#প্রেম__প্রিয়জন🌸
#Writer_Sumaiya_Karim
~দশম পর্ব~
জেঠি আচমকা অগ্নিদৃষ্টি নিয়ে পরির গলা চেপে ধরে। পরির চোখ বড় বড় হয়ে যায়। নিশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে পরির। ভীষণ কষ্ট! এই বুঝি প্রাণ পাখি টা উড়ে গেলো!
পরির চোখে পানি চলে আসে। চোখ মুখ উল্টে ফেলায় জেঠি তাড়াতাড়ি ওকে ছেড়ে দেয়। পরি কাশতে কাশতে নিচে বসে যায়। চোখ দুটো বন্ধ করতেই অশ্রু ফোঁটা এসে ভিড় জমায়। আর একটু হলেই যেনো প্রাণ পাখি টা শুদ্ধ উড়ে যেতো। দাঁতে দাঁত চেপে জেঠি বলেন,
–‘খবরদার যদি আবার বলেছিস বিয়ে করবি না তো তোর কপালে খারাপ-ই আছে।’
পরি নিঃশব্দে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে থাকে।
বেশ কিছুক্ষণ পর বাড়িতে মানুষের কোলাহল শুনা যায়। নিশ্চয়ই ওরা চলে এসেছে। পরি অজানা আশঙ্কায় কাঁপতে থাকে থরথর করে। তবে এতোক্ষণ কান্নার পর নিজেকে সামলে নিয়েছে। এভাবে মরার থেকে কপালে যা আছে তাই হতে দেওয়া ভালো মনে হলো তার কাছে। তার ও মরতে ইচ্ছা হয় তবে এভাবে নয়!
একবার দেখতে ইচ্ছে হলো নিচে কে বা কারা বসে আছে কিন্তু সাহসে কুলালো না। তাই থম মেরে অস্থিরতা নিয়ে বসে রইলো। জেঠি আবার আসলেন,
–‘এবার চল মা! তবে একটা কথা শোন কোনো অসভ্যতামো বা আমাদের যদি অসম্মানি হয় তাহলে কিন্তু তোকে আমি ছেড়ে দেবো না। কথাটা মাথায় থাকে যেনো!’ [সয়তানি হাসি লেগে আছে ঠোঁটে]
এই মহিলা কে এই এক্ষুনি মনে হয় ভালো আবার এই ই মনে হয় খারাপ। মানুষ এতো বহুরূপী কেন?
পরির মাথায় জামদানী শাড়ি টার ইয়া লম্বা ঘোমটা টেনে দেওয়া হলো। নিচে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে তাকে। যথাস্থানে নিয়ে গিয়ে তাকে বসানো হলো। পরি একেবারে চুপচাপ। নিচের দিকে তাকিয়ে একভাবে বসে থাকলো। সৃষ্টি অনড়! ঠিক যেনো ছোট গোলগাল একটা বোরট!
–‘তা বেয়ান সাহেবা পরি মায়ের চাঁদ মুখ খানা আমাদের ও একটু দেখান!’
–‘অবশ্যই অবশ্যই!’
পরির মাথা থেকে ঘোমটা সরানো হলো। পাত্র হিসেবে যে এসেছে সে পরির থেকে বয়সে ২৫ বছরের বড় হবে। বলা চলে পরির বাবার বয়সের একজন। নাম এহসান। তিন বিয়ে করে এবার চতুর্থ বিয়ের জন্য পাত্রী দেখতে এসেছে। এহসান পরির মুখ দেখে খুশিতে আত্মহারা। কচি মেয়ে তার উপর এতো সুন্দর। এ যেনো হাত বাড়িয়ে আসমানের চাঁদ পেয়ে যাওয়ার মতো ঘটনা। এহসান মনে মনে বললো তাহলে সে পরির জেঠা জেঠি কে এক লাখ টাকা দিয়ে ভুল করবে না। এহসান নিজেই বলে উঠলো,
–‘বাহ পরি তো দেখছি পরীরর মতোই সুন্দরী।’
কথা শুনে কিংকর্তব্যবিমূড় হয়ে পরি এহসানের দিকে এক নজর তাকাতেই বিস্ময়ে তার চোখ দুটো বেরিয়ে আসছে যেনো। একজন মহিলা আর তার পাশের জন ই এই কথা টা বলেছে। তাহলে পাত্র কে? পাত্র কি আসে নি? কিছুই মাথায় ঢুকছে না পরির!
