#বর্ষণের সেই রাতে- ২
#লেখিকা: অনিমা কোতয়াল
৫.
আদ্রিয়ান অবাক দৃষ্টিতে দেখছে অনিমাকে। মেয়েটা হুটহাট মাঝখান থেকে কোন এক অংশ ভুলে যায় কেন? কাল রাতে ভেবেছিল অতিরিক্ত মানসিক চাপের কারণে এরকম হয়েছে কিন্তু এখন আবারও একই ঘটনা বেশ ভাবাচ্ছে আদ্রিয়ানকে। কিছুতো একটা আছে যেটা আপাত দৃষ্টিতে আদ্রিয়ানের চোখে পরছেনা। মানসিক আঘাতে কারো স্মৃতিশক্তিতে এমন প্রভাব পরবে না, তার ধরণ ভিন্ন। অনিমা দুহাতে নিজের মাথা চেপে ধরে একটা কথাই বলছে, ‘ কী হয়েছিল এরপর?’। কিছু একটা ভেবে আদ্রিয়ান অনিমার দুই বাহু ধরে বলল,
” কিচ্ছু হয়নি। আপাতত কিচ্ছু মনে করতে হবেনা। শান্ত হও।”
অনিমা প্রচন্ড অস্হির হয়ে আদ্রিয়ানের দিকে তাকিয়ে উত্তেজিত কন্ঠে বলল,
” কেন? মনে কেন পরবে না? কেনো?”
” একটু প্রেশারে আছো তুমি, ঠিক মনে পরে যাবে। এখন আপাতত কিছু মনে করার চেষ্টা করোনা। তাহলে আরও সমস্যা হবে। রিল্যাক্স।”
আদ্রিয়ানের কথা একটু শান্ত করল। ও জোরে জোরে দুটো শ্বাস নিয়ে আদ্রিয়ানের মুখের দিকে তাকিয়ে করুণ কন্ঠে বলল,
” আমার সাথে এমন কেন হচ্ছে?”
আদ্রিয়ানের বুকে গিয়ে লাগল কথাটা। কী বলবে ও? এই মেয়েটার সাথে একচুয়ালি কী হয়েছে তা তো ও নিজেই জানেনা। তবে আপাতত কিছু একটা বলে সামলে নিতে হবে। আদ্রিয়ান অনিমার দিকে ভালোভাবে তাকিয়ে নরম কন্ঠে বলল,
” সেটাতো বলতে পারব না। তবে এখন আপাতত এসব বাদ দাও। যা হয়েছে সেটা পাস্ট ছিল। পাস্ট ভুলে যাও আর নিজের প্রেজেন্ট কে নিয়ে ভাবো।”
অনিমা একপলক আদ্রিয়ানের দিকে তাকিয়ে চোখ নামিয়ে নিল। ওর বর্তমানই বা কী? আদ্রিয়ান এখন ওকে নিজের বাড়িতে জায়গা
দিয়েছে ঠিকই কিন্তু কতদিন দেবে? আদ্রিয়ানতো ওর কেউ হয়না তাহলে কেন রাখবে? অনিমাকে এভাবে চুপ থাকতে দেখে আদ্রিয়ান বলল,
” কী ভাবছ?”
” আমিতো এখন ঠিক আছি। খুব তাড়াতাড়ি সুস্থও হয়ে যাবো। কবে যাবো?”
আদ্রিয়ান অনিমার এমন প্রশ্নে ভ্রু কুচকে ফেলল। জিজ্ঞাসু কন্ঠে বলল,
” মানে?”
অনিমা নিচের দিকে তাকিয়ে হাত কচলাতে কচলাতে বলল,
” মানে, আমিতো সুস্থ হয়ে গেলে তারপর তো আর এখানে রাখার দরকার নেই। তাই বলছিলাম কবে যাবো?”
আদ্রিয়ান হাত ভাজ করে বলল,
” কোথায় যাবে?”
অনিমা এবার সত্যিই চিন্তায় পরল। সত্যিতো কোথায় যাবে ও? বাইরের পরিবেশটা ওর জন্যে নিরাপদ নয়। এমন কোন আত্মীয় ওর নেই যেখানে গিয়ে ও থাকতে পারে। সবাই স্বার্থন্বেষী। কিন্তু যেতে তো হবেই। কিছু করার নেই ওর। তাই ইতস্তত করে বলল,
” এখনও জানিনা। আপনি পুলিশের সাথে যোগাযোগ করে আমাকে হোমে পাঠিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করতে পারেন।”
আদ্রিয়ানের বেশ রাগ হল অনিমার কথায়।সমস্যা কী এই মেয়ের? এত পাকামো করতে কে বলেছে ওকে? আদ্রিয়ান কী একবারও বলেছে ওকে চলে যেতে? এত বেশি কেন বোঝে এই মেয়েটা?
