#প্রাণস্পন্দন
#পর্বঃ২৬
লেখনীতেঃতাজরিয়ান খান তানভি
বসার ঘরে নিষ্প্রাণকে দেখেই ভ্রু কুঞ্চন করে আয়েন্দ্রি। নিজের কক্ষ থেকে বেরিয়েই নিষ্প্রাণকে দেখতে পাবে তা আয়েন্দ্রির কল্পনাতীত। আয়েন্দ্রির দিকে তাকিয়েই মলিন হাসে নিষ্প্রাণ। আলফাজ সাহেব তখন খাওয়ার টেবিলে। আয়েন্দ্রির ভীত সরল দৃষ্টি তার গতিপথ পালটে আলফাজ সাহেবের গম্ভীর মুখে এসে থামে। আলফাজ সাহেব একবার মেয়ের দিকে কঠোর চোখে তাকালেন। তারপর!
তারপর কোনো প্রতিক্রিয়া ছাড়াই নিজের খাওয়ায় মনোনিবেশ করলেন। আয়েন্দ্রি ব্যাপারটা ধরতে পেরে ভয়চকিত গলায় প্রশ্ন ছুঁড়ে নিষ্প্রাণকে—-
“তুই এত সকালে! এইখানে?”
সরব দৃষ্টিতে উঠে দাঁড়ায় নিষ্প্রাণ। প্রাণখোলা হেসে বলল—
“তোকে নিতে এলাম। আজ তো ইমপর্টেন্ট ক্লাস আছে।”
আয়েন্দ্রি অরবে ঢোক গিলে বাবার দিকে তাকাল। ঝুমা রান্না ঘর থেকে বেরিয়ে খাওয়ার টেবিলে এগিয়ে যেতে যেতে বললেন—
“বসো বাবা। খেয়ে নাও।”
চট করে উদ্বিগ্ন গলায় বলে ওঠে আয়েন্দ্রি–
“তুই না খেয়ে এসেছিস?”
নিষ্প্রাণ আলতো হেসে প্রত্যুক্তি করে বলল—
“বুয়া তো তখনও আসেনি। তাই খাওয়া হয়নি।”
ঝুমাকে চকিতে ডেকে উঠে নিষ্প্রাণ।
“মা! আমি কিন্তু পেট ভরেই খাব। না করতে পারবেন না।”
আয়েন্দ্রি ভরাট চোখে চেয়ে অবাক গলায় বলল—
“তুই মাকে কী বলে ডাকলি?”
নিষ্প্রাণ ঝরা গলায় বলল–
“মা। তোর মাকে আমিও মা ডাকব। আমার তো মা নেই। চাচি, মামি, খালা ডাকতে ইচ্ছে হলো না। তাই মা ডাকলাম। তবে আঙ্কলকে বাবা ডাকব না। স্যার ডাকব। তুই চাইলে বাংলায় জনাব বলেও ডাকতে পারি।”
ফিক করে হেসে ফেলে নিষ্প্রাণ। ভয়ে আয়েন্দ্রির শরীর জমাট বেঁধে যাচ্ছে। আর এই ছেলে আছে তার ফাজলামো নিয়ে!
খেতে বসে নিষ্প্রাণ। সকাল ন’টা। ক্লাস শুরু হতে ঢের দেরি। আলফাজ সাহেব অফিসে চলে গেলেন। খাওয়া শেষ করে সোফায় বসে নিষ্প্রাণ। আয়েন্দ্রি প্রশ্নের ডালা নিয়ে বসে নিষ্প্রাণের সামনে।
“তুই বাসায় কেন এসেছিস?”
নিষ্প্রাণ সোজা উত্তর করে—
“তোকে দেখতে ইচ্ছে হলো তাই।”
হাসল নিষ্প্রাণ। বদ্ধ হাসি। ঘাড় বাঁকিয়ে তাকাতেই দেখল প্রভাহীন আননের আরিশাকে। ব্যস্ত গলায় ডেকে ওঠে নিষ্প্রাণ—
“আরিশা!”
স্থির হয় আরিশা। চড়ুই পাখির মন ভালো নেই। কিচিরমিচির নেই প্রভঞ্জনে। শান্ত, স্থিমিত সে। বিষাদগ্রস্ত অন্ত:করণ। আরিশা তাকাল। কী কাতর চাহনি। নিষ্প্রাণ ধীর পায়ে আরিশার সামনে এসে দাঁড়ায়। কোমল হাসে। সংকীর্ণ গলায় বলল–
‘কেমন আছো আরিশা?”
আরিশা জোরপূর্বক হাসল। ম্লান গলায় বলল —
“ভালো।”
নিষ্প্রাণ মৃদু হাসল। বলল—
“চলো, আজ তোমাকে ভাইয়া আর আপু মিলে কোচিং এ দিয়ে আসব।”
আর্তনাদ করতে ইচ্ছে হলো আরিশার। কিন্তু সে করল না। নিষ্প্রভ চোখে বোনের দিকে তাকাল। ছোট্ট করে বলল—
“আমি যাব না।”
ঝুমা ভ্রু নাচিয়ে শাষিয়ে উঠলেন–
“কেন যাবি না? কী হয়েছে তোর? কী ঢং শুরু করছোস?”
