#মরুর_বুকে_বৃষ্টি 💖
#লেখিকা-Mehruma Nurr
#পর্ব-৯
★দরজার সামনে মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে আছে #আবির। চোখ দুটো তার ফুটবল আকার হয়ে আছে। মুখের হা দেখে মনে হচ্ছে আস্ত একটা মানুষ আরামসে ঢুকে পড়তে পারবে। শরীরের কোন নড়নচড়ন নেই।
একটু আগে আদিত্য যখন নূরের সাথে হু হা করে হাসছিল তখনই এসেছে আবির। দরজায় দাঁড়িয়ে আদিত্যকে দেখেই অটো হয়ে গেছে ও। হাতের ব্যাগটাও ঠাস করে নিচ পরে গেছে। আর তখন থেকে আবির ওভাবেই দাঁড়িয়ে আছে।
আদিত্য আবারও বলে উঠলো।
–কিরে দাঁড়িয়ে আছিস কেন? ভেতরে আয়।
আবিরের তবুও হেলদোল নেই। একটু পরে বিহান এসে দাঁড়াল আবিরের কাছে। আবিরকে দেখে ভ্রু কুঁচকে বললো।
–কিরে তুই এমতে(এমন) স্টাচু অফ লিবার্টি হইয়া খাঁড়ায় (দাঁড়িয়ে) আছচ ক্যালা? কেউ কি তোরে স্টাচু কইচে নি?
আবিরের কোন রিয়াকশন না দেখে বিহান আবিরের কাঁধে হালকা ধাক্কা দিয়ে বললো।
–কিরে হালা গাঞ্জা টানছোচ নি? কিছু কচ না ক্যালা?
আবিরের এবার একটু হুঁশ এলো। আবির একবার বিহানের দিকে তাকালো, তারপর ধীরে ধীরে আদিত্যর কাছে এগিয়ে গেল। আবির কেমন যেন অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আদিত্যের চারিদিকে ঘুরে ঘুরে ওকে স্ক্যান করতে লাগলো। আদিত্য ভ্রু কুঁচকে আবিরের কান্ডকারখানা বোঝার চেষ্টা করছে। এর আবার কি হলো?
আবির কতক্ষণ দেখার পর আদিত্যের দিকে সন্দীহান নজরে তাকিয়ে বললো।
–আপনি কে? হু ইজ ইউ ম্যান? হয়্যার ইজ মাই ব্রাদার?
আদিত্য ভ্রু কুঁচকে বললো।
–হোয়াট? কি বলছিস তুই? পাগল টাগল হয়ে গেলি নাকি?
আবির হঠাৎ দুই কানে হাত রেখে উচ্চস্বরে বলে উঠলো।
–নেহিইইইই,,,হায়য়য়।আমার ভাই, আমার ভাই কই গেল? কোথায় হারিয়ে গেল?
আবির বিহানের কাছে গিয়ে বললো।
–ওই বিহাইন্না আমার ভাই কই? আমার ভাইয়ের সাথে কি করেছিস তুই? আর এই লোকটা কে? হায় আমার “শান্ত সৃষ্ট রাগী বিশিষ্ট” ভাইটা কই গেল?
