আরহান হাসতে হাসতে ক্লাসে চলে যায়।
নিশাত এক ছুটে ক্লাসে এসে হাফাতে থাকে নেহা সেটা দেখে বলে
_” কিরে এমন হাফাচ্ছিস কেনো ? জিজু কি কিছু দিলো
নেহার কথায় নিশাত অবাক হয়ে বলে
_” কি সব বলছিস ও কি দেবে আর তুই এমন করছিস কেনো ? আজব তো আমি ভাবছি দেরি হয়ে গেছে তাই
_” জিজু যতদিন আছে তোর দেরি হবে না দেখ আজ কেমন সময়ের আগে চলে আসলি
নিশাত আড় চোখে তাকাতেই নেহা মুখে আঙ্গুল দিয়ে বলে।
_” আচ্ছা বাবা আর বলবো না আচ্ছা যাই হোক তোর শশুর শাশুড়ি আসছে
নিশাত দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে
_” নারে উনার আব্বু আসছে কিন্ত উনার আম্মুর নাকি কাজের জন্য চট্টগ্রাম শিফট হতে হইছে । ওদের বাড়ির কিছু আমি বুঝছি না ওদের তো কোনো কিছুর কম নেই তাহলে কেনো উনার আম্মুর জব করা লাগবে ? আর ওখানে আমার থাকতে ভালো লাগে না সারাদিন বন্ধির মত থাকি এই বয়সে ছেলেরা বাবার লাঠি হবে কিন্ত আমার বেলায় উনার আব্বুর ঘাড়ে বসে বসে খেতে হচ্ছে। ঈশা কে নিয়ে চিন্তা নেই কিন্ত নিজের কাছে খুব খারাপ লাগছে
নেহা নিশাত এর কাধে হাত দিয়ে বলে
_” দেখ ভাইয়া তো স্টাডি করে সামনে এক্সাম শেষ হোক তারপর দেখ ভাইয়া একটা জব করবে ।
_” তোর কথায় আমি সায় দিতে পারছি না যাই হোক এমন একটা ছেলেকে নিজের হাসব্যান্ড হিসেবে কি করে মানবো? সব কিছু না হয় বদলাতে পারলাম কিন্ত চরিত্র সেটা কি করে বদলাবো ? আমার কিছু ভালো লাগছে না এর থেকে তো কাকী যার সাথে বিয়ে দিচ্ছিল তার সাথে বিয়ে হওয়া ভালো ছিল
নেহা এবার রেগে বলে
_” তুই ভাইয়া কে কেনো দোষ দিচ্ছিস ? জানি ভাইয়ার দোষ আছে কিন্ত সে তো ভালো হতে চাইছে তুই কি সেই সুযোগ দিচ্ছিস ভাইয়া কে? শুন ভাইয়া ছোট থেকে যেইভাবে বড়ো হইছে সেইভাবে থাকছে ভাইয়াকে বুঝানোর মত কেউ ছিলো না এখন তুই যদি ভাইয়া কে সঠিক পথে আনতে পারিস তাহলে ভালো । ভাইয়া তো ভালো হতে চাইছে তুই একটা সুযোগ দিয়ে দেখ । সব তো তোর জানা ছোট বেলা থেকে ভাইয়া কেমন কষ্ট পেয়েছে
সব থেকে বড় হতভাগা সে যার সব থেকেও কিছু নেই
নেহার কথায় নিশাত ভাবতে থাকে
_” সত্যি তো আমি নিজেই তো এইসব ভেবে দেখিনি । আমার কি উনাকে একটা সুযোগ দেওয়া উচিত উনি কি সত্যি ভালো হবে (মনে মনে ) নেহা চল তো
নেহা অবাক হয়ে বলে কোথায়?
নিশাত নেহা কে কিছু বলতে না দিয়ে বের হতে গেলে স্যার আসে ।
_” ধুর
_” কি রে কোথায় যাবি?