চোখ ফেটে কান্না আসতে চাইলো আরিশার। কিন্ত সে নিজেকে গোপন করল। মায়ের কথার তীর তার কানে বিঁধলেও সে জবাব দিলো না। হাঁটু ভেঙে আরিশার সামনে বসে নিষ্প্রাণ। তাতেও আরিশার কাঁধ পর্যন্ত উচ্চতা নিষ্প্রাণের। সে মুগ্ধ হাসল। স্নেহের সাথে আরিশার দুই হাত নিজের মুঠোয় নিয়ে নিজের হাতের পিঠেই চুমু খেলো। যেন তা পৌঁছে যায় আরিশার ভাঙা মনে। চেয়ে রইলেন ঝুমা। নিমেষহীন আঁখিতে। ঠান্ডা স্বরে প্রশ্ন করে নিষ্প্রাণ–
“কোন ফুল পছন্দ তোমার?”
নিষ্কম্প গলায় উত্তর দেয় আরিশা।
“গোলাপ।”
“গোলাপে কাঁটা কেন থাকে বলোতো?”
“জানি না।”
নিষ্প্রাণ শুধু আরিশার মনে যুঝতে থাকা সমস্যার ইতি ঘটাতে নিজের মত করে তার ব্যাখ্যা দিলো।
“গোলাপের কাঁটা তাকে দুষ্ট মানুষদের হাত থেকে বাঁচায়। কথায় বলে না, গোলাপ নিতে হলে কাঁটার আঘাত তো সইতেই হবে। তুমিও গোলাপের অনুরূপ। তোমার বাবা, মা, ভাইয়া, আপু এরা সবাই সে কাঁটা যা তোমাকে দুষ্ট মানুষদের হাত থেকে বাঁচাবে। বাগানে বেঁড়া কেন দেয় জানো? ছোট বাচ্চা আর পশুদের হাত থেকে ফসল রক্ষার জন্য। মানুষকেও এই জন্যই পরিবার দেয়। পরিবার আমাদের জন্য সেই বেঁড়া। সমাজের প্রতিকূল পরিস্থিতি থেকে তারা আমাদের রক্ষা করবে। তাই আমাদের আপনজনদের ওপর ভরসা রাখতে হবে। রাখবে তো?”
ছোট্ট করে হাসে আরিশা। মাথা ঝাঁকিয়ে বলল—
“হুম।”
“গুড। আর মনে রাখবে, পৃথিবীতে যদি সমস্যা থাকে তাহলে তার সমাধানও আছে। আমাদের শুধু ঠান্ডা মাথায় সেই সমাধান খুঁজে বের করতে হবে।
যাও, তৈরি হয়ে এসো। উই আর গেটিং লেট।”
ক্ষণেই হেসে ফেলে আরিশা। তার মনে সুপ্ত সাহসের সঞ্চার হলো। কোচিং এ যাওয়ার জন্য ব্যস্ত ভঙ্গিতে তে কক্ষের দিকে ছুটে যায়। দীর্ঘশ্বাস ফেলে নিষ্প্রাণ। বিমুগ্ধচিত্তে নিষ্প্রাণকে দেখছিল ঝুমা। শুনছিল তার মুখ নিঃসৃত প্রতিটি শব্দ। আয়েন্দ্রিকে উদ্দেশ্য করে নিষ্প্রাণের কর্তৃত্বভরা আদেশ–
“তুই ও তৈরি হয়ে নে। আরিশাকে কোচিং এ দিয়েই সোজা ভার্সিটি যাব।”
দ্বিরূক্তি করলো না আয়েন্দ্রি। আরিশার জন্য এই সাহসটার প্রয়োজন ছিল। আয়েন্দ্রি সিদ্ধান্ত নিয়েছে সে তার বাবাকে জানাবে। খানিক অবাকও হলো সে। যদিও নিষ্প্রাণের কথাগুলো সরাসরি আরিশার সমস্যাকে ইঙ্গিত করে না। তবুও তার খটকা লাগল।নিষ্প্রাণ কেন এত সকালে আসলো? আরিশাকে কেন এইসব বলল?