” সুস্হ হও তারপর দেখা যাবে।”
এটুকু বলে আদ্রিয়ান রাগ করে হনহনে পায়ে নিচে চলে গেল। অনিমা অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল আদ্রিয়ানের যাওয়ার দিকে। ও এমন কী বলল যে লোকটা রাগ করল? সাধারণ একটা কথাইতো বলেছে। এতে এতটা রিঅ্যাক্ট কেন করল?
অনিমা গুটিগুটি পায়ে আদ্রিয়ানের রুমে এসে ঢুকল। কিন্তু রুমে কোথাও আদ্রিয়ানকে দেখতে পেলোনা। ব্যালকনির দিকে তাকিয়ে দেখল আদ্রিয়ান রেলিং ধরে বাইরে তাকিয়ে আছে। আদ্রিয়ানকে ওভবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে অনিমা আস্তে আস্তে এগিয়ে গিয়ে আদ্রিয়ানের পাশে গিয়ে দাঁড়াল। আদ্রিয়ান অনিমার দিকে তাকিয়ে বলল,
” কিছু চাই?”
অনিমা আদ্রিয়ানের দিকে তাকিয়ে মাথা নেড়ে না বলল। আদ্রিয়ানও কিছু বলল না। এভাবে বেশ অনেক্ষণ দুজনে চুপ করে রইল। আদ্রিয়ানকে এভাবে চুপ থাকতে দেখে অনিমা মন খারাপ করে ভেতরে চলে এল। ও হয়ত আদ্রিয়ানের কাছ থেকে কিছু শোনার আশায় ছিল কিন্তু আদ্রিয়ানতো কিছুই বলল না। এদিকে আদ্রিয়ানও অনিমার তখনকার কথায় বেশ রাগ করেছে। তাই কিছু বলল না। বেশ অনেকটা সময় কেটে গেল। আদ্রিয়ান এবার ভাবল যে ভেতরে গিয়ে দেখা উচিত যে মেয়েটা কী করছে। ও ভেতরে গিয়ে দেখল অনিমা মাথা নিচু করে একদম চুপচাপ বসে আছে। মুখটা ফুলিয়ে রেখে দিয়েছে। বারবার নাক টানছে। একটা গাল ফোলানো বাচ্চা লাগছে এখন। একটা উনিশ-বিশ বছরের মেয়েকে খুব বেশি বড়ও বলা যায় না। অনিমার এমন মুখ দেখে আদ্রিয়ানের সব রাগ এমনিতেই কেটে গেল। ও গিয়ে অনিমার পাশে গিয়ে বসে বসল। অনিমা আদ্রিয়ানের দিকে একটুখানি তাকিয়ে আবার চোখ সরিয়ে নিল। আদ্রিয়ান মুচকি হাসি মুখে রেখে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইল অনিমার দিকে। তারপর একটু কাশি দিয়ে গলা ঝাড়তেই অনিমা ভ্রু কুচকে আদ্রিয়ানের দিকে তাকাল। আদ্রিয়ান বলল,
” চুপ করে বসে আছো কেন?”
অনিমার শরীরের ব্যাথাটা বেশ বেড়েছে। কিছু কিছু জায়গা জ্বলছে। জ্বলে জ্বলে ব্যথা করে উঠছে। তারওপর কেমন দুর্বল লাগছে। খুব ঘুমও পাচ্ছে আবার। তাই অনিমা আদ্রিয়ানের মুখের দিকে তাকিয়ে বলল,
” আমার খুব ঘুম পাচ্ছে।”
আদ্রিয়ান অনিমার দিকে সুক্ষ্ম দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে বুঝল ওর সত্যিই খুব ঘুম পাচ্ছে। আদ্রিয়ান উঠে বালিশ ঠিক করে দিয়ে অনিমার উদ্দেশ্যে বলল,
” চুপচাপ শুয়ে পরো। ক্লান্ত লাগছে তোমাকে ভীষণ।”
অনিমা কথা না বাড়িয়ে গুটিয়ে শুয়ে পরল। আদ্রিয়ান অনিমার গায়ে একটা চাদর জরিয়ে দিল। অনিমার শরীরটা এতটাই দুর্বল ছিল যে শোয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই চোখ ভেঙ্গে ঘুম চলে এলো। আদ্রিয়ান তাকিয়ে আছে অনিমার দিকে। সময় কত অদ্ভুত জিনিস। যেখানে ও নিজের গাড়ির ফ্রন্ট সিটেও অপিরিচিত কোন মেয়েকে এলাও করতে চাইত না খুব বেশি দরকার ছাড়া। সেখানে একটা মেয়েকে ও নিজের বেডরুমে জায়গা দিয়েছে। শুধু তাই নয় নিজের বিছানায় ঘুমানোর অনুমতি দিয়েছি। এটা কি শুধুই মানবিকতা নাকি অন্যকিছু? অন্যকিছু? যদি অন্যকিছু হয়তো সেটা কী?
