#তার_শহরের_মায়া ২
পার্ট_২১
#Writer_Liza_moni
হসপিটালের বেডে শুয়ে আছে অনু।ডান হাতে তার ক্যানেলার লাগানো। বেশ অনেকক্ষণ হয়েছে ঘুমিয়ে আছে সে।এক ব্যাগ রক্ত নিতে সময়ের প্রয়োজন। চাইলে ম্যাসে ও রক্ত নিতে পারতো। কিন্তু অনুর আব্বু আম্মু হসপিটালেই রাখলেন।অনুর বেডের পাশে বসে আছেন মিসেস আফরোজা।অনুর আব্বু হসপিটাল থেকে বের হয়ে রেস্টুরেন্টে গেছেন। খাবার নিয়ে আসার জন্য।
ঘড়ির কাঁটা ১টা ছুঁয়ে গেছে।
মিসেস আফরোজা বসা থেকে উঠে অনুর কেবিন থেকে বের হলেন।ওয়াস রুমে যাবেন বলে। কিছুক্ষণ পর তিনি ওয়াস রুম থেকে বের হয়ে আবার অনুর কেবিনে আসার সময় কিছু একটা দেখে তিনি হাঁটা থামিয়ে দাড়িয়ে যান।আজ আবার সেই পুরনো কিছু সময়ের কথা মনে পড়ে গেল।
একটা মানুষের জীবনে এমন কিছু স্মৃতি থেকে থাকে যা অন্য একটা মানুষের সাথে জড়িত থাকে। মূলত সেই অন্য মানুষ কে নিয়েই কিছু স্মৃতি থেকে থাকে।আজ প্রায় ২৯ বছর পর সেই চেনা মুখ দেখে মনের ভেতর কেমন যেনো ভয় কাজ করছে। আবার এই ভয়ের সাথে এক পাহাড় সমান আনন্দ ও বয়ে যায় মনের ভেতর।
পৃথিবীটা ছোট।এর চেয়ে ও বেশি ছোট আমাদের দেশ। আমাদের দেশ থেকে ও বেশি ছোট একটা শহর।আর এই ছোট্ট শহরে একটা মানুষের সাথে দেখা হওয়াটা অস্বাভাবিক কিছু নয়।
মিসেস আফরোজা মুচকি হেসে এগিয়ে গেলেন সামনের দিকে।যেখানে এক জন পাঞ্জাবী পড়া লোক বসে আছেন। তিনি এখনো মিসেস আফরোজা কে দেখতে পাননি। মিসেস আফরোজা উনার সামনে গিয়ে দাঁড়ালেন। বেশ নিচু এবং কাঁপা কাঁপা গলায় নিজে থেকেই জিজ্ঞেস করলেন,
“কেমন আছেন স্যার?”
২যুগ পাঁচ বছর পর পরিচিত সেই কন্ঠ শুনে হকচকিয়ে গেলেন লোক টা। তার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মহিলার দিকে তাকিয়ে রিতীমত চমকে উঠলেন তিনি।বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে অবাক কন্ঠে বললেন,
“তুমি?”
মিসেস আফরোজা কে চিনতে যেনো একটু ও কষ্ট হয় নি সোহেল সাহেব এর।এত গুলো দিন না দেখার পরেও। মিসেস আফরোজা মুচকি হাসলেন।
“বলে ছিলাম না সে দিন যে একদিন আমাদের আবার দেখা হবে। আজকের দিনটাই হয় তো সেই একদিন।”
সোহেল সাহেব হাসলেন।তো কি খবর তোমার? কেমন আছো? স্বামী সংসার নিয়ে?
আলহামদুলিল্লাহ বেশ ভালোই আছি। আপনি কেমন আছেন?আর আপনার জীবনের সাথী টা?
আমি তো আগের মতই আছি। অবশ্য আগের মতো ইয়াং নেই।বুড়ো হয়ে যাচ্ছি। চুল দাড়ি পাঁক ধরেছে।টাটকা শরীরের চামড়া গুটানো শুরু হয়ে যাচ্ছে। শরীরে হাজারো রোগ বাসা বেঁধেছে।
আর আমার জীবনের সাথী?