নিশাত কিছু বলে না ক্লাসে করতে থাকে ।
এদিকে
আরহান নিশাতের কথা ভাবছে আর স্মোক করছে । সেই সময় নিশাত এর ক্লাসে নিশাতের ফোন ফেরত দিতে গিয়ে নিশাত আর নেহার কথা শুনে ফেলে তখন থেকে আরহান এর মুড অফ। পাশে জয় বসে বসে গেম খেলছে
_” সত্যি তো আমি তো নিশা পাখি কে নিয়ে দূরে যেতে চাইছি কিন্ত কিভাবে অন্যের টাকায় আমি নিশা পাখি কে খাওয়াবো কোনো স্ত্রী সেটা মেনে নিবে না । একটা জবের ব্যাবস্থা করতে হবে। নিশা পাখির তো অনেক খরচ সেই গুলোর জন্য আমি আব্বুর কাছে টাকা চাইলে কেমন স্বামী আমি । আমার আগে এইগুলো ভাবা উচিত ছিল । দেখি কোনো জব পাই কি না কিন্ত আমার মত ছেলে কে কী কেউ জব দেবে উফফ ভাবতে পারছি না (মনে মনে )
আরহান এইসব ভাবতে ব্যাস্ত তখনই জয় ধাক্কা দেয় ।
_” তোর সমস্যা কি ?
জয় কিছু না বলে সামনে ইশারা করে । জয়ের দৃষ্টি অনুসরণ করে আরহান তাকিয়ে দেখে নিশাত আসছে । আরহান বুঝে যায় ওর কাছে তো আসছে না তাই মাথা নিচু করে সিগারেট খেতে থাকে
নিশাত এসে জয়দের পাশে বসলো ।আরহান তখনো মাথা নিচু করে বসে আকাশ পাতাল ভাবছে হটাৎ নিশাতের কথায় মাথা উচু করে তাকায়
_” দেন আমার খুদা লাগছে
আরহান এর সামনে হাত পেতে । আরহান পাল্টা প্রশ্ন করলো
_” কি খাবে ? রোল দিতে বলবো
নিশাত কে বলতে না দিয়ে আরহান রোল অর্ডার করতে গেলে নিশাতের কথা শুনে থেমে যায়
_” না আপনার হাতে যেটা ওইটা খাবো। দেন !
আরহান তো রীতিমত অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে
নিশাত আবার বলে
_”কিহলো? দেন খুদা লাগছে বললাম না
আরহান সহ জয় ও অবাক । আরহান অবাক চোখে তাকিয়ে বলে
_” তুমি এটা খাবে কেনো ?
নিশাত ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলে
_” কেনো? আমি তো সারাক্ষণ খান নিশ্চয় খুব মজা লাগে আর পেট ও ভরে তাই আমি ভাবলাম আমিও একটু টেস্ট করি
আরহান এর শরীর এখন রাগে কাপছে
_” তুমি কি পাগল হলে ? এইসব ভালো না মেয়েরা খায় না
_” ফিহা তো খেত তাহলে আমিও খাবো আপনি তো খুব ইনজয় করে খান
কথাটা বলে আরহান এর হাত থেকে সিগারেট নিয়ে খেতে গেলে। আরহান কেরে ফেলে দেয়
_” দেখো সিনক্রিয়েট করো না। সবাই দেখছে
_” দেখছে তো কি হইছে ? আপনি খেলে ত কেউ কিছু বলে না তাহলে আমি খেলে
নিশাত এর সাথে জয় তাল মিলিয়ে বলে