_____________
রঞ্জিত চৌধুরী গম্ভীর মুখ নিয়ে বসে আছে। কপালের চামড়ার ভাঁজগুলো গাড়ো হয়ে উঠছে, নাকের নিচে হালকা ঘাম। চশমাটা খুলে টি-টেবিলে ওপয রেখে পাশে সিঙ্গেল সোফায় বসে থাকা কবির শেখের দিকে তাকাল। সম্পর্কে একমাত্র শালা হয় সে তার। নাকের নিচের ঘামটা মুছে রঞ্জিত চৌধুরী বলল,
” এখন কী করব? সবটা এভাবে ভেস্তে যাবে সেটাতো বুঝতে পারিনি।”
কবির শেখ এতক্ষণ বিরক্তি নিয়ে বসে ছিলেন। নিজের দুলাভাইর কথা শুনে আরও বিরক্ত হলেন উনি। প্রচন্ড বিরক্তি নিয়ে বলল,
” এখন আমাকে কেন জিজ্ঞেস করছেন? আমি বারবার আপনাকে বলেছিলাম না যে এমন কিছু করবেন না যেটা ভবিষ্যতে আমাদের ওপরেই ভারী হয়ে পরে।”
” আরে আমি কীকরে বুঝব ওখানে পুলিশ চলে আসবে? আর মেয়েটা বেঁচে যাবে?”
” আপনার দরকার টা কী ছিল এমন করার? বাবাই কটা দিনের জন্যে বাইরে গেল আর আপনি এমন একটা কাজ করে বসলেন। বাবাই যদি জানতে পারে মেয়েটা এবাড়িতে নেই কী হবে ভেবে দেখেছ?”
রঞ্জিত চৌধুরী এবার নিজেও বিরক্ত হলো। ওনার মনে হয় উনি সবসময় যা করেন ঠিকই করেন। আর ওনার কাজকে কেউ ভুল বলবে সেটা তার মোটেও পছন্দ নয়। উনি সবার কাজের ভুল ধরবেন, অন্যকেউ ওনার কাজের ভুল কেন ধরবে? তাই একটু রেগেই বলল,
” তুমি জানোনা ঐ মেয়ের বেঁচে থাকা কতটা বিপদজনক? ওর কাছে আমাদের কতগুলো অপকর্মের প্রমাণ আছে? কথা থেকে এসে টপকালো কে জানে? আর তুমি জিজ্ঞেস করছ এসব কেন করলাম? ঐ ছেলের জন্যে এখন আমি নিজের বিপদ বাড়াবো?”
