তোমাতে আসক্ত পর্ব ১১

#তোমাতে-আসক্ত

নীলচুড়ি (রোকসানা)

পর্ব(১১)

মাহির অথৈর দিকে তাকিয়ে আরমানের শার্ট ছিড়ে ফেললো।অথৈর কাছে গিয়ে কানে ফিসফিস করে বললো,

“”আপনার জন্য নাহয় আরমান বেচে যাচ্ছে কিন্তু আপনি কিভাবে বাচবেন???””

অথৈ রসগোল্লার মতো চোখ করে মাহিরের দিকে তাকালো।মাহির মিস্টি একটা হাসি উপহার দিয়ে বেরিয়ে আসলো। বেরিয়ে সিড়ি দিয়ে নামতেই আজিজের সাথে দেখা।

“”একি আজিজ তুমি একগাদা গাদা ফুলের মালা নিয়ে কোথায় যাচ্ছো?””
“”অথৈ মেডামকে দিতে।””
“”অথৈ মেডাম ফুল দিয়ে কি করবে??””
“”আমি কি জানি? আপনাদের বিয়েতে তো আমার কিছু দেওয়া হয়নি তাই ভাবলাম ফুল নিয়ে যাই। ফুলের দোকানে এই বাসি মালা ছাড়া আর কিছু পেলাম না। মনে হলো খালি হাতে যাওয়ার থেকে ভালো হবে মালা নিয়ে যাওয়া। তাই নিয়ে আসলাম। স্যার বাসি হলে কি হবে শুকে দেখুন এখনো তাজা গাদা ফুলের মতো ঘ্রান আছে।””
“”শুকে দেখতে হবে কেন? তোমার মতো গাদা ফুলের ঘ্রান তো আমি ১ মাইল দুর থেকেও পাই।””
“”কি বলেন স্যার!! আমার শরীর থেকে কেন গাদা ফুলের ঘ্রান বের হবে? আমি কি গাদা ফুল?””
“”নাহ! তুৃমি গাদা ফুল কেন হবে? তুমি তো গাধা ফুল।””
“”মাথায় ঢুকছেনা স্যার।””
“”বেশি ঢুকাতে চাইলে পেছন দিয়ে বের হয়ে যাবে। যাও গাড়ী স্টার্ট দাও। লেট হয়ে গেছে।””

মাহির গাড়ীতে বসতেই আজিজ গাড়ী স্টার্ট দিতে দিতে বললো,

“””স্যার মেডামকে দেখলাম না যে উনি কি এখনো ঘুমাচ্ছে?””
“”ঘুমাবে কিভাবে? রুমে তেলাপোকা নিয়ে এসেছে। তেলাপোকা রেখে কি ঘুমানো যাই?””

আজিজ বেশ অবাক হয়ে মাহিরের দিকে তাকালো,

“”তেলাপোকা মানে? মেডামকে কামড়াবে তো!! এখন তো রাক্ষস তেলাপোকা বের হয়ছে। হাতে পায়ের মাংস খেয়ে নেয়। কাজকে সকালেই তো আমার বউয়ের পা খেয়ে নিলো””
“”তোমার মাথাটা খায়নি??””

আজিজ মাথা নিচু করে আবার গাড়ী স্টার্টে মন দিলো। স্টিয়ারিং ঘুরাতে যাবে ঠিক তখনি মাহির হাত চেপে ধরলো।

“”ওয়েট,তেলাপোকা কে নিয়ে আসি। নাহলে সত্যি সত্যি তোমার মেডামকে কামড়ে দিবে।””
“”কিন্তু স্যার….”””

আজিজের কথা না শুনেই মাহির আবার বাসার ভেতরে ঢুকে গেলো।

“”উফ! তুমি এমন কান্না করছো কেন আরমান? তোমার কান্না দেখলে আমার অসহ্য লাগে। একটু কিছুতেই মেয়েদের মতো কান্না করতে শুরু করো।””
“”তাহলে কি করবো? আমি কি বাসা থেকে শার্ট নিয়ে এসেছি? এখন আমি কি পড়বো? তুমি তো আমার সব দেখে ফেলবে।””
“”আমি দেখলে কি হবে? তুমি কি আমার পেছন থেকে সামনে আসবে? এখন কিন্তু আমার রাগ লাগছে। ছাড়ো আমাকে।””
“”নাহ,আমার লজ্জা লাগে অথৈমনি। এমন করোনা প্লিজ!!””
“”এবার কিন্তু তোমার প্যান্টও আমি ছিড়ে ফেলবো।””

আরমান অথৈর বাহু ছেড়ে দিয়ে দুহাত দিয়ে নিজের প্যান্ট চেপে ধরে চিৎকার করে বললো,

“”এই না না না,অথৈমনি। তাহলে আমি লজ্জায় মরে যাবো। আর আমি মরে গেলে তোমাকে ভালোবাসবে কে?””

“”আমি!””

