–সাদা চাঁদের ছোপ ছোপ রক্তের দাগ লেগে আছে।রক্তাক্ত অবস্থায় বিছানার মধ্যে গুটিশুটি মেরে পড়ে আছে অধরা।ভয়ে গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে তার।মুখ দিয়ে কোন শব্দ বেড় করতে পারছেনা।রীতিমতো ঘামছে সে এবং মুখে স্পষ্ট ফুটে উঠেছে চিন্তার ছাপ।অন্ধকার এবং সামান্য আলোর মাঝে তার রক্তাক্ত এবং ক্ষত বিক্ষত শরীরটা ব্যাথায় কুকঁড়ে উঠছে মাঝেমধ্যে।ভয়ে এখনো তার ঠোঁট জোড়া কাঁপছে।সামান্য ভুলের জন্য আজকে তার জীবন পুরো উল্টো পাল্টা হয়ে গেছে।রুদ্র কে ফাঁসাতে গিয়ে আজকে নিজে কোন জ্বালে আটকে গেলো সে বুঝতে পারছেনা।রাগ ক্ষোভ থেকে রুদ্রের বিরুদ্ধে মিথ্যা অপবাদ দিয়েছিল সে।কে জানতো তার সামান্য মিথ্যা তার জীবনে বাধা হয়ে দাঁড়িয়ে যাবে।সে কথা ভেবে নীরবে চোখের অশ্রু ফেলছে অধরা।অধরা উঠে বসার সামান্য শক্তিটুকু পাচ্ছেনা।কোন মানুষ কিভাবে কোন মানুষ কে এভাবে আঘাত করতে পারে অজানা ছিলো তার।কিন্তু মুহূর্তের মাঝে রুদ্রের দেয়া প্রত্যেকটা আঘাত তাকে বুঝিয়ে দিয়েছে।রুদ্রের মতো মানুষ গুলো সবকিছু পারে।তার এখন ভাবতে ঘেন্না লাগছে ঐ অমানুষ রুদ্র তার স্বামী।যে মানুষটা কে সে সহ্য পর্যন্ত করতে পারেনা।আজকে সে তার এমন অবস্থা করেছে।নিজের উপর নিজের রাগ হচ্ছে তার সেদিন সামান্য ভুলের জন্য আজকে তাকে এতো বড় ভুলের মাশুল দিতে হচ্ছে।হেলাফেলা করে রুদ্র কে বিয়ে করা তার জীবনে সবথেকে বড় ভুল ছিলো।যে মানুষটা তার সদ্য বিবাহিত স্ত্রী কে মেরে এমন অবস্থা করেছে।তার দেয়া প্রত্যেকটা আঘাতের দাগ গুলো স্পষ্ট ফুটে উঠেছে অধরার শরীরে।নিজের এমন অবস্থা দেখে চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে করছে তার।কিন্তু সবকিছু যেন এখন তার বিপরীতে।যে শরীরে কখনো সামান্য ফুলের টোকা পড়েনি।আজকে সে শরীরের এমন অবস্থা করেছে রুদ্র ভাবা যায়?আসলে সত্যি ভাবা যায়না।মানুষের জীবন বড় অদ্ভুত।কি থেকে কি হয়ে যায়।সে কথা কারো ভাবনার বাহিরে থাকে।
–অধরার এমন অবস্থা দেখে,দূরে দাঁড়িয়ে মিটমিট করে হেসে যাচ্ছে রুদ্র।আজকে এতো দিন পড়ে নিজের মনের রাগ ক্ষোভ গুলো মেটালো অধরার উপরে।নিজেকে তার এখন অনেক হালকা লাগছে।এতো দিন ধরে যে আগুনে জ্বলে পুড়ে শেষ হচ্ছিল সে।আজকে যেন সবকিছু থেকে মুক্তি পেলো।কিন্তু সবকিছু কি এতো সহজে মিটে যাবে হিসাবে তো অনেক বাকী।রুদ্র ওয়াইনের বোতলে চুমুক দিয়ে সিগারেট এর ধোঁয়া ছেড়ে অধরার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে দ্রুত বারান্দায় চলে গেলো।মনের অজান্তে অধরার এমন অবস্থা দেখে মায়া হয় তার।কিন্তু এমন ছলনাময়ী তো নাগিনী থেকে বিষাক্ত হয়।তারজন্য মায়া মানে মিথ্যা অনুভূতি ছাড়া কিছুনা।তার সামান্য মিথ্যা কথা রুদ্রের জীবনে সবকিছু এলোমেলো করে দিয়েছে।রুদ্রের কাছে থেকে কেড়ে নিয়েছিল তার ফ্যামিলি এবং ভালোবাসার মানুষ।রুদ্র তারজন্য ভেতরে ভেতরে শেষ হয়ে যাচ্ছিলো।সবকিছু ছেড়ে দূর দেশে পাড়ি জমিয়েছিল।কিন্তু যখন সে কোন ফ্রেন্ড দ্বারা জানতে পারে রুদ্রের জীবন নষ্ট করে দিয়ে অধরা আবার দ্বিতীয় বিয়ের পীড়িতে বসতে যাচ্ছে।তখন সে সোজা দেশে ফিরে এসে সবকিছু এলোমেলো করে ফেলে।