_” ভাবী তো ঠিক বলছে wait ভাবী আমি আপনাকে এনে দিচ্ছি
আরহান চোখ রাঙিয়ে জয়ের দিকে তাকায় সেটা দেখে নিশাত বলে
_” জয় ভাইয়াকে কেনো চোখ রাঙাছেন ? যা বলছি আমি বলছি আমাকে বলুন
আরহান মাথা নিচু করে জোরে জোরে নিশ্বাস নিয়ে মাথা ঠাণ্ডা করার চেষ্টা করছে। জয় মিটমিট করে হাসছে।
আরহান সোজা হয়ে বলে
_” সোজা কথা বলো ? কি করতে হবে
_” সোজা কথাই বলছি আপনি যেটা আমাকে খেতে দেবেন না সেটা আমি কি করে আপনাকে খেতে দেবো ? আমি খেলে আপনার মানসম্মান যাবে আর আপনি খেলে আমার সম্মান অনেক বাড়বে তাই তো
আরহান কিছু বলে না দেখে নিশাত বলে
_” আপনার যদি কোনো উত্তর না থাকে তাহলে আমাকে দেন
_” চুপ আর একবার ও বলবে না । আমি ছেড়ে দেওয়ার চেষ্টা করবো
_” ওইসব জানিনা ছাড়তে হবে তাই জানি নাহলে
_” থাক কিছু করতে হবে না আমি বললাম তো খাবো না। এখন বলো কি খাবে
পাশ থেকে নেহা বলে উঠে
_” বিয়ের ট্রিট কিন্ত দিলেন না জিজু
আরহান নিশাতের দিকে তাকিয়ে বলে
_” খুব তাড়াতাড়ি দেবো । এখন বলো কি খাবে
নেহা কে বলতে না দিয়ে নিশাত বলে
_” আমাদের ক্লাস আছে যেতে হবে
_” এখন তোমাদের কোনো ক্লাস নেই তাই চুপচাপ কি খাবে সেটা বলো ? আচ্ছা থাক আমি অর্ডার করছি
আরহান খাবার অর্ডার করে নিশাতের কাছাকাছি বসে সেটা দেখে জয় আর নেহা মিটমিট করে হাসছে। নিশাত সরে যেতে গেলে আরহান হাত ধরে বলে
_” ভালোই তো আমার বদঅভ্যাস ছাড়ানোর টেকনিক জানো
নিশাত আরহান এর মত বাকা হেসে বলে
_” আপনার সাথে থাকতে থাকতে আপনার মত হয়ে গেছি
আরহান নিশাতের গালে হাত দিয়ে বলে
_’ তোমাকে বাকা হাসিতে মানায় না । কিউট স্মাইল দিয়ে সবসময় আমাকে ঘায়েল করবে
নিশাত কিছু বলে না । খাবার আসলে আরহান খাইয়ে দিতে চাইলে নিশাত দৌড়ে চলে যায় আরহান ও পিছু পিছু যায় । জয় আর নেহা হাবলার মত বসে থাক
নিশাত গার্ডেনে আসতেই আরহান হাত ধরে ফেলে । নিশাত হাত ছাড়িয়ে আরহান এর কলার ধরে বলে
_” ওই আপনার মাথার তার কয়টা ছিঁড়ছে ? সবার সামনে কি করছেন ?
_” কি করছি ? (না জানার ভান করে )
_” একদম নাটক করবেন না । একবার খাইয়ে দিচ্ছেন,তো একবার হাত ধরছেন ,গাল ধরছেন এই সব কি হা ? আপনার লজ্জা সরম নেই বলে কি আমার নেই
_” তুমি কি আমাকে কিস করবে ?
আরহান এর কথায় রীতিমত অবাক হয়ে যায় নিশাত । কি বলছে আর এই ছেলে কি বলছে
_” মানে?