সোহেল সাহেব হাসলেন। বেশ শব্দ করেই হাসলেন।যেনো মিসেস আফরোজা কোনো মজার কথা বলেছে।
মিসেস আফরোজা ভ্রু কুঁচকে চেয়ে রইলেন সোহেল সাহেব এর মুখের দিকে। সেই মন মাতানো হাঁসি।
সোহেল সাহেব হাসি থামিয়ে শান্ত কন্ঠে বললেন,
“আমি আজ ও বিয়ে করিনি রোজ।”
সোহেল সাহেব এর কথা টা যেনো তীরের মত গেঁথে গেল মিসেস আফরোজার মনে।
তিনি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে বসলেন,
“কেন আজ ও আপনি একা রয়ে গেলেন?”
দ্বিতীয় বার কাউকে ভালোবাসাতে পারিনি।আর ভালোই যদি বাসতে না পারি তাহলে শুধু শুধু একটা মেয়ের জীবন নষ্ট করতে যাবো কেন? বিয়ের পর একটা মেয়ে তো তার স্বামীর কাছ থেকে ভালোবাসাটাই চায় তাই না?
তাই বলে আপনি,,,
সোহেল সাহেব মিসেস আফরোজা কে কথার মাঝে থামিয়ে দিলেন।বাদ দাও সেই সব অতীত এর কথা। তুমি হসপিটালে কী করো?
মিসেস আফরোজা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,
আমার ছোট মেয়ের রক্ত শূন্যতা।তাই রক্ত নিতে হচ্ছে ও কে।এই হসপিটালেই আছে।
আজকের দিনটা বেশ শুভ মনে হচ্ছে। সময়ের সাথে সব বদলে গেছে দেখছি। তুমি ও বদলে গেছো আগের চেয়ে অনেক টা। চেহারায় বয়সের ছাপ পড়ে গেছে।চুল ও পাঁক ধরেছে। অনেক টা সময় পেরিয়ে গেছে। শুধু আজ ও আমার অসমাপ্ত ভালোবাসা টা রয়ে গেছে।
ঠিক আগেরি মতন।
এমন সময় এক নার্স এসে দাঁড়ায় তাদের মাঝখানে।নার্স কে দেখে সোহেল সাহেব মুচকি হেসে বললেন, আমি রিপোর্ট দিয়ে আসছি ডাক্তার কে।
হ্যাঁ তা জানি।ডাক্তার সাহেব আপনাকে ডাকছেন।
আচ্ছা ঠিক আছে।
নার্স চলে গেলে মিসেস আফরোজা সোহেল সাহেব কে জিজ্ঞেস করলেন,
কিসের রিপোর্ট?কী হয়েছে আপনার?দেখে তো অসুস্থ মনে হচ্ছে না।
পেছন থেকে ডাক্তার বলে উঠলেন,
অতিরিক্ত মদ্যপান এবং ধুম পান করার জন্য উনার ফুসফুসে ক্যান্সার হয়ে গেছে।
ডাক্তারের কথা শুনে মিসেস আফরোজা অসহায় দৃষ্টিতে সোহেল সাহেব এর দিকে তাকালেন। সোহেল সাহেব হাসছে।মন মাতানো হাঁসি। মৃত্যু কে আলিঙ্গন করতে চাচ্ছেন তিনি। জীবনের সকল প্রকার স্বাদ নেওয়া শেষ তার।
আমার সাথে আসুন।বলে ডাক্তার চলে গেল। সোহেল সাহেব এর ও আজ অনেক তাড়া।
আসি। ভালো থেকো বলে চলে গেলেন তিনি। মিসেস আফরোজা পাথর হয়ে দাঁড়িয়ে রইল। সেদিন যদি জানতো লোক টা তাকে এত ভালোবাসে তাহলে পরিবারের বিরুদ্ধে গিয়ে এই মানুষটাকে নিজের সারা জীবনের সঙ্গী করে নিতো।
এখন আফসোস ছাড়া কিছুই করার নেই। বহুদিন পেরিয়ে গেছে।চাইলে ও ফেরানো যাবে না আগের সময়।
এই দিকে অনুর ঘুম ভেঙ্গে গেছে। রক্তের বেগের দিকে তাকিয়ে দেখলো প্রায় শেষ হয়ে এসেছে। মিসেস আফরোজা অনুর কেবিনে আসলেন।অনুর মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন।এমন সময় অনুর আব্বু হাতে খাবারের প্যাকেট নিয়ে আসলেন। মিসেস আফরোজার হাতে খাবারের প্যাকেট দিয়ে তিনি আবারও চলে গেলেন মসজিদের উদ্দেশ্যে।
মিসেস আফরোজা অনু কে খাবার খাইয়ে দিলেন নিজ হাতে। তিনি খেলেন না। মনটা কেমন বিষাদে ছেয়ে আছে।না হওয়া প্রিয় মানুষটার জন্য ভেতরটা কেমন জানি পুড়ছে।
ইশশ মায়া এত খারাপ কেন?
