প্রেম প্রিয়জন পর্ব ৭

#প্রেম__প্রিয়জন🌸
#Writer_Sumaiya_Karim

~সপ্তম পর্ব~

পূর্ণ চুপচাপ নাস্তা করে যেই না নিচে যেতে নিবে ওমনি শুনতে পায় কারো কান্নার শব্দ। শব্দ টা স্পষ্ট কানে বাজছে। কন্ঠ জানান দিচ্ছে এ আর কেউ নয় এটা পরি। কেননা কান্না তার রুম থেকেই আসছে। পূর্ণের পা যেনো থমকে গেলো। বুক টা আচমকা ই ধ্বক করে উঠলো। অস্বাভাবিক এক অনুভূতি খেলে গেলো নিজের মধ্যে। নিচে যাওয়ার সব দরজা যেনো বন্ধ হয়ে গেলো মুহুর্তের মধ্যে। সে দ্রুত ই পা বাড়িয়ে পরির রুমের দিকে যায়। আর দেখে পরি রুমে নেই। বেলকনিতে সম্ভবত। কান্নার শব্দ এখন নেই। সে কি তাহলে ভুল শুনেছিলো? ভেবে কোনো উত্তর পেলো না। বেলকনিতে গিয়ে দেখে পরি অন্য দিকে মুখ করে তাকিয়ে আছে।

–‘পরি?’

পরি যথাসম্ভব চেষ্টা করছে কান্না চেপে রাখার। পূর্ণের কথা ভাবতেই হঠাৎ করে তার এতো কষ্ট কেন হলো নিজেও জানে না। কারো পায়ের শব্দ পেতেই ঠোঁট চেপে কান্না বন্ধ করার চেষ্টা করে। পেছন থেকে পূর্ণের গলা শুনে আরো ভয় পেয়ে যায়। এই চোখের পানি পূর্ণ দেখে ফেললে? ভয়ে ভয়ে একটা ঢোক গিলে।

–‘কথা বলছিস না কেন?’

–‘হ-হ্য-হ্যাঁ ভা-ই-য়া কি-কিছু লাগবে?’ [বেশ ধরা গলায় বললো কথা টা]

–‘তুই কি কাঁদছিস?’

–‘কই না তো!’

–‘ওহ আচ্ছা!’

পূর্ণ কে বুঝতে না দেওয়ার চেষ্টা করায় পূর্ণ ভুল শুনেছে ভেবে চলে যেতে চায়। কিন্তু কিছু একটা মনে হতেই আবারো পেছনে ফিরে। গাড়ো ভাবে লক্ষ্য করে পরি তখন থেকে পেছন ফিরে আছে। ব্যাপার টা খটকা লাগায় সে পরির সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। তার চক্ষু চড়কগাছে। মিনিট কয়েকের মধ্যে কেঁদে চোখ দুটি ফুলিয়ে লাল করে আছে মেয়েটা। এ যেনো অবিশ্বাস্য। বাকরুদ্ধ হয়ে যায় পূর্ণ। পরি যতটা সম্ভব নিজেকে স্বাভাবিক করে যেই না চলে যেতে নিবে পূর্ণ পেছন থেকে তার হাত টেনে ধরে,

–‘কাঁদছিস তুই?’

–‘উহুঁ আসলে চো-খে পোকা ঢুকেছে!’

পূর্ণ তার করা কাজের জন্য পরি কাঁদছে মনে করে রেগে বেলকনির দেয়ালে নিজের হাতে একটা ঘুষি মেরে বলে উঠে,

–‘শিটট…!’

পরি যেনো হা হয়ে গেলো। ঘুষি টা এতোটাই জোড়ে ছিলো যে হাত টা কয়েক জায়গায় ছিলে যায়। পরি ভয়ে কেঁপে উঠে পূর্ণের হাত টা ধরে বলে,

–‘এটা কি করলেন আপনি?’

–‘শাস্তি দিলাম নিজেকে! আ’ম সরি! আসলে আমি ইচ্ছে করে তোর সাথে এমন করিনি! তুই কষ্ট পাবি জানলে কখনো এমন করতাম না। বিলিভ মি!’

–‘আমি?’

ছলছল চোখে পূর্ণের মুখের দিকে তাকিয়ে আছে পরি। চেহারা লাল বর্ণ ধারণ করেছে। হাত থেকে রক্ত বের হচ্ছে দেখে পরি বললো,

–‘আ-পনি আমার সাথে আসুন! হাত থেকে তো রক্ত পড়ছে!’

–‘থাক পড়তে দে!’

–‘পাগল হয়ে গেছেন নাকি আপনি হ্যাঁ? আসেন বলছি!’

