“আম্মু আমাকে কে কি কেউ দেখতে আসে না? না আসলে চলো আমরা দেখতে যাই।আপুর বিয়েতো হয়ে গিয়েছে এবার আমাকেও বিয়ে দিয়ে দাও,,তুমি তো আমাকে,,,,
আর কিছু বলতে যাবো কিন্তু সোফার দিকে তাকাতেই নিজেকে সামলে নেই। ওমা আপু, ভাইয়া, আর তার গুণোধর ভাই মানে আপুর দেবর জ্বি বসে আছে। আর আম্মু আমার দিকে কটমট দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। আসলে আম্মুকে জ্বালাতে আমার খুব ভালো লাগে। কিন্তু আম্মুকে জ্বালাতে গিয়ে যে নিজের মান সম্মানের ফালুদা হবে কে জানত।
আজ শুক্রবার তাই আর ভার্সিটিতে যাওয়া হয়নি। রুমে বসে বসে রেস্ট করতে করতে ক্লান্ত হচ্ছিলাম তাই ভাবলাম এভাবে ক্লান্ত না হয়ে আম্মুর সাথে ঝগড়া করে ক্লান্ত হওয়াটাই ভালো।
__________
আম্মু আমাকে বলে
“আফরিন একটু কিচেনে আয়তো।
আল্লাহ হাফেজ দুনিয়া, কারণ আমি ভালো করেই জানি আম্মু আমাকে কিচেনে নিয়ে চিকেনের মতো কুঁচি কুঁচি করে কাটবে। ভাইয়া আপুকে সবাইকে সালাম দেই ভাইয়া আপু সালামের উত্তর নিলেও আদিত্য নেয় না কি বলবো আসলেই খবিশ একটা। আম্মুর সাথে কিচেনে যেতেই কান ধরে বলে
” তোর কি আক্কেল হবে না? কোথায় কি বলতে হয়?
” আহহহহহহহ আম্মু ছাড়াতো আমি কি খেয়াল করেছি নাকি, আপুরা এসেছে?
আম্মু কানটা আরেকটু জোড়ে ধরে বলে
” চোখ কি তোকে আল্লাহ দান করেনি? আমি হালকা হাসি দিয়ে বলি
” দিয়েছে কিন্তু সেটা তুলে আলমারিতে রেখে দিয়েছি, কম ব্যবহার করি, তুমি তো বলো আমি কিছু রেখে করতে পারি না, আর যাতে তোমার আর চশমা কিনে দিতে না হয় তাই আলমারিতে রাখি। আর মা জননী কানটা আমার ছাড়ুন, নয়তো নতুন কান কিনতে হবে। যে ভাবে ধরেছেন কান আমার ছিড়ে যাবে। ”
আম্মু আমার কান ছেড়ে দিয়ে বলে আপুদের সময় দিতে। আমিও চলে আসি। আদিল ভাইয়া আমাকে দেখে বলে
” তা শালীসাহেবা এতো বিয়ে করার তাড়া কিসের? হুমম শুনি একটু। ফারিন তাকিয়ে আছে আফরিনের মুখ পানে। আফরিন বলে
” আমার দুঃখের কথা শুনবে তো তুমি কেঁদে দিবে, বিয়ে তো আমি এরজন্য করবো কারণ আমি বিয়ের লেহেঙ্গা পড়তে চাই।
ভাইয়া চা খাচ্ছিল আমার কথা শুনে তালুতে উঠে যায়। আপু ভাইয়াকে শান্ত করানোর চেষ্টা করছে। সব ঠিক হলে । আদিত্য বলে
” যত্তসব ফালতু রিডিকিউলাস চিন্তা ভাবনা। ফারিন আপু বলে
” সত্যি তোর মাথায় এইসবই ঘুরপাক খায় সারাক্ষণ? আর শুনলাম তুই নাকি ভার্সিটিতে গিয়ে ক্লাস বাংক করিস, আম্মু জানে?
