স্বপ্নের প্রেয়সী ২ পর্ব ৪৫+৪৬

#স্বপ্নের_প্রেয়সী_সিজন_2
#ফাতেমা_তুজ
#part_45

হঠাৎ করে একটা ছেলে এসে ফারহান কে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরলো। ঘটনা টা এতো টাই তাড়াতাড়ি ঘটলো যে ফারাবি তাজ্জব বনে গেল। সব কিছু তার মাথার উপর দিয়ে গেল। হা হয়ে দুজনের দিকে তাকিয়ে রইলো। ফারহান ছেলে টাকে দেখেই হাসা শুরু করে দিয়েছে। মাঝে মাঝে পিঠ চাপরে ও এটা ওটা বলছে। ফারাবির মাথায় কিছু ই ঢুকলো না। ফারাবি শুধু ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে রইলো। এদের মাঝের সম্পর্ক টা ফারাবি কিছুতেই মিলাতে পারছে না।
গভীর ভাবনাতে মত্ত হলো। ভাবনার ছেদ কাটলো ফারহানের ডাকে। ফারাবি সামান্য চমকে উঠলো। ফারহান এক গাল হেসে ফারাবি কে এক হাতে জড়িয়ে ধরলো। ফারাবি সামান্য অপ্রস্তুত বোধ করলো। ছেলেটা মোহনীয় হেসে বলল
_ আরে ভাবি তুমি তো দেখছি ছবির থেকে ও অনেক বেশি সুন্দরী। জি ও ব্রো

ফারহান প্রশস্ত হাসলো। ফারাবি হাঁসফাঁস করতে লাগলো। ফারাবির অস্বস্তি দেখে ফারহান আরেকটু চেপে ধরলো। ফারাবির দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসলো।
_ অস্বস্তি বোধ করার কোনো কারন নেই। এই হলো তোর নাম্বার ওয়ান বজ্জাত দেওর। আমরা একি কলেজ ভারসিটি তে পড়েছি অবশ্য ফাহিম আমার এক ব্যাচ জুনিয়র। বাট আমরা কিন্তু বন্ধুর মতোই চলেছি।

ফারাবি সৌজন্যমূলক হাসি দিলো। ফাহিম কিছু একটা ভেবে বলল
_ বাই দ্যা ওয়ে ভাবি তো অনেক পিচ্ছি তাহলে আমাকে ভাইয়া বলেই ডাকবে তো ?

ফাহিমের কথা তে ফারাবি মৃদু হাসলো। ছেলেটা অত্যন্ত চঞ্চল প্রকৃতির। ফারাবির বেশ ভালো ই লাগলো। মুহূর্তেই ফাহিমের সাথে খাতির জমে গেল। মোট কথায় দুজনে পাতানো ভাই বোন হয়ে গেল। ফারহান দুজনের মাঝে গিয়ে বলল
_ ভাই বোনের মাঝে কি এই অধমের জায়গা হবে ?

দুজনেই এক সাথে বলে উঠলো।
_ নোহহ

তিনজন ই খিল খিল করে হেসে উঠলো। ফাহিম সম্পর্কে ফারহান বেশ ভালো অবগত। ফাহিম কে 100% ভরসা করে ওহ। ফাহিম আর ফারাবি হেসে হেসে কথা বলতে লাগলো। ফারহান তপ্ত শ্বাস ফেলে একজন পার্টনার এর সাথে কথা বলতে লাগলো।

কিছুক্ষণের মাঝেই ডান্সের এনাউন্স করা হলো। ফারহান ফারাবির দিকে যাবে তার আগেই সুনায়না এসে হাজির। সুনায়না ফারহানের বুকে হাত রেখে বলল
_ ফারহান লেটস ইনজয়।

_ নো আম নট ইন্টারেস্টেড।

_ হোয়াট। তুমি ডান্স এ ইন্টারেস্টেড নও। ওহহহ প্লিজ ফারহান।

ফারহান কে কিছু বলতে না দিয়েই সুনায়না ফারহানের হাত ধরে টেনে নিয়ে গেল। এতো মানুষের মাঝে ফারহান সিন ক্রিয়েট করতে চাচ্ছে না।
অনিচ্ছা থাকা সত্যে ও ফারহান তালে তাল মিলালো। সুনায়না ফারহানের গায়ের উপর এমন ভাবে পরছে যেন ওর বয়ফ্রেন্ড। ফারাবি ভ্রু কুঁচকে সে দিকে তাকিয়ে রইলো।
ফারহান কিছু করতে ও পারছে না । সুনায়নার গালে ঠাস ঠাস চড় বসিয়ে দিতে পারলে শান্তি হতো।
লেইম মেয়ে কোথাকার। কোনো মান সম্মান নেই। নিজেকে সো করতে যা তা করে বসে।