______________________
–রুদ্র বারান্দায় দাঁড়িয়ে স্তব্ধ আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে এবং অতীত নিয়ে ভেবে যাচ্ছে।দু’বছর আগের কথা রুদ্র পড়াশোনার জন্য বিদেশে গিয়েছিল।সেবার ছুটিতে বাড়িতে এসেছিল সে।তখন তার বাড়িতে আসা সবথেকে বড় ভুল ছিল।তার ভুলের মাশুল এখনো তাকে দিতে হচ্ছে।অধরা রুদ্রের কাজিন কিন্তু রুদ্রের সাথে তার সম্পর্ক খুব খারাপ ছিলো।রুদ্র অধরা কে সহ্য করতে পারেনা এবং অধরা রুদ্র কে সহ্য করতে পারেনা।ছোট খাটো বিষয় নিয়ে সব সময় তাদের কথা কাটাকাটি হতো।অধরা ছোট বলে সে ছিল খুব আদরের।তারজন্য রুদ্র কে কম কথা শুনতে হয়নি।সেদিন ছিল রুদ্রের জন্মদিন।কিন্তু মূহুর্তের মাঝে অধরার সামান্য মিথ্যা কথা রুদ্রের জীবনে দাগ লাগিয়ে দিয়ে যায়।রুদ্র রুমের মধ্যে রেডি হচ্ছিল তখন হুট করে অধরা রুদ্রের রুমে গিয়ে দরজা লাগিয়ে দিয়ে মিথ্যা ড্রামা করে।রুদ্রের চরিত্রে দাগ লাগিয়ে দিয়েছিল।কারণ সেদিন রুদ্রের জন্য তার সদ্য প্রেমিকের সাথে ব্রেকআপ হয়েছিল অধরার।রাগে এসব করতে গিয়ে অধরা রুদ্রের সাথে আটকে যায়।সেদিন রুদ্রের সাথে অধরার বিয়ে হয়ে যায়।রুদ্র অনেক আকুতি মিনতি করে বলেছিল।অধরা কে সব সত্যি বলে দেয়ার জন্য কিন্তু সেদিন অধরা নীরব ছিলো রুদ্র কে শাস্তি দেয়ার জন্য।রুদ্রের সাথে অধরার বিয়ের পড়ে রুদ্র বিয়েটা অস্বীকার করে দূরে দেশে চলে এসেছিল।
________________________
–দু’বছর পড়ে।বর্তমান,
আজকে অধরার বিয়ে ছিল।হ্যাঁ বিয়ে!বিয়ে নিয়ে প্রতিটি মেয়ের স্বপ্ন থাকে।আজকে সেরকম স্বপ্ন অধরার ছিলো।কিন্তু কে জানতো তার স্বপ্ন গুলো এভাবে ভেঙে চুরে জীবন কোন অন্য অধ্যায়ে মোড় নিবে।তার জীবনে ছেয়ে যাবে কোন কালো ছায়া।যে ছায়া তাকে আষ্টেপৃষ্টে নিজের জালে জড়িয়ে নিবে।যেখান থেকে তার কখনো মুক্তি মিলবে না।এসব অধরার ভাবনার বাহিরে ছিলো।অধরা অর্নাস প্রথম বর্ষের ছাত্রী এবং বাবা মায়ের আদরের রাজকন্যা।ফ্যামিলির মাধ্যমে ধুমধাম করে পারিবারিক ভাবে তার এবং আহানের বিয়ে হচ্ছিলো।সে নববধূ সাজে বসে ছিল বরের অপক্ষায় এবং মনের মধ্যে সাজিয়েছিল হাজারো স্বপ্নের রঙ।কিন্তু মূহুর্তের মাঝে সবকিছু কেমন ধূসর হয়ে গেলো।কোন চেনাজানা ব্যাক্তির আগমন ঘটলো সেখানে এবং সে এসে এমন কিছু বলবে সবার ভাবনার বাহিরে ছিলো।তার কথা শুনে পুরো বিয়ে বাড়ি স্তব্ধ হয়ে যায়।কোন ব্যাক্তি হিরোর মতো এন্ট্রি নিয়ে বলে।
–“কোন বিবাহিত মেয়ের কি করে আবার বিয়ে হয়?