তূর্য আজ সকাল থেকে অনুর ম্যাসের সামনে বাইক নিয়ে অপেক্ষা করছে।অনুর সাথে তার অনেক কথা আছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত অনুর কোনো দেখা পেল না সে।ম্যাসের রুমের জানলা থেকে তূর্য কে অনেকক্ষণ ধরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে রিয়ানা ম্যাস থেকে বের হয়ে তূর্যর কাছে গেল। তূর্য তখন বাইকে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে কানে হেডফোন লাগিয়ে গান শুনছে।
Seene se tum mere aake
Laag jaao naa
Darte ho kyum
Zaara pass toh aao na
গুন গুন করে সে নিজে ও গানটা গাইতে থাকে।রিয়ানা তূর্যর সামনে এসে তুড়ি বাজিয়ে ডাকে।রিয়ানা কে তূর্য কান থেকে হেডফোন খুলে ফেলে।
যার জন্য এত লম্বা সময় ধরে এইখানে দাঁড়িয়ে আছেন সে কিন্তু এখানে নাই।
রিয়ানার কথা বুঝতে না পেরে তূর্য ভ্রু কুঁচকে বললো মানে?
কোথায় গেছে পরমানু?
হসপিটালে আছে এখন।
কেন?কি হয়েছে ওর?
ওর তো রক্ত শূন্যতা।তাই আন্টি আঙ্কেল আসছে। রক্ত নিতেই গেছেন।
ওহ আচ্ছা। আগে বলবেন না এই কথা। শুধু শুধু এত সময় ধরে অপেক্ষা করছি।
আচ্ছা একটা কথা বলি?
জী বলুন। পরমানুর ফোন নাম্বার টা একটু দিবেন প্লিজ? আমি ওকে বলবো না যে আপনি দিয়েছেন।
রিয়ানা মুচকি হেসে বললো,বললে ও সমস্যা নেই।নিন,,
01*********
ধন্যবাদ।বলে তূর্য বাইক স্টার্ট দিলো।রাতে না হয় অনু কে কল করে বলে দিবে দেখা করতে চায়।
এই দিকে তূর্যর মা মিসেস তৃনা উঠে পড়ে লেগেছে অনু কে নিজের বাড়ির বউ করতে।মেয়েটা তূর্য কে পছন্দ করে। কিন্তু তূর্য তো পছন্দ করে না।তিয়াসের সাথে বিয়েটা হলে সমস্যা কোথায় বুঝতে পারছি না আমি।
খাবার টেবিলে সবার উদ্দেশ্যে কথাটা বললেন তিনি। তূর্য তখন বাড়িতে ঢুকলো। মায়ের কথা শুনে বললো,
সমস্যা কোথায় তুমি বুঝতে পারছ না? পরমানু আমাকে ভালোবাসে।ও ভাইয়া কে বিয়ে করতে রাজি হবে না কোনো দিন।
পরমানু কে আবার?
