অস্বাভাবিক মাথা ব্যাথার জন্য বয়ফ্রেন্ডের সাথে ডাক্তারের কাছে দেখাতে যাওয়া ডাক্তারটাই যে ইয়ানাকে পাত্রপক্ষ হিসেবে দেখতে আসবে, তা কখনো কল্পনাও করতে পারেনি ইয়ানা। ছোট থেকেই তার কথা ছিলো বিয়ে যখন করতেই হবে, তখন কোনো অপরিচিত কাউকে বিয়ে করে লাইফটা বরবাদ করতে চাই না মোটেও। কিন্তু তার বাবা-মা’র মুখের দিকে তাকিয়ে নাও করতে পারছে না সে। আর তার মা – বাবাও মানা করবেই বা কেনো? ছেলেটাকে দেখে খুব সুশীল, ভদ্র মনে হয়। বিদেশ থেকে উচ্চ ডিগ্রি নিয়ে এসেছে আর ফ্যামিলিও ভালো। এমন ছেলেকে হাতছাড়া করা কি ঠিক হবে তাদের?
ইয়ানা অনেক জিদ করেছিলো তার মায়ের কাছে। কিন্তু তার মায়ের কথা সে একটাই,
–‘দুই দুই বার তোর কথায় দুটো ভালো চাকরি করা ছেলেকে না করে দিয়েছি। লোকের কাছে কি জবাব দিবো আমরা? যে আমাদের মেয়ে বারবার সবাইকে ফিরিয়ে দিচ্ছে? মান সম্মান ডুবাতে চাস? এবার আর যাই বল শুনছি না!’
.
.
ছেলেটার সাথে ইয়ানাকে একটা রুমে পাঠানো হয়েছে আলাদাভাবে কথা বলার উদ্দেশ্যে। উভয় পরিবারের বিয়েতে সম্মতি থাকলেও পাত্র বিশেষ করে ইয়ানার কোনো সম্মতি নেই বললেই চলে। দুজনেই রুমের মধ্যে মুখ গোমড়া করে বসে আছে। রুমের এসিটা চলমান থাকা শর্তেও তরতর করে ঘামছে ইয়ানা। খুব অস্বস্তি লাগছে তার। সে কথা বলতে চাইলেও গলায় দলা পাকিয়ে আসছে তার। তাবে, আর কিঞ্চিৎ শান্ত থাকতে পারলো না,
—‘আপনার প্রবলেমটা কি ডা. আনাজ? কেনো বিয়ে করতে চাইছেন আমাকে? আপনি সেদিন দেখলেন না, আমার বয়ফ্রেন্ড রয়েছে তাওও?’
কথাগুলো বলেই ডা.আনাজের তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে সে। তবে, আনাজের মাঝে কোনো ভাবান্তর লক্ষ্য করা গেলো না। সে স্বাভাবিক দৃষ্টিতে ওয়ালের পেইন্টিংটার দিকে চেয়ে আছে। পেইন্টিংটায় বিভিন্ন রঙের সংমিশ্রণে চমৎকার সৌন্দর্যতত্ত্বের সমাহার! যা রুমের মুগ্ধতাকে কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে।
—‘হুম’
পেইন্টিং এর দিকে তাকিয়ে মাথা নাড়িয়ে সম্মতি প্রকাশ করে সে।
—‘মানে? কেনো? আমি আসলেই কিছু বুঝতে পারছি না, আপনি আমাকে বিয়ে করার জন্য কেনো উঠেপড়ে লেগেছেন?কোন পাঁকা ধানে মই দিয়েছি আমি আপনার?’
জোর দিয়ে কথা বলে থেমে যায় ইয়ানা।
—‘ওহ রিয়্যালি? তুমি বোঝাতে চাচ্ছো তুমি কিছুই করোনি?’
ইয়ানার দিকে এগিয়ে এসে বলে ডা.আনাজ।
—‘সেদিন আমায় চেম্বারে কতো জোড়ে চড় মেরেছিলে মনে আছে তোমার?’