আদিত্য চেহারায় বিরক্তির ছাপ এনে মাথা দুই দিকে নাড়ালো। যার অর্থ হলো, নাও শুরু হয়ে গেল দা গ্রেট আবিরের থ্রার্ডক্লাস মেলোড্রামা। নূর শুধু তখন থেকে বিস্ময় নিয়ে চোখ পিটপিট করে আবিরের দিকে তাকিয়ে আছে। লোকটা কে? আর এভাবে আহাজারি করছে কেন,সেটাই বোঝার চেষ্টা করছে। নূর ধীরে ধীরে আদিত্যর পিছে এসে ওর হাত চেপে ধরে দাঁড়াল।
বিহান আবিরের কাঁধে হাত রেখে বললো।
–হইচে ,অহন অফ যা ভাই। আইজকার (আজকের) মেলোড্রামার কোটা ছ্যাচ(শেষ) হইয়া গ্যাছেগা। এর থাইক্কা বেছি(বেশি) করলে পাবলিক জুতা খুইল্লা মারবো। আর এইডা আমগোই(আমাদেরই) আদি। আইচকা প্রথম এমতে দেখতাছোচ তো, তাই বিশ্বাছ হইতাছে না।আমারও প্রথম প্রথম এমতেই হইচিলো। তয় অহন সইয়া গেছে। তোরও দেইক্ষা দেইক্ষা অভ্যাস হইয়া যাইবো। অহন চিল খা।
বিহানের কথা শেষ হওয়ার পর আদিত্য বলে উঠলো।
–বিহানের কথা বিশ্বাস না হলে আমার কাছে আরও ভালো উপায় আছে। তারপর তোর আমার ওপর আর কোন ডাউট থাকবে না। আয় আমার কাছে আয়।আমি এখুনি তোকে বিশ্বাস করিয়ে দিচ্ছি।
আবির ভালোই বুঝতে পারছে যে আদিত্য তাকে কি করবে। তাই আবির একটা ঢোক গিলে জোরপূর্বক হেসে দিয়ে বললো।
–না না ভাই, তার কোন দরকার নেই। আমার হান্ড্রেড পার্সেন্ট বিশ্বাস হয়ে গেছে যে,তুমিই আমার ওয়ান এন্ড ওনলি ভাই। আই মিস ইউ ভাই।
কথাটা আবির আদিত্যকে গিয়ে জড়িয়ে ধরলো। আদিত্যও আবিরকে হালকা করে জড়িয়ে বললো।
–আই মিস ইউ টু।
তারপর আবিরকে ছাড়িয়ে নিয়ে বললো।
–কেমন আছিস? কবে এসেছিস তোরা লন্ডন থেকে?
–আজই এসেছি ভাই। এয়ারপোর্ট থেকে সোজা তোমার কাছে এসেছি
–তো? শেষমেশ লন্ডন তোর ওপর বিরক্ত হয়ে তোকে লাথি মেরে পাঠিয়ে দিল তাইনা,?
আবির এটিটিউট নিয়ে বললো।
–কিযে বলোনা ভাই। আমাকে পাঠানো তো দূরের কথা। লন্ডনের মেয়েরা পারলে আমাকে ওদের পার্সের ভেতর রেখে দেয়। তুমিতো জানোই আমার চার্ম থেকে কেও বাঁচতে পারে না। আল্লাহ যে কেন এতো হ্যান্ডসাম বানালো আমাকে? নিজেকে বাচিয়ে রাখা অনেক কষ্টকর হয়ে যায় বুঝেছ? উফফ কেন যে আমি এতো সুন্দর?
আবিরের চাপাবাজী দেখে আদিত্য আর বিহান হেসে দিল। নূর এখনো বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে আছে আবিরের দিকে। এবার আবিরের নজর পড়লো নূরের দিকে। আদিত্যের বিয়ের সময় আবির লন্ডনে ওর ফ্যামিলির সাথে বেড়াতে গিয়েছিল। আদিত্য ফোনে সবটা বলেছিল। তবে নূরের কোন ছবি দেখাইনি। বলেছিল যখন দেশে আসবে তখন সরাসরি দেখবে।
আবির কপাল কুঁচকে মাথাটা একটু নিচু করে নূরের দিকে ঝুঁকে গেল। নূর সেটা দেখে আদিত্যের পিঠের দিকে লুকাতে লাগলো। আদিত্য সেটা দেখে মুচকি হেসে নূরের হাত ধরে আস্তে করে সামনে নিয়ে এলো। আদিত্য নূরের দিকে তাকিয়ে বললো।
–নূর ও হলো,,
আদিত্যের কথা শেষ হওয়ার আগেই আবির এক হাত তুলে আদিত্যকে থামিয়ে দিয়ে বললো।
–নো ভাই। আমি নিজেই পরিচয় দিচ্ছি।
আদিত্য শুধু মুচকি হাসলো। যার অর্থ ঠিক আছে। আবির নূরের দিকে হালকা ঝুকে বললো।
–তুমি হলে নূর ভাবি তাইনা? তুমি জানো আমি কে?
