তুই_তারারে_ভিনদেশী পর্ব ১১

গল্পের নামঃ- #তুই_তারারে_ভিনদেশী(সিজন-২)

লেখিকাঃ- #konika_islam (sanju)

part:11

সময় জিনিসটা বড্ড স্বার্থপর কখনো কারো জন্য অপেক্ষা করে না। কি এমন হয় একটু অপেক্ষা করলে? হয়তো কিছু স্মৃতি না হয় স্মৃতির পাতায় আরেকটু যোগ হবে। ভালোবাসা খুনসুটি গুলো না হয় আরেকটু হবে। কিন্তু সময় কি কখনো কারো অপেক্ষা করে? করে না। আজ প্রায় বছর তিনেক বাদে দেশের মাটিতে পা রেখেছে আফরিন। সেদিনের পর আফরিন পড়ালেখার নাম করে ইউএসে চলে যায়। আফরিনের কাছে ইমেল এসেছিল ইস্কলারসিপের প্রায় মাসখানিক আগে তখন আর সে সেটা নিয়ে ভাবে না কিন্তু পরে সেটাই কাজে লাগায়।

৭ দিন কারো সাথে কোনো রকম কথা বলেনি আফরিন। ইভেন আদিত্য দেখা করতে আসলেও সে দরজা অব্দি খুলেনি। শুধু যাওয়া আগে প্লেনে উঠে কল দিয়ে সবাইকে জানিয়ে দেয় সে ইউএস যাচ্ছে। ফারিনের সাথে কথা হয় তার একটা ফুটফুটে বাচ্চা হয়েছে নাম মিরা ।

আচ্ছা আদিত্য কেমন আছে? আগের মতোই হয়তো রাগী। বিয়ে করে নিয়েছে? হয়তো। এত জলদি বিয়ে করে নিবে? মনে হয় না । আজ হয়তো আবার সেই আগের চিরচেনা মুখ গুলে দেখব।

অহনা আর অন্যা ভার্সিটি না গেলে খাপছাড়া খাপছাড়া লাগতো। যাদের সাথেই আফরিনের ছিল আনাগোনা।

অহনা আর আহানের বিয়ে । বান্ধুবীকে সারপ্রাইজ দিতে আর ভাগ্নিকে একপলক দেখার জন্য দেশে ফিরেছে আফরিন। নয়তো সেখানে একটা রেস্টুরেন্টে জব করে ভালোই দিন চলছিল আফরিনের। অন্যা আর কৌশালও নাকি এখন রিলেশনে।

এতো বছরে আদির খোঁজ কেউ দিতে চাইলেও আফরিন নেয়নি। পিছুটান ভুলে যেতে চেয়েছিল। কিন্তু পারেনি। প্রায় সে আদিত্যকে প্রাইভেট নাম্বার থেকে কল দিত। আদিত্য ফোন রিসিভ করে হ্যালো হ্যালে করতো।আর এই আওয়াজটা শুনেই আফরিন কল কেটে দিত। আজ তিনবছর পর মানুষটাকে দেখবে।

____________

এয়ারপোর্ট থেকে বের হতেই দেখে ফারিন, সামির দাড়িয়ে আর কোলে তাদের মেয়ে। আফরিন বলেছিল সে আসবে কিন্তু হোটেলে থাকবে আর কাউকে যেন না বলে। ওদের দেখে আফরিন বেশ অবাক+খুশি দুইটাই হয়। আফরিন গিয়ে জড়িয়ে ধরে ফারিনকে। আর সামিরের কোল থেকে মিরাকে নিয়ে চুমু দিয়ে বলে

” আমার মির (মিরা) মামুনি কেমন আছো তুমি? মিরা কি বুজলো কে জানে খিলখিল করে হাসতে লাগে। সামির বলে

” আসতে কোনো সমস্যা হয়নি তো? আফরিন বলে

” না হয়নি কিন্তু আপু তোমরা এখানে? আচ্ছা চলো হোটেলে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে কথা হবে।

ফারিন বলে

” একদম না। হোটেলে না তুই আমাদের সাথে যাবি।

মুহুর্তেই আফরিনের মনে পরে আদিত্যর কথা। ফারিনকে সে বলেছিল পড়া লেখার জন্য সে গিয়েছে। অহনা, অন্যাও কিছু বলতে পারেনি কারণ আফরিন যাওয়ার কিছু মিনিট আগে কল করে বলেছিল সে ইউএস যাচ্ছে ।

