কোনো_এক_বসন্তে পর্ব শেষ

#কোনো_এক_বসন্তে
#Khadija_Akter
#পর্ব_১৩(সমাপ্ত)

বাসায় ফেরার পথে গাড়িতে বসে আমার সমস্ত প্রশ্নের উত্তর পেয়ে গেলাম।সব শুনে মনে হলো,জীবনটা আসলেই নাটকের চেয়েও নাটকীয়!

——————————–
আমার মাথা ভো ভো করে ঘুরতে লাগলো!আমার সাথে মাইন্ড গেইম খেলা হয়েছে এই দুইদিন!

চিন্তা করা যায়!এই গেইমের মাস্টারমাইন্ড নাকি ছিলেন ফুপা!আমার ছোট ফুপা!
বরাবরের মতো দেখে আসা কাঠখোট্টা এই মানুষটা নাকি এসবের মূল হোতা!

ঘটনাটা ছিল এই, “ছোট ফুপি যেদিন আমাদের পরিবারে হাঙ্গামা বাঁধালেন ‘আমার আর আহিল ভাইয়ের বিয়ে ভেঙে গেল অথচ উনি জানেন না’এই ব্যাপার নিয়ে,
সেদিন সোহেলী খালামনিরা চলে যাওয়ার পর আমি অনেক কেঁদেছিলাম!

জানি না কেন, কারো উপরেই আমার রাগ ছিল না।আমার সমস্ত রাগ-অভিমান শুধু ঘুরে ফিরে আহিল ভাইয়ের উপরেই আসছিল!
একসময় আহিল ভাইয়ের রুম থেকে একটা ফটো এনে,সেই ফটোর সাথে নানান অভিমানমাখা অভিযোগ করতে করতে ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে যাই আমার রুমের ব্যালকনিতে।

ছোট ফুপাকে কখনো দেখিনি আমাদের পরিবারের ফেভারে কথা বলতে।যতবারই আসতেন সবসময়ই কারো না কারো দোষ ধরাতেই ব্যস্ত থাকতেন তিনি।আমরা অবশ্য উনাকে উনার মতো করেই মেনে নিয়েছিলাম।

কিন্তু সেদিন ছোট ফুপার মনে অনেক অপরাধবোধ জাগে,বিয়ে খেতে এসে বিয়ে বাড়িতে তার স্ত্রী এমন একটা হাঙ্গামা বাঁধিয়ে দিলেন এটা ভেবে।
খুব সকালে নামাজ পড়ে উনি এসেছিলেন আমার রুমে,আমাকে কিছুটা শান্তনা দিতে।

বুকে আহিল ভাইয়ের ছবি নিয়ে ক্লান্ত অবসন্ন দেহটা আমার তখন ইজিচেয়ারে শায়িত ছিল।দু’গালে নোনাজলের শুকনো রেখা,এলোমেলো চুল,বুকের কাছে আঁকড়ে ধরা একটা ফটো।
কৌতুহল বশতঃই ফুপা আলগোছে ছবিটা আমার থেকে তুলে নেন।আহিল ভাইয়ের ছবি!

তিনি আর আমাকে না জাগিয়েই ছবিটা হাতে নিয়ে সেখান থেকে প্রস্থান করেন।পরে আম্মুকে পাঠান,আমাকে ব্যলকনি থেকে তুলে রুমে আনার জন্য।

ছোট ফুপা মানুষটাকে যতটা বটলু ভাবতাম আসলে তিনিতা নন!
উনার ভিতরেও লুকিয়ে আছে একটা কোমল প্রস্ফুটিত মন।যে মন তাকে সাহায্য করেছিল,সদ্য কৈশোর পেরিয়ে যৌবনে পা রাখা একটা মেয়ে ঠিক কখন
একটা ছেলের ছবি বুকে নিয়ে সারারাত কাটিয়ে দিতে পারে সেটা বুঝতে!

তিনি বুঝতে পারলেন,যখন বাবা-মা হুট করেই একজনের সাথে বিয়েটা মেয়েটার ঘাড়ের উপর চাপিয়ে দিতে চেয়েছে,তখন অত কিছু না ভেবে মেয়েটার কিশোরী মনে একটাই জেদ চেপেছিল,যে করেই হোক বিয়েটা ভাঙতে হবে।বিয়েটা ভাঙ্গলোও!
কিন্তু বিচ্ছেদের যন্ত্রণা যে কি সেটা বুঝতে পেরে গিয়েছে অল্প সময়ের মধ্যেই!আর যাইহোক,কাউকে অপছন্দ করলে তার ছবি অত্যন্ত কেউ বুকে নিয়ে রাখবে না!

তবুও ছোট ফুপা অনেকটা কনফিউজড ছিলেন,যদি উনার ধারণা ভুল হয়!যদি এ ব্যাপারে আমাকে জিজ্ঞেস করলে আমি উল্টো রেগে যাই!আমার আব্বু তো আমার ব্যাপারে খুবই সেন্সিটিভ,পরে দেখা যাবে আবার ঝামেলা হবে পরিবারে।
তার উপর ছোট ফুপিকে তো মনে মনে বেশ ভয়ই পান ফুপা!যে মেয়েকে নিয়ে এতো ঝামেলা বাঁধালেন ফুপু সেই মেয়েরই তরফদারি করছে তার স্বামী!