_” যেইভাবে আমাকে ধরে আছো মনে হচ্ছে কিস করবে তাই বললাম
নিশাত এখন খেয়াল করে দেখে কথা বলতে বলতে নিশাত আরহান এর অনেকটা কাছে চলে আসছে । নিশাত দূরে যেতে গেলে আরহান কোমর জড়িয়ে ধরে বলে
_” তুমি চাইলে ও আমার সাথে থাকতে হবে না চাইলে ও । তোমাকে আমার কাছে থাকতে হবেই আমার মৃত্যুর পর ও তোমার মুক্তি নেই
আরহান এর কথা নিশাতের বুকে গিয়ে লাগলো কেমন যেনো হারিয়ে যাওয়ার ভয় মনে জাগলো।নিশাত মাথা নিচু করে বলে
_” ছাড়ুন ক্লাসে যাবো
আরহান কোনো কথা না শুনে জড়িয়ে ধরতে যায় দুর থেকে কিছু ছেলে ছিটি বাজিয়ে খারাপ কথা বলছে ।
আরহান নিশাত কে ছেড়ে বলে
_” তুমি যাও আমি আসছি
নিশাত বুঝতে পারে আরহান কি করতে চাইছে তাই সে আরহান এর হাত ধরে ক্যান্টিনের দিকে যায় ।
আরহান আজ অবাক এর উপর অবাক হচ্ছে। নিশাত কে অন্য দিনের চেয়ে আলাদা লাগছে । আরহান কাছে খুব ভালো লাগছে এটাই ত চেয়েছিল সে ।
ভার্সিটি ছুটি দিয়েছে অনেকক্ষণ আরহান এখনো আসছে না। নিশাত বোরিং হয়ে দাড়িয়ে আছে হটাৎ একটা গাড়ি এসে নিশাত এর সামনে থামলো
নিশাত মুচকি হেসে সালাম দিলো । গাড়ির কাচ নামিয়ে নিশাতকে ডাকলো আমজাদ হাবিব ।
#আড়ালে_ভালোবাসি
#নুসরাত_জাহান_অংকুর
||পার্ট_১৮||
নিশাত এগিয়ে যেতেই ।আমজাদ হাবিব মুচকি হেসে বলল
_” দাড়িয়ে আছো কেনো ?
নিশাত ও মিষ্টি হাসি দিয়ে বলে
_” আসলে আরহান দাড়াতে বলছিলো তো তাই
_” ওহ ওর আসতে মনে হয় দেরি হবে তুমি চাইলে আমার সাথে যেতে পারো ।
নিশাত কিছু বলার আগেই পিছন থেকে আরহান রাগী গলায় বলে।
_” আমার স্ত্রী কে আমি নিয়ে যেতে পারবো । কারোর সাহায্যের দরকার নেই
আমজাদ হাবিব অবাক চোখে আরহান কে দেখছে । আরহান নিশাত কে টানতে টানতে বাইকের কাছে নিয়ে যায় । আরহান বাইকে উঠে নিশাত এর দিকে তাকাতেই নিশাত উঠে পড়ে ।
আমজাদ হাবিব ওদের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসে
_” তাহলে আমার বেপরোয়া ছেলের মধ্যে দায়িত্ববোধ চলে আসছে
আমজাদ হাবিব কথাটা বলে গাড়ি স্টার্ট দিয়ে চলে যায় ।
আরহান বাইকে নিশাতের দিকে না তাকিয়ে সামনে দৃষ্টি রেখে বলে
_”বাইক কি তোমার পছন্দ না ? আগে বললে ত গাড়ি নিয়ে আসতাম । আমার জন্য এই টুকু অপেক্ষা সহ্য হচ্ছিলো না দেখে শ্বশুরের দামী গাড়িতে করে চলে যাচ্ছিলে ?
নিশাত দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে
_” জানেন তো বিশ্বাসের উপর ভালোবাসা নির্ভর । যেখানে বিশ্বাস নেই সেইখানে ভালোবাসা নেই। সম্পর্ক টিকে থাকে বিশ্বাসের উপর
আরহান আর কিছু বলল না ওর যা বুঝার বুঝে গেছে । নিশাত চুপ করে আছে
বাড়িতে এসে আরহান নিশাত কে নামিয়ে দিয়ে যেতে গেলে নিশাত বলে।
_” কোথাও যাচ্ছেন ??
