তনুশ্রী পর্ব ৬

#তনুশ্রী♥
#লেখক:হৃদয় আহমেদ
#পর্ব_৬

– আমি আজ আসি। একদিন সবটা বলবো। এখন এসব দয়া করে তনুর মাথায় ডোকানোর চেষ্টা করবেন না। ‘
তখনি ঘর থেকে বেড়িয়ে আসে তনু। তূর তনুর হাত শক্ত করে ধরে বেড়িয়ে যায় সদর দরজা দিয়ে। লতিফা হাউমাউ করে কেঁদে ওঠেন। সন্তানকে বাঁচানোর টানে ছুটে যান মেয়েকে আটকানে। সদর দরজা পেড়িয়ে আঙিনা পেড়োয় তূর। তনু চেয়াল খিচে এক ঝটকায় হাত ছাড়িয়ে নেয়। কন্ঠ রাগান্বিত,
– কি করতাছেন? চইলা যাচ্ছেন যে?
– চলো এখান থেকে।
– কিল্লাই? আম্মাতো দুদীন থাকতে কইছে।
– থাকা সম্ভব নয়।
– ক্যান?
তূর রেগে যায়। আবারো হাত আঁকড়ে ধরে তনুর। লতিফা ছুটে এসে তূরের পা জরিয়ে কেঁদে ওঠেন,
– মাইডার ওমন ক্ষতি কইরো না আব্বা! চঞ্চল মাইয়া একদমই নিস্তেজ হইয়া যাইবো। আমার ঘাট হইসে। আমি আর কাউরে কমু না এই বিষয়ে। যাইয়ো না নিয়া ওরে। ‘
তূর কোমল হাতে উঠে দাড় করালেন লতিফাকে। লতিফার চোখের পানি মুছিয়ে দেয় নিজ হাতে তূর। তূরের দুহাত আঁকড়ে ধরেন লতিফা। যেন ছাড়লেই নিজের কলিজা হাড়িয়ে যাবে। তূর হাতের উপর হাত রেখে বললেন,
– আমি বলছিতো, তনু ঠিকিই থাকবে। ইশয়াখের হাতে আমি ওকে পড়তে দিবো না। ‘
– তাইলে যাও ক্যান? থাহো! ‘
– কিন্তু এখানে থাকা মটেই ঠিক নয়। আমার পক্ষে সম্ভব নয় এখানে থাকা। আমরা আসছি..! ‘
লতিফাকে ছাড়িয়ে বেড়িয়ে যায় তূর তনু! মাটিতে হাটু ফেলে চিৎকার দিয়ে কেঁদে ওঠেন লতিফা। কলিজা ছিড়ে আসছে তনুর জন্য। ভেবেছিলো সবটা বলে মেয়েকে সাবধান করে দিবেন তিনি। কিন্তু হিতে বিপরীত হয়ে গেল! এখন তার আল্লাহ ভরসা। একমাত্র তার সৃষ্টিকে সেই বাঁচাতে পারে!
লতিফার কান্নাস্বর কানে আসতেই গুদাম ঘর থেকে ঘোড়ার ন্যায় ছোটেন আজিদ। উঠানে লতিফাকে পড়ে থাকতে দেখে তিনি উঠে বসান। রাগ কয়েকশ গুন বাড়ে লতিফার। উঠে কষে চড় বসিয়ে দেন লতিফা নিজের স্বামীর মুখে। হঠাৎ লতিফার এমন আচরনে হকচকিয়ে ওঠেন আজিদ। কিয়ৎপরিমাণ সময় পর তিনি রেগে যান। লতিফা সম্মুখে দাড়ায়। কন্ঠ কড়া,
– নিজ মেয়েরে দিলা তো বানের জোয়ারে ভাসিয়ে? পারসো ক্যামনে? এতটুহু কষ্ট হয় নাই? বেদনা পাও নাই এতটুকু? ‘
রাগ গায়েব হয়ে যায় আজিদের। তিনি মুখ ফিরিয়ে দাড়ায়। তারও যে অজানা কারনে ফেটে যাচ্ছে বুক। রক্তক্ষরণ হচ্ছে! কেন? আজ তার পিতৃত্বের স্নেহ পেয়েছে? নাকি ভাবছে তনুর নিস্তেজ দেহটা কেমন হবে সেটা নিয়ে? লতিফা সামনে যায়। চোখ নামিয়ে নেন আজিদ। মুখ দেখাবার পথ নেই!
– কতা কওনা কিল্লাই? মুখ নিচে ক্যান? এহন আফসোত কইরা লাভ নাই, মেয়েরে..আটকাইতে.. ফারি নাই আমি! ‘
কথা বলতে বলতে আটকে আসছিলো লতিফার গলা। তিনি আবারো কেঁদে ফেললেন। মুখ তুলে আজিদ। কন্ঠতে ভয়,
– আটকাইতে ফারো নাই মানে..?
– চইলা গেছে। নিয়ে গেছে তনুরে! পাদুডা ধইরাও লাভ হয় নাই। নিয়া গেছে। নিয়ে গেছে। ‘
বলতে বলতে মাটিতে শুয়ে পড়েন লতিফা। বেড়িয়ে যায় আজিদ দৌড়ে! তির্যক রোদে গা পুড়ে যাওয়ার উপক্রম লতিফার! সেখানে তার সেই জ্বলন হচ্ছে বুকে! পুড়ছে কলিজা! শরীরের ব্যথা তার কাছে এ ব্যথার থেকে নিতান্তই তুচ্ছ!

