#শেষ_পাতার_তুমি
#ফারিয়া_আফরিন_ঐশী
#পর্বঃ১৬
মেঝেতে বসে ঘুমন্ত রায়ানের দিকে তাকিয়ে বলল–জানি খুব কষ্ট পাচ্ছেন,,আমিও যে নিরুপায়,ভালোবাসি খুব আপনাকে!আপনি নাবিলাপুকে ভালোবাসুন,,কোনো আপত্তি নেই আমার!!তবে আপনার মনের এককোণে আমাকেও একটু জায়গা দেন!!যদি দেখি আপনি আমার ভালোবাসা শত চেষ্টার পরেও গ্রহণ করছেন না কথা দিলাম চলে যাবো আপনার জীবন থেকে!!
কথা গুলো আওড়ে নিয়ে বাইরে চলে গেল সে!!
আয়ানা বাইরে গিয়ে আবারও খাবার হাতে ঘরে এলো!!
খাবারটা টেবিলের ওপর রেখে রায়ানের কাছে বসে মাথায় হাত বুলিয়ে ধীর কন্ঠে ডাকতে লাগল!!!
বার দুয়েক ডাকতেই চোখ মেলল রায়ান!!
ধপ করে উঠে বসে কিছু বলবে তার আগেই আয়ানা বলল–খাবার খেয়ে ওষুধ খেতে হবে!!কোনো কথা না!!
রায়ান কপাল কুঁচকে বলল–খাবো না!!
আয়ানা খাবার হাতে দাঁড়িয়ে বলল–না খেলে সুস্থ হবেন কিভাবে??নাবিলাপু কিন্তুু রাগ করবে তাহলে!!!
রায়ান–তুমি মজা করছো ওকে নিয়ে??
আয়ানা–একদমই না!!আপনার স্মৃতির মাঝে বেঁচে আছে আপু!!তাকে বাঁচিয়ে রাখতে তো খাবার খেয়ে সুস্থ থাকতেই হবে!!!
রায়ান কিছু একটা ভেবেই দ্রুত বসে প্লেট নিয়ে খেতে শুরু করল!!!
আয়ানা মুচকি হেসে পানির গ্লাস সামনে এগিয়ে রাখলো!!
রায়ান খাওয়া শেষে ওষুধ খেয়ে শুয়ে পড়লো!!
আয়ানা খাবার প্লেট বাইরে রেখে ঘরের আলো নিভিয়ে ছোট্ট ড্রিমলাইট জ্বালিয়ে দিয়ে রায়ানের সামনে বসল!!
রায়ান ততক্ষণে ঘুমে মগ্ন!!!
আয়ানা মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল–আপনি সুস্থ না হলে বাবা নিজেকে শেষ করে দিবে!!অনেক কষ্ট পাচ্ছে বাবা-মা!!এখনতো নাবিলাপুর বাবা-মায়ের দায়িত্ব ও আপনার!!!
আয়ানার আর ঘুম হলো না রাতে চারিদিকের চিন্তাতে সে নিজেও চিন্তিত!!
রেদোয়ানের মতিগতি আয়ানার খুব সুবিধার মনে হয়নি!!একটাবারও রায়ানের সামনে আসছে না!!
এমনকি খাবারটাও নিজের ঘরে বসে খাচ্ছে!!
এমন সুবিধা অসুবিধার মাঝে কাটে মাস দুয়েক,,,
রেদোয়ান এখনও ছেলের সামনে যায় না!!
রায়ানের বেশিরভাগ সময় কাটে অফিসে, বাকি কিছুটা সময় নিজেদের ভার্সিটির প্রাঙ্গনে বসে নাবিলার স্মৃতিচারণের মাঝে!!
রায়ানের বাড়ি থাকা বলতে কাজে ব্যস্ত থাকা!!!
আয়ানা নিজের মতো করে বেশ চেষ্টা করে যাচ্ছে রায়ানকে স্বাভাবিক করার!!!
সন্ধ্যা ৬.৫০!!!
রায়ান তার মায়ের অনুরোধে মাঝের ঘরে বসে চা খাচ্ছে!! চোখের অস্হির দৃষ্টি বলছে চা টা শেষ করেই নিজের ঘরে চলে যাবে!!!
আয়ানাও বসে আছে!!
দাদি পান চিবুতে ব্যস্ত!!তিনিও আজকাল রায়ানের সাথে কথা বলেন না!!!