যে মেয়ে বিবাহিত যার স্বামী এখনো জীবিত।যার সাথে এখনো তার সম্পর্ক আছে।সে কি করে তাকে রেখে দ্বিতীয় বিয়ের পীড়িতে বসে!সবকিছু কি তাহলে মিথ্যা ছিলো।মিথ্যা ছিলো আমাদের বিয়ে এবং আমাদের সম্পর্ক।এসবের মানে কি অধরা?তোমার সাহস কি করে হয় রুদ্র কে রেখে দ্বিতীয় বিয়ের পীড়িতে বসা?তোমার কাছে সবকিছু পুতুল খেলা।বিয়েটা কে অস্বীকার করে এখন অন্য কারো জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলার চিন্তা করছো।”
–অধরার বুকের ভেতর কেমন কেঁপে উঠে।চেনাজানা কোন কন্ঠ শুনে।যে কন্ঠ শুনে ভয়ে কুঁকড়ে যাচ্ছে সে।তার ভাবনার বাহিরে ছিলো মানুষটা কখনো ফিরে আসবে তার জীবনে।যে মানুষটা তাকে অস্বীকার করে দীর্ঘ দু’বছর আগে চলে গিয়েছিল দূর দেশে।যে কখনো বিয়েটা স্বীকার করেনি তাহলে আজকে কেন ফিরে এলো তার জীবনে।বিয়েটাতে যেমন রুদ্রের মত ছিলোনা।তেমন অধরার।রুদ্র যখন সবকিছু অস্বীকার করে তাকে ফেলে রেখে চলে গিয়েছিল খুব খুশি হয়েছিল অধরা।যে অদ্ভুত লোক কে সে কখনো স্বামী হিসেবে স্বীকার করেনা।শুধু ফ্যামিলির দ্বায়িত্ব বোধ এড়াতে রুদ্র কে বিয়ে করেছিল।যখন দেখলো রুদ্র বিয়েটা অস্বীকার করে দূর দেশে পারি জমিয়েছে।তখন সময়ের সাথে সবকিছু ভুলে যায় সে।ভুলে যায় ঐ রুদ্রের সাথে তার কোন রিলেশন ছিলো।রুদ্রের এবং অধরার ফ্যামিলি ডির্বোস এর কথা তুলতে।রুদ্রের এড়িয়ে যেতো।সে বলতো।
–“যেখানে সে বিয়াটা কে স্বীকার করেনা সেখানে এমন কথা কেন আসে?”
–সময়ের সাথে সবকিছু ভুলে স্বাভাবিক হয়ে গিয়েছিল কিন্তু আজকে রুদ্রের এমন কথা শুনে।
পুরো বিয়ে বাড়ি স্তব্ধ হয়ে যায়।মূহুর্তের মাঝখানে বিয়ে বাড়িতে গোলমাল বেজে যায়।নববধূ কি নিয়ে নানা কথা হয়।তখন রুদ্র উত্তেজিত হয়ে করা গলায় বলে।
–“এসব কি শুরু করেছেন আপনার?সে এখনো আমার বিবাহিত স্ত্রী আমার এবং তার ফ্যামিলি সাক্ষী রেখে দু’বছর আগে আমাদের বিয়ে হয়েছিল।এখানে এসে এসব দেখে স্তব্ধ হয়ে গেলাম বুঝতে পারলাম না।আমার কি বলা উচিৎ শেষ পর্যন্ত নিজের ফ্যামিলি আমার সাথে ধোকা করলো।”
–রুদ্র কে এমন অবস্থায় দেখে এবং তার পুরো কথা শুনে তার পুরো ফ্যামিলি স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল।তখন রুদ্রের বাবা রায়মান সাহেব বলে।
–“রুদ্র ছিনিমিনি অধরা খেলছে না।
তুমি খেলে যাচ্ছো অধরার জীবন নিয়ে।ভুলে যাচ্ছো দীর্ঘ দু’বছর আগে তুমি কি করেছিল।তারপর তোমাকে ক্ষমা করে দিয়ে যে মেয়েটি সবকিছু মেনে নিয়েছিল তাকে রেখে তুমি চলে গিয়েছিল।আমাদের সাথে সেদিন তোমার সব সম্পর্ক শেষ হয়ে গিয়েছিল।এতো দিন পড়ে কি মনে করে ফিরে এসেছো তুমি।তোমার মতো রুদ্র অধরা কে ডির্সাব করেনা।আহান খুব ভালো ছেলে আমার বন্ধুর ছেলে অধরা কে এমন মানুষ ডির্সাব করে।তোমার মতো ভিতু মানুষ না।যে সম্পর্কের মানে বুঝতে পারেনা।পালিয়ে বেড়ায় সবকিছু থেকে।”
–“আব্বু তুমি আমাকে ভুল বুঝতে পারছো।সেদিন এমন কিছু হবে তারজন্য প্রস্তুত ছিলাম না আমি।ভুল আমার ছিল সে ভুলের শাস্থি পাচ্ছি আমি।আমার ভুল গুলো বুঝতে পেরে তোমাদের কাছে ফিরে এসেছি।শাস্থি দেবার হলে আমাকে দিবে কিন্তু আমার স্ত্রী অধরার সাথে অন্যায় কেন করছো?আমার অধরা কে আবার বিয়ে করে সবার সামনে স্ত্রীর মর্যাদা দিবে রুদ্র।”
–অভ্রের চোখ গুলো লাল হয়ে যায়।সে উত্তেজিত হয়ে এসে রুদ্রের কলার ধরে বলে।
–“অনেক হয়েছে রুদ্র আমার বোন কে নিয়ে অনেক খেলেছো।এখন কোন ড্রামা করলে খুব খারাপ হবে কিন্তু বলে দিচ্ছি।আমার বোন অনেক কষ্টে নিজেকে মুভ অন করেছে।তুমি কেন ফিরে এসেছো তার জীবনে।কিসের জন্য?”