_____________
লাল রঙা পান্জাবী ভিজে উঠেছে। চিপকে রয়েছে শরীরের সাথে। রোদ আজ আগুন গরম! বাতাসের ছোঁয়া নেই কোথাও। বড় আমগাছটার নিচে দাড়ায় তূর। কোন ভ্যান আসছে কিনা লক্ষ্য করে একবার। রোদে রাস্তা গরম তাওয়ার ন্যায় উত্ত্যক্ত গরম! জুতাকে ভেদ করে সে গরম লাগে পায়ে! তনু অস্রু ভরা নয়নে তাকিয়ে তূরের দিকে। ‘লোকটায় কি নির্মম? নাকি বেশি আবেগগত ব্যাক্তি? মায়ে পড়া সত্ত্বেও উনি চলে আসলেন? খাওয়া ছেড়ে? নাকি আম্মা সব জেনে গেছিলো? কি জানছিলো আম্মায়? যার কারনে খাওয়া থেকে উঠে নিয়ে এলেন উনি? ‘ ভাবতে থাকে তনু। তূর ঘাম মুছছে কিছুক্ষণ পরপর। কোথাও ভ্যানের দেখা নেই। রাস্তার এপাশ ওপাশ তাকাতেই তূরের চোখ পড়ে তনুর উপর। একচোখে কিছু দেখছে তনু তূরের দিকে। তূরের কন্ঠ কোমলপ্রাণ,
– কি দেখছো?
– দেখতাছি আপনি ঠিক কেমন?
– তার মানে?
– কি জন্য চইলা আইলেন?
– উত্তর কি এটা হওয়া উচিত ছিলো?
– আম্মাও তো উত্তর দিতে চাইছিলো আইজ। আফনেই তো..’
– আমি কি?
– আটকালেন!
– তুমি এখনো উপযুক্ত নও এতকিছু শোনার জন্য।
– এ বিয়াতেও তো উপযুক্ত ছিলাম না। তবুওতো পিরাতে বসতে হইসে। ‘
– কারন চাই তো তোমাকেই! ‘
– তার মানে? ‘
– নিজ বাবা হয়ে কিভাবে পাড়লো আজিদ তার মেয়ের ছবি হাতে তুলে দিতে? আর ইশয়াখ তো কু*র থেকেও নগন্য! ‘
– আমি বুঝিনাই! আর আব্বায় আপনার থেকে বড়! নাম নেন কেন? ‘
– বোঝা লাগবো না। সবাই শরীরে বড় হয়েও হয়না। চলো এখান থেকে। ওইযে ভ্যান, চাচা শুনেন, মোড়ল বাড়ি চলেনতো! ‘
তনু একপাশে তূর একপাশে বসে ভ্যানে। ছুটতে থাকে ভ্যান মোড়ল বাড়ির উদ্দেশ্য!