তূর্যর উদ্দেশ্যে বললো তিয়াস।
আরে ধেত আমি ও না,
পরমানু না,অনুমেঘা,,
ওহ আচ্ছা। তিয়াস প্লেটে তরকারি নিতে নিতে মায়ের উদ্দেশ্যে বললো, আমি এই মেয়ে কে বিয়ে করতে চাই না। মেয়ে টা যেহেতু তূর্য কে পছন্দ করে ভালোবাসে, সেহেতু বিয়ে টা ওর সাথেই দাও।
তিয়াসের কথা শুনে তূর্য বেশ খুশি হয়ে তিয়াস কে ফ্লাইং কিস দিয়ে গান গাইতে গাইতে রুমে চলে গেল।
তোমার ছেলে ও মেয়েটাকে পছন্দ করে। শিকার করে না যে।
প্রেম করার চেয়ে প্রেমে পড়ার অনুভূতি বেশ সুন্দর।প্রেমে পড়লেই যে তা ঢাক ঢোল পিটিয়ে সবার কাছে প্রকাশ করতে হবে তা কিন্তু না।
#তার_শহরের_মায়া ২
#পার্ট_২২
#Writer_Liza_moni
মায়ের কোলে মাথা রেখে চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে অনু।মা মাথায় বিলি কেটে দিচ্ছে। হসপিটাল থেকে আর ম্যাসে ফিরেনি অনু।মা বাবার সাথে ফুপুদের বাড়িতে এসেছে। সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা বাজে।মা মেয়ের মাঝে পিনপতন নীরবতা বিরাজ করছে।
বেশ কিছুক্ষণ নিরবতা পালন করার পর মিসেস আফরোজা বলে উঠলেন,
আচ্ছা অনু তোর মনে আছে আমি তোকে একদিন একটা কথা বলে ছিলাম।
অনু চোখ মেলে মাথা উপর করে মায়ের দিকে তাকিয়ে বললো,
কী কথা? তুমি তো প্রত্যেক দিনই কিছু না কিছু বলে থাকো আমাকে।
এত কথা মনে রাখা যায় নাকি?
ওহ আচ্ছা। তোর কথা টা অবশ্য ঠিক।যাই হোক,তোকে বলে ছিলাম না আমার লাইফের একটা ঘটনা বলবো।আজ তাহলে সেই কাহিনী টা শোন তুই।
হুম বলো।শুনি,,,
মিসেস আফরোজা নড়েচড়ে বসলেন।অনুর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলতে শুরু করলেন,,
“আমি তখন মাত্র ক্লাস টেনে পড়ি। সামনে এস এস সি পরীক্ষা ছিল। চার মাস বাকি তখন পরীক্ষার।অথচ আমার বইয়ের বেশ অর্ধেক পড়া বাকি ছিল।যেখানে সবাই পুরো বই রিভিশন করতে ব্যাস্ত সেখানে আমি মাত্র নতুন নতুন অংক, ইংরেজি বই খুলে দেখছিলাম কী আছে ঐ বই গুলোর মধ্যে।পড়া লেখায় বেশ ফাঁকি বাজ ছিলাম। বাবার আদরের ছোট মেয়ে।যখন যা দরকার পড়েছে মুখ ফুটে বলার আগেই পেয়ে গেছি। পরিবারের সবার ছোট সদস্য হওয়ায় বেশ আরামেই দিন কাটছিল।বড় ভাইয়া,মেজো ভাইয়া,বড় আপু আমাকে এক নজর না দেখলে ওদের যেনো দিনটাই ভালো কাটতো না। বেশ আদরের ছিলাম।এখনো আছি।
সামনে যেহেতু পরীক্ষা আমার কোনো পড়াই হয়নি ঠিক মতো তাই সবাই মিলে একজন ভালো মেধাবী মানুষ খুঁজছে।যে আমাকে এই চার মাসে পাস করার মতো মার্ক উঠানোর জন্য সাহায্য করতে পারবে।”
অনু শোয়া থেকে উঠে বসলো।
দুই হাত দিয়ে খোলা চুল গুলো খোঁপা করতে করতে বললো,
আর আমি একদিন পড়তে না বসলে কী বকা দাও তুমি।আর নিজে কী সুন্দর টই টই করে ঘুরে বেড়িয়েছো।
চুপ মেয়ে। আমার মতো তোদের জীবন হোক এটা আমি চাই না বুঝলি?
আচ্ছা বুঝলাম।এর পর কী হয়েছিল? তোমরা কি সেই মানুষটি কে পেয়ে ছিলে যাকে খুঁজছিলে?
