গল্পের নামঃ- #তুই_তারারে_ভিনদেশী(সিজন-২)
লেখিকাঃ- #konika_islam (sanju)
part:14 last
আমি পারবো না তোমাকে ছাড়া থাকতে। মানছি ভুল করেছি, সেই শাস্তিও দিয়েছ। তিনটা বছর কম নয় কি? আর কত। প্লিজ আই এম সরি। তুমি যা বলবে আমি করতে রাজী। হাত জোর করে বলছি লাস্ট একটা সুযোগ দাও, ওয়াদা করলাম কোনো দিন আর কাঁদাবো না। আমি আর পারছি না। আই লাভ ইউ।
আফরিন আদিত্যর কথা শুনে আরেক পা পিছিয়ে যায়। ছাঁদের একদম কর্নারে চলে এসেছে আফরিন। আরেক পা এইদিক সেইদিক হলেই নির্ঘাত নিচে পরে যাবে। আফরিন বলে
” আপনাকে ফিরেয়া দাওয়ার সাধ্য আমার নেই। কিন্তু কাছে টেনে নেওয়ার সেই শক্তিটাও নেই। কেন করেছিলেন এমন? কি এমন হতো একটু বিশ্বাস করলে?! একটু সম্মান করলে? নিজেকে আপনার কাছে বিলিয়ে দিতাম। কিন্তু এখন! আমি এমন জায়গায় দাড়িয়ে আছি সেখান থেকে সব ধোঁয়াসায় মেটে গেছে। পারবেন পুরনো আফরিনকে ফিরিয়ে দিতে?? পারবেন আমার জীবনের ৩টা বছর ফিরিয়ে দিতে? পারবেন বলুন?
আদিত্যে খেয়াল করে আফরিন একদম ছাঁদের শেষ প্রান্তে চলে গিয়েছে। আদিত্য তাড়াতাড়ি দাড়িয়ে নিজের হাতটা এগিয়ে দেয় আর বলে
” ঠিক আছে কিছু করতে হবে না। হাত টা ধরো নয়তো পরে যাবে, এখানে আসো।
আফরিন পিছনের দিকে তাকিয়ে আদিত্যর দিকে তাকিয়ে বলে
” আচ্ছা। বলেই আরেক পা পিছিয়ে যায় যেই না আফরিন পরে যাবে সাথে আদিত্য আফরিনের হাত ধরে ফেলে। ততক্ষণে ছাঁদে সবাই চলে এসেছে। অহনা আফরিনকে এভাবে দেখে চিৎকার দিয়ে বলে
” এই আফরিন কি করছিস। আফরিন আদিত্যর হাত ছেড়ে দেয় শুধু আদিত্য ধরে রেখেছে। আদিত্য বলে আফরিন
” কি করছ, বেশি বেশি হচ্ছে। আহান আর কৌশাল দৌড়ে আসে আর আদিত্যকে সাহায্য করতে আসবে আফরিনকে তুলতে। তার আগেই আদিত্যর হাত পিছলে যায় কিন্তু আরেক হাত দিয়ে আফরিনের হাত ধরে ফেলে। সবাই ভয় পেয়ে যায় । সবাই আফরিনকে বোঝাচ্ছে এরকম পাগলামি না করতে। আফরিন আদিত্যর দিকে স্নিগ্ধ চোখে তাকিয়ে বলে
” নিয়ন আলোয় কাছে আসা, আপনার সাথে করা ঝগড়া সব কিছু না হয় খুব সুন্দর স্মৃতি হয়ে থেকে যাক এই পৃথিবীর বুকে। আমাদের কাহিনীটা না হয় অসমাপ্তই থাক। তখনই আদিত্য হেঁচকা টানে আফরিনকে উপরে নিয়ে আসে। আর সবার সামনে গালে চড় বসিয়ে দেয়।
আদিত্য যেন নিজের আসল রূপে ফিরে এসেছে। আজকে আফরিন সেই আগের আদিত্যকে দেখতে পারছে। আদিত্য আফরিনের বাহু চেপে ধরে বলে
” আমাকে তোর চাই না ঠিক আছে। লাগবে না চাওয়া কিন্তু এখন এখন কি করতে যাচ্ছিলি!? যদি কিছু হয়ে যেত। নিজেকে কি মনে করিস, বলিউডের হিরোয়িন। তোর কাছে হাত জোর করে ভিক্ষা অব্দি চাইতে পিছ পা হতাম না। কিন্তু তুই!! আজকের পর আমি আর তোর সামনে ভালোবাসার দাবি নিয়ে আসবো না। সব কিছুর একটা লিমিট থাকে। নিজের রাগ, জিদ আর ইগো নিয়েই থাক।
