স্বামী পর্ব ৭

#স্বামী(সিজন-২)
#পর্ব-৭
#সেলিনা_আক্তার_শাহারা।
__________________________°_°
“—–
তিতিলের ব্যাগ গুছানোর দরকার পরেনি। ব্যাগ থেকে তো কিছু বার করে এদিক সেদিক রাখাই হয়নি।
ব্যাগটা নিয়ে হন হন করে দরজার বাহিরে চলছে।

–তিতিল যখন রিদয়ের কাছ থেকে তালাক চেয়েছে।রিদয় কোন শব্দ করেনি।আর না ওকে শাস্তি দিবে জেনেও কোন শব্দ করেছে।
এটা পাওনাই ছিলো, ওর যেভাবে শান্তি হয় তাই করুক।তবুও শান্ত হক।
তাই তিতিলের কথার মান রেখে রিদয় তাতেই রাজি হয়েছে।
–তুমি যদি মনে করো আমায় শাস্তি দিয়ে আর তালাক দিয়ে সুখি হবে তাহলে আমার আপত্ব্যি নেই।তোমার মন মতই সব হবে।

“-দরজার বাহিরে চলে গেছে তিতিল।রিদয় একরাশি কষ্ট বুকে নিয়ে খাটের কোনায় বসেছে।একটিবারও তিতিলকে আটকাতে চায়নি।
দুষ তো আমারই বিয়ে করে এনেও বৌয়ের মর্জাদা দিতে পারিনি।আর যার কাছে সব পেতে তাকেও মেরে দিয়েছি।
” করুক ওর যা ইচ্ছা, বাধা নেই কোন।ফাঁসি হলেও আমি শান্তিতে মরব এই জেনে যে তিতিল তো সুখে।

—–

“-বাড়ির গেটে পা বারাতে গিয়ে পিছন থেকে কারো ডাক পেলো তিতিল।
-মা চলে যাচ্ছিস!!
” আরিফ রহমান এক রাশি নিরাশা নিয়ে তিতিলের পানে চেয়ে রয়েছে।
তিতিল মাথা নত করে চুপ চোখের পানি বেয়ে মাটিতে পরছে।
“- মা মনে রাখিস তুই একা যাচ্ছিস না, এই ঘরের সুখ শান্তি সব কিছু নিয়ে যাচ্ছিস।
-আপনার ছেলের সাজা হবে বলে আপনি আমায় আটকাতে চাইছেন না তো?

“-কষ্টের মধ্যেও একটা শব্দ করা তাচ্ছিল্য একটা হাসি আরিফ রহমানের মুখ দিয়ে বেরিয়ে এলো।
ছেলের কথাই যদি ভাবতাম।তাহলে ওর পছন্দের মেয়েকে রেখে তোকে বিয়ে করবে বলেছে যখন তখনই ওকে বাধা দিতাম। তর বাড়িতে গিয়ে তোকে ছেলের বৌ বানিয়ে আনতাম না। তুই কি তখন জানতে পারতিস!! না কিছু করতে পারতিস!
সবটা চেপে যে যার মতই তো থাকতে পারতাম।তর চিন্তা করতাম?
আমি ছেলের বাবার মন নিয়ে নয়।একটা মেয়ের বাবা হয়ে চিন্তা করেছিলাম।
আমি অমত করিনি তোকে ঘরে তুলতে।
আমি ভেবেছিলাম তোদের জীবন ধিরে ধিরে মধুর মত হবে।তবে তা তো হল না তবে সম্পর্কে বিষ ঠিকই ঢালা হয়েছে।

” তিতিল কিছুতো বল!!
-আমি এত কিছু জানিনা বাবা,শুধু জানি আমার স্বামীকে আপনার ছেলে খুন করেছে তার শাস্তি হওয়া দরকার।

“তুই আমায় বার বার হাসাচ্ছিস।কি শাস্তি দিবি তুই রিদয়কে??
এই জন্য যে একটা বিধবাকে নিজের ঘরে সসন্মানে তুলেছে। সেই বিধবার একটা মাথা গুজার ঠাই জেনো হয়।একবারও নিজের ভালোবাসার কথা ভাবেনি।
আর সে শাস্তিকে ভয় পেলে সত্যিটা তুই জানতি? সেকি তকে বলতো কোনদিন?
“- তিতিলের মাথায় এবার জিনিসটা ঢুকেছে।সত্যিতো উনি আমায় না বললেও পারত।তাহলে বলে নিজের জন্যে বিপদ তৈরি করল কেন??