নূর মাথা দুই দিকে নাড়িয়ে বুঝালো,না সে জানেনা।
–আমি হলাম আদিত্য ভাইয়ার ভাই, মানে তোমার ওয়ান এন্ড ওনলি কিউট দেবর।
নূর জিজ্ঞাসুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো।
–দেবর?
–হ্যাঁ দেবর। আমি তোমার দেবর আর তুমি আমার ভাবি। বাইদা ওয়ে ভাবি তুমি কিন্তু অনেক কিউট। একদম ডলের মতো। আমি আজ থেকে তোমাকে ভাবিডল বলে ডাকবো কেমন?
আবিরের কথায় নূর একটা হতাশার নিঃশ্বাস ছেড়ে বললো।
–হুমম আরও একটা নাম।
আবির বলে উঠলো।
–কেন নাম পছন্দ হয়নি?
নূর বললো।
–আরে না সেটা না। আসলে আমার এতো এতো নাম, এখন কোনাটা মনে রাখবো তাই ভাবছি।
–মানে?
–মানে, বাবা ডাকে মামুনি,মা ডাকে নূরিমা, নিলা ডাকে আপু, এই বাসায় সব ডাকে রাণী সাহেবা, আর হিরো ডাকে এঞ্জেল বলে, এখন আবার তুমি আরেক নাম দিলে।তাই ভাবছি এতো নাম মনে রাখবো কি করে?
নূরের এমন বাচ্চামো কথায় আবির তেমন একটা অবাক হলো না। আদিত্য ফোনে ওকে নূরের ব্যাপারে সবটা আগেই খুলে বলেছে। তাই আবির মুচকি হেসে বললো।
–ভাবিডল এই নামে শুধু আমি ডাকবো। তাই এতো কষ্টের কিছু নেই। বুঝেছ ভাবিডল?
নূর হাসিমুখে বললো।
–আচ্ছা, ঠিক আছে দেবর।
নূরের কথায় আবির সহ সবাই হেসে দিল।
বিহান ওদের কাছ থেকে কিছুটা দুরত্বে দাঁড়িয়ে ছিল। হঠাৎ কেউ পেছন থেকে এসে নিজের কনুই দিয়ে বিহানের কনুইয়ে ধাক্কা দিল। বিহান কিছু বুঝে ওঠার আগেই ধাক্কা দেওয়া মনুষ্যটি বিহানকে ধাক্কা দিয়ে সামনের এগিয়ে গেল। দুই কদম এগিয়ে গিয়ে আবার ঘাড় ঘুরিয়ে বিহানের দিকে তাকিয়ে চোখ মেরে দিল সেই মনুষ্যটি। চোখ মেরে দুষ্টু হেসে আবার সামনের দিকে এগিয়ে গেল। আর বিহান বেচারা ওখানেই থতমত খেয়ে দাঁড়িয়ে রইলো।
মনুষ্যটি সামনে এগিয়ে গিয়ে বলে উঠলো।
–বারে, আমার কথা আর কারোর মনে নেই তাইনা? শুধু দেবরের সাথে দেখা করলে হবে, ননদের সাথে দেখা করতে হবে না?
আদিত্য হাসিমুখে এগিয়ে যেতে যেতে বললো।
–আরে আয়ু। তুইও এসেছিস? কেমন আছিস তুই?