পরি নিজের কথা ভুলে এক প্রকার টেনে নিয়ে যায় পূর্ণ কে। ঘরের এপাশ ওপাশ ছুটে ফার্স্ট এইড বক্স টা খুঁজতে থাকে। দ্রুত ই সেটা নিয়ে এসে যতটা সম্ভব রক্ত পড়া অংশ ক্লিন করার চেষ্টা করে। পূর্ণ বাঁধা দিতে দিতে ও আর দেয় না। এই মুহূর্তে সে চুপ। পরি রেগে বলে,

–‘আশ্চর্য! আমি একবার ও বলেছি আমি কি জন্য কাঁদছি? এমন পাগলামো করার কোনো মানে হয় না!’

–‘সত্যি করে বল তো কেন কাঁদছিস?’

–‘আ-মার নিরা কে খুব মনে পড়ছে তাই কাঁদছি!’

–‘নিরা?’

–‘হ্যাঁ আমার ফ্রেন্ড। খুব মিস করছি ওকে!’

পরির কথা তাও কেন যেনো পূর্ণের বিশ্বাস হতে চাইলো না। পূর্ণ চলে যেতে নেয় পরি বলে,

–‘আ-মি হোস্টেলে চলে যেতে চাই।’

পূর্ণ ফিরলো পরির দিকে। কথা টা বলে তার নজর নিচের দিকে নিক্ষেপ করলো। পূর্ণ কিছু একটা ভেবে বললো,

–‘রেডি হয়ে নে!’

–‘এ-খ-ন?’

–‘হ্যাঁ!’

পূর্ণ চলে যায় নিচে। তার মিটিংয়ের ডেট টা পিছিয়েছে কদিন। তাই ভালোই হয়েছে।

পূর্ণ নিজেও রেডি হয়ে নেয় পরি কে হোস্টেলে ড্রপ করে দেওয়ার জন্য। ড্রয়িংরুমে এসে দেখে ওখানে পুষ্পা বসা। পুষ্পা ও পূর্ণ কে দেখে কিছু বলতে নিবে তার আগে তার মায়ের রুম থেকে ডাক পড়ে,

–‘পুষ্পা একটু এদিকে আয়। তোর সঙ্গে কথা আছে!’

পুষ্পা পূর্ণ কে বলে,

–‘তুমি এখানে বসো ভাইয়া আমি দেখে আসি!’

পূর্ণ সম্মতি দিলে পুষ্পা যায় ডাকে সাড়া দিতে। রুমে যেতেই মা রেগে বলে,

–‘কি হয়েছে তোর পুষ্পা?’

–‘আমার আবার কি হবে?’

–‘পরির পক্ষ নিচ্ছিস? একসঙ্গে বসে খাওয়াচ্ছিস এসবের মানে কি?’

–‘কোন মানে নাই!’ [ডোন্ট কেয়ার ভাব করে]

তিনি মেয়ের কথা শুনে আরো রেগে যান!

–‘ফাজলামো করছিস নাকি আমার সঙ্গে!’

–‘আমি কি ফাজলামো করলাম তোমার সাথে মা?’

–‘তুই ওর সাথে ভালো ব্যবহার করতে পারিস না! জানিস না ও আমাদের জন্য কি? ওর উদ্দেশ্য কি?’

পূর্ণ তাকে সব গোপন কথা বলতে না করেছিলো বলে পুষ্পা বললো,

–‘আমি এক মেয়ে হয়ে অন্য একটা মেয়ে কে এতোদিন খারাপ ব্যবহার করে এসেছি তাতে আমি নিজেই লজ্জিত। পরি যেমন ই হোক আমার মতোই একটা মেয়ে তো? আর উদ্দেশ্য ওর কাছে। ওর কর্মফল ও পাবে। যখনি এমন কিছু করতে বা হতে দেখবে তোমরা তো আর হাত গুটিয়ে বসে থাকবে না তাই না মা? যখনের টা তখন দেখা যাবে তাই বলে পরির সাথে আমি আর খারাপ কোনো কিছু করতে পারবো না। জানের ভয় আমার ও আছে মা। আমাদের উপরেও যে একজন আছে তার কথা ও মনে রেখো। পরি ভুল করলে তার শাস্তি ও পাবে। যেখানে ও এখনো কিছু করে ই নি সেখানে আমরা কেন এখন থেকে ওকে কষ্ট দিবো? আবারো বলছি যখনের টা তখন দেখা যাবে। এখন আমি আর কিছু করতে পারবো না মা সরি!’

পুষ্পা বের হয়ে নিচে চলে আসতে নেয়। পেছন পেছন তিনি ও আসেন।

–‘পুষ্পা আমার কথা শোন!’