_” সামনে একটু কাজ আছে যাবো আর আসবো
_”কোথাও যাওয়া হচ্ছে না আমার সাথে বাসায় চলুন। এখন বাইরে গিয়ে স্মোক করবেন তাই তো ? আজ কিন্ত বাড়ি ঢুকতে দেবো না
_” আরে বাবা যাবো আর আসবো । কেনো বর কে কাছে পেতে ইচ্ছা করছে নাকি ? একটু তর সইছে না(চোখ মেরে)
নিশাত বুঝতে পেরেছে আরহান এইগুলো নিশাত কে রাগানোর জন্য বলছে । নিশাত কিছু না বলে বাইকের চাবি নিয়ে বাড়ির ভিতর চলে যায় ।
আরহান আর কি করবে হেঁটে হেঁটে যেতে হলো । নিশাত ফ্রেশ হয়ে এসে দেখে আরহান নেই । ঈশা কে ডাক দিতেই ঈশা চলে আসে
_” আপু আজ এত দেরি হলো কেনো ?
_” কাজ ছিল তোর দুলাভাই কই ?
_” সেটা তো তুমি বলবে আমার সাথে তো দেখা করেনি
নিশাত এর এবার রাগ লাগছে। বাইকের চাবি নেওয়ার পর ও চলে গেলো ।
_” আজ বাড়ি আসুক ঢুকতে দেবো না । বাইরে উল্টা পাল্টা কাজ করবে তাহলে বাইরে থাক ।বাড়ি আসার দরকার নেই (বিড়বিড় করে )
ঈশা পাশ থেকে বলে
_” আপু তোর কি পাগলে ধরছে কি বিড়বিড় করছিস ?
_” না কিছু না চল খাবি চল অনেক বেলা হইছে
নিশাত ঈশার হাত ধরে নিচে আসতেই দেখে কলিংবেল বেজে উঠে । নিশাত দরজা খুলে দেখে আরহান দাড়িয়ে আছে।
রাগে নিশাতের মাথা ফেটে যাচ্ছে কিন্ত রাগ বেশিক্ষণ থাকলো না । আরহান ঘেমে একাকার মনে হচ্ছে কোনো যুদ্ধ করে আসছে ।
_” আপনি আমাকে না বলে কোথাও
বাকিটা বলতে পারলো না আরহান নিশাতের সামনে একটা প্যাকেট ধরে বললো
_” সামনে থেকে সরো বাইরে কি গরম বাবা গো (ভিতর ঢুকতে ঢুকতে )
ঈশা আরহানকে দেখে ফিক করে হেসে বলে
_” দুলাভাই তোমার কি অবস্থা ? মনে হচ্ছে গোসল করে আসছো
_” বাইরে অনেক রোদ । তোমরা থাকো আমি গোসল করে আসি
নিশাত ব্যাগ বের করে থেকে ওখানে ফুসকা রাখা ।
_” তারমানে উনি ফুসকা আনতে গিয়েছিল ।কিন্ত এত দুর পায়ে হেঁটে উফফ এই লোক কি পাবনা থেকে পালিয়ে আসছে
পাশ থেকে ঈশা চিল্লিয়ে বলে
_” wow ফুসকা কত দিন খাইনি আজ খাবো
_” না পরে তুই টেবিলে বস আমি খাবার দিচ্ছি
নিশাত ঈশা কে খাবার বেড়ে দিয়ে নিজের ঘরে যায় ।
ঘরে গিয়ে দেখে পানির টুপটাপ শব্দ হচ্ছে। নিশাত বিছানায় বসলো
একটুপর আরহান বেরিয়ে নিশাতের দিকে ভুবন ভুলানো হাসি দিলো। এতে কি নিশাত গলে যাবে
নিশাত আরহান কে টেনে খাটের উপর বসিয়ে দেয় । আরহান এর গাল নিজের ধরে নিজের মুখের কাছে ধরে
পরক্ষনেই নিশাতের মাথা গরম হয়ে যায়
_” সিগারেট খেলেন কেনো ? সেইজন্য তাড়াতাড়ি গোসল করতে গেলেন যাতে বুঝতে না পারি তাই তো
_” আমি সত্যি খাইনি বিশ্বাস করো ।
_” রাখ তোর বিশ্বাস তুই বাইরে অকাজ করে বেরাবী আর আমি সব সহ্য করবো । কখনো না হয় তুই এইসব ছাড়বি নাহলে আমাকে ছাড়বি এখন বল কি করবি ?