অথৈ পিছনে ঘুরতেই মাহিরকে দাড়িয়ে থাকতে দেখলো। একটা হাত পকেটে ডুকিয়ে দরজার সাথে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে আছে। ঠোটে বাকা হাসি।

মাহির গুটি গুটি পায়ে অথৈর দিকে এগিয়ে আসতেই অথৈ চোখ বন্ধ করে ফেললো। আরমানের চিল্লানোর শব্দে চোখ মেললো।

“”আরমানকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন আপনি?””
“”আমার সাথে।””
“”আপনার সাথে মানে? ও আপনার সাথে গিয়ে কি করবে?””
“”নাচ করবে। ও নাচবে আর আমি তাকিয়ে তাকিয়ে দেখবো। বুঝছেন?””

আরমান কান্নাজরিত কন্ঠে বললো,

“”অথৈমনি আমি তোমাকে ছেড়ে কোথাও যাবোনা। প্লিজ, আমি তোমার কাছে থাকবো। উনাকে বলোনা ছেড়ে দিতে।””

অথৈ এগিয়ে এসে আরমানের অন্য হাত টেনে ধরলো।

“”ও কোথাও যাবেনা। ছাড়ুন বলছি।””
“”১০০ বার যাবে। না গেলে তুলে নিয়ে যাবো। তবুও ওকে আমি নিয়েই যাবো।””

অথৈ করুন কন্ঠে মাহিরের দিকে তাকিয়ে বললো,

“”ও খুব ছটফট করবে। ছেড়ে দিননা।””
“”ওকে রেখে গেলে আমিও যে ছটফট করবো অথৈ। সরি আপনার কথা আমি শুনতে পারলামনা।””

মাহির আরমানকে পাজাকোলে করে বেরিয়ে যেতে লাগলো। এক কদম এগিয়ে অথৈকে উদ্দেশ্য করে বললো,

“”টেনশন করে চোখের নিচে কালি ফেলার দরকার নেই। ওর কোনো ক্ষতি করবোনা। আপনি যাতে পালাতে না পারেন সেটার সিকিউরিটি হিসেবে ও আমার কাছে থাকবে।””

মাহির আরমানকে পিছনের সিটে বসিয়ে দিয়ে দম ছেড়ে বাচলো। ভাগ্যিস আজিজ কথাটা বলেছিলো নাহলে তো আজকে বাসায় ফিরে দেখতাম আমার বউ তেলাপোকার সাথে ভেগে গেছে!!

“”স্যার আপনার তেলাপোকা কই?””
“”পিছনে এতো বড় তেলাপোকা বসিয়ে রেখেছি চোখে পড়ছেনা??””

আজিজ গাড়ী চালাচ্ছে আর বারবার পেছনে তাকিয়ে আরমানকে খুটিয়ে খুটিয়ে দেখছে। ইচ্ছেধারিনী নাগ নাগিন হয় কিন্তু ইচ্ছেধারীনী তেলাপোকাও যে হয় এই প্রথম জানলাম। নিশ্চয় আগের জন্মে ভালো কাজ করেছিলাম তাই ইচ্ছেধারীনী নাগিন দেখার সৌভাগ্য হয়েছে। আজিজ মনে মনে বেশ খুশি হলেও আবার মন খারাপ হলো। এটা তো ছেলে তেলাপোকা তাহলে মেয়ে তেলাপোকাটা কোথায় আছে????

“”খালামনি বাহিরে ঘুরঘুর করছো কেন? ভেতরে আসো।””

মিসেস ইরানী বেশ সংকোচ নিয়েই রুমে ঢুকলো। আলতো করে বিছানায় বসলো। অথৈও খালামনির কাছে বসে নিজের হাত দিয়ে পা দুটো উপরে উঠিয়ে নিয়ে আসলো।

“”আরে আরে কি করছো?””

অথৈ পা ছুয়ে সালাম করে হাসি মুখে বললো,

“”কাল সালাম করিনি বলে আমার সাথে রাগ করোছো তাইনা?””
“”…””
“”আমি তো তোমার সাথে একটু মজা করছিলাম। তুমি এভাবে রেগে যাবে বুঝতে পারিনি সরি।””

অথৈ মন খারাপ করে দুকান ধরে আছে। মিসেস ইরানী অথৈর মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন। মেয়েটা দেখতে যেমন মিস্টি তেমনি মায়ায় ভরা।

মাহির ক্লাস নেওয়ার ফাকে ফাকে বারবার আরমানের দিকে তাকাচ্ছে। নিজের ক্লাসের শেষ ব্রেঞ্চে বসিয়ে রেখেছে। দু হাত দিয়ে চোখের পানি মুচছে। আরমানের পানি মুছা দেখতে দেখতে মাহির ক্লান্ত হয়ে গেলো। এতক্ষন কেউ কাদতে পারে??? এত চোখের পানি কোখা থেকে আসে???

ক্লাস শেষে আরমানকে বাইরে ক্যান্টিনে রেখে মাহির অফিস রুমে গেলো।

সবার সাথে কথা বলে বিদায় নিয়ে বের হতেই ক্যান্টিনে চিল্লাচিল্লির শব্দ পেলো। দ্রুত ক্যান্টিনের দিকে এগুলো। চারপাশে তাকিয়ে কোথাও আরমানকে না পেয়ে মাহিরের বুক কেপে উঠলো। কয়েকটা ছেলেমেয়ে গোল হয়ে কাকে মারধোর করছে?? আরমান নাতো????

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here