আফরিন বলে

” না না। আমি হোটেল বুক করে ফেলেছি। ফারিন বলে

” আমি কিছু জানিনা। আর এতখনে সামিরও আফরিনের হাতের লাগেজ গাড়িতে তুলে ফেলে।

আদিত্যদের বাসায় এসে সবার সাথে কথা বললেও আদিত্যকে দেখেনি। আর কাউকে জিজ্ঞেসও করেনি। হয়তো আহানের বিয়ে নিয়ে ব্যস্ত আচ্ছা । আমাকে দেখে তার রিয়াকশন কি হবে। হয়তো আবার রেগে যাবে। আমি উনাকে নিয়ে এতো ভাবছি কেন? একটু রেস্ট নেই বিকেলেতো আবার অহনার গায়েহলুদ অনুষ্ঠান।

___________

অপরদিকে অহনা মন খারাপ করে বসে আছে। আর অন্যা কলের উপর কল দিচ্ছে আফরিনকে কিন্তু সিম বন্ধ। অহনা বলে

” আজ আমার এত বড় একটা দিন। আর আমার বেস্ট ফ্রেন্ডই নেই। কলও ধরছে না। কত করে বলেছিলাম। একবার দেশে আয়। ২দিন আগে গ্রুপে কথা হলো সব জিজ্ঞেস করলো কখন গায়েহলুদ তুই কি পরবি আমি কি পরব। ওর সাথে কথাই বলবো না।

অন্যা বলে

” হয়তো কাজে বিজি। আচ্ছা মন খারাপ করিস না। এখন চল সবাই তোর জন্য অপেক্ষা করছে।

অহনা মন খারাপ করেই ইস্টেজে বসে। কলাপাতা কালারের শাড়ি হালকা সাজ আর কাঁচা ফুলের গহনা। সব মিলিয়ে অনেক সুন্দর লাগছে অহনাকে। অন্যা পরেছে একটা হলুদ কালারের লেহেঙ্গা তার মাঝে লালসুতোর কাজ আর ইস্টোন বসানো। সাজতো আছেই।

আহানকে বসানো হয়েছে পাশের ইস্টেজে সেও সাদা কালারের পান্ঞ্জাবি পড়া। কৌশাল পরা বেগুনি কালারের পান্ঞ্জাবি। আদিত্য? আদিত্য ও সেম। আদিত্যর আজ সব এলোমেলো লাগছে। আফরিনকে আজ সে অনুভব করতে পারছে। কিন্তু আফরিন নেই। কম যোগাযোগ করার চেষ্টা করেনি আদিত্য।
অহনা আর অন্যাকেও জানাতে বারণ করেছে। ভাবিকে জিজ্ঞেস করলে বলে ইউএসে কিন্তু কোন শহরে সেটা বেলেনি আফরিন।

_______________

অহনাকে অন্যা হলুদ লাগাতে যাবে তার আগেই কেউ মাইক হাত বলে

” এই অন্যা এটা আমার অধিকার। তুই না আমি আগে লাগবো হলুদ। আন্টির আর আঙ্কেলের পর আমি আগেই বলেছিলাম।

আওয়াজ শুনে সবাই পিছনে তাকায়। দেখে আফরিন দাড়িয়ে উপস্থিত সবাই যারা আফরিনকে চিনে অবাক। অন্যার মতো সেম লেহেঙ্গা হালকা সাজ। খোলা চুল সব মিলিয়ে অসম্ভব সুন্দর লাগছে আফরিনকে। আহান তাকিয়ে আছে আদিত্যর দিকে। আদিত্যর চোখের কোনো পানি। কৌশাল আদিত্যকে বলে

” শান্ত থাক। আদিত্য চোখের পানি মুছে কৌশালকে টাইট হাগ দিয়ে বলে

“দোস্ত আমি অনেক হ্যাপি। আফরিন এগিয়ে যায় অহনার দিকে। অহনাকে জড়িয়ে ধরলে অহনা কেদে দেয়। আর বলে

” এটা আমি আশা করিনি। আফরিন বলে

” এই কান্না করবি না। নয়তো পত্নীর মতো লাগবে পিকে। অন্যাকেও হাগ করে। তারপর হলুদ ছুয়ায় অহনাকে। আফরিন হেসে দেয়। অনেক কতা বাকি কত বছর৷ পর তিন বান্ধুবী এক সাথে।

____________

এইসবের মাঝে চোখ জোরা খুঁজে চলছে আদিকে। আহানকে হলুদ লাগাতে যাবে তখনই আহান বলে

” কেমন আছো আফরিন? আফরিন বলে

” ভালো। আহান কিছু বলতে যাবে তখনই কৌশাল বলে

” আফরিন তোমার মুখে হলুদ লেগে আছে নিচে গিয়ে পরিষ্কার করে আসো অহনার রুম থেকে নয়তো জলবে। দেখনা অহনাও সাথে সাথে মুছে ফেলছে। আর তোমার দোপাট্টায়ও লেগে আছে হলুদ । আফরিন একা হাসি দিয়ে বলে