যাইহোক,হয়তো আমার ভাগ্য অনুকূলে ছিল!তাইতো পরদিনই ছোট ফুপা সুযোগ পেয়ে গেলেন একটা!

সকাল থেকেই ছোট ফুপি বেশ লজ্জিত হয়ে কান্নাকাটি শুরু করে দিয়েছিলেন গত রাতের অমন ব্যবহারের জন্য।সোহেলী খালামনির কাছেও ফোন করে মাফ চাইলেন বারবার।ফিরে আসতে বললেন এই বাড়িতে।
ছোট ফুপির মনের দূর্বলতা দেখে ঝোপ বুঝে কোপ মারেন ছোট ফুপা!

“তোমার কারণেই যেহেতু গন্ডগোলটা হলো,তোমারই উচিত তোমার ভাইয়ের পরিবারের সুখ শান্তি ফিরিয়ে আনা!তুমি যখনি চিন্তা করবা,তোমার অতিরিক্ত বাড়াবাড়ির জন্য দুটি পরিবারের বন্ধুত্ব নষ্ট হওয়ার পথে!তুমি নিজেকে ক্ষমা করতে পারবা শিউলি?”

প্রথমে ফুপুর মনে অনুশোচনার গ্লানি তীক্ষ্ণ করে দিয়ে তারপর ফুপা একটা পরিকল্পনার কথা খুলে বললেন ফুপিকে।

ছোট ফুপি আবার সেটায় সামিল করলেন বড় ফুপিকে!তারপর এই পরিকল্পনায় যুক্ত হলো একে একে রাইসা,রনি,সোহেলী খালামনি,তিন্নি আপু,সাগর ভাইয়া,আম্মু,আব্বু!
আব্বু তো প্রথমে রাজীই হতে চাননি,এরকম বাচ্চামানুষী করার।কিন্তু সবার পিড়াপিড়িতে অবশেষে রাজী হলেন।শেষ একটা সুযোগ নিয়ে দেখাই যাক না,তনয়ার মনের আসল অনুভূতি ঠিক কি!

তাদের পরিকল্পনায় সর্বশেষে যুক্ত হয় আহিল ভাই!তাকে মানাতে আব্বুর চেয়েও বেশি বেগ পেতে হয়েছে!

সে চায়নি তার কারণে তনয়া কোনোভাবে ডিস্টার্ব হোক।তনয়া আবারও বিরক্ত হয়ে কোনো ডেঞ্জারাস কান্ড ঘটাক!বিশেষ করে রাইসার জন্য বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে ঐ বাড়িতে যাওয়ার নাটক করতে হবে,এটাতে তো কিছুতেই তিনি রাজী নন!

যাইহোক,তাকে মানানোর কৃতিত্বটা সম্পূর্ণই তিন্নি আপু আর সাগর ভাইয়ার!নানান রকম ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করে আহিল ভাইকে রাজী করান তারা।নিজেদের সফল প্রেমের উদাহরণও তুলে ধরেন আহিল ভাইয়ের সামনে।

পরিকল্পনা মোতাবেক রাইসা আপুর জন্য বিয়ের প্রস্তাব দিতে মিষ্টি নিয়ে আমাদের বাসায় আসেন খালামনি আর আহিল ভাইয়া।অভিনয়ও ঠিকঠাক করে যাচ্ছিলেন সবাই।তিন্নি আপু সাইকাকে পাঠায় আমার রুমে,এই খবরটা দেওয়ার জন্য।
আমার মতো সাইকাও অবশ্য আজকে সন্ধ্যার আগে পর্যন্ত কিছুই জানতো না তখন!

তারা তাদের পরিকল্পনার আসল উদ্দেশ্যটা অর্জন করতে সফল হয়ে যায় খুব অল্প সময়েই।আহিল ভাইয়ের প্রতি আমার ভিতরকার ভোতা অনুভূতিগুলো খুবই প্রখর হতে শুরু করে যখন দেখলাম আহিল ভাই আর আর পিছনে পরে নেই!অন্য মেয়েকে বিয়ে করতে যাচ্ছে,তাও আমার কাজিনকে!

আমি তখনি অনুভব করতে পারি,আসলে আহিল ভাইয়ের প্রতি আমার অন্যরকম টান কাজ করছে,হয়তো একেই ভালোবাসা বলে ।
ঠিক পরদিন রাতেই বেলাতেই আমি আমার অনুভূতি প্রকাশ করে ফেলেছিলাম আহিল ভাইয়ের কাছে!

তখন আহিল ভাই পরিকল্পনাটাকে আরেকটু এগিয়ে নিয়ে গেলেন।আমার সামনে রাইসা আপুর সাথে ক্লোজ হওয়ার চেষ্টা করে আমার ভিতরকার অনুভূতিগুলোকে আরও বেশি সূচালো করে তুলতে চেয়েছিলেন।
তিনি আশা করেছিলেন,আমি অধিকার খাটাবো উনার উপরে!সবার সামনেই নিজের অনুভূতিটাকে প্রকাশ করে দিব,রাগের মাথায়!
তিনি ভাবতেই পারেননি বড্ড অভিমানী এই মেয়েটা উনার এরকম আচরণকে চঞ্চলতার সাথে মোকাবেলা না করে বেদনায় একদম মিহিয়ে যাবে!একদম নিশ্চুপ হয়ে যাবে!

