গল্পঃ #প্রতিশোধ
পর্বঃ ১৫+১৬
লেখাঃ #Mst_Liza
,
জীবন থেকে ২০টা বছর চলে গেল।এর মধ্যে এমন একটা রাত নেই আমি আমার মিরাকে নিয়ে ভাবি নি।এমন একটা দিন নেই তোমায় অনুভব করি নি।তুমি আছো, তুমি ছিলে আর জীবনের শেষ নিশ্বায় পর্যন্ত তুমিই থাকবে আমার জীবনে।তুমি বলতে না মিরা? আমি সত্যিই খুব পঁচা, নোংরা, খারাপ একটা মানুষ।সত্যিই আমি তোমার যোগ্য নই।ভুল বুঝেছি আমি।ভুল বুঝে তোমার মতো একটা নিষ্পাপ মেয়েকে মিথ্যা অপবাদ দিয়েছি।আর আজ আমি তার শাস্তি পাচ্ছি।তোমাকে হারিয়ে বুঝেছি তুমি কি ছিলে আমার জীবনে! আমি যানি না আর কক্ষণো তুমি ফিরে আসবে কিনা।বলবে কিনা ওগো আমাকে একটু ভালোবাসুন! একটু আদর দিন! তবুও আমি তোমার অপেক্ষা থাকি।খুব ভালোবাসি যে তোমায়।মিরার ছবি বুকে নিয়ে কথাগুলো বলে কাঁদতে থাকে সোহাগ।
হঠাৎ সোহাগের কাঁধে কারও হাত পরে।সোহাগ চোখের পানি মুছে তাকিয়ে দেখে বোন রাইশা ছলছল চোখে সোহাগের দিকে তাকিয়ে আছে।
সোহাগ মির্জাঃ তুই কখন এলি ছুটকি?
রাইশাঃ,,,,,,
সোহাগ মির্জাঃ কি হলো কথা বলছিস না?
রাইশাঃ আর কত নিজের কষ্টগুলো সবার থেকে লুকাবে ভাইয়া?
সোহাগ মির্জাঃ কিসের কস্ট? মুচকি হাসি দিয়ে বলে।
রাইশাঃ ভাবির ছবি বুকে নিয়ে এতোক্ষণ তুমি যেই কথাগুলো বলছিলে।তার সব আমি শুনেছি।এতো ভালোবাসো তুমি ভাবিকে? তাহলে কেন ভাইয়া? সেদিন ভাবির কথাগুলো যদি একবার শুনে নিতে তাহলে আজ এই ভাবে তোমাকে কস্ট পেতে হতো না।আমার ভাবি যে ফুলের মতোন পবিত্র।
সোহাগ মির্জাঃ খুব ভুল করেছি আমি।নাহ ভুল কেন বলছি আমি যে অপরাধী।
রাইশাঃ ওই মিথ্যাবাদী হাসানের কথায় তুমি সেদিন বিশ্বাস না করলে ভাবি আজ আমাদের সাথেই থাকত।
সোহাগ রাইশাকে জড়িয়ে ধরে খুব জোড়ে কাঁদে।
সোহাগ মির্জাঃ ভুল করেছি রে বোন।অনেক বড় ভুল করেছি। আমার তখন মাথার ঠিক ছিল না। আর তাই তো মিরাকে কোনও কথা বলার সুযোগ দেয় নি।শুধু আমার সিদ্ধান্তটা ওর উপর চাপিয়ে দিয়েছি।ও এখন কোথায় আছে? কেমন আছে? কিছুই আমি যানি না।
রাইশাঃ ভাইয়া কেঁদো না প্লিজ! আমি তোমাকে এভাবে কাঁদতে দেখতে পারছি না।
রাইশা সোহাগকে বসিয়ে হাতে এক গ্লাস পানি ধরিয়ে দেয়। সোহাগ ডগডগ করে পানিটুকু খেয়ে নেয়।
সোহাগ মির্জাঃ আচ্ছা রাইশা! তোর ভাবি তো যানে আমার খুব রাগ তাহলে এভাবে কেন আমাকে ছেড়ে চলে গেল? ও কি পারতো না প্রতি বারের মতো তখনও আমাকে একটু সময় দিতে।একটু বোঝাতে? ওতো যানে আমি ওর উপর যতোই রাগ করে থাকি না কেন ওকে ছাড়া থাকতে পারি না!