শান্ত কন্ঠে নিজেকে সংযত রাখার চেষ্টা চালিয়ে কথাগুলো বলে আনাজ।
ইয়ানার সেদিনের কথা মনে পড়তেই নড়েচড়ে বসে সে!
সেদিন ইয়ানার প্রচন্ড মাথা ব্যাথা করছিলো। তার বয়ফ্রেন্ডকে ফোন দিলে সে ইয়ানাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যায়। ডাক্তার মানে মি.আনাজ ইয়ানাকে পরীক্ষা নিরীক্ষা করে বলেছিলেন যে ইয়ানার অনেক ডিপ্রেসড, টেনশান, অনিয়মিত খাওয়া দাওয়া, পড়াশোনার চাপ, দেড়িতে ঘুম এসবের কারণে মাথায় চাপ সৃষ্টি হয়ে মাথায় ব্যাথা হয়। ইয়ানা ডাক্তারের কথা শুনে কিছুটা রেগে গেলেও বলে না।
সে তার বয়ফ্রেন্ডের হাতে হাত রেখে বসে ছিলো। ডাক্তার যখন অনেক গুলো মেডিসিন লিখে দিচ্ছিলো সেটা দেখে আরো মেজাজ বিগড়ে যায় তার। ইয়ানা মনে মনে ডাক্তারকে অজস্র গালি দিয়ে নিজেকে নিজেই বলে,
‘এই সামান্য মাথা ব্যাথার জন্য আমাকে এতো কিছু মেইনটেইন করতে হবে? এতো মেডিসিন নিতে হবে? ‘
নিজেকে সংযত রাখার চেষ্টা চালিয়েও ব্যর্থ হয় সে! ডাক্তার আনাজ তাকে কোন মেডিসিন কখন নিতে হবে তা বুঝিয়ে দিচ্ছিলেন। এমন সময়ই ঠাস করে ডা. আনাজের গালে চড় মেরে বসে সে! ইয়ানা বাজখাঁই কন্ঠে বলে,
—‘আপনাকে ডাক্তারের ডিগ্রি কে দিয়েছে? আপনি ডাক্তার হওয়ার কোনো যোগ্যতাই রাখেন না। এতো গুলো মেডিসিন নিতে পারবো কি-না তা একবার জানা দরকার ছিলো না আপনার?’
সবকিছু এতোটাই জলদি ঘটে গিয়েছিলো যে, ডা. আনাজের বুঝতে বেগ পেতে হয়।
—‘স্পর্ধা তো কম নয় আপনার, একটা ডাক্তারের চেম্বারে বসে, তাকেই চড় মারছেন?’
রেগে গজগজ করতে করতে বলে আনাজ। সে নিজেকে কন্ট্রোল করতে চেয়েও পারেনি, জদিও একটা ডাক্তারকে অতি রাগী এবং অধৈর্যশীল হলে চলে না তাও!
এতোক্ষণ ইয়ানার বিএফ নিলয় চুপচাপ দেখছিলো ম্যাটারটা। ডাক্তারকে অস্বাভাবিক রেগে যেতে দেখে তাদের দুজন কে থামাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে সে।
—‘চলো সুইটহার্ট, এসব ধান্দাবাজ ডাক্তারকে ভিজিট বাবদ এক হাজার টাকা দিয়ে টাকা পানিতে ফেলিও না। আমরা বরং সে টাকায় রেস্টুরেন্টে দু’দিন খেতে পারবো, তাও এই ধান্দানাজকে দিও না।’
কথাটি বলেই চেম্বার থেকে উঠে নিলয়ের হাত টেনে টেনে বাহিরে নিয়ে গেলো সে। যাওয়ার সময় ডাক্তার আনাজের দিকে একবার পরখ করে তার নেক্সট পেশেন্ট কল করার জন্য থাকা বেলটাও নিজেই বাজিয়ে চলে যায় ইয়ানা। চেম্বার থেকে বেড় হওয়ার সময় একটা বৃদ্ধ মহিলার সাথে ধাক্কা খায় সে। কিন্তু ইয়ানা ব্যাপারটা লক্ষ্য না করে ক্ষোভে চেম্বার থেকে বেড় হয়ে যায়।
——————–
ব্যাপারটা মনে করতেই ভয়কাতুরে চাহনি দিয়ে ডা.আনাজের দিকে তাকায় সে। ডাক্তার আনাজ তার দিকে তাকিয়ে রয়েছেন, ভ্রুজোড়া কুচকে ইয়ানার পানে চেয়ে।
—‘আসলে আপনি তো জা__নেন আমার কত হেডডেক ছিলো…!’