উনার চোখ পড়ে পূর্ণের উপর। ব্ল্যাক শার্ট প্যান্ট পড়ে হাত গুটিয়ে বসে আছে সে সোফায়। মাঝে মাঝে বার দুয়েক টিভি টার উপর চোখ বুলিয়ে নিচ্ছে। উনি এবার পুষ্পা কে ছেড়ে পূর্ণ কে বললেন,

–‘মিটিং টার জন্য যাচ্ছিস পূর্ণ?’

–‘নাহ!’

–‘তাহলে কোথায় যাওয়ার জন্য রেডি হয়েছিস?’

–‘পরি কে হোস্টেলে দিয়ে আসার জন্য!’

–‘পরি কে ত…

বলতে গিয়ে তিনি জিহ্বায় কামড় দেন। কথা টা অসম্পূর্ণ থেকে যায়। মাঝ থেকে পূর্ণ বলে,

–‘পরি কে তো কি মা?’

–‘আ-ম- ন-না-মানে ও আজকেই চলে যাবে?’

–‘হ্যাঁ সামনে ওর এইচএসসি পরীক্ষা!’

–‘ও আচ্ছা! কিন্তু তোর না আজকে মিটিং টার জন্য যাওয়ার কথা!’

–‘ওটা পিছিয়েছে কদিন!’

আর কিছু বলার মতো পেলেন না।

পরি রেডি হয়ে নিচে আসে। পরি পুষ্পা আর জেঠি কে আসছি বলে বিদায় নেয়। পূর্ণ আড়চোখে একবার তার মায়ের দিকে তাকিয়েছেন উনার রিয়েকশন দেখার জন্য। গাড়িতে উঠে বসে পরি। জেঠি বলে উঠেন,

–‘পূর্ণ সাবধানে যাস!’

ঘরের ভেতর চলে আসেন তিনি। পূর্ণ কে কিছু বলতে না পারায় রাগ গিয়ে পড়েছে পুষ্পার উপর। উনি পুষ্পার দিকে অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করেন।

–‘যেতে দিলি মেয়েটাকে?’

–‘বিয়ে হচ্ছে না তো কি পরি কে তোমাকে রেঁধে খাওয়ার জন্য রেখে দিতে বলো মা? ওইদিন হাত পুড়িয়ে দিয়েছো এরপর কি ওকেই আগুনে জ্বালিয়ে দিবা নাকি?’

পূর্ণ নিজের হাতে ঘড়ি মিসিং দেখে যেই না ঘড়ি টা নিতে বাড়িতে ঢুকতে যাবে দরজার সামনে আসতেই পুষ্পার কথা শুনে একটা বড়সড় ধাক্কা খায় ও।

তার মানে পরির হাত তার মা পুড়িয়ে দিয়েছিলো। পরি নিজে নয়। পূর্ণ ঘরে ঢুকতেই তার মা যেনো নাকানিচুবানি খেয়ে গেলো। হকচকিয়ে গেলেন তিনি। যেনো চুরি করতে গিয়ে ধরা খেলেন। তাও হাতেনাতে। পূর্ণ চোয়াল শক্ত করে মা কে কিছু বলার জন্য তৈরি হতে নেয় পুষ্পা চোখের ইশারায় তাকে কিছু বলতে নিষেধ করলে সে দমে যায়। সোজা নিজের ঘরে যায় আর ঘড়ি টা হাতে দিতে দিতে নিচে আসে। পুষ্পা পরিবেশ টা স্বাভাবিক করার জন্য বলল,

–‘আবার আসলে কেন ভাইয়া?’

–‘ঘড়ি টা নিতে ভুলে গেছিলাম!’

–‘ও সাবধানে যেও। পরি কে বলো ভালো ভাবে পড়াশোনা করতে!’

–‘আচ্ছা ঠিক আছে!’

পূর্ণ হনহন করে চলে যায়। তার মা যেনো হাঁপ ছেড়ে বাঁচলেন।

———————————

পূর্ণ পরি কে হোস্টেলের সামনে ছেড়ে দিয়ে চলে যায়। রাগ চেপে রাখতে যেনো পারছিলো সে। তাই পুরোটা সময় চুপচাপ ই থাকে। তবে দৃষ্টি ভুলেও পরির দিকে যেতে দেয় নি। পরির কান্না করার বিষয় টি ও মাথায় গেঁথে গেছে। সে হলফ করে বলতে পারে পরি তার জন্য কেঁদেছে। এভাবে হুটহাট কারো মতামত না জেনে তার কাছে চলে যাওয়া টা এক রকম অন্যায়। ঘোর অন্যায় বলে মানতে রাজি পূর্ণ নিজে ও!