আমাকে অনেকভাবে উস্কাতে চেয়েও যখন দেখলেন পারছেন না,উলটো আমি আরও মলিন হয়ে যাচ্ছি।উনি সিদ্ধান্ত নেন,নাহ্ আর মাইন্ড গেইম খেলা যাবে না এই বাচ্চা মেয়েটার মন নিয়ে।

শপিং মলে আমাদের নামিয়ে দিয়ে উনি আর রাইসা আপু কেটে পড়েন আলাদা শপিং এর নাম দিয়ে।বড় কোনো ফাইভ স্টার হোটেলে রাজকীয় স্টাইলে প্রপোজ করার চেয়ে খোলা আকাশের নিচে সাধাসিধা ভাবে আমায় গ্রহণ করার জন্যই বাসা থেকে কিছুটা দূর নির্জন একটা রাস্তাকে বেছে নিয়েছেন তারা।ঐদিকে তিন্নি আপু আর সাগর ভাইও দ্রুত তাদের কেনাকাটা শেষ শপিং মল থেকে বেরিয়ে রাইসা আপু আর আহিল ভাইয়ের সাথে যোগ দেন।

সব আয়োজন শেষ করে যখন আহিল ভাই ফিরে আসেন শপিং মলে, আমাদের বাসায় নিয়ে যেতে।
সেখানে এসেই আকাশ ভাইকে আমার সাথে চিপকে লেগে থাকতে দেখে আর সহ্য হয়নি উনার।প্রথমে ঝামেলা করেন তারপর আমাকে নিয়ে আসেন।

তবে কথা ছিল বাসা থেকে রাতের বেলায় ঘুরতে যাবার নাম করে আমরা কাজিন স্কোয়াড বের হবো সব একসাথে।
যদিও বাসার বড়রা সবাই জানে,আমাদের জন্য আজকে স্পেশাল একটা প্রোগ্রাম আছে।তবে তারা কেউ সেখানে উপস্থিত থেকে আনন্দটা মাটি করতে চাননি।

কিন্তু আমাকে নিয়ে শপিং মল থেকে আর বাসায় ফেরা হলো না আহিল ভাইয়ের।তিনি মেসেজ করে তিন্নি আপুকে জানিয়ে দিয়েছিলেন বাকী সবাইকে নিয়ে যেনো সময়মতো উপস্থিত থাকে,আমরাও পৌঁছে যাব ঠিক সময়েই!

স্পটে আসতে আসতেই তিন্নি আপু সবাইকে সবকিছু খুলে বললেন,যারা এখনো এই ব্যাপারে জানে না।
আমি এই পরিকল্পনার প্রধান উপলক্ষ ছিলাম তাই আমিই জানতে পারলাম সব শেষে! ”

সবকিছু শোনার পর বাকীটা পথ এই নিয়ে হাসাহাসি করতে করতে সবাই খুব মজা করতে করতে এলাম!
তিন্নি আপুর প্রতি অবশ্য আমার একটু রাগই হলো,নিজের বোনের কাছে লুকিয়ে পরিকল্পনা! একটু বললে কি-ই বা হতো!
সাইকাকে অবশ্য ঠিক এ কারনেই প্ল্যানের বাহিরে রাখা হয়েছিল।কারন সাইকা পেটে কোনো কথা রাখতে পারে না,পরে ফুস করে আমাকে বলে দিবে আর সমস্ত কিছু ভেস্তে যাবে!এই রিস্ক তারা কেউই নিতে চায়নি!
বুঝলাম খুবই সুক্ষ্ম পরিকল্পনা করেছে তারা,সবকিছু একদম আসলের মতো!একটুও টের পাইনি আমি,কতই না কষ্ট পেলাম শুধু শুধু ইশশ!

অবশ্য তখন কষ্ট পেয়েছি বলেই হয়তো,এখন এই পাওয়াটার আনন্দটুকু খুব করে উপলব্ধি করতে পারছি।মনের ভিতরে শীতের রেশ কাটিয়ে বসন্তরা যেনো উঁকিঝুঁকি মারছে!

আহিল ভাইয়ের সাথে একটুপরপরই চোখাচোখি হচ্ছে,আর সবার চোখকে ফাঁকি দিয়ে চোখের ভাষায় দুজন দুজনার সাথে ভাব আদান-প্রদান চালিয়ে নিচ্ছি।
এই সেই রোবট!কিছুদিন আগেও যাকে নিয়ে মনের মধ্যে বাড়তি কোনো অনুভূতির জায়গা পায়নি!আর আজ তার ভালোবাসা অর্জন করতে পেরে,মনে হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে মূল্যবান জিনিসটা বুঝি পেয়ে গেছি আমি!
আহ্…বেঁচে থাকা খুব আনন্দের!