জেঠা জেঠি বলে উঠেন,
–‘আলহামদুলিল্লাহ তাহলে তো ভালোই হয়েছে!’
এহসান তার পাশে বসা ভদ্রমহিলার হাতে চিমটি কাটে। মহিলা বুঝতে পারেন এই ইশারার মানে কি। এহসান এখানে আসার আগে বলে এসেছিলো মেয়ে যদি পছন্দ হয় তাহলে আজকেই বিয়ে টা করে নিবে সে। কালেমা পড়েই নতুন বউ কে ঘরে তুলবেন। ভদ্রমহিলা হেসে বলেন,
–‘তাহলে বেয়ান আমরা আজকেই বিয়ের কাজ টা সেরে ফেলতে চাই! ছেলের যখন পছন্দ হয়েছে তাহলে শুভ কাজ টা তাড়াতাড়ি করে ফেলাই ভালো কি বলেন?’
পরির কথাটা কানে ঢুকতেই সে দাঁড়িয়ে যায়। এটা ছেলে মানে? সে জোড়ে বলে উঠে,
–‘কিহ তার মানে আপনি ই সেই যে আমাকে বিয়ে করতে এসেছে? লজ্জা করলো না মেয়ের বয়সি একটা মেয়ে কে বিয়ের কথা বলছেন ছিঃ’
এহসান আর ভদ্রমহিলা ও দাঁড়িয়ে যায়।
–‘এসব কি বলছে ও?’
জেঠা জেঠির মাথায় হাত। সব প্ল্যান ভেস্তে দেওয়া যায় কি করে। জেঠি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে বলে উঠেন,
–‘পরি মা এসব কি বলছিস! তুই তো জানতি। আচ্ছা তুই আমার সাথে আয়!’
পরি কে জোড় পূর্বক উনি রুমে নিয়ে যায়। পরি চিল্লিয়ে বলে গেছে সে এ বিয়ে করবে না। কুৎসিত মনা এহসান লালসা চেপে রাখতে পারলো না যেনো। জেঠার পাশে এসে বললো,
–‘পরি কে আমার যেভাবে হোক এখনি বিয়ে করতে হবে। আমার সাথে ওকে আপনারা বিয়ে দিলে ১ লাখ না ২ লাখ দিবো। কিন্তু বিয়ে টা আজকেই হতে হবে!’
এতো টাকার কথা শুনে লোভ চেপে রাখতে পারলো না জেঠা।
–‘কাজি কে ডাকো আজকেই বিয়ে হবে!’
ভদ্রমহিলা বললেন,
–‘কিন্তু মেয়েটা তো বলছে এই বিয়ে করবে না!’
–‘ওর কথায় কি আসে যায়। আমরা ওর গার্ডিয়ান। আমরা যা বলবো তাই হবে!’
জেঠি দুই লাখ টাকার কথা জানতে পারায় চোখে যেনো শুধু টাকা আর টাকা দেখছেন। পরি চিল্লাচিল্লি করছে দেখে তাকে মারধর করা হয়। জোড় করে এনে বসানো হয় এহসানের পাশে। পরির এই দুঃসময়ে তার পাশে একজন মানুষ কে খুব করে চাচ্ছে। যে তাকে এতো বড় বিপদের হাত থেকে বাঁচাবে। তার পাশে সহায় হয়ে থাকবে! তাকে আগলে রাখবে! মা বাবার প্রয়োজন খুব করে ফিল করছে আজ সে। আর মনে হচ্ছে এই পৃথিবীতে তার মতো অসহায় আর কেউ নেই!
সবাই তাড়া দিচ্ছে এহসান কে। পরি ক্লান্ত হয়ে বসে পড়ছে। চোখ দিয়ে নোনাপানির শেষ নেই। গড়িয়ে পড়ছে আপন গতিতে। এহসান বললো,
–‘এই তো কাজি সাহেব রওয়ানা দিচ্ছে!’