★★★
আপু জানলো কি ভাবে??! এই সব খবর নিশ্চিত এই লম্বা এনাকন্ডার তালগাছটা দিয়েছে। আমি সিউর। বিয়াই তো না একটা সিসি-কেমারা। মনতো চাচ্ছে। থাক কালকে দেখ নিব ভার্সিটিতে গিয়ে। কি মনে করে ভয় পাই তাকে? আমি আফরিন কাউকে ভয় করি না।
দুপুরে খাওয়া দাওয়া সেরে আপু আর ভাইয়া, আপুর রুমে চলে যায়। আমি আমার রুমে যেতে চাইলে আম্মু বলে
” আদিত্য তুমি বরং আফরিনের রুমে গিয়ে রেস্ট করো, আফরিন য রুমে নিয়ে যা আদিকে!!
মানে কি!! নো ওয়ে আমি তাহলে কোথায় থাকব?? কিছু করার নেই বাধ্য হয়ে নিয়ে আসলাম আমার রুমে। রুমে ঢুকতেই সে চিটপাং হয়ে আধো শুয়া হয়ে বসে পরে বেডে। সম্পূর্ণ রুমে চোখ বুলিয়ে বলে
” কালকে ঐ ছেলেটা কে ছিল?
কোন ছেলে? আবার কার সাথে দেখল? আর বুঝি না উনার আমাকে নিয়ে এতো কৌতূহল কেন? আমি বলি
“যেই হোক তাতে আপনার কি? আর আমার পিছনে এমন সিসিটিভির মতো লেগে আছেন কেন?
আফরিনের কথা শুনে আদিত্য বেশ ক্ষেপে যায়। তাই বলে
” নিজেকে কি মনে করো? জানোতো যারা নিজেকে অনেক কিছু মনে করে তাদের আমি কিছু বলি না। আর তোমার ব্যপারে জাসুসি করার সখ বা ইচ্ছে আমার নেই। বলার ইচ্ছে থাকলে বলবে না।
আফরিন জেদি খুব তাই সেও বলে
” তাহলে জিজ্ঞেস কেন করেন?
কি ঘাড়ত্যাড়া কই উত্তর দিবে সেটা না করে পাশে থেকে রিমোট নিয়ে টিভি ওন করে টিভি দেখছে!! আমি কি করব একা একা?? ঝগড়া করতেও তো একটা মানুষ লাগে তাই না?
________________________
ছাঁদে যাবো তারও কোন উপায় নেই কাঠফাটা রোদে বাইরে। বেলকনিতে চলে আসলাম।একটা চিপস নিয়ে। কানে হেডফোন গুজে কল দিলাম অহনাকে আর অন্যাকে গ্রুপকল। প্রথম রিং হতেই রিসিভ করলো অহনা কিন্তু অন্যা জয়েন হয়নি হয়তো ব্যস্ত। ফোন ধরতেই বলে
“জানিস পৃথিবীতে মা-বাবা আর বেস্ট ফ্রেন্ড ছাড়া কেউ কারো আপন না। কেউ কাউকে ভালোবাসে না।
আমি হাহাহা করে হেসেই দিলাম। অহনা বলে
“হাসবি না। তুইও এমন জানতাম না। আমি চিপসের প্যাকেট খুলে চিপস খেতে খেতে বললাম।
” আহান ভাইয়ার সাথে ব্রেকআপ হয়েছে আবার?
অহনা এবার কেঁদে দেয় আর বলে
” ইয়ার, আসলেই ফাজিল ১০ বার ফোন দিয়েছি ধরে নাই পরে রাগ করাতে বলছে ব্রেকআপ। আমার সাথে রিলেশনে থাকলে নাকি সে পাগল হয়ে যাবে।
আমাকে আর পায়কে। চরম হালাল বিনোদন যাকে বলে সেটা মনে হচ্ছে। আমি বলি।
” তুই সন্দেহ করেছিস নিশ্চিত বেচারারই কিবা দোষ?