কথাটা বলে আদিত্য আয়াতকে এক হাতে জড়িয়ে নিল। আয়াতও মুচকি হেসে বললো।
–ভালো আছি ভাইয়া। ভাবিকে দেখার জন্য অনেক এক্সাইটেড হয়ে আছি। তাইতো এয়ারপোর্ট থেকে আমি আর ভাইয়া সোজা এখানে চলে এসেছি।
আয়াতও গিয়ে নূরের সাথে দেখা করলো। কিছুক্ষণের মধ্যে ওরা নূরের সাথে একদম মিশে গেল। আয়াত সবার সাথে কথা বলার ফাঁকে ফাঁকে বারবার বিহানের দিকে তাকাচ্ছে আর মুচকি হাসছে। বিহান সেটা দেখে বারবার অপ্রস্তুত হয়ে পড়ছে আর এদিক ওদিক তাকাচ্ছে।
একটু পরে আদিত্য বলে উঠলো।
–আচ্ছা ঠিক আছে। এখন তোরা ফ্রেশ হয়ে নে। তারপর আমরা সবাই একসাথে ডিনার করবো।
আবির আর আয়াত মাথা ঝাকিয়ে ফ্রেশ হতে গেল।
_____
আবির এই বাসায় আসলে যে রুমে থাকে, বরাবরের মতো সেই রুমেই চলে গেল। গুনগুন করতে করতে দরজা ঠেলে ভিতরে ঢুকলো। রুমে ঢুকে গায়ের ব্লেজার টা খুলতে নিলেই হঠাৎ তখনই নিলা ওয়াশরুম থেকে শাওয়ার নিয়ে বের হলো। পরনে শুধু টাওয়াল প্যাঁচানো।আবির সেদিকে তাকাতেই, আবিরের চোখ রসগোল্লার মতো বড়বড় হয়ে গেল। আবিরের হাত দুটো এখনো ব্লেজারের কলারেই আছে। ও অটো হয়ে তাকিয়ে রইলো নিলার দিকে। নিলা তখনও আবিরকে খেয়াল করেনি। আরেকটু সামনে এগিয়ে যেতেই আবিরকে দেখতে পেল নিলা।
এমন একটা সিচুয়েশনে নিলা পুরো রক্তশূন্য হয়ে গেল। স্তব্ধ হয়ে কতক্ষণ মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে রইলো। তারপর হঠাৎ গগনবিদারী একটি চিৎকার দিয়ে উঠলো।
–আআআআআআ
নিলার চিল্লানিতে আবিরের ঘোর কাটলো। আবির নিজের দুই কানে হাত চেপে ধরে বললো।
–আরে এভাবে চিল্লাচ্ছেন কেন? কানপুরে হরতাল করতে চান নাকি?
নিলা তাড়াহুড়ো করে বিছানার উপর থাকা চাদরটা নিজের গায়ে জড়িয়ে নিল।
আবির বাঁকা হেসে দুষ্টু ভঙ্গিতে বললো।
–বাহ্, আজতো লিমিটই হয়ে গেল।বাঙালী মেয়েরাও যে এতো ওপেন মাইন্ডেড হয়ে গেছে তা জানা ছিল না। আরে ভাই মানলাম আমি একটু বেশিই চার্মিং। তাই বলে প্রথম দেখাতেই নো হাই,নো হ্যালো এভাবে সোজা বডি শো করাটা একটু বেশিই হয়ে গেল না? না মানে আমার আবার এসব বিষয়ে প্রচুর লজ্জা করে।
শেষের কথাটা একটু লাজুক ভঙ্গিতে বললো আবির।
নিলা চোয়াল শক্ত করে রাগী কন্ঠে বলে উঠলো।
–দেখুন মিষ্টার,,,,,,
নিলার কথা শেষ হওয়ার আগেই আবির বলে উঠলো।
–আরো দেখাতে চান? ওকে এ্যাজ ইউর উইস।আই ওন্ট মাইন্ড।
নিলা দাঁত কিড়মিড় কর বললো।
–জাস্ট শাট আপ।
–আরে আপনি তো দেখছি একদমই বোল্ড হয়ে গেছেন। নিজে তো খুলেই আছেন, এখন আবার আমাকেও শার্ট খুলতে বলছেন।আপনাকে দেখে তো মনে হয় আঠারো প্লাসই হননি।অথচ এখন থেকেই আঠারো প্লাস ওয়ালা কাজ শুরু করে দিয়েছেন? নড ব্যাড। যাইহোক আপনি যখন চাইছেন তখন আর কি করার। আমি আবার কোন মেয়ের কথা ফেলতে পারি না।
কথাটা বলে আবির নিজের শার্টের বোতাম খুলতে লাগলো।
সেটা দেখে নিলা চোখ বড়সড় করে বললো।
–এই এই কি করছেন আপনি? একদম শার্ট খুলবেন না বলে দিলাম।
আবির বলে উঠলো।
–আরে আপনিই তো বললেন, শার্ট আপ। তা বোতাম না খুলে কিভাবে শার্ট কে আপ করবো? এটাতো আর টিশার্ট না তাইনা?