বলেই সেখান থেকে চলে যায়। অহনা এসে আফরিনের সামনে দাড়ায় আর বলে
” সত্যি সব কিছুর লিমিট থাকে। তুই জানিস আদিত্য ভাইয়া এই তিনটা বছর কিভাবে ছিল। তোর জন্য কতটা কষ্ট পেয়েছে তিলে তিলে নিজের রাগকে নিয়ন্ত্রণ করেছে। নিজেকে বদলে ফেলেছে। ছেলেদের নাকি কাঁদতে নেই কিন্তু আদিত্য ভাইয়া তোর জন্য কান্না করেছে।
কৌশাল বলে
” তুমি যদি দেশে বেক না করতে তাহলে আদিত্য ইউএসে যেতে চেয়েছিল শুধু মাত্র তোমাকে খুঁজতে। মানছি ও ভুল করেছে কিন্তু এত বড় ভুল করেনি যতটা তুমি রিয়েক্ট করছ। রাগী হতে পারে কিন্তু তোমাকে মন থেকে ভালোবাসে।
অন্যা এসে আফরিনের দিকে তাকিয়ে তাচ্ছিল্যর হাসি দিয়ে বলে
” তুই বদলে গিয়েছিস আগের আফরিন সবাইকে নিয়ে ভাবতো। কিন্তু তুই! শুধু নিজেরটা বুঝিস।
আজকে যদি তুই আদিত্য ভাইয়াকে না আটকাস তাহলে সত্যি তুই অনেক বড় কিছু হারাবি। আহান বলে
” আফরিন প্লিজ। আফরিন সবার কথা শুনে দৌড়ে সবাইকে সাইড করে নিচে নামছে এক হাতে ড্রেস ধরা আরেক হাত দিয়ে নিজের চোখের পানি মুছছে। না আদিত্যকে ছাড়া তার চলবে না। মানুষটাকে যে সেও খুব ভালোবাসে।
অপর দিকে আদিত্য গার্ডেনে চলে এসেছে, এখানে আর থাকবে না সোজা বাইক নিয়ে চলে যাবে তখনই আফরিন পিছন থেকে আদিত্য বলে ডাকে। না চাইতে আদিত্য পিছু ফিরে তাকায়। আর আফরিন গিয়ে জড়িয়ে ধরে আদিত্যকে। আর বলে
” আই এম সরি আমি সরি। আই লাভ ইউ ফালতু। আদিত্য যেন নিজের কানে বিশ্বাস করতে পারছে না। আদিত্যও আফরিনকে জড়িয়ে ধরে। উপর থেকে আহান এইসব দেখে উল্লাসে চিৎকার করে উঠে। আফরিন আদিত্যর কানে কানে বলে
” আজ আপনার সাথে সম্পূর্ণ ঢাকার শহর ঘুরবো, অনেক দিন রাতের শহর দেখা হয়নি। আদিত্য আফরিনের কপালে কিস দেয় আর বলে
” চলো। সবার থেকে বিদায় নিয়ে আফরিন আর আদিত্য পা বাড়ায় নিজেদের নতুন জীবনের জন্য। কিছু দূর যেতেই সামনে পরে কাজী অফিস আদিত্য বলে
” আফরিন চলো বিয়ে করে ফেলি। আফরিন আদিত্যর কাঁধে হালকা করে মেরে বলে
” এইভাবে আমি বিয়ে করবো না। আমাদের বিয়ে হবে ধুমধাম করে। চলুনতো।আদিত্য বাইক ইস্টর্ট করে। বেশ ভালো লাগছে রাতের এই ব্যস্ত শহরটা আফরিনের বাজে স্বভাব আফরিন নিজের দুই হাত মেলে দেয়। আদিত্য পিছনে তাকিয়ে বলে আফরিন ধরে বসো। আর তখনই একটা ট্রাক এসে সব শেষ করে দেয়। দুইজন বাইক থেকে ছিটকে পরে গিয়েছে । আফরিনের চোখ বুজে আসছে চারদিকে অন্ধকার জানান দিচ্ছে আদিত্যর সাথে হয়তো আর স্বপ্ন দেখা হবে না তার। শেষ বারের মতো খুব করে দেখতে ইচ্ছে করছে সেই মায়াভরা মুখটাকে। খুব ইচ্ছে করছে মুখটা দেখার। আদিত্যর মাথা থেকে রক্ত বের রাস্তার সাথে চলে এসেছে। আফরিন খুব কষ্ট করে উঠে বসে চোখের সামনে সব অন্ধকার আফরিনও মাথায় বেশ গুরুতর ভাবে ব্যাথা পেয়েছে। আফরিন কোনো রকম ভাবে আদিত্য কাছে গিয়ে হাতটা ধরে কিন্তু তার আগেই তার চোখ বুজে আসে। এম্বুলেন্স আর লোক দিয়ে ঘিরে আছে আফরিনদের।
