তোমাতে_বিভোর২ পর্ব ৮

#তোমাতে_বিভোর
#Season_2
#পর্ব_৮
#Sapna_Farin

–আহান ভাবনার মাঝখানে ডুবে যায়।তার মনের মধ্যে হাজারো প্রশ্ন গুলো উঁকি দিচ্ছে।কিন্তু সে প্রশ্নের উত্তর গুলো তার অজানা।সে বুঝতে পারছেনা কোথায় থেকে কি হচ্ছে।সবকিছু তার চোখের সামনে।কিন্তু সবকিছু কেমন অস্পর্শ।তখন তার মনে অজানা প্রশ্ন গুলো ধলা পাকিয়ে যেতে।সে স্থির থাকতে পারলো না।সে বিছানা থেকে হকচকিয়ে উঠে বসে বলে।

–“আমার সবকিছু কেমন অস্বাভাবিক লাগছে।বুঝতে পারছিনা ঐ অচেনা মেয়েটি এবং ছেলেটির রুদ্রের ফ্যামিলির সাথে কি সম্পর্ক?মেয়েটি যখন চলে যাচ্ছিলো তখন অশ্রু ভেজা চোখে রুদ্রের দিকে ফিরে তাকিয়ে ছিল এবং রুদ্র তার দিকে ফেলফেল চোখে তাকিয়ে ছিলো।তখন আমার কেমন লাগছিলো কিন্তু অধরার ভাবনার মাঝখানে বিভোর হয়ে।সবকিছু ভুলে গিয়েছিলাম।তাহলে কি আমার সন্দেহ ঠিক দিকে যাচ্ছে।রুদ্র এবং অচেনা মেয়েটির কোন সম্পর্ক আছে।তাদের চোখের ভাষা আমাকে সেদিকে ইশারা করছে।তাহলে অবশ্যই আছে।এখন আমাকে সবকিছু জানতে হবে।এখানে অধরার জীবন জড়িয়ে আছে।এভাবে বসে থাকলে চলবে না।কিন্তু মেয়েটি এবং ছেলেটির খোঁজ কিভাবে পাবো।কিভাবে সবকিছু জানবো?যে রুদ্রের সাথে কি সম্পর্ক।আমাকে কারো হেল্প নিতে হবে।আমাকে কে হেল্প করবে।কে?

–আহানের প্রতিধ্বনি দেয়ালে ভেসে তার কানে আসছে।তখন সে উত্তেজিত হয়ে বিছানা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে।তার কাছে রাখা সঁপিস ফ্লোরে ফেলে দিতে।তার ভাবনার মাঝখানে অধরার চেহারা ভেসে উঠে।তখন তার মুখে বাকা হাসির রেখা ফুটে উঠে।সে ফিসফিস করে বলে।

–“ওহ্ অধরা যে আমাকে হেল্প করতে পারবে।আমাকে তার হেল্প নিতে হবে।কিন্তু অধরা আমাকে হেল্প করবে?হ্যাঁ অবশ্যই করবে।তুমি নিজেকে যতো আমার কাছে থেকে আড়াল করতে চেষ্টা করোনা কেন অধরা?কিন্তু আহান তোমার মনের কথা খুব ভালো করে বুঝতে পারে।তুমি রুদ্রের সাথে কেমন আছো সে কথা আমাকে বলতে হবেনা।রুদ্র আমাদের জীবনে এসে আমাদের পুরো জীবন পাল্টে দিয়েছে।অধরা তুমি সামান্য অপেক্ষা করো।আহান সবকিছু ঠিক করে দিবে।রুদ্রের মুখোশের আড়ালের চেহারা সবার সামনে নিয়ে এসে।তোমার জীবন থেকে রুদ্র কে তাড়িয়ে দিয়ে।আমার জায়গা হবে তোমার জীবনে।আমার এবং তোমার মাঝখান থেকে রুদ্র নামক তৃতীয় ব্যাক্তি চলে যাবে।ভাবতে আমার কেমন ভালো লাগছে।”