,
,
,
রিক্সায় নিষ্প্রাণের পাশেই বসেছে আরিশা। মৃদু আলোড়নে কম্পিত হচ্ছে তার কোমল দেহ। বদন জুড়ে নির্লিপ্ততা। নিষ্প্রাণ সাহস যোগানের জন্য বলল–
“ভয় পেয়ো না।”
আরিশা ক্ষীণ সুরে বলল—
“আমার ভয় হচ্ছে।”
নিষ্প্রাণ বাঁকা হেসে বলল–
“ভয় পেলে থাক। আমি দেখে নেবো।”
আরিশা প্রতিবাদ করে বলল–
“না। আমি পারব।”
নিষ্প্রাণ ছোট্ট হাসল। নিরুত্তাপ গলায় বলল—
“সাবধানে থাকবে। তুমি কোনো কথা বলবে না। ভিডিয়ো এডিট করা যাবে না। তাহলে সবাই ফেইক ভাববে। তোমাকে যেন ভিডিয়োতে শো না করে। ওকে?
“হুম।”
নিষ্প্রাণ আরিশার ব্যাগে স্পাই ক্যামেরা লাগিয়ে দিয়েছে। কিন্তু আরিশা ভীতসন্ত্রস্ত। ভয় এখনই তার হাত, পা কম্পিত হচ্ছে।
,
,
,
আরিশাকে নিয়ে কোচিং এর সামনে দাঁড়িয়ে আছে নিষ্প্রাণ। সরব গলায় বলল–
“বি স্ট্রং। ভয় পেয়ো না। যাও ভেতরে।”
দ্বিরূক্তি করলো না আরিশা। আরিশা চলে যেতেই আয়েন্দ্রিকে নিয়ে হাঁটা ধরে নিষ্প্রাণ। আয়েন্দ্রি দ্বিধান্বিত। তার ইচ্ছে হচ্ছে নিষ্প্রাণের সাথে ঘটনাটা শেয়ার করতে। কিন্তু কোনো এক অদৃশ্য দোটানায় সে পারছে না। মুহূর্তেই মোবাইলের রিং বেজে ওঠে নিষ্প্রাণের। রিসিভ করেই বিগলিত হাসে। ফুরফুরে মেজাজে বলল—
“ওয়েট করো। আমি আসছি।”
কল কেটে রহস্য হাসে নিষ্প্রাণ। আয়েন্দ্রি বিভ্রান্ত চোখে তাকিয়ে উৎসুক গলায় প্রশ্ন করে–
“কে কল করেছে?”
নিষ্প্রাণ একগাল হেসে বলল–
“তোর সতীন।”
খলখলিয়ে হেসে উঠল নিষ্প্রাণ।
#প্রাণস্পন্দন
#পর্বঃ২৭
লেখনীতেঃতাজরিয়ান খান তানভি
ক্যান্টিনে বসে আছে নিষ্প্রাণ । তার সামনেই শ্রেয়া । শুষ্ক দৃষ্টি তার । নিষ্প্রাণ ভাবান্তরহীন । তার দৃষ্টি সূদুর । যেখানটায় বসে আছে আয়েন্দ্রি । শ্রেয়া কন্ঠে কাঠিন্যতা নিয়ে বলল–
“ছেলেদুটোকে এভাবে মারলে কেন?”
নিষ্প্রাণ মোলায়েম গলায় প্রত্যুত্তর করে–
“ওরা সীমান্তের কি অবস্থা করেছে দেখোনি?”
“দেখেছি।”
শ্রেয়া থামল । নিষ্প্রাণের দৃষ্টি অনুসরণ করে তাকাল। বদ্ধদৃষ্টিতে চেয়ে আছে নিষ্প্রাণ আয়েন্দ্রির দিকে। তড়াক করে ওঠে শ্রেয়ার মস্তিষ্ক । শ্রেয়া চট করে ফিরে তাকায় নিষ্প্রাণের দিকে । খুসখুসে গলায় বলল–
“শুধু কী সীমান্তের গায়ে হাত দিয়েছিল বলে তুমি ওদের মেরেছো?”
নিষ্প্রাণ বিগলিত হাসল । চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে নিজের ব্যাগটা কাঁধে ঝুলিয়ে ছোট্ট করে অধরের কোণ প্রশস্ত করল । ঝুঁকে এসে শ্রেয়ার কানের কাছে ঠান্ডা স্বরে ফিসফিসিয়ে বলল—
“ও আমার ধ্রুবতারার গায়ে হাত দিয়েছে । তাই।”
অকস্মাৎ চোখের পল্লব কেঁপে ওঠে শ্রেয়ার।
শহীদ মিনারের সিঁড়ির উপর বসে আছে আয়েন্দ্রি । নিষ্প্রাণ তার কাছে এসেই ঝপ করে বসে পড়ে । আয়েন্দ্রির তটস্থ চাহনি। গলা ঝেড়ে নিষ্প্রাণ বলল–
“এভাবে তাকাস কেন?”
আয়েন্দ্রি চাহনি শিথিল করে বলল—
“কিছু না।”
নিষ্প্রাণ জিজ্ঞাসু গলায় বলল—
“প্রাবিশ কোথায়? ও তো এখানেই ছিল!