জড়তার সাথে কথাটা বলে সে।
তার কথায় হাসি দেয় ডা.আনাজ। তারপর শান্ত হয়ে বলে,
—‘মাথা ব্যাথার অনেক পেশেন্টসই আমি দেখেছি মিস. ইনায়া, বাট আপনার মতো এতো রুড বিহেভিয়ার তো একটা পাগলও করেনি।’
—‘হ্যা করেনি সেটা পাগলের দোষ, তার মাথায় কোনো উপস্থিত বুদ্ধি ছিলো না। সেটা আমাকে শুনাচ্ছেন কেনো? আচ্ছা মানলাম আমার চড় মারা উচিত হয়নি, তাই বলে আপনি আমাকে একদম বিয়ে করে ফেলবেন? ‘ (ইয়ানা)
—‘হ্যা করবো ‘
ইয়ানার দিকে জোড় দিয়ে বলে আনাজ।
—‘তাহলে আমার আর আমার বয়ফ্রেন্ডের কি হবে? আমরা তো লাভবার্ডস। একে অপরকে ছাড়া কিভাবে থাকবো? ‘ (ইয়ানা)
—‘সেটা তোমার আর তোমার সো কলড্ বয়ফ্রেন্ডের ব্যাপার।’ (আনাজ)
—‘দেখেন আমার কথা না শুনলে, আমি কিন্তু চিল্লায় চিল্লায় সবাইকে বানিয়ে বানিয়ে বলে দিবো যে আপনি আমার সাথে উল্টা-পাল্টা কাজ করতে চাচ্ছেন।’
কথাটি বলে ইয়ানা যেমনি চিল্লাতে নিবে তখনি ঠাস্ করে আওয়াজ হওয়া মাত্রই চুপ হয়ে যায় সে। তার গালে খানিকটা ব্যাথা অনুভব করল সে।
–‘হোয়াট আপনি আমাকে চড় মেরেছেন? ‘
ঝাঁঝিয়ে উঠে বলে সে।
–‘আমি তোমাকে জাস্ট বেকুব ভেবেছিলাম, এখন আবার দেখছি, তুমিতো একটা শ্যামলেস মেয়েও!’
ভ্রু কুচকে বলে আনাজ।
–‘হয়েছে এবার শোধবোধ? আপনিও মেরেছেন, আমিও মেরেছি এবার প্লিজ আমার পিছু ছাড়ুন? ‘
—‘ট্রেলার দেখেই এতো ভয় পাচ্ছো? দ্যান পরে তো হার্ট অ্যাটাকই করবা বোধ হয়’
ঠোঁটের এক চিলেতে বাঁকা হাসি ঝুলিয়ে রেখে বলে আনাজ। তার কথা ইয়ানার কর্ণকুহরে বাড়ি খেতেই বিষম খায় সে।
মনে মনে বিড়বিড়িয়ে বলে, ‘এই লোকটার সাথে বিয়ে হলে আমার জিবন জাহান্নামের চেয়ে কোনো অংশে কম হবে না!!’
#একমুঠো_সুপ্ত_বাসনা 🤍
#সুপ্তি_আনাম
#সূচনা_পর্ব
চলবে?
(রেসপন্স করলে কন্টিনিউ করবো, নাহলে দিব না। হ্যাপি রিডিং।)