নিলা এবার রাগের চরম পর্যায়ে। আবিরের দিকে আঙুল তুলে রাগী কন্ঠে বললো।
–একদম বাজে কথা বলবেন না। একেতো নক না করে চোরের মতো আমার রুমে ঢুকে পরেছেন। তারওপর আবার তখন থেকে কিসব আজেবাজে কথা বলছেন। এই কে আপনি হ্যাঁ? আর আপনার সাহস কি করে আমার রুমে ঢুকার?
আবির বলে উঠলো।
–ওয়াও, আমার ভাইয়ের বাড়িতে আমার রুমে দাঁড়িয়ে আমাকেই বলা হচ্ছে আমি কে? হোয়াট আ জোক। বাইদা ওয়ে আপনি কে?
নিলা ভ্রু কুঁচকে বললো।
–ভাই মানে? আমিতো জানি জিজুর কোন ভাই নেই। তাহলে আপনি কোথাথেকে এলেন?
–জিজু? তারমানে আপনি ভাবিডলের বোন, মানে ভাইয়ের শালি? ওয়াও,, এতো কামাল হোগেয়া, ধোতি ফাড়কে রুমাল হোগেয়া। কিউট ভাবির,কচি বোন। জিও ভাই, জিও নিজের সাথে সাথে ভাইয়েরও ব্যাবস্থা করে রেখেছ। তোমার মতো ভাই ঘরে ঘরে হোক।
কথাগুলো বলে উপরের দিকে একটা ফ্লাইং কিস ছুঁড়ে দিল।
নিলা এদিকে বিরক্তির শেষ পর্যায়ে। ওর মন চাচ্ছে এখুনি চেয়ার উঠিয়ে এই লোকটার মাথা ফাটিয়ে দিতে। নিলা আবারও রাগ দেখিয়ে বললো।
–দেখুন আপনি কিন্তু,,,
আবির আবারও নিলার কথা শেষ করতে না দিয়েই ইনোসেন্ট ভাব ধরে বলে উঠলো।
–এই না না এখন আর দেখাদেখি না ঠিক আছে? নিচে সবাই আছে। যে কেউ এখানে চলে আসতে পারে। আমরা বরং পরে আবার ভালো করে বাকি দেখাদেখি করবো ঠিক আছে?
নিলা রাগে তেড়ে গিয়ে কিছু বলতে যাবে, তার আগেই আবির চোখ মেরে হাসতে হাসতে ওখান থেকে চলে গেল। আর পেছন থেকে নিলা রাগে কিড়মিড় করতে লাগলো। ও ভেবে পাচ্ছে না এই বান্দর লোকটা জিজুর মতো এতো ভালো লোকের ভাই কিভাবে হলো?
_______
রাত ৯ টা
সবাই ডাইনিং টেবিলে খেতে বসেছে। আদিত্য নূরকে নানান কথা বলে বলে খাইয়ে দিচ্ছে। আবির বারবার নিলার দিকে তাকিয়ে দুষ্টু দুষ্টু হাসছে। আর নিলা রাগে কিড়মিড় করছে। আয়াত টেবিলের নিচ দিয়ে বিহানের পায়ে একটু স্লাইড করলো। সাথে সাথে বিহানের কাশি উঠে গেল। বিহান কাশতে কাশতে আয়াতের দিকে তাকাতেই আয়াত আবারও দুষ্টু হেসে চোখ মেরে দিল। বেচারা বিহানের কাশি আরে বেড়ে গেল।
আবির বিহানের পিঠে চাপড় মেরে বললো।
–কিরে তোর আবার কি হলো? খাওয়ার সময় তোর ধ্যান কই থাকে?
কিছুক্ষণ পর বিহানের কাশি থামলো। বিহান এবার দুই পা চেয়ারে তুলে ভাজ করে বসে খাওয়া শুরু করলো। এই মেয়ের কোন ভরসা নেই। এর কাজই শুধু বিহানকে জ্বালানো।
খাওয়া দাওয়া শেষে সবাই সোফায় বসে আড্ডা দিতে লাগলো। আদিত্য বলে উঠলো।
–হ্যারে আবির, চাচা চাচী কেমন আছেন?