আচমকা রেদোয়ান ব্যাগপত্র হাতে সোফার কোণে এসে দাঁড়ালেন!!!
রেশমি সবজি কাটছিলো!!ভ্রু কুচকে রেদোয়ানের সামনে এসে বলল–কি গো!!কোথায় যাচ্ছো??এতো ব্যাগ নিয়ে??
রেশমির কথাতে দাদি ও এগিয়ে এলেন!!
তিনিও একি কথা জিজ্ঞেস করলেন!!
রায়ান আর আয়ানা একটু দূরে দাঁড়িয়ে আছে!!!
রেদোয়ান –আরে শান্ত হও!! বলতে দাও আমাকে!!
আমার পোস্টিং হয়েছে রংপুর!!আজই যেতে হবে!!৮ টায় বাস!!
রেশমি–মানে কি??তুমি তো চাকরি ছেড়ে দিয়েছিলে!!রায়ান তো এখন আমাদের সংসার চালাচ্ছে তাহলে??তোমার বিপি,হার্টের সমস্যা!!
রেদোয়ান –আরে আমার বসে থাকতে ভালো লাগে না!!তাই নতুন চাকরি যোগাড় করলাম!!ওরা একটু আগেই জানালো তাই রেডি হয়ে নিলাম!!
রেশমি ব্যাপারটা একটু আন্দাজ করে বলল–তাহলে আমিও যাবো!!
বলেই ভেতরে চলে গেলেন!!
দাদি এগিয়ে এসে বলল–এই অসুস্থ শরীর নিয়া কি কাম করবি এহন??
রেদোয়ান হেসে বলল–ভালো কাজ মা!!রংপুরের একটা ট্যুরিস্ট হোটেলে!!তুমি তোমার বৌমাকে বোঝাও ওকে পরে নিয়ে যাবো!!!
আয়ানা দৌড়ে এসে রেদোয়ান কে জড়িয়ে ধরে বলল–বাবা,তোমার তো শরীর খারাপ?ওখানে থাকলে তো কষ্ট হবে!!!
রেদোয়ান আয়ানার মাথায় হাত বুলিয়ে বলল–হবে নারে মা!!আমি ওষুধ খাবো সময়মতো!!
এসব কথার মাঝে রায়ান এগিয়ে এসে বলল–বাবা,তোমার এখনতো রেস্ট নেবার সময়!!! আমার বেতনে সংসার ভালোই চলছে!!আমার প্রমোশনও হবে আগামী মাসে!!
রেদোয়ান শুকনো হেসে বলল–তোর কাধের ওপর অনেক চাপ দিয়ে ফেলেছি আমি!! এমনিতেই তোর মতের বিরুদ্ধে কতো কাজ করেছি তুই এখনও কষ্ট পাচ্ছিস!!আর তাছাড়া সংসারে কিছু খরচ আমারও বহন করা উচিত!!!
রায়ান ভ্রু কুঁচকে রেদোয়ানের আরও কাছে এগিয়ে এসে বলল–তুমি রেগে আছো বাবা??
রেদোয়ান ছেলের কাঁধে হাত দিয়ে বলল–না রে!!রেগে তো তোর থাকার কথা!! পারলে তোর বাবাকে ক্ষমা করে দিস!!
বলেই নিজের চোখের পানি আড়াল করে রেদোয়ান ব্যাগ উঠিয়ে বাইরে চলে গেল!!!
রায়ান ও পিছে পিছে ছুটল!!
রায়ান–বাবা সরি!!প্লিজ!!আমার ভুল হয়েছে!!তুমি প্লিজ বাড়ি চলো!!!
রেদোয়ান কোনো কথা ছাড়া সিএনজিতে উঠে পড়লো!!
কিন্তুু সিএনজি চালানোর আগে বাধা দিলো রায়ান!!
রায়ান–বাবা,তোমাকে কোনো কাজ করতে হবে না,, বাড়ি চলো!!
রেদোয়ান –দেরি হচ্ছে বাবা,,!!ভালো থাকিস তোরা!!
রায়ান –নাহ!!
রায়ান রেদোয়ানের ব্যাগ নিয়ে বাইরে এসে বলল–চলো বাবা প্লিজ!!
রেদোয়ান রাস্তায় ঝামেলা করবে না বলে রায়ানের সাথে হাটা ধরলো!!কারণ সে জানে রায়ান নাছোড়বান্দা!!