–তার মনের মধ্যে অধরা কি নিয়ে আশার আলো জ্বলে উঠে।সে অধরা কে নিয়ে কল্পনা জল্পনা জুড়ে,স্বপ্ন গুলো সাজাচ্ছে মনের মধ্যে।সে স্বপ্নের মাঝখানে আহান বিভোর হয়ে যাচ্ছে।তার মুখে স্পষ্ট ফুটে উঠেছে উজ্জ্বল হাসির রেখা।
______________________

–আভা বাসায় ফিরে চোখের অশ্রু মুছতে মুছতে,ছুটে নিজের রুমে চলে যাচ্ছিলো।আরিশ তার পিছু ছুটে যাচ্ছে এবং তাকে ডেকে যাচ্ছে।কিন্তু আভার সেদিকে কোন ভ্রুক্ষেপ হচ্ছেনা।সে তাড়াহুড়ো করে সিড়ি বেয়ে উঠতে গিয়ে স্লিপ কেটে পড়ে যাচ্ছিলো।তখন আরিশ তাকে ধরে ফেলে তার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে উত্তেজিত হয়ে বলে।

–“অনেক হয়েছে আভা এখন বেশি বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে?ঐ প্রতারক এবং বিশ্বাসঘাতক রুদ্রের জন্য নিজেকে কেন কষ্ট দিচ্ছো।নিজের মধ্যে কেন দুমড়েমুচড়ে শেষ হচ্ছো তুমি।এখানে তোমার দোষ কোথায়।সে তোমার যোগ্য না,সে তোমাকে ডির্সাব করেনা।তারজন্য নিজের কি অবস্থা করেছো।ভালো করে নিজের দিকে তাকিয়ে দেখো।যে আভা সব সময় হাসিখুশি থাকে সকল কে মাতিয়ে রাখে।সে আভার আজকে এমন অবস্থা ঐ অমানুষ রুদ্রের জন্য।আমার ভেবে ভয় হচ্ছে!যে তোমার ভালোবাসা তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে নিজের বিবাহিত স্ত্রী কে নিয়ে দিব্যি ভালো আছে।তারজন্য তুমি নিজেকে শেষ করে দিচ্ছো।”

–আভা ডুকরে কেঁদে উঠে,দু’হাতে নিজের কান চেপে ধরে চিৎকার করে বলে।

–“আরিশ ভাইয়া রুদ্র আমার অস্বিস্তে মিশে আছে।আভা রুদ্র কে ছাড়া নিজেকে কল্পনা করতে পারেনা।আমার জীবনে রুদ্রের জায়গা অন্য কোন মানুষ কখনো নিতে পারবেনা।আভা রুদ্র কে ভালোবাসে এবং সারাজীবন ভালোবেসে যাবে।তোমার সাহস কি করে হয় রুদ্রের বিরুদ্ধে কথা বলার?তখন রুদ্রের বাসায় অনেক আবেগী হয়ে।তোমাকে তার বিরুদ্ধে কি বললাম তারজন্য তুমি সেখানে দাঁড়িয়ে আছো।
আমাদের জীবনে কথা বলার জন্য তুমি কে?কেন রুদ্রের বিরুদ্ধে আমাকে যেতে বলছো তুমি?”

–আরিশ স্তব্ধ হয়ে যায়।যে ছেলেটা আভার চোখের অশ্রুর জন্য দ্বায়ী।তারজন্য আভা এভাবে তাকে কথা শুনাবে তারজন্য আরিশ প্রস্তুত ছিলো।আরিশ নিজেকে সামলে নিয়ে ভ্রুকুচকে আভার দিকে তাকিয়ে বলে অস্ফুটস্বরে বলে।