রাইশাঃ আত্মসম্মানবোধ! হ্যাঁ ভাইয়া।একটি মেয়ে তার স্বামীর সব অন্যায় সহ্য করে বাকীটা জীবন কাটিয়ে দিতে পারে কিন্তু চারিত্রিক অপবাদ! সেটা কখনও একটি মেয়ে সহ্য করতে পারে না।আজ যদি ভাবির জায়গায় আমি হতাম হয়তো আমিও রাইসূলকে ছেড়ে অনেক দূরে চলে যেতাম।
সোহাগ মির্জাঃ হ্যাঁ, খুব খারাপ আমি।মিরা আমাকে সারপ্রাইজ দিতে চেয়েছিল।আর আমি জন্মদিনের পার্টিতে সকলের সামনে ছিঃ আমার ভাবতেও ঘৃণা করছে আমি আমার নিজের সন্তানকে অস্বীকার করেছি।বলেছি মিরার গর্ভে হাসানের অবৈধ সন্তান।
রাইশাঃ হাসান তার প্রাপ্য শাস্তি পেয়েছে!
সোহাগ মির্জাঃ কিন্তু মিরা? ওতো কোনও অপরাধ ছাড়াই এতো অসম্মান সহ্য করেছে।ও অনেকবার আমার কাছে নিজের সম্মানটুকু ভিক্ষা চেয়েছে।বলেছে আমার জীবন থেকে অনেক দূরে চলে যাবে।আর আমি কিনা গোটা সমাজের চোখে আমার মিরাকে এতোটা নিচে নামিয়ে দিলাম।
রাইশাঃ ভাইয়া শান্ত হও।
সোহাগ মির্জাঃ কিভাবে শান্ত হবো বল? এতোগুলো বছর ধরে ভেতরে ভেতরে আমার যে এই অপরাধবোধ টুকু কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে।আমি যে শেষ হয়ে যাচ্ছি বোন।মিরা আমাকে পায়ে পরে বলেছিল, বিশ্বাস করুন আমি পবিত্র।আমার সবকিছুই শুধু আপনার।আমি আপনার আমানত ওই হাসানকে নষ্ট করতে দেয় নি।আর আমি মিরাকে ঘার ধাক্কা দিয়ে বাড়ি থেকে তারিয়ে দিয়েছি।ও অনেক বার আমাকে ডেকেছে আমি শুনিনি।আজ যখন ও নেই তখন আমি কস্ট পাচ্ছি। আমার ভেতরটা শূন্য মরুভূমির মতো খাঁ খাঁ করছে।
আচ্ছা, আমার সন্তান কি পৃথিবীর আলো দেখেছে নাকি আমার অংশ বলে মিরা তাকে…
রাইশাঃ ছিঃ ভাইয়া এমন কথা বলো না।আমার ভাবি কক্ষণো এমন কাজ করতে পারে না।
সোহাগ মির্জাঃ যদি তাই হয় তাহলে তো এতোদিনে আমার সন্তান অনেক বড় হয়ে গেছে।
রাইশাঃ হুমম।একদম আমাদের রুসার সমবয়সী।
চলবে…..
গল্পঃ #প্রতিশোধ
পর্বঃ ১৬
লেখাঃ #Mst_Liza
,
।।।মিরা মেডিকেল
কলেজ & হসপিটাল।।।
,
একটানে টেবিলের উপর যা ছিল রাইসূল সব মেঝেতে ফেলে দেয়। বেল বাজাতেই নার্স, ডাক্তার সব ছুটে ছুটে আসে রাইসূলের কেবিনে।
রাইসূল সিকদারঃ সব শেষ।আমার এতোদিনের সব পরিশ্রম ধুলোয় মিশিয়ে গিয়েছে।এই হসপিটালটা শুধু আমার স্বপ্ন না।এর সাথে জড়িয়ে আছে আমার বোনের নাম। আজ সেই নামে…
সবাইঃ কি হয়েছে স্যার?