আয়েন্দ্রি স্বাভাবিক কন্ঠে বলল—
“বৌদি এসেছে । ওকে আনতে গেছে।”
নিষ্প্রাণ আদুরে চোখে চেয়ে বলল—
“আমার ব্যাপারে কী ভেবেছিস?
আয়েন্দ্রি চট করে ধরতে পারলো না নিষ্প্রাণের কথা । ক্ষণকাল পরে বুঝতে পেরে নিরেট গলায় বলল—
“সম্ভব নয় ।”
নিষ্প্রাণের ভ্রু যুগল ললাটের মধ্যখান বরাবর কুঞ্চিত হয় । চোখের আদুরে চাহনি অনুপলেই শক্ত হয়ে আসে । তবে কন্ঠ স্বাভাবিক রাখে । বলল—
“তুই আমাকে কথা দিয়েছিস ধ্রুবতারা । আমি তোর কথা রেখেছি । তোর বিশ্বাস না হলে শ্রেয়াকে ডেকে আনছি আমি ।”
আয়েন্দ্রি বিতৃষ্ণ চোখে তাকাল । অসহনীয় গলায় চোখ, মুখ বিকৃত করে বলল—
“তুই কেন বুজতে পারছিস না! বাবা মেনে নেবে না এই সম্পর্ক ।”
নিষ্প্রাণ তাচ্ছিল্য হেসে বলল–
“কেন? আমি অনাথ তাই!
আয়েন্দ্রির রাগ ফুটে উঠল চোখে, মুখে । কন্ঠে দৃঢ়তা এনে বলল—
“হ্যাঁ, তাই । কোনো বাবাই তার মেয়েকে কোনো অনাথ ছেলের হাতে তুলে দেবে না । তার উপর তুই এখনো স্ট্যাডি করছিস! বাবা চাইলেই এখন আমার বিয়ে দিতে পারে। কিন্তু সে ছেলে তুই হতে পারবি না ।”
নিষ্প্রাণ মায়াময় চোখে চেয়ে গভীর আবেশে আয়েন্দ্রির হাতটা নিজের হাতে নেয় । তার হাতের আঙুলের ভাঁজে নিজের আঙুল ঢুকিয়ে বলল—
“তুই ভালোবাসিস তো আমাকে? তাহলে অন্তত দুটো বছর সময় দে আমাকে । আমি সবটা সামলে নেবো।”
আয়েন্দ্রি ভরাট চোখে চেয়ে কৌতূহলী গলায় বলল—
“কী করবি তুই?
“কিছু একটা তো করব । তোকে পাওয়ার জন্য যা করতে হয় করব । পারবি না দুটো বছর দিতে আমাকে?
আয়েন্দ্রি ছোট্ট শ্বাস ফেলে । একটু ধাতস্থ হয়ে বলল–
“হুম।”
“মায়ের সাথে আমি কথা বলব?”
“না। দরকার নেই । আমি মাকে বলব ।”
“ও কে ।”
আয়েন্দ্রির আঁখিপুট প্রসারিত হয় দূরের দৃশ্য অবলোকন করে । তার চোখের চাহনির তারতম্য দৃষ্টিগোচর হতেই সেইদিকে তাকায় নিষ্প্রাণ । একটা শুভ্র জামদানী পড়েছে জাহ্নবী । বাদামি রঙের রেশমি চুলগুলো খেলছে তার কাঁধে । যার বেশকিছু ছড়িয়ে আছে বাম চোখের উপর । দুধে আলতা রঙ যেন প্রভাকরের দীপ্ত কিরণে আরও উজ্জ্বল হয়ে ধরা দিচ্ছে । গুটিগুটি পায়ে এগিয়ে আসছে জাহ্নবী । মেয়েটাকে স্বশরীরে কখনো দেখেনি আয়েন্দ্রি । আজ দেখে মনে হলো পদ্মাসন থেকে নেমে এসেছি দেবী । চোখে পুরু কাজলের টান । ঠোঁটে গাঢ় খয়েরী রঙের লিপস্টিক । আয়েন্দ্রি ঢোক গিলল । এত সুন্দরও মানুষ হয়!
আয়েন্দ্রি ফর্সা হলেও ততটা উজ্জ্বল নয় তার গায়ের রঙ । যেন নিভে যাওয়া মোমবাতি। চকিতে নিষ্প্রাণের দিকে তাকায় সে । নিষ্প্রাণের চোখে ততটা জৌলুস নেই যতটা সে আশা করেছিল । স্বাভাবিক চাহনি । সামনে এসে দাঁড়ায় প্রাবিশ আর জাহ্নবী । ঠোঁট ভরা হাসে জাহ্নবী । কী সুন্দর হাসে মেয়েটা! আয়েন্দ্রির মন নেচে ওঠে । নির্মল গলায় বলে উঠে জাহ্নবী—
“আয়েন্দ্রি? রাইট?
আয়েন্দ্রি অধর বিস্তৃত করে হাসল । নীরব সম্মতি দিলো । নিষ্প্রাণের দিকে তাকিয়ে সময় নিলো না জাহ্নবী । চট করেই বলল—
“নিষ্প্রাণ?”
