প্রেম প্রিয়জন পর্ব ৮

#প্রেম__প্রিয়জন🌸
#Writer_Sumaiya_Karim

~অষ্টম পর্ব~

কেটে যায় অনেক গুলো দিন। প্রায় এক মাসের মতো। পূর্ণ পরি কেউ কারো দেখা পায় না। পূর্ণ বিজনেস এর কাজে আটকে যাওয়ায় প্রচুর ব্যস্ত সে। পরির ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও দেখা করতে পারলো না। কারণ কোনো ওয়ে নাই তার কাছে। একদিন সকালে নিরা আর পরি রেডি হয়ে কলেজে যায়। এইচএসসি পরীক্ষার আর এক মাস বাকি। নিরা সেই কখন থেকে খেয়াল করছে পরি ক্লাসে অমনোযোগী! পরি কে হালকা ধাক্কা মেরে চোখের ইশারায় বললো,

–‘কি হয়েছে?’

পরি ও মাথা নাড়িয়ে বলে দেয় কিছুই হয় নি। নিরা ভালো করেই খেয়াল করে মন মরা হয়ে বসে আছে ও। অবশ্যই কিছু হয়েছে। কোনো মতে ক্লাস টা শেষ হয়।

–‘চল আমার সাথে!’

নিরার কথায় প্রশ্নবোধক দৃষ্টি পরির!

–‘কোথায়?’

–‘গেলেই দেখতে পাবি চল তো!’

এক প্রকার জোড় করে টেনে নিয়ে আসা হলো তাকে। দুজন একটা বেঞ্চিতে বসে আছে।

–‘এভাবে বসে থাকার জন্য এখানে নিয়ে এসেছিস?’

–‘তো কি করতে বলিস?’

–‘আরে ক্লাস করতে হবে না?’

–‘নাহ এভাবে পেঁচার মতো মুখ করে ক্লাস করার কোনো দরকার নাই। বল কি হয়েছে!’

–‘আরে ধুর কি হবে দেখতেই তো পারছিস!’

পরি কে অনেক বার জিঙ্গেস করায় ও লাভ হলো না। সে বার বার বলছে কিছু হয় নি। হতাশ হলো নিরা।

–‘তুই এদিক টায় থাক আমি পানি খেয়ে আসি!’

–‘আচ্ছা!’

নিরা পানি খেতে চলে যায়। কলেজের গেটে এর দিকে আসতেই কেউ হাত নেড়ে ডাকে। নিরা হঠাৎ ই ব্রেক নেয়। সম্ভবত তাকেই ডাকছে।

–‘জ্বি আমাকে বলছেন?’

–‘হ্যাঁ!’

নিরা হা হয়ে আছে। এতো কিউট একটা ছেলে তাকে কেন ডাকলো? পূর্ণ আনইজি ফিল করে তার সামনের মেয়েটা তার দিকে হা করে আছে দেখে। পূর্ণ সামনের জন কে স্বাভাবিক করতে নিজেই বলে উঠলো,

–‘আপনি তো এই কলেজের ই স্টুডেন্ট তাই না?’

–‘হু!’

–‘কোন ইয়ার?’

–‘স-সে-কেন্ড!’

–‘ইয়াহ গ্রেট। পরি কে তো চিনবেন ও কে একটু দরকার ছিলো। আসলে ক্লাসে খুঁজেছি বাট পাই নি!’

–‘আপনি কে?’

নিরা একটু অবাক হয় ছেলেটা পরি কে খুঁজছে দেখে। পূর্ণ জোড় পূর্বক হাসি ফুটিয়ে বলে,

–‘বলছি আগে পরি কে ডাকলে ভালো হয়!’

–‘ওকে ওয়েট।’

পূর্ণ সম্মতি দেয় নিরা ভৌঁ দৌড় মেরে পরি কে আচমকা টেনে হাঁপাতে হাঁপাতে বলে,

–‘দোস্ত তোকে কিউট একটা ছেলে খুঁজছে। আমি তো ক্রাশ খেয়ে গেছি। তোর কোনো রিলেটিভ হবে হয়তো! লাইন করে দিস ভাই কি কিউট আমি তো পুরাই ফিদা!’

পরি নিরার কথার আগা গোড়া কিছুই বুঝতে পারলো না।

–‘রিল্যাক্স নিরা। কি সব বলছিস?’

–‘আরে সত্যি চল চল!’

