তোমাতে আসক্ত পর্ব ১০

#তোমাতে-আসক্ত

নীলচুড়ি(রোকসানা)

পর্ব (১০)

মাহির আর সহ্য করতে পারলোনা। চেয়ার থেকে উঠে এসে আরমানের সামনে থেকে পরোটার প্লেটটা নিয়ে মাটিতে ছুড়ে ফেললো। টেবিলের উপর যা আছে সব তছনছ করে ফেললো। এমনকি টেবিলটাও রক্ষা পেলোনা সেটাও উচু করে আছার মারলো। তারপর নিজের ভয়ংকর রুপ নিয়ে অথৈর দিকে ছুটে এলো।

“”চোখগুলো রাক্ষসের মতো করে রাখছেন কেন? আপনার কি মনে হয় আমি রাক্ষসকে ভয় পাই???””

মাহির অথৈর দুই বাহু চেপে ধরলো। রাগে কাপতে কাপতে বললো,

“”১০ মিনিট সময় দিলাম এই পুচকো ছেলেকে বিদেয় করবেন নাহলে রাক্ষস কাকে বলে, কয় প্রকার সব দেখতে পারবেন। Just 10 minutes.””

মাহির অথৈকে ছেড়ে দিয়ে সিড়ি বেয়ে উপরে উঠতে লাগলো। পেছন থেকে অথৈ চিৎকার করে বললো,,

“”আরমান যদি এ বাসা থেকে চলে যাই। আমিও চলে যাবো।””

মাহির কিছুটা সময় থমকে গিয়ে আবার উপরে চলে গেলো। অনেকটা লেট হয়ে গেছে। দ্রুত ফ্রেস হয়ে চটপট রেডি হয়ে নিলো। আয়নায় একবার নিজেকে দেখে নিলো। সবকিছু ঠিকঠাক করে বের হতে নিলেই অথৈ আর আরমানের রুমে প্রবেশ হলো। অথৈ নিজের লাগেজে হাত দিতেই আরমান বলে উঠলো,

“”অথৈমনি তুমি ওটা নিতে পারবেনা তো, সরো আমি নিয়ে দিচ্ছি।””
“”হুম,তাড়াতাড়ি নাও। আমরা আর এ বাসায় থাকবোনা। কোনো নিষ্ঠুর ছেলের সাথে একছাদের নিচে অথৈ কোনোদিনও থাকবেনা। তুমি তাড়াতাড়ি এগুলো নিচে নিয়ে যাও আমি আব্বুকে কল দিয়ে গাড়ি পাঠাতে বলে দিচ্ছি।””

আরমান মাথা নাড়িয়ে দুহাতে লাগেজ দুটো নিয়ে বের হতে লাগলো। কিন্তু তার আগেই মাহির এসে লাগেজদুটো টান দিয়ে নিয়ে দুরে ঠেলে পাঠিয়ে দিলো।

“”এই ছেলে তোমাকে না বলেছি আমার বাসা থেকে বের হয়ে যেতে এখনো এখানে আছো? কোন সাহসে??””

অথৈ ফোন কানে নিতে নিতে মাহিরের দিকে এগিয়ে এসে বললো,,

“”আমার সাহসে।””
“”আপনি কিন্তু বেশি বেশি করছেন অথৈ!!””
“”আমার যা খুশি তাই করবো আপনার কি হুম?? আমি কি বলেছিলাম আমাকে বিয়ে করেন? বলিনি তো? তাহলে কেন করেছেন?””
“”বিয়ে করেছি বলে যা খুশি তাই করবেন?””

অথৈ মাহিরের দিকে দুপা এগিয়ে খানিকটা ঝুকে বললো,

“”হু, যা খুশি তাই করবো।””
“”দেখুন…””
“”আমিতো দেখেই কথা বলছি। আপনি নিচের দিকে তাকিয়ে আছেন কেন? আপনি দেখেন। আমার দেখতে হবেনা।””

অথৈর এমনভাবে কথা বলাটা মাহিরের কেমনজানি লাগছে। অথৈ অনেকটাই তার দিকে ঝুকে আছে আর সে নিচের নিকে ঝুকে আছে। এই মেয়েটা সত্যি আমাকে খুন করে ছাড়বে!!!

“”কি হলো? কি বিড়বিড় করছেন?””

মাহির মনে মনে একটু সাহস জুগিয়ে বললো,,

“”তাহলে আপনি কেন আমাকে বিয়ে করেছেন? আমিও তো আপনাকে বলেনি আমাকে বিয়ে করেন?””
“”মানে! আমার করা আর আপনার করা কি এক হলো???””

মাহির এবার মনে বল পেলো। নিজে সোজা হয়ে দাড়িয়ে গেলো। অথৈর চোখে চোখ রেখে বললো,,

“”এক হলোনা তো কি হলো? আপনিও যেমন রেজিস্ট্রিতে সাইন করে আমাকে বিয়ে করেছেন তেমনি আমিও রেজিস্ট্রিতে সাইন করে আপনাকে বিয়ে করেছি। এখানে তফাতের কি হলো?””

অথৈ কিছুটা থতমত খেয়ে গেলো। মাহিরের চোখের দিকে তাকাতে পারলোনা। মনে হলো ওই চোখে দুষ্টুমির কোনো ছায়া দেখতে পাচ্ছে। অথৈ অস্পষ্ট স্বরে বললো,,

“”মানে কি? অনেকক তফফাৎ আআছে””
“”তাই তাহলে তোতলাচ্ছেন কেন?””