“হুম ।”
আয়েন্দ্রি ভরাট চোখে তাকায় । সাদা মোম যেন রোদের তাপে গলে যাবে! বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে জাহ্নবীর চিবুকের গাঁথুনিতে । আয়েন্দ্রি সরব গলায় বলল—
“কেমন আছো বৌদি?”
লজ্জামিশ্রিত হাসল জাহ্নবী । প্রাবিশের দিকে নাজুক চোখে তাকিয়ে বলল—
“ভালো । তোমরা কেমন আছো?”
“ভালো।
হঠাৎ কী মনে করে?”
আয়েন্দ্রির করা প্রশ্নে মুখ খুলল প্রাবিশ । সরস গলায় বলল—
“একটা স্কুলে ইন্টারভিউ দিতে এসেছিল । তাই দেখা করতে এসেছে।”
“ও আচ্ছা ।”
জাহ্নবী খেয়াল করল নিষ্প্রাণ কোনো কথা বলছে না । নিজ থেকেই আগ্রহ নিয়ে বলল—
“আর ইউ টেনসড নিষ্প্রাণ?”
নিষ্প্রাণ অপ্রস্তুত হয় । তার মনে পড়ে আরিশার কথা । মেয়েটা পারবে তো!
স্বাভাবিক চোখে চেয়ে বলল—
“আই এম ফাইন ।”
জাহ্নবী স্বত:স্ফূর্ত হাসল । মুক্ত গলায় বলল—
“বাকিরা কোথায়?”
“আমাকেই খুঁজছিলে বুঝি?”
কুসুমের মিষ্টি গলায় বন্ধু মহলে খুশির জোয়ার আসে । তবে তার ধারাবাহিকতা টিকে না সীমান্তের জন্য । জাহ্নবী তাদের কোথাও বসে আড্ডা দেওয়ার প্রস্তাব রাখে । কিন্তু সীমান্তকে ছাড়া সব পানসে । তাই আপত্তি করল সবাই । জাহ্নবীকে পৌঁছে দেওয়ার নিমিত্তে ভার্সিটি প্রাঙ্গন ছাড়ে প্রাবিশ । কুসুম টগবগিয়ে বলল—
“মেয়েটা কিন্তু দারুণ! যদিও প্রাবিশ থেকে বছর তিনেকের বড়ো তবুও দু’জনকে দারুন মানিয়েছে ।”
“হুম ।”
কুসুম হঠাৎ করে বলে উঠে—
“কিরে নিষ্প্রাইন্না! এমন চিতল মাছের মতো ভ্যাটকাইয়া আছোস ক্যান?”
ফিক করে হেসে ফেলে আয়েন্দ্রি । নরম হাসে নিষ্প্রাণ। চোখে সরলতা এনে আয়েন্দ্রিকে বলল—
“আমি মসজিদে গেলাম । তোকে বাসায় পৌঁছে দেবো আমি। একা যাবি না ।”
আয়েন্দ্রি চোখের ইশায়ার তাকে আশ্বস্ত করল । নিষ্প্রাণ যেতেই সন্দিগ্ধ চোখে তাকায় কুসুম । ফিচেল হেসে বলল—
“কী চলছে রে তোদের দুইজনের মধ্যে?
“টেম্পু চলছে । তুই উঠবি?
কলহাস্যে বাতাস কাঁপিয়ে তোলে দুই বান্ধবী ।
,
,
,
তমসার চাদোয়া বিছানো বদ্ধ কক্ষে শুয়ে আছে নিষ্প্রাণ । অন্ধকার আচ্ছন্ন কক্ষে তার এলোমেলো দৃষ্টি । পা দুটো শান্ত ভঙ্গিতে দুলছে বিছানার পাটাতনের বাইরে । আয়েন্দ্রিকে পৌঁছে দিয়ে আসে তার বাড়িতে । কায়দা করে সুযোগ বুঝে আরিশার কাছ থেকে স্পাই ক্যামেরা আর তার কোচিং এর কিছু সহপাঠীদের বাবা,মায়ের নাম্বার নিয়ে আসে । নতুন সিম কিনে তা অন করে। আরিশার সহপাঠীদের মধ্যে যাদের বাবা, মা ওয়াটসঅ্যাপ ব্যবহার করেন তাদের নাম্বারে সেই ভিডিয়ো সেন্ট করে সিম ড্রেসট্রয় করে ফেলে । বায়োমেট্রিক্স পদ্ধতিতে তার আঙুলের ছাপ মেলানো যাবে না । তার ব্যবস্থাও নিষ্প্রাণ করেছে ।
ভিডিয়ো তে শুধু ম্যাথ টিচার অলিকের মুখ আর কন্ঠই সবার দৃষ্টিগোচর হবে । নিষ্প্রাণের কথা মতো আরিশা কোনো কথা বলেনি ।
আবেশিত গলায় বলে উঠে নিষ্প্রাণ—
“জানো নয়নতারা, ওকে আমি নিজেই মারতাম । কিন্তু সময় নেই হাতে । দাদু ডেকেছে আমাকে । যেতে হবে আমায়।”
নিষ্প্রাণের পায়ের কাছে বসা নয়নতারার অপার্থিব অবয়বটি হেসে ওঠে । যার বাস্তবে কোনো অস্তিত্ব নেই । যাকে নিষ্প্রাণ তার দিব্যদৃষ্টি দিয়ে দেখে । কল্পনা করে তার অবচেতন মনে ।
নয়নতারা মৃদু হাসল । ঝলমলে গলায় বলল—
“বড়ো দাদু বুঝি তোকে শাস্তি দিবে?”