ফাহিম জুসের গ্লাস টা ওয়েটারের কাছে দিয়ে ফারাবির দিকে হাত বাড়িয়ে দিলো। ফারাবি প্রথমে না করলো কিন্তু ফাহিম ভ্রু কুঁচকাতেই হাত বাড়িয়ে দিলো। ফাহিম যথেষ্ট দুরুত্ব রেখে ডান্স করছে। শুধু মাত্র ফারাবির হাত ধরেই ডান্স করছে। ডান্স করতে করতে ফারহানের কাছে চলে এসেছে। ফারহানের সাথে চোখাচোখি হতেই ফাহিম ফারহান কে চোখ মারলো। ফারহান মৃদু হেসে সুনায়নার হাত ধরলো। সুনায়না ফারহানের রেসপন্স পেয়ে খুশি তে আত্মহারা হয়ে পরলো।
ফারহানের দিকে হাত বাড়াতেই ফারহান এমন ভাবে ঘুরিয়ে দিলো যে সুনায়না গিয়ে পরলো ফাহিমের কাছে। আর ফাহিম ও ফারাবি কে কৌশলে ফারহানের দিকে ঘুরিয়ে দিলো।
ফারহান হাত দিয়ে হাই ফাইফ করে নিলো। ফারাবি অবাক চোখে তাকিয়ে রইলো। ফারহান মৃদু হেসে ফারাবি কে কাছে টেনে নিলো।
ফারাবি ও তালে তাল মিলিয়ে ডান্স করতে লাগলো।

সুনায়না ফাহিমের কাছে পরতেই ফাহিম ডেভিল স্মাইল দিলো। সুনায়নার কোমর
চেপে ধরে বলল
_ ইউ আর সো হট ডার্লিং। আই নো আমরা সেইম বয়সী বাট লিভিং করতে বয়সের প্রয়োজন হয় না।

সুনায়না রাগি চোখে তাকালো। ফাহিম সুনায়না কে চোখ মারলো। রাগে সুনায়নার ইচ্ছে করছে ফাহিমের মাথা ফাটিয়ে দিতে। ফাহিম সুনায়নার রাগ বুঝতে পেরে আর ও চেপে ধরলো। সুনায়নার রাগি দৃষ্টি দেখে বাঁকা হাসলো ফাহিম।
তারপর ফিস ফিস করে বলল
_ তিন বছর আগে কি করেছিলে মনে আছে বেইবি। ফারহান ভাইয়ার সামনে নেকড হয়ে ছিইই ।
তাহলে আমার সাথে বেড শেয়ার করা আই থিংক

বলেই ফাহিম বাকা হাসলো।
সুনায়না কিছু বলতে যাবে তার আগেই মিউজিক অফ হয়ে গেল। ফাহিম তাচ্ছিল্য হেসে সুনায়না কে এক প্রকার ঝটকা মেরে ফেললো।
সুনায়না আর এক মুহুর্ত ও দেরি করলো না দ্রুত পায়ে স্থান ত্যাগ করলো। ফাহিম পকেটে হাত গুঁজে শিষ বাজাতে বাজাতে ফারহানের কাছে গেল ।
ফারহানের সাথে হাইফ ফাইফ করলো।
_ উচিত শিক্ষা ডান ভাইয়া।

_ বেশি কিছু করিস নি তো ?