—————————————
বাসার সামনে এসে গাড়ি থেকে নামতেই দেখলাম,রাইসা আপুদের গাড়ি আরও আগেই চলে এসেছে।
রাইসা আপু আর রনি ভাইয়া গাড়িতে হেলান দিয়ে পাশাপাশি দাঁড়িয়ে গল্প করছে।বাকী সবাই এর মধ্যে বাসায় ঢুকে পড়েছে।

আমি আর আহিল ভাই ওদের দিকে এগিয়ে গেলাম।কাছাকাছি গিয়েই আমি খুশিতে রাইসা আপুকে জড়িয়ে ধরলাম।প্যানপ্যানানি স্বভাবের এই রাইসা আপু যে আমাদের সাথে কখনো ভালো করে কথাও বলেনি সে কিনা এই পরিকল্পনায় একটা বড় দায়িত্ব পালন করেছে শুধু আমার জন্য!সবাই কতটা ভালোবাসে আমায়,আনন্দে আমার চোখ অশ্রু চলে আসলো!

তখনি গেইট দিয়ে বাসার ভিতর থেকে রাস্তায় বেরিয়ে এলেন ছোট ফুপা।হলুদের ডেকোরেশনের তদারকি তিনিই করছিলেন,তাই অন্য সবার মতো তিনিও এই রাত ৩টায় জেগে আছেন।
তাকে দেখেই আনন্দের আতিশয্যে রাইসা আপুকে ছেড়ে দিয়ে ফুপাকে জড়িয়ে ধরে বেশ সশব্দের কেঁদে ফেললাম।ফুপা না থাকলে হয়তো সবকিছু এতো সহজ আর জলদি হতো না!

তবে মনের মধ্যে একটা খারাপ লাগা কাজ করছিল শুধু শুধু দুই বিয়ে উপলক্ষে কত কেনাকাটাই না হলো!আর যতই অভিনয় হোক না কেন,এই প্রভাবটা তো একটু হলেও রাইসা আপুর মনে থাকবে যে তার মিথ্যে বিয়ের আয়োজন করা হয়েছে,তাকে ব্যবহার করা হয়েছে!

কিন্তু বড় সারপ্রাইজ তখনো যেনো বাকী ছিল আমার জন্য!

আমার খারাপ লাগার কারণ শুনে হাসিমুখে ছোট ফুপা বললেন,
–পাগলী,মন খারাপ কেন?আমার মেয়ের বিয়েটা তো হচ্ছেই!তবে আহিলের সাথে না,রনির সাথে!

–কিহ্!

–হ্যাঁ!

আহিল,ফুপা,রাইসা আপু,রনি ভাই ৪জনই একযোগে বলে উঠলেন ” হ্যাঁ ”

অবাক হওয়া পালা আমার যেনো ফুরাচ্ছেই না!বাসায় ঢুকতে ঢুকতে আহিল ভাইয়ে মুখ থেকে শুনলাম আরেক কাহিনি।

রাইসা আপুর সাথে নাকি রনি ভাইয়ের ৩বছরের সম্পর্ক চলছে!
ইয়া মাবুদ,আমি কোন দুনিয়ায় বাস করি!ক্ষুণাক্ষরেও টের পেলাম না আমি এতোদিন কিছু!ভেবে দেখলাম,আসলেই তো!যখনি রাইসা আপুরা আমাদের বাসায় বেড়াতে আসতো,রনি ভাইও কোনো না কোনো বাহানায় ছুটি নিয়ে বাসায় আসতো।আমরা তো তা কাকতালীয়ও ভাবতাম!

তবে রাইসা আপু আর রনি ভাইয়াকে একসাথে দেখতাম প্রায়ই,কিন্তু সেটাকে কখনো আমলে নেইনি।

যাইহোক,পরের কাহিনী শোনার জন্য মনোযোগ দিলাম।

রাইসা আপু আর রনি ভাইয়ার রিলেশনের ব্যাপারটা তৃতীয় আরেকজন জানতো আগের থেকেই,সেটা হলেন ছোট ফুপা!
রাইসা আপু জানতেন,বাহিরে থেকে তার বাবা যেমনই হোক ভিতর থেকে একদম কোমল!তাই মায়ের কাছে শেয়ার না করে বছরখানেক আগে বাবার সাথেই শেয়ার করেছিলেন তিনি এই ব্যাপারে।

এইবার এখানে বেড়াতে এসে রাইসা নাকি কখন বড় ফুপির মুখ থেকে বলতে শুনেছিল,’রনির বিয়ের জন্য পাত্রী দেখা হচ্ছে!’
তখন থেকেই রাইসা আপু ফুপাকে চাপ দিতে থাকেন,দেরী হয়ে যাওয়ার আগেই তাদের বিষয়টা নিয়ে পারিবারিকভবে আলাপ-আলোচনা করার জন্য।

আর ঠিক এই সময়েই আমাদের সাথে সোহেলী খালামনিদের পরিবারে ঝামেলা হয়।
দুইটা বিষয় একসাথে হ্যান্ডেল করেছেন এখানে ছোট ফুপা।