নিষ্প্রাণ উঠে বসে । চকচকে চোখে চেয়ে দেখল মৃদুহাস্য অধরের নয়নতারাকে । তার হাতে জ্বলন্ত মোমবাতি । সেই মোমবাতির অগ্নিশিখায় নয়নতারাকে পূর্ণ নজরে দেখে নিষ্প্রাণ । তাচ্ছিল্য হাসল সে । মুক্ত গলায় বলল—
“প্রিন্সিপ্যাল আমাকে ভার্সিটি থেকে কেন বের করেনি জানো?
দাদু মোটা অঙ্কের ঘুষ দিয়ে ভর্তি করিয়েছে আমাকে । দাদু বলে আমি না কি অসুস্থ! আমি অসুস্থ নই তারা । আমি শুধু ওদের শাস্তি দিয়েছি ।”
নিষ্প্রাণ দরজার দিকে তাকায় । মোমবাতির আলোয় খুব অল্প পরিমাণে তা দৃশ্যত । ছোট্ট শ্বাস ফেলে সে । মোমবাতির শিখার দিকে মলিন চাহনি নয়নতারার । মৌনতা ভেঙে নিষ্প্রাণ বলল—
“আমার মাকে ওরা খুব কষ্ট দিয়েছে তাই না? আমি একটা দিনের জন্যও আমার মাকে কাছে পাইনি ।”
থামল নিষ্প্রাণ । জমে এলো তার গলা। জমাট গলায় ফের বলল—
“ভালোই হয়েছে মরে গিয়েছে, নাহলে আমিই মেরে ফেলতাম । নিজের হাতে মারতাম । ওই যন্ত্রণা নিয়ে বেঁচে থাকার থেকে মরে যাওয়া ভালো । তোমাকেও পারিনি বাঁচাতে। তুমিও মরে গেলে । তাই ওদেরকেও আমি তোমাদের কাছে পাঠিয়েছি। ভালো করেছি না?”
নিষ্প্রাণ দাম্ভিক চোখে তাকাল নয়নতারার দিকে। ধপ করে মোমবাতির শিখা নিভে যেতেই অট্টহাসিতে রুদ্ধ সমীরণে ঝড় তোলে নয়নতারা ।
#প্রাণস্পন্দন
#পর্বঃ২৮
লেখনীতেঃতাজরিয়ান খান তানভি
নির্বাক পরিবেশ । মৌনতায় আচ্ছন্ন রাজন শিকদার ।তার গম্ভীর ভাবাবেশে কোনো প্রতিক্রিয়া নেই নিষ্প্রাণের । পর্দা কাঁপিয়ে প্রবিষ্ট হওয়া প্রভঞ্জনে নির্বাক পরিবেশে আলোড়ন সৃষ্টি হয় । মৌনতা ভাঙলেন রাজন শিকদার । থমথমে গলায় বললেন—
“তুমি কি আমাকে দেওয়া কথা ভুলে গিয়েছো?”
নিষ্প্রাণ অনমনীয় গলায় বলল—
“না ।”
“তাহলে? কোন সাহসে তুমি মারামারি করেছো?”
কাউচে বসে আছে নিষ্প্রাণ । অবনত মস্তিষ্ক । রাজন শিকদার নিষ্প্রাণের চোখ দেখতে পারছেন না । দেখতে পেলে হয়তো তিনি অবগত হতেন, কী ভয়াল ধ্বংস যজ্ঞের পায়তারা করছে নিষ্প্রাণ!