ফাহিম লজ্জা হাসি দিলো। ফাহিম একটু ঝুকে ফিস ফিস করে বলল
_ ইউ নো ভাইয়া তোমার মতো আমার ও লেইম গাল একদম পছন্দ নয়। আমি তো রেয়ার কাউকে চাই। দ্যাট লাইক মাই ভাবি।

ফারহান হাসতে হাসতে ফাহিমের পিঠ চাপরে দিলো। ছেলেটা বড্ড দুষ্টু, তবে সব রকমের অসভ্যতামু বাজে মেয়েদের সাথেই করেছে। তবে সেটা শিক্ষা দেওয়ার জন্য। যেমন টা সুনায়না কে দিলো।

*

বিকেলে হালকা নাস্তা করেই বেরিয়ে পরেছে ফারহান ।সন্ধ্যার পর গান বাজনার আয়োজন থাকলে ও ফারহান সেই পার্টি তে এটেন্ট করবে না বলেছে। ফারহানের সাথে সাথে ফাহিম ও বের হয়ে এসেছে। ফারহান কাল তার বাসাতে আসতে বললো ফাহিম কে। আর পরশু আরিফের হলুদে তো দেখা হবেই। ফাহিম বলেছে সে কাল ফারহানের ছোট্ট সংসারে ডিনার করতে আসবে।
ফাহিম কে বিদায় জানিয়ে ফারহান ফারাবি কে নিয়ে শপিং মলে আসলো। বিয়ের জন্য এক গাঁদা শপিং করে নিয়ে বাসায় ফিরলো।
ফারাবির জন্য এতো তাড়াতাড়ি ফিরে এসেছে। ফারাবি কি যেন সারপ্রাইজ দিবে। রুমে ঢুকেই ফারাবি ফ্রেস হয়ে নিয়েছে। ফারহান অবাক চোখে তাকিয়ে রইলো। অলস মেয়েটা আজ এতো চঞ্চল ? ফারাবি ট্রাওয়াল দিয়ে মুখ মুছতে মুছতে বলল
_ কি হলো তাড়াতাড়ি ফ্রেস হয়ে আসুন।

_ একটু পরে যাই ?

_ উহহুহ এখনি জান। আপনার জন্য একটা বিশেষ সারপ্রাইজ আছে।

ফারহান ভ্রু কুঁচকে মনে করার চেষ্টা করলো আজ কোনো বিশেষ দিন নাকি। কিন্তু না আজ তো কোনো বিশেষ দিন নয়।
_একটা কথা বল তো আজ কি এমন স্পেশাল ডে ?

_ কোনো স্পেশাল ডে নয়।

_ তাহলে সারপ্রাইজ দেওয়ার কথা যে বলছিস। তুই কি আমাকে অন্য কোনো সারপ্রাইজ দিতে চাচ্ছিস।
তাহলে আমি এখনি ফ্রেস হয়ে আসছি। আমার ও না প্রেম প্রেম পাচ্ছে।

ফারাবি ভ্যবলার মতো তাকিয়ে রইলো। ফারহান সব সময় ই এক ডিগ্রি বেশি বুঝে। ওহহ বললো কি আর এই ছেলে বুঝলো টা কি। যত্তসব ফালতু প্রেম প্রেম ভাব।

ফারাবি দাঁত কিরমির করতে করতে নিচে চলে আসলো। ফ্রিজ থেকে ঠান্ডা পায়েস বের করে নিলো। ফারহানের জন্য ছোট্র একটা বাটি তে আগেই ঢেলে রেখেছিলো ওহহ। পায়েসের উপরে সুন্দর এক আবরন তৈরি হয়েছে। ফারাবি মৃদু হাসলো। তার প্রিয়তমর জন্য নিজ হাতে বানানো পায়েস। ফারাবি যত্ন সহকারে বাদামের কুঁচি ছড়িয়ে দিলো। উপরে কিছু ড্রায়ফুড ও দিলো। ব্যাস দারুন এক ডিজাইন হয়েছে।
ফারাবি ট্রে টা লাল কাপড় দিয়ে ঢেকে নিলো।রুমে এসে ট্রে টা টেবিলে রাখতে ই ফারহান বাথরুম থেকে বের হয়ে আসলো। বোধহয় সাওয়ার নিয়েছে। শরীরে ট্রাওয়াল পেঁচানো , গায়ে বিন্দু বিন্দু পানি জমে আছে। চুল গুলো থেকে টপ টপ করে পানি পরছে।
ফারহান মৃদু হেসে একটু ঝুঁকে বলল
_ আমি পুরোটাই তোর , সো এভাবে দেখিস না। আমার লজ্জা করে।

ফারহানের কথাতে ফারাবি নিজেই লজ্জা পেয়ে গেল। ফারহানের গায়ে ট্রাওয়াল ছুঁড়ে বলল
_ ছিই এভাবে দাঁড়িয়ে আছেন কেন ? দ্রুত জামা কাপড় পরুন।

_ কেন লজ্জা লাগে ? এভাবে প্রথম বার দেখছিস ?