–রুদ্র অভ্রের মুখোমুখি হয়ে তার চোখে চোখ রেখে বলে।
–“সে শুধু তোমার বোন না অভ্র।সে আমার বিবাহিত স্ত্রী তুমি ভুলে যাচ্ছো।”
–অভ্র রেগেমেগে আগুন হয়ে রুদ্র কে গুসি মারতে।রুদ্র ফ্লোরে পড়ে যায় এবং মুখ দিয়ে রক্ত ঝড়ছে।তখন আয়মান সাহেব রুদ্র কে তুলে উত্তেজিত হয়ে বলে।
–“কি শুরু করেছে অভ্র।রুদ্র ঠিক বলছে।এসব কিছু করলে কি বিয়েটা মিথ্যা হয়ে যাবে।আলেয়া শোন রুদ্রের সব কথা সত্যি আমাদের ভুল হয়েছিল।তোমাদেরকে সবকিছু খুলে বলা দরকার ছিলো আমাদের ক্ষমা করো।”
–রুদ্র তখন আয়মান সাহেবে কে থামিয়ে দিয়ে।ধপাস করে ফ্লোরে হাটু গেরে বসে বলে।
–“ছোট্ট আব্বু তুমি আমার জন্য কেন ছোট হচ্ছো। ভুল আমার হয়েছে।আলেয়া আন্টি আমাদের ক্ষমা করেন।আমার ভুলের শাস্থি আমার স্ত্রী অধরা এবং আমার পুরো ফ্যামিলি কে দিবেন না।”
–রুদ্রের অবস্থা দেখে আলেয়ার মন নরম হয়ে যায়।সে রুদ্র কে বুকে জড়িয়ে বলে।
–“ভাইজান বিয়ে শুরু করেন।রুদ্রের সাথে অধরার বিয়ে সকলে সাক্ষী থাকবে বিয়েতে।”
–আহান সবকিছু দেখে বাস্তবতা কে মেনে নিলো।কিন্তু মনের ভিতর অজানা অনুভূতি হচ্ছে।কি করবে এখন অধরা তো অন্য কারো স্ত্রী।এসব ভেবে দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে।
–পুরো ফ্যামিলি এখন চিন্তা মুক্ত হলো।কিন্তু অধরা তার স্তব্ধতা সে নিজেকে এমন অবস্থায় নিয়ে এসেছে। মুখ ফুটে কিছু বলতে পারলো না এখন।রুদ্র মুখে বাকা হাসির রেখা টেনে ফিসফিস করে বললো।
–“অধরা রুদ্র ইজ ব্যাক তোমার জীবন নরক বানিয়ে দেবার জন্য।তুমি আমার জীবন নিয়ে অনেক খেলেছো আমাকে অনেক পুড়িয়েছো।সব হিসাব আজকে থেকে তুলবো রেডি থেকো।”
#তোমাতে_বিভোর
#Season_2
#পর্ব_১
#Sapna_Farin
#চলবে…
(ফিরে আসলাম নতুন স্টোরি নিয়ে।আশা করি সবার ভালো লাগবে।আপনাদের রেসপন্স এর উপরে ভিত্তি করে পরের পর্ব দেয়া হবে।সিজন ১ এবং সিজন ২ সম্পূর্ন অন্যরকম।যারা ১ পড়েননি তারা সিজন ২ পড়তে পাড়েন কোন সম্যসা নেয়।হ্যাপি রিডিং)