নিষ্প্রাণ স্বাভাবিক কন্ঠে বলল—
“ওরা আমার বন্ধুকে মেরেছে । একজন দায়িত্বজ্ঞান সম্পন্ন বন্ধুর মতো আমি শুধু তার প্রতিবাদ করেছি ।”
রাজন শিকদার ক্ষেপে উঠলেন । রিনরিনে গলায় বললেন—
“আমি তোমাকে পড়তে পাঠিয়েছি । প্রতিবাদ করতে নয় ।”
নিষ্প্রাণ নির্বাক রইল । শিরায় শিরায় ধাবমান রক্তকণিকায় ঝড় উঠেছে । কিন্তু তার ছিঁটেফোটাও বাইরে প্রকাশ করল না নিষ্প্রাণ । নিগূঢ় দৃষ্টিতে চেয়ে আছেন রাজন শিকদার । নিষ্প্রাণকে বোঝার চেষ্টা করছেন তিনি । কিন্তু ব্যর্থ হলেন ।
রাজন শিকদার তেঁতে উঠলেন । দারাজ গলায় বললেন—
“আর যেন কোনো ভুল না হয় । তোমাকে আমি দ্বিতীয় সুযোগ দেবো না ।”
নীরবতা নেমে এলো । এলোমেলো চিন্তা ভর করল নিষ্প্রাণের মস্তিষ্কে । মনে পড়ল তাকে ফিরতে হবে । তার ধ্রুবতারার কাছে ফিরতে হবে । ঢাকা শহরের কাছাকাছি একটা মফস্বলে থাকে নিষ্প্রাণের দাদু । এখানে আসতে দুই ঘন্টা সময় লেগেছে । নীরবতায় ছন্দ তুললেন রাজন শিকদার । বললেন—
“মেয়েটার সাথে কী সম্পর্ক তোমার?”
নিষ্প্রাণ নিম্নমুখী শিয়রে চোখের জায়গা পরিবর্তন করল । আঁখিপল্লব প্রশস্ত করে দাদুর দিকে তাকাতেই নিষ্প্রাণের ললাটে ভাঁজের রেখা অঙ্কিত হলো । ভারী গলায় বলল—
“ভালোবাসি ওকে আমি ।”
রাজন শিকদার ক্ষেপাটে গলায় বললেন—
“পড়তে পাঠিয়েছি তোমাকে আমি । ভালোবাসতে নয় ।”
নিষ্প্রাণ অধর ছড়িয়ে শ্বাস ফেলল । নাকের ডগা ফুলিয়ে ধৈর্যহারা গলায় বলল—
“ভালোবাসি ওকে আমি । বিয়ে করিনি । আপনাকে যা কথা দিয়েছি তা আমি রাখব । দুই বছর সময় চেয়েছি ওর কাছে আমি । ততদিনে আপনাকে দেওয়া শর্তও পূরণ হয়ে যাবে । অনার্স কমপ্লিট হবে আমার ।”
রাজন শিকদার রঞ্জিত চোখে তাকালেন । রাগে থরথরিয়ে যাচ্ছে তার শরীর । উত্তাপিত গলায় শাসিয়ে উঠলেন—
“ভুলে যেও না তুমি কী করেছো!”
নিষ্প্রাণ দুর্বোধ্য হাসল । মিহি গলায় বলল—
“ভুলিনি । ভুলবো না ।”
“নিষ্প্রাণ!”
রাজন শিকদার ভয়ংকর হুংকারের সাথে উঠে দাঁড়ালেন । নিষ্প্রাণ নিরুত্তেজ । রাজন শিকদার অশিথিল স্বরে বললেন—
“তুমি এখনও সুস্থ নও । নিজের দিকে নজর দাও নিষ্প্রাণ ।”
“ধ্রুবতারাকে আমি ভালোবাসি ! ওকে বিয়ে করবো আমি ।”
রাজন শিকদার বিতৃষ্ণা হয়ে উঠলেন । কর্কশ কন্ঠ আওড়ালেন—
“তারা বেঁচে নেই নিষ্প্রাণ ।”
“ও নয়নতারা নয় । ও আমার ধ্রুবতারা । নয়নতারার মতো ওকে আমি ঝড়ে যেতে দেবো না । ধ্রুবতারার মতো আমার অন্ত:পুরের আকাশে অবিরত, অহর্নিশ জ্বলবে । কী রাত, কী দিন! এই নিষ্প্রাণের প্রাণস্পন্দন ও । ওর দিকে হাত বাড়াবেন না দাদু । ওর গায়ে একটা টোকা পড়লে আমি ভুলে যাবো আপনি আমার দাদু । বারো বছর আগে যা হয়েছে তা আমি ভুলতে চাই । প্লিজ হেল্প মি ।”