ঘরে এসে দাঁড়াতেই রায়ান শক্ত করে রেদোয়ানকে জড়িয়ে ধরে চোখের পানি ছেড়ে দিল!!!
রায়ান–আমি তোমার খুব খারাপ ছেলে বাবা!!আমার কথাতে তুমি কষ্ট পেয়েছো অনেক তাই চলে যাচ্ছিলে!!!
সরি বাবা!!
রেদোয়ান –না রে!!আসলেই আমি ভুল করেছি!!একটা ঘটনাকে কেন্দ্র করে তোকে কষ্ট দিয়েছি!!
রায়ান–নাহ বাবা!!সরি বাবা!!
রেদোয়ান –ধুর এতো সরি বলিস না!!
রায়ান রেদোয়ানের চোখের পানি মুছে বলল–যদি তোমাকে অসুস্থ শরীর নিয়ে চাকরি করতে হয় তাহলে আমার বেঁচে থাকা ব্যর্থ বাবা!!
রেশমি এসে রেদোয়ানকে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে শুরু করল!!রায়ান দুজকে জড়িয়ে নিল!!
দাদি আর আয়ানা একটু দূরে দাঁড়িয়ে!!
দাদি ফিসফিস করে বলল–বুঝলি বৌ!!মোরা হইলাম ওগো পর!!তুই আর মুই আপন!!
আয়ানা হেসে দিয়ে বলল–বুঝলাম টেনিস বুড়ি!!
রাতে,,
রায়ান ছাদে দাঁড়িয়ে আছে!!দৃষ্টি আকাশে স্হির!!
হঠাৎ আয়ানার আওয়াজে চমকে তাকাল দরজার দিকে!!!
আয়ানার হাতে দুকাপ চা!!
আয়ানা–সিগারেট খান না আপনি??
রায়ান–নাহ,,কেন বলোতো??
আয়ানা–আরে আমি গল্পে পড়েছি ছেলেরা রাতে ছাদে দাঁড়িয়ে সিগারেট খায়!!
রায়ান ভ্রু কুঁচকে বলল–কোন গল্প??
আয়ানা–ফেসবুকের বেশিরভাগ গল্পে!!
রায়ান এবার জোরে হেসে দিল!!
আয়ানা মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে আছে,,আজ কতোদিন পর মানুষটা প্রাণখুলে হাসছে!!!
সোডিয়াম আর চাঁদের আলোতে রায়ানের হাসিটা আয়ানার বুকের মাঝে শিহরণের সৃষ্টি করছে!!!
রায়ান কোনোরকমে হাসি থামিয়ে বলল–তাহলে আমারও উচিত সিগারেট খাওয়া??
আয়ানা ঠোঁট উল্টে বলল–তা বলিনি!!মানে বেশিরভাগই ছেলেরা খায় তাই!!
রায়ান চায়ের কাপ নিয়ে বলল–তাহলে আমি ওই বেশিরভাগের মধ্যে নেই!!ক্লাস ৭ এ থাকতে একবার একবার বন্ধুর থেকে একটান দিয়েছিলাম!!মা বুঝতে পেরে ৩ ঘন্টা কান ধরে দাঁড় করিয়ে রেখেছিলো!!তারপর আর সাহস হয়নি!!!
তবে কোনোদিন খুব খারাপ পরিস্থিতির সামনে পড়লে ভেবে দেখবো!!
আয়ানা রেলিং এ ঠেস দিয়ে বলল–ও ও!!আমি জানতাম প্রায় সবাই সিগারেট খায়!!!
রায়ান হালকা হাসল!!!
আচমকা আয়ানার চিৎকারে রায়ান চায়ের কাপ ফেলে দ্রুত ছুটে গেল!!!
রায়ান যাওয়ার আগেই আয়ানা লুটিয়ে পড়ল মাটিতে!!!
রায়ান দ্রুত গিয়ে আয়ানাকে কোলে তুলে ঘরে এসে তার মাকে ডাকতে শুরু করলো!!
রেশমি ছুটে এসে সব শুনে আয়ানাকে ভালো করে দেখেও আয়ানার চিৎকার করা আর সেন্সলেস হওয়ার কারণ বের করতে পারলো না!!!
#চলবে
১০০০শব্দের পর্ব♥️😊