————————
এদিকে পূর্ণ পর পুষ্পা নিজেদের ই মামাতো বোনের বিয়ে অনুষ্ঠানে গিয়েছিলো। বাবা মা আসবে বলেছিলো পরে কিন্তু এখনো এলো না। হঠাৎ ই পূর্ণের কেমন অস্থিরতা কাজ করতে লাগলো নিজের মধ্যে। এতো আনইজি লাগছে সব কিছু যেনো তার কাছের কেউ ই তার থেকে দূরে চলে যাচ্ছে। বুকে তীর ছুড়ে মারার মতো কষ্ট হচ্ছে। পূর্ণ এপাশ ওপাশ হাটাহাটি করছিলো। হঠাৎ ই মনে পড়লো হোস্টেলে কল দিয়ে একবার দেখা যাক পরি ঠিকঠাক আছে কি। কেন যেন বারবার পরির কথাই স্মরণ হচ্ছে। ঝটপট সে কল দেয়। হোস্টেলের ম্যাম তাকে জানায় পরি সকালেই তার জেঠার সাথে চলে গেছে। এবার পুরোপুরি আকস্মিক এক ভয়ে ঘাবড়ে যায় পূর্ণ। পূর্ণের অবস্থা দেখে পুষ্পা তার দিকে এগিয়ে আসে! সে বেশ কিছুক্ষণ যাবৎ পূর্ণ কে লক্ষ্য করছিলো।
–‘কি হয়েছে তোমার ভাইয়া?’
–‘বাবা আজকে পরি কে বাড়িতে নিয়ে যাবে এটা তুই জানতি?’
–‘না তো!’
–‘আজ আবার নাকি বাবা পরি কে হোস্টেল থেকে নিয়ে গিয়েছে। বাবা মার এই বিয়ে তে এখনো না আসা পরি কে নিয়ে যাওয়া আমার ভালো লাগছে না বিষয় টা! এর আগেও পরি কে বাড়ি নিয়ে গিয়ে আমার অজান্তে বিয়ে দেয়ার চেষ্টা করেছে। আমাকে এক্ষুনি বাড়ি যেতে হবে!’
–‘ভাইয়া এখন এই রাতে কিভাবে যাবে?’
–‘আমি কিছু জানিনা! আমি যাচ্ছি!’
পূর্ণ দৌড় দেয়। যত স্পিডে পারে গাড়ি চালাতে শুরু করে। পরির সাথে খারাপ কিছু হয়ে গেলে সে কিভাবে বাঁচবে। নিজেকে কিছুতেই ক্ষমা করতে পারবে না। পরির দেখাশোনা করা তার দায়িত্ব ছিলো। তার উপর পরির সাথে অন্য কারো বিয়ে হয়ে গেলে পরি কে তো সে সারাজীবনের জন্য হারাবে! পরি কে হোস্টেলে রেখে দেওয়া মোটেও ঠিক হয় নি তার। পূর্ণ আরো জোড়ে গাড়ি চালাচ্ছে। যতটা জোড়ে চালালে তার অক্সিডেন্ট করার সম্ভাবনা বেশি থাকে ঠিক ততটা!
কাজি সাহেব চলে আসতেই ভয়ে গলা শুকিয়ে যায় পরির। আল্লাহ কে এই বিপদ থেকে রক্ষা করার জন্য স্মরণে মশগুল ছিলো সে। কিন্তু তিনি ও বুঝি শেষ রক্ষা আর করলেন না!
তাহলে এই ছিলো তার ভাগ্যে? বাবার বয়সী একটা পুরুষ কে বিয়ে করা! পূর্ণ সে কোথায়? তাকে যে পরি ভালোবাসে সেই কথাটা ও সে জানলো না। তার আগেই সব শেষ হয়ে যাবে এভাবে কে জানতো! সকল অনিশ্চয়তার মাঝে ও হয়তো বা পরি পূর্ণ কে নিয়ে ঘর বাঁধার স্বপ্ন ও দেখেছিলো। দেখেছিলো এক সঙ্গে হাজার বছর বাঁচার স্বপ্ন। তাই তো এই অসময় এতো কাঁদাচ্ছে তাকে! আর বাবা মার জন্য মন দিচ্ছে ধিক্কার! আর কোনো বাবা মা সন্তানের জন্য এমন না করুক আল্লাহর কাছে এই একটাই চাওয়া পরির!
(চলবে)
বিয়ে টা হয়ে গেলে কেমন হবে?😶