আজিদ দূর থেকে লক্ষ্য করেন ওরা ভ্যানে উঠে পড়েছে। কড়া রোদ হওয়ায় পা দ্রুত চালিয়ে চলছে ভ্যান চালক। বুকের ব্যাথাকে নিয়েই ফিরে আসে আজিদ।

____________
– ইশয়াখ, আজ তোমার জন্য আবার ওই মেয়েকে ওখানে থাকতে হবে, নাটক করতে হবে। মিথ্যা বলে আনতে হবে ওই মেয়েকে! মইনুল পারবে না কিছু। কাঁচা খেলোয়াড় গুলোকে…’
– চার বউকে আনতে পেরেছে আর এটুকু মেয়েকে আনতে পারবে না? আচ্ছা,কাল নিশাত, আজিদ ওদের আনছিলা? ‘
– আনছিলাম তো! কিন্তু ওরাতো চলে গেলো তুমি ছিলে না দেখে। ‘
একটানে পুরো মদের বোতল ডাকডোক করে খেয়ে নেশাগ্রস্ত চোখে তাকায় ইশয়াখ। ইশা আম্বানিকে বলে ওঠে,
– কত টাকার লোভ দেখাইছিলা ওদের? ‘
হালকা হাসেন ইশা। মুখ অন্য ভঙ্গিতে নিয়ে বলেন,
– পিচ্চি তো! কয়েকশ টাকার কথা বলছি আর রুহানকে দেখানো হইছে! তারা রাজি! হাসতে হাসতে চলে আসছিলো। কিন্তু তুমিই তো কোথায় জানি উধাও হয়ে গেছিলা! কই ছিলা? ‘
– কাজ ছিলো। টেলিফোন তো ছিলো ইশা! ‘
ইশা আফসোসের ন্যায় বলে ওঠেন,
– উফফফ! তুমি নতুন টেলিফোন আনছো কথাটা যে কেন ভুলে যাই আমি! আমার মনেই ছিলো টেলিফোনের কথা! ‘
– ভাইকে ফোন দিছিলা নাকি? ‘
চোখ ছলছল করে ওঠে ইশার। ইশয়াখের কথাতেই যেন বুকে ছ্যাত করে ওঠে ইশা আম্বানির। স্বামীকে দেখেনা আজ থেকে কত বছর? তিনি লুকিয়ে যান কষ্ট! হাসি ফুটিয়ে বলেন,
– ফোন দেইনি! কেমন আছে মানুষটা? ‘
চোখ বুজিয়ে হেঁসে ওঠে ইশয়াখ। চোখ বুজেই বলে,
– বন্দী মানুষ আর কত ভালো থাকে? ডং কম কর! আমার কাজে ব্যাঘরা দিতে আসছিলো। তোমার কাউকে প্রয়োজন হলে গোডাউনে চলে যাবে। সুদর্ষনের ছ্যামড়ার অভাব নাই! ‘
– আইচ্চা! কিন্তু মূল কথা তো সেটা না। কথা হলো মেয়ে নিজেই আসছিলো। আর তুমি তাকে পালাতে দিলা? ‘
– অমন সুন্দরী কমই থাকে। উত্তেজনা কমানো বড্ড কঠিন হইছিলো তনুকে দেখে। ‘
– আমি আরো কত আদর করতেছিলাম তনুকে! যে বাঘে যখন পাইছি তখন সুতলাই নিয়ে যাবো। আর কয়দিন আছে? ‘
– দশ দিনের মতন! ‘
ইশা কিছুক্ষণ চুপ থাকে। ইশয়াখের ঘর থেকে দুটো বেরোনোর পথ ছিলো না। দুজনে মিলে করেছে! কেউ আসলে যেন বাড়ি খালি করা যায়। নীরবতা কাটিয়ে ইশা ভয়ক্লিষ্ট হয়ে বলেন,
– সেদিন তোমারে কে মারছিলো ইশয়াখ? একটুর জন্য বাঁচছো! ‘
উত্তর অট্টহাসিতে ফেটে পড়ে ইশয়াখ!

#চলবে..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here