নিশাত এর কথায় আরহান অবাক এর উপর অবাক হচ্ছে । যে মেয়ে প্রয়োজন ছাড়া কথা বলে না সে আজ তুই করে কথা বলছে । আরহান নিজেকে ঠিক করে বলে
_” বাবু বিশ্বাস করো আমি সত্যি খাইনি । আর তুমি কিভাবে কথা বলছো ?
_” বাবু ,সোনা তোর গফ দের বলবি আমার কাছে না । তুই যে মিথ্যে বলছিস তার প্রমাণ তোর চোখ ইচ্ছে করছে চোখ তুলে মার্বেল খেলি
আরহান বুঝলো পানি অনেক দুর চলে গেছে তবে
আরহান ভালো করে জানে বউ রাগ করলে তাকে মানাতে হয় কি করে । আরহান নিশাতের কোমর জড়িয়ে বিছানায় ফেলে দেয় । ঘটনা এত তাড়াতাড়ি হয়েছে যে নিশাতের বুঝতে সময় লাগলো ।
আরহান নিশাত কে নিজের সাথে মিশিয়ে বলে
_” এত রাগ করছো কেনো বউ ?? তুমি তো এতদিন আমার সাথে ছিলে না ওইগুলো ছিল তাই ছাড়তে একটু কষ্ট হচ্ছে কিন্ত বিশ্বাস করো আমি ছেড়ে দেবো
_” প্রমিজ ?
_”পাক্কা প্রমিজ
আরহান নিশাত কে আরো নিজের সাথে মিশিয়ে বলে।
_” সব নেশার উর্ধ্বে তুমি । সব কিছু ছাড়তে পারবো কিন্ত তোমাকে ছাড়তে পারবো না । আল্লাহ যখন একবার তোমাকে আমার কাছে দিয়েছে তাহলে সেটা আগলে রাখার দায়িত্ব আমার । আমার থেকে তোমার মুক্তি নেই। আমি মারা গেলেও তুমি আমার থেকে মুক্তি পাবে না । আমার নাম সারাজীবন তোমাকে বয়ে নিয়ে বেড়াতে হবে
নিশাত শুধু আরহান এর কথা শুনছে । লোকটার মধ্যে এত পজেসিভ নেস কেনো ? এর উত্তর শুধু সেই জানে
আরহান নিশাত কে বুকের সাথে জড়িয়ে আবার বলে
_” জানো নিশাপাখি এত দিন সব ভাগ্যের উপর ছেড়ে দিতাম কিন্ত এখন মনে হচ্ছে ভাগ্যের উপর ছেড়ে দিলে চলবে না। কষ্ট করতে হবে সব স্বপ্ন পূরণ করতে হবে তাহলেই জীবন সার্থক
নিশাত আস্তে করে বলে।
_” আপনার কি স্বপ্ন ?
আরহান নিশাতের মাথা হাত বুলিয়ে দিচ্ছে আজ যেনো নিশাতের খুব ভালো লাগছে । মনে হচ্ছে এটাই আসল জায়গা । একটা নিরাপদ বুক যেটা শুধু নিশাতের । আরহান কাপল আলতো ভালোবাসা দিয়ে বলে
_” আগে কখনো ছিল না কিন্ত এখন আমার চোখে অনেক স্বপ্ন। সেই সব পূরণ করতে হবে যে করেই হোক তোমাকে সব কিছু দিয়ে সুখী করতে চাই
নিশাত এবার মাথা উচু করে বলে
_” টাকা পয়সা দিয়ে একজন নারী সুখী হয় না । স্বামীর ভালবাসা দিয়ে সুখী । সবার সামনে যেনো মাথা উচু করে বলতে পারি এই আমার স্বামী
_” পারবে নিশাপাখী পারবে । একটু সময় দাও আমি সব ঠিক করে দেবো তোমার মনের মত হয়ে যাবো শুধু আমার পাশে থেকো
নিশাত নিজের চোখের পানি আড়াল করে বলে
_” হইছে ছাড়েন অনেকক্ষণ আসছি খুদা লাগছে
_” হা খেতে তো হবেই তুমি অনেক পাতলা
_” কি আমি পাতলা ? কে কইছে আপাকে ?