নিষ্প্রাণের প্রতিটি শব্দ যেন এক একটা বিষাক্ত বাণ হয়ে বিঁধলো রাজন শিকদার কর্ণরন্ধ্রে । আঁতকে উঠলেন তিনি । নিষ্প্রাণ অনুপল ব্যয় ব্যতিত রাজন শিকদারের কক্ষ থেকে বেরিয়ে এলো । সিঁড়ি বেয়ে নামতে গিয়ে পুরো হলরুমে চোখ বোলালো নিষ্প্রাণ । হলরুমের একপাশে সুবিশাল ডাইনিং টেবিল । অন্যপাশে বসার জায়গা । এই অট্টালিকার মতো বাড়িতে রাজন শিকদার একাই থাকেন । আর তার দেখাশোনার জন্য আছে কিছু ভৃত্য । নিষ্প্রাণ ধীর পায়ে নেমে আসে নিচে । বাড়ির বাইরে আসতেই এক ঝলক ভানুপতির তীক্ষ্ম কিরণ তার চোখে হানা দেয় । নিষ্প্রাণ একটা লম্বা শ্বাস টেনে বামদিকে তাকায় । সেখানে আরও একটি দালান আছে । পুরোনো, প্রায় নিঃশেষিত । নিষ্প্রাণ অধর কোণে হাসল । ওই দালানে কেউ থাকে না । রাজন শিকদার তাতে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছেন । সেখানে কারো প্রবেশাধিকার নেই ।
নিষ্প্রাণ বাম হাতের সাহায্যে তার ঝাঁকড়া চুলগুলো পেছনে হেলিয়ে দেয় । সূর্যের প্রখর তাপে ঘাম জমেছে তার চোখে, মুখে । ফোঁস করে শ্বাস ফেলল নিষ্প্রাণ । নরম পায়ে এগোতে থাকে বাড়ির পেছনের দিকে । নিজের কক্ষের জানালা থেকে নিষ্প্রাণের প্রতিটি প্রতিক্রিয়া গভীরভাবে অবলোকন করলেন রাজন শিকদার । মোবাইলে ডায়াল অপশনে গিয়ে সেই পরিচিত নাম্বারে কল করলেন । ওপাশ থেকে রাশেদের ব্যতিব্যস্ত জবাব—
“বলুন, জনাব।”
“ডক্টর সার্জিও বর্তমানে করাচিতে । তাকে খবর দাও । নিষ্প্রাণকে আরেকবার স্ট্যাডি করতে বলো । সুন!
রাশেদ শশব্যস্ত গলায় বললেন—
“জি, জি জনাব।”
রাজন শিকদার কল কাটতেই যেন রাশেদের গলা থেকে মাছের কাঁটা নামল।
,
,
,
বাড়ির পেছনে বুনো গাছপালায় ভরা । নিষ্প্রাণ সন্তর্পনে এগিয়ে যাচ্ছে । একটা বিশাল আমগাছের নিচে উঁচু ঢিবির মতো জায়গা । নিষ্প্রাণ থামল । ঢিবিটি কারো কবর । নিষ্প্রাণ বসল । কবরটি প্রায় সমান হয়ে গিয়েছে । এখন আর তাকে উঁচু ঢিবি বলা যাবে না । বুনো লতাপাতায় বোঝার উপায় নেই কারো কবর ছিল এখানে !
নিষ্প্রাণ কাঁধ থেকে ব্যাগটা নামিয়ে স্যাঁতসেঁতে মাটির উপর রাখল । হাত দিয়ে কবরের উপরের লতাপাতা সরিয়ে নিমেষহীন চোখে চেয়ে রইল । খানিক সময় পরে উঠে এসে অদূরে থাকা অলকানন্দা গাছের কাছে গিয়ে দাঁড়াল । মুচকি হাসে নিষ্প্রাণ । কয়েকটা ফুল ছিঁড়ে নিয়ে কবরের উপর একটা একটা করে রাখে । নিষ্প্রাণের অধরে লুকায়িত হাসি । সেই হাসিতে তাচ্ছিল্যতা । পাশ থেকে ব্যাগটা নিয়ে তার চেইন খুলে গোলাপের গুচ্ছ বের করে । পাঁপড়িগুলো প্রায় ঝড়ে গিয়েছে । হতপ্রায় ফুলগুলোর পাঁপড়িতে হাত লাগাতেই তা আপনাআপনিই ঝড়ে পড়ে । নিষ্প্রাণ আদুরে হাতে তা কবরের উপর ছিটিয়ে দেয় । একটা বইয়ের ভেতর থাকা শুকনো বেলি, রজনীগন্ধা, রঙ্গন একের পর এক ছড়িয়ে দিতে থাকে অনুরূপভাবে । ঝরা গলায় বলল–
“কেমন আছো তারা? জানি ভালো নেই ? একা কেউ ভালো থাকে? থাকে না । আমিও ছিলাম না । কিন্তু এখন থাকবো । আমার ধ্রুবতারা এসেছে । ওকে নিয়ে ভালো থাকবো আমি ।”
ঝরঝর করে হেসে ফেলে নিষ্প্রাণ । অদ্ভুত সেই সিটির সুর বেজে উঠে তার গোলাকার ওষ্ঠাধরে । ঘাড় বাঁকিয়ে আরেকটি কবরের দিকে তাকায় নিষ্প্রাণ । যেখানে সমাহিত তার চোখের সামনে আত্মাহুতি দেওয়া সেই নারী । যার জঠর থেকে জন্ম নিয়েও সে একটা রাতের জন্যও তার বুকে ঘুমাতে পারেনি।