_ ছিই আপনার মুখে কিচ্ছু আটকায় না।

_ উহহু আটকাবে কেন ? আমি তো আমার বউ কে বলছি।

_ প্লিজ একটু দূরে সরুন। আর তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে আসুন।

ফারহান আর কিছু বললো না। ফারাবির দিকে ভ্রু কুঁচকে থেকে দ্রুত তৈরি হয়ে নিলো। ফারাবি ফোঁস করে দম ফেললো যেন এতোক্ষন কোনো জেল খানা তে ছিলো ওহ।
ফারহান অবাক চোখে তাকিয়ে বলল
_ টেবিলে ঐ টা কি ?

_ এটাই তো সারপ্রাইজ।

_ রিয়েলি ?

_ ইয়াপ। বাট গেইস করুন তো এটাতে কি আছে ।

_ যদি গেইস সত্যি হয় তো কি পাবো ?

_ জীবনে ও সত্যি হবে না।

_ বাজি ধরছিস ?

ফারাবি কিছুক্ষণ ভেবে বলল
_ হ্যাঁ বাজি ই ধরছি।

_ জিতলে কি পাবো ?

_ যা চাইবেন তাই।

ফারহান বাঁকা হেসে ফিস ফিস করে বলল
_ তৈরি হ জান। আজ একটুর জন্য ও ছাড়ছি না।

ফারাবি ধাক্কা মেরে ফারহান কে দূরে সরিয়ে দিলো। ফারহান বিজ্ঞ দের মতো করে টেবিল টাকে ভালো মতো অবলোকন করলো। লাল কাপড় টা ছুঁতে গেলেই ফারাবি কড়া চোখে তাকালো। ফারহান ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে রইলো।
তা দেখে ফারাবির মুখ টিপে হাসি। কিন্তু নিমেষেই ফারাবির মুখ টা চুপসে গেল। যখন ফারহান পায়েস বলে ধুম করে বোম টা ফাটিয়ে দিলো।
ফারাবির মুখ টা তখন দেখার মতো হলো। ফারহান পেট চেপে হাসতে লাগলো। ফারাবি কাঁদো কাঁদো মুখ করে বলল
_ কি করে পারলেন ?

_ আমার পিচ্ছি বউ টা বোধ হয় ভুলে গেছে বাসাতে সি সি টিভি লাগানো আছে।

ফারাবি হাত পা মেলে কান্না জুড়ে দিলো। ফারহান বোকার মতো চেয়ে বলল
_ কি হলো?

_ এহহ চিটিং ছিলো এটা।

ফারহান বাঁকা হেসে তাকালো। একটু একটু করে ফারাবির দিকে আগালো। ফারাবির বানানো পায়েস টা খেয়ে নিলো। ফারাবি প্রথম বানালে ও অসাধারন খেতে হয়েছে। ফারহান টুপ করে ফারাবির গালে চুমু এঁকে দিলো।
বুকে আষ্ঠে পৃষ্ঠে জড়িয়ে বলল
_ আমার লক্ষী বউ , নাকি আমার লক্ষী প্রেয়সী ?

ফারাবি নাক টেনে বলল
_ দুটো ই।

ফারহান প্রশস্ত হেসে তার প্রেয়সী বউ কে নিয়ে প্রেম ময় সময় কাটাতে লাগলো। সম্পর্কের মাঝে সব থেকে বেশি সুখময় হলো খুনসুটি। এই খুন সুটি গুলো নিয়েই তো এক টা জীবন অচেনা মানুষ টার সাথে নিমিষেই পার হয়ে যায়।
আহা তার ই নাম ই তো ভালোবাসা।
#স্বপ্নের_প্রেয়সী_সিজন_2
#ফাতেমা_তুজ
#part_46