হুম পেয়ে ছিলাম।
আমাকে পড়ানোর জন্য অর্নাসে পড়ে এমন একজন কে ঠিক করা হয়েছিল।প্রত্যেক দিন বিকেলে তিনি চলে আসতেন আমাকে পড়ানোর জন্য। আমি নারাজ ছিলাম পড়তে।যে দিন প্রথম তাকে দেখে ছিলাম বুকের মাঝে কেমন যেনো ভয় কাজ করছিল। এক দেখাতেই মন যেনো চিৎকার করে বল ছিল,
“এই মানুষটার জন্য আমি পাস মার্ক কেন? বই গুলো পুরো মুখস্থ করে এ+ নিয়ে আসতে পারবো।”
সে ছিল আমার প্রথম অনুভূতি। প্রথম দেখায় কাউকে ভালো লাগলে তোদের ভাষায় বলে না,,
Love at first said
আমার ক্ষেত্রে ও সেই কাহিনী ঘটে।
অনু নড়ে চড়ে বসলো। বেশ কৌতূহল নিয়ে বললো,
আম্মু তুমি তোমার লাভ স্টোরি শুনাচ্ছো?বাহ বাহ,,এর পর কী হয়েছিল তাড়াতাড়ি বলো,,
মেয়ের কথা শুনে মিসেস আফরোজা মুচকি হেসে আবারও বলতে শুরু করলেন,
যে আমি পড়তে বসতেই চাইতাম না সেই আমি উনি আসার আগে থেকেই পড়ার টেবিলে বই নিয়ে বসে থাকতাম। আমার এই সব পরিবর্তন দেখে সবাই বেশ অবাক হতো। উনি আসলে আমি পড়া বাদ দিয়ে উনার দিকে ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে থাকার সুযোগ একদম পাই নি। বেশ রাগি মানুষ ছিলেন তিনি।দেখতে কিন্তু এতো টা ও সুন্দর ছিলেন না।সব মেয়ে কিন্তু উনাকে দেখে পছন্দ করতো না। আমার কী হয়েছিল কী জানি? প্রথম দেখাতেই ভালো লেগে যায়।রাত দিন এক করে বইয়ের মাঝে ডুবে ডুবে পড়তে থাকি আমি। টেস্ট পরীক্ষায় প্রথমে টেনে টুনে পাস করলেও পড়ে বেশ ভালো নাম্বার পেয়েই পাস করি। আমার এত উন্নতি দেখে আমার বাবা ভাইয়েরা তো বেশ খুশি।সব ক্রেডিট নিয়ে গেলো সোহেল স্যার।এত কষ্ট করে পড়লাম কিন্তু আমি।যাক তাতে আমার কোনো আপত্তি ছিল না। আমি বরং চাইতাম আমার ফ্যামেলির কাছে লোকটা ভালো একজন মানুষ হিসেবে পরিচিতি পাক।
দিন যত যাচ্ছিল আমি সেই মানুষটাকে ভালো বাসতে শুরু করি। মাঝে মাঝে তার কথার ধরন তাকানো দেখে মনে হতো উনি ও আমাকে ভালো বাসেন। সাহসের অভাবে বলতে পারছেন না। আমি বুঝতাম।আর উনাকে দেখলেই মিটি মিটি হাসতাম। উনি না বুঝে আমার হাঁসির সাথে তাল মেলাতেন।এই ভাবেই কেটে গিয়েছিল চারটা মাস। দুজন দুজনকে ভালোবাসতাম। কিন্তু সাহস করে কখনো কেউ কাউকে বলিনি। আমার পরীক্ষা শেষ হলো। তার সাথে আর দেখা হলো না আমার। রেজাল্ট দিলো। বেশ ভালো নাম্বার পেয়েই পাস করলাম। বাড়ির সবাই তো অনেক খুশি। অথচ আমি, আমার কোনো হেলদোল নেই। আমি চুপ করেই রইলাম। ভালো রেজাল্ট করার খুশিতে একদিন উনাকে আমাদের বাড়িতে নিমন্ত্রণ করেন আমার বাবা।তা আমি জানতাম না। আমি তখন সদর দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছি।মন বলছিল খুব আপন কেউ আসবে আজ।মন যা বললো তাই ঘটলো। তিনি আসলেন। আমাকে দেখে মুচকি হেসে বললেন,
কী রোজ এত ভালো রেজাল্ট করলে আমাকে জানালে ও না একবার? তার মুখে রোজ নামটা শুনলে আমার দুনিয়া থমকে যেতো।বেহায়া মন শুধু চাইতো উনার মুখ থেকে শুধু সেই নামটা শুনতে। সেদিন দুপুরে খাওয়া দাওয়া করে তিনি চলে যাওয়ার সময় সবার চোখের আড়ালে আমাকে একটা চিঠি দিয়ে যান। তার সেই চিঠি দেখে ভয়ে আমার বুক ঢিপঢিপ করছিল। বাড়ির কেউ দেখে ফেললে সর্বনাশ হয়ে যাবে। আমার বাবা কখনো প্রেম ভালোবাসা নামক সম্পর্ক টাকে ঠিক মতো হজম করতে পারতেন না।
ওড়ানার বাজে চিঠি নিয়ে আমার রুমে এসে দরজা বন্ধ করে কাঁপা হাতে খুলে দেখি এত বড় একটা কাগজে ছোট করে লেখা,
পরিবার কে মানিয়ে আমার জীবন সাথী হতে পারবে রোজ?