রাইসূল রাগান্বিত দৃস্টিতে সকলের দিকে তাকায়।
রাইসূল সিকদারঃ কি হয়েছে সেটা আবার যানতে চাইছেন?
আপনারা এতোটা কেয়ারলেস কিভাবে হতে পারেন?
কি হলো বুঝতে পারছেন না?
রাইসূল টিভিটা অন করে।
সবাই নিউজের নিচের হেড লাইনটা পরে মাথা নিচু করে ফেলে।
কি হলো এখন মাথা নিচু করে আছেন কেন কথা বলুন?
কে করেছে শ্যামলি বসুর অপারেশনটা?
ডা.নাহিদঃ শ্যামলি বসু তো ১০৫ নাম্বার কেবিনে ছিল।স্যার ১০৫ নাম্বার কেবিনের পেশেন্টের সার্জারি ডা.মাহির খান করেছে।
রাইসূল সিকদারঃ হোয়াট?
ডা.মানহাঃ জ্বি, স্যার! এটাই সত্যি।
রাইসূল সিকদারঃ নার্স এক্ষুণি গিয়ে ডা.মাহিরকে ডেকে আনুন।
নার্স গিয়ে ডা.মাহিরকে ডেকে আনে।হুট করে মাহির ক্লাস ছেড়ে চলে যাওয়ায় ক্লাসের সব স্টুডেন্টরা অফ টাইম পালন করছে।কেউ ক্যান্টিনে যায় তো কেউ যার যার কাজ নিয়ে ব্যস্ত।মায়া গিয়ে হসপিটালের পেশেন্টদের খোঁজ খবর নিতে থাকে।তারপর হাটতে হাটতে রাইসূলের কেবিনের কাছে চলে আসে।সেখানে অনেক চিৎকার চ্যাচামেচির আওয়াজ শুনে ব্যাপারটা বুঝতে কেবিনের বাইরে উঁকি দেয়।আর দেখে মাহির বকা খাচ্ছে।
রাইসূল শ্যামলি বসুর ফাইলটা মাহিরের মুখের উপর ছুড়ে মারে।মাহির ফাইলটা তুলে খুলে দেখে বিস্মিত হয়।কারণ রিপোর্টটা চেন্জ।
রাইসূল সিকদারঃ পেশেন্টের শরীরে কোনও রোগ না থাকা স্বত্বেও কেন আপনি অপারেশন করেছেন?
মাহিরঃ স্যার আমি রিপোর্টটা দেখেই অপারেশন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম।
রাইসূল সিকদারঃ তার মানে আপনি বলতে চাচ্ছেন সব জেনে শুনে একজন পেশেন্টকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছেন?
মাহিরঃ আমি সেটা কখন বললাম স্যার? আমি তো বলতে চেয়েছি রিপোর্টটা আমার দেখার সময় কেউ বদলে দিয়েছে।কেউ হয়তো আমাকে ফাঁসাতে চায়।
রাইসূল সিকদারঃ অদ্ভুত তো! কে আপনাকে ফাঁসাতে চাইবে?
মাহিরঃ বিশ্বাস করুন স্যার! আমি যখন রিপোর্টটা দেখেছিলাম তখন পেশেন্টের অপারেশন হওয়াটা খুব প্রয়োজন ছিল।
রাইসূল সিকদারঃ তাই নাকি? তা কিভাবে মানবো আপনি যা বলছেন সত্যি বলছেন? কি প্রমাণ আছে আপনার কাছে?