নিস্তব্ধ পরিবেশ। আকাশের চাঁদ টা মোহ ছড়াচ্ছে। মাঝারি গতিতে বাতাস বইছে। নিটাল পরিবেশে পাখির ডাক গুলো কেমন অশরীরীর মতো শোনাচ্ছে। দু চোখের কোন বেয়ে পানি ঝরছে রিমির। তাঁর আকাশ টাই যেন থমকে গেছে। জীবনের ভয়ঙ্কর একটি সত্যি কিছু তেই মেনে নিতে পারছে না।
এই সময় টায় খুব করে চাইছে কেন তার মৃত্যু হচ্ছে না। এমন সত্যের মুখোমুখি হওয়ার থেকে মৃত্যু হওয়াটাই কি শ্রেয় নয় ?
নীরবতা ভেঙে ফোঁস করে শ্বাস ফেলে ফাহিম। মেয়েটার মলিন মুখ দেখে ফাহিমের মনের কোনে ভাঙচুর হয়ে চলেছে। রিমির ছলছল নয়নের দিকে হাত বাড়িয়ে ও গুটিয়ে নিলো। মুখ থেকে কোনো শব্দ বের হচ্ছে না। আবার কিছুক্ষন নীরবতা চললো।
_ রিমি প্লিজ এভাবে ভেঙে পরো না।

রিমি কোনো উত্তর দিলো না। কি করেই বা উত্তর দিবে ওহ। নিজের ভালোবাসার থেকে পতারনার স্বীকার হওয়া টা কি খুব সুখময় ?
উহহুহ বড্ড কষ্টকর এ অনুভূতি। নিজ চোখে ভালোবাসার মানুষ টাকে অন্য মেয়ের সাথে ঘনিষ্ঠ ভাবে দেখে আদৌ কি ঠিক থাকা যায় ?
বেসামাল হয়ে পরেছে ওহ। ভেতরের দীর্ঘশ্বাস গুলো অশ্রু হয়ে চোখ দিয়ে নেমে যাচ্ছে। আশ্চর্য অনুভূতি, শুধু কষ্ট আর কষ্ট। কোথাও কোনো সুখ নেই। আছে শুধু হৃদয়ের রক্তক্ষরণ।
ফাহিম সাহস সঞ্চার করে রিমির দু হাত মুঠোয় নিলো। রিমির কোনো রেসপন্স নেই। যেন মৃত শরীর , কিংবা জড় বস্তু। ফাহিম হঠাৎ অনুভব করলো রিমির শরীর অতিরিক্ত ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে। বিচলিত হয়ে পরলো। চেয়ার থেকে উঠে রিমির দু বাহু তে ধাক্কা দিলো। রেসপন্স নেই , ফাহিম বুঝতে পারলো কিছুক্ষণের মাঝেই জ্ঞান হারাবে।

*

হন্তদন্ত হয়ে হসপিটালে ঢুকলো ফারহান। চোখ দুটো বিচলিত , আশে পাশে তাকিয়ে কাউকে খুঁজছে। পেছন পেছন ফারাবি ও ছুটে আসছে। ফারহান কিছুক্ষণ পর পর পেছন ফিরে এক পলক তাকাচ্ছে। উদ্দেশ্যে ফারাবি ঠিক আছে কি না। ফারাবি সম্পূর্ন বেসামাল , হসপিটালে আসার কারন এখন অব্দি ওর কানে পৌঁছাতে পারে নি।
ফাহিম ওয়েটিং চেয়ারে দু হাত মুঠো করে মাথা নিচু করে আছে। কারো পায়ের আওয়াজ পেয়ে মাথা উঁচু করে তাকালো।
_ রিমির কি হয়েছে ? ওকে হসপিটালে এডমিট করিয়েছিস কেন ?

_ রিলাক্স ভাই। রিমি এখন ঠিক আছে। তবে গভীর শকড হয়ে ছোট্ট একটা হার্ট এট্রাক হয়ে গেছে।

_ হোয়াট । ভাইয়া কি করে এমন টা হলো। দুপুরে ও তো আমার সাথে কথা হয়েছে।

_ কাম ডাউন ভাবি। ওহহ প্রচন্ড শকড হয়ে আছে।

_ফাহিম ডক্টর কি বলছে । তুই ওকে পেলি কোথায় ?