আবির বললো।
–এখানে আসার আগ পর্যন্ত তো ভালোই দেখে এসেছি। তারপর আর জানিনা।
আদিত্য মুচকি হেসে বললো।
–চাচা চাচীকে একদিন বাসায় দাওয়াত করতে হবে। ওরা তো নূরকে দেখেনি। এই সুযোগে নূরের সাথেও দেখা হয়ে যাবে।
–ঠিক আছে ভাই। তুমি যেটা ভালো মনে করো।
বিহান ওদের কথা শুনে একটা তাচ্ছিল্যের হাসি দিল। যা আয়াতের চোখ এড়ালো না। বিহানের এই হাসির কারণ বুঝতে পেরে আয়াত একটা হতাশার নিঃশ্বাস ছাড়লো।
একটু পরে বিহান বলে উঠলো।
–তা আবির, লন্ডনে ঘুরাঘুরি ক্যামতে করলি? আমরারেও একটু ক আমরাও হুনি। লন্ডনে কয়টা মাইয়ার চড় থাপড়া খাইলি?
আবির এটিটিউটের সাথে বললো।
–আরে বিহান তুই এখনো আমাকে চিনলিই না।মেয়েরা আমাকে চুমু দিয়ে কুল পায় না, চড় মারা তো দূরে থাক। আজকাল তো আবার মেয়েরা আমাকে দেখে একদম বোল্ড হয়ে যায়।
কথাটা বলে আবির বাঁকা চোখে নিলার দিকে তাকালো। আর নিলা চোখ গরম করে তাকালো।
আবির আবার বলে উঠলো।
–আর লন্ডনের মেয়েদের কথা কি বলবো। ওরা তো আমাকে নিয়ে রিতীমত টানাটানি শুরু করে দিয়েছিল। এখন বেচারা একটা জান কয়জনকে খুশী করবে? তবুও কষ্ট হলেও আমি সবাইকেই খুশী করেছি। তুইতো জানিস আমি আবার কোন মেয়ের কষ্ট সহ্য করতে পারিনা। আমার তো একটাই ফান্ডা, যেখানেই যাও সবার মাঝে ভালোবাসা ছড়িয়ে দাও। আর বিদেশি মেয়েদের একটা জিনিস আমার সবচেয়ে ভালো লাগে। সেটা হলো তারা কখনো বাঙালী মেয়েদের মতো বিয়ের কথা বলে না। মানে যতখুশি প্রেম করো, বিয়ের কোন প্যারাই নেই।
আবিরের কথায় বিহান হেঁসে দিয়ে বললো।
–তুই হালা আর ছুদরাইলি ( শুধরাইলি) না।
আর নিলা মনে মনে বললো।
–ছিহ্ লোকটা কত্তো বড় লুচু।
আবির আবারও নিলার দিকে বাঁকা চোখে তাকিয়ে বললো।
–তবে যাই বলিস বিহান,নিজের দেশ তো নিজেরি হয়।আর আমাদের বাঙালী মেয়েদের মতো আকর্ষণীয় আর কিছুই হয়না। এদের কথাই আলাদা। একটু নাদুসনুদুস, একটু শ্যামলমতী,একটু কচিকচি আর অনেক মায়াবী। ইশশ এদের ব্যাপার টাই অন্যরকম। একদম আপন আপন ফিলিং আসে।
নিলা ভালোই বুঝতে পারছে যে,আবির ওর কথাই বলছে। আবির যেমনটা বিশ্লেষণ করেছে, নিলা ঠিক তেমনই। নিলা রাগে কিড়মিড় করে একটা ভেংচি কেটে বিড়বিড় করে বললো।
–হুহহ্ আইসে,পুরান পাগলে ভাত পায়না নতুন পাগলের আমদানি।
______
রাত ১০ টা
বিহান একটু আগেই আদিত্যর বাসা থেকে স্টাফ কোয়ার্টারে নিজের রুমে এসেছে। রুমে এসে বিহান গায়ের শার্ট খুলে রেখে ওয়াশরুমে গেল ফ্রেশ হতে। কিছুক্ষণ পর বিহান ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে এলো। আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে নিজের মুখ মুছতে লাগলো। হঠাৎ আয়নায় বেডের দিকে চোখ পরতেই ভ্রু কুঁচকে এলো বিহানের। বিরক্তিতে ছেয়ে গেল মুখমন্ডল। বিহান এক ঝটকায় পেছনে ফিরে চোয়াল শক্ত করে বললো।
–আফনে (আপনি)? আফনে এইহানে কি হরেন? আফনারে না কতবার কইচি, আমার এইহানে একদম আইবেন না? তাও বারবার ব্যাছরমের (বেশরমের) মতো এইহানে চইল্লা আহেন ক্যালা?