“ভালোবাসে কথাটা না বলেই ডিরেক্ট বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে দিয়েছিল?বাহ,,”
হুম।এর পর কী হয়েছিল শুন,
আমি কাউকে কিছু বলিনি। একদিন বান্ধবীর সাথে দেখা করতে যাওয়ার কথা বলে তার ভার্সিটিতে চলে যাই। অসময়ে আমাকে দেখে তিনি যেমন অবাক হয়ে ছিলেন তার চেয়ে ও বেশি খুশি হয়ে ছিলেন। আমাদের দেখা এবং কথা খুব কমই হতো। কিন্তু ভালোবাসার গভীরতা ছিল অনেক বেশি। একদিন তিনি আমাদের বাড়িতে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে আসেন।বাবা কড়া গলায় না করে দিয়ে ছিলেন।কারন তিনি এতিম ছিলেন। তার পরিবার ছিল না। আমার সেকি কান্না। খাওয়া দাওয়া বন্ধ করে দিয়ে ছিলাম। আমাদের মাঝে কিছু একটা চলছে তা ততদিনে বাড়ির সবাই বুঝতে পেরে যায়। দুই সপ্তাহ পর আমার বিয়ে ঠিক করে ফেলে তোর বাবার সাথে।মুর্তির মতো ছিলাম আমি। সময়ের সাথে সাথে নিজেকে পরিবর্তন করে ফেলি। খাগড়াছড়ি তে যাওয়া হয়েছিল আমার কিন্তু এখানে আর দশ বছরে ও পা রাখিনি।
হঠাৎ এই সব বলছো কেন আম্মু?
মিসেস আফরোজা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো আজ হসপিটালে উনার সাথে দেখা হয়েছে। দীর্ঘ ২৯ বছর পর।
কিহ? সত্যি?এত গুলো দিন পর,,,,
জানিস উনার এই পৃথিবীতে আজ ও কেউ নেই।
মানে?
উনি আজ ও বিয়ে করেননি। পৃথিবী থেকে বিদায় নেয়ার সময় ঘনিয়ে এসেছে তার।
কী বলছো এই সব?কি হয়েছে উনার?
অতিরিক্ত মদ্যপান ও ধুমপান করার ফলে উনার ফুসফুসে ক্যান্সার হয়ে গেছে।একটা মানুষ কতটা ভালোবাসতে পারে দেখ।
অনু আফসোস এর স্বরে বললো,
ইশশ একটা মানুষ কতটা ভালোবেসে ছিল তোমায়।এত ভালোবাসা থাকে কয়জনের ভাগ্যে?নানার প্রতি আমার এখন অনেক রাগ হচ্ছে। কেন যে এমন করলো?
লোকটার জন্য আমার খুব খারাপ লাগছে আম্মু।
তাহলে ভাব আমার কেমন লাগছে?
অনু চুপ করে শান্ত চোখে বেশ কিছুক্ষণ মায়ের দিকে তাকিয়ে থাকে।দেখে বুঝার সাধ্য নেই যে মায়ের মনের ভেতরে কী বিষাদের অনল প্রবাহ হচ্ছে।
সময় দেখার জন্য মোবাইল হাতে নিলো অনু।স্ক্রিনে আননোন নাম্বার থেকে আসা একটা মেসেজ ভাসছে।
“তৃষ্ণার্ত প্রেমিক চাতক পাখির মতো প্রেমিকার আসার পথ চেয়ে বসে আছে মাঝারি এক বেলকনিতে।সে খবর কী সেই মায়া মোহিনী জানে,,?”
চলবে,,,
চলবে,,,,,