কবির শেখ চোখ বন্ধ করে একটা শ্বাস ফেলে বলল,
” আমি জানি সেসব। আর ও জাতে কাউকে কিছু বলতে না পারে সেই ব্যবস্থা তো আমি করেছিলাম? আর যেভাবে চলছিল সেভাবে আর কিছুদিন চললে এমনিতেই সব ভুলে যেত, নয়ত পাগল হয়ে যেত। কিছুই মনে থাকত না ওর।”
রঞ্জিত চৌধুরী বলল,
” ও নিজেও একজন ডক্টর কবির। যেকোন মুহূর্তে চট করেই ধরে ফেলত সবটা। বুকে যেত যে রোজ ওই মেয়েটাকে…”
কবির শেখ চাঁপা স্বরে বললেন,
” হুস! চুপ করুন। দেয়ালেরও কান আছে। এই রহস্য আমরা দুজন ছাড়া আর কেউ জানতে পারবেওনা। এতগুলোদিন যখন বাবাইর দৃষ্টি এড়িয়ে কাজটা করতে পেরেছিলাম। বাকি কয়েকটা দিনও ঠিক করে ফেলতাম। এমনিতেও ও আমাকে অন্ধের মত বিশ্বাস করে। কিন্তু এখন ঝামেলা হয়ে যাবে। ও যদি একবার টের পায় ঐ মেয়ের গায়ে কেউ ফুলের টোকাও দিয়েছে, সব লন্ডভন্ড করে দেবে ও। তুমি তো জানো মেয়েটার ব্যাপারে কতটা ডেসপারেট ও। মেয়েটাকে ও নিজের সম্পত্তি মনে করে। ওকে গায়ে আঘাত করা তো দূর ওকে ছোঁয়ার অধিকারও ও অন্যকাউকে দেবে না।”
রঞ্জিত চৌধুরীর কপালের চিন্তার রেখা আরো গাড়ো হল। সত্যিই ঝোঁকের বসে বিরাট একটা ভুল কাজ করে ফেলেছে। এখন পরিস্হিতি নিয়ন্ত্রণ করাটা খুব কঠিন হয়ে যাবে যদি ওনার ছেলে ফিরে আসার আগে যদি ঐ মেয়েটাকে খুঁজে আনতে না পারে।
_____________
রাত প্রায় একটা বাজে । অনিমা বিছানায় একপ্রকার অচেতন অবস্থায় পরে আছে। রাতে ঘুমিয়ে পরার একঘন্টার মধ্যেই অনিমার প্রচন্ড জ্বর ওঠে। আদ্রিয়ান প্রথমে খেয়াল করেনি কিন্তু হঠাৎ করেই অনিমা কোঁকানোর আওয়াজ পেয়ে উঠে এসে ওর কাছে গিয়ে মাথায় হাত রেখে বুঝতে পারে যে অনিমার গায়ে জ্বর উঠেছে প্রচন্ড। এরপরই ব্যস্ত হয়ে অনিমার সেবা করা শুরু করে দেয় ও। প্রথমে ঔষধ দিয়ে এরপর জ্বরপট্টি দিতে শুরু করল। জীবনে প্রথম কোন অসুস্থ মানুষের সেবা করছে ও। কিন্তু এটা নিয়ে ওর কোন বিরক্তি নেই বরং প্রচন্ড চিন্তা হচ্ছে অনিমার এতটা জ্বর দেখে। এতকিছু করেও কিছুতেই জ্বরটা কমছে না। তাই ঐ রাতেই ও ডক্টরকে ফোন করল। কিছুক্ষণের মধ্যেই ডক্টর চলে এলো। ডক্টর এসে চেকআপ করল। চেকআপ শেষ হতেই আদ্রিয়ান জিজ্ঞেস করল,
” সিরিয়াস কিছু?”
ডক্টর আদ্রিয়ানের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলল,
” আপনার ওয়াইফ?”
” ইয়েস। আমার ওয়াইফ।”
কথাটা বলে আদ্রিয়ান নিজেই বোকা হয়ে গেল। কী বলল ও? হুট করে বলে দিল ওর ওয়াইফ? কিন্তু অন্য কী বা বলত? কারো বাড়িতে তারই বেডরুমে একটা মেয়ে থাকলে তাকে বউ ছাড়া আর কী বলে পরিচয় দেবে? এসব ভাবতে ভাবতে ডক্টর বলল,
” সিরিয়াস কিছু না। আসলে বৃষ্টিতে অনেকটা সময় ভিজেছিল হয়ত। আর ওনাকে মারাও হয়েছিল। দুটোর ধাক্কা মিলেই এখনকার এই জ্বর। আমি কিছু প্রেসক্রাইপড করে দিচ্ছি। রাতে যেই ঔষধ দিয়েছেন তাতেই হবে। এগুলো কাল সকাল থেকে প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী খাওয়ান তাহলেই হবে।”
ডক্টর উঠে দাঁড়াল। আদ্রিয়ান এগিয়ে দিতে গেল সাথে খানিকটা। যাওয়ার আগে ডক্টর হেসে বলল,
” এত বড় সেলিব্রিটিবিয়ে-টিয়ে করে যে সংসার করছেন আর মিডিয়া এখনও টের পেলনা ভাবা যায়? আপনার ফ্যানস শুনলে তো হার্টঅ্যাটাক করবে।”
আদ্রিয়ান হাসল। ডক্টরকে বিদায় দিয়ে আদ্রিয়ান এসে অনিমার পাশে বসল। কিছু একটা ভেবে ও ওর পি.এ. অভ্রকে ফোন করল।
ঘুমে মগ্ন ছিল অভ্র। এতরাতে ফোনের আওয়াজ পেয়ে বিরক্তি নিয়ে চোখ বন্ধ করেই ফোনটা হাতরাতে হাতরাতে বলল,
” কোন শালা এই রাতে আমার এত পেয়ারের ঘুমটা নষ্ট করলি রে?”