আয়াত এতক্ষণ বিহানের বেডের ওপর পায়ের ওপর পা তুলে বসে ছিল। বিহানের কথা শুনে একটা আবেদনময়ী হাসি দিয়ে বিহানের কাছে এসে বললো।
–উফফ আপনার এই ভাষা, আই জাস্ট লাভ ইট। কি করবো আপনাকে অনেক মিস করছিলাম তাইতো চলে এলাম। কতদিন আপনাকে দেখতে পায়নি। আপনিও কি আমায় মিস করেছেন?
—আমি আফনারে মিছ ফিছ কইরবার যামু ক্যালা? আমারে কি কুত্তায় কামড়ায়ছে নি? এইছব আজাইরা প্যাঁচাল রাইখা আফনে বাইর হন এইহান থাইক্কা।
–জানি মিস করলেও বলবেন না। আমি জানি আপনি আমাকে মিস করেছেন। বাইদা ওয়ে আপনাকে খালি গায়ে কিন্তু চরম হট লাগছে। আপনি যে এতো সুন্দর বডি বানাইয়েছেন সেটাতো আজ না দেখলে জানতেই পারতাম না। নিশ্চয় আমার জন্য বানিয়েছেন তাইনা?
–আপনি তো আইচ্ছা বেছরম দেখতাছি।
বিহান এবার তাচ্ছিল্যের সুরে বললো।
–আর হইবেনই না ক্যালা, দেখতে হইবো না মাইয়া ডা কার? যেমন মা হেমন মাইয়া।
আয়াত এবার একটু আহত দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো।
–সবসময় সবকথার মাঝে আপনি মাকে কেন টানেন? আমার মা কি করেছে আপনার?
–ওই মহিলারে টানার ছখও নাইক্কা আমার। আপনি যানতো এহেন থাইক্কা।
কথাটা বলে বিহান আয়াতের হাত ধরে টেনে নিয়ে গিয়ে দরজার বাইরে বার করে দিল। তারপর বলে উঠলো।
–আর খবরদার আর কহনো এইহানে আইছেন তো আপনার খবর আছে।
কথাটা বলে বিহান ঠাস করে আয়াতের মুখের ওপর দরজা লাগিয়ে দিল।
আয়াতের চোখের কোনায় একফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়লো।লোকটা এমন পাথর কেন? আমার ভালোবাসা কি লোকটার চোখে পড়েনা? বারবার বেশরমের মতো তার কাছে আসি। আর সে কিনা প্রতি বারই আমাকে কুকুর বিড়ালের মতো তাড়িয়ে দেয়। তবে এতো সহজে আমি হার মানছি না। আমিও দেখে ছাড়বো আপনি আমাকে ভালো না বেসে কোথায় যান।
আয়াত চোখের পানি মুছে ওখান থেকে চলে গেল।
চলবে……
(বেচারা আবিরকে সবাই কতকিছুই বানিয়ে ফেললো।কেউ ভিলেন, কেউ কাল নাগিনী। আর একজন তো নূরের পুরাণ বয়ফ্রেন্ডই বানিয়ে ফেললো। সত্যিই কালকের কমেন্ট গুলো দেখে চরম বিনোদন পাইছি।😂
আপনাদের সুবিধার জন্য বলে দেই।আবির আর আয়াত আদিত্যের চাচার ছেলেমেয়ে।)