____________
আদিত্যর ফোন থেকে পুলিশ আহানকে কল দেয় কারণ লাস্ট কল তারই ছিল। এক্সিডেন্টের কথা শুনে সবাই অনুষ্ঠান ছেড়ে সেখানে চলে আসে। অহনাকে রেখে আসা হয় কারণ সে নতুন বউ। অন্যা পুলিশকে বলে
” আমার বোন, হ্যা আমার বোন আফরিন কোথায়?? পুলিশ হাতের ইশারায় দুইটা সাদা কাপড়ে মুরানো লাশ দেখায়। অন্যা ধীর পায়ে এগিয়ে যায়। আর চাদর সরাতেই দেখে আফরিন। আর চিৎকার করে কেঁদে উঠে। কৌশাল অন্যাকে সামলায়।কৌশালের চোখেও পানি। আহান পাশের লাশটা থেকে কাপড় সরিয়ে দুই পা পিছিয়ে যায়। আদিত্যকে এভাবে দেখবে কোনো দিন ভাবেনি। আহান আদিত্য কাছে গিয়ে বলে
” এই আদিত্য দেখ ভালো হচ্ছে না, কি শুরু করলি বলতো। আফরিনটাও কেমন করছে তাড়াতাড়ি উঠ। অন্যা তো কান্না করেই যাচ্ছে। ওদের এমন বিচ্ছেদে যেন প্রকৃতির চোখেও জল ঝুম করে শুরু হয় বৃষ্টি। আফরিন আর আদিত্যকে যখন এম্বুলেন্সে তুলা হয় তখনও আফরিন আদিত্যর হাত ধরে আছে কিন্তু এখন যে তাদের আলাদা হতে হবে।
আজ খুব মনে পরছে আদিত্যর বলা সেই কথাটা।
” তুমি ছাড়লেও আমি ছাড়ছি না।
কই আজতো আফরিনই আকড়ে ধরে আছে আদিত্যর হাত। আদিত্য তো আফরিনের আগেই আফরিনকে ছেড়ে চলে গিয়েছে। দুজনের মনের মিল হয়েও দুজন আজ আলাদা। স্নপ্নগুলো তাদের স্বপ্নই রয়ে গেলো। আফরিনের বলা কথাটাই শেষে সঠিক হয়েগলো।
নিয়ন আলোয় কাছে আসা, আপনার সাথে করা ঝগড়া সব কিছু না হয় খুব সুন্দর স্মৃতি হয়ে থেকে যাক এই পৃথিবীর বুকে।
অসমাপ্তের গল্পকাথায় আজ আবার যোগ হলো আরো একটি গল্পকথা। আদিত্য আবেগে ভরা ” #তুই_তারারে_ভিনদেশী ” আজ সত্যি ঐ দূর আকাশের ভিনদেশী তারা।
অন্যার কান্না টা যেন সবার কানে বিদছে। খবর অহনার কান অব্ধি চলে গিয়েছে। অহনা এই ধাক্কা সামলাতে না পেরে সেন্স হারিয়েছে। দাফনের কাজ সম্পূর্ণ করা হয়েছে। কৌশাল আদিত্য কবরের সামনে বসে বলে
” সালা হারামি, তুই এভাবে চলে গেলি। কাজটা ঠিক করলি না। আয় না একবার ফিরে। কত কিছু তো বাকি। একবার জড়িয়ে ধরে বলে যা এই সব মিথ্যা।
————সমাপ্ত————
কিছু গল্প অসমাপ্তই ভালো মানায়। আমি আগে থেকেই ভেবে রেখেছিলাম শেষ পর্ব কেমন হবে। তাই নিজের মতোই শেষ করলাম। আসলে এমন অনেক আদিত্য আফরিনের গল্প আছে, যারা একহয়েও হতে পারিনি ভাগ্য তাদের হতে দেয়নি। এতো দিন গল্পটা পড়ার জন্য ধন্যবাদ আজ সাইলেন্ট রিডার্সরাও সারা দাও৷ গল্পটা লিখতে গিয়ে আমি নিজে কেঁদে দিয়েছি🙂 তো কেউ বকিয় না। ভুলত্রুটি ক্ষমার চোখে রিচেক হয়নি। কারণ এটা আমার পক্ষে ২য় বার পড়া সম্ভব না। আল্লাহ হাফেজ