” আচ্ছা আসছি।

——————–

অন্যাকে বলে আফরিন নিচে নামতে লাগে আফরিন অহনার রুমের কাছে আসতেই কেউ হেঁচকা টানে তাকে রুমে নিয়ে আসে আর সাথে সাথে দরজাটা লাগিয়ে দেয়। আফরিনের ফেস ধরে ইচ্ছে মতো চুমু দিতে লাগে। পারফিউমের ঘ্রাণ জাননা দিচ্ছে এটা আদিত্য। আফরিনকে হাগ করে আদিত্য। আফরিন বলে

” ছাড়ুন আমাকে। আদিত্য বলে

” বলেছিলাম না তুমি ছাড়লেও আমি ছাড়বো না। কখনো না। মানছি ভুল করেছি কিন্তু তুমি এভাবে শাস্তি দিবে। মারতে বকতে কিন্তু ছেড়ে কেনো গেলে?? আফরিন আদিত্যর থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে আদিত্যর দিকে তাকিয়ে বলে

” আমি কে শাস্তি দেওয়ার? আর আমি এখানে এসেছি অহনার বিয়ের জন্য বিয়ে শেষ হলে আমিও চলে যাবো। পুরনো কোন কিছু আর এখন চাই না।

মুহুর্তেই আদিত্যের চোখ মুখের রং পাল্টে যায়। আদিত্য আফরিনের গাল চেপে ধরে খুব শান্ত কন্ঠে বলে

” আরেক বার যাওয়ার কথা বলবি জানে মেরে ফেলবো পরে নিজে মরারা যাবো। কি মনে করিস নিজেকে। তিনটা বছর কিভাবে ছিলাম আমি জানি। আমাকে আগের আদিত্যতে ফিরতে বাধ্য করিস না পরিনাম ভয়ংকর হবে৷ সব শেষ করে ফেলব। তুই আমার বুঝলি, তুই আমার আকাশের তারা। “তুই তারারের ভিনদেশী ” আর সেটা আমার আকাশের। খুন করে ফেলব এগুলো বললে

আফরিন নিজেকে ছাড়িয়ে হালকা করে আদিত্যকে ধাক্কা দিয়ে বলে

” আপনি সাইকো!? আদিত্য বলে

” তোমার জন্য সব হতে পারি বেইবি। তুমি এখানে এসেছো নিজ ইচ্ছায়। কিন্তু নিজ ইচ্ছাতে যেতে পারবে না। তোমার সাথে আমার অনেক হিসাব বাকি। সব কিছুর প্রতিশোধ নিব। কিন্তু অন্যভাবে।
তুমি এখন আমার আকাশে তারার মতো আবদ্ধ চাইলেও তুমি আকাশ ছাড়া অন্য কোথাও যেতে পারবে না। আই লাভ ইউ।

আফরিন সম্পূর্ণ ইস্তব্দ । এটা কি সেই আদিত্য? এতটা শান্ত কিভাবে।

আফরিন বলে

আমরা এখন আলাদা রাস্তায়। সেই আগের পথ আমি বহু আগেই হারিয়ে ফেলেছি

আদিত্য বলে

” পথ হারিয়েছ সমস্যা নাই গুগোল মেপ দিয়ে তোমাকে সঠিক পথ দেখানোর দায়িত্ব আমার বেইবি। বি রেডি। আফরিন বলে

” কি দরকার মিছে আবদার। ভুলের পাল্লা ভারি, জানি নয় ছয় সবই অভিনয় তাই দুজনের আড়ি
বলেই রুম থেকে চলে যায়। আফরিন ভাবছে তার ফিরে আসাটা কি ভুল ছিল?

আদিত্য বলে

” তুমি চাইলেও আমার না চাইলেও আমার। কষ্ট দিয়ে দূরে সরিয়ে দিয়েছিলাম এখন সব ঠিকও আমি করব।

চলবে

ভাই আজকে তো গঠনমূলক কমেন্ট করাই যায়। আগেই বলি গল্পটা নতুন মোর নিয়েছে অনেক কিছু বাকি এখনো। অন্যা আর কৌশালের বিয়ে অহনার বাচ্চা। আদিত্য আর আফরিন ঐটা সিক্রেট । আগেই বলি যা ভাববে ঐটার বিপরীত হবে। ওকে বায়
ভুলত্রুটি ক্ষমার চোখে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here