হতভম্ব হয়ে যায় পরি। টেনে নিয়ে আসে নিরা তাকে। পরি সামনের দিকে না তাকিয়ে বলে,

–‘নিরা এমন কেউ করে? কই তোর ক্রাশ?’

পরি সামনে তাকিয়ে ভূত দেখার মতো চমকে উঠে।

–‘পূর্ণ ভাই আপনি?’

পরির কথা শুনে নিরা টাষ্কিত হয়ে চেয়ে আছে এতোক্ষণ কিউট বলে ফিদা হয়ে যাওয়া ছেলেটার দিকে তাকিয়ে,

–‘আরে জিজু…!’

পরি আচমকা নিরার মুখ চেপে ধরে। পূর্ণ হতভম্ব হয়ে আছে। পরি দাঁতে দাঁত চেপে মনে মনে বলে,

–‘সর্বনাশ!’

পূর্ণ বললো,

–‘কি করছিস ছাড় পরি!’

পরি ছেড়ে দেয় নিরা হাঁপাতে থাকে। নিরার দিকে পরির অগ্নিদৃষ্টি। হাটে হাঁড়ি ভেঙ্গে দিচ্ছে যে। নিরা সারপ্রাইজড হয়ে গেলো। কিছুক্ষণ আগের ভাবনা মাথায় আসতেই বলে,

–‘আ’ম ভেরি সরি ভাইয়া! আসলে আমি বুঝতে পারি নি যে আপনি [পরি দিকে ভ্রুঁ কুঁচকে তাকিয়ে বলে] ই সেই পূর্ণ ভাই!’

–‘ইট্স ওকে বাট সেই মানে?’

–‘না না কিছু না!’

পরি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে বলে,

–‘আপনাকে নিরার কথা বলেছিলাম না ও ই নিরা!’

–‘ও আচ্ছা নাইস টু মিট ইউ!’

–‘সেইম। আচ্ছা আমার একটু জরুরি কাজ আছে ক্লাসে যাচ্ছি পরি তুই কথা শেষ হলে আসিস! প্লিজ!’

–‘নিরা আমরা একসাথে ক্লাস থেকে বের হয়েছি একসাথেই যাবো দাড়া!’

–‘নারে আমার এক্ষুনি যেতে হবে!’ বলে

আবার ও ভৌঁ দৌড় মারে নিরা। পরি একবার তাকে হাতে পেলে মেরে হাড্ডি গুড্ডি সব এক দেবে তা আর বুঝতে বাকি নেই। পূর্ণ তা দেখে বললো,

–‘চলে যাচ্ছে কেন?’

–‘ঐ যে বললো কি কাজ আছে!’

নিরার কথাটা পূর্ণ শুনেছে। জিজু কথার মিনিং সে ভালোই বুঝে। পরি অস্বস্তি তে পড়ে যায়। পূর্ণ নিরার কথা বুঝে গেলো কি না তা নিয়ে অস্থির সে।

–‘রিল্যাক্স পরি কি হয়েছে তোর? ঘামছিস কেন?’

–‘ক-কই না তো। আ-সলে পূর্ণ ভাই নিরার কথায় কিছু মনে করবেন না।’

পরির কথা শুনার আগে পূর্ণ পরি কে নিয়ে তার গাড়ির দিকে অগ্রসর হয়।

–‘আরে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন আমাকে?’

–‘অতিরিক্ত বকবক স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর!’

পরি ভাবলো এই কথা স্বাস্থ্য গবেষক রা কখন ঘোষণা দিলো? পরি কে সারাদিন ঘুরলো পূর্ণ। এই সময়ে দুজন ই ক্লান্ত। পরির হোস্টেলের সামনে এসে গাড়ি দাঁড় করায় পূর্ণ। বিকাল হয়ে গেছে তখন।

–‘নিজের খেয়াল রাখবি আর ঠিক মতো পড়াশোনা করবি ওকে? সামনে পরীক্ষা। ভালো ফলাফল পেলে তোকে তোর লাইফের বেস্ট সারপ্রাইজ টা দেবো আমি!’

পূর্ণ কথা টা বলেই চলে যায়। পরি কথাটার আগামাথা কিছুই বুঝলো না। তার লাইফের বেস্ট জিনিস কি ভাবতে ভাবতে হোস্টেলে ঢুকে।

–‘উফ্ গড তাহলে তুই এসেছিস!’

–‘হুম!’