–“আভা তুমি অন্ধ হয়ে গেছো রুদ্রের মিথ্যা ভালোবাসায়।তারজন্য চোখের সামনে সবকিছু তুমি স্বীকার করছো না।তুমি বুঝতে পারছো না রুদ্র বিবাহিত।তুমি তারজন্য নিজের ভেতর জ্বলে পুড়ে শেষ হচ্ছো কেন?তোমার এমন অবস্থা দেখেলে খালুজান কে কি উত্তর দিবে আরিশ।আমাদের কে ভরসা করে তোমাকে আমাদের কাছে রেখে এসেছিল।কিন্তু আমরা তোমাকে আগলে রাখতে পারলাম ঐ রুদ্রের কাছে থেকে।সে তোমার জীবনে ঝড়ের মতো এসে তোমার জীবন কেমন এলোমেলো করে দিলো।”

–আভা ঝটকা মেড়ে নিজেকে আরিশের কাছে থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে।তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে বলে।

–“আমার এতো কিছু বুঝতে হবেনা আরিশ ভাইয়া।তুমি তোমার মতো থাকো।আমার জীবনে কোন অধিকার দেখাতে আসবেনা তুমি।আমাকে নিয়ে তোমার আদ্যিখেতা বন্ধ করো।কেন তুমি আমার পিছনে দেশে চলে এসেছো কেন তুমি এসব মিথ্যা ড্রামা করো আমার সাথে?”

–“তুমি আমাদের কাছের মানুষ।তোমার ভালো খারাপ দেখা আমাদের দ্বায়িত্ব।রুদ্রের ভালোবাসায় এতো বিভোর হয়ে গেছো তুমি।যে কাছের এবং দূরের মানুষের মধ্যে ব্যবধান করতে পারছো না।”

–“আমাকে জ্ঞান দেয়া বন্ধ করো।আমার এবং রুদ্রের ভালোবাসা নিয়ে কৈফত দিতে বাধ্য না আমি।যে নিজের ভালোবাসা সামলে রাখতে পারেনা সে অন্যের ভালোবাসা নিয়ে জ্ঞান দিতে এসেছে।আসলে তোমার সহ্য হয় না আভা রুদ্র কে এতো ভালোবাসে।”

–আভা ছুটে নিজের রুমে চলে যায়।আরিশ দাঁড়িয়ে আছে তার কানে আভার বলা শেষ কথা গুলো বাড়ে বাড়ে বেজে যাচ্ছে।তখন সে ছলছল নয়নে ফিসফিস করে বলে।

–“ভালোবাসা সত্যি বড় অদ্ভুত।যাকে ভালোবেসে যার ভাবনার মাঝখানে তুমি বিভোর হবে সে বিভোর হবে অন্যতে।তারা খব ভাগ্যবতী যারা ভালোবাসার মানুষ কে সারাজীবনের জন্য আগলে রাখতে পারে।”

–আরিশ দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে দ্রুত গেস্ট রুমের দিকে যাচ্ছে।তখন করিডোর দিয়ে যাবার সময় আভার রুমের সামনে দাঁড়িয়ে যায়।সে জানালা দিয়ে আভার রুমের মধ্যে উঁকি দিতে।তার বুকের ভেতর কেঁপে উঠে।আভা বিছানায় উবু হয়ে শুয়ে নীরবে চোখের অশ্রু ফেলছে।আরিশ তার এমন অবস্থা দেখে।দরজায় দাঁড়িয়ে নীরবে চোখের অশ্রু ফেলে ফিসফিস করে বলে।

–“আরিশ নিজের ভালোবাসা কে নিজের কাছে আটকে রাখতে পারেনি।কিন্তু সে চেষ্টা করবে আভা তোমার ভালোবাসা কে তোমার কাছে ফিরিয়ে দেবার জন্য।”

–আরিশ নিজের চোখের অশ্রু মুছে।বাড়িতে থেকে বেড়িয়ে যায়।যাবার সময় বলে যায়।

–“যে কোন মুল্যে আমার রুদ্র কে লাগবে।রুদ্র অপেক্ষা করো।আরিশ আসছে।”
___________________________