“- দেখ মা তোকে ছেলের বৌ নয়।নিজের মেয়ে বলেছিলাম।যদি মনে করিস এই বাবাকে রেখে গেলে তুই শান্তি তাহলে যা চলে যা।জুই ফুল তো সেই ছোট থেকেই মা হিনা ছিলোই। তুই চলে গেলে না হয় আবার হল।তোকে তো ওরা মা ভেবেই বাঁচছে চাইছে।

“-আপনার কথা মানলাম বাবা, তবে এটা তো মিথ্যা নয় যে উনি আমার স্বামীর খুনি.
মিথ্যা বলে আমায় বিয়ে করেছে।
— না তিতিল রিদয় খুনি নয় ওটা একটা এক্সিডেন্ট।
মিথ্যা বলেনি শুধু সত্যিটা লোকিয়েছে বাস।
আর কে স্বামী??
আদনান! বারবার স্বামী স্বামী করছিস…
ও দুনিয়ায় নেই মা সে মরে গেছে।এখন তর স্বামী রিদয়।আর তুই তাকে যে শাস্তি দিতে চাস দে।আমার বা রিদয়ের আপত্ব্যি নেই।
শুধু আমাদের ছেরে যাস না মা।

শত দিক চিন্তায় মগ্ন তিতিল সত্যি তো ওরা চাইলে সবটা লোকাতে পারত।আর ইচ্ছা করেও এমনটা করেনি।
উনার ভালোবাসার মানুষের চিন্তা না করে একটা অসহায় মেয়ের কথা ভেবেছে এতে বুঝা যায় উনার মন কত নরম ও উদার।

বাবা উনিতো সেতু নামের কাউকে ভালোবাসে এই ঘরে থাকবো কোন পরিচয়ে??
উনার মনে আমার জায়গা নেই বাবা।
“-আমার মেয়ের পরিচয়ে থাকবি তুই।ঐ হতছারা যা খুশি করুক।এই বাড়ির মেয়ে তুই তাই মেনে চলবি।
ঘর ময়লা হলে কেউ ঘর ছারেনা।ঘরটা পরিস্কার করে।
তুই যদি ইচ্ছা করিস তাহলে সবই পারবি তুই।মেয়েরা সব পারে মা আল্লাহ তাদের অনেক ধের্য শক্তি দান করেছেন।
রিদয় খুনি না রে মা।যদি খুনি ভাবিস তাহলে চলে যা।তবে সকালে যাবি এত রাতে তোকে জেতে দেবো না।
রাত টুকু পার হতে দে।
আর যদি ভাবিস রিদয় খুনি তর সুখ সে নষ্ট করেছে তাহলে তর যা ইচ্ছা তুই কর।কোব বাধা নেই। যদি পারিস তাকে ক্ষমা করে নতুন করে শরু কর মা।
রাত টুক তুই ভাব…

“-
—–,সত্যি অনেক রাত হয়েছে।রাগ দেখেয়ি বের তো হচ্ছিলো তবে ওর কাছে তো একটা টাকাও নেই বাড়ি অবদি পৌছানোর জন্য। আর একা মেয়ে মানুষ এত রাতে রাস্তায় ব্যাপারটা ঠিক নয়।
তাই রাতটা এখানে থাকাই ভালো।
তবে রিদয়ের রুমে তো সে যাবে না কিছুতেই না।
জুই ফুলের পাশের রুমটায় তিতিল ব্যাগটা রেখে নিজের স্থান তৈরি করেছে।
সবই আছে রুমে শুধু স্বামী ছারা।
“-
——
সারা রাত তিতিল জানালার ধারে বসে ছিলো।এক ফুটা ঘুম তার চোখে আসেনি।শুধুকি তিতিলের একটার ঘুমই নষ্ট হয়েছে? রিদয়ও তো একই ভাবে জেগে।

বাহিরে রাতের আধারে জোনাকির খেলা মেলা। অাধারের চেরাগ ওরা।
চাদঁটা কেন আজ গা ঢাকা দেয়া! অন্ধকারে নিজেকে মিশিয়ে নিচ্ছে ওরা । এই অন্ধকার আমায় গিলে নে তুই।দুনিয়া বড় কঠিন জায়গা। এখানে শত রংঙের মানুষ। প্রতিটা মানুষের জন্মের পিছনে কারন হয়।আমার কি কারন?কষ্ট সইতে এসেছি দুনিয়ায়…তাহলে সুখ কার কপালে লেখা হয়েছে??? তার কপাল টা কেন আমায় দিলো না। সুখটা কেমন যদি ধরা জেতো।
সুখের বেঁচা কেনা যদি হত কতই না ভালো হত।যার যততা সুখ দরকার ইচ্ছা মত কিনে নিতো।
কেন এমন হয় না।সুখ তারে কেন ছোয়া যায় না। সুখ কি কোন মিছে মরিচিকার নাম!!