প্রথমে রাইসা আপুর ব্যাপার নিয়ে ছোট ফুপির সাথে কথা বলছেন।ছোট ফুপি বড় ফুপির সাথে কথা বলেছেন।
রাইসা আপুকে ছেলের বউ করে আনতে বড় ফুপু প্রথমে একটু গাইগুই করলেও পরে যখন দেখলেন রাইসা আপু আগের চেয়ে অনেক পরিবর্তন হয়েছে এবারে। তাছাড়া রনি ভাইয়ারও পছন্দ করে রাইসা আপুকে,বড় ফুপু আর অমত করেননি।

যেহেতু ছেলেপক্ষ আর মেয়েপক্ষ আমরা আমরাই,তাই কোনোরকমের আনুষ্ঠানিকতা ছাড়াই রনি-রাইসার বিয়ের ডেইট তিন্নি আপুর বিয়ের দিন রেখে দেন।

বড়রা সবাই জানে ব্যাপারটা,বিয়ের আয়োজনও শুরু হয়ে যায় সেই অনুযায়ী ।
কিন্তু শুধু তনয়া ও বাসার অন্যান্য ছোট সদস্যরা জানতো রাইসা আপুর বর রনি ভাই নয়,আহিল ভাই!
আর আজকেই সবার কাছে ব্যাপারটা ক্লিয়ার হলো আসলে রাইসা আপুর বর আহিল ভাই নয়,রনি ভাই!

———————————-
বাসায় এসে হাতমুখ ধোয়ার আগেই এক দৌঁড়ে ছাদে উঠে গেলাম।এখানেই হলুদের প্রোগ্রাম করা হবে।হলুদের জন্য ২টা স্টেজ করা হয়েছে।একটাতে বড় বড় করে লিখা “আজ তিন্নির হলুদ ছোয়া” আর অন্যটাতে ” আজ রনি ও রাইসার হলুদ ছোঁয়া!”
দ্বিতীয় লেখাটা বার কয়েক বিরবির করে পড়লাম, তারপর যেনো নিশ্চিত হলাম,নাহ্ আসলেই আহিল ভাইয়ের সাথে বিয়েটা হচ্ছে না।

বড় একটা একটা শ্বাস ছাড়তেই ঘাড়ের উপর আরেকটা তপ্ত শ্বাসের পরশ অনুভব করলাম।
ঘাড় ফিরিয়ে দেখার প্রয়োজন হলো না আর মানুষটা ঠিক কে!

–“তোমার টেবিলের উপর বিয়ের যে কার্ডটা রেখে এসেছিলাম,সেটা যদি একবার খুলে দেখতেই তাহলেই হতো!”

আমি কিছু বললাম না,শুধু মুচকি হাসলাম।আশেপাশে সবাই আছে,কখন কার চোখ পড়ে যায় আমাদের দিকে আর ঠাট্টা করে বসে!তাই দ্রুত আহিল ভাইয়ের সামনে থেকে পলায়ন করতে তটস্থ হয়ে উঠলাম।
আহিল ভাই আমাকে আটকালো না।শুধু আস্তে করে বললেন,

–ফ্রেশ হয়ে রুমে এসো,কথা আছে।

কথাটা বলেই আমাকে আর কিছু বলতে সুযোগ না দিয়েই তিনি ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট কর্মরত লোকেদের দিক-নির্দেশনা দিতে দিতে এগিয়ে গেলেন স্টেজের দিকে।

রুমে এসে ফ্রেশ হয়ে বিছানায় শুয়ে পড়লাম।মনটা আমার ভীষণ উৎফুল্ল থাকলেও,সারাদিনের দকলে শরীর বেশ ক্লান্ত।বিছানায় গা লাগাতেই মনে পড়লো,আহিল ভাই তো উনার রুমে ডেকেছেন আমাকে।

আহিল ভাইয়ের কথা মনে আসতেই শরীরে আবার যেনো এনার্জি ফিরে আসলো,লাফ দিয়ে উঠে গেলাম।রুম থেকে বের হওয়ার আগে চোখ পড়লো টেবিলে রাখা রাইসা আপুর বিয়ের কার্ডটার উপরে।
হাতে নিয়ে খুলতেই দেখলাম,রঙিন কালিতেম মোটা শিরোনামে লিখা “রনি ও রাইসার শুভ বিবাহ”

ইশ,আমি কি বোকা!গত প্রায় দুইদিন ধরে এই কার্ডটা গড়াগড়ি খাচ্ছে এখানে।দেখেও রাগে,ক্ষোভে কার্ডটা খুলে দেখিনি!

———————————
ফজরের আযান পড়ে গেছে ইতিমধ্যে, আলোও ফুটতে শুরু করেছে।পাতলা একটা শল গায়ে জড়িয়ে সবার চোখকে ফাঁকি দিয়ে কাঁপতে কাঁপতে আহিল ভাইয়ের রুমে হাজির হলাম।

উনিও ফ্রেশ করে নিয়েছেন নিজেকে।এই শীতের মধ্যেও পাতলা একটা টিশার্ট আর থ্রী কোয়ার্টার প্যান্ট পড়ে সোফায় বসে দিব্যি ল্যাপটপ চাপছেন।
আমার উপস্থিতি টের পেয়ে চোখ তুলে তাকিয়েই ল্যাপটপটা সাইডে রেখে উঠে এলেন।