ফোনটা হাতে নিয়ে চোখ না খুলেই রিসিভ আর্ধেক ঘুমন্ত অবস্থাতেই বলল,
” আরে রাতে নিজে ঘুমোস না ভালো কথা আমায় ডিসটার্ব করার কী মানে?”
আদ্রিয়ান হতাশ নিঃশ্বাস ত্যাগ করল। অভ্রের এমন কাজের সাথে পরিচিত ও। তাই একটু জোরে ধমকের সুরে বলল,
” অভ্র!”
সাথেসাথেই অভ্রর সব ঘুম পালিয়ে গেল। একপ্রকার লাফিয়ে বসে হাফানো কন্ঠে বলল,
” স্ সরি স্যার! আসলে ঘুমিয়ে ছিলাম তাই। সরি।”
শেষের সরিটা অসহায় কন্ঠে বলল অভ্র। আদ্রিয়ান সেদিকে পাত্তা না দিয়ে বলল,
” একটা প্রেসক্রিপশনের ছবি পাঠাচ্ছি। কাল সকালে ঔষধগুলো নিয়ে আমার বাড়িতে চলে এসো।”
অভ্র স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে বলল,
” ঠিকাছে। আর কিছু লাগবে স্যার?”
” এটুকু করলেই আপাতত ধন্য হব।”
বলে ফোনটা রেখে দিল আদ্রিয়ান। অনিমার মাথায় হাত দিয়ে দেখল জ্বরটা এখন আগের মত না থাকলেও বেশ আছে। তাই আবারও জ্বরপট্টি দিতে শুরু করল।
______________
সকাল সাড়ে আটটা বাজে। অনিমা বেডে হেলান দিয়ে বসে আছে। খুব ক্লান্ত লাগছে। আদ্রিয়ানের কাছে শুনেছে ওর ভীষণ জ্বর উঠেছিল। আর বাটি , কাপড় দেখে এটাও বুঝেছে যে আদ্রিয়ান পুরো রাত ওর সেবা করেছে। নিজের কাছেই ভীষণ লজ্জা লাগছে ওর এখন। একটা মানুষকে কতটা ঝামেলায় ফেলে দিচ্ছে ও। আদ্রিয়ান ওর পাশে বসেই ল্যাপটপে কিছু একটা করছে। হঠাৎ দরজায় নক পরল। আদ্রিয়ান কাজ করতে করতেই বলল,
” কাম ইন।”
অভ্র হাতে ঔষধের প্যাকেট নিয়ে ভেতরে ঢুকতে ঢুকতে বলল,
” স্যার সব ঔষধ নিয়ে এসছি আপ…”
এটুকু বলে আদ্রিয়ানের বিছানায় একটা মেয়েকে শুয়ে থাকতে দেখে ওর কথা আটকে গেল হাত থেকে প্যাকেটও পরে গেল। ও অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। আদ্রিয়ান কোণাকোণি স্টাইলে ভ্রু বাঁকিয়ে বলল,
” কী হল? হা করে আছো কেন? মশা যাবে।”
অভ্র সাথেসাথে মুখ বন্ধ করে অভিযোগের সুরে বলল,
” এটা কী করলেন স্যার? কবে করলেন এটা? আপনার কাছে এটা আশা করিনি। আপনার পি.এ. হিসেবে এই খুশিতে অন্তত একবেলা ভুরিভোজের অধিকারতো আমার আছে না কী? এটা ঠিক হল?”
অনিমা অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে অভ্রর দিকে। সবটাই মাথার ওপর দিয়ে গেল। আদ্রিয়ান নিজের কাজে মন দিল কারণ ও জানে অভ্র কী ভেবে বলেছে। অভ্র দাঁত কেলিয়ে অনিমার দিকে তাকিয়ে বলল,
” আসসালামু আলাইকুম ভাবী। ভালো আছেন?”
#চলবে…