নিশাত রেগে বলে আরহান দুষ্ট হেসে বলে
_” বুঝায় যাচ্ছে কোলে নিলে মনে হবে ছোট বাচ্চা কে নিচ্ছি
নিশাত রেগে বুকে এক গুসি মেরে উঠে দাড়ায় ।
_” তো যান যার ওজন বেশি
কথাটা বলে বাইরে চলে যায়। আরহান হাসতে হাসতে সেও চুল মুছে বাইরে আসে।
বিকালে
নিশাত চা বানিয়ে আমজাদ হাবিব এর কাছে যায় । আমজাদ হাবিব গার্ডেনে বই পড়ছে নিশাত গিয়ে পাশে বসতেই আমজাদ হাবিব খুশিতে বলে
_” এই সময় আমার মন খুব চা চা করে কিন্ত বাইরের লোকের হাতে চা খেতে ভালো লাগে না
_” বই পড়তে পড়তে চা খেতে সত্যি খুব ভালো লাগে দাড়ান আমি আরহান কে ডাকি
আমজাদ হাবিব নিশাতকে বাধা দিয়ে বলে
_” থাক মা। ও একা থাকতে বেশি পছন্দ করে এখন ওকে ডাকলে রাগারাগি করবে
নিশাত চোখ দিয়ে বুঝায় কিছু হবে না ।নিশাত ডাক দিতেই আরহান ছুটে চলে আসে
_” কি হইছে নিশা পাখি ? এভাবে ডাকছো কেনো?
_” এখানে বসুন তারপর বলছি
আরহান বসতেই নিশাত চায়ের কাপ এগিয়ে দিয়ে বলে
_” পরিবারের সাথে এক সাথে বসে চা খাওয়ার মজাই আলাদা
আরহান কিছু বলতে গিয়ে ও পারলো না । চুপচাপ চায়ের কাপে চুমুক দিলো
_” আমি জানি আপনার খুব রাগ হচ্ছে কিন্ত পরিবারের উপর রাগ করে আর কত দূরে থাকেন এখন আপনাদের কাছে আসার সময় হয়ে গেছে । আপনার যে এখন ওইসব নেশা ধরেছে সেটা বুঝতে পেরেছি বিছানায় আপনাকে ছটপট করতে দেখে বুঝেছিলাম তাই তো চা বানিয়ে দিলাম (মনে মনে )
আজ আরহান এর লাস্ট পরীক্ষা । আরহান হেঁটে হেঁটে পড়ছে আর নিশাত খাইয়ে দিচ্ছে । এটা এই এক সপ্তাহে প্রতিদিনের রুটিন । আরহান আগের থেকে অনেকটা বদলে গেছে এখন নিশাত বলতে পাগল। রাতে আরহান পড়বে আর নিশাতকে পাশে থাকতে হবে ।
আরহান বই রেখে তাড়াতাড়ি রেডী হয়ে নেয়। নিশাত বলে
_” all the best
আরহান কপালে ভালোবাসা দিয়ে বেরিয়ে যায় । নিশাত ও রেডী হতে থাকে ভার্সিটিতে সকাল সকাল যেতে হবে ।
নিশাত ভার্সিটিতে যেতেই নেহা ঝেকে ধরে
_” এতক্ষণে আসার সময় হলো ? কখন থেকে অপেক্ষা করছি
_” বুঝলাম কিন্ত সে
_” চল আজ ক্লাস করতে হবে না
নিশাত কে একপ্রকার টানতে টানতে নিয়ে গেলো।
রেস্টুরেন্টে নেহা আর নিশাত বসে আছে ।নিশাত বিরক্ত নিয়ে বলে
_” কি রে কখন আসবে ?
_”আরে অপেক্ষা কর
নিশাত বিরক্তি নিয়ে বসে থাকতে থাকতে হটাৎ কেউ বলে উঠলো
_” hi beautiful girl
চলবে
(