পরি হোস্টেলে নিজের রুমে এসে দেখে নিরা নেই! নিশ্চয়ই কলেজে গিয়েছে। পরি ফ্রেশ হয়ে রান্না করে নেয়। নিরার পছন্দের খাবার রান্না করে রাখে। ভালোবাসার মানুষ গুলোর মুখে যদি এই স্বল্প প্রচেষ্টায় হাসি ফুটে তবে খারাপ কিছু হয় না! নিরা হতাশ মনে কলেজে দুটো ক্লাস করেই হোস্টেলে চলে আসে। তার মন খারাপের একটাই কারণ পরি নেই। হোস্টেলে রুমের সামনেই আসতেই দেখেই দরজা ভেতর থেকে বন্ধ! কে বন্ধ করলো? পরি চলে এসেছে ভাবতেই অদ্ভুত রকমের এক আনন্দ অনুভূত হলো মনে। প্রশান্তিতে ছেয়ে গেলো হৃদয় টা। দরজায় কয়েক বার নক করে।

পরি ও বুঝলো নিরা হয়তো এসেছে। সে খুশি হয়ে দরজা খুলে দেয়। দরজা খুলতেই জাপটে ধরে নিরা পরি কে।

–‘তুই চলে এসেছিস? ও মাই গড আমি তো ভাবতেই পারছি না। সত্যি নাকি?’

নিরার পাগলামী দেখে পরি ফিক করে হেসে দিলো।

–‘আরে থাম থাম সত্যি ই!’

–‘তুই কিন্তু কিভাবে?’

–‘এই ভাবেই! চুপচাপ গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নে। খেতে আয় লাঞ্চ টাইম হয়ে গেছে কিন্তু!’

–‘ওকে ওকে যাচ্ছি!’

নিরা যাওয়ার আগে পরির গালে চুমু দিয়ে যায়। পরি আহাম্মকের মতো থ হয়ে তার যাওয়ার দিকে চেয়ে রইলো। নিরা ও এক গাল হেসে বললো,

–‘এতো তাড়াতাড়ি চলে আসবি ভাবি নি। থ্যাঙ্ক ইউ দোস্ত!’

খাবার টেবিলে পছন্দের খাবার দেখে কে দেখে নিরা লাফালাফি। যাই হোক খাবার শেষ করে নেয় দুজন। পরি বিছানায় গা এলিয়ে দেয়। নিরা এগিয়ে আসে তার দিকে। কি কি হয়েছে বাড়ি তে গিয়ে তা নিয়ে গল্প জুড়ে দেয়। হঠাৎ করে নিরা বলে উঠে,

–‘জিজু কে রেখে এতো তাড়াতাড়ি চলে আসার কারণ কি হু?’

–‘আমাকে জেঠা বাড়িতে কেন নিয়ে গেছিল জানিস?’

–‘কেন?’

–‘বিয়ে দিতে!’

–‘কিহহ! মাথা খারাপ নাকি এসব কি বলছিস পরি?’

–‘হ্যাঁ রে সত্যি। জেঠি মা তো পূর্ণ ভাই কে ও বলতে না করে দিয়েছে। আমি তো ভেবেছিলাম বিয়ে টা বুঝি হয়েই যাবে। কিন্তু…!’

–‘কিন্তু কি?’

পরি সব কিছু খুলে বললো। নিরা শুনে অবাক। তবে মাঝখানে পূর্ণের এন্ট্রি দেখে ভ্রুঁ নাচিয়ে বললো,

–‘বাহ দেখলি কিভাবে জিজু তুই না বলা সত্ত্বেও এন্ট্রি নিলো? মনের মিল আছে বুঝলি?’

পরি চুপ করে থাকলো। নিরা বললো,

–‘তাহলে তো তুই আরো কিছুদিন থেকে আসতে পারতি ওখানে। জিজু ও ছিলো!’ [ঠোঁটে ওর দুষ্টু হাসি]

পরি তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বলল,

–‘ওখানে থাকলে হয়তো নিজেকে সামলে রাখতে পারতাম না রে! জানিস জেঠি মা এমনিতে সন্দেহ করে আমি নাকি পূর্ণ ভাই কে জাদু করেছি।‌ তাছাড়া ওখানে থাকলে হয়তো পূর্ণ ভাই ও জেনে যেতো আমি উনাকে ভালোবাসি। আমার ভালোবাসা উনি বুঝুক জানুক তার আগে নিজেকে সরিয়ে নেওয়াই বেস্ট মনে হয়ে ছিলো আমার কাছে! তাই তো সরিয়ে নিলাম। আমার ভালোবাসা গোপন ই থাকুক! প্রকাশ পেলে হয়তো নিজের অস্তিত্ব ই বিলীন হয়ে যাবে!’

(চলবে)

রাতে আরেক পর্ব পেতে পারেন যদি যথাযথ মন্তব্য পাই তবে!😌

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here