_ বলছি আগে ডক্টরের সাথে কথা বলে আসি।

_ ফারাবি তুই এখানে বস আমরা আসছি।

ফারাবি মাথা কাত করে সম্মতি জানালো। ফাহিম আর ফারহান ডক্টরের চেম্বারে ঢুকে পরলো।
ফারাবির মাথা ভনভন করছে। চোখ দুটো জ্বলছে। অজানা ভয়ে ভেতর টা মুচরে যাচ্ছে। আজ যখন দুপুরে কথা বলল তখন রিমি বলেছে ফাহাদের সাথে দেখা করবে আজ বিকালে। ফাহাদ নাকি ওকে সারপ্রাইজ দিবে। তাহলে কি এমন হলো যে হার্ট এট্রাক হয়ে গেল ?
রিমির কথা ভাবতেই ফারাবির ভেতর থেকে কান্না চলে আসছে। অসহ্য এক যন্ত্রণায় ছটফট করছে।
কোনো ভাবে ফাহাদ ই কি এর , ফারাবি আর ভাবতে পারলো না। দু হাতে মাথা চেঁপে ধরলো।

ডক্টরের চেম্বার থেকে দুজনে বের হতেই ফারাবি উঠে দাঁড়ালো।
ফারহানের মুখ টা শুকনো। ফারাবি দ্রুত পায়ে ফারহানের দিকে এগিয়ে গেল। ফারহান একটু হাসার চেষ্টা করলো।

_ রিমির কি হয়েছে ?

_ কোনো কিছু থেকে শকড হয়েছে আর তারপর ই হার্ট এট্রাক। ঘুম থেকে জেগে পাগলামি করতে পারে।

ফারাবি মুখ চেঁপে ধরলো। ফারহান এক হাতে ফারাবি কে জড়িয়ে ধরলো। মাথা হাত বুলিয়ে ওয়েটিং চেয়ারে বসলো।

ফাহিম তপ্ত শ্বাস ফেলতেই ফারহান প্রশ্ন ছুঁড়লো।
_ রিমি কে কোথায় পেয়েছিস ? শকড হওয়ার কারন টা জানিস ?

ফাহিম লম্বা করে শ্বাস নিয়ে চেয়ারে বসলো। ফারহান আর ফারাবি গভীর মনোযোগে চেয়ে রইলো।

_ ভাই আমি রেসট্রন এ একটা মিটিং এর জন্য গিয়েছিলাম। সেখানে রিমি কে দেখতে পাই। ওহহ বোধহয় কারো জন্য অপেক্ষা করছিলো। বার বার টাইম দেখছিলো আর কাউকে ফোন করছিলো।
আমার কেমন খটকা লাগে। রিমি উঠে গিয়ে রেসট্রন এর বাইরে পায়চারি করতে থাকে। হঠাৎ করে সামনের দিকে ছুটে যায়। আমি ও ওর পিছু নিই। রিমি রেসট্রন থেকে আরেকটা ক্যাফে ঢুকে পরে। আর তারপর সোজা রুফটবে চলে যায়। আমি ও ছুটে যাই। তবে ওহ লিফ্ট দিয়ে যায় আর আমি সিঁড়ি বেয়ে। যখন রুফটবে পৌছাই তখন রিমি একটা ছেলের কলার চেপে বলছিলো কেনো এতো নাটক করলো।
ছেলেটার পাশে একটা মেয়ে ও দাঁড়িয়ে ছিলো। মেয়েটা রিমি কে ছাড়িয়ে নেয়। ঐ ছেলেটা ধীর কন্ঠে কিছু একটা বলে আর তখনি রিমি সজোরে ছেলেটা কে চর মেরে দেয়।
ছেলেটা রিমির দিকে হাত তাক করতেই আমি গিয়ে ধরে ফেলি।
রিমি আর কোনো কথা বলে নি। কাঁদতে কাঁদতে সোজা নিচে চলে আসে।
আমি রিমি কে টেনে চেয়ারে বসাই। কিন্তু রিমির চোখে মুখে অসহায়ত্ব ছিলো। কোনো কথাই বলে নি আর। আমার মনে হলো ওহ সেন্স হারাবে। আর তারপর ই আমি গাড়ি তে নিয়ে আছি ওকে। গাড়ি তেই জ্ঞান হারায়। আর তারপর সোজা হসপিটালে নিয়ে আসি।

ফারহানের ভ্রু জোড়া কুঁচকে আছে। ফারাবি থমথমে মুখ করে তাকিয়ে রইলো। মাথায় যে চিন্তা চলছে তা ভয়ঙ্কর। ফাহাদ রিমি কে ধোঁকা দিলো ?
ফারাবি আর ভাবতে পারলো না। কেমন গা গুলিয়ে যাচ্ছে। ফারহান এক হাতে ফারাবি কে জড়িয়ে ধরলো।
_ ফারাবি কি হয়েছে ? শরীর খারাপ লাগছে ?

ফারাবি ছলছল নয়নে তাকালো। দৃষ্টিতে অসহায়তা ফুটে উঠেছে।
_ রিমি ফাহাদ ভাইয়ার সাথে দেখা করতে গিয়েছিলো।

ফারহান ভ্রু কুঁচকে তাকালো। ফারাবি ছলছল নয়নে ফারহানের শার্ট খামচে ধরলো।
_ রিমির বয়ফ্রেন্ড ফাহাদ ভাইয়া। রিমি ওনাকে খুব ভালোবাসে। ওহ নিজেকে সামলাতে পারবে না । কিছু করুন আপনি। আমি এই কয়েক দিনে যতটুকু বুঝেছি ওহহ খুব বেশি আসক্ত হয়ে পরেছে।

ফারহান বিচলিত চোখে তাকালো। ফাহিমের দৃষ্টি শান্ত , কিছু মিলানোর চেষ্টায় আছে। ফাহিম ইশারাতে ফারাবি কে বাসায় দিয়ে আসতে বললো। ফারহান মাথা ঝাঁকিয়ে আশস্ত করলো।

*

ফারহান বাসায় ফোন করে বলে ছে আজ রিমি ওর বাসাতেই থাকবে। কারন এই বিষয় টা ফারহান কাউকে জানাতে চায় না। ফারাবি কে বাসায় রেখে এসেছে। ফাহিম কে বলেছে আজ ওর বাসাতেই থাকতে । কারন রহস্য টা খুব তাড়াতাড়ি বের করতে হবে। রিমির জ্ঞান ফিরেছে তবে পাগলামি করে নি। কিন্তু নিশ্চুপ হয়ে গেছে। অধিক শোকে পাথর যাকে বলে। রিমি কে নিয়ে ধীর হাতে ফারহান গাড়ি তে নিয়ে বসালো। রিমি কে নিয়ে পেছনে বসলো ফারহান। ফাহিম গাড়ি ড্রাইভ করছে। ফারহানের বুকে শুইয়ে আছে রিমি। চোখ দুটো মৃত প্রায়। বোনের এ অবস্থা ফারহানের বুকে একটু একটু করে ক্ষত সৃষ্টি করছে।
পরিস্থিতি টাই এমন ছিলো যে বোনের খবর নেওয়ার আগেই সব এলোমেলো হয়ে গেল।
গত তিন চার মাস ধরে এতো বড় ঝড় যাচ্ছে যে ফারহান ঠিক ঠাক মানিয়ে নিতে পারে নি।
নিজের ওপর খুব রাগ হচ্ছে। গত কয়েক মাস ধরে রিমির প্রতি বেশ অযত্ন করেছে ওহহ। আর সেই সুযোগ টাই কেউ কাজে লাগিয়েছে।

রিমি কে ফারহানের রুমে শুইয়ে দেওয়া হলো। ফারাবি স্যুপ এনে রিমি কে একটু একটু করে খাইয়ে দিচ্ছে। আজ রিমি কে ফারাবির কাছেই রাখবে। আর ফাহিম আর ফারহান মিলে সমস্ত ডিটেলস বের করবে।
ফারহান ডিনার অর্ডার করে দিয়েছে । কিছুক্ষণের মাঝেই চলে আসবে।

ফারহান কিছু টা মলিন হেসে বলল
_ ওর খেয়াল রাখিস। আমি আর ফাহিম আজ গেস্ট রুমে থাকবো।

ফারাবি মাথা ঝাঁকালো। ফারহান মৃদু হেসে রিমির দিকে এক পলক তাকালো। তার বোন কে যে কষ্ট দিয়েছে তাকে ও কষ্ট পেতে হবে।

**

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here