পরি বিছানায় একবার বসে এক গ্লাস পানি খায়। নিরা এসে তাকে জাপটে ধরে।

–‘আমি তো জানতাম তুই আর ক্লাস করবি না তাই ভালো হয়েছে ক্লাস টাইম শেষে চলে এসেছি। এবার বল তো কি কি করলি দুজন হু হু?’ [চোখে মুখে দুষ্টু হাসি!]

–‘কি আর হবে জোড় করে নিয়ে গেলো ঘুরলো রাক্ষুসীর মতো খাওয়ালো!’

–‘জিজু তোকে প্রপোজ করেছে!’

–‘আর প্রপোজ!’

–‘আরে বল না!’

–‘নাহ রে এমন কিছু আমার কপালে নেই!’

পরি ভাবছে বেশি তাই নিরার দিকে তার অতো মনোযোগ নেই। নিরা তা লক্ষ্য করতেই বললো,

–‘সেই তখন থেকে দেখছি কিছু ভাবছিস। কি হয়েছে বল তো?’

এবার পরি তার দিকে ফিরলো। তার মনে হচ্ছে ভাবনার বিষয় টা নিরা কে বকা দরকার। যদি ও কিছু বলতে পারে। পরি বেশ উৎকণ্ঠা নিয়ে বললো,

–‘আচ্ছা নিরা বলতো আমার লাইফের বেস্ট সারপ্রাইজ কি হতে পারে?’

–‘সারপ্রাইজ ওয়াও কিন্তু কে দিচ্ছে সেটা তো বল!’

–‘পূর্ণ ভাই যাওয়ার আগে বলে গেলো আমি যদি এইচএসসি তে ভালো ফলাফল করি তো আমাকে আমার লাইফের বেস্ট সারপ্রাইজ টাই আমাকে দেবেন! কিন্তু আমি তো…

নিরা ড্যাব ড্যাব চোখ করে পরির দিকে তাকিয়ে আছে। পরি তা দেখে বললো,

–‘আমি তোকে কিছু বলছি নিরার বাচ্চা!’

–‘আমার তো জামাই ই নেই বাচ্চা আসবে কোথা থেকে। আমার কথা ছাড়। আরে গাঁধি বুঝিস নি পূর্ণ ভাই তোকে প্রপোজ করবে সেটাই তো তোর জন্য বেস্ট সারপ্রাইজ তাই না?’

–‘হ্যাঁ তোর মাথা!’

পরি দাঁত কেলিয়ে বিছানা থেকে একটা বালিশ উঠিয়ে নিরার দিকে ছুঁড়ে মারে। আর ফ্রেশ হয়ে চলে যায়!

পরের দিন সকালে নিরা কে দেখে হোস্টেলের ম্যাম এগিয়ে আসে।

–‘নিরা শোনো!’

–‘জ্বি ম্যাম!’

–‘তুমি পরি কে ডেকে দাও। বলো যে ওর সাথে কেউ দেখা করতে এসেছে!’

–‘আচ্ছা ম্যাম!’

ম্যাম চলে যেতেই নিরা ড্যান্স করতে করতে ঘরে ঢুকে। পরি তাকে এই অবস্থায় দেখে বললো,

–‘কিরে ডান্স করছিস হঠাৎ?’

–‘ডান্স করবো না তো কি করবো। আমি নিজে তো প্রেম করবো না তোদের প্রেম দেখবো। আরে যা যা নিচে তোর প্রেমিক আসছে!’

–‘কি সব বলছিস আমার প্রেমিক কোথা থেকে আসবে?’

নিরা জিহ্বায় কামড় দিয়ে বললো,

–‘এই না না জিজু এসেছে তোর সাথে দেখা করতে! জিজু!’

–‘কিহহ..!’

পরি চমকায়। এমনিতেও সারারাত সারপ্রাইজ টা কি হতে পারে তা নিয়ে টেনশনে ছিলো ভাবলো এখন জিঙ্গেস করে নেওয়া যাবে তাই আর দেরি না করে পরি তাড়াহুড়ো করে রুম থেকে বের হয়। নিরা তা দেখে বললো,

–‘একটু আস্তে যা! হাহা!’

পরি হোস্টেলে গেটের সামনে আসতেই থমকে দাঁড়ায়। এটা পূর্ণ নয়। বরং পূর্ণের বাবা দাঁড়িয়ে তার সামনে। মুহুর্তের মধ্যে সব ভাবনা যেনো ফুটুস করে উবে গেলো।

(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here