এগিয়ে এসে আমার একদম মুখোমুখি দাঁড়ালেন।যতবারই উনি আমার কাছাকাছি এভাবে এসে দাঁড়িয়েছেন আমার হৃদস্পন্দন বেড়ে গিয়েছে।এবারও তার ব্যতিক্রম হলো না,নিজের অজান্তেই চোখ দুটো বন্ধ করে নিলাম।
চোখ বন্ধ করেই বুঝি প্রিয় মানুষটাকে সবচেয়ে ভালো করে অনুভব করা যায়!
আহিল ভাই কতক্ষণ ঠায় দাঁড়িয়ে থেকে একসময় আস্তে করে সরে গেলেন আমার সামনের থেকে।দরজাটা ভিতর থেকে আটকে দিয়ে আমার হাতটা ধরে টেনে খাটে এনে বসালেন আমাকে।

খাটের নিচ থেকে বড় একটা গিফট বক্স বের করে দেখিয়ে বললেন,

–খুলো!

চেয়ে দেখলাম সেই গিফট বক্সটা যেটা আমি প্রপোজ স্পটে দেখেছিলাম।
বক্সটা আনপ্যাক করতে সাহায্য করলেন আমাকে তিনি।তারপর আমার কাছ থেকে সরে গিয়ে আবারও সোফায় আরাম করে আধশোয়া হয়ে ল্যাপটপটা কোলে নিয়ে গভীর মনোযোগ দিয়ে কিছু একটা করতে লাগলেন।
বাহ্,এই তো সেই সুপরিচিত রোবট!

উনার দিক থেকে দৃষ্টি সরিয়ে এবার আমি মনোযোগ দিলাম বাক্সের দিকে।উপর থেকে বোর্ড সরাতেই আমার চোখ ছানাবড়া হয়ে গেল।
এতো এতো এতো চকোলেট! তাও সব আমার ফেভারিট চকোলেটগুলো!
লোলুপ দৃষ্টিতে এগুলোর দিকে এক নজর দেখেই আর তর সইলো না,দুইহাতে ইচ্ছেমতো তুলতে শুরু করে দিলাম।গেঞ্জিতে,ওড়নাতে,কোলে,কাঁখে, মুখে যেখানে পারলাম খাবলে খাবলে নিতে লাগলাম চকোলেট! বিছানা,মেঝেতেও ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়তে লাগলো।

তড়িঘড়ি করে মেঝের থেকে পড়ে থাকা চকোলেটগুলো তুলতে যেতেই কোলে থাকা আরও অনেকগুলো চকোলেট পড়ে গেল।আমি হতাশ হয়ে চেয়ে রইলাম ফ্লোরের চকোলেটগুলোর দিকে।

কেউ সশব্দে হেসে উঠতেই আমি সচকিত হয়ে তাকালাম সোফার দিকে!এমা,আহিল ভাই আমার দিকে মুগ্ধ দৃষ্টিতে চেয়ে আছেন,আর হাসছেন!

আমি বেশ লজ্জা পেয়ে গেলাম,ইশ চকোলেট দেখে মাথা ঠিক ছিল না!কি লোভীর মতোই না শুরু করেছি!
আসলে চকোলেট আমার এতো পছন্দ যে ছোট বেলায় সবাই আমাকে চকোলেট পাগলী বলেই ডাকতো!আজ একসাথে এতো চকোলেট দেখে আহিল ভাইয়ের উপস্তিতি আমি বেমালুম ভুলেই গেছিলাম।

আহিল ভাই তেমন কিছুই বললেন না,শুধু আমার মনের অবস্থা আন্দাজ করেই হাসি থামিয়ে কৌতুকপূর্ণ কন্ঠে বললেন,

–জাস্ট রিলাক্স! আমি চকোলেট খাই না!
এগুলো সবই তোমার!

রক্তাভ মুখ নিয়ে আস্তে আস্তে বক্সের বাকী চকোলেটগুলোর দিকেও নজর দিলাম।এমা!শুধু তো চকোলেট না,নিচে আরও কিছু আছে বলে মনে হচ্ছে!

বক্স হাতড়াতেই একটা একটা করে বেরিয়ে এলো কাঁচের বেশ কয়েক জোড়া চুড়ি,কানের দুল,নুপুর,সুগন্ধি,ছোট্ট একটা টেডি,একটা পুরাতন ডায়েরী আর একটা চিরকুট!

চিরকুটের ভাঁজ খুলতেই দুইটা লাইন পেলাম,

“আমি রোবট থেকে রোমান্টিক প্রেমিক হতে রাজী আছি,যদি তুমি আমার পাশে থাকো!কথা দিচ্ছি,আমি তোমাকে ঠিক সেইভাবেই রাখবো,যেভাবে একটা বাচ্চা পাখিকে তার মা রাখে!”

ডায়েরীটা আর খুললাম না।চিঠির লাইন দুইটা পড়েই চোখ ভিজে উঠেছে আমার।এতো সুখ আমার কপালে আল্লাহ লিখে রেখেছেন!সেদিন যদি সত্যিই মরে যেতাম তবে এই দিনগুলোর দেখা কখনোই পেতাম না!