মাহিরঃ স্যার এখন আমার কাছে কোনও প্রমাণ নেই তবে একটু সময় দিলে আমি প্রমাণ জোগার করে আনতে পারব।
রাইসূল সিকদারঃ বেশ! আমি আপনাকে ২৪ ঘন্টা সময় দিচ্ছি।এর মধ্যে যদি আপনি নিজেকে নিঃদোষ প্রমাণ করতে না পারেন তাহলে আপনার থেকে ডাক্তারীর লাইসেন্স কেড়ে নেওয়া হবে।আর আপনাকে পুলিশেও দেওয়া হবে।
মাহিরঃ ওকে স্যার।
,
,
মাহির রাইসূলের কেবিন থেকে বেড়িয়ে এসে কেবিনের সামনে মায়াকে দেখতে পাই।মায়ার তো ভয়ে কলিজা শুকিয়ে যাচ্ছে, না যানি মাহির এখন তাকে কিনা কি বলবে! কিন্তু মায়াকে অবাক করে দিয়ে মাহির একটু আড় চোখে তাকিয়ে মায়ার পাশ কেটে চলে যায়।
মায়াঃ অদ্ভূত লাগলো ব্যাপারটা! লোকটা আমায় কিছু না বলেই চলে গেল। এমনটা তো আগে কক্ষণো হয় নি।সত্যিই কি উনি অনেক বড় ঝামেলায় ফেঁসেছে? এখন পুরো হসপিটাল তার বিপক্ষে।কেউ উনার কথা বিশ্বাস করবে না।কিন্তু আমি তো যানি উনি কখনও এতো বড় ভুল করবেন না।আমার পুরো বিশ্বাস আছে উনার উপর।মায়া মনে মনে কথাগুলো ভেবে দৌড়ে গিয়ে মাহিরের সামনে এসে দাঁড়ায়।
মাহিরঃ কি হলো?
মায়াঃ স্যার আমি আপনাদের সব কথা শুনেছি। আমি কি আপনার কোনও সাহায্য করতে পারি?
মাহিরঃ কি করবে?
মায়াঃ যা আপনি বলবেন।আমার মনে হয় আপনার পাশে আমার এখন থাকাটা খুব দরকার।
মাহিরঃ সরো সামনে থেকে।
মায়াঃ নাহ!
মাহিরঃ ঠিক আছে এসো আমার সাথে! মাহির মায়াকে টেনে স্টোর রুমে নিয়ে যায়।
মায়াঃ একি! এখানে কেন আনলেন?
মায়া মনে মনে ভয় পায় হয়তো কথাটা বলার জন্য মাহির মায়াকে শাস্তি দেবে!
ভয়ে মায়ার কপালে ঘাম চলে আসে।মাহির মায়ার হাতদুটি শক্ত করে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে।
মাহিরঃ কি সাহায্য করবে তুমি আমার?
মাহির মায়ার দিকে মুখটা এগিয়ে নিয়ে আসে।
মায়া লজ্জা লজ্জা মুখ করে বলে, কি করছেন আপনি?
মাহির মায়ার এক হাত ছেড়ে দিয়ে স্টোররুমের লাইটটা অন করে।লাইট অন হলে মায়া চোখটা তুলে মাহিরের দিকে তাকায়। তখন মাহির মায়ার আরেকটা হাত ছেড়ে দিয়ে মায়াকে ধাক্কা দিয়ে দূরে সরে যায়।
মাহিরঃ কি করব ভেবেছিলে? শোনও মেয়ে তোমাকে আমি বিয়ে করেছি শুধুমাত্র আমার বাবা-মাকে খুশী করতে।তাছাড়া তোমার মতোন একটা পিতৃপরিচয়হীন মেয়েকে নিজের স্ত্রী হিসেবে মেনে নেওয়া আমার পক্ষে সম্ভব নয়।আর কখনও স্ত্রী হওয়ার কথা মনেও করো না।মানুষ জানলে কেলেঙ্কারি হয়ে যাবে।এটা আমার প্রফেশনাল প্লেস।
মনে থাকবে কথাটা?
ধমক দিয়ে বলে, বল মনে থাকবে।
মায়াঃ হুমম…ম….নে! থা…ক..বে।
ভয়ে ভয়ে বলে মায়া।
মাহিরঃ গুড! এখানে শ্যামলি বসুর সেই নকল ফাইলটা পাওয়া যেতে পারে। সাহায্যে করতে চেয়েছিলে না? এখন খোঁজও!
মায়াঃ এখানে তো অনেক ফাইল।কোথায় খুঁজবো?
মাহিরঃ তা আমি যানি না।এই আমি বসলাম তুমি খুঁজে এনে আমার কাছে দাও।
একটা চেয়ার টেনে এনে মাহির পায়ের উপর পা তুলে বসে পড়ে।
চলবে……