,———-
“- কি হয়ে গেলো জীবন টা।
উনি সত্যিই বলছে উনি পাপি, তবে পাপের জন্য যথেষ্ট ভুগছে।
নিজের প্রেমীকাকে রেখে আমায় বিয়ে করে ঠাই দেয়া।নিজেকে তিলে তিলে শেষ করা একি কম!!
বাবা ঠিকই বলেছে সে মিথ্যা বলেনি।সত্যিটাও আর লোকায়নি।সবটা বলে দিয়েছে।একবার নিজের কথা ভাবেনি।ভাবেনি তার চাকরির কথা।ভাবেনি পরিবারের কথা।সেই ঘটনা এতটাই তাকে তারা করে বেরায় সে নিজের শাস্তিতে বেশ খুশি হচ্ছে।
” আল্লাহ পথ দেখাও কোন দিকে গেলে আমি শান্তি পাবো।
শাস্তি দেই বা না দেই। তবে উনার ভালোবাসার মাঝখানে আসব না।উনার ভিতর বাহিরে কোন খানে আমার জায়গা নেই কোথাও নয়। শুধু শুধু মিছে আশা বাধব না।আর নতুন করে কষ্ট পেতে ইচ্ছা করে না।

“-
-সকালের নাস্তাটার কি হবে?, তিতিল নিজ হাতেই সব করছে।
জুই ফুল আজ স্কুলে যাবেনা।ভাবির আচঁল ধরে পিছু পিছু হাটছে।ওরা চলে গেলে যদি ভাবি চলে যায়।

” ভোর হতেই জুই ফুল তিতিলের পিছু পিছু।
ভাবি আমরা এতিম ভাবি তোমায় পেয়ে মায়ের আচঁলটা পেয়েছলাম মনে হয়।আমাদের ছেরে যেও না।তুমি আমাদের সাথে থাকোনা ভাবি।
আমরা দুইজন বলবো ভাই জেনো তোমায় আর না বকে। আর বকবে না আমরা ভাইকে বকে দেবো।
বোকা জুই ফুল, ওরা ভাবছে রিদয় তিতিলকে বকেছে আর সেই কারনে তিতিল চলে জেতে চায়।
“-কি বলবে তিতিল ওদের।কোন পরিচয়ে এই বাড়িতে থাকবে?যে বিয়ে করে এনেছে সে তো তাকে একবারও বললো না যেও না তিতিল।
আর তালাকের কথাটা শুনে একবার প্রশ্নও করল না।তাহলে হয়তো উনিও চায় আমি চলে যাই।

—নাস্তা তিতিলের হাতের বানানো তা আরিফ মুখে দিয়েই বুঝেছে।
আর খুশিও হয়েছে।ভাবছে হয়তো তিতিল যাবেনা।রিদয় এখনও তার রুমের দরজাটা খুলেনি কেন তা জানার জন্য ডাকেইনি কেউ।

–দেখো বৌ মা, তোমাদের মাঝে কি চলছে জানিনা।তবে আমায় রিদয়ের জেঠমা নয় যদি মা হিসাবে মানো তাহলে একটা কথা বলি।
স্বামী হীনা নারীর কোন মূল্য এই সমাজে নেই।স্বামী যত খারাপই হক সে স্বামীই হয়।তুমি চাইলে যে ভুলটার জন্যে চলে জেতে চাও সেই ভুলটা ঠিক করতে পারো।
রিদয় খুব ভালো ছেলে।একবার তাকে বুঝো দেখবে সেই তোমার সব হয়ে উঠবে।আর রিদয় তোমার মূল্য যেদিন বুঝবে সেদিন দেখবে জুই আর ফুলের মত তোমার আঁচলে আটকে আছে।
যা সমস্যা বাড়িতে থেকেই সমাধান করো। বাপের বাড়ি গিয়ে কতটা সুখ তা তুমিও জানো।লোক সমাজ এখন তোমায় বিধবা বলে দয়া দেখাবে না।বলবে ডিভোর্সি নারী।
স্বামীর বাড়িতে গোয়াল ঘরে পরে থাকাই ভালো।আর এমন তো নয় সে অন্য নারীকে ঘরে তুলতে চায়। তাহলে না হয় বুঝতাম। সে তো সময়ের সাথেই চলছে একটু সময়কি তুমি তাকে দিবে না??
রিদয় চাপা স্বাভাবের সবার প্রয়োজন দেখলেও নিজের প্রয়োজন কখনো কাউকে বলবে না।
আর বলবে না বলে কি তার কপালে আসবে না!!