নিজেকে একা একা সামলানো দায় হয়ে যাচ্ছে,আমার মনে হচ্ছে একবার কান্না শুরু করলে আর থামাতে পারবো না!আহিল রোবটটার সাপোর্ট আমার খুব প্রয়োজন এখন।

আহিল ভাইয়ের দিকে চেয়ে দেখলাম তিনি এখনো অপলক দেখে যাচ্ছেন আমায়।উনার দুই হাত ল্যাপটপের কীবোর্ডের উপর স্ট্যাচু হয়ে আছে আর দৃষ্টি আমার দিকে!

খাট থেকে নেমে দ্রুত পায়ে উনার কাছে যেতে যেতেই আর তর বাঁধ মানলো না চোখের পানি ‘আ..হি..ল’ বলেই ভেউ ভেউ করে কেঁদে দিলাম।

মেঘ ছাড়া আকস্মিক বৃষ্টির জন্য তৈরি ছিল না রোবটটা,তবুও সামলে নিল আমাকে।ল্যাপটপটা সাইডে রেখে দুহাত বাড়িয়ে আহবান করে টেনে নিল আমাকে নিজের বাহুডোরে।
আমার সম্পূর্ণ শরীরটা তার বিশাল দেহের উপর তুলে দিয়ে গুটিসুটি হয়ে শুয়ে তার বুকে নীরবে অশ্রু বিসর্জন করতে লাগলাম।সে আমায় বাঁধা দিচ্ছে না একদম।কারণ সে জানে এই কান্না সুখের কান্না।এই নোনা জল ঝরে যেতে দেওয়া উচিত।

এক হাতে আমাকে শক্ত করে বুকের সাথে চেপে রেখে আরেক হাতের আঙুলগুলো আমার চুলের মধ্যে নাড়াচাড়া করে যাচ্ছেন উনি।উনার তপ্ত শ্বাস আমার মুখের উপর পড়তেই এক অজানা অনুভূতি এসে মাঝেমাঝে আমার দেহে অদ্ভুত ঢেউ খেলিয়ে দিয়ে যাচ্ছে।সদিকে খুবই সন্তর্পণে সংযত রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছি নিজেকে।
আমার চোখে চোখ পড়তেই আহিল ভাই কি বুঝলেন জানি না।শুধু অস্পষ্ট স্বরে বললেন,

–“না,এখনি না!ধৈর্য্য ধরো!”

পূর্ণ সকাল হওয়ার আগে পর্যন্ত আমরা এভাবেই ছিলাম।

আলো ফুটতেই আহিল ভাই তাড়া লাগালেন রুমে যাওয়ার জন্য।
বিয়ে বাড়ি,অনেক মানুষ। আমাকে আহিলের রুমে দেখে কে কি কথা বানিয়ে ফেলে এটাই হয়তো আহিলের ভয়।
আমার যেতে ইচ্ছে করছিল না একদম এই উষ্ণতা ছেড়ে।শেষমেশ কোলে করে আমাকে আমার রুমে দিয়ে আসলেন আহিল ভাই।
রুমে আসার সময় আহিলের কোলে তনয়াকে কেউ কেউ দেখে নিল ,কিন্তু তারা সেদিকে তোয়াক্কা করলো না একদম।

——————————-
সকালে ঘুম ভাঙতেই সোহেলী খালামনিকে আবিষ্কার করলাম শিয়রের কাছেই। আমি চোখ খুলতেই আমাকে জড়িয়ে ধরলেন উনি।কাঁদতে কাঁদতে বললেন,

–আমার অনেক বছরের শখ পূরণ হবে রে এবার তনয়া!তোকে আমার ছেলের বউ করে ঘরে তুলবো এবার।

দুপুর বেলায় সোহেলী খালামনি নতুন আরেক পাগলামী শুরু করে দিলেন।হলুদ টলুদ কিছু করা লাগবে না,কালই উনি উনার ছেলেকে বিয়ে করাতে চান,ব্যস!একই আসরে তিন তিনটে বিয়ে উনি চান।
উনার কথায় তাল মিলেয়ে বাসার সবাই প্রায় রাজীই হয়ে গেলেন।
কিন্তু বাঁধ সাজলেন আহিল ভাই!তিনি এখন বিয়ে করবেন না….।

কারণ কি?

কারণ তিনি নাকি মানসিকভাবে প্রস্তুত না এখন।আর সামনে তনয়ার পরীক্ষা,আগে ওর পরীক্ষাটা শেষ হোক ।
আমার অবশ্য কোনো তাড়াহুড়ো ছিল না,তাই যেটা সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে সেটাই মেনে নিব।

আহিল ভাইয়ের দৃঢ সিদ্ধান্তে এদিকে উৎসাহে ভাটা পড়লো খালামনি মানে আমার হবু শাশুড়ীর।
তবে এনগেজমেন্ট করে রাখা থেকে আটকাতে পারলেন না তাকে কেউ।একদিকে দুই দুইটা হলুদের অনুষ্ঠান অন্যদিকে এনগেজমেন্ট।