অহনা বলে
“চুপ হারামি তুই আমার বেস্ট ফ্রেন্ড না এখন হেল্প কর। তোর আপুর দেবর আছে না আদিত্য তার নাম্বার টা একটু দিবি। আহান আর আদিত্য ভাইয়াতো বেস্ট ফ্রেন্ড আদিত্য ভাইয়াকে বলে দেখি।
আমি বিরক্ত হয়ে বলি
” দেখ তুই ভালো করেই জানিস উনার সাথে আমি কথা বলি না।
অহনার অনেক রিকোয়েস্ট করার পর বলি
” দাড়া দিচ্ছি আমাদের বাসায় এসেছে আজকে।
অহনা বলে
তুমি তলে তলে ঠিকই টেমপু চালাও আর আমাকে বলো হরতাল।
একটা রাম ঝাড়ি দিয়ে বললাম
কি ভাষা এইগুলোও? মাথা গেছে? ফালতু বকবি না। দুনিয়াতে যদি আমার শত্রুর লিস্ট করা হয় তাহলে সর্ব প্রথম থাকবে এই আদিত্য। দাড়া এক মিনিট।
_________
রুমে ঢুকে দেখি সে কার্টুন দেখছে আর দাত বের করে হাসছে। পেয়েছি একটা সুযোগ।
” শুধু হাসলে হবে দাঁতও ব্রাশ করতে হবে। আদিত্য কথাটা বেশ লাগে তাই বলে
” বাজে বকবে না আমি তিন বেলা ব্রাশ করি। আফরিন বলে
“এই যে আরেকটা মিথ্যা কথা। আমাদের বাসায় কই করলেন? আর বললেই হয় মাসখানিক পর দাঁত ব্রাশ করছেন তাই প্রাণ খুলে হাসছেন। তাছাড়া আপনি এই ডাইনোসরের মতো ক্লোজআপ হাসি হাসেন না। ইহা ডাইনোসরের মতো আপনার জন্যও বিলুপ্ত।
আদিত্য কটমট দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। আমি একটা লম্বা হাসি দিয়ে বলি।
“”সত্যি কথা তেঁতোই হয়। আর অহনা কথা বলবে আপনার সাথে ধরুন বলেই, গিয়ে বসে পরলাম আমার পড়ার টেবিলের চেয়ারে।
আদিত্য অহনার সাথে কথা বলছে। একপর্যায়ে বলে
” দেখ অহনা রিলেশন আছো তো বিশ্বাস রাখতে হবে যেখানে বিশ্বাস নেই সেখানে সেই সম্পর্কের কোনো মূল্য নেই। আর আহান কালকে বাইক থেকে পরে মাথায় ব্যথা পেয়েছে, কৌশাল আর আমি ওকে হসপিটালে নিয়ে যাই তাই তোমার কল ধরেতে পারেনি।
কি মিথ্যা কথা!! কালকে বিকেলেও তো দেখলাম বিন্দাস তিনজন বাইক নিয়ে আমাদের এইদিক থেকে ঘুরে আসলো। অন্যাকে কল দিতে হবে কেমন রহস্য রহস্য গন্ধ পাচ্ছি । আদিত্যর কথা বলা শেষ হলে আমি ফোনটা নিয়ে বলি
” আপনি মিথ্যা বললেন কেন? আদিত্য বলে
” মিথ্যার পিছনে যদি কোনো ভালো কারণ লুকিয়ে থাকে তাহলে মিথ্যা বললে পাপ হয় না। কালকে রাতে আহান ড্রাংক ছিল তাই ঐসব বলেছে। আর এই খবর যদি ঠোঁট পাতলার মতো অহনাকে বলেছ তাহলে তোমাকে দেখিয় ভার্সিটির সবার সামনে মাঠে কান ধরে দাড় করিয়ে রাখব বলে দিলাম
চলবে
গল্পের নামঃ- #তুই_তারারে_ভিনদেশী❣️(সিজন-২)
লেখিকাঃ- #konika_islam (sanju)
ভুলত্রুটি ক্ষমার চোখে। ধন্যবাদ সবাইকে 💖💖💖 সিজন ২ সাথে সিজন ১ এর কোনো মিল নেই। তাই সবাই নির্দ্বিধায় পড়তে পারবে।