আমার অনুরুধ বলো আর অর্ডার বলো যাই বলো।তুমি যাচ্ছো না।আমি আর এই সংসারের হাল ধরতে পারব না, আমায় ক্ষমা করো। বড্ড হাপিয়ে গেছি।

রোকেয়া বেগম নিজের কথা শেষ করে চলে গেছে।তবে উনার কথা সত্যি। কোথাও তো আমার সুখ নেই।তবে এখানে থাকলে তিনটে মানুষের সুখ হবে।এই মা মরা জুই ফুল।আর শশুর বেসে বাবা টা।

“-কি সিধান্ত জানতে আরিফ রহমান তার বড় ভাই ও ভাবি সবাই এক রুমে চুপ চাপ বসা।
এবার শেষটা তিতিল জানে।কোন জোর নয়।সকল ভাবে ওকে বুঝানো হয়েছে সে জেনো নিজের ঘরটা না ভেংঙে গুছিয়ে নেয়।

–তিতিলও বেশ চিন্তায় মগ্ন।
কি করবে? রিদয় নামক মানুষটাকে ছারার কথা নয় শুধু, ছারতে হবে জুই ফুলের ভালোবাসা বাবার স্নেহ।

তিতিল তার সিদ্ধান্ত করে ফেলেছে।
“সোজা ড্রইং রুমে পা রেখেছে তিতিল।
সবার প্রথম রুম টায়। বাবা!!
ডাক পরতেই সবার জানার আগ্রহে অধির কি হবে তিতিলের সিদ্ধান্ত।
“-বল মা তুই কি চাস!

—বাবা আমায় মেয়ের মত দেখেন তাই তো??
” হ্যা অবশ্যই তুই তো আমার বড় মেয়েই হস।
–তাহলে আমায় এই বাড়ির একটা কোনা দিন আমি আপনাদের সেবা করে জীবন পার করতে চাই।
আপনার ছেলের বৌ হয়ে নয় আপনার মেয়ে হিসাবে থাকতে চাই।
“তুই!
-বাবা আর কিছুতেই জোর করবেন না আমায়।
মানছি উনি ভালো অনেক ভালো।আমার সিদ্ধান্তটা উনাকে ভালো রাখার জন্যেই করেছি।
” আরিফ রহমান এতেই সন্তুষ্টি বুধ করছে।বাড়িতে তো থাকবে, বাস ধিরে ধিরে রিদয়ের কাছেও চলে যাবে এই আশায়।

-*-আমায় বিয়ে করে নিজের ভালোবাসার থেকে দূরে সরে এসেছে, সেই ভালোবাসা জাতে ফিরে পায় সেই জন্যেই বলছি।
আমি দাসীর মত এই বাড়িতে পরে থাকবো।
আপনার ছেলের পছন্দ মত বিয়ে করে সংসার করুক।
উনি বেশ কষ্টে আছে বাবা বড্ড কষ্টে আর সেই কষ্টের ভাগ তো দেবেনা। তাই কষ্টটার কম হয় কিনা দেখি।

“-আরিফ তার ভাই ভাবি সবাই অবাক।মানলাম সে যাচ্ছেনা ভালো খবর এটা।তবে এটা কোন কথা স্বামীর বিয়ে করাতে চাইছে?
এখন ঠিক না হলেও ধিরে ধিরে এই সম্পর্কটা ঠিক হতে পারত।সেটা নিজ হাতে ধংশ করতে চাইছে??
কি মেয়ে এটা!!
-তবে রোকেয়া বেগম ঠিক করে নিয়েছে সেতু নামক ভাইরাস এই বাড়িতে ঢুকতে দেবেনা।
আর রিদয় আর তিতিলকে এক করবেই।

লে…
কান্ড ঘটে গেলো।

” রিদয় ঘুম থেকে উঠে তিতিলকে দেখে বেজায় খুশি তবে খুশিটা অন্তরে চাপা।
এখন বড্ড খিপ্ত কথা পরে বললেই ভালো।
—-রিদয়কে খেতে দিয়ে তিতিল চার হাত দূরে দারিয়ে রয়েছে। কিছু দরকার হলে দিবে কাজের মেয়েরা তো এমনই করে।মালিকদের খাবার দিয়ে দূরে দাড়ায়।

মজা করেই রিদয় খাচ্ছে, একটা শান্তি মনে।তিতিলকে সব বলে দিয়েছে আর সে সব মেনে নিয়েছে।
-তিতিল আর চোখে রিদয়কে দেখে যাচ্ছে।
____

“খাওয়ার মধ্যেই কেউ পিছন থেকে রিদয়ের দুই হাতে চোখ ধরে রেখেছে।
চেখ বন্ধ ঘাড় মুরাতে পারছে না রিদয়।
বা হাতে চোখের উপরে থাকা হাতে হাত দিতেই রিদয়ের মুখ দিয়ে একটি নাম বেরিয়ে এলো.

—–সেতু!!!!

চলিবো গো….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here