ভালোভাবেই সব প্রোগ্রাম সম্পূর্ণ হলো।এখন আমি মিস্টার আহিলের বাগদত্তা!
বেশ জমকালো দিন কাটলো একটা। অনুষ্ঠানে আকাশ ভাইও উপস্থিত ছিলেন স্বপরিবারে!তিনি কোনো প্রকার ঝামেলা তো করেননিই উল্টো খুবই লজ্জা প্রকাশ করেছেন,উনার ঐরকম ব্যবহারের জন্য।সাময়িক ভাবে উনার মাথায় শয়তান ভর করেছিল,এরকম আর কক্ষনো হবে না এরকমই প্রতিশ্রুতি দিলেন উনি।
বিয়ে বাড়ি তাই আহিল ভাইও ঝামেলায় গেলেন না,মন থেকে ক্ষমা করেছেন কিনা জানি না তবে ব্যাপারটাকে আর বাড়তেও দেননি তিনি।

এক মাস পর……
আমার উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা চলছে এখন।
আহিলের সাথে আমার প্রেম জমে ক্ষীর!শুধু পরীক্ষা শেষ হওয়ার পালা,তারপরই বিয়ের দিন তারিখ ঠিক করা হবে।

খুশির কথা হলো,দুইদিন আগেআহিলরা একবারে চলে এসেছে এই দেশে!মা,বোন আর বউকে নিয়ে নিজের দেশে নিজের আত্মীয়-স্বজনদের সাথেই থাকতে চায় আহিল।এদিকে আমার মা-বাবাও চায় না উনাদের দুই দুইটা মেয়েই দেশের বাহিরে থাক।

বউ হয়ে আহিলের ঘরে যাওয়ার অপেক্ষায় আমার দিনগুলো কাটছে।কবে আমার পরীক্ষা শেষ হবে,কবে বিয়ে!পাঠ্যবইয়ের পাশাপাশি আমি এখন আহিলের ডায়েরী পড়ে পড়ে আমার অপেক্ষার দিনগুলো পার করছি।

আহিলের জীবনের ডায়েরী!যেটা আমাদের প্রপোজ ডে’তে আমি উপহার পেয়েছিলাম আহিলের কাছ থেকে।

এই ডায়েরীতে আমাকে নিয়ে তার সমস্ত অনুভূতিগুলো কলমের কালিতে প্রকাশ করেছে সে !

ডায়েরীটা পড়তে পড়তে আমি যখন ওর অনুভূতির মাঝে ডুবে যাই,তখন মনে হয় “নাহ্,মানুষটা মোটেও রোবট নয়!পারফেক্ট রোমান্টিক প্রেমিক!”

আজ ডায়েরীর একটা বিশেষ পাতা চোখ পড়লো যেখানে একটা জায়গায় আহিল লিখে রেখেছে সে “#কোনো_এক_বসন্তে তার তনয়াকে আপন করে নিতে চায়!”

বসন্ত নিয়ে আহিলের নানান রকম আজগুবি অনুভূতিও লিখা আছে ডায়েরীর বিভিন্ন পাতায় পাতায়!

এবার বুঝলাম,তখন বিয়ে করতে রাজী না হওয়ার কারণ! আমার পরীক্ষা ছিল শুধুই উছিলা,আসলে আহিল বসন্তের অপেক্ষা করছিল।

আমিও আমার পরীক্ষাদিনগুলো কবে যাবে সেই চিন্তা করা বাদ দিয়ে অপেক্ষা করতে লাগলাম আহিলে আকাঙ্ক্ষিত #সেই_কোনো_বসন্তের!এটা ভাবতেই মনে এক রোমাঞ্চকর অনুভূতির সৃষ্টি হয় “আমি আর আহিল মিলিত হবো #কোন_এক_বসন্তে!”

গল্পের ঠিকানা ওয়েবসাইটের গল্পনপড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ
#সমাপ্ত

(অনেক পাঠকই বলছিলেন,গল্পটা বড় করা জন্য।আসলে আমি ব্যক্তিগত ভাবে গল্প টেনেটুনে বড় করা পছন্দ করি না।একটা গল্পকে পূর্ণতা দেওয়ার জন্য যতটা কাহিনীর প্রয়োজন হয় ঠিক ততটাই লিখি।

লাইব্রেরিতে যখন গল্পের বই আনতে যাই তখন কিন্তু সবচেয়ে মোটা বইটাই আগে খুঁজি।বইয়ের পাতায় বড় গল্প পড়তেই ভীষণ ভালো লাগে আমার।
কিন্তু অনলাইনে সবসময় ছোট গল্পের লিংক খুঁজি।

যাইহোক,পাঠক চাইলে গল্প তো বড় করা যেতেই পারে কিন্তু এই গল্পটা আর বড় করতে চাইছি না।কারণ সামনে আমার এক্সাম।এই মুহুর্তে গল্প লিখার চাপ নিতে ভালো লাগছে না।
পরে কখনো ইচ্ছে হলে সিজন-২ লেখা যাবে সমস্যা নাই।

যারা এই গল্পটার সাইলেন্ট রিডার্স ছিলেন এতোদিন,শেষ পর্বে এসে তাদের কাছ থেকে গল্পটার সম্পর্কে মতামত জানার ইচ্ছে প্রকাশ করছি।
ধন্যবাদ সবাইকে।💙)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here