–কিছুক্ষণ পড়ে।অধরা ডুকরে কেঁদে উঠে বলে।

–“তুমি নিজের আসল রূপ দেখিয়ে দিলে তাহলে রুদ্র ভাইয়া।তোমার ভালোবাসা মিথ্যা ছিলো।অন্যদিকে আভা কে ভালোবেসে।এখানে আমার সাথে ছিঃ।তোমাকে দেখে আমার ভালোবাসা থেকে বিশ্বাস চলে গেলো।আমার ভাবনা গুলো সত্যি ছিলো।তুমি আসলে খুব খারাপ এবং জঘন্য মানুষ।অধরা তোমাকে ঘেন্না করে।খুব বেশি ঘেন্না করে।”

–তখন রুদ্র অধরা কে ছেড়ে দিতে।অধরা বিছানার মধ্যে উবু হয়ে শুয়ে ফুপিয়ে কেঁদে উঠে।রুদ্র উঠে সোজা ওয়াশ রুমে চলে গিয়ে সাজোরে দরাজা লাগিয়ে দিয়ে।ডুকরে কেঁদে উঠে।

–কিছুক্ষণ পড়ে রুদ্র হট শাওয়ার নিয়ে বেড়িয়ে এসে।ভেজা টাওয়াল অধরার মুখে ছুড়ে মেরে।মুখে বাকা হাসির রেখে টেনে বলে।

–“অধরা আমাদের সম্পর্ক তোমার স্বীকার করতে হবেনা।আজকে থেকে তুমি এবং আমি পরিপূর্ণ স্বামী স্ত্রী হয়ে গেলাম।এখন আহান কে তোমার জীবন থেকে মুছে ফেলে।আমাদের ফ্যামিলি প্লেনিং করা শুরু করে ফেলো কেমন সোনাবৌ।”

–অধরা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে।টাওয়ালটা ফ্লোরে ছুড়ে ফেলে দিয়ে।রুদ্রের দিকে ফেলফেল করে তাকিয়ে বলে।

–“রুদ্র ভাইয়া তোমার মতো অমানুষ কে অধরা যেখানে তার স্বামী হিসেবে স্বীকার করেনা।সেখানে ফ্যামিলি প্ল্যানিং করবে ভাবলে কি করে?”

–রুদ্র মুচকি হেসে অধরার কপালে আলতো করে চুম্মো খেয়ে বলে।

–“সময় হলে সবকিছু হয়ে যাবে।তোমাকে এতো চিন্তা করতে হবেনা বৌ।”

–অধরা রেগেমেগে আগুন হয়ে।সোজা ওয়াশ রুমে চলে গিয়ে সাজোরে দরাজা লাগিয়ে দিতে।রুদ্র অট্টহাসি দিয়ে রেডি হয়ে রুম থেকে বেড়িয়ে যায়।

–অধরা ঝর্নার নিচে বসে,ঝর্না ছেড়ে দিয়ে ডুকরে কেঁদে উঠে বলে।

–“কেন রুদ্র কেন?তুমি আমার সাথে এমন কেন করলে।সবকিছু মুহূর্তে কেন শেষ করে দিলে।তুমি খুব খারাপ এসব করে তুমি আমার শরীর স্পর্শ করতে পেরেছো।কিন্তু আমার মন কখনো স্পর্শ করতে পারবে না।”

–কিছুক্ষণ পড়ে অধরা শাওয়ার নিয়ে বেড়িয়ে এসে।ড্রেসিং টেবিলের সামনে বসতে।

#চলবে…

(ভুল ক্রুটি হলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন এবং গঠন মূলক মন্তব্য করবেন।আমি সামান্য অসুস্থ প্রচুর ঠান্ডা লাগছে।তারপর কিভাবে যে লেখা শেষ করলাম শুধু আমি জানি।১০০০+ শব্দ লেখার পড়ে ভুল করে ডিলিট হয়ে যায়।তারপর আবার শুরু করলাম।বুঝেন তাহলে আমার কি অবস্থা)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here