মাহির কিছুটা আগাতেই অথৈ কিছুটা পিছিয়ে গেলো। অথৈকে এভাবে দেখতে মাহিরের বেশ ভালো লাগছে। চোখে দুষ্টু চাহনি নিয়ে আবার অথৈর কাছে এগিয়ে গেলো।

“”কই তোততোতলাচ্ছি? আর আপনি এভাববে ভিলেনের মতো হাটছছেন কেনন?””
“”তখন জানি কি বলেছিলেন?””
“”কখখনন কি বলললাম?””
“”ওই যে আমি আপনাকে বিয়ে করেছি বলে আপনার যা খুশি তাই করবেন। তাহলে আপনিও তো আমাকে বিয়ে করেছেন সো আমার ও উচিত আমার যা খুশি তাই করা তাইনা???”””
“””মানননন..”””

অথৈ আর কিছু বলতে পারলোনা। মাহির অথৈর দু গালে শক্ত করে ধরে নিজের ঠোটদ্বয় দিয়ে অথৈর মুখ আটকে দিলো। এখন মাহিরও তার যা খুশি তাই করে দেখাচ্ছে। কিন্তু মাঝখানে ফোড়ন কাটলো আরমান। আরমান দৌড়ে এসে চিৎকার করতে লাগলো আর মাহিরের পিঠে খামচাতে লাগলো,,,

“”ভাইয়া কি করছেন? আমার অথৈমনি তো দম আটকে মরে যাবে। ছাড়ুন বলছি। ওর মুখ এভাবে আটকে ধরে আছেন কেন? ওর খুব কষ্ট হচ্ছে।”””

আরমানের খামচি মাহিরের পিঠে জ্বালা ধরালেও মাথায় ধরাতে পারেনি। মাহিরের কোনো দিকে যেন খেয়াল নেই সে তার কাজে ব্যস্ত।

অথৈ ভাবতে পারেনি মাহির এভাবে হঠাৎ করে তার ঠোটে আক্রমন চালাবে। নিজেকে ছাড়ানোর যথেষ্ট চেষ্টা করতে লাগলো। চার হাত পা ছটফট করতে লাগলো।

আরমান একবার মাহিরের দিকে এসে মারধোর করছে অথৈকে ছাড়ানোর জন্য তো আরেকবার অথৈর কাছে ছুটে কান্না করে বলছে,,

“”অথৈমনি তোমার কি কষ্ট লাগছে? তেমার শ্বাসকষ্ট হচ্ছে?? চিন্তা করোনা আরমান থাকতে তোমাকে কিছুতেই কষ্ট পেতে দিবোনা।”””

আরমান তার শরীরের সর্বস্ব শক্তি দিয়ে মাহিরকে ছুটানোর চেষ্টা করলো। এক পর্যায়ে মাহিরের কানের কাছে গিয়ে জোরে চিৎকার করে বললো,

“””আমার অথৈমনিকে ছেড়ে দেন বলছি।”””

মাহির আরমানের মার সহ্য করতে পারলেও কানের কাছে প্রচন্ড গতিতে বয়ে যাওয়া আরমানের চিৎকার সহ্য করতে পারলোনা। সে অথৈকে ছেড়ে দিয়ে কানে আংগুল ঢুকিয়ে খুচাতে লাগলো। মাহিরের মনে হলো সে বয়রা হয়ে গেছে। সামনে তাকিয়ে দেখলো অথৈ হাপাচ্ছে আর আরমান কি যেন বলছে। সত্যি বয়রা হয়ে গেলো নাকি বুঝার জন্য কান থেকে আংগুল বের করলো।

“”অথৈমনি তুমি তো ঘেমে গেছো। ইশ! শ্বাসকষ্ট হচ্ছে না? দেখো আমার দিকে তাকাও, এভাবে জোরে জোরে শ্বাস নাও।”””

আরমান অস্থির হয়ে চারপাশে পাখা খুজতে লাগলো। অথৈকে বাতাস করতে হবে। গরমে ঘেমে গেছে। নাক, মুখ,ঠোট লাল হয়ে গেছে। আশেপাশে পাখা না পেয়ে হতাশ হলো আরমান। হঠাৎ একটা ম্যাগাজিন চোখে পড়লো। দ্রুত সেটা নিয়ে এসে অথৈকে বাতাস করতে লাগলো।

“”অথৈমনি,এখন কেমন লাগছে? একটু আরাম লাগছে? তুমি এখনো ঘামছো। কি যে করি!! এতো বড় ওড়নাটা আবার গলায় পেচিয়ে রাখছো কেন? দেখি খুলে দেই।””

মাহির এতোক্ষন নিজের কানের পরীক্ষা নিয়ে ব্যস্ত থাকলেও এবার আর থাকতে পারলোনা। নিজের বউয়ের গলার ওড়নায় অন্য ছেলের হাত পড়বে??? মাহির প্রচন্ড ক্ষেপে গেলো। আরমানের দিকে তেড়ে এসে ওকে দুরে ঠেলে নিয়ে আসলো।

মাহির রাগে ফুসতে ফুসতে আরমানের শার্টের কলার চেপে ধরলো। অথৈ দ্রুত এদিকে এসে বললো,,

“”ওকে কিছু করবেননা বলে দিচ্ছি তাহলে আমি আপনাকে খুন করে ফেলবো।””

মাহিরে অথৈর দিকে তাকিয়ে আরমানের শার্ট দুপাশে টান